টেরিবেল পর্ব ৫
অনুপ্রভা মেহেরিন
ঘুটঘুটে অন্ধকার মাড়িয়ে এই জঙ্গলের আকাশে ভোর হাসছে।হালকা আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে বাইরের পরিবেশ।সেই সাথে গাড়ির আলোয় কালো পোশাক ধারী লোক গুলোর দিকে তাকিয়ে শরীর কেঁপে উঠল আন্দ্রিয়ার।সেদিন তাকে বাঘের ন্যায় তাড়া করেছিল তারা আর সেও ছুটেছে লাগামহীন।অবশ্য একবার ধরা পড়লেও চুলের চিকন ক্লিপ দিয়ে একটা ছেলের চোখে আঘাত করে নিজেকে ছাড়িয়ে রাস্তার ধারে থাকা বালি সবার চোখে মে^রে পালিয়ে যায়।শেষ পর্যন্ত এডউইনের গাড়িতে আশ্রয় নিয়ে যা একটু বাঁচতে পেরেছিল তবে আজকে বোধহয় আর বাঁচা হবে না।
মৃত হোক কিংবা জীবিত তার বডিটা হাজির করতে হবে কোন এক জৈনিক ব্যক্তির কাছে।আন্দ্রিয়া ঝাপসা চোখে এডউইনের দিকে তাকায়।এডউইন তাকে অনেকটা সাহায্য করেছে তবে আজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।গাড়ির চাকায় গুলি ছোড়া হয়েছে আপাতত গাড়িটা অকেজো।এডউইন কি একা এই লোকগুলোর সাথে পেরে উঠবে?মোটেও না।আন্দ্রিয়াকে বসে থাকতে দেখে বড্ড বিরক্ত হলো এডউইন সে ধমকে বলে,
” কি হলো নামছো না কেন?তুমি কি চাও আমি বিপদে পড়ি?জেদ দেখিয়ে চলে এলে এখন নিজের রাস্তা নিজে মাপ।লিভ নাও।”
এডউইনের কথার মাঝে যে রাগ জড়িয়ে তা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারল আন্দ্রিয়া।শালোমী তাহলে ঠিক বলেছে সে অযথাই প্যালেস থেকে বের হয়েছে।ইসস শালোমীর কথা শোনা উচিত ছিল।আন্দ্রিয়া চোখের জল মুছে গাড়ি থেকে বের হলো তাকে দেখেই কালো পোশাক ধারী লোকগুলো বাঁকা হাসলো মিশন তাহলে কমপ্লিট হতে চলেছে।
” আন্দ্রিয়া মেরি গুড গার্ল।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দলের একজন কথাটি বলেই এগিয়ে এসে আন্দ্রিয়ার হাতে হ্যান্ডকাফ পড়াতে উদ্যত হলো।ঠিক তখনি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে বেরিয়ে এলো এডউইন।সে এসেই আন্দ্রিয়াকে বাম হাতে জড়িয়ে ধরল তার ডান হাতে অস্ত্র।অতর্কিত হামলায় বাকিরা বেশ বেকায়দায় পড়ল তারাও এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে।হ্যান্ডকাফ পড়াতে যাওয়া লোকটি গুলির ভয়ে নিচে শুয়ে যায় সেই সুযোগে তিনি এডউইনের পায়ে চাকু দিয়ে আঘাত করেন।ধারালো চাকুর আঘাতে দাঁত খিঁচে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে এডউইন।লোকটা আন্দ্রিয়ার পেটে চাকু বসাতে চাইলে এডউইন বাম হাতে চাকু ধরে ফেলে, লহমায় মাংস কেটে গলগলিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে সেই রক্তে ভিজে যায় আন্দ্রিয়ার হলুদ রঙের জামাটা।এডউইনের গায়ে একটি বুলেট লাগতে লাগতেও লাগলো না সে বুঝে ফেলল অবস্থা বেগতিক দ্রুত পকেট থেকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করল,টিয়ারশেলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকানোর সাথে সাথে আন্দ্রিয়ার হাত ধরে জঙ্গলের দিকে দৌঁড়াতে থাকলো।পেছনে ফেলে এলো ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং আততায়ীদের।
” এডউইন আপনার হাত…”
” চুপ করো।দৌঁড়াতে থাকো।দৌঁড়াতে পারবে নাকি কোলে তুলব?”
