ছায়াস্পর্শ পর্ব ১৩
জান্নাত চৌধুরী
প্রায় দুপুরে হয়ে এলো ,
আজ গোসল সেরে আটপৌরে বাঙালিয়ানা ভাবেই শাড়ি পড়ছে ইফরাহ। লম্বা চুলগুলো সেই একরকম হাতখোপা করা— মেয়েটা চুলের ব্যাপারে বরাবরই একটু অলস। আরাধ্য বেড়িছে প্রায় ঘন্টা খানেক হয়ে এলো। শাড়ির লম্বা আঁচল টেনে মাথা চুল ঢেকে সিঁড়ি দিয়ে নামছে সে।
অরুনিমা রন্ধনশালায় দুপুরে খাবারের আয়োজন করেছে। নয়তো দেখা যাবে খানিক বাদেই বাপ ছেলেতে এসে খাবার চেয়ে বসবে , অথচ রান্না বাড়া কিছুই হয়েনি। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে ঘর সংসার করা, স্বামীর মুখে খাবার তুলে দেওয়া। সন্তানের দেখাশোনা এরচেয়ে বেশি আর কি চাই জীবনে।
এই সুখের আশায় তো মীর আহনাফের হাতে ধরে, সেবার ঘরে ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলো অরুনিমা। পরিবারের বেশ আদুরে হওয়ায় ঢাকা হতে এই সুদূর পঞ্চগড়ে মেয়ে কোনো কালেই বিয়ে দিতে চায়নি অরুনিমা বাবা। তবে কচি বয়সের প্রেম কি আর বাঁধ মানে ?
ইফরাহ মাথা নিচু করে ধীর পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ায় অরুনিমার পাশে। চুলায় মুরগির কষানো মাংসে পানি দিয়ে ইফরাহ দিকে তাকান তিনি।
– কি গো বউ এই চুলোর আঁচে এসেছো কেন শুনি ?
ইফরাহ ঘন পাপড়িরর সাদা মনির চোখ তুলে একঝলক তাকায় অরুনিমা মুখের দিকে। খানিক তাকিয়ে থেকে সহসাই দৃষ্টি নামিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– আ আমি আপনাকে কিছু সাহায্য করে দেই গিন্নি মা!
রেণু মা লাউ কাটছিলো তবে ইফরাহর কথা শুনে দ্রুত এসে দাঁড়ায় দায় তার পাশে। ব্যাস্ত স্বরে বলে…
– সেকি বউরানী আপনে নয়া বউ ! আপনে এই রান্ধন ঘরে কি করবার আইছেন? ছোট নবাব শুনলে কিন্তু মেল্লা রাগ করবো।
আপনের কিহ কিছু লাগবো ? তাইলে আমারে কন , আমি দিমু।
কোন উত্তর করে না ইফরাহ মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সে । অরুনিমা চুপ থেকে পর্যবেক্ষণ করে ইফরাহ ভয়ার্ত মুখ। হ
আঙুল দিয়ে হাতে তালু ঘুষছে মেয়েটা। রেণুর মা আবারো কিছু বলতে নিবে। ঠিক তখনি থামিয়ে অরুনিমা …
– আহ কোহিনুর বেশি কথা বলে গোশতে নাড়া দেও।
অরুনিমা চুলার সামনে থেকে সরে আসতেই রেণু মা গিয়ে দাঁড়ায়। মাংসের পানি শুকিয়ে এসেছিলো অরুনিমা একবার সেদিকে তাকিয়ে ইফরাহকে বলে
– শোনো বউ , তুমি আমার বাপজানের একমাত্র প্রাণ। তুমি বলতে বাপজান আমার পাগল। তুমি শুধু আমার বাপজানের খেয়াল করো, তার উগ্র স্বভাব শান্ত করো। বাকি সংসার সমলাইতে আমি রইছি।
ইফরাহ ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকায় অরুনিমা দিকে। ফর্সা গড়ণে কি অপরূপা এই নারী। যৌবন কালে নিশ্চয়ই আরো বেশি সুন্দর ছিলেন। থ মেরে যায় ইফরাহ , এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে অরুনিমার দিকে।
– এইযে মেয়ে ।
অরুনিমা নাড়া দেয় ইফরাহর হাত , কেঁপে ওঠে মেয়েটা। মনে ভাবনা গুলোকে ঘুম পাড়িয়ে ভয় ভয় চোখে তাকায় অরুনিমার দিকে –
