ছায়াস্পর্শ পর্ব ২০
জান্নাত চৌধুরী
ঘরের মাঝে খেলা করছে নীরবতা বাতাস। এক হাতেই ইফরাহর পেট চেপে বসিয়ে রেখেছে আরাধ্য , সূর্যের তাপ বাড়ছে সকালে রোদ এসে পড়েছে বেলকনিতে।
ইফরাহর চোখের পানি টলমল করছে। এক টানেপিছনের ব্লাউজের ফিতা খুলে দেয় আরাধ্য। ছোট করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় তাতে। ইফরাহ দু চোখ খিচে নিয়ে বলে-
-মাফ করুন ছোট নবাব, আপনার স্পর্শে ক্ষয় হবার সাধ্যি আমার নেই।
কাঁপা কাঁপা গলায় বলা কথাগুলো শুনেও যেন না শোনার ভান করে আরাধ্য। কিশোরী দেহের নাভির নরম মাংস খামচে ধরে নাক ঘষে তার পিঠে।
আহ ! এ যেন পুরো ড্রাগসের কাজ করছে “ আরাধ্য বড় বড় বিশ্বাসে ইফরাহর শরীরের ঘ্রাণ শুঁকে বলে –
-মাছে যেমন পানি ছারা জান যায় আর আসে। তেমনি বউয়ের সোহাগ ছাড়া আমার হৃদয় ব্লক মারে।
আরাধ্যের হাতের চাপ হালকা হয়েছে, চোখ খুলে ইফরাহ দূর পানে দৃষ্টি রেখে বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-আপনি আমাকে ভালবাসেন ছোট নবাব?
আরাধ্য অবাক হয়ে বলে-
-আরে মাইয়া বলে কি ,ভালোবাসি মানে ? একদম বাচ্চা পয়দা করার মতো ভালোবাসি। সত্যি বলছি মাইরি , তুমি চাইলে কিন্তু , আমি প্রমাণও দিতে পারি রক্তকমলিনী।
হতাশ হয় ইফরাহ ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে-
-“হাতে লেগেছে কি করে বললেন না যে!”
ইফরাহ কে ছেড়ে চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বুঝে নেয় আরাধ্য। মাথার চুল গুলো হালকা টেনে বলে –
-বলেছি তো চুরি করতে গিয়ে লেগেছে!
–“ মশকরা করছেন ?
-বালাই শাট আমার এত কলিজা আছে নাকি যে, মীর বাড়ির বউরানীর সাথে মশকরায় মেতে উঠবো ।
আরাধ্যের কোল ছেড়ে উঠতে নেয় ইফরাহ , তবে তার আগেই –
-“চুপচাপ বসো মেয়ে !”
আরাধ্যের কড়া ধমকে উঠতে গিয়ে উঠল না সে। আলতো হাতে ছুয়ে দেয় পেটের কাছে , আরাধ্যের স্পর্শের জায়গায় ক্ষত হয়েছে। লাল তরল বেরিয়ে আসছে চামড়া ছুলে , নখ বসে গিয়ে কেটেছে। ইফরাহ হাতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে-
“শুনেছি এককালে আপনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ?
-“সেতো তোমার ল্যাংটা কালের কথা মেয়ে। তখন তুমি খালি গায়ে, খুচি কাটা প্যান্ট পড়ে ঘুরতে।
আরাধ্যের উত্তরে থতমত খেয়ে যায় ইফরাহ। এই লোকের মুখে যে লাগাম নেই এটা সে বেশ বুঝছে। ভীষণ নির্লজ্জ একটা মানুষ। নিজেকে শান্ত করে বলে –
“ছাড়লেন কেন ?”
-যৌবনে লাড়া দিয়েছিলো। বেশ ধরাধরি- ছোয়াছোয়ি খেলতে মন চেয়েছিলো। যতই হোক, আমি কৃপণ মানুষ কলমের কালি অপচয় করা যাবে না। তাই খাতার টানে এসেছি।
এতটুকু বলেই থেমে যায় আরাধ্য। ইফরাহ বেশ কৌতূহলী হয়ে তার মুখ বরাবর ঘুরে তাকিয়ে বলে –
-তারপর কি হলো ..?
আরাধ্য কিছুটা মুচকি হেসে বলে-
“তারপর আর কি ?এসে দেখি আমার খাতা অন্য দখলে, সে আবার অর্ধেক পৃষ্ঠা পর্যন্ত আঁকিবুকি করেছে। আমি ছেলে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেলাম , যৌবনের উত্তেজনায় চাকরিটাও গেলো।
আবারো কিছুটা থেমে সে দীর্ঘশ্বাস টেনে বলে –
“ধোঁকা , ধোকা বুঝলে সব ধোঁকা। এক ছোট খাটো মুরগি বাচ্চা ছিলো ওই শালি। এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করে যখনি বাচ্চা থেকে কচি হলো। এক লাল কুত্তা তাকে টোপ দিয়ে তুলে নিলো ! ছ্যাহ”
ছোট ছোট চোখ করে তাকায় ইফরাহ। কিছু সময় চুপ থেকে আবারো বলে –
“ খাতা কলমের হিসাবের সাথে আপনার চাকরি ছাড়ার কাহিনী কি ছোট নবাব। আর চাকরি যখন ছেড়েছেন তবে এখন আপনার কর্ম টাই বা কি ?”