আন্দ্রিয়া অবাক না হয়ে পারে না এই লোকের হাত এত গভীর ভাবে কেটেছে অথচ সে আন্দ্রিয়াকে কোলে নিবে!জঙ্গলে দৌড়ানো এত সহজ কথা নয় এলোমেলো রাস্তা সামনেই গাছ এসে যায় উঁচু নিচু কোথাও বা খাদ সব মিলিয়ে বেশ কষ্ট হচ্ছে আন্দ্রিয়ার।
” আমি পারব।এখান থেকে প্যালেসে যেতে কতটা সময় লাগবে?”
” এমন জায়গায় ঢুকলাম শটকাট রাস্তা নেই ছুটতে থাকো।”
এই জঙ্গলে বছরের পর বছর এডউইন বসবাস করে কোথায় কি আছে তার বেশ ভালোই জানা আছে।আন্দ্রিয়াকে নিয়ে সে যখন ছুটছিল তখন আলো আরো স্পষ্ট হলো গাছের ঢালে ঝুলে আছে অসংখ্য বানর আর বাদুর।কাকের ডাক,পাখিদের কলরব সেসব না বললেই নয়।গাছের ঢালের সাথে লেগে গেছে তার পরনের ফ্রকটা।দ্রুত ছুটতে গিয়ে জরজেটের ফ্রেকটা একপাশ ছিড়েও গেছে।ভাগ্যিস পায়ে ছিল স্নিকার্স না হলে আজ পায়ের দফারফা হয়ে যেত।আন্দ্রিয়ার চুল খুলে গেছে তার ছোট্ট দেহে কোমড় সমান চুল বাতাসের গতির সাথে উড়ছে।এডউইন শক্ত হাতে ধরে আছে আন্দ্রিয়ার হাত।ধুপধাপ পা ফেলার শব্দে শুকনো পাতা মড়মড় আওয়াজ তুলছে তাদের দেখে একটা শেয়াল দ্রুত জঙ্গলের গহিনে ছুটে যায়।পশু পাখি সবার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে জঙ্গলে এরা কে এলো?কে ওরা?আজ এডভেঞ্চার নিয়ে শুরু হলো সকালটা এক মুহূর্তে আন্দ্রিয়ার মনে হলো সে রুপানজেল আর তার হিরো ফ্লিন রাইডার তাকে নিয়ে ছুটছে।ফ্লিন রাইডারের যেমন ঘোড়া ছিল তেমনি একটা ঘোড়া হলে মন্দ হতো না।আচ্ছা এডউইনের কি ঘোড়া নেই?আন্দ্রিয়া এই জটিল সময়টাতেও প্রশ্ন না করে থাকতে পারল না,
” এডউইন আপনার ঘোড়া আছে?”
” ইয়েস।”
আন্দ্রিয়া চট করে ভেবে ফেলল তাদের সাথে ঘোড়াও দৌঁড়তে শুরু করেছে।হঠাৎ আগমন ঘটল শালোমীর। ফেইরিটা তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।আন্দ্রিয়া শালোমীকে দেখেই ঠোঁট বাকাল,
” কুইন আন্দ্রিয়া মেরি,রাগ দেখিয়ে কি লাভ হলো?সেই তো এডউইনের সাথে ছুটছেন।”
” তুমি কি আমাকে খোঁচা দিতে এখানে এসেছো?”
” একদম না।আন্দ্রিয়া মেরি আপনি ডেসটিনি বিশ্বাস করেন?”
” হ্যাঁ করি।হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
” আপনার ডেসটিনি আপনাকে আপনার এডউইনের সাথে জুড়ে দিয়েছে।”
” আজেবাজে কথা বলবে না তো।”
” আমি আজেবাজে কথা বলতে আসিনি।এডউইনের খেয়াল রাখবেন কুইন, উনার কাটা অনেকটা দেবে গেছে।”
শালোমী চলে গেল।এডউইন ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল,
” কি বিড়বিড় করছো আন্দ্রিয়া?”
” ক..কই।”
তারা ছুটলো প্রায় আধাঘন্টা যাবৎ।এখন আকাশটা বেশ পরিষ্কার ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ আলো তখনি আসবে যখন সূর্যের রশ্মি ঝিলিক দেবে।এডউইন থামলো একটি ঝড়নার সামনে।উচু পাহাড় তার থেকে ছুটে চলছে ঝর্না।সেই ঝর্নার পানি পড়ে ঝিরি তৈরি হয়েছে।ঝিরির আশেপাশে জঙ্গলি ফুলে ভরপুর।দৃষ্টি নন্দন এই দৃশ্য দেখে আন্দ্রিয়ার মাথাটা মুহূর্তে ঘুরে গেল।
” এডউইন এত সুন্দর!”