মেয়েটা ভয় পাচ্ছে ভেবে অরুনিমা এগিয়ে এসে আদুরে হাত রাখে ইফরাহর গালে। ইফরাহ দৃষ্টি রাখে অরুনিমার মায়াবী চোখ জোড়ায়। অরুনিমা মুসকি হেসে মিষ্টি স্বরে বলে —
– আমার পাগল টা তোরে মেল্লা ভালোবাসে আম্মা। আর আমার বাপজানের ভালোবাসা পাইছো মানে , তুমি ভাগ্যবতী। আমি তার মা বইলা কইনা আমার বাপজানের মনডা খাটি সোনা গো আম্মা।
পোলা আমার যারে ভালোবাসে তার লাইগা জীবন দিয়া দিবো।
তবে শত্রুর কলিজা বাহির করে আনতে কিন্তু দুইবার ভাবে না।
ইফরাহ অপলক তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিলো। এক মুহুর্তের জন্যও চোখের পলক নড়ে নি তার। অরুনিমা কিছুটা ঝুঁকে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় ইফরাহ কপালে।
– আমার সংসারের লক্ষী তুমি আম্মা। সবসময় মনে রাখবা এইডা তোমার বাড়ি। সব তোমার নিজের, ফারহান যেমন আমার জানডা , তুমি আমার সে জানের জান। আমার ঘরের আলো আম্মা। তুমি চুলার পারে আইবা না- তোমার কোনো কাজ করা লাগবো না। তুমি শুধু আমার পোলারে ভালো রাখো আম্মা।
” গিন্নি মা তরকারি হইয়া আইছে .. এইবার কি টমেটোর চাটনি খান করমু।”
রেণুর মায়ের ডাকে দু’জনে কথার ভাটা পড়ে। অরুনিমার চোখে কণা চিকচিক করছিল। ইফরাহ নজর এড়ায় না কিছুই , সে বেশ ইতস্তত হয়ে মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলে —
– আপনি কি কাঁদছেন গিন্নি মা
– ওসব গিন্নি মা কিরে ? তোরা হয়েছিস আজ কালের মেয়েরা। সবাইকে পর পর ভাবিস। আগের দিনে আমরা মা – চাচিদের , ছোটআম্মা – বড়আম্মা কইতাম । এখনের বাচ্চারা চাচি -জেঠী বলে ; থাক সেসব কথা আগে বল তো শুনি —মেয়েরা মাকে কি ডাকে?
ইফরাহ মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে ” আম্মা ”
– তবে তুমি আমার মেয়ে হলে কি ডাকবে ?
চট করে মাথা উঁচু করে তাকায় ইফরাহ বেশ আনন্দ লাগছে তার মনে মাঝের ভয় টা যেন কোথায় উড়ে গিয়েছে তার।
তাই সহসাই উত্তর করে
– আমি কি আপনাকে আম্মা ডাকবো গিন্নি মা ?
– কেন নয় একশত বার ডাকবি।
ইফরাহ খুশি দেখে এ যেন আকাশের চাঁদ পাওয়া মত আনন্দ। অরুনিমা দেখে মেয়েটার হাসি হাসি মুখ , শান্তি লাগছে তার। চুলার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে –
– দোতলার ঘরে মানহা আছে , আমার বোনের মেয়ে। তোর কিছু প্রয়োজন হলে তাকে বলিস ? এখন যা দেখি এখন থেকে দু’টোতে গিয়ে আলাপ তাড়িতা কর। আমায় রাঁধতে দে এই বুঝি উনি এলেন বলে !
ইফরাহ মাথা ঝাঁকিয়ে বিদায় নেয় রন্ধনশালা থেকে। শাড়ির আচল আবারো কিছুটা টেনে এগিয়ে যায় সিঁড়ি দিকে!
দুপুর একটা স্কুলের টিফিন পিরিয়ড চলছিলো সেই সুযোগে স্কুলের পিছনের সেই আধপ্রাচীর টপকে লুকিয়ে স্কুল বাঙ্ক করেছে রাইসা। আজ ক্লাসে তার একদম মন লাগছিলো না। কেমন জানি সব অস্থির লাগছে তার। আপা বাড়ি ছেড়ে গিয়েছে মাত্র তিনদিন হলো তবুও তার মনে হচ্ছে কতদিন সে দেখে না আপাকে।
কাঁচা মাটির পথ ধরে বই গুলো বুকে চেপে এগিয়ে হেটে যাচ্ছে সে। এই তো আর কিছুদূর গেলেই মীরপাড়া। তারপরেই চেয়ারম্যান বাড়ি।
” আচ্ছা আপার কি দেখা পাবো ? যাহ কি ভাবছি আপা নতুন বউ সে কি আর বাহির বাহির হবে নাকী ?”
