চেকমেট পর্ব ৬৫
সারিকা হোসাইন
প্রশস্ত স্বচ্ছ সবুজ জলের ঝিরির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রূপকথা।সারফরাজ বৈঠা ওয়ালা র’বোট এর খুঁটিনাটি বিষয় চেক করছে।এই বোটের মাধ্যমে রূপকথাকে গহীন অরণ্যের বিস্তৃতি আর ভয়ানক সৌন্দর্য দর্শন করাবে সারফরাজ।সারফরাজ পানিতে বৈঠা চালিয়ে কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এলো।এরপর একটা খুঁটির সাথে নৌকা বেঁধে হাত বাড়িয়ে রূপকথাকে ডাকলো
‘আসুন মহারাণী।সব কিছু ঠিকঠাক আছে।
নৌকার পানে তাকিয়ে রূপকথা ফাঁকা ঢোক গিললো।এর আগে কখনোই সে নৌকায় উঠেনি।তারমধ্যে চারপাশে গহীন অরণ্য।পানির গভীরতা কতখানি কেউ জানে না।একবার নৌকা উল্টে পরে গেলে যদি কুমির এসে খেয়ে নেয়?না না এতো সুন্দর জামাই রেখে কিছুতেই এতো দ্রুত কুমিরের পেটে যেতে পারে না রূপকথা।এছাড়া বান্ধবীদের মনে এখনো জেলাসি ফিল করানো বাকি রয়েছে।সারফরাজ এর ক্ষমতার প্রয়োগে দেশ বিদেশের সৌন্দর্য দেখা বাকি আছে।সত্যি সত্যি কুইন দের মতো লাইফ লিড করা এখনো শুরুই হয়নি।রূপকথা কিছুতেই সামান্য নৌকায় চড়ে সব ভেস্তে দিতে পারে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারফরাজ কপাল কুঁচকে রূপকথার মুখভাব বোঝার চেষ্টা করলো।এদিকে নৌকায় ব্যালেন্স রেখে হাত বাড়িয়ে রাখার কারনে তার হাতে ব্যথা হবার উপক্রম।রুপকথা ভাবছে টা কি ভেবেই সারফরাজ পুনরায় হাঁক ছাড়লো
“এখানে দাঁড়িয়েই দুপুর পাড় করে ফেলবে?তখন তো খুব লাফাচ্ছিলে!এখন কি হলো তবে?কি ভাবছো এতো?পানিতে চুবিয়ে মারবো সেটা?
সারফরাজ এর হাঁক ডাকে নিজেকে ধাতস্থ করলো রূপকথা।এরপর পট করে বলে উঠলো
“এখানে কুমির আছে আমি যাবো না।
সারফরাজ নাক ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো।এরপর ভ্রু সরু করে বলে উঠলো
“কুমির এসে কানে কানে বলে গেছে তোমাকে যে,সে এখানে আছে? কুমিরের চাইতে ভয়ানক মানুষের কামড় খাচ্ছ রাত দিন তাতে তোমার কোনো ভয় হচ্ছে না আর যার অস্তিত্বই নেই এই জলে তাকে না দেখেও তোমার খুব ভয় হচ্ছে?আহহা।আসলে কি বলবো বলো তো? ঘুরে ফিরে সব দোষ ওই কমিশনারেরই।ঠিক সময়ে সঠিক ভিটামিন আর টিকা দিলে এমন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে না।এখন তাড়াতাড়ি এসো।নইলে তোমাকে ফেলেই চলে যাবো।
রূপকথা কিছুক্ষণ ইতস্তত করে শুধালো
“আসলেই কুমির নেই?
“না নেই।এখন এসো।আর থাকলেও বা!তোমার জামাই আছে না?
“কুমিরের চাইতে তোমার শক্তি বেশি?