এডউইন বসল একটা বড় পাথরে।তার হাত পা চুইয়ে চুইয়ে রক্ত ঝরছে।পায়ের আঘাতটা আন্দ্রিয়া এখনো দেখতে পায়নি।এতদূর দৌড়ানোর ফলে পা’টা কেমন অবশ লাগছে আন্দ্রিয়া এডউইনের পাশে বসতে নজরে যায় পায়ে গড়িয়ে পড়া রক্তের দাগ।
” এডউইন আপনার পায়ে কি হয়েছে?”
” চাকু… ”
এডউইন কথা শেষ করার আগেই আন্দ্রিয়া পা টেনে ধরল।এতটা গভীর কাটা দেখে মেয়েটা চোখ ঝাপসা হলো।দ্রুত জামার ছেড়া অংশ টেনে ছিড়ে এডউইনের হাত পা বেঁধে দিল।
” প্যালেসে ফিরতে আর কতক্ষণ লাগবে?”
” পেছনে তাকাও।”
আন্দ্রিয়া পেছনে তাকাতে চমকে যায় ঘন জঙ্গলের কিছুটা দূরেই লম্বা লম্বা গম্বুজ দেখা যাচ্ছে। এটাই কি এডউইনের প্যালেস?
” এডউইন ওটা আপনার প্যালেস?”
” ইয়েস সুইটি।চিন্তা নেই আমরা নিরপদ স্থানে আছি।”
আন্দ্রিয়া উঠে দাঁড়াল এডউইনও বসে থাকার পাত্র নয়।সে ভীষণ ভাব সাব দেখিয়ে আন্দ্রিয়ার সামনে টি-শার্ট টেনে খুলল।মুহূর্তে উদ্ভাসিত হয় তার ফর্সা ফিটফাট পেশী বহুল শরীরটা।আন্দ্রিয়া ঢোক গিলে দৃষ্টি সরায় এডউইন কি তাকে জাহির করতে চাইছে?এডউইনের গলায় ঝুলছে ক্রস লকেট।চকচকে বাদামী মণির অধিকারী চোখ জোড়া এক পলক তাকায় আন্দ্রিয়ার পানে।
” আন্দ্রিয়া ঝর্নায় গোসল করবে?”
” না না আপনি করুন।”
” মিস করবে।এই সুযোগ আর পাবে না।ফ্রিতে এত সুন্দর পরিবেশ…. ”
এডউইন কথা শেষ করার আগেই আন্দ্রিয়া উঠে যায় ঝর্নার কাছে।সে তো এটাই চাইছে ঝর্না দেখে কে থেমে থাকবে?ব্যস্তময় শহরটাকে এক কোনায় ফেলে আন্দ্রিয়া এসেছে অদ্ভুত এক স্বর্গ রাজ্যে।মাঝে মাঝে মনে হয় সে যেন রূপকথার জগৎ-এ ছিটকে পড়েছে।সবকিছু এত সুন্দর কেন?সবচেয়ে সুন্দর তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটা।কল্পলোকের কিং দেখতে এডউইনের অনুরূপ।এডউইন ঝর্নায় গোসল করছে তার অনাবৃত দেহ থেকে আসা কস্তুরীর সুঘ্রাণ আন্দ্রিয়াকে বিভ্রমে ফেলে দেয়।মেয়েটা তাকিয়ে থাকে অপলক।এদিকে সে যে ভিজে টইটুম্বুর তাতে যেন হুশ নেই।পুনরায় শালোমীর আগমন ঘটল আন্দ্রিয়াকে টিপ্পনী কেটে বলে,
” কুইন আপনার কিংকে দেখে আমাদের ফেইরিরা ইতোমধ্যে ঘুরে পড়ছে।”
” খবরদার এডউইনের দিকে নজর দিবে না।এডউইন উইলসনকে একমাত্র আমি দেখব।”
” কে হয় সে আপনার?এতটা অধিকার দেখাচ্ছেন কেন?”
আন্দ্রিয়া জবাব দেওয়ার আগেই শালোমী গায়েব হয়ে যায়।হ্যাঁ তাই তো এডউইন কে তার?আন্দ্রিয়ার কাছে এই প্রশ্নটা ভীষণ ভারী মনে হয়।শালোমী তাকে একটা ভারী প্রশ্ন ঘাড়ে তুলে দিয়ে পালিয়েছে।
এডউইন হাত টেনে আন্দ্রিয়াকে কাছে টানে।
” আন্দ্রিয়া মেরি কি হয়েছে মুখটা এমন লাগছে কেন?”
