চেকমেট পর্ব ৬৪

চেকমেট পর্ব ৬৪
সারিকা হোসাইন

বৃহৎ রেডউডের চূড়া ছাপিয়ে ভোরের নতুন টকটকে লাল রঙা সূর্য উকি দিলো।নিদ্রা ভঙ্গ হলো বিহঙ্গ কূলের সেই সাথে প্রস্ফুটিত হলো ফুলের দল।ঝর্ণার কলকল ধ্বনী আর জল প্রপাতের ঝরঝর শব্দে উদ্বেলিত হলো চারপাশ।হিমবাহ জড়িয়ে সমুদ্রের তেজী গর্জন সমানে আছড়ে পড়ছে পাহাড়ের ঢালে।
সূর্যের হলুদ আলো ভারী থাই কাঁচ আর পর্দা ডিঙিয়ে সারফরাজ এর কক্ষে প্রবেশ করলো।সেই হুটোপুটি খাওয়া আলোর পানে তাকিয়ে অল্প হাসলো সারফরাজ।এরপর রূপকথার ঘুমন্ত মুখ পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“তোমার সৌন্দর্য সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় প্রিয়তমা।বিচ্ছুরিত আলোকের তীক্ষ্ণ সৌন্দর্য আজ আমায় মোহিত করতে ব্যর্থ হলো।কারন আমি এখনো তোমার নেশায় বুদ।

সারফরাজ এর বাহুতে পরম শান্তিতে নিদ্রা গিয়েছে রূপকথা।সারাটি রাত ধরে রূপকথার শ্বাস গুনে চলেছে সারফরাজ।মনে কেমন এক তৃপ্তিময় আনন্দ।রূপকথার প্রতিটা শ্বাস সারফরাজ কে পুড়িয়ে ছারখার করছে।অথচ হৃদয় হীনা বোকা রমণী তার খবর টুকু রাখেনি।সে ক্লান্ত শরীরে ঘুমুচ্ছে তো ঘুমুচ্ছে।
সূর্যের আলো ধীরে ধীরে প্রকট হতেই রূপকথার লালচে জখম ঠোঁট সারফরাজ এর নজরে আটকালো।সেই জখমে আলতো চুমু একে ফিসফিস করে রূপকথার কানে কানে সারফরাজ বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না?কি করবো বলো?দীর্ঘ দিনের জমানো ভালোবাসা।বাধা হীন উন্মাদ প্রেম গুলো খাঁচায় আর বন্দি থাকতে চায়নি।
ভারী ব্ল্যাঙ্কেট এর ভেতর হাত ঢুকিয়ে রূপকথাকে আরেকটু নিজের দখলে নিয়ে এলো সারফরাজ।ঘুমের ঘোরেই ব্যথায় অল্প ঠোঁট কুঁচকে গুঙিয়ে উঠলো রূপকথা।সারফরাজ রূপকথার কপালে উষ্ঠ ছোঁয়াল।এরপর মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে উঠলো
“শুভ সকাল মিসেস সারফরাজ।আপনার নিদ্রা ভঙ্গের অপেক্ষায় পুরো পৃথিবী প্রহর গুনছে।আপনি না জাগলে যে সকাল হচ্ছে না।

সারফরাজ এর ঘোর মেশানো ভারী স্বরে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো রূপকথা।এরপর সারফরাজ এর বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে সারফরাজ কে শক্ত করে জড়িয়ে চোখ বুজে ঘুম জড়ানো গলায় বলে উঠলো
“মাত্রই তো ঘুমালাম।আরেকটু ঘুমুতে দাও প্লিজ।চোখ খুলে রাখতে পারছি না।প্রচন্ড ঘুম ভর করেছে চোখের পাতায়।
বলতে বলতে পুনরায় ঘুমে তলিয়ে গেলো রূপকথা।রূপকথার এতো গভীর নিদ্রা সহ্য হলো না সারফরাজের।সে ভোর রাত থেকে জেগে রয়েছে অথচ মেয়েটা ঘুমে কাতর।সারফরাজ কপাল কুঁচকে নাক ফুলালো।তার এতো সুন্দর প্রেম মিশ্রিত বাণী তোয়াক্কা করলো না রূপকথা এটা তার মানতে কষ্ট হলো।সে তার ঠান্ডা হাত টা রূপকথার উদরে চেপে ধরলো।আচমকা ঠান্ডা অনুভূতি তে কেঁপে উঠলো রূপকথা।এরপর বিরক্তিতে বলে উঠলো

