টেরিবেল শেষ পর্ব 

টেরিবেল শেষ পর্ব 
অনুপ্রভা মেহেরিন

ইনভেস্টিগেশনের উদ্দেশ্যে আজ মার্ভেলাসে প্রবেশ করেছেন তিনজন পুলিশ সদস্য।যদিও তারা ইনভেস্টিগেশনের উদ্দেশ্যে এসেছিল তবে তাদের কাজে খুব বেশি তৎপরায়ণতা দেখা গেল না ব্যাপারটা কি তারা হাস্যকর ভাবে নিয়েছেন?অবশ্য নেওয়ার কথা না সেধে সেধে কেউ নিজের ঘাড়ে অর্থাৎ নিজের প্রতিষ্ঠানে এত বড় দাগ লাগায়?মার্ভেলাসকে যুক্ত করা হচ্ছে মার্ডার কেসে কিংবা কিডন্যাপ কেসে।

এসব সেনসিটিভ বিষয়ে কারো অপরাধ থাকলেও লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ খাইয়ে মালিকগন ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগে সেখানে মার্ভেলাসের মালিকগন ইন্টারেসটিং একটু বেশি ইন্টারেসটিং।চায়ের শেষ চুমুক দিয়ে ওসি সাহেব তাকালেন তাদের পানে তিনি অনেকক্ষণ যাবৎ তাদের বুঝিয়ে যাচ্ছেন এসব থেকে তারা যেন পিছ পা হয় কিন্তু কেউ এক পা পিছু হাটতে রাজি নয়।তারা এটাই চান এই কেসগুলোর সাথে মার্ভেলাসের এই কাকতালীয় মিলের সূত্রপাত উৎঘাটন।ডেরিক এতদিন সবাইকে বোঝালেও আজ তিনি নিরব দর্শক ছিলেন এবং টুকটাক তিনিও বললেন তাদের দেওয়া অভিযোগটা গুরুত্ব সহকারে নিতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” জনাব গ্রেস আপনারা এইদেশে নাম করা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত এসব যদি একবার সাংবাদিকরা রসিয়ে রসিয়ে ছাপিয়ে দেয় তাহলে কি হবে বুঝতে পারছেন?এতটা সৎ মনোভাব রাখবেন না আপনারা এইদেশকে ইউরোপ আমেরিকা ভাববেন না যে এসব কেসের রহস্য খোলাসা হবে।আমি বলছি দুইদিন এসব নিয়ে নড়চড় হবে জনগন সব ভুলে যাবে আর আমরাও কেসটা ফেলে অন্য কেসে মনোযোগ দেব এটাই হচ্ছে আর এটাই হয়।এত ন্যায় নীতির কথা আজকাল ভালো লাগে না।”
ওসির মন্তব্য গায়ে জ্বলন ধরল মার্টিনের অবশ্য এসব মিথ্যা নয় সত্যি।ওসি সাহেবকে যদি এখন ঘুষ দেওয়া হয় তিনি নিশ্চয়ই এই কেসের আদি অন্ত খুঁজে বের করবে।ওসি সাহেব কি ইশারা ইঙ্গিতে ঘুষ চাইছেন? কিন্তু মার্টিন তো ঘুষ দেবে না।মার্টিন ভ্রু কুচকে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
” একজন পুলিশ হয়ে এসব বলছেন?এই দেশের জনগন যাবে কোথায়?”
” শুনুন স্যার আপনাদের ভালোর জন্য বলছি আমাকে খারাপ ভাববেন না।”
” আমরা আপনাকে খারাপ ভাবছি না। আপনি আমাদের কেসটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখুন প্লিজ।আমরা চাই না মার্ভেলাস থেকে আর কেউ নিখোঁজ হোক।”
ওসি সাহেব মাথা নাড়ালেন মনে মনে অবশ্য তিনি হাসছিলেন দেশে আজকাল এত বেকুবো আছে?খাল কেটে কুমির আনে!