“বাংলা খাওয়া”
-“মানে ?”
ভিমরি খায় ইফরাহ! আরাধ্য টুক করে তার নাক টেনে দিয়ে বলে –
মানে হলো ..
এই আমি খেইয়েছি, প্রেমের সরাপ ।
আমার কিসের অভাব।
বাংলার নবাব আমি সেজে গেছি।
ওরে কখন জানি আসে মির্জাফর,
ভয়ে কাঁপে এই অন্তর।
এই হালে জীবন আমি কাটায়েতেছি !
আরাধ্যের গান শেষ হবার আগেই নিচ হতে ভেসে আসে , রেজার ভাঙ্গা গলার আওয়াজ। ইফরাহ দ্রুত কোল ছেড়ে উঠে দাড়াতেই আরাধ্য বলে –
“যাহ শালা ! মির্জাফরের নাম নিতে না নিতেই বেটা মির্জাফর হয়ে হাজির । দুই টোনা টুনি মিলে যে একটু খোস গল্প জমাবো , তাও যেনো কারো সহ্য হবার নয়।
নাহ- এবার তো দেখছি , এই শামসির পুতের দুই নাম্বার সুন্নাতে খাৎনা টা দিতেই হবে। নয়তো এই মা’ল আমার পেছেনে কাঠি ঠুকবে।
নিজে নিজেই বিরবির করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায় আরাধ্য। ইফরাহ কে পাশ কাটিয়ে সোফার কাছে এসে , কালো রঙের তোয়ালে তুলে কাঁধে ঝুলিয়ে উদাম শরীরেই বেড়িয়ে যায় ঘর ছেড়ে।
তবে ,
দরজার কাছেই গিয়ে উল্টো ঘুরে আবার ঘরের দিকে তাকিয়ে বলে –
-“ এই যে দহনরূপা গোসল পানি তৈরি রেখো । সাথে খানিকটা চন্দন গুঁড়ায় গোলাপের পানি মিশিয়ে রেখ। দেখি একটু রূপ চর্চা করে যদি কোনো নারীর মন পড়তে পারি !
ইফরাহ চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে ওঠে ,এই লোক আবার রূপ চর্চা ও করে। মানে ছেলেরা রূপ চর্চা ভেবেই মাথা ভোঁ ভোঁ করছে তার। আরাধ্য তার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু কিছু দুষ্টু হেসে আবারো বলে –
-থাক থাক বাচ্চা মেয়ে মাথায় এতো চাপ নিও না । নয়তো দেখা যাবে তোমার ঘন কেশ হতে চুল পড়ে মাথা টাক হয়ে রয়েছে
আরাধ্য কথা শেষ করেই চোখ টিপে দেয় , ইফরাহ ঠোট গলিয়ে কিছু বলবে তার আগেই গানে বাকি অংশ গাইতে গাইতে বেরিয়ে যায় –
আরে মাতাল হইয়াছি বন্ধুর প্রেমে পইরাছি –
বাংলার নবাব আমি সেজে গেছি।
আরাধের যাওয়ার পানে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে ইফরাহ, মনের অজান্তে বিড়বিড় করে
খেয়েছি প্রেমের সরাপ
আমার আবার কিসের অভাব?
এতোটুকু বলেই থেমে যায় সে! হুসে আসতেই কি বলছে বুঝতে পেরে বিরক্তি নিয়ে বলে-
-ধুর বালের গান। গায়ক বাংলার নবাবের ফিল্ম নিলেও আমি তো বউরানির ফিরে পাই না ছ্যাহ!
এই গান বয়কট..!!
কথাগুলো শেষ হতে দ্রুত দু হাতে মুখ চেপে ধরে এসব কি বলছি সে মুখ ফুসকে আজকাল কি সব অদ্ভুত কথা বেরিয়ে আসছে আশ্চর্য।
অন্দরমহল
একগাদা ভারী বই হাতে দাঁড়িয়ে আছে রেজা। বইয়ের উচু পিরামিডের কারণে বেচারার মুখটাই দেখার উপায় নেই। বইগুলো যে বেশ কষ্টে হাতে রেখেছে তা তার চুপসে যাওয়া মুখ দেখলেই যে কেউ বলে দিবে।
এদিকে ট্রাউজারে পকেটে হাত রেখে সিঁড়ি বেয়ে নামে আরাধ্য। ডানে বামে কাঁধ ঘুরিয়ে রেজার দেখা না পেয়ে বলে ওঠে –
-কি লো শামসির পুত , তুমি কুনঠে লা বাপ .?