“আমি কিন্তু এর জন্য শাস্তি দেবো তোমায়।
শাস্তির কথা শুনে সারফরাজ এর এক ভ্রু উঁচু হয়ে গেলো।দেড় ফুট একটা মেয়ে তার মতো মাফিয়াকে শাস্তি দেবে?এতো বড় ঐদ্ধত্যপূর্ন কথা?কি শাস্তি দেবে রূপকথা এটা সে দেখতে চায়।সে তার ঠান্ডা হাত জোড়া দিয়ে জোর করে চেপে ধরলো রূপকথাকে।এরপর উপর থেকে সরিয়ে দিলো ব্ল্যাঙ্কেট।ঠান্ডায় রূপকথার অনাবৃত শরীর শিউরে উঠলো।উষ্ণতার জন্য সে শক্ত করে সারফরাজ কে জাপ্টে ধরলো।এরপর উষ্ণতা তালাশ করে বলে উঠলো

“ঘুমুতে দিচ্ছ না কেনো?
জোরে ধমকে উঠলো রূপকথা।রূপকথার ধমক পাত্তা না দিয়ে সারফরাজ বলে উঠলো
“দেখতে চাচ্ছি কি শাস্তি দেবে।তাই।
“আচ্ছা!
“হু।দেখাও দেখি কেমন শাস্তি?
রূপকথা তপ্ত শ্বাস ফেলে বড় বড় করে চোখ মেললো।এরপর আশপাশ হাতড়ে সারফরাজ এর কালো টিশার্ট খানা কোনো মতে গায়ে জড়িয়ে সারফরাজ এর বুকের উপর উঠে গেলো। নিজের সরু আঙ্গুলি দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো সারফরাজ এর নাক,ঠোঁট আর অ্যাডাম আ্যপল।নেশা ধরানো চোখ জোড়া সারফরাজ এর চোখে নিবদ্ধ করে ঝুকে গেলো সারফরাজ এর মুখের পানে।এরপর ফিসফিস করে বলে উঠলো
“আমাকে সামলাতে পারবে?

ফাঁকা ঢোক গিললো সারফরাজ।রূপকথা সারফরাজ এর চুলে আঙ্গুলি চালিয়ে টেনে ধরে বলে উঠলো
“গত রাতে তুমিই বলেছিলে নাহ, রানী সাহেবার হুকুম শিরোধার্য?
রূপকথার এলোমেলো সৌন্দর্যে নিজের জ্ঞান খোয়ালো সারফরাজ।বাধ্য দাসের ন্যয় উঠে বসে ছুঁতে চাইলো রূপকথার অধর।কিন্তু তার আগেই বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে গেলো রূপকথা।এরপর বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলে উঠলো

“দুদিন আমার নাগাল পাবে না তুমি।কতবড় মাস্তান হয়েছো আমিও দেখতে চাই।
সারফরাজ এর মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে উঠলো নিমিষেই।এতবড় শাস্তি সইবার ক্ষমতা তার নেই।এই শাস্তিতে তার মৃত্যু অনিবার্য।সারফরাজ বিছানা থেকে নেমে রূপকথার সামনে দাঁড়িয়ে কাকুতি মিনতি করলো।কিন্তু নিঠুর মানবীর হৃদয় গললো না।বাঁকা হাসলো সারফরাজ।সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে জানে সে।খপ করে রূপকথাকে চেপে ধরলো সারফরাজ।ভয়ে হাটু সম টিশার্ট চেপে ধরে এক পা দু পা পেছালো রূপকথা।এক সময় পদ যুগল থেমে গেলো।পেছানোর পথ শেষ।পিছনের কঠিন দেয়ালে রূপকথার পিঠ ঠেকে গেলো।রূপকথাকে দুই হাতের মাঝখানে বন্দি করে ভ্রু নাচালো সারফরাজ।