ঘুম ঘুম চোখে মেঝেতে বসে আছে আন্দ্রিয়া।মাফিন তার কোলে বসে নাট মাফিনের সাথে একটু আধটু ঠোকাঠুকি করছে কয়েকটা হ্যামস্টার এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে পাখিরাও আন্দ্রিয়ার মনোযোগ চাইছে কিন্তু মেয়েটা ঝিমিয়ে পড়ছে।এডউইন আড় চোখে লক্ষ করল আন্দ্রিয়ার হাবভাব সেদিন রাতের পর আন্দ্রিয়া বেশি ঘুমাচ্ছে ঝিমিয়ে যাচ্ছে ; তার চোখ থেকে কিছুতেই ঘুম যাচ্ছে না।ঔষুধের ডোজটা কি তবে বেশি হয়ে গেল?আগের বারের কাণ্ডে এডউইন প্রচণ্ড ভয়ে ছিল তাই আন্দ্রিয়ার ঘুম যেন অতি সহজে না ভাঙে তাই ঔষুধের ডোজ একটু বেশি দিয়েছিল।এডউইন এগিয়ে এসে অতি যত্নে আন্দ্রিয়াকে কোলে তুলে নিল মেয়েটা চমকে গিয়ে এডউইনের গলা জড়িয়ে ধরে।
” কুইন শরীর খারাপ লাগছে?”
” না না আমার ঘুম পাচ্ছে এডউইন।”
” তবে ঘুমাও।”
” একটু আগেই তো ঘুম থেকে উঠলাম।”

এডউইন প্রত্যুত্তর করে না হতাশার শ্বাস ছাড়ে আন্দ্রিয়াকে নিয়ে চলে যায় ছাদে।তার প্যালেসের ছাদে থাকা সুইমিংটায় কোল থেকে নামিয়ে দিল আন্দ্রিয়াকে।আন্দ্রিয়া সাতার জানে না তবে অল্প জলে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে। বেলা শেষের পথে সূর্যটা লাল কমলা মিশে কি সুন্দর রঙ ধারণ করেছে আকাশটাও আজ পরিষ্কার পাখিদের বাড়ি ফেরার তাড়া নেই এই জঙ্গলেই তাদের বাড়ি।পাখির কলরবে মুখরিত চারিপাশ সেই সাথে কাকের কা কা শব্দে আন্দ্রিয়া অপলক তাকিয়ে রয় ঘন জঙ্গলের পানে।এডউইন গায়ের জামাটা খুলে টান টান শরীর নিয়ে চারিপাশে হাঁটে আন্দ্রিয়ার ঘুম তাড়ানোর এর থেকে ভালো কৌশল তার জানা নেই।

” এডউইন আপনি যখন একা ছিলেন আপনার কি ভয় করতো না?”
” এডউইনের আগে কোন ভয় ছিল না তবে এখন এই অনিশ্চিত জীবনে ভয় যোগ হয়েছে।”
” যেমন?”
” কিং তার রাজ্যে হারানোর ভয়ে মশগুল থাকে আর এডউইন উইলসন তার কুইনকে হারানোর ভয়ে মশগুল।”
” আপনার কাছে ভালোবাসা কী?”
” আমার কাছে ভালোবাসা মানেই ভয়ংকর অভিশাপ।”
আন্দ্রিয়া ভ্রু কুচকে ফেলল সে হয়তো আশা করেছিল এডউইন কাব্যিক কোন উত্তর দেবে কিংবা আন্দ্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার বুলি আওড়াবে।তার ভাবনা চিন্তা সবটাই জলে মিশে হারিয়ে গেল।এডউইন ঝাপিয়ে নামল পুলে ডুব সাঁতারে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল আন্দ্রিয়ার পেট।কয়েক সেকেন্ড ডুবে থেকে মুখ তুলে মুখোমুখি হলো দুজনে আন্দ্রিয়ার ভেজা নেত্রপল্লব ভেজা ঠোঁট সবকিছুই রোমাঞ্চিত করে এডউইনকে।বাম হাতের সাহায্যে আন্দ্রিয়ার গলা চেপে ধরল এডউইন আন্দ্রিয়া অবশ্য ভয় পেল না সে অভ্যস্ত এডউইনের এসব ছোঁয়াছুঁয়িতে।