আন্দ্রিয়া কিছুই বলে না হাত রাখে এডউইনের বুকে।তার মাথাটা কোন মতে এডউইনের বুক ছুঁয়েছে।এডউইনের বিশাল দেহটার মাঝে তাকে বাচ্চা মনে হয়।আন্দ্রিয়ার হাতের পৃষ্ঠে চুমু খেল এডউইন মেয়েটা দিল না উলটো জড়িয়ে ধরল এডউইনের কোমড়।
এডউইন আদর মিশিয়ে বলে,
” কোলে উঠবে?”
” হুহ।”
আন্দ্রিয়ার জবাব পেয়ে এডউইন তাকে কোলে তুললো।আন্দ্রিয়া দুপায়ের সাহায্যে জড়িয়ে ধরল এডউইনের কোমড়।
” এডউইন আপনার হাতে পানি লেগে ক্ষতি হবে।চলুন প্যালেসে ফিরে যাই।”
” তুমি সত্যিই প্যালেসে যাবে?”
” হুহ।”
“এবার গেলে কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া বের হতে পারবে না।”
“ঠিক আছে বের হব না।”
” আন্দ্রিয়া মেরি তবে তুমি কি প্রস্তুত আমার প্যালেসে বন্দি হতে?”
” আমি প্রস্তুত।”
” আমি কিন্তু ভালো নই।”
” কিং’রা কখনো ভালো হয় না এডউইন উইলসন।”
” কিং!কে কিং?”
আন্দ্রিয়া প্রত্যুত্তর করে না।সে সর্বদা কল্পনা জগৎ এর বিভ্রমে আটকে থাকে।সে কুইন তার কিং তার কিংডম সেখানকার ফেইরিরা সব মিলিয়ে সর্বদা রোমান্টিসিজমে ডুবে থাকা আন্দ্রিয়ার জীবনে যখন সত্যি সত্যি লাগামহীন পুরুষ এলো তাও সব কি না কল্পনার মতো! এখন আন্দ্রিয়া কি করে ঠিক ভুল বিচার করে?তার পিছুটান খুব বেশি নেই নিজের মতো সর্বদা চলেছে এখন তার কিং এসেছে,সে চায় কিং এর বাহুডোরে নিজেকে আবদ্ধ করতে।আন্দ্রিয়া ঘোরে পড়ে যায় টেনে ধরে এডউইনের মাথা এবং ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।এডউইন একে তো লাগামহীন ঘোড়া তার উপর আন্দ্রিয়ার সাড়া সব মিলিয়ে সে বিপাকে পড়ে যায়।ঠোঁটের আন্দোলন বাড়তে থাকে তার দিক থেকেও।দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে ঝুপঝুপ ঝর্নার পানি পড়ছে চারদিকে নিস্তব্ধতা ঘিরে থাকলেও দুটো মানব-মানবীর দেহে প্রকাণ্ড ভূমিকম্প চলছে।আন্দ্রিয়া হাঁপিয়ে উঠে এডউইনের সাথে কখনোই সে তালে তাল মিলিয়ে পেরে উঠে না।আন্দ্রিয়া দ্রুত নিজেকে ছাড়ায় তার উথাল-পাতাল শ্বাস নেওয়াটা এডউইনের কাছে ভীষণ ভালো লাগে।
এডউইন আন্দ্রিয়ার গালে চুমু দিয়ে বলে,
” হানি আর একটু প্লিজ।”
” এডউইন আর না।আমি…”
এডউইন থেমে যাওয়ার পাত্র নয় সে তার দখলদারি কিছুতেই ছাড়বে না।
এডউইন আন্দ্রিয়া বাড়ি ফিরেছে।দুজনেই স্নান সেরে যে যার মতো নিরিবিলি বসে আছে আন্দ্রিয়া প্যালেসে ফিরে সেই যে নিজেকে বন্দি করেছে আর দরজা খুলেনি লজ্জায় মিহিয়ে যাচ্ছে সে।আচ্ছা এত লজ্জা তখন কোথায় ছিল যখন এডউইনকে আগ বাড়িয়ে কিস করেছিল?এসব কথা ভেবে কোন উত্তর পায় না মেয়েটা।অপরদিকে এডউইনের আজ খুশির দিন এই যে হাত কে*টেছে পা কে*টেছে তাতে তার যন্ত্রণায় দম খিঁচে আসলেও আন্দ্রিয়ার চুমুতে সব যেন ধোঁয়ায় উড়ে গেছে।এডউইনের প্যালেসে অবশেষে কুইন আসতে চলেছে একটা সময় তো সে ভেবেই নিয়েছিল তার সাথে কেউ থাকবে না কেউ না।কেউ আসবে না তার জীবনে অথচ অদ্ভুত ভাবে তার ভাবনা চিন্তাকে মাড়িয়ে আগমন ঘটল আন্দ্রিয়া মেরি’র।