“আগুন জ্বালিয়ে না নিভিয়ে চলে যাবে তা তো হবে না ডার্লিং।যেই হুতাশনে তুমি কেরোসিন ঢেলেছো সেই জলন্ত অঙ্গারে তোমাকেই জল ঢালতে হবে।লেটস গো।
রূপকথা দু পাশে মাথা ঝাঁকালো এরপর মিনমিন করে বললো
“তোমার গর্দান নেবো আমি।রানীর সাথে এসব কিধরনের গুন্ডামি?
“গর্দান পরে নিও।আগে আমার মনোরঞ্জন হোক।
চারপাশে তাকিয়ে বাঁচানোর পথ খুজলো রূপকথা।সারফরাজ এর হাত বন্ধন থেকে কোনো মতে ফস্কে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো রূপকথা।সারফরাজ কম যায় কিসে?রূপকথাকে দরজা আটকানোর ফুসরত না দিয়ে নিজেও ঢোকে বাঁকা হেসে বলে উঠলো

‘আগে বলবে না তোমার জলকেলী খেলতে ইচ্ছে করছে?ওকে নো প্রবলেম।আমি সব জায়গাতেই ফিট আছি।
রূপকথা চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো
“বাবার কাছে বিচার দেবো তোমার নামে।যদি জেলে না ভরেছি দেখো।
সারফরাজ গায়ের হাত বিহীন ব্ল্যাক স্যান্ডো গেঞ্জি খুলতে খুলতে বলে উঠলো
“এই অপরাধে যদি আমার জেল হয় তবে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আমি জেলে যেতে রাজি আছি।এবার কাছে এসো সোনামণি।
রূপকথা একটা শ্যাম্পুর বোতল ছুড়ে মেরে বলে উঠলো

“বেশি কাছে এলে মাথা ফাটিয়ে দেবো ফাতরা ছেলে।
সারফরাজ চোখ মুখ কুঁচকে শ্যাম্পুর বোতল গুছিয়ে রেখে বলে উঠলো
“গত রাতে তো …..
বলার আগেই সারফরাজ এর মুখ চেপে ধরলো রূপকথা।লজ্জায় তার মাথা নুইয়ে যাচ্ছে গত রাতের কথা মনে পড়তেই।দিনের বেলা ওই ঘটনার রিপিট হলে লজ্জায় নির্ঘাত মূর্ছা যাবে রূপকথা।এই অসভ্য বেহায়া পুরুষ কি সে খবর রেখেছে?নাকি জেনে বুঝে তাকে কাবু করতে চাইছে?
রূপকথার হাত আলগোছে মুখ থেকে সরিয়ে সারফরাজ ফিসফিস করে বলে উঠলো

“গত রাতে আমি তোমার হাতে খুন হয়েছি বউ।তুমি যে এতোটা হৃদয়হীনা নিষ্ঠুর ঘাতকিনী তা আমি দুঃস্বপ্নেও কখনো ভাবিনি।
রূপকথাকে জড়িয়ে ধরে শাওয়ারের নব ঘুরালো সারফরাজ।শীতল জলের স্পর্শে সারফরাজ কে শক্ত করে চেপে ধরলো রূপকথা ।সারফরাজ এর পিঠের নখের ধারালো আঘাত গুলোতে পানি ছুঁয়ে দিতেই সেগুলো জ্বলে উঠলো।সারফরাজ রূপকথার লতানো কটিদেশে ভালোবাসার স্পর্শ বুলিয়ে নেশা ধরা গলায় বললো
“আ উইল বি জেন্টল দিজ টাইম ঠু।

নিজের লাগেজ পত্র নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া এয়ারপোর্ট এর ওয়েটিং এরিয়ায় বসে আছে রুদ্ররাজ।আর কিছুক্ষন বাদেই তার রাশিয়ার ফ্লাইট।ওখানেই ভিলেজ এরিয়ায় একটা হসপিটালে এপ্লাই করেছে সে।তারা রুদ্রের কুয়ালিফিকেশন দেখে তাকে এপোয়েন্ট করেছে ।
নিজের বাকিটা জীবন সেখানেই চূড়ান্ত অনুশোচনা আর অপরাধবোধ নিয়ে একাকী কাটিয়ে দেবে রুদ্র।তার কালো ছায়া আর কারোর উপর ফেলতে চায় না সে।সবাই ভালো থাকুক ,হ্যাপি থাকুক এটাই তার চাওয়া।মাঝে মাঝে অন্যের ভালো থাকা,সুখে থাকা দেখতে ভালো লাগে।সারফরাজ এর সুন্দর ভবিষ্যতে মোটেও ঈর্ষান্বিত নয় সে।বরং সারফরাজ এটা আরো আগে ডিজার্ভ করতো এটা নিয়ে সে আপসেট।সারফরাজ এর জীবনে রুদ্রের ছায়া না থাকলে সারফরাজ আরো আগেই সুখী হতে পারতো।