ফট করে শুধিয়ে বোকার ন্যয় তাকিয়ে রইলো রূপকথা।সারফরাজ ঠোঁট গোল করে ফস করে শ্বাস ছাড়লো।এরপর বললো
“গত দুদিনেও আমার শক্তি বেশি না কম টের পাও নি?আরো পরীক্ষা দেয়া লাগবে?তুমি চাইলে আমি এখানেই ট্রায়াল দিতে পারি।আসবো নাকি তোমাকে শূন্যে ভাসাতে?
ঠোঁট কাটা স্বভাবের মানুষটার বেশরমি ইঙ্গিত বুঝতে পেরে চোখ বুঝে মাথা নাড়ালো রূপকথা।এরপর দুই হাত নাড়িয়ে বললো
“না না ছি ছি।খোলা জায়গায় এসব কি ধরণের পচা কথা।আমি আসছি।তুমি ওখানেই থাকো।
রূপকথা ভীত পা ফেলে নৌকার পানে এগিয়ে এলো এরপর সারফরাজ এর হাত চেপে ধরে নৌকায় উঠে চুপচাপ বসলো।
রূপকথাকে বসিয়ে নিজেও রূপকথার মুখোমুখি বসলো সারফরাজ।এরপর দুই হাতে দুই বৈঠা চালিয়ে চলতে আরম্ভ করলো।
প্রথমে রূপকথার বুক দুরু দুরু করলো।কিন্তু ক্ষণকাল গড়াতেই নাম না জানা বাহারি রঙের পাখি আর বুনো ফুলের সৌন্দর্যে রূপকথার সমস্ত ভয় কেটে গেলো।রূপকথার ইচ্ছে হলো সবুজ জলে হাত ভেজাতে।সে সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে পুনরায় বললো
“পানিতে হাত ভেজালে কিছু কামড়ে দেবে পানির নিচে থেকে?
সারফরাজ দুস্টু হেসে বললো
“আজকাল কেউ হাত কামড়াতে চায়না জানেমান।আজকাল সবাই অন্যকিছু কামড়াতে চায়।এই ধরো তুলতুলে নরম পেট,উঁচু….
সারফরাজ কথা শেষ করবার আগেই রূপকথা পানিতে হাত চুবিয়ে জল ছিটিয়ে দিলো সারফরাজ এর শরীরে।সারফরাজ শব্দ করে হেসে বলে উঠলো
“কেউ কামড়ালো?
রূপকথা প্রফুল্ল চিত্তে পানিতে হাত বুলিয়ে শীতল শিহরণ গায়ে মাখালো।সারফরাজ ভারী গলায় বললো
“এখানকার পানি বেশ ঠান্ডা।ওতো ভিজো না।পড়ে ঠান্ডা জ্বর আসবে।এই মুহূর্তে এসব রোগ বালাই কিচ্ছুটি আমি মানবো না।কষ্ট তুমিই পাবে।
রূপকথা ঠোঁট বাকিয়ে নিজের কাজে বহাল রইলো।দুই পাশে বিশাল বড় বড় সবুজ ,কমলা,হলুদ পাতার নাম না জানা অদ্ভুত গাছ।কোনো কোনো গাছে আবার অদ্ভুত রকমের লোভনীয় ফল।কিন্তু বিষাক্ত।কোনো গাছে মন মাতানো সৌরভের ফুল।রূপকথার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো সে কোনো প্রাচীন রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছে।বাস্তবে পৃথিবী এতোটা সুন্দর এটা তার চর্ম চক্ষু বিশ্বাস করতে পারলো না।
রূপকথা চোখ বুঝে লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রকৃতির সুবাস নিলো।এরপর প্রশস্ত হেসে সারফরাজ কে বললো
“আমি অনেক লাকী।লাইফ আমাকে এতকিছু দেবে এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি।তোমাকে পুরোপুরি পেয়ে আমার জীবন স্বার্থক হয়েছে সারফরাজ।শুধু শেষ নিঃশ্বাস নয় আমি ওপারেও তোমাকেই চাই।
রূপকথার কথায় সারফরাজ এর মুখের রঙ পাল্টালো।হাসি খুশি মুখটা কেমন থমথমে হলো।চোখ হলো চিকচিকে।রূপকথা সারফরাজ এর এমন অবয়বে ধীর গলায় শুধালো
“আমি কি ভুল কিছু বলেছি?