এসব ভাবলে তো চলবে না।এডউইনের হাত পা থেকে এখনো রক্ত ঝরছে যা বোঝা গেল সেলাই করা ছাড়া উপায় নেই।এসব কাটা ছেড়া এডউইনের জন্য ছোট খাটো তাই কিছুতেই হসপিটাল যাবে না।প্রথমে অ্যানাসথেসিয়া দিয়ে কেটে যাওয়া পায়ের অংশ অবশ করে নিল তারপর নিজ হাতেই সেলাই করতে লাগল পায়ের কাটা অংশ।একটা মানুষ নিজেই নিজের পায়ের কাটা অংশ সেলাই করছে! একটা সাধারণ মানুষের কাছে এটা নিশ্চিয়ই ভীতিকর কাজ।আন্দ্রিয়া দেখতে এসেছিল এডউইনকে অথচ এডউইনের কার্যক্রম দেখে ভয়ে নীল হয়ে উঠল চোখমুখ মুহূর্তে গুলিয়ে উঠল গাঁ।এমন কাজ কি করে সম্ভব!
” এ..এডউইন!”
আন্দ্রিয়া কম্পিত কণ্ঠে ডাকল।এডউইন নিজেও চমকে গেছে নিজের ভুলে নিজেকেই মারতে ইচ্ছে করছে।কেন সে দরজা বন্ধ করল না, আন্দ্রিয়া যে আসতে পারে সে কথা বেমালুম ভুলে বসে ছিল।
” আন্দ্রিয়া নিজের রুমে যাও।”
আদেশ সুরে বলল এডউইন।অথচ আন্দ্রিয়া অসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে।
” কি হলো কি বললাম?”
” এডউইন আপনি এভাবে সেলাই করছেন কেন?আপ..আপনি হসপিটালে চলুন।”
” আন্দ্রিয়া তোমাকে যেতে বলেছি।”
এবার বেশ জোরেই ধমক দিল।আন্দ্রিয়া উত্তেজিত হয়ে কেঁদেই ফেলল।এডউইন তার হাত টেনে রুম থেকে বের করে দ্রুত দরজা লাগাল।পুনরায় সোফায় বসে নিজের করা ভুলের রাগ নিয়ে টেনে টেনে পা সেলাই করতে লাগল।সে কখনোই চায় না আন্দ্রিয়া তার হিংস্র রূপটা দেখুক।
এই পার্কে সচরাচর একটি ফুল বিক্রতা মেয়েকে দেখা যায় যার নাম মায়া।মায়া যেমন নামে মায়া তেমনি তার চাহনি চেহারায় মায়ার অভাব নেই।আজ মায়া পার্কে বসে কাঁদছে কিন্তু কেন কান্না করছে এই খবর কেউ নিতে আসল না রাস্তার ধারে থাকা গরিবের খবর কে নেয়?সকালে বেশ কয়েকজন এই পার্কে হাঁটতে আসে তেমনি আজ হাঁটতে এসেছে এক জনৈক ব্যক্তি।না না শুধু আজ নয় তিনি বেশিরভাগ সময় এখানে হাঁটতে আসেন এবং মায়াকে দেখেছেন অনেকবার।নিষ্পাপ চাহনির মায়াকে দেখে তিনি কিছুতেই নিজেকে আটকে রাখতে পারলে না এগিয়ে এসে বসলেন মায়ার পাশে।
” কী হলো বোন কাঁদছো কেন?”
মায়া ঝাপসা চোখে তাকাল,
” আমার ফুল নিয়া গেসে।”
” কে? ”
” আমারে কইলো টাকা দিবো ফুলডি দিতে আমিও শরল মন ফুলডি তারে দিসিলাম টেকা না দিয়া গাড়ি টাইনা চইলা গেসে।
জনৈক ব্যক্তি ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করলেন।মেয়েটা বয়স কত হবে?পনেরো কি ষোলো।
” কি ফুল ছিল?কয়টা ফুল?”