নিজের নিকৃষ্ট রূপ মনে পড়তেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো রুদ্র।এমন সময় পাসপোর্ট চেকিং এরিয়ায় স্টাফ দের হাউকাউ শুনে তার ধ্যান ছুটলো।হট্রগোল উদ্দেশ্য করে সামনে তাকালো রুদ্র।একটা ছোট শীর্ণ দেহের ফর্সা সুন্দরী রমণী হাত নেড়ে তাদের কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে।বড় বড় বাদামি মনির চোখ দুটোতে অন্তহীন মায়া আর হাজারো কথার ফুলঝুড়ি।কিন্তু ঠোঁটে কোনো কথা নেই।মেয়েটির ঈশারপূর্ণ কথা স্টাফ গুলো বুঝতে পারছে না।রুদ্র অবাক চোখে বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটার অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করলো।এরপর তপ্ত শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটির কাছে গেলো।বাক শক্তি হীন মানুষ দের সাথে বেশ কয়েকবার কাজ করেছে রুদ্র।মেয়েটির সাইন বুঝতে তার এক মুহূর্ত সময় লাগলো না।রুদ্র স্টাফ গুলোর সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় জাহির করলো
,এক্সকিউজ মি।আই অ্যাম আ্য ডক্টর।দ্যা গার্ল ইজ স্পিচ ইম্পেয়ার্ড।আ উইল টেল ইউ হুয়াট শী ইজ ট্রায়িং টু স্যা।
বলেই মেয়েটিকে হাতের ইশারায় শুধালো

“হুয়াটস ইউর প্রবলেম?
রুদ্রের ইশারায় মেয়েটি যেনো প্রাণ ফিরে পেলো।তার চোখে মুখে খুশি উপচে উঠলো।সে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো রুদ্রকে ।এরপর চোখে মুখে চিন্তা ফুটিয়ে নিজের টিকেট ,ভিসা আর পাসপোর্ট রুদ্রের পানে এগিয়ে বোঝালো
“আমার টিকেটে নামের স্পেলিং ভুল রয়েছে।এজন্য তারা আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।কিন্তু আজকের ফ্লাইট আমার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।আমাকে যেকোনো মূল্যে রাশিয়া যেতেই হবে।ইটস মাই ড্রীম অপরচুনিটি।
রুদ্র মেয়েটির টিকিট আর পাসপোর্ট চেক করে অফিসার কে বলে উঠলো
“এটা তেমন কোনো বিগ ইস্যু নয় ।পাসপোর্ট ভিসা সব ঠিক আছে।নামে একটা স্পেলিং মিসিং।প্লিজ উনাকে যেতে দিন।

স্টাফ শুনলো না।রুদ্রের রাগ চিড়বিড়িয়ে উঠলো ইমিগ্রেশন অফিসার এর উপর।ইচ্ছে হলো এখনই তাকে শুট করে দিতে।কিন্তু রুদ্র এসব খুন খারাবী আর করবে না বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।এদিকে ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে।মেয়েটি হাত ঘড়ি চেক করে মাথা নিচু করে নিম্ন ভাগের ঠোঁট কামড়ে ধরে নীরবে চোখের জল ফেললো।চারপাশে মানুষের জটলা বড় হলো।জটলা দেখে এয়ারপোর্ট পুলিশ দৌড়ে এলো।তারা এসে ক্রাউড এর কারন জানতে চাইলে রুদ্র তাদের সব কিছু খুলে বললো।পুলিশ অফিসার মেয়েটির পাসপোর্ট ভিসা চেক করে ফেইস স্ক্যানিং করে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিলেন।সব কিছুই ঠিকঠাক।বুঝতে পারলেন যান্ত্রিক ত্রুটি বা ভুল বশত নামের ফার্স্ট স্পেলিং ভুল এসেছে।যেহেতু ভিসা পাসপোর্ট এ কোনো ঝামেলা নেই তাই শুধু টিকিট ঝামেলার জন্য তারা মেয়েটির কাছে সরি বলে গেট খুলে দিলেন।

