চেকমেট পর্ব ৬৩

চেকমেট পর্ব ৬৩
সারিকা হোসাইন

রূপকথাকে কোলে করে নিজেদের শোবার ঘরে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো সারফরাজ।মন্ত্রমুগ্ধের ন্যয় কক্ষের চারপাশে নজর বুলালো রূপকথা।কক্ষ জুড়ে বাহারি রঙের ক্যান্ডেল জ্বলছে।তাদের জলন্ত সুগন্ধি পুরো কক্ষকে মাতাল করে তুলেছে।বাতিদানে জ্বলন্ত মোম গুলো ধীরে ধীরে পুড়ছে।জ্বলছে তবু ক্ষয় হচ্ছে না।ঠিক সারফরাজ এর মতো।বিছানার সফেদ চাদরের উপর ইরানি গোলাপের পাপড়ি বিছিয়ে লাভ বানানো হয়েছে।সামনে তোয়ালে দিয়ে বানানো হংস হংসী।ওক কাঠের বেড সাইড টেবিলের উপর কাঁচের মাঝারি আকারের ফুলদানি।তাতে শোভা পেয়েছে রূপকথার পছন্দের সাদা গোলাপ।
রূপকথা আনন্দিত চোখে সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে বললো

“থ্যাঙ্কস।সব কিছুই আমার খুব পছন্দ হয়েছে।ড্যাভিন কে এক্সট্রা চার্জ দিও।তার রুচির প্রশংসা করলেও কম পরে যাচ্ছে।
সারফরাজ অল্প হেসে রূপকথার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো
“ঠিক আছে দেবো।তার আগে ফ্রেস হয়ে এসো।
রূপকথা মাথা ঝাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।কক্ষের বৃহৎ ক্লোজেট মেলে ধরে সারফরাজ বললো
“এখানে সব আছে।শাড়ি থেকে শুরু করে সব।যেটা ভালো লাগে ওটাই পরে নাও।আমি লাগেজ গুলো ভেতরে আনছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রূপকথা সম্মতি জানাতেই সারফরাজ বাইরে বেরিয়ে এলো।এখানে প্রচুর ঠান্ডা।যদিও ঘরের কোণে ফায়ারপ্লেসে মৃদু আগুন জ্বলছে।কিন্তু বার বার দরজা খোলার কারনে হুরহুর করে শীতল হাওয়া ঘরে ঢুকে যাচ্ছে।
সারফরাজ চলে যেতেই দরজার পাল্লা আটকে ক্লোজেট এর সামনে এসে দাড়ালো রূপকথা।ভেতরে অনেক গুলো শাড়ি।সাধারণ সব পোশাকের থেকে সারফরাজ শাড়ি পছন্দ করে বেশি।রূপকথার কাছে সারফরাজ আবদার জানিয়েছে, যেকয়দিন সারফরাজ তার কাছে থাকবে সে’কদিন যেনো রূপকথা শাড়ী ই পরে।রূপকথার শাড়ি পরা সৌন্দর্য সারফরাজ কে প্রতিমুহূর্তে ঘায়েল করে।সেই ঘায়েলে জখম হয় হৃদয়।মরন যন্ত্রনায় কেমন হাপিত্তেস করতে থাকে চোখ জোড়া।একদম দেহ খাঁচা ফেলে আত্মা ছুটে যেতে চায়।

রূপকথা বেছে বেছে একটা মেরুন রঙের শাড়ি নিলো।এরপর শাওয়ার নিতে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।
সারফরাজ যখন লাগেজ সমেত ঘরে ফিরে এলো তখন ভেতর থেকে জলের শব্দ পেলো।ঠোঁট টিপে হেসে লাগেজ থেকে নিজের টাওয়েল নিয়ে বাইরের ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো সারফরাজ।বেশ লম্বা ধকল গিয়েছে।হীম শীতল ঠান্ডা জলে অবগাহন করতে পারলে শরীর খানা ঝরঝরে হবে।
রূপকথা মাথায় টাওয়েল পেঁচিয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বাইরে বেরিয়ে এলো।এরপর সুনিপুন কুচি করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
আয়নায় এক মনে নিজেকে দেখতে ব্যস্ত হলো সে।হঠাতই কেমন চেহারা টা বদলে গেলো।মেয়ে মেয়ে ভাবটা চোখে মুখে একদম নেই।নতুন এক সৌন্দর্য ঠিকরে পড়তে চাইছে শরীর থেকে।চেহারাটা নতুন।তবে কি সত্যিই সে বউ হয়ে গেছে?