” একশ টা গোলাপ ফুল।”
” আমার সাথে যাবে?আমার বাড়িতে ফুলের বাগান আছে সব ফুল পঁচে যায় বা শুঁকিয়ে যায় তুমি এনে বিক্রি করতে পারো।”
” সত্যি?সত্যি কইছেন?”
মায়ার চোখ মুখ চিকচিক করে উঠল।
” হুম।কাউকে সাহায্য করলে আমার ভীষণ খুশি লাগে।যাবে তুমি আমার সাথে?”
” আমনের বাড়ি কই?”
” এইতো সামনেই।”
” চলেন।”
জনৈক ব্যক্তি শ্লেষ হাসলেন।মায়াকে নিয়ে চলে গেলেন গাড়ি সামনে।
বিপদে পাশে এসে দাঁড়ানোর মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।এই তো আসল মানুষ এই তো মনুষ্যত্বের পরিচয়।
কিন্তু আপনার বিপদের সুযোগ নিয়ে ভালো মানুষ রুপি ছায়াটাকে ভরসা করা যদি কাল হয়ে দাঁড়ায়?
মায়া যার গাড়িতে উঠল সে আর কেউ নয় পাপেট।ভদ্র মানুষ রূপি নরপশু।
তারপর কি হলো?তারপর যা হওয়ার তাই হলো।মায়া কল্পনাও করতে পারেনি তার সাথে ঠিক কি হতে চলেছে।
একটি চকিতে হাত পা বেঁধে শুইয়ে রাখা হয়েছে মায়াকে।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে কিন্তু কেউ নেই তাকে বাঁচানোর।পাপেট লালসার চোখে তাকিয়ে আছে মায়ার পানে।তার দেহ জেগে উঠেছে নারীর দেহের লোভে ক্ষুধার্ত দেহ তবে খাদ্য পেতে চলেছে।মায়ার বিবস্ত্র শরীরে লালসার হাত বুলিয়ে দেয় পাপেট।মেয়েটার নিজের শরীরের প্রতি ঘৃণা জন্মে যায়।আকুতি কণ্ঠে চেচিয়ে বলে,
” আমারে ছাইড়া দেন আমার আম্মা অসুস্থ আম্মার কেউ নাই।আল্লার দোহাই লাগে।”
পাপেটের যেন কথাটি কানেই লাগল না।সে একে একে খুলতে শুরু করে তার পরনের শার্ট প্যান্ট।
” গ*জব পড়ব আপনার উপর আইসেন না আমার কাছে।আইসেন না।”
মায়া আতঙ্কিত হয়ে পড়ল পাপেটের কানেই গেল না মায়ার আহাজারি।সে তার কার্য হাসিলে ব্যস্ত।মায়ার গালে গলায় নির্লিপ্ত ভাবে কামড়াতে শুরু করল।ইতোমধ্যে ঠোঁট কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।গালে,গলায় বেশ কিছু অংশে চামড়া উঠে রক্ত ঝরছে।ধীরে ধীরে নিজের হিংস্রতা বাড়ায় পাপেট যখনি মেয়েটাকে সতীত্বহানি করতে যায় ঠিক তখনি অনুভব করে তার পুরুষাঙ্গ অচল।পাপেটের এই একটাই দূর্বলতা নিজের দূর্বলতার কাছে নিজেই লজ্জায় পড়ে পাপেট কিন্তু সে কেন জানি মানতে চায় না নিজের দূর্বলতার কথা।একটু আগে কতটা হিংস্র ছিল পাপেট?এখন তার হিংস্রতা দুই গুন বাড়িয়ে দিল।উন্মাদের নেয় ছুটে গিয়ে লবণ মরিচ মিশিয়ে মায়ার সারা শরীরে ছুড়তে শুরু করল।কাটা স্থানে যখন লবণ মরিচ লেগে যায় তা কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন।
টেরিবেল পর্ব ৪
পাপেট এতেও ক্ষান্ত হলো না নিজের দূর্বলতা মানতে নারাজ সে নিজের রাগ উড়িয়ে দিল মায়ার উপর।একটি ছুরি এনে মায়ার পা থেকে একটু একটু করে মাংস কাটতে শুরু করল।রক্তে ভিজে গেল মায়ার পায়ের অংশ সেই সাথে পাপেটের দেহ কিন্তু তাতে কি?পাপেট বেশ যত্ন নিয়ে ধা^রালো ছুরি দিয়ে মায়ার পায়ের মাংস কা*ট-তে ব্যস্ত।