চেকমেট পর্ব ৬৭
সারিকা হোসাইন
চুপকথাকে এয়ারপোর্ট এ বিদায় জানাতে এসেছে রুদ্র।এই এক মাসে মেয়েটার সাথে তার বেশ সখ্যতা হয়েছে।প্রতি উইকেন্ডে কাজের ফাঁকে দুজন মিলে ঘুরেছে পুরো মস্কো শহর।চুপকথার সঙ্গে এটেন্ড করেছে তার এক্সিবিশন এ।শুধু তাই নয় চুপকথার হয়ে জনসমক্ষে তুলে ধরেছে চুপকথার পেইন্টিং এর মর্মার্থ।রুদ্রের মনের বেশ খানিকটা জায়গা অগোচরে দখল করে নিয়েছে মেয়েটি।
কিন্তু কঠিন হৃদয়ের রুদ্ররাজ তা কাউকে বুঝতে দেয়নি।মেয়েটাকে ঘিরে বুকের বাঁ পাশের পুরো জায়গাটা জুড়ে নানান জল্পনা কল্পনা আর ভালোবাসা মিশ্রিত সুখের আনাগোনা।সেগুলো রাত দিন ক্রমান্বয়ে রুদ্রকে জ্বালাতন করে।সেই জ্বালাতন মুখ বুজে সয়ে নেয় রুদ্র।কবে না জানি এভাবে জ্বলতে জ্বলতে রুদ্রের নৃশংস মৃত্যু হয়।আচ্ছা রুদ্রের আত্মার মৃত্যুর খবর টা কি কোনো দিন ও জানতে পারবে এই মেয়েটা?কখনো কি সে রুদ্রকে খুজবে বা মনে রাখবে?কোনো এক বিষন্ন বিকেলে কিংবা শীতের ঘন কুয়াশা ভরা সকালে মনে পড়বে রুদ্রের করুন চোখের আকুতি ভরা না বলা ভাষা?কখনো কি ইচ্ছে হবে রুদ্রের গলার স্বর শুনতে?আনমনে হেসে উঠলো রুদ্র।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেয়েটা তো কানেই শুনে না।সে জানবে কি করে রুদ্রের গলার আওয়াজ কতোটা হৃদয় কাঁপানো?
রুদ্রের মনের আবোল তাবোল ভালোবাসা মিশ্রিত অনুভূতি শেষ বারের মতোন দাফন করলো রুদ্র।অন্তর ক্ষতবিক্ষত হয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত গড়াচ্ছে মেয়েটির বিদায়ে অথচ রুদ্রের ঠোঁট জোড়া সুন্দর ভুবন ভোলানো হাসি।
চুপকথা নিজের টিকিট, পাসপোর্ট সব আরেকটু চেক করে ইমিগ্রেশন এর দিকে পা বাড়ালো।রুদ্রের চোখ উপচে জল গড়াতে চাইলো।মেয়েটা বিহনে একাকীত্ব আবারো তাকে গ্রাস করবে।মেয়েটা কেমন জানি রুদ্রের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে।মানুষ অভ্যাসের দাস।রুদ্র কিভাবে চুপকথা নামক অভ্যাস থেকে নিজের পরিত্রাণ করবে?