” আন্দ্রিয়া মেরি, মাই কুইন তোমার অবুঝ চাহনি আমার দম আটকে দেয়।এতটা ভালোলাগে কেন তোমায়?”
” কারণ আপনি ভালোবাসার চোখে তাকান।”
” তুমি জানো আমি আমার অপছন্দের সব নিজ হাতে ধ্বংস করি?এই প্যালেসে সব আমার পছন্দের অপছন্দের লেশটুকু এখানে নেই।আমার পছন্দ অপছন্দ মুহূর্তে পালটে যায়।”
এডউইন আচমকা পানিতে থাবা দিল আন্দ্রিয়া চমকে তাকাতে দেখতে পাল এডউইনের হাতে একটি সাপ।এই সাপটার নাম কী?আন্দ্রিয়া এডউইনের কাছে একই রকমের সাপ দেখেছিল।সবুজ রঙা চিকন সাপটার নাম লাউডগা এটা গাছের ঢালেই ছিল হঠাৎ পুলে আসল কি করে?এডউইনের ঠান্ডা মেজাজটা এতটা ভয়ংকর ভাবে বেড়ে গেল তা এই মুহূর্তে আন্দ্রিয়া কল্পনা করতে পারেনি।সাপটাকে দুই হাতের সাহায্যে টেনে ছিড়ে ফেলল এডউইন।কি বিশ্রি ব্যাপার স্যাপার আন্দ্রিয়ার ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়।

” ওটা ছিড়লেন কেন?”
” প্রাইভেট টাইমে ডিস্টার্ব করা আমার মোটেও পছন্দ না।”
” এডউইন আপনার রাগটা কমিয়ে ফেলুন কবে আবার রেগে মেগে আমাকেই মেরে ফেলেন।”
এডউইন কেমন করে যেন হাসল স্বচ্ছ জলে গা ভাসিয়ে দু’বার হাত তালি দিল এবং সুর টেনে শিষ বাজাতে গাছের ঢালে সকল পাখি উড়ে এসে বসল ছাদে।এরা যেন এডউইনের আদেশ পেয়ে ছুটে এসেছে যখন পাখিরা ডানা ছাপটে ছুটে আসছিল এক মুহূর্তে ছোটখাটো তুফান বয়ে গেল।আন্দ্রিয়া চোখ মুখ খিঁচে তাকাল এডউইনের পানে।
” ওদের ডাকলেন কেন?”
” এমনি,তোমার ভালো লাগেনি?”
আন্দ্রিয়া প্রত্যুত্তর করল না সে শুধু তাকিয়ে দেখল এডউইনের এসব কার্যকলাপ। তার মনে হয় এডউইন মানুষ নাকি কোন দুষ্টু জ্বীন?কোন স্বাভাবিক মানুষ কি এত এত পাখিকে বশ করা সম্ভব?এডউইন পুনরায় হাত তালি দিল তার তালিতে সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা উড়ে গেল এবারেও বয়ে গেল আরেক তুফান।এডউইন পেছন থেকে এসে আন্দ্রিয়াকে জড়িয়ে ধরল এবং ঘাড়ে থুতনি রেখে বলে,

” ফাইনালি আই ফাউন্ড মাই হ্যাপিনেস এন্ড ইটস ইউ।”
এডউইন আন্দ্রিয়ার হাতে হাত মেলায় পরম যত্নে তার ললাটে চুমু খায়।
” এডউইন একটা কথা বলব?”
” বলো কুইন।”
” আমরা কি বাড়ি যাব না?আমার মনে হয় এখন চাচাদের সাথে দেখা করা উচিত।”
এডউইন কয়েক সেকেন্ড চুপ রইল আন্দ্রিয়ার এসব প্রশ্ন তার আবেগের কড়া নাড়া দরজাটা মুহূর্তে ভেঙে দেয়।আন্দ্রিয়ার প্রশ্নে এড়িয়ে গেলেই বিপদ তাই সে হাস্যোজ্জ্বল মুখে মিথ্যা সাজিয়ে বলে,
” তোমার পুরোপরিবার দেশের বাইরে।তিন দিন আগেই তারা দেশ ছেড়েছে আমি খোঁজ নিয়ে এটুকুই জেনেছি।”
” তারা কোথায় গেল?”
” হয়তো তোমার কাজিনের কাছে।”