আনমনে চুল মুছতে নিজেকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করলো সে।এমন সময় ঘরে ফিরলো সারফরাজ।লতানো চিকন মেদ হীন শরীরে সারফরাজ এর পছন্দ করা শাড়ি জড়িয়েছে রূপকথা।দেখতে মোহিনী লাগছে।ধীর হাতের চুল মোছার ভঙ্গি সারফরাজ কে বেসামাল করলো।শব্দহীন ধীর পায়ে রূপকথার একদম নিকটে দাঁড়ালো সারফরাজ।রূপকথার শরীর থেকে এখনো বউ বউ সুঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।সেই সুগন্ধে নিজের খেই হারালো সারফরাজ।নিজের বরফ সম শীতল দুই হাতে রূপকথার শাড়ির ফাক গলিয়ে উন্মুক্ত উদর আলতো করে চেপে ধরলো সারফরাজ।এরপর ঘাড়ের ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলো

“এই সর্বনাশী রূপে আমার নির্ঘাত মরণ।এবং সেই মরণ আমি হাসি মুখে কবুল করে নিলাম।প্রতি নিয়ত এই সৌন্দর্যের দংশনে আমার যন্ত্রনা দায়ক মৃত্যু হোক।আমিন
সারফরাজ এর শীতল স্পর্শ আর ঘোর লাগা উষ্ণ স্বরে কিঞ্চিত ঝাকুনি দিয়ে কেঁপে উঠলো রূপকথা।মেরুদন্ড বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেলো পায়ের তলায়।শরীর জমে যেতে চাইছে।বুকে কেউ জোড়ে জোড়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।
আলগোছে কখন রূপকথার হাত থেকে তোয়ালে খসে পড়লো তা ঠাহরই করতে পারলো না রূপকথা।সারফরাজ হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো রূপকথাকে।এরপর ঘাড়ের চুল সরিয়ে ফর্সা পিঠে তপ্ত চুমু আকলো।

উদরের কাছে সারফরাজ এর দুই হাত খামচে ধরে ঠোঁট টিপে চোখ বন্ধ করে ফেললো রূপকথা।ক্রমাগত শ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার।শরীরে যেনো বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলা করছে।রূপকথাকে ধীরে ধীরে নিজের পানে ফেরালো সারফরাজ।লজ্জায় লতানো শক্তিহীন ডগার ন্যয় নুইয়ে পড়তে চাইছে রূপকথা।সারফরাজ ঠোঁট প্রসারিত করে অল্প হাসলো।এরপর বললো
“খুব নাজেহাল করছি তাই না?
উত্তর করলো না রূপকথা।সারফরাজ নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রূপকথাকে।এরপর লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো

‘আমি সত্যই তোমাকে পেলাম!এই প্রাপ্তিতে আমার কতখানি আনন্দ হচ্ছে আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না রূপকথা।জীবনে কোন কিছু হাসিল করার জন্য এতোটা মরিয়া হইনি আমি।এতোটা ভয় ও কাজ করেনি কখনো।কিন্তু তোমাকে পাবো কি পাবো না এই ভয়ে কেটেছে আমার প্রতিটা ক্ষণ।এই যে নিশ্চিন্তে শ্বাস ফেলছি,এটাও ভয়ে কাঁপতো তখন।মাঝে মাঝে বুকের কাছে আটকে থাকতো।তুমি আমার কতো শখের তুমি নিজেও জানো না।আজ থেকে আমার পুরোটাকেই তোমাকে সপে দিলাম।আমার হৃদয় পুরে আমাকে শাসন করার জন্য আমায় বন্দি করো প্লিজ।আমি আজীবন তোমার কয়েদি হয়ে থাকতে চাই।
রূপকথা ডাগর ডাগর চোখ তুলে একবার সারফরাজ কে দেখলো।এরপর সারফরাজ এর বুকে থুতনি ঠেকিয়ে বলে উঠলো