একে তো এই ভারী বইয়ের ভার , তার ওপর আরাধ্যের হেঁয়ালি! আপাতত রেজার কান্না পাচ্ছে আর নয়তো লেজ গুটিয়ে পালাতে ইচ্ছে করছে। বেশ কষ্টে ঘাড় হালকা কাত করে সে বলে-
“ছোট নবাব এই যে মুই ! দয়া করে বলুন এগুলো কোথায় রাখবো?”
আরাধ্য ডানে- বামে ,উপরে -নিচে মাথা ঘুরিয়ে বলে-
-কই রে ? তৈ তৈ তৈ আমার শামসির পুত কই ? আমার মুরগি খাওয়া শেয়ালের ছানা কই ?
এবার বুঝি সত্যি সত্যি কেঁদে দেবে রেজা, এই লোকটা নাস্তানাবুদ না করে ছাড়ে না । ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে সে কিছু বলবে তার আগে আরাধ্য বলে-
-কিগো লেজ ছাড়া হুলো বিড়াল সামান্য বইয়ের ভার হয়েছে না বাছা তোমার! আর তুমি ব্যাটা যে এক অবলা নারীর উপর নিজের শরীর ছাড়বে, সে মহিলা কেমনে সইবে তোমাকে ?
“-ছোট নবাব ও সব নিয়ে পড়ে ভাবার সময় পাবেন। এগুলো কিন্তু বউরানীর বই এখন যদি মাটিতে ফেলি নিশ্চয়ই আপনার কলিজায় লাগবে।
রেজার কথায় আরাধ্যায় ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে ভাবক হয়ে বলে-
-তাও ঠিক আমার রানীর জিনিস তাইতো শাস্তি মাপ দিয়ে দেখি আমার রক্তকমলিনীর বইগুলো!
কথা শেষ করে আর এত হাত বাড়িয়ে বই নামিয়ে টেবিলে রাখে হাত ছেড়ে বাজেরে যা ছেলের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম শার্টের হাতা দিয়ে কপাল মুছে নেয়। রেজার দিকে তাকিয়ে আরাধ্য কাঁধের তোয়ালে দু হাতে টেনে প্রশ্ন করে-
-সব এনেছিস ?
-“ জ্বি ছোট নবাব”
রেজা উত্তর করে হাতের শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে শুরু করে। আরাধ্য বইয়ের দিকে এক পলক থাকে আবারো বলে-
-বেশ ভালো একখান ভ্যান ঠিক করবি , রোজ সকালে যেন আয়েশা বৌরানীরে স্কুলে নিয়ে যায় আবার ছুটি হইলে যেন নিয়ে আসে!
“- আইচ্ছা ছোট নবাব!
প্লিজ আর কথা শেষ হতে আর এত বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে-
হাহ্ ! বুঝলি রে শামসির পুত , বউ সুন্দরী হওয়াটা ভীষণ বিদিক।শালা দিন কালের যা পরিস্থিতি মাংস খেকো প্রানী অতপেতে থাকে সুযোগ পেলে চিড়ে ওঠাবে।
আরাধ্য থেমে যেতেই রেজা বলে ওঠে –
-একখান খবর ছিল ছোট নবাব, নদীর পারে আজ সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশ পাওয়া গেছে। মুখ ঝলসে দেওয়া হয়েছে, কি বিভৎস মৃত্যু ।চোখ থাকলে তুলে নেওয়া হয়েছে।
এতোটুকু বলেই সেলক্ষ্য করে আরধ্যের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। শান্ত হয়েই শুনছি সব ভেজা চোখ থেকে আবার বলে –
“সবচেয়ে বড় কথা এলাকায় নুতন অফিসার আসছে উপরমহল থেকে নাকি নতুন টিম গঠন করেছে।
“-এতো বেশ ভালোই খবর , কতকাল আর বাংলা খেয়ে বাচবি? এবার খানিকটা ইংলিশ ট্রাই কর !
আরেকবার কথায় যেন শান্ত হয়না রেজা সে কৌতুহলে হয়ে আরও কিছু বলবে তার আগে…
-গোসলের পানি ভরেছি আসতে পারেন!
আগমনে ঠোঁট ফুটে বেরেনো কথা কেও গিলে নেয় রেজা। আরাধ্য ঘার ঘুরিয়ে তাকায় তার বউ পাখির দিকে।
ছায়াস্পর্শ পর্ব ১৯
-আ আমি তাহলে আসি ছোট নবাব !
রেজার দিকে না তাকিয়ে হাত উঁচিয়ে ইশারা দেয় সে। ইফরাহ আড়চোখে তাকিয়ে দেখে রেজার যাওয়ার দৃশ্য। সে সদর দরজা পার হতেই ইফরাহ আবারো বলে –
-চলেন তবে !