আন্দ্রিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও তবে আর তাদের বাড়ি ফেরা হচ্ছে না!এডউইন নিশ্চিন্তে শ্বাস ছাড়ল আন্দ্রিয়াকে এই জঙ্গলের বাইর নেওয়ার কথা ভাবলেই তার সবটা এলোমেলো লাগে ধীরে অন্ধকার নামে আন্দ্রিয়ার ভয়টাও বেড়ে যায়। তবে এডউইনের মাঝে কোন ভয় নেই সে আন্দ্রিয়াকে কাছে টেনে আনে এবং দু’ঠোঁটের মাঝে আয়ত্তে আনে আন্দ্রিয়ার ঠোঁট।আকাশের বুকে মস্ত বড়ো চাঁদটাও হয়তো তাদের কার্যকলাপে লজ্জায় পড়ছে।বাইরে এই রাতে আন্দ্রিয়ার প্রচণ্ড ভয় করে অনেকবার বলেছে এখন ঘরে ফেরা দরকার কিন্তু এডউইন ঘাড়ত্যাড়ামো দেখিয়ে সুইমিংপুলে সাতার কাটছে মাঝে মাঝে আন্দ্রিয়াকে নিয়েই ডুবে যাচ্ছে।

” এডউইন আপনি কী চান?”
” জানি না।”
” ঘরে চলুন।”
” না।”
” আমার ভয় করছে।”
” তা তো আমি মানবো না।আমি চাই আন্দ্রিয়া মেরি শুধুমাত্র এডউইন উইলসনকে ভয় পাবে আর কোন কিছুতেই নয়।”
এডউইন এগিয়ে এলো এবং আন্দ্রিয়ার ফ্রকের ফিতা টেনে খুলতে শুরু করল।আন্দ্রিয়া জানে এখন তার সাথে কি হতে চলছে এডউইনের উন্মাদনা বাড়তে ধীরে ধীরে প্রতিটি স্পর্শে পাগল করে তুলবে তাকে।
একটা রাত কিংবা একটা দিন যদি নিস্তার পেতো!এডউইন উইলসন আন্দ্রিয়াকে কোন মতেই নিস্তার দিতে রাজি নয়।

মার্টিন হসপিটালে ভর্তি তার মাথা ফেটেছে দু’টো সেলাই লেগেছে।কে বা কারা তার গায়ে হাত তুলেছে সেই ব্যাপারে এখনো কেউ সুনিশ্চিত নয়।রাতে বাইরের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ধরে এবং মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়।রক্তাক্ত মাথা চেপে কোন মতে হসপিটাল পর্যন্ত এসে খবর দিলেন গ্রেস,ব্রিক স্যারকে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই হসপিটালে এসে উপস্থিত হয়েছে।এত বছর এই দেশে থাকা সত্ত্বেও কখনো হামলা হয়নি মার্ভেলাসের কোন শিক্ষকের উপর তাহলে আজ কেন হামলা হলো?এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ল সকলে।ব্রিক স্যার চিন্তিত কণ্ঠে শুধায়,
” মার্টিন তুমি শুরু থেকেই সচেতন ছিলে পুলিশকে জানাতে চেয়েছিল হয়তো সেই কারণেই উক্ত ব্যক্তি অর্থাৎ কালপিট তোমার উপর ক্ষেপে আছে।তাই তোমাকেই আঘাত করে সতর্ক করতে চাইছে।”
গ্রেস সহমত জানিয়ে বলেন,
” হয়তো আমাদের সবার উপরেই হামলা হবে তবে একে একে।আচ্ছা আমাদের ধারণা তবে সত্যি হতে চলেছে!এত এত নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে সত্যিই মার্ভেলাসের যোগসূত্র আছে!”
প্রচণ্ড অশান্তিতে মার্টিনের দম আটকে আসল সেই সাথে দেখা যাচ্ছে চাপা রাগ।নিজের প্রতি চিন্তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে ক্রুদ্ধ গলায় বলে,
” আমি এই কেস থেকে কিছুতেই সরে দাঁড়াব না।দেখতে চাই এর শেষ কোথায়।”

