চেকমেট পর্ব ৮
সারিকা হোসাইন
শহর জুড়ে সারফরাজ এর পালিয়ে যাবার খবর ফলাও হলো খুব দ্রুত।চিটাগাং বিভাগের প্রত্যেকটি থানায় সারফরাজ এর ছবি পাঠিয়ে কঠিন নজরদারি জারি করা হলো।আর্মি,পুলিশ, নেভি, বর্ডারগার্ড সবাইকেই দেয়া হলো কঠিন হুঁশিয়ারি।কোনো ভাবেই যেনো সারফরাজ পালাতে না পারে।প্রশাসন আজ খুব ব্যাস্ত।সামান্য একটা সতেরো বছরের কিশোরকে নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল মাতামাতি আর ভয়ানক আতঙ্ক ।
এদিকে খুবই মুমূর্ষু অবস্থায় হসপিটালে এডমিট করা হলো সুফিয়ান চৌধুরী কে।ক্লোজ রেঞ্জ থেকে শুট করার কারনে বুলেট তখনই বেরিয়ে গেছে।কিন্তু রক্ত পাত হয়েছে প্রচুর।সুফিয়ান চৌধুরীর লাইফ রিস্ক খুব প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে।শ্বাস চলছে খুবই ধীরে।শরীর ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে।হসপিটাল জুড়ে ডক্টর নার্স আর পুলিশের দৌড়াদৌড়িতে কান ভারী হয়ে উঠলো।নিয়াজ মোর্শেদ এর কাছে বিষয়টা কেমন যেনো সন্দেহের ঠেকলো।কিন্তু সুফিয়ান চৌধুরীর দীর্ঘ বছরের সততা আর কঠোরতা তাকে দমিয়ে রাখলো।
স্পেশাল ভাবে পুলিশ কারে রেখাকে হসপিটালে আনা হলো।সামান্য একটু সুখ ধরা দিতেই আবার যেনো কষ্ট এসে ভর করলো তার জীবনে।কিন্তু রেখা কাঁদলো না আজ।শোকে কেমন পাথরের মত রূপকথাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো ওয়েটিং চেয়ারের এক কোনে।
মুহূর্তেই কয়েক ব্যাগ রক্ত জোগাড় করা হলো।সেগুলো ক্রস ম্যাচ করে আবারো নার্স ছুটলো ইমারজেন্সি অটিতে।নার্স ঢুকা মাত্র বৃহৎ ওটি রুমের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।জ্বলে উঠলো লাইট।চলতে লাগলো এক দিকে রক্ত বিনিময় অপরদিকে অপারেশন।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
চৌকস বুদ্ধিদীপ্ত সাব ইন্সপেক্টর জাহাজ ছাড়ার দু মিনিট আগে সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে সারফরাজ কে তুলে দিলো বিশাল মালবাহী কার্গো শিপে।জাহাজের গন্তব্য ক্যালিফোর্নিয়া।সময় লাগবে এক মাস বা তার বেশি।সারফরাজ এই জাহাজে একজন খালাসীর পরিচয়ে থাকবে।ক্যালিফোর্নিয়া যাওয়া মাত্র সুফিয়ান চৌধুরীর বন্ধু তাকে রিসিভ করবে।এমনটাই জানে আবির।সারফরাজ এর হাতে কিছু শুকনো খাবারের প্যাকেট দিয়ে দ্রুত নেমে গেলো আবির।আবির চলে যেতেই বিকট হুইসেল বাজিয়ে সমুদ্র চিড়ে ধীরে ধীরে চলতে লাগলো জাহাজ।এতোক্ষন সময় ধরেও সারফরাজ কেমন কঠিন হৃদয়ের মানুষের মতো নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিলো।আকাশি চোখ জোড়াতেও ছিলো অদম্য সাহস।ভয় যেনো তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারছে না।কিন্তু জাহাজ চলতেই সমস্ত সাহস কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।চোখ জোড়াও কেমন অসহায় হলো।নিজের মা বাবা হারিয়েও যেই ছেলে শক্ত মনে দিন পাড় করেছে সেই ছেলে হঠাতই অজানা ব্যথা আর একাকী ভয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলো।নিজের বয়স ভুলে দু বছরের ছোট বাচ্চার ন্যয় কেঁদে উঠলো সারফরাজ।নিজের অবস্থান থেকে রূপকথার অবস্থা অনুধাবন করলো সে।মেয়েটির মায়াবী কান্নারত মুখশ্রী মনে পড়তেই বুক ভেঙে আরো কান্না এলো।রূপকথাকে আগলে রাখার মানুষ আছে।কিন্তু তাকে কে আগলে নেবে?এই ভয়াবহ বিশাল দরিয়া কিভাবে পাড়ি দিবে সে?জাহাজের মাস্তুলে দাঁড়িয়ে বিশাল খোলা আকাশ আর নিষ্ঠুর সমুদ্র নজর বুলালো সারফরাজ।এরপর গলার সমস্ত শক্তি খাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো
মা…..