সারফরাজ তপ্ত শ্বাস ছেড়ে কঠিন কন্ঠে উত্তর করলো
“আমি পাপী।ওপারে আমাদের মিল হবে না রূপকথা।আমি শুধু এপাড়েই তোমার।তাই মিছে স্বপ্ন দেখো না।কষ্ট পাবে।
কথাটা কেমন নিষ্ঠুর শোনালো।তবুও রূপকথা মলিন কন্ঠে বললো
“আল্লাহ তায়ালা অনেক দয়ালু।তার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি সব মাফ করে দিবেন।
সারফরাজ এবারও নিশ্চুপ রইলো।সে কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।রূপকথা এবার ছলছল চোখে শুধালো
“তুমি ফিরবে না এই পথ থেকে?
“না।মোড খারাপ করো না রূপকথা।ঘুরতে এসেছো ঘুরো।এসব আধ্যাত্মিক কথা আপাতত বলো না।শুনতে ভালো লাগছে না।পরের টা পরে দেখা যাবে।
রূপকথার সমস্ত আনন্দ মিইয়ে গেলো নিমিষেই।চোখের সামনে সারফরাজ এর অনিশ্চিত জীবন দেখতে পেলো রূপকথা।রূপকথার শুকনো মুখের পানে তাকিয়ে সারফরাজ শুধালো
“আমার সব কিছু জেনেই তো আমাকে গ্রহণ করেছিলে তাই না?তবে আজ এতো সংশয় কেনো?আমি তো তোমাকে বার বার এলার্ট করে ছিলাম।বলেছিলাম না একবার এই হাত ধরলে আর ছাড়তে পারবে না?হাতটা ধরবার আগে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম তোমায় রাইট?
রূপকথা জবাব দিলো না।সত্যিই তো।সে তো সব কিছু জেনে ,মেনেই সারফরাজ কে বিয়ে করেছে।তবে আজ এসব কেনো ভাবছে সে?
নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো রূপকথা।সে ইতিউতি নজর বুলালো।এমন সময় ঝিরির ধারে একটা অদ্ভুত ফুল দেখতে পেলো।একদম বেগুনি রঙের ফুলটা।ফুলটা দেখে রূপকথার বড্ড লোভ হলো।সে মনের মেঘ কাটিয়ে আহ্লাদী হয়ে বাচ্চাদের মতো অনুরোধ করে সারফরাজ কে বললো
“ওই ফুলটা আমার চাই।এনে দাও প্লিজ
সারফরাজ মাথা ঝাকিয়ে বললো
“নিশ্চই ম্যাডাম।
এরপর সেই ফুলের নিকট গিয়ে ফুলটা ছিড়ে নিয়ে রূপকথার কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে চুমু একে সারফরাজ ফিসফিস করে বললো
“আমি সাধু পুরুষ হলে তোমার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করতে ব্যর্থ হবো।অসাধু পাপী হয়ে যদি তোমার সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করতে পারি তবে ক্ষতি কি প্রিয়তমা?
সারফরাজ এর ঘোলাটে চোখের পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সারফরাজ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রূপকথা।এরপর ধরে আসা গলায় বললো
“আমার কিচ্ছু চাই না।শুধু তোমাকে চাই।তুমি হলেই আমার চলে যাবে।
রূপকথার মাথার তালুতে গাঢ় চুম্বন আকলো সারফরাজ।এরপর রূপকথার ছোট মুখ খানি হাতের আজলায় ভরে বললো
“প্রমিস করবো না।বাট আ উইল ট্রাই।
রূপকথা ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে অবিশ্বাস্য গলায় শুধালো
“সত্যি?