রাত বারোটা পেরিয়ে একটার কাটা ছুঁয়েছে আন্দ্রিয়া বায়না ধরে বসে আছে এক্ষুনি শহরে যাবে অনেকদিন তো হলো এই জঙ্গলে এবার একটু পরিবর্তন আসুক।এডউইন প্রথম পর্যায়ে আন্দ্রিয়াকে অনেক অনেক বোঝালো কিন্তু আন্দ্রিয়া কিছুতেই মানছে না বরং কেঁদে-কেটে একাকার অবস্থা বাধ্য হয়ে এডউইন রাজি হলো আন্দ্রিয়াকে বাইরে নেওয়ার।আন্দ্রিয়া লাফাতে লাফাতে রেডি হলো।এডউইনের শখের অডি গাড়িটা ছুটছে নিরিবিলি রাস্তায় চলছে রোমান্টিক গান আন্দ্রিয়া গানের তালে তালে সুর মিলিয়ে গাইছে।এডউইনের চিন্তারা পাশ কাটিয়ে মুহূর্তে আন্দ্রিয়ার খুশিতে সামিল হলো।রাতটা যেমন চিন্তাপূর্ণ তেমনি আনন্দদায়ক এডউইন গলা ছেড়ে আন্দ্রিয়ার সাথে সুর মেলাল ঘন জঙ্গলের এলাকা ছেড়ে তারা ইতোমধ্যে শহরে এসে পৌঁছে গেছে।মধ্য রাতে শহরের ব্যস্ততা কমেছে সেই জন্য নিশ্চিন্ত হলো এডউইন এখন অন্তত কেউ তাদের দেখবে না।
মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে এডউইন নেমে এলো একটি ছোট্ট দোকান থেকে নিয়ে এলো কোল্ড কফি।আন্দ্রিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,

” এডউইন আমরা লং ড্রাইভে যাব।”
” ঠিক আছে।”
” এখন একটু বাইরে বসি?”
এডউইন অনুমতি দেওয়ার আগেই আন্দ্রিয়া গাড়ির ডেকিতে উঠে বসল।বাইরের শীতল বাতাস এই শহরের নিস্তব্ধতার মাঝে আন্দ্রিয়ার খুশির শেষ নেই।
” জানেন এডউইন সামনে একটু গেলেই মার্ভেলাস পড়বে আমরা কিন্তু ওখানে দাঁড়াব।”
” এত রাতে ওখানে কেউ থাকবে?”
” না কে থাকবে?আমি আমার আঙ্কেলের সাথে এসেছিলাম তাই পথটা মনে আছে।”
” ওও।”

এডউইন পুনরায় চিন্তায় হাঁসফাঁস করছে।এডউইনের এত চিন্তা কিসের?আন্দ্রিয়াকে জুড়ে তার জীবনের রহস্য কী?অনেকটা সময় তারা বকবক করেই কাটিয়ে দিল আন্দ্রিয়া গাড়ি থেকে নেমে এডউইনের সাথে কথা বলছিল বিপরীত পাশে হেঁটে আসা দুজন পথচারি আচমকা আন্দ্রিয়ার পানে তাকিয়ে থমকে যায়।
প্রথমে তারা অবিশ্বাস্য চোখে তাকালেও পরবর্তীতে শিউর হলেন এই মেয়েটি মৃত আন্দ্রিয়া মেরি।সেই দুজন পথচারী আর কেউ নয় তারা হলেন গ্রেস আর ব্রিক।
দুজনে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আন্দ্রিয়াকে ডেকে উঠল আন্দ্রিয়াও চমকে তাকাতে এডউইন দ্রুত তার মুখ আড়াল করে আন্দ্রিয়ার মুখ চেপে ধরে ঠেলে গাড়িতে বসিয়ে দিল এবং অতিদ্রুত গাড়ি চালিয়ে প্রস্থান করল।পুরো ঘটনাটা এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটলো যে ব্রিক,গ্রেস দুজনেই স্তব্ধ কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
” গ্রেস মেয়েটা আন্দ্রিয়া ছিল!”
” হ্যাঁ আমিও সুনিশ্চিত সে আন্দ্রিয়া।তবে পাশের ছেলেটা কে?”