এমন কতশত প্রশ্ন ঘোড়পাক খাচ্ছে রাইসার মনে। অনমনে হাঁটছিলো সে। তবে বিপত্তি বাঁধলো মীর বাড়ির বাগানের কাছে এসে। বড় এক জাম্বুরা গাছ নজরে এসেছে , এই গাছের জাম্বুরা বরাবরই ভীষণ মজা। মাত্রই অল্প কয়েকটা আছে ;
রাইসা বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকে গাছের কাঁচা রাস্তার একদম ধার কাছেই গাছটা। গাছ হতে দৃষ্টি নামিয়ে নেয় রাইসা , মনটা খারাপ লাগছে নিজে নিজেই বিরবির করছে সে –
– ধুর আজ আপা থাকলে নিশ্চয়ই এই জাম্বুরা আর গাছে থাকতো না ,সব আমাদের হাতে আসতো। প্রতিবার তো তাই হয় , স্কুল থেকে ফেরার পথে আপা চুড়ি করে নিয়ে যায়।
রাইসার মন মানে না সে আবারো দৃষ্টি দেয় গাছের দিকে। এবার গাছ কে উদ্দেশ্য করে বলে –
-শোন আমি হলাম ছোট নবাবের শালি। আর শালি মানে বুঝিস অর্ধেক ঘরওয়ালি । তার এই জাম্বুরার উপর আমার হক আছে , আমি তো জাম্বুরা খাবোই।
কথাগুলো শেষ করেই হাতের বইগুলো গাছের গুঁড়িতে রাখে রাইসা। স্কুল ড্রেসের জামাটা কিছুটা গুজে নিয়ে বাঁদরের মতো গাছ বেয়ে উঠে শুরু করে। মূহুর্ত খানিকের মধ্যে গাছে উঠে বড় বড় তিনটে জাম্বুরা ফেলে মাটিতে এবার তার নামার পালা। প্রথম পা এগিয়ে নিচের দিকে নামতে নিবে ঠিক এমন সময় কানে আসে বাইকের শব্দ। গাছের মাঝবরাব থেকেই বেশ আতঙ্কিত হয় রাইসা।খুব দ্রুত গাছ হতে নামতে চায় সে ,তবে বাইক টা বেশ কাছাকাছি এসে পড়েছে মনে হচ্ছে।
আর কিছু বাকি তবে এবার দ্রুত নামতে গিয়েই বাঁধ বিপত্তি ,গাছ থেকে স্লিপ কেটে ধপ করে কাঁচা শক্ত রাস্তায় পড়ে রাইসা। ঠিক বাইকের সামনাসামনি।
বাইক চালক বেশ দক্ষ তাই দ্রুত হাতে ব্রেক কষেছিল বেচারা। নয়তো এই মেয়ের আজ ইন্না লিল্লাহ হয়ে যেতো। রাইসা হাতের কুনুই ছুলে গিয়েছে কিছুটা পায়ে লেগেছে কিনা আপাতত বুঝতে পারছে না।
পরিষদের কাজ শেষ করেই এক বিচারে গিয়েছিলো আরাধ্য। গ্রামে নাকি কিছু পাতি নেতার আবির্ভাব ঘটেছে তাদের একটু ধোলাই দিতে গিয়েছিল। মেরেছে প্রচুর তার ফর স্বরুপ হাতে কপালে কিছুটা কেটেছে তার। সাদা ব্যান্ডেজে বাঁধাই ,
রেজা বাইক চালাচ্ছিল তার পিঠের উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে পিঠের উপর হাত রেখে আমারসে শুয়ে শুয়ে বাড়ির ফিরছিলো সে। তবে এমন ধিপ করে কাটা ব্রেকে যেনো, পড়তে গিয়েও নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়েছে ছেলেটা।
– মায়া গো মায়া , এই বাল’ ছেড়া নিশ্চয়ই আমাকে পটল খেত ঘুড়িয়ে আনতে চেয়েছিলো মায়া।
ভরকে যায় রেজা ঘাড় টা হালকা কাত করে তাকায় আরাধ্য মুখের দিকে তাকিয়ে বলে –
– ইয়ে মানে ছোট নবাব মায়া কে ?