রূপকথার চোখের পাতায় চুমু খেয়ে সারফরাজ বললো
“তিন সত্যি।
মস্কো এয়ারপোর্ট এ বিমান থামতেই চুপকথা কে নিয়ে নেমে গেলো রুদ্র।রুদ্র মনে মনে ভাবলো মেয়েটা যেখানে যাবে সেই জায়গার ট্যাক্সি তে তাকে তুলে দেবে।অচেনা শহরে আজকাল মেয়েদের চলাফেরা রিস্ক।তন্মধ্যে যদি কথা বলার সক্ষমতা না থাকে তবে বিষয়টা আরো ভয়াবহ।চিৎকার করে হেল্প টুকুন চাইতে পারবে না।
চুপকথা কে নিয়ে এয়ারপোর্ট এর বাইরে বেরিয়ে এলো রুদ্র।এরপর অপেক্ষা করতে লাগলো ট্যাক্সির।
চুপকথা হঠাৎ খেয়াল করলো রুদ্রের যেই হাত সে খামচে ধরে ছিলো তাতে ছিলে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে।তার বেশ অপরাধ অনুভূত হলো মনে মনে।কিন্তু সে প্রকাশ করতে পারলো না।নিজের ব্যগ হাতড়ে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ বের করলো সে।এরপর রুদ্রের হাত টেনে নিয়ে গভীর নজর বুলালো।চুপকথার শীতল হাতের স্পর্শে চমকে কেঁপে উঠলো রুদ্র।অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো।কেমন শিহরণ জাগালো সারা শরীরে।বুক ভেঙে হার্টবিট বেরিয়ে যেতে চাইছে।মেয়েটির কাণ্ডে ঠোঁট টিপে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রুদ্র।
চুপকথা ব্যাগ থেকে প্যাট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে সেটা মাখিয়ে দিলো রুদ্রের শুকিয়ে উঠা ক্ষততে।এরপর ব্যান্ডেজ আটকে হাতের সাইন দিয়ে বোঝালো
“বাসায় গিয়ে একটা ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিবেন।এখানে অধিক ঠান্ডা।যত্ন না নিলে ক্ষত ফেটে রক্ত বের হবে।বুঝেছেন কি বলেছি?
মেয়েটির কথায় অল্প হাসলো রুদ্র।এরপর মাথা ঝাঁকালো।এমন সময় দুটো মেয়ে এলো প্ল্যাকার্ড নিয়ে।প্ল্যাকার্ড এ লিখা চুপকথা।
চুপকথা সেটা দেখে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় মেলে ধরলো।মেয়ে দুটো নিজেদের গাড়ি নির্দেশ করে বলে উঠলো
“আমাদের সঙ্গে এসো।
ব্যাস্ততা আর হুড়োহুড়িতে রুদ্র চুপকথার সাথে আর কথা বলার সুযোগ পেলো না।মেয়ে দুটো তাড়া দেখিয়ে চুপকথাকে গাড়িতে বসালো।গাড়ির জানালা দিয়ে রুদ্রকে বাই বললো চুপকথা।এরপর হাত ইশারায় বললো
“আমাদের আবার দেখা হবে।
নম্বর চাইবার আগেই গাড়ি দৃষ্টি সীমান ছাড়ালো।রুদ্র হাতের ব্যান্ডেজ টার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে হতাশা মিশ্রিত কন্ঠে নিজেকে নিজেই শুধালো
“আমাদের কি আদৌ আবার দেখা হবে মিস চুপকথা?দেখা না হলেই বোধ হয় ভালো তাই না?নয়তো আমার কালো ছায়া তোমায় গ্রাস করবে।
রাশিয়া পৌঁছে নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছে রুদ্ররাজ।শহর থেকে বেশ খানিক দূরে জভেনিগোরোদ নামক উত্তর অঞ্চলে।রুদ্র প্রথমে ভেবেছিলো এখানে হয়তো মস্কোর ন্যয় বড় কোনো হসপিটাল নেই।কিন্তু এখানে আসার পর তার চোখ কপালে উঠেছে।যেই হসপিটালে সে যোগদান করেছে সেটা বিশাল বড় এক নিউরো হসপিটাল।এখানে চিকিৎসা সেবা মস্কো শহরের তুলনায় অতোটা ব্যয়বহুল নয়।