“কয়েদ করে অসহনীয় যন্ত্রনা দেবো সইতে পারবে?
“টু শব্দ টুকু করবো না।বিশ্বাস না হলে যন্ত্রনা দিয়ে দেখো।
রূপকথা সারফরাজ এর বুকে শক্ত কামড় বসালো স্বইচ্ছেয়।কিন্তু নিশ্চুপ রইলো সারফরাজ।ধীরে ধীরে কামড়ের মাত্রা বাড়ালো রূপকথা।সারফরাজ এখনো স্বাভাবিক চোখে মুখে রূপকথার কোমর জড়িয়ে আছে।মুখে নোনতা স্বাদ অনুভূত হতেই মুখ সরালো রূপকথা ।সারফরাজ এর বুক থেকে বিন্দু বিন্দু রঞ্জন ধারা গড়াতে চাইছে।
নিজের আঁচল দিয়ে সারফরাজ এর বুক চেপে ধরে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো রূপকথা।সারফরাজ রূপকথার ছোট মুখ খানি হাতের আজলায় ভরে বলে উঠলো

“এই টুকুন শাস্তিতে আমার কিচ্ছু হবে না জান।আমি সারা রাত ধরে শাস্তি পেতে চাই।প্লিজ কিল মি।
বলেই রূপকথার অধরের দখল নিলো।
প্রথমে একটু অপ্রস্তুত রইলো রূপকথা।কিন্তু সারফরাজ তাকে সামলে নিলো।ধীরে ধীরে গাঢ় হলো চুম্বন। দুজনের হাতের বিচরণ হলো অবাধ্য থেকে অবধ্যতর।তপ্ত শ্বাসে ভারী হয়ে উঠলো কক্ষ ।জ্বলে জ্বলে ক্ষয় হলো মোম।চাঁদের অল্প আলো থাই কাঁচ ডিঙিয়ে কক্ষে হানা দিলো।
বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে পড়ে ভেঙে চূর্ণ হলো ফুল সমেত ফুলদানি।এতেও কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ হলো না।টাইলসে ঝনঝন করে পতিত হলো মোম সমেত বাতি দান।রূপকথা সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে চোয়ালে চুমু আকলো।রূপকথার ইচ্ছে বোধ হয় বুঝলো বেহায়া প্রেমিক পুরুষ।রুপকথাকে শক্ত হাতে পাঁজা কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো।এরপর পায়ের পাতায় চুমু একে রূপকথার উপর ঝুকে শুধালো

“যদি নিজের বশে না থাকি তবে গলা টিপে ধরো প্লিজ।আমি সরে যাবো।
রূপকথা লাজুক হেসে মুখ সরিয়ে নিলো।কামুক চোখে রূপকথার ভেজা ঠোঁটের পানে তাকিয়ে সারফরাজ আওড়ালো
“বিসমিল্লাহ,ইয়া আল্লাহ শয়তানের প্রভাব থেকে আমাকে এবং আমার সন্তান কে তুমি রক্ষা করো।
ধীরে ধীরে চাঁদের আলো সরে গিয়ে বিশালদেহী রেডউড গাছের চূড়ায় লুকালো।স্তব্ধ হলো গহীন অরণ্য।নিভে গেলো সমস্ত আলো।পবিত্র ভালোবাসার শেষ স্বাদ আহরণে মত্ত হলো দুটি দেহ,দুটি হৃদয়।
ধীরে ধীরে ভেসে এলো চাপা সুখ মিশ্রিত আর্তনাদ।
গাছের ডালে বসা এক হুতুম পেঁচা কেবলই তার শিকার ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।এমন সময় চিৎকার করে ডাকলো রূপকথা

চেকমেট পর্ব ৬২

“সারফরাজ আ উইল কিল ইউ
শিকার আর ধরা হলো না পেঁচার।ভয়ে পাখা ঝাপ্টে উড়ে পালালো।সে বুঝে গেলো এই অরণ্যের ভয়ানক রাজার ক্ষমতা ধর রানী এসে গেছে।নয়তো এমন গলা বাড়িয়ে চিৎকার করে ডেকে খু ন করার হুমকি দেবার দুঃসাহস কার?

চেকমেট পর্ব ৬৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here