আন্দ্রিয়া বেঁচে আছে এই খবরটা তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে সবার মাঝেই এই রাতে শুরু হলো চাপা আতঙ্ক।রাত পেরিয়ে সকাল হলো এবং আন্দ্রিয়ার মৃত্যুর কেস পুনরায় তাজা হলো।পুলিশের লোক কিছুতেই মানতে চাইছেন না আন্দ্রিয়া জীবিত কিন্তু এই কেসটায় তাদের গড়মিল আছে ভেবে আবার তৎপর হলেন।আন্দ্রিয়ার বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশি সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়ল আন্দ্রিয়া জীবিত আছে এই সংবাদ।আন্দ্রিয়ার চাচা ভয়ে রাগে থরথর করে কাঁপছেন তিনি কিছুতেই মানতে চাইছেন না আন্দ্রিয়া জীবিত আছে!অসম্ভব!অসম্ভব! অসম্ভব!তিনি চটজলদি ফোন করলেন কানাডার গ্যাংস্টার জোয়াকিম কে।
” লায়ার!এত লক্ষ লক্ষ টাকা এইজন্য দিয়েছিলাম?মিস্টার জোয়াকিম আপনি আপনার ওয়াদা রাখলেন না।”
জোয়াকিম হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে পড়ল।উক্ত ব্যক্তি ঠিক কি বোঝাতে চাইছে?জোয়াকিমের কপাল জুড়ে চিন্তার ভাজ পড়ল তবে কি তিনি জেনে গেছেন আন্দ্রিয়া এখনো জীবিত!
জোয়াকিম ঠান্ডা মাথায় বলেন,

” আপনি কি বলতে চাইছেন?”
” আন্দ্রিয়া মেরি বেঁচে আছে।”
” বেঁচে নেই।”
” মিথ্যা বলবেন না জোয়াকিম আপনি খোঁজ নিন আন্দ্রিয়া মেরি বেঁচে আছে।আপনি আমার সাথে বেইমানি করতে পারেন না আমি আপনাকে সময় দিলাম আন্দ্রিয়ার লাশ আমার পায়ের সামনে চাই যে করেই হোক।”
জোয়াকিম রেগে মেগে সামনে যা পেল তাই ছুড়ে ফেলল তার শরীর কাঁপছে।গ্যাংস্টার জীবনে সে তার একটা কথাও খেলাপ করেনি একমাত্র এডউইনের জন্য সে তার কথার খেলাপ করেছে আন্দ্রিয়াকে জীবিত রেখেছে।জোয়াকিম রেগে মেগে ফোন করল এডউইনকে।
অথচ প্যালেসে বসে চিন্তায় কাঁপতে কাঁপতে শ্বাস আটকে আসছে এডউইনের জোয়াকিমের কানে একবার এই সংবাদ গেলে যা হবার তা হয়েই যাবে।না চাইতেও জোয়াকিমের ফোন রিসভ করল এডউইন,

” হ..হ্যালো।”
” এডউইন আমি তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই আন্দ্রিয়াকে জীবিত রাখার অনুমতি দিয়েছি তবে আর নয় তুমি আমার কাজকারবারে বদনাম করে দিচ্ছো আন্দ্রিয়াকে যত দ্রুত সম্ভব খু*ন করো।”
” আমি পারব না।”
“পারবে না?”
জোয়াকিম অট্টহাসিতে হাসলেন।এডউইন মুহূর্তে রেগে গেল কিন্তু এই রাগের কোন দাম নেই জোয়াকিমের কাছে।
” এডউইন আমাদের মাঝে কি ডিল ছিল তোমার কি মনে নেই?আন্দ্রিয়া প্রকাশ্যে এলেই তুমি তাকে খু*ন করবে।সময় এখন এসে গেছে কিল হিম এডউইন উইলসন কিল হার।ওয়াদা ভঙ্গ করলেও লাভ হবে না আন্দ্রিয়াকে আমি চাইলে এক্ষুনি হত্যা করতে পারি।তবে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে দেখা যাবে তুমিও ফিনিশ।”
এডউইন জানে আর কিছুই করার নেই।নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে হলে আবেগ বিসর্জন দিতেই হবে।আর এডউইন জানে কীভাবে আবেগ বিসর্জন দিতে হয় সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
” ঠিক আছে জোয়াকিম।তবে তাই হবে।”