এই অঞ্চলটি অত্যাধিক ঠান্ডা শীতল হবার কারনে এবং সূর্যের আলোর তারতম্যের কারনে এখানের বেশির ভাগ মানুষ ভিটামিন ডি এর ঘাটতি ,মাইগ্রেন,ডিপ্রেশন, নিউরোপ্যাথি,নার্ভ সিস্টেম ইমব্যালেন্স,মেমোরি লস এবং নিদ্রা হীনতায় ভোগে।এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ স্নায়বিক সমস্যায় ভোগে।এখানে নিউরো সার্জনের প্রচুর চাহিদা।কিন্তু অধিক ঠান্ডায় কেউ টিকতে পারে না এখানে।চিকিৎসা সেবা দিতে এসে ডক্টর নিজেই অসুস্থ হয়ে এলাকা ছাড়েন।তাই রুদ্র পেপার সাবমিট করার সাথে সাথেই তারা রুদ্রের বাকি হিস্টোরি চেক না করেই শুধু ডিগ্রি আর অভিজ্ঞতা দেখে রাজি হয়ে গিয়েছে।এখানে আসার পর প্রথমেই রুদ্রের মনে হয়েছে সে এখানে টিকতে পারবে না।কিন্তু তাকে টিকতে হবে।এখান থেকে তার ফিরে যাবার সমস্ত দুয়ার বদ্ধ।সুবহান চৌধুরীর পাতাল ঘরের তুলনায় এখানে দিব্যি ভালো আছে সে।
রুদ্রের দুই দিনের চিকিৎসা সেবার হসপিটাল কতৃপক্ষ বেশ সন্তুষ্ট হলেন।যুবক যে বেশ দক্ষ এবং চৌকস একজন ডক্টর এটা বুঝতে তাদের সময় লাগলো না।কিছু কিছু ডক্টরের হাত যশ থাকে।তারা শুধু নাপা ট্যাবলেট খাইয়ে দিলেও বিছানায় পড়ে থাকা রোগী দৌড়ে বেড়ায়।তাদের কাছে রুদ্রকে এমনই মনে হলো।
হসপিটাল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রুদ্রের ছোট একটা ঘর।অতো বিলাসবহুল নয়।কিন্তু কোনো মতে টেনে টুনে চলে।এখানে ইলেকট্রিক ফায়ারপ্লেস নেই।কাঠ খড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ঘর উষ্ণ করতে হয়।ফ্রিজে মাছ মাংস সংরক্ষণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।সারা রাত তুষার বৃষ্টি হয়।বরফের স্তূপে মাছ মাংসের ড্রাম ঢুকিয়ে রাখলেই চলে।সেরকম শাক সবজি এখানে পাওয়া যায়না বললেই চলে।কারন অধিক ঠান্ডা এবং সূর্যের আলোর অনুপস্থিতিতে এখানে শাক সবজির চাষ করা অসম্ভব।ক্যান ফুড ই শেষ ভরসা নিউট্রিশন এর জন্য।
এসব অদ্ভুত খাবার খেয়ে এক সপ্তাহে রুদ্রের ওজন কমে গেলো দুই কেজি। নিজের এহেন শোচনীয় অবস্থায় রুদ্র মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আগামী কাল সে মস্কো যাবে।ওখান থেকে ফ্রেস শাকসবজি কিনবে।বাসায় এসে বেশি করে ঝাল দিয়ে সেসব রেঁধে প্লেট ভরে ভাত খাবে।
যেই ভাবনা সেই কাজ।পরের দিন সকাল সকাল লোকাল বাস ধরে মস্কোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো রুদ্র।মস্কো পৌঁছাতে তার সময় লাগলো দুই ঘন্টা।বাস থেকে নেমে নিজের হাত পা টানা দিয়ে এদিক সেদিক দৃষ্টি মেলে একটা সুপার শপে ঢুকলো।শপে ঢুকেই তার প্রথম নজর গিয়ে ঠেকলো বাধা কপি আর বেগুনের দিকে।একটা বাধা কপি ই দেখা যাচ্চে ক্যারেট এ।যেহেতু এখন পুরোদস্তুর শীত তাই সবজির উৎপাদন নেই বললেই চলে।রুদ্রের সাথে সাথে অন্য কেউ ও ধরে ফেললো সেই বাধা কপি।চোখে মুখে কাঠিন্য ফুটিয়ে সেই মানুষটির পানে তাকালো রুদ্র।নিমিষেই তার রাগ তরল জলে রূপান্তর হলো।বাধা কপি থেকে নিজের হাত সরিয়ে রুদ্ররাজ ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো
“চুপকথা!