ছোট ছোট ছোট করে তাকায় আরাধ্য। ডান হাত তুলে একটু তাকিয়ে থেকেই বেশ জোরে এক পাঞ্চ করে রেজার পিঠে –
সাথে কড়া করে জানিয়ে দেয়
– তোর আম্মা! মানে শামসির নতুন বউ।
কাচুমাচু হয়ে যায় রেজার মুখ। কোন কুলক্ষণে যে দাদা বাপের নাম রাখছিলো শামসুল। যার দৌলতে কথায়- কথায় শামসির পুত শুনতে হয় তার।
পড়ে গিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে রাইসা…! আরাধ্য আচমকাই রেজার ঘাড় ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে বলে।
– আরে শালা ! তোর গলার স্বর মেয়েদের মতো কবে হলো ? মেয়েদের মতো কাঁদছিস কেন ? ভাই তোর জেন্ডার ঠিক আছে তো আমার না সন্দেহ হচ্ছে।
আরাধ্য কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই আবারো ভেসে এলো কান্নার শব্দ। রেজাকে ছেড়ে এবার নিজের কাধ কিছুটা ঝুঁকিয়ে সামনের দিকে তাকায় আরাধ্য।তার বাইকে সামনে এক অল্প বয়সী স্কুল ড্রেস পড়া এক মেয়ে বসে বসে কাঁদছে।
– লে মোর খোদা ! এই আপদ আবার কই থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো।
– ভাই দুপুর বেলা গাছ থেকে টপকাইছে। আমার কি মনে বলেন তো ? মনে হচ্ছে শ্যাওলা গাছের পেতনি
আরাধ্য ভ্র কুঁচকে নিয়ে বেশ জোড়ে এক গাট্টা মারে রেজার সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে –
– জেন্ডারে সাথে চোখ দুটোও কি গেছে নাকি ? সামনে শ্যাওলা গাছ না জাম্বুরা গাছ।
রেজা অবুঝের মতো মুখ করে বলে , ” আমি কি করবো? মেয়েটা আপনার জাম্বুরা গাছ থেকেই টপকে পড়ছে।
আরাধ্য নেমে দাঁড়ায় বাইক থেকে। হাত কনুই তে ব্যান্ডেজ – ব্যথা কনকন তার। তবে সেদিকে থুরি পাত্তা দিবে সে , ভদ্রলোকের মতো এগিয়ে গিয়ে দাড়ায় রাইসার। মেয়েটা মাথা নিচু করে তখনো কাঁদছে। রেজা বাইক সাইড করে সেও এসে দাঁড়ায় আরাধ্যের পাশে।
রাইসার কান্না দেখে রেজা – আরাধ্য একে অপরের চোখাচোখি তাকায়। হাতে অনেকটা ছুঁলে গেছে যাতে প্রথম দৃষ্টি দেয় আরাধ্য। রক্ত ঝড়ছে খানিকটা তার বেশ গাম্ভীর কন্ঠে ডাকে য়
– এই চেংড়ি।
রাইসা দমে যায় ধীরে ধীরে তুলে তাকায় উপরের দিকে। মাটিতে বসে থাকা রাইসার সামনে আরাধ্য আর রেজা যেন বেশ লম্বা মতো এক জিরাপ। এদিক সামনে দাঁড়ানো ছোট নবাব কে দেখেই শুষ্ক ঢোক গিলে মেয়েটা। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ..
– ছো ..ছোট নবাব ।
আরাধ্য দেখে মেয়েটার চেহেরা এ যে আর কেউ নয়, তার একমাত্র বউয়ের এক মাত্র বোন। মানে তার শালিকা, বাহ!
এক বোন তেজি আরেক বোন গেছো বাদর। ঠোঁট বাঁকিয়ে কিছুসময় হাসে আরাধ্য –
– আরে শালি ! তুমি এই দিনদুপুরে গাছ থেকে টপকাইলা কেমনে সোনা ?
রাইসা বেশ সাবধানে উঠে দাড়ায়। আরাধ্য কে এমন সময় বিন্দুমাত্র আশা করে নি সে। এবার নিশ্চয়ই আপার কাছে বিচার যাবে তার নামে। ভয় রিতিমত হাঁটু কাঁপছে তার, আরাধ্য খেয়ালে আসে মেয়টা তাকে ভয় করেছে। কন্ঠ নমনীয়তা এনে সে বলে
-ধুর এতো কাঁপাকাঁপি করিস না তো চেংড়ি।
চোখ মুখ খিচে নেয় রাইসা। মনে মনে একটা কথা ভাবছে সে..
“ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি” রেজা দু’জনের কথপোকথন শুনছিলো। হঠাৎ তার নজর যায় গাছের গুঁড়িতে পড়ে থাকা রাইসার বই আর জাম্বুরার উপর। সে এগিয়ে যায় জিনিসগুলোর দিকে, তবে তার আগেই চিলের মতো ছৌঁ মেরে রাইসা গিয়ে, বই আর জাম্বুরা হাতে তুলে নেয়।
ঘটনা এতো দ্রুত ঘটেছে সব যেন রেজা মাথার উপর দিয়ে ওই দুরেও নারকেল গাছে বসেছে। বেচরা অসহায় মুখ করে তাকায় রাইসার মুখের দিকে। এতেই ফট করে জিহ্ব বের করে ভেংচি কাটে রাইসা।
” কি ফাজিল মেয়েরে বাবা ” নিজেই নিজের সাথে বিরবির করতে আবারো আরাধ্যের কাছে এসে দাড়ায় রেজা। ভেংচি শোধ নিতে বলে
– এতো দেখছি জাম্বুরা চুন্নি শ্যাওলা গাছের পেতনি নয় ছোট নবাব। এ্যাহ শেষে কিনা আপনার শালিকা চুন্নি! এই খবর এলাকায় জানাজানি হলে আপনার মানসম্মান থাকবে ?
আরাধ্য রাগী একটা লুক দেয় রেজার দিকে। রাইসার কানে রেজা সব কথাই গিয়েছে জাম্বুরা- বই সব নিয়ে এসে আরাধ্য সামানে আবারো মাথা নিচু করে দাড়ায় সে।
– আমি চুন্নি নই ছোট নবাব। কেউ ছিলো না তাই গাছের অনুমতি নিয়ে আমি তার ফল ছিড়েছি। বিশ্বাস না হয় গাছ জিজ্ঞেস করুন ?
কপালের কুঁচকে নে রেজা। ধমকে স্বরে বলে
– এই মেয়ে গাছ কি কথা বলতে পারে নাকি ? আমাদের বোকা পেয়েছো ?
‘ আপনার সাথে কথা না বললে আমি কি করতে পারি ? আমার সাথে বলেছে। সে বড় কথা নয়, এইখানে ছোট নবাব উপস্থিত তবে আপনি আমাকে প্রশ্ন করার কে ?
আরাধ্য দাঁড়িয়ে থেকে দুজনের ঝগড়া দেখছে। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে তার কিছু সময় পর পর মুসকি মুসকি করে হাসছে।
– এইটুকুনি মেয়ে হয়ে বড়দের মুখে মুখে কথা। দাড়াও জাম্বুরা খাওয়া বের করছি তোমার।
রেজা রাইসার দিকে এগোতে যাবে ঠিক তখনি ছুটে বেড়িয়ে যায় রাইসা কিছুটা দূরে গিয়ে জিহ্ব করে আবারো ভেংচি কাটে রেজাকে। সাথে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে –
লাল লাল জাম্বুরা ,
কে কে খাবি তোরা?
আমি খাবো চুড়ি কইড়া।
পাড়লে আমায় ধইরা দেখা
অদ্ভুত এই ছন্দে এবার ফিক করে হেসে ওঠে আরাধ্য। রেজার রাগ লাগে এইটুকু নি মেয়ে কিনা তাকে নাকানি ,চোবানি দিলো ভেবেই লজ্জায় পঁচা পুকুরে ডুবতে ইচ্ছে করছে তার। আরাধ্য হাসি থামিয়ে বলে ..
ছায়াস্পর্শ পর্ব ১২
– লুঙ্গির কাছা ইতিমধ্যে খুলে পড়েছে। বাকিটা খুলে পড়ার আগেই বাইকে স্টার্ট দে।
শেষবারের মতো যতটা রাইসা কে দেখা যায় সেদিকে তাকিয়ে বাইকে চড়ে বসে রেজা। আরাধ্য আগের স্থানেই দাড়ানো বাইক স্টার্ট দিয়ে তার কাছে এনে স্লো করতেই চড়ে বসে সে ।