চোখের পলকে কেটে গিয়েছে একটি মাস।সুফিয়ান চৌধুরী এখন সুস্থ।কিন্তু পুরোপুরি নয়।এখনো উঁচু গলায় কথা বলতে পারেন না তিনি।বুকের আর পিঠের ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে।রূপকথাও কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।সারফরাজ এর শার্টের বোতাম এর দিকে তাকিয়ে থেকেই দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় তার।রেখা চিন্তা ভাবনা করেছে আর কয়েক দিন গেলেই রূপকথাকে স্কুলে ভর্তি করবে সে।বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব হলে আর মনমরা হয়ে থাকবে না।রূপকথার এক্সট্রা দেখা শোনা করার জন্য আরেকজন ন্যানি রাখা হয়েছে।মেয়েটি সারাক্ষন রূপকথার সাথে কথা বলে খেলে।প্রথমে রূপকথা কারো সঙ্গ পছন্দ করতো না।কিন্তু ধীরে ধীরে নিঝুম নামের ন্যানির সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
রেখা যেই কাজ করতে না পারে নিঝুম তা খুব সহজেই রূপকথাকে বলে মানাতে পারে।মন থেকে মরে যাওয়া রূপকথাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বাইরে নিয়ে বিশেষ সময় কাটায় নিঝুম।রূপকথা প্রথমে বাইরে থাকতেই চাইতো না।নিঝুমের প্রচেষ্টায় এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।রেখা বেশ কয়েকজন চাইল্ড নিউরোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হয়েছে।প্রত্যেকের একই কথা বেবি মনে আঘাত পেয়েছে।স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।রেখা প্রহর গুনে।রূপকথা স্বাভাবিক হয়ে তাকে মা বলে ডাকবে।কিন্তু রূপকথা তার পরিবর্তে রেখার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে।তার মতে এই মহিলা জোর করে সারফরাজ এর থেকে তাকে আলাদা করে দিয়েছে।আর তার স্যাভিয়ের সারফরাজ কোথাও হারিয়ে গেছে।রূপকথা জানে কেউ বেড়াতে গিয়ে এতো দিন থাকেনা।নিশ্চিত সারফরাজ হারিয়ে গেছে।আর কখনো সারফরাজ ফিরে আসবে না।তাকে রূপকথা বলে ডাকবেও না।
গার্ডেনে নিঝুমের সাথে হেটে হেটে বিভিন্ন ফুল দেখছিলো রূপকথা।হঠাৎ সারফরাজ এর কথা মনে পড়তেই ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠলো মেয়েটি।ছোট ছোট দুই হাত মেলে ডেকে উঠলো
“তুমি কি আর ফিরবে না সারফরাজ?আমার কষ্ট হচ্ছে।এদের কাউকে আমার ভালো লাগেনা।তুমি অনেক পঁচা সারফরাজ।না ফিরলে আর কথা বলবো না তোমার সাথে।
মেয়েটির কান্নারত মুখের পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো নিঝুম।এরপর কোলে তুলে চোখ মুছিয়ে বললো
“কেঁদোনা রূপকথা।সারফরাজ ফিরবে।
ভাঙা সিক্ত গলায় রূপকথা অবুঝের ন্যয় শুধায়
“কবে ফিরবে?
উত্তর জানেনা নিঝুম।শুধু কম্পিত গলায় বলে
“ফিরবে রূপকথা।
এদিকে মেয়ের কান্না পুরোটাই আড়াল থেকে দেখলেন সুফিয়ান।সহ্য করতে না পেরে রাত দিনের হিসেব না কষেই বন্ধু আলেকজান্ডার কে কল করলেন।ভদ্রলোক বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন।কারন এখন গভীর রাত।ঘুম জড়ানো চোখে ফোন হাতড়ে সামনে এনে স্ক্রিনে সুফিয়ান এর নম্বর দেখে হাই তুলে ফোন কেটে দিয়ে পুনরায় ব্যক করলেন।আলেকজান্ডার কে পেয়ে সুফিয়ান জিজ্ঞেস করলো
“বন্দরে খুজ নিয়েছিলে?
