টেরিবেল পর্ব ১৫

টেরিবেল পর্ব ১৫
অনুপ্রভা মেহেরিন

মাফিন এবং নাট বেশ কয়েকবার এসে ফিরে গেছে এডউইন এখনো ঘুমে।অবশ্য তাদের এসবে অভ্যস আছে এডউইন সারারাত নিজের কাজে ব্যস্ত থেকে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত দেদারসে ঘুমাতে থাকে।আন্দ্রিয়া আসার পর থেকে রুটিনটার পরিবর্তন হয়েছে এডউইন বেশ সকাল সকাল কিচেনে প্রবেশ করে রান্না বান্না শুরু করে তবে আজকের রুটিনটা আবার এলোমেলো যাচ্ছে।এডউইনের ঘুম ভাঙলো দ্বিপ্রহরে।

আন্দ্রিয়া বিছানার একপ্রান্তে অপরদিকে এডউইন আরেক প্রান্তে।হাত পা টান টান করে উঠল বসল এডউইন শরীরটা কেমন ঝিমঝিম করছে একবার নজর বুলালো সারাটা কক্ষে খুব বেশি এলোমেলো হয়ে আছে এডউইন উঠে দাড়াতে নিলে হুশ ফিরল শরীরের সাথে একটা সুতাও লেগে নেই।কোন মতে তোয়ালে জড়িয়ে সারা রুম গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করল।পুরো রুম গোছগাছে সময় লাগল আধাঘন্টা আন্দ্রিয়া এখনো ঘুমে মেয়েটার নড়াচড়াও নেই।এডউইন তাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য আর তাড়া দিল না সময় থাকতে থাকতে গোসলের উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল।ঝিরঝির পানি গায়ে পড়তেই দাঁত মুখ খিচে চুপসে গেল এডউইন পিঠ বুক ভীষণ জ্বালা করছে।আন্দ্রিয়ার নখের আঁচড় এতটাই দেবে গেছে অনেক স্থানে রক্ত ঝরে শুকিয়েও গেছে।এডউইন শুরুতে পাত্তা না দিলেও ক্রমশ জ্বালা বেড়েই গেল কোন মতে গোসল সেরে ফিরে এলো আন্দ্রিয়ার কাছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কুইন কুইন?কুইন শুনছো?”
আন্দ্রিয়ার হুশ নেই মদের নেশা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি এডউইন অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করল কয়েকবার হু হা প্রত্যুত্তর করলেও মেয়েটা চোখ খুলে তাকাল না।এডউইন উঠে গেল এবং ফিরল পানি নিয়ে আন্দ্রিয়ার চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতেই মেয়েটা পিটপিট চোখে তাকায়।আন্দ্রিয়ার ঘুম ঘুম চোখের ঘোর এখনো কাটেনি সেই সাথে মদের প্রভাব।এডউইনের ভেজা চুল উদাম শরীর আন্দ্রিয়ার নিকট বড্ড আকর্ষনীয় লাগলো মেয়েটা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে এডউইনকে বলে,

” এত সুন্দর কেন আপনি?ইসস মাখন।”
” মাখন ঘি এসব বাদ দিয়ে উঠে পড়ো।”
আন্দ্রিয়া উঠল না কাঁথা চেপেই শুয়ে রইল।এডউইন আর বাড়াবাড়ি করল না আন্দ্রিয়ার নেশা কাটানো জরুরি মেয়েটার নিশ্চয়ই মাথা ভার হয়ে আছে।দ্রুত তেতুলের শরবত এনে আন্দ্রিয়াকে দিল।আন্দ্রিয়া কিছুতেই খাবেনা বাধ্য হয়ে তার মুখে ঠেসে খাইয়ে দিল।মুহূর্তে গা গুলিয়ে উঠল আন্দ্রিয়ার।মেয়েটা মুখে হাত চেপে বুমি দমন করতে চাইল এডউইন দ্রুত তার ঢিলেঢালা একটি শার্ট পরিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল।বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ পেটের ছাইপাশ উগড়ে দিয়ে শরীরটা ছেড়ে দিল এডউইনের দেহের সাথে।

” এডউইন আমার মাথা ঘুরছে।”
” মাথা কেটে ফেলে দাও।আমি বলেছিলাম এসব খেতে?”
” আমার সারা শরীর ব্যথা করছে কেন?মদ খেলে কি শরীর ব্যথা করে?”
এডউইন এবার অপ্রস্তুত হয়ে কেশে উঠল।আন্দ্রিয়ার দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি নেই সে কোন মতে এডউইনের সাথে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে।
” রুমে চলো।”
এডউইন আন্দ্রিয়াকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল।ধীরে ধীরে বোধি বুদ্ধি ফিরতে আন্দ্রিয়া চমকে গেল এডউইনের পানে তাকিয়ে বলে,
” এডউইন তার মানে কাল রাতে…”
” কাল রাতে?”
” কিছু একটা হয়েছিল?”
” না,সব হয়েছিল হানি।”

আন্দ্রিয়া মাথা চেপে কিছুটা সময় বসে রইল শরীরের ব্যথা ক্রমশ বাড়ছে।এডউইন ঢোক গিলল আন্দ্রিয়া যদি তাকে ভুল বুঝে?তবে কী হবে?এডউইন সেচ্ছায় কিছু করার আগ্রহ দেয়নি একমাত্র আন্দ্রিয়ার জোরাজোরিতে নিজের তাল হারিয়েছে।তার ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আন্দ্রিয়া আফসোস সুরে বলে,
” ফিল করতে পারলাম না।কিচ্ছু মনে পড়ছে না।”
এডউইন কপাল চাপড়ালো।কি অদ্ভুত মেয়েরে বাবা।
” চুপচাপ শুয়ে থাকো নাকি গোসলে যাবে?”
” হাটার শক্তি আছে?”
” ওহ।”
আন্দ্রিয়ার সম্মুখে এডউইনকে বেশ অপ্রস্তুত লাগছে তবে কি এডউইন লজ্জা পাচ্ছে?তার হাবভাবে তো তাই মনে হচ্ছে।