রুদ্রকে এখানে দেখে চুপকথা বেশ অবাক হলো।সে হাতের ইশারায় খুশি প্রকাশ করে বলে উঠলো
“এখানে কিচ্ছু খেতে পারছি না।আমার ঝালঝাল শুঁটকি খেতে ইচ্ছে করছে।এখানে তেমন সবজি নেই।তাই বাঁধাকপি চুজ করেছি আমি।বাট আপনি যেহেতু আগে এসেছেন বাধা কপিটা আপনিই নিন।
রুদ্র ঠোঁট মেলে হেসে মাথা চুলকালো তর্জনী আঙুলে।এরপর মনে মনে বলে উঠলো
“শুধু বাধা কপি কেনো ?পুরো শপ তুলে নিয়ে যাও।আমি কিচ্ছু বলবো না।দরকার পড়লে আমি না খেয়েই থাকবো।ওজন সাতাসি থেকে সাতাস হয়ে যাক।আমার কোনো আপত্তি নেই।
অভিরূপ এর পরে প্রেম করে সারফরাজ বউ নিয়ে উষ্ণ হানিমুন সাড়ছে আর দাঁত কেলিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করছে বিষয় টা ঠিক মতো হজম হচ্ছে না অভিরূপের।সারফরাজ এর বিয়ে হানিমুন দেখে তার ও বড্ড লোভ হচ্ছে।কিন্তু সে নিরুপায়।সারফরাজ ফিরে এলে তার বিয়ে হবে।উফ কি নিদারুণ জন্ত্রনা।না না এর আগেই কিছু একটা করতে হবে।সামনে পাকা ফল রয়েছে অথচ খেতে পারছে না এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।নিজের দুঃখের সমাপ্তি ঘটাতে অভিরূপ নাক মুখ ফুলিয়ে সারফরাজকে একটা টেক্সট পাঠালো
“ভাই এই গরিবের উপর একটু রহম কর।পোষ মাসের শীতে একা একা রাত কাটাচ্ছি।কম্বলের নীচে কোনো উষ্ণতা নেই।মনে হয় কে যেনো বরফ জল ঢেলে দিয়েছে।মিংগেল মানুষকে এভাবে কষ্ট দিলে গজব পড়বে তোর উপর।অভিশাপ কিন্তু দিচ্ছি না।কিন্তু আমার হাহাকার অভিশাপ হয়েই লাগবে বলে দিলাম।শিগ্গির ফিরে এসে আমায় বিয়েটা করতে দে।নয়তো তোর শালিকে নিয়ে আমি ভেগে যাবো।
তাৎক্ষণিক মেসেজ এর উত্তর পাঠালো সারফরাজ
চেকমেট পর্ব ৬৪
“যেই আইটেম কপালে জুটিয়েছিস উষ্ণতা তো দূর বাসর ঘরে বসে বসে কাঁদবি শালা।শীতের রাতে উদোম গায়ে বিড়ি ফুকবি আর কাঁদবি।এমনিই ভালো আছিস।
“না আমি বিড়ি ফুকে কাঁদতেই চাই।
“ঠিক আছে জ্ঞানী জনের কথা যেহেতু মানবী না কি আর করার?আসছি।