আলেকজান্ডার ভাঙা কন্ঠে বললো
“আজ পোর্টে নোংর ফেলবে জাহাজ।খবর নিয়েছি।তুমি চিন্তা করো না।আমি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
নিশ্চিন্তে আরো কিছু কথা বলে ফোন কেটে দিলেন সুফিয়ান।এরপর চোখ বুজে বির বির করে বললেন
“তোর মত করে রূপকথাকে আমরা কি ভালোবাসতে পারছি না সারফরাজ?
হাজার হাজার কন্টেইনার দিয়ে ভরা ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচ পোর্ট।পৃথিবীর সমস্ত কন্টেইনার ভর্তি মালামাল যেনো এই বন্দরে এনেই খালাস করা হয়েছে।সারফরাজ দের জাহাজ যখন এই পোর্টে নোঙর ফেললো তখন প্রায় সন্ধ্যা।জাহাজ এর ক্যাপ্টেন উইলিয়াম লোকা হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিলেন সাবধানে মাল বের করার জন্য।কারন জাহাজভর্তি রাসায়নিক পদার্থ।একটু গড়বড় হলেই বিশাল অগ্নিকাণ্ড ঘটবে।ক্যাপ্টেন এর ঘোষণা পাওয়া মাত্র হৈ হৈ করে সমস্ত খালাসি দৌড়ে এলো।খালাসীদের সাথে সারফরাজ নিজেও নেমে এলো।
এরপর বৃহৎ পোর্ট এর চারপাশে নজর বুলালো।ক্যাপ্টেন লোকা বন্দরে নিজের নিত্য কাজ গুলো কমপ্লিট করে খুঁজে খুঁজে সারফরাজ কে বের করলেন।এরপর একটা মালবাহী লরী তে তুলে দিয়ে ইংরেজি ভাষায় সেই ড্রাইভার কে একটা রাস্তার ঠিকানা দিলেন।
লড়িতে উঠার আগ মুহূর্তে কিছু ক্যালিফোর্নিয়ার ডলার সারফরাজ এর হাতে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলেন
“ড্রাইভার যেখানে তোমাকে নামিয়ে দেবে ওখানে একটা হাইওয়ে রোড আছে।যেখানে একটা মাইলস্টোনে লিখা থাকবে লস এঞ্জেলস 63 কিমি।ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি।আলেকজান্ডার স্যার তোমাকে ওখান থেকে রিসিভ করবে।উনি অলরেডি বেরিয়ে গেছেন বাসা থেকে।এই ট্রাক ওই রোড ধরে লস এঞ্জেলস যাবে।
সম্মতি জানিয়ে লাফিয়ে ট্রাকে উঠলো সারফরাজ।ট্রাক চালু হবার আগে ক্যাপ্টেন ডেকে শুধালো
‘ইংরেজি জানো?
তাচ্ছিল্য হেসে সারফরাজ বললো
‘ইংলিশ মিডিয়াম এর স্টুডেন্ট ছিলাম আমি।মন্দ ভাগ্য তাই এখানে।
আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না ক্যাপ্টেন।ট্রাকের ড্রাইভার কে বারবার সতর্ক হুঁশিয়ারি দিয়ে যাত্রা করার তাগাদা দিলেন।ড্রাইভার আর না দাঁড়িয়ে সারফরাজ কে নিয়ে ছুটে চললো গন্তব্যে।
আলেকজান্ডার প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছেন নির্দিষ্ট স্থানে।ক্যাপ্টেন তাকে ফোনে সব জানিয়েছে।সুফিয়ান নিজেও ছেলেটির বর্ননা দিয়েছে তাকে।সারফরাজ কে চিনতে মোটেও ভুল হবে না তার।তাই বেকার সময় কাটানোর জন্য গাড়ি থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরালেন ভদ্রলোক।এমন সময় একটা শ্বেত বর্ণের ছেলে এসে তার সামনে দাঁড়ালো।ছেলেটির চোখ মুখে কেমন ক্রুরতা।পুরো মুখশ্রী জুড়ে অদ্ভুত ভয়ানক সব ট্যাটু আকা আর গলার কাছে ইংরেজি রোমান সংখ্যায় লিখা 14।আলেকজান্ডার বুঝলেন ছেলেটি কোনো গ্যাঙ এর সদস্য।