রুদ্রকে আরেকবার বিদায় জানানোর জন্য পেছন ফিরলো চুপকথা।মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে হঠাৎ।ব্যাথাটা অনেক দিনের।মাইগ্রেনের হয়তো।নয়তো রাত জেগে বসে বসে পেইন্ট করার জন্য।লম্বা বেড রেস্ট নিলে এমনি সেরে যায়।কিন্তু এবারের ব্যাথা পূর্বের ব্যাথাকে ছাপিয়ে।মাথাটা কেমন ঘুরে ঘুরে চোখ জোড়া ঝাপসা করে দিচ্ছে।আশেপাশের সবকিছু ঘুরছে।অন্ধকার হয়ে উঠছে চারিধার।চুপকথা আর সামনে এগুতে পারলো না।পেছন দিকে হেলে শব্দ করে এয়ারপোর্ট এর মেঝেতে পড়ে গেলো।মাথায় ভারী আঘাতের কারণেও অল্প মাথার পেছনের অংশ ফেটে রক্ত বেরুলো।
এয়ারপোর্ট স্টাফ দের মুখ হা হয়ে চোয়াল ঝুলে গেলো আকস্মিক এমন কাণ্ডে।
এদিকে নিজের চোখের জল আড়াল করে শেষবারের ন্যয় চুপকথা কে দেখতে পেছন ফিরলো রুদ্র।অল্প দূরেই মানুষের জটলা দেখে তার কপাল কুঁচকে উঠলো।সেই জটলায় চুপকথা কে খুজলো।না মেয়েটা নেই।কি এক মন কামড়ে দৌড়ে ভিড়ের মাঝে এলো রুদ্র।ধাক্কা দিয়ে মানুষ সরিয়ে নীচে তাকাতেই তার মস্তিষ্ক টনটনে ব্যাথায় ছেয়ে গেলো।এয়ারপোর্ট পুলিশকে নিজের কার্ড শো করে চুপকথাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো রুদ্র।পুলিশ ইমারজেন্সি এম্বুলেন্স কল করলেন।তাতে তুলে চুপকথা কে নেয়া হলো মস্কোর বড় প্রাইভেট হসপিটালে।
ডক্টর নার্সদের ছোটাছুটি দেখে হতভম্ব হয়ে ওয়েটিং চেয়ারে বসে রইলো রুদ্র।ঘটনা কি ঘটেছে কিছুই তার বোধ গম্য হচ্ছে না।মেয়েটাকে এই কদিনে একবার ও অসুস্থ দেখেনি সে।এমনকি তার কোনো বিশেষ রোগ আছে এই বিষয়েও রুদ্রকে কিছু জানায়নি চুপকথা।তবে হলো টা কি?নেহাত এমনকি অজ্ঞান হওয়া নাকি বড় কিছু?
ঘন্টা পাঁচেক পর একজন ডক্টর দৌড়ে এসে উদ্ভ্রান্ত গলায় শুধালো
“পেশেন্ট এর ফ্যামিল মেম্বার কে আছেন?
চুপকথার ফ্যামিলি সম্পর্কে কথায় কথায় জেনেছে রুদ্র।মেয়েটার মা নেই শুধু বাবা আছেন।ভদ্রলোক নামজাদা বিজনেস ম্যান।ক্যালিফোর্নিয়া তে তাদের বসবাস।স্ত্রী হারিয়ে ছন্নছাড়া জীবন লিড করেন।কিন্তু মেয়ের ভালোবাসার ব্যাপারে কোনো কমতি নেই তার।মেয়ের ইচ্ছেই তার তার ইচ্ছে।মেয়ের স্বপ্নপুরনে কোনো কমতি রাখেন নি তিনি।মেয়েকে উড়তে দিয়েছেন মেয়ের ইচ্ছেমতো।ভদ্রলোক আপাতত বিজনেস ট্রিপে মালদ্বীপে আছেন।ফিরবেন আরো সপ্তাহ খানেক পরে।রুদ্র দৌড়ে ডাক্তার এর কাছে গিয়ে বললো
“আমি।পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে?
ডক্টর শক্ত মুখে শুধালেন
“জ্ঞান ফিরেনি।আপনি কি হন পেশেন্টের?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে কিছুটা ইতস্তত হলো রুদ্র।এরপর জড়তা মিশ্রিত গলায় বললো
“ফ্রেন্ড।
ডক্টর ঠোঁট গোল করে গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন
“তার মা বাবাকে লাগবে।
রুদ্র চট করে উত্তর করলো
“তার মা নেই।বাবা বিজনেস ট্রিপে আছে।আউট অব নেটওয়ার্ক।আমি একজন স্পেশাল নিউরোলজিস্ট।আপনি কোন ভনিতা না করে আমাকে নির্দ্বিধায় সব বলতে পারেন।
ডক্টর হাতে থাকা দুটো রিপোর্ট রুদ্রের পানে এগিয়ে বললো
“ইমারজেন্সি কেইসে টেস্ট গুলো করিয়েছিলাম আমরা।বলতে পারেন সন্দেহ থেকেই।যেহেতু আপনি একজন নিউরো সার্জন তাই রিপোর্ট বোঝানোর কোনো দরকার নেই আপনাকে।প্লিজ রিপোর্ট দুটো একটু খোলে দেখুন!