এতক্ষনে মেয়েটি যেনো বুক ভরে শ্বাস নিলো।সে রুদ্রের পানে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে গেলো।পেছন পেছন গেলো রুদ্র।তার হাতেও আর সময় নেই।
রুদ্র আজ আর বিজনেস ক্লাস সিট বুক করেনি।নিজেকে সাধারণ বানিয়ে বাকি পথ চলতে চায় সে।তাই সূচনাটা আজ থেকেই হোক।
বিমানে উঠে নিজের সিট খুঁজতে খুঁজতে অবাক হলো রুদ্ররাজ।সেই মেয়েটি তার পাশের সিটে বসে আছে।মেয়েটিকে নিজের পাশে পেয়ে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করলো রুদ্রের মনে।মেয়েটি ও রুদ্রকে দেখে বেশ অবাক হলো সেই সাথে প্রচন্ড খুশি হলো।এটলিস্ট বোরিং জার্নি কাটবে না ।মানুষটা তার ইশারা বুঝে দ্যাটস এনাফ।
রুদ্র গায়ের জ্যাকেট খোলে হাতে নিয়ে সিটে বসে অল্প মাথা ঝাকিয়ে হ্যালো বললো।
মেয়েটি একটা চকলেট এগিয়ে দিলো রুদ্রের পানে।এরপর হাত ইশারা করে পুনরায় বুঝালো

“থ্যাঙ্কস
চকলেট হাতে নিয়ে রুদ্র শুধালো
“মিস চুপকথা রাশিয়া যাবার কারণটা কি জানতে পারি?
চুপকথা নামক মেয়েটি একটা আর্ট খাতা বের করে রুদ্রের সামনে এগিয়ে দিলো।রুদ্র উৎসুক হয়ে খাতাটা খুললো।পুরো খাতা জুড়ে বাহারি রঙে আঁকা পেইন্টিং স্কেচ।রুদ্র বুঝলো মেয়েটি ভালো ছবি আঁকে।চুপকথা হাত ইশারায় বললো

“আমাকে ইনভাইটেশন পাঠানো হয়েছে।আমার একটা ছবি ওদের ভালো লেগেছে।ওটার এক্সিবিশন আছে।বিভিন্ন দেশের নামি গুণী চিত্র শিল্পী ওখানে উপস্থিত হবেন।অনেক বছর ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় আমি ।অবশেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
রুদ্র বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে বেস্ট অফ লাক জানালো।ধীরে ধীরে বিমান উড্ডয়নের ঘোষণা বেজে উঠলো।কীয়তখন গড়াতেই রান ওয়েতে দৌড়ালো বিমান।তীব্র ঝাকুনি দিয়ে আকাশে উড়তেই চুপকথা ভয়ে চোখ মুখ খিচে রুদ্রের হাত খামচে ধরলো।চুপকথার নখের আঘাতে রুদ্রের হাতের উপরের পিঠ ছিলে গেলো।কিন্তু নির্বিকার রইলো রুদ্র।প্লেন স্মুদলি রান হতেই রুদ্রের হাত ছেড়ে দিলো সে।রুদ্র আলগোছে মুঠ পাকিয়ে নিজের হাত সরিয়ে জ্যাকেট দিয়ে ঢেকে নিলো।কিছু সময় গড়াতেই ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেলো চুপকথা।চুপকথার মায়াবী মুখের পানে তাকিয়ে রুদ্রের ঘুম,চিন্তা,ভাবনা সব কিছু উবে গেলো।শুধু মাথায় ঘুরতে লাগলো একটি নাম
“চুপকথা।

সারফরাজ সুফিয়ান চৌধুরী কে এভাবে চেকমেট দিলো এটা তার মানতে বেশ কষ্ট হলো।সুফিয়ান চৌধুরী ভেবেছিলেন বিয়ের পর ছেলেটা শুধরাবে।কিন্তু কুকুরের লেজ বারো বছর ঘি মাখিয়ে চুঙের ভেতর রাখলে সেই যে বাকাই থাকে সে কথাই বা কে জানতো?
সুফিয়ান চৌধুরীর ইচ্ছে হলো সারফরাজ এর পা দুটো কেটে ফেলে রাখতে।কিন্তু পরে হুইল চেয়ার তার মেয়েকেই টানতে হবে ভেবে সেই ইচ্ছে ধামাচাপা দিয়ে ফোন তুলে নিলেন হাতে।এরপর গজগজ করতে করতে সারফরাজ এর নম্বর ডায়াল করলেন।
কেবলই রূপকথাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হতে চাইছে সারফরাজ এমন সময়ে সুফিয়ান চৌধুরীর ফোন দেখে ঠোঁট মেলে হাসলো।এরপর ফোন তুলে বলে উঠলো