আজকাল ক্যালিফোর্নিয়া শহরে টাকা পয়সা আর ড্রাগস সেবনের জন্য ছেলে যুবক সকলেই বিভিন্ন গ্যাঙ এর সাথে যুক্ত হচ্ছে।নিজের ফ্যামিলি ফেলে গ্যাঙ এর লিডার কে নিজের ড্যাড হিসেবে মেনে নিচ্ছে এই মানুষ গুলো।ছেলেগুলো বিভিন্ন ভাবে মানুষ কে হ্যারেস করে জোর করে ছিনতাই করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা পয়সা,স্বর্ণালংকার এমনকি লুট করে নিচ্ছে কার্গো ট্রাক গুলোও।এতেও ক্ষান্ত নয় তারা।মন মতো কিছু না হলেই মানুষের জীবন পর্যন্ত কেড়ে নিতে দ্বিধা করে না এরা।ছেলেটির পানে একবার নজর বুলিয়ে নিলেন আলেকজান্ডার।রীতিমতো হেলে দুলে পরে যাচ্ছে সে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ড্রাগ এডিক্টেট।অবস্থা বেগতিক বুঝে গাড়িতে উঠে পড়তে উদ্যত হলেন আলেকজান্ডার।কিন্তু তার আগেই ছেলেটি ভারী গলায় বলে উঠলো
“গিভ এভরিথিং ইউ হ্যাভ।
ছেলেটির ভয়ানক কন্ঠে পা জোড়া থেমে গেলো আলেকজান্ডার এর ।ছেলেটি ইতোমধ্যে তার পিছে এসে দাঁড়িয়েছে।হাতে একটা রিভলবার।আলেকজান্ডার কোনো বাক্য ব্যয় না করে নিজের ওয়ালেট আর ফোন ছেলেটির সামনে সোপর্দ করে বলে উঠলো
“গো এওয়ে।
ছেলেটি বাঁকা হাসলো।এরপর আরেকটু এগিয়ে এসে বললো
“টেল মি ইউর ব্যাঙ্ক একাউন্ট।
এবার যেনো ধরাশায়ী হলেন আলেকজান্ডার।খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গিয়েছেন তিনি এটা বুঝতে পেরে হাত ঘড়িতে নজর বুলালেন।সারফরাজ এর দেখা নেই এখনো।আলেকজান্ডার এর ঢিলেমি সহ্য হলো না যুবকের।সে তার গান আলেকজান্ডার এর কপালে তাক করে ধমকে উঠলো
“তেল মি সুন
আলেকজান্ডার কথা বলার আগেই সেখানে ট্রাক থামলো।ড্রাইভার কোনো মতে সারফরাজ কে নামিয়ে তড়িঘড়ি করে বিদেয় নিলো।এই দেশের কালচার বা সিস্টেম কোনো টাই সারফরাজ বুঝে না।সে কাঁধের ব্যাগ ফেলে দৌড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ছেলেটি এবার সারফরাজ এর দিকে গান তাক করলো।মুহূর্তেই ভীত সারফরাজ হাত উপরে তুলে বলে উঠলো
“হু আর ইউ?
আলেকজান্ডার সংক্ষেপে সারফরাজ কে সব বুঝাতেই সারফরাজ বাঁকা হাসলো।খুনির আঁতুর ঘরে জীবনের সাতটি বছর কাটিয়েছে সে।সুবহান গং কোনো প্রকার ট্রেনিং ই বাদ রাখেনি তাকে সেরা খুনি হিসেবে গড়ে তুলতে।তাই নিজের কৌশল খাটিয়ে মুহূর্তেই ছেলেটির হাত থেকে কেড়ে নিলো বন্দুক ।কিছু বুঝে উঠবার আগেই আরো কয়েকজন ছেলে ঝড়ের বেগে দৌড়ে এলো সেখানে।সারফরাজ বুঝলো সবাই আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিলো।ছেলে গুলো দৌড়ে এসে কেউ চাকু,কেউ কুংফু চেইন কেউ বা পিস্তল তাক করে সারফরাজ এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“ইউ মেইড এ বিগ মিসটেক।ডিজ ইজ আওয়ার এরিয়া।
সেখান থেকে একজন আঠাশ কি ঊনত্রিশ বছরের যুবক এগিয়ে এসে কোনো বাছবিচার না করেই আলেকজান্ডার কে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো।বাবার বয়সী মানুষের সাথে এমন আচরণ সহ্য হলো না সারফরাজ এর।কোনো ভয় ভীতি তাকে স্পর্শ করল না আর।নিজের পশু সত্তা যেনো জেগে উঠলো।সারফরাজ মনে মনে ভাগ্যের উপর হাসলো
“জীবন আমাকে দুধর্ষ খুনি বানিয়েই ছাড়বে দেখছি।
নিজের ক্রোধ সামলাতে না পেরে সারফরাজ সেই যুবকের মুখ বরাবর এক শক্ত ঘুষি বসিয়ে বলে উঠলো
“আই ফাক ইউর এরিয়া..
