ছায়াস্পর্শ পর্ব ১২

ছায়াস্পর্শ পর্ব ১২
জান্নাত চৌধুরী

বেলা ৯ টা আজ আবহাওয়া খুব বেশি একটা ভালো না। সকাল সকাল সূর্য মামা তার তেজ দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। কেমন জানি ভ্যাঁপসা এক গরম।
সকাল সকাল সাদা পাঞ্জাবি পড়ে একদম তৈরি হয়ে অন্দরমহল এসে সোফায় বসেছেন চেয়ারম্যান সাহেব। আজ পরিষদে যেতে হবে খুব দরকারী কাজ রয়েছে। নির্বাচন যত বেশি এগিয়ে আসছে কাজের চাপ যেন আরও দ্বিগুণ বাড়ছে। বাড়বেনা , এযে এক দায়িত্বের কাজ। গ্রামবাসীর খারাপ ভালো বিচারের গুরু দায়িত্ব। গ্রামের সকলে চেয়ারম্যানকে ভালো মানুষ বলেই জানে , তাই দুই- দুইবার বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

বেতের সোফায় বসে পায়ের উপর পা রেখে খবরের কাগজে একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে চেয়ারম্যান। রেনুর মা বেশ কিছু সময় আগে এসে চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ডাক দিয়েও ফেলেছেন। তবে চেয়ারম্যান সাহেবের নজর সেদিকে নেই । এইদিকে চা যে ঠান্ডা হতে চললো , রেণুর উপায়ান্তর না পেয়ে আবারো ডেকে ওঠেন

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-সাহেব চা তো ঠান্ডা হইয়া গেল, খাইবেন না?
চেয়ারম্যান সাহেব খবরের কাগজ ভাজ করে সামনে টি টেবিলে রাখতেই , রেণুর মা হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয় তার দিকে। বেশি গরম নেই , চায়ের কাপ হাতে পেয়ে চোখ বুজে গাঢ় এক চুমুক বসান তিনি।
সকালবেলা এক কাপ দুধ চা যেন মনকে খুশি করে দেয় তার। প্রথম চুমুক দিয়ে চায়ের কাপ হাতে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রেণুর মায়ের উদ্দেশ্য বলেন..
– হ্যাঁগো কোহিনুর, দক্ষিণ পাড়ার খবর কি কিছু জানো ? নির্বাচনে খন্দকার বাড়ির কেউ কি এবার নমিনেশনের কাগজ জমা দিব না , নাকি?
ঘামাক্ত হাত শাড়ির আঁচলে মুছতে মুছতে রেণুর মা হাসি মুখে বলে
-তার কইতে চেয়ারম্যান সাহেব ! শুনলাম খন্দকার সাহেবের পোলা উড়ান ভাইজান আইছে ঢাকা থেইকা। পুরা নির্বাচনের সময়টা নাকি খন্দকার সাহেবের পাশেই থাকবো।
ভ্রু জোড়া কুচকে নেয় চেয়ারম্যান। চায়ের কাপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকিয়ে কোহিনূরের দিকে। বেশ অবাক হওয়া ভঙ্গিতে বলে

– কি বলিস— উড়ান কোনটা ,খন্দকারের ছোট পোলাডা নাকি?
হো চেয়ারম্যান সাহেব ছোটডা ! যেইডা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবার আইন না —কি জানি কয় হেইয়া পাস করছে।
শুনছি এবার খন্দকারের দুই পোলা নাকি যেমনি হোক বাপরে নির্বাচনে জিতাইয়া ছাড়াবো।
রেণুর মায়ের কথায় কিছুটা মুচকি হাসি চেয়ারম্যান । চায়ের কাপে আরও একবার চুমুক দিয়ে বলে
– তাই নাকি।

খালি তাই না, উরান ভাইজানের মাথায় কিন্তু মেলা বুদ্ধি। আপনে ছোট নবাবরে একটু সাবধানে চলতে কইয়েন, নাইলে ওই খাচ্চর খন্দকার আর তার দুই পোলা কখন ছোট নবাবের কি ক্ষতি কইরা দেয়— মালিক জানে।
চায়ের কাপে শেষ এক চমক দিয়ে অবশিষ্ট বেশ খানিকটা চা সহ রেনুর মায়ের দিকে কাপ এগিয়ে দেয় চেয়ারম্যান।
– ছোট নবাব উঠলে পরিষদে যাইতে কইয়ো কোহিনুর। আইজ পরিষদে যাওয়া ভীষণ দরকার।
রেণুর মা ডানদিকে ঘাড় কাত সম্মতি জানায়। চেয়ারম্যান সাহেব বসা থেকে উঠে দাড়ায়। তবে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগেই, রেণুর মা আবারো বলে ওঠে