আন্দ্রিয়া জীবিত আছে এই খবরটা যেমন সবার মাঝে অতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে তেমনি পাপেটের মনে ছড়িয়ে দিয়েছে খুশির আনন্দ।অতি খুশিতে পাপেট অনেকটা সময় যাবৎ ছোট্ট শিশুর ন্যায় কাঁদছে।অবশেষে আন্দ্রিয়া মেরি তবে তার পাতালপুরীতে আসবে।পাপেটের পাতালপুরীতে বন্দি থাকা মার্ভেলাসের নিখোঁজ শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী অবাক হয়ে দেখছে পাপেটের অদ্ভুত কর্মকাণ্ড।তার হাত মুখ বাঁধা একটি চেয়ারের সাথে ভয়ে মেয়েটার দম খিঁচে আসছে।পাপেট হাসতে হাসতে চোখের জল মুছে বলে,
” আন্দ্রিয়া মেরি ওয়েলকাম ওয়েলকাম ওয়েলকাম।তুমি প্রকাশ্যে এসে আমার যে কতটা সুযোগ করে দিলে তার হিসাব নেই।আড়ালে লুকিয়ে থেকে লাভ কী?প্রকাশ্যে এসে এবার জেনে যাও পাপেটের পাতাল রাজত্বের কথা।”

কু কু শব্দে জঙ্গলে ডাকছে এক নাম না জানা পাখি।সেই পাখিটার আওয়াজটা কেমন গা ছমছমে।আন্দ্রিয়া বেলকনিতে বসে পাখিটাকে খুঁজছিল আজ তার কেমন কেমন যেন লাগছে।এডউইনের আচার-আচরণ তার কাছে বড্ড অদ্ভুত ঠেকছে তার কথা বার্তা চাল চলনে ধরা দিচ্ছে ভয়ংকর ভাব।এই যে একটু আগে এডউইন আন্দ্রিয়াকে বলল, ” তোমার কান কেটে ফেললে কি তুমি খুব কষ্ট পাবে?”
এটা কেমন কথা?এডউইন কখনো এভাবে কথা বলেনি তবে আজ কেন?আন্দ্রিয়া যখন চিন্তায় আচ্ছন্ন তখনি আগমন ঘটল এডউইনের তার হাতে এরাবিয়ান সেই স্পেশাল ছুরিটা।বিশেষ কোন দরকার ছাড়া এই ছুরিটা এডউইন হাতে তুলে না।কস্তুরীর ঘ্রাণ নাকে ঠেকতে আন্দ্রিয়া পেছনে ঘুরে তাকাল এডউইন এসেছে ; তার আকর্ষনীয় চকচকে বাদামী চোখ জোড়া আন্দ্রিয়ার পানেই তাকিয়ে।এলোমেলো বাদামী চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিল আন্দ্রিয়া।

” এডউইন আপনাকে এমন লাগছে কেন?”
” কারণ এই প্যালেসের কিং কুইনকে হারাতে চলেছে।”
” মানে?”
” সরি কুইন।তোমার মৃত্যু তুমি ডেকেছো আমি নই।”

টেরিবেল পর্ব ২৫

এডউইন আচমকা আন্দ্রিয়ার গলায় ছুরিটা চেপে ধরল।এত ধারালো ছুরির একটু চাপেই আন্দ্রিয়ার গলার চামড়া ভেদ করে ঝরছে টকটকে লাল রক্ত।এডউইন তার দয়া মায়াহীন কর্মকাণ্ডের সর্বোচ্চটা এবার দেখিয়েই দিল আন্দ্রিয়াকে।
এক পোচে আন্দ্রিয়ার গলা থেকে বেরিয়ে এলো করুন আর্তনাদ।আন্দ্রিয়ার কল্পনার জগৎ আর বাস্তব জগৎটা এক রইল না।হয়তো যবনিকাপাত হলো আন্দ্রিয়া মেরির ভালোবাসায় মোড়ানো জীবনের।সত্যিই কি তাই?এডউইনের ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো হয়ে ধরা দিল?নাকি আন্দ্রিয়া মেরি জড়িয়ে যাচ্ছে নতুন সূচনায়?

সমাপ্ত