রুদ্র ভয়ার্ত কম্পিত চিন্তিত ভঙ্গিতে রিপোর্ট দুটো হাতে। নিলো এরপর তাতে নজর বুলালো।রিপোর্ট দেখেই রুদ্রের মাথা ঘুরে গেলো সেই সাথে টকটকে লাল হলো চোখ জোড়া।রুদ্রের এই মুহূর্তে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু বড্ড বেমানান লাগবে।ভারী হাহাকার মিশ্রিত শ্বাস ফেলে উক্ত ডক্টর কে উদ্দেশ্য করে রুদ্র বলে উঠলো
“টিউমার এর গ্রেড লেভেল ওয়ানে আছে এখনো।আর তেমন বড় ও হয়নি।এটা অপসারণ যোগ্য।এতো ছোট টিউমার এ ক্যানসার হয়নি এখনো যতটুকু আমার মন বলছে।যেহেতু টিউমার রক্তনালী স্পর্শ করেনি সেহেতু লাইফ রিস্ক ফ্রি।আপনি প্লিজ আরো কিছু থ্রি ডি টেস্ট ,বায়োপসি, আর পেট স্ক্যান এর টেস্ট গুলো করান।
রুদ্রের কথার ধরনে উপস্থিত ডক্টর বুঝে গেলেন সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন যুবক সাধারণ কোনো ডক্টর নয়।মাথা সম্পর্কে এবং চিকিৎসা সম্পর্কে তার জ্ঞানের বিস্তার ব্যাপক।তাই সময় ব্যয় না করে ডক্টর ভেতরে চলে গেলেন।ডক্টরের যাবার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে করিডোর জুড়ে পায়চারি করতে লাগলো রুদ্র।তার মন বলে উঠলো
“বিধাতা বোধ হয় তোর কপালে শুধু হতাশা আর দুঃখই লিখে রেখেছে রে রুদ্ররাজ।নয়তো সবাই এতো সুখী তুই কেনো এতো দুঃখী?তোর সংস্পর্শে যেই আসে সেই হারিয়ে যেতে চায়।তোর ছোয়া বড্ড কুৎসিত আর ভয়ানক!
বিছানায় আয়েশ করে পা ভাজ করে বসে ল্যাপটপে নিজের বিজনেস শেয়ার চেক করছে সারফরাজ।এখানে বসে বসে কাজ সামলাতে তাকে বড্ড হিমশিম খেতে হচ্ছে।খুব শীঘ্রই ক্যালিফোর্নিয়া ফিরে যাওয়া উচিত।এদিকে রূপকথাকে ছেড়ে বাথ্রুমেও যেতে ইচ্ছে করে না।ক্যালিফোর্নিয়া তো দুরকি বাত।মেয়েটার সামনে আবার এক্সাম আছে।সারফরাজ এখানে থাকলে তার পরীক্ষায়ই বসা হবে না।দুজন দুজনকেই পাগলের মতো ভালোবাসে।এটাই কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে পড়াশোনার মাঝে।মনে মনে পন করেছে সারফরাজ।সে আগামী সপ্তাহেই ক্যালিফোর্নিয়া ফিরে যাবে।এদিকে এঞ্জেলো টাকেও অনেক দিন ধরে আদর করা হচ্ছে না।সারফরাজ এর উপর তার আকাশসম রাগ।ইদানিং ভিডিও কল সারফরাজ কে দেখলেই সে দাঁত খেচিয়ে চলে যায়।
সারফরাজ এর ভাবনার মাঝেই সেখানে গুটি গুটি পায়ে হাসি মুখে উপস্থিত হলো রূপকথা।সুন্দরী বউকে কোলে তুলে চুমু না খেলে সারফরাজ এর মনটা কেমন আনচান করে।
“কি করছো?
শিশু সুলভ গলায় শুধালো রূপকথা।সারফরাজ হাত বাড়িয়ে রূপকথাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে টপাটপ গালে,ঠোঁটে,কপালে চুমু খেলো।এরপর বললো
“কাজ করছি।
“আমার চাইতে কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
সারফরাজ জিভ কেটে মাথা ঝাকিয়ে বললো
“উহু মোটেও না।বউয়ের ঊর্ধ্বে এই নস্যাৎ ধরণীর কিচ্ছু না।সেও বউ যদি হয় এরকম হটি,নটি সুন্দরী তাহলে তো কথাই নেই।
বলেই রূপকথার গলায় মুখ ডুবালো সারফরাজ।
রূপকথা প্রশ্ন হলো হলো এই উত্তরে।এরপর মনে কি যেনো ফন্দি করলো।চট করে উঠে দাঁড়ালো সারফরাজ এর বাহু ভেদ করে।এরপর সরল গলায় বললো
“সারফরাজ হাত পাতো!
“হাত পাতলে কি হবে?