– বলছিলাম কি চেয়ারম্যান সাহেব.. মাইয়াডার বয়স হ‌ইছে বিয়া দেওন লাগতো। আপনে যদি কি..
রেণুর মায়ের কথা শেষ করার আগেই থামিয়ে দেয় চেয়ারম্যান। রেণুর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আময়িক কন্ঠে বলে
– তুমি বিয়ার সব আয়োজন করো কোহিনুর। যত খরচাপাতি হ‌ইবো সব আমি দিতাম।
খুশিতে চোখ চিকচিক করে ওঠে রেণুর মায়ের ! চেয়ারম্যান বেড়িয়ে যায়। অরুনিমা রন্ধন শালা হতে ডেকে ওঠে রেণুর মাকে। শাড়ির আঁচল চোখের পানি মুছে নিয়ে -সেও রন্ধনশালার দিকে চলে যায়।

পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেমন ফোন – ঠিক তেমনি
আকামের আসল সুত্র এই ফোন , যেই জিনিস টার উপর দুদিন পর পর খেপে যায় আরাধ্য। নাছর বান্দা এক জিনিস … একবার বেজেছিস হয়েছে তা না বারবার কাঁপছিস কেনো বে ।
ঘুম ভেঙে যায় আরাধ্যের বালিশের নিচে ফোনটা কাঁপছে। ধোঁয়াসা মাখা চোখে কোনোমতে বালিশের নিচ হাতরে ফোন বের করে কানে রাখে বলে
– আপনি যাকে কল করেছেন , সে এই মুহূর্তে তার নাগিন ব‌উয়ের- শীতল শরীর জড়িয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছে। অনুগ্রহ পূর্বক তার ঘুম শেষ হ‌ওয়া অবদ্ধি অপেক্ষা করুন।
টাটা বাই বাই ।

কোনোমতে কথাটুকু বলেই – কল কেটে দেয় সে। ফোন হাতে রেখেই ইফরাহর পিঠে নাক ঘষে আবারো ঘুমের দেশে যাওয়ার ট্রেনে উঠবে ঠিক তখনি আবার কেপে ওঠে ফোন।
এবার যেন বেশ বিরক্ত হয়েই , স্ক্রিনে নজর বুলায়। চেয়ারম্যান সাহেব ফোন করছে… আরাধ্য হাত দিয়ে চোখে ডলা দিয়ে আবারো ফোনে তাকায় , ” হ্যাঁ চেয়ারম্যান সাহেব ফোন করছে। আরাধ্য কল কেটে যাওয়ার আগেই রিসিভ করে লাউডে দেয়।
– বলুন আব্বাজান ।
আরাধ্যের কিছু সময় আগের ব্যবহারে‌ই বিরক্ত চেয়ারম্যান। বেলা ১১টা ৪৫। তবুও ছেলের পরিষদে যাওয়ার খবর নেই, তিনি কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলেন!
– জলদি পরিষদে এসো !
আসছি ..

উত্তর পাওয়া মাত্রই কল কেটে দেয় চেয়ারম্যান। আরাধ্য আড়মোড়া ভেঙে ইফরাহ কে ছেড়ে উঠে বসে বিছানায়।‌ফোনের কল লিষ্টে থাকা দ্বিতীয় নাম্বার -আবারো ডায়েল করে …
কিছু সময়ের অপেক্ষা অপর পাশের কল রিসিভ হতেই আরাধ্য তেতো গলায় বলে …
– আমার বালের নাতি – আপনাকে বলা হয়েছিলো বেলা ১১টায় আসতে এসেছেন ?
বিপরীত পক্ষের কথপোকথন ঠিক শোনা যায় না । আরাধ্য কিছু সময় চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বলে
– অপেক্ষা কর আসছি !
কল‌ কেটে বিছানা ছেড়ে উঠতে নিবে ঠিক এমন সময়। ঘুমের মাঝেই নড়ে ওঠে ইফরাহ্। থেমে যায় আরাধ্য …চোখ বুলায় তার ঘুমন্ত ব‌উয়ের মুখে দিকে।

কি সুন্দর বাচ্চা বাচ্চা এক মুখ। ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটাকেও ঠিক কতটা সুন্দর লাগছে তা যে সে মুখে বলে প্রকাশ করতে পারবেনা। ঘুম রানীর , তৈলাক্ত ত্বকের এই সৌন্দর্য্য যেন তাকে নতুন করে প্রেমে ফেলে।
আচ্ছা এই মেয়ে কি মাটির তৈরি। এ কি সত্যি মাটির তৈরি ..
এতো সুন্দর কেন। এই মেয়ে কি বোঝে তাকে দেখলেই আমার সব এলোমেলো লাগে। ইসস ছোটখাটো একটা মানুষ –

হুহ ছোট খাটো হলে কি হবে’ ব‌উ তার ভীষণ ডেঞ্জারাস। এই তো সকালে যদি – কথার মাঝ পথে ব‌উকে থামিয়ে না দিলে, না জানি কি কি প্রশ্ন করে বসতো। তাইতো ব‌উটাকে চেপে ধরে শুয়ে পড়েছিল যেন সব ভুলে যায় মেয়েটা। প্রথমে বেশ কিছু সময় ছোটাছুটি করলেও পড়ে ঠিকি ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
হঠাৎ আরাধ্যের নজরে আসে ইফরাহ শাড়ির আঁচলের সরে গিয়ে উন্মুক্ত পেটে কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। শুষ্ক ঢোক গিলে সে, কিছু সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইফরাহর উন্মুক্ত পেটে কালো তিল টাকে আড়াল করে রাখা কালো সুতার দিকে।
গলা শুকিয়ে আসছে।এ কেমন অনুভূতি? আরাধ্য দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।
শরীর ঘেমে উঠছে দুহাতে মাথা চেপে ধরে নিজে নিজেই বিরবির করে….