“কালো বিড়াল রাস্তা আগলে দাঁড়ালো যাত্রা ভঙ্গ করতে তাইতো?
সুফিয়ান চৌধুরী নিজের এমন বিশেষনে দাঁত মুখ কামড়ে বলে উঠলো
“এক চটকনা মেরে সামনের দাঁত ফেলে দেবো হতচ্ছাড়া।
সারফরাজ কিটকিটিয়ে হেসে বলে উঠলো
“এতে আমারই সুবিধা আব্বাজান।ভাত আর খাবো না।
মেয়ের জামাই এর কুরুচিপূর্ণ কথায় চোখ মুখ কুঁচকে সুফিয়ান চৌধুরী বলে উঠলেন
“তোকে ফোন করাই আমার পাপ হয়েছে।তুই জাহান্নামে যা।যাবার আগে আমার মেয়েকে ফোনটা দিয়ে যা।
সারফরাজ টিপ্পনি কেটে শুধালো

“এতো রাতে মেয়ের চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না বুঝি?
“তোর মতো শয়তানের হাতে মেয়ে তুলে দেবার পর কোনো বাপের চোখে ঘুম থাকতে পারে?
সারফরাজ মুখ বাকিয়ে রূপকথার সামনে গিয়ে ফোন এগিয়ে বললো
“নাও তোমার গোয়েন্দা বাপ ছলচাতুরী করতে ফোন দিয়েছে।কথা বলবে ভালো কথা।তার কথায় মন ঘুরিয়ে বসো না আবার।মন ঘুরালেও সেসব শুনবো না আমি।এক মাস মানে এক মাস ই।এক মাসেও চন্দ্র মধু আহরণ হবে কি না আই ডোন্ট নো।
রূপকথা কুনুই দিয়ে গুঁতো দিলো সারফরাজ এর পেটে।এরপর ফোন কানে তুলে উৎফুল্ল গলায় বললো

“হ্যা বাবা বলো?কেমন আছো তোমরা সবাই?
সুফিয়ান চৌধুরী মেয়ের গলা পেয়ে ছোট শিশুর ন্যয় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।একমাত্র আদরের মেয়েকে ছেড়ে তিনি ভালো নেই।ভালো থাকতে পারেন না তিনি।সারফরাজ ভেলকিবাজ কোথাকার।কথার জাদুতে ফাঁসিয়ে রূপকথাকে নিয়ে হাওয়া হয়েছে।মেয়েকে চোখের সামনে দেখা তো দূর নেটওয়ার্ক এর অভাবে কথা টুকুও বলা যায় না।
রূপকথা সুফিয়ান চৌধুরীর কান্নায় নিশ্চুপ রইলো।এরপর সান্তনা ছুড়ে বললো

“কেঁদোনা বাবা।আমি ভালো আছি।সারফরাজ আমাকে ভালো রেখেছে।
মেয়ের ভরসা যুক্ত কথায় চুপ করলেন সুফিয়ান চৌধুরী।এরপর বললেন
“তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।তোমাদের ছাড়া সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
তাছাড়া নেলি আর অভিরূপ এর বিয়েটাও আটকে আছে।দাও জামাই কে দাও।
রূপকথা সারফরাজ এর পানে ফোন এগিয়ে চোখ গরম করলো
“বাবাকে আর জ্বালাবে না।নয়তো আমিও তোমাকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেবো।
সারফরাজ ফোন নিয়ে বললো

চেকমেট পর্ব ৬৩

“জি বাবা বলুন।
সুফিয়ান চৌধুরী মেজাজ তিরিক্ষী করে বললেন
“তোর একাই শীত লাগে?অভিরূপের শীত লাগে না?শিগ্গির এসে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা কর।নয়তো তোর একদিন আর আমার যেকদিন লাগে।বদমাশ ছোকরা কোথাকার।
“আমি আপনার মেয়ের জামাই।একটু তো সম্মান দিন।
“তুই আমার কিসের মেয়ের জামাই?তুই আমার শত্রু।আজীবনের শত্রু।সুযোগ পেলেই পেছনে এক হাত দেবো আমি তোর।দাড়া।

চেকমেট পর্ব ৬৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here