ল্যপটপের কাজে পুনরায় মনোনিবেশ করে উদাস ভঙ্গিতে কাজে ডুবে শুধালো সারফরাজ।ছোট বাচ্চার ন্যায় ঠোঁট উল্টে রূপকথা আদুরে ভঙ্গিতে বললো
“আরে পাতোই না
সারফরাজ ঠোঁটের কোণে প্রশস্ত হেসে কাজ ফেলে রূপকথার পানে ঘুরে হাত বাড়িয়ে বললো
“কোনো সারপ্রাইজ?
রূপকথা মাথা ঝাকিয়ে বললো
“চোখ বন্ধ করো।
সারফরাজ সব কটা দাঁত বের করে চোখ বুঝে ফকিরের ন্যয় হাত পেতে রইলো রূপকথার সামনে ।যদি কোন সারপ্রাইজ পাওয়া যায় এই লোভে।কারন মাঝে মাঝে চোখ মুখে কাপড় বেঁধে ভালোবাসা দেয় রূপকথা।বেশ লাগে ওসব দুস্টু দুস্টু ভালোবাসা।শরীরে অনন্য শিহরণ জাগে।
সারফরাজ হাত বাড়াতেই দুস্টু হেসে সারফরাজ এর হাতের উল্টোপিঠ চেপে ধরলো রূপকথা।এরপর গলা খেঁকরে ঘাক ঘাক করলো ।সারফরাজ এর শক্ত প্রশস্ত হাতের তালু ভরে থুথু ফেলে হো হো করে হেসে উঠলো রূপকথা।হাতে উষ্ণ তরলের অনুভূতি পেতেই লাফিয়ে উঠলো সারফরাজ।চোখ খুলে হাতের তালু ভর্তি থুথু দেখে মাথা ঘুরে উঠলো তার।জতোক্ষনে সারফরাজ বিছানা ছেড়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো ততক্ষণে রূপকথা পগার পাড় ।চোখ মুখ বিকৃত করে হাত উঁচুতে তুলে রূপকথার পিছু পিছু নেমে এলো ড্রয়িং রুমে।কিন্তু আশেপাশে নেই রূপকথা।হয়তো মায়ার ঘরে গিয়ে দরজা আটকেছে।আজকাল মেয়েটির ছেলেমানুষি বেড়েছে খুব।প্রাণাধিক প্রিয় মানুষটির সংস্পর্শে থাকলে মন থেকে আপনা আপনি এসব ছেলে মানুষী আসে।এগুলোতে বিরক্তির চাইতে ভালোবাসা কাজ করে বেশি।
এদিকে সারফরাজ দের বিশাল ডাইনিং এরিয়ায় টেবিল চেয়ারে বসে আয়েশ করে পরোটা আর কশা মাংস খাচ্ছেন সুফিয়ান চৌধুরী।মায়ার রান্না লাজবাব।কর্নেল সাহেব এই রান্না খেয়েই স্ত্রীর বশে থেকেছেন এই ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে নিশ্চিত সুফিয়ান চৌধুরী।প্রতিদিন দুটো করে রুটি খান তিনি।তবে এবাড়িতে আসার পর থেকে বেয়াইন এর হাতের ছয়,সাত পিস রুটি আর গরুর মাংস সাটাচ্ছেন তিনি।
সুফিয়ান চৌধুরী কে খোশমেজাজে পরোটা চিবুতে দেখে সারফরাজ দৌড়ে গিয়ে সেই থুথু ওয়ালা হাত এগিয়ে বলে উঠলো
“একটু হোয়াইট সস নিন আব্বা।আপনার মেয়ে তৈরি করেছে।বেশ সুস্বাদু।
জামাই এর আচরণে খুব খুশি হলেন সুফিয়ান চৌধুরী।মনে মনে জামাই এর সুবুদ্ধি সু আক্কেলে একটু দোয়াও করলেন।এরপর মুখে এক পিস মাংস চালান করে খুশিতে সারফরাজ এর হাতের পানে তাকালেন।সারফরাজ এর হাতের তালুতে তরল পদার্থ দেখে কিছুক্ষণ নাক মুখ সিটকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসে রইলেন সুফিয়ান চৌধুরী।এরপর জিভ উল্টে ইয়াক শব্দ করলেন।নির্বিকার হাসি খুশি সারফরাজ এর হাতের তালু দেখেই বমি পেয়ে গেলো সুফিয়ান চৌধুরীর ।তিনি ওয়াক ওয়াক শব্দ করতে করতে খাবার ছেড়ে দৌড়ে বেসিনে গেলেন।এরপর আরো কয়েক দফা ওয়াক ইয়াক করলেন।কিন্তু পেট গলিয়ে কিছু বেরুলো না।সকালের ব্রেকফাস্ট এ সারফরাজ এর বা হাত ঢুকিয়ে খাবারের স্বাদ পন্ড করার দায়ে সুফিয়ান গলা বাড়িয়ে অভিশাপ দিলেন
“তোর ছেলে তোকে পায়খানা থেকে গু তুলে খাওয়াবে দেখিস বজ্জাত হতচ্ছাড়া।আমার পিছনে সারাক্ষণ লেগে থাকার মজা তখন টের পাবি।তখন আমি কি করবো জানিস?বাঁশি ফু দিবো আর হাত তালি দিয়ে তোর ছেলেকে দ্বিগুন উৎসাহ দেবো।
প্রানপ্রিয় স্ত্রীর থুথু হাতে নিয়ে খুশি মনে এক হাত গালে চেপে বসে রইলো সারফরাজ।যেনো কতো দামি কিছু হাতে নিয়ে বসে আছে সে।
সুফিয়ান ন্যাপকিনে মুখ হাত মুছে নাক উঁচিয়ে ঘৃণা প্রকাশ করে শুধালেন
“মনে হচ্ছে আমার মেয়ের থুথু হাতে পেয়ে আকাশের চাঁদ পেয়েছিস!এতো খুশি?