সন্ধ্যার আগে গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে আন্দ্রিয়ার।এডউইন পড়ল ভীষণ বিপাকে কোথা থেকে কি করবে মাথাটা ঠান্ডা করে ভাবতে পারল না।ঘরে থাকা ঔষুধ খাইয়ে আন্দ্রিয়ার কপালে জলপট্টি দিল মেয়েটা কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে গেছে।আন্দ্রিয়াকে রেখে পাখিদের সহিত কিছুটা সময় কাটাল এডউইন।আন্দ্রিয়া আসার পর থেকে কাউকে সময় দেওয়া হচ্ছে না। একটি কক্ষে দুটো ময়ূর রাখা এখানে তারাই থাকে অন্য পশুদের প্রবেশ এই কক্ষে নিষিদ্ধ।ময়ূরের কক্ষে প্রবেশ করে তাদের সাথে কিছুটা সময় কাটাল সে।সারা বাড়ি জুড়ে এত এত পশুপাখি এদের সাথে সময় কাটালে এডউইন ভুলে যায় তার দুশ্চিন্তা অথচ আজ মনটাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না।
সন্ধ্যারপর তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইমেল এলো কানাডার একজন গ্যাংস্টার এডউইনের সাথে জরুরি কথা বলতে চায়।দ্রুত হাতে ল্যাপটপ নিয়ে এডউইন চলে যায় অন্য কক্ষে, সময় মতো জোয়াকিম ফোন করল এডউইনকে।ফর্সা আকর্ষনীয় চেহারার অধিকারী জোয়াকিমকে দেখেই এডউইন কিঞ্চিৎ সৌজন্যমূলক হাসল।তাদের কথোপকথন শুরু হলো,

” হ্যালো জোয়াকিম।”
” হেই হ্যালো।এডউইন তোমাকে তো খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না হঠাৎ কি হলো তোমার?”
” ব্যক্তি জীবন নিয়ে একটু ব্যস্ত।”
” আমি যা সন্দেহ করছি তাই কি?এডউইন তুমি বিয়ে করছো?”
অপ্রস্তুত ভাবে হাসল এডউইন।জোয়াকিম এডউইনে হাসিকেই সম্মতি ধরে নিল।
” তাহলে তোমাকে বিরক্ত করা উচিত হয়নি নতুন বিয়ে নতুন নতুন সবকিছুই অন্যরকম সুন্দর।যাই হোক তোমাকে যে কাজটা করতে দেওয়া হয়েছে তা কি পারবে?”
” জি।তুমি যা চাও তা সময় মতো পেয়ে যাবে।বিবাহিত জীবন একদিকে আর আমার প্রফেশন আরেক দিকে।”
জোয়াকিম আশ্বস্ত হয়ে হাসলেন।
” হানিমুনে কোথায় যাবে এডউইন?”
” এসব এখনো ভাবার সময় হয়নি।”
” বিবাহিত জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।ঠিক আছে ফোন রাখছি।অল দা বেস্ট।”
এডউইন ফোন রেখে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল।বিয়ের তোড়জোড়ে হাতে জমে থাকা কাজগুলো একদম থেমে গেছে।যতদ্রুত সম্ভব এদিক ওদিক দুইদিকি সমান তালে সামলাতে হবে।

রাতের আঁধারে চুপি চুপি ঠেলা গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে মঞ্জু।মধ্য রাত শহরের সাধারণ মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখনি তো মঞ্জুর উপযুক্ত সময়।মনে কি প্রশ্ন জাগছে না ঠেলাগাড়িতে কি আছে?এই ঠেলাগাড়িতে আছে এগারোটি কঙ্কাল।এসব কঙ্কাল মঞ্জু বিক্রি করছে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে।তবে তার সাথে কেউ কি যুক্ত আছে নাকি এই গেমের সে একাই মাস্টারমাইন্ড তা এখন অবধি আঁচ করা যাচ্ছে না।ঠেলাগাড়ি থামল একটি ট্রাকের সামনে পিকআপ থেকে ড্রাইভার বেরিয়ে এসে মঞ্জুর হাতে হাত মেলাল।ড্রাইভার লোকটি মঞ্জুকে স্যার বলে সম্বোধন করে বলে,

” স্যার ভালো আছেন?”
” হুম।আসতে দেরি করলে কেন?”
” ইয়ে মানে একটু দেরি হইল আরকি।কয়টা কঙ্কাল আনছেন স্যার?”
” এগারোটা।”
” এত কম! কথা ছিল… ”
” আহ!এত অল্প সময়ে এত কঙ্কাল পাওয়া যায়?আমার শরীর ব্রেন আমাকে খাটাতে হয় তোমরা এসব কি বুঝবে?”
” এবারো কি সব মেয়েগো কঙ্কাল?”
“এই মঞ্জু মেয়ে ছাড়া কিছুই বুঝেনা।”
” স্যার লাভ করতে চাইলে ছেলেদের…”

টেরিবেল পর্ব ১৪

মঞ্জু আচমকাই রেগে গেল।ড্রাইভার লোকটার দিকে কটমট চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,
” চুপ কর।এসব নিয়ে এখান থেকে যাও।”
মঞ্জুর ধমকে ড্রাইভার আর কথা বাড়াল না চুপচাপ কঙ্কালগুলো গাড়িতে তুলে চলে গেল।

টেরিবেল পর্ব ১৬