সারফরাজ এর ঘুসিতে ছিটকে দূরে পরলো যুবক।যুবক ছিটকে পরতেই উপস্থিত সকলেই ডেকে উঠলো
“জ্যাকব
জ্যাকব হুড়মুড়িয়ে উঠে ঠোঁটের কোণের রক্ত মুছে ওর্ডার দিলো
“কিল দ্যাট বাস্টার্ড।
মুহূর্তেই এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো যেনো।সারফরাজ এর হাতের বন্দুক কারো চোখে ভীতি তৈরি করলো না।যারা গ্যাঙ লিডারের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গ্যাঙ এ যুক্ত হয় তাদের আবার কিসের মৃত্যুভয়? নিরুপায় আলেকজান্ডার প্রানের শঙ্কায় গাড়িতে উঠে সারফরাজ কে ফেলেই চলে গেলেন।
সারফরাজ আলেকজান্ডার এর যাবার পানে তাকিয়ে অসহায়ের ন্যায় বলে উঠলো
“ভাগ্য আমাকে নিয়ে ভালোই হাডুডু খেলছে দেখছি।
ছেলেগুলো সারফরাজ কে ঘিরে ধরে দাঁত মুখ খেচিয়ে বিশ্ৰী অশ্রাব্য গালাগাল দিতে লাগলো।সেগুলো শুনে সারফরাজ এর পায়ের রক্ত ছলকে মাথায় উঠলো।নিজের ক্রোধ সংবরন করে দাঁতে দাঁত পিষে বললো
“হু ইজ ইউর লিডার?
জ্যাকব এগিয়ে এসে বুক টান করে দাঁড়িয়ে বললো
“নট লিডার কল কি ড্যাড।
সারফরাজ তার ভয়ানক চোখ জোড়া দিয়ে ছেলেটিকে একবার দেখলো।উচ্চতায় তার সমানে সমান।এরপর ছেলেটির চোখে চোখ রেখেই পায়ে গুলি বসিয়ে দিলো।গুলি খেয়ে মুহুর্তেই মাটিতে বসে পড়লো জ্যাকব।এরপর ছো মেরে পাশে অবস্থিত ছেলের থেকে কুংফু চেইন কেড়ে নিয়ে কেউ কিছু বুঝে উঠবার আগেই জ্যাকবের গলায় পেঁচিয়ে ঘাড়ে উঠে বসলো সারফরাজ ।এরপর শক্ত করে দুই প্রান্ত থেকে সেই চেইন টেনে ধরে শুধালো
“হু ইজ ইউর ড্যাড?
ছেলে গুলো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জ্যাকব এর বিকৃত মুখ পানে তাকিয়ে রইলো।দলনেতা হীন তাদের মূল্য নেই।জ্যাকব মারা গেলে অন্য গ্যাঙ এর ছেলে এসে এখনই পিষে ফেলবে তাদের।এদিকে সারফরাজ এর নিষ্ঠুর হাতের পিস্টনে জ্যাকব এর জিভ বেরিয়ে এলো।সারফরাজ আবার ও ধমকে উঠলো
“হু ইজ ইউর ড্যাড?
ছেলে গুলো কম্পিত হাতে নিজেদের হাতিয়ার তাক করে বলে উঠলো
“লিভ হিম।আদারওয়াইজ উই উইল কিল ইউ।
ইতোমধ্যে সারফরাজ বুঝে গিয়েছে দলনেতা এদের প্রাণ ভোমরা।আর এখানে বেঁচে থাকতে হলে আধিপত্য বিস্তার করে মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করেই টিকতে হবে।নিজের বুদ্ধি আর টিকে থাকবার সংগ্রাম চিন্তা করে বাছবিচার হীন জ্যাকব এর মাথায় গুলি করে ধমকে উঠলো
চেকমেট পর্ব ৭
“হু ইজ ইউর ড্যাড?
জ্যাকবের লুটিয়ে পড়া দেহের পানে তাকিয়ে হাটু মুড়ে বসে গেলো ছেলেটি।এরপর সারফরাজ আবারো হুংকার ছাড়তেই মাথা নিচু করে বলে উঠলো
“ইউ আর আওয়ার ড্যাড