সারফরাজ অবাক চোখে থুথুর পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“আপনার মেয়ে যখন ছোট ছিলো তখন আরো কিছু এই হাতে ধরতে হয়েছে আমাকে কমিশনার সাহেব।এগুলো ভালোবাসা।আমার ভালোবাসার সামনে আপনার ভালোবাসা তুচ্ছ,ফিকে।আমার সবটা দিয়ে আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি।এই যে থুথু দেখছেন যেটা দেখে আপনার বমি পেলো এটা দেখে আমার আনন্দ হচ্ছে।আপনার মেয়েকে আরো ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু….
এমন সময় মেয়েলি স্বরে ইয়াক ইয়াক ভেসে এলো।চোখ মুখ কুঁচকে দুজনেই উপরে তাকালো।কন্ঠটা রূপকথার।রূপকথার বমির শব্দে সুফিয়ান চৌধুরী চোখ কপালে তুলে দাঁত খেচিয়ে দৌড়ে গিয়ে নিজের বন্দুক নিয়ে এলেন।এরপর দূতলা থেকেই সেটা সারফরাজ এর দিকে তাক করে বলে উঠলেন
“এসব করতেই ক্যালিফোর্নিয়া গেছিলি তাই না?মেয়ে বিয়ে দিয়েছি বলে আমাকে এক্ষুনি নানা বানিয়ে দিবি তুই?
ঘটনার আকস্মিকতায় সারফরাজ এর মাথা ঘুরে উঠলো।তাদের মধ্যে এমন কিছু দুর্ঘটনা কখনোই ঘটেনি।তবে বাচ্চা এলো কোত্থেকে?
মায়া আর রেখা কোনো মতে রূপকথার বমি থামিয়ে চিন্তিত হলেন।কিন্তু রূপকথা পুনরায় বমি করে ঘর ভাসিয়ে নেতিয়ে পড়লো।মায়া রিস্ক নিতে চাইলেন না।তিনি সারফরাজ কে কড়া গলায় আদেশ দিলেন হসপিটালে নিয়ে যেতে।সম্বিৎ ফিরে পেতেই গাড়ি হাকিয়ে রূপকথাকে নিয়ে ছুটলো হসপিটালে।এদিকে সুফিয়ান চৌধুরী ঘেমে নেয়ে একাকার।হসপিটালে সকলের সামনেই হাইপার হয়ে যাচ্ছেন তিনি।আজ বোধ হয় সারফরাজ গ্যাড়াকলে পড়লো।সে শশুরের প্রতি নমনীয় হলো ।তার মুখ শুকিয়ে ছোট হলো।সুফিয়ান চৌধুরী থেকে থেকে সকলের অলক্ষে বন্দুক দেখাচ্ছেন সারফরাজ কে।আর দাঁত মুখ কামড়াচ্ছেন।একটু পর ডক্টর এসে বললেন
চেকমেট পর্ব ৬৬
“ভয়ের কিছু নেই গ্যাস ফর্ম করেছে।ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করেনি।তাই এমনটা হয়েছে।
সারফরাজ ধপ করে বসে পড়লো ওয়েটিং চেয়ারে।সুফিয়ান চৌধুরী বন্দুক কোমরে গুঁজে ফিসফিস করে বলে উঠলেন
“বেঁচে গেলি।নয়তো এটা তোর পেছনে ভরে দিতাম।