– আরে শালা সামলা নিজেকে , এইভাবে চোখ দিয়ে ব‌উটাকে গিলে খাবি নাকি। একদম নয় এতে মেয়েটা তোর চরিত্র দাগ দিবে।
চরিত্র , এই কথাটা স্বরণে আসতেই নিজেকে মনে মনে কয়েক
‘ শ ‘ খানেক গালি ছুড়ে সে। রাগ লাগছে … মাথা ছেড়ে দিয়ে ইফরাহর মুখের দিকে তাকায় ।
তবে , নজর যেন ঘুরে ফিরে সেই উন্মুক্ত পেটেই গিয়েই থামে।
– উফব মাইরি , এই মেয়ে তো দেখছি আমার সতীত্ব হরণ করে ছাড়বে। নাহ এখানে এখন থাকা চলবে না।
কথাগুলো বলেই আরাধ্য যেই বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে ওমনি শাড়ির কিছু শাড়িতে পা বেঁধে ধপ করে ইফরাহ্ উপরেই পড়ে যায় সে ।
এদিকে ঘুমের মধ্যেই পুরো ঘর কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠে ইফরাহ …

– আহহহহহহহ।
আরাধ্য ভরকে যায় নিজের শরীরের ভর আরো কিছুটা ইফরাহর উপরে ছেড়ে দিয়ে, মুখ চেপে মেয়েটার।
— উমমমম …মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে না পেড়ে হাত ছোড়াছুড়ি শুরু করে ইফরাহ। তবে আরাধ্যের পেটানো শক্ত শরীরে মারতে গিয়ে তার নিজের হাতেই ব্যথা পায় ..
আরাধ্য এক ধ্যানে ইফরাহর চোখে দিকে তাকিয়ে থাকে। আশে পাশে কোনো কিছু তার খেয়ালে নেই। এই যে ভারি একটা শরীর নিয়ে চিকন – রোগা মেয়েটার উপর পড়ে আছে এতে যেন হুস নেই। ইফরাহর রাগ লাগে ! সুযোগ বুঝে কামড় বসিয়ে দেয় আরাধ্যের হাতের তালুতে।

খুব বেশি ব্যথা না লাগলেও ধ্যান ভাঙ্গে আরাধ্যের নিজের অবস্থান বুঝতে পেরেই ইফরাহর উপর থেকে দ্রুত উঠতে চায় সে .. তবে তা আর হলো ক‌ই? এবারো উঠতে নিয়ে প্যাঁচানো শাড়িতে লেগেই সোজা ফ্লোরে পড়ে যায়- বেচারা।
– ওরে আল্লাহ ! জীবনে বুঝি এইটাই বাকি ছিলো ? ব‌উয়ের আদর না পেয়ে লাথি খেতে হচ্ছে।
ইফরাহ বিছানায় ছেড়ে উঠে রাগি গলায় আরাধ্যকে কিছু বলতে নিবে। তার আগেই আরাধ্য টেনে বিছানা থেকে ফ্লোরে ফেলে তাকে আবারো চেঁচিয়ে ওঠে .. ইফরাহ।

– আহহহ !
আরাধ্য দ্রুত এগিয়ে এসে চেপে ধরে ইফরাহর ধনুকের মতো বাঁকানো কোমড়। দুষ্টু হেসে নাটকীয় স্বরে বলে !
– উফফ.. আরাম লাগছে ব‌উ ?
রাগে দাঁত কটমট করছে ইফরাহ। একে তো কোনো প্রকার মজা মশকরা তার ভালো লাগেনা। আর এই লোক কিনা ফেলে দিয়ে বলে আরাম লাগছে!
– এই যাহ! রাগলে করলে নাকি রক্তকমলিনী। শোনো

ছায়াস্পর্শ পর্ব ১১

” দহন রূপাদের ” এতো রাগ করলে চলেনা। এমনিতেই তোমার রূপ আমার মতো অবলা পুরুষ কে, পুরিয়ে ছাই করে দিচ্ছে। সাথে যদি আরো রাগ মিশ্রণ করো তবে – এই টুসটুস টমেটো কখন যে কামড়ে নিবো। তুমি জানতেও পারবে না
টুসটুস টমেটো কথাটা বলতে গিয়েই ইফরাহ গাল টেনে দিয়েছে আরাধ্য।এদিকে ইফরাহ হা করে আরাধ্যের এতো সময়ের রসিয়ে রসিয়ে বলা কথা গুলো হজম করলো। রাগ করতে গিয়ে আর রাগ লাগছে না তার ।

ছায়াস্পর্শ পর্ব ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here