ঠকেছি শেষ পর্ব 

ঠকেছি শেষ পর্ব 
সুমাইয়া আফরিন ঐশী

নতুন জীবন, নতুন বাসায় কাটছে বিন্দাস। সবার আয়ু থেকে আমাদের ছয়টা মাস চলে গেছে। আমার নতুন ঘরে নতুন মেহমানের জন্ম হয়েছে। আমার দুঃখের ঘরে সুখের ছোঁয়া, আমার রাজকুমারী! হ্যাঁ, আমার গর্ভ থেকে একজন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। সে পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার বাবা আমার জন্য নিষিদ্ধ পুরুষের খাতায় উপযুক্ত হয়েছে।

আমার কন্যার বাবা নেই। জন্ম থেকেই সে আর পাঁচটা শিশুর মতো বাবার ছোঁয়া পায়নি। তাকে কখনো তার বাবা ছুঁতেও পারবে না, আমি ছুঁতেও দেবো না। আমাদের মা-মেয়ের জীবনে মাহিম নামক মানুষটি কোথাও থাকবে না। সে আছে আমার ঘৃণাতে, আমার অভিশা/পে!
আমি মনে করি, তার বাবা-মা সবটাই এখন আমি। তাকে নিয়ে দিব্যি আনন্দে এখন যাচ্ছে আমার দিন। আমার কন্যাটা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই পৃথিবীটাও যেন নতুন রূপে আমাকে চুম্বন করতে শুরু করেছে। তার ছোট্ট হাত দুটি যখন আমার আঙুলে ছোঁয়, তখন মনে হয় যেন পৃথিবী সবকিছু ভুলে আমার এই মুহূর্তটাকেই বিশেষ করে তুলেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছোট্ট একটি প্রাণ, যে আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন। তার হাসি, কান্না—সব কিছু আমার এক নতুন পৃথিবীর সূচনা। মাতৃত্বের প্রতিটি দিন কষ্টের হলেও, তার প্রতি মুহূর্তে ভালোবাসা আর দায়িত্বের গোপন শক্তি আমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই সন্তান আমার অজানা শক্তি, আমার অমৃত। তার মাঝে আমি এতো এতো সুখের সন্ধান খুঁজে পাওয়াতে, আমি তার নাম রেখেছি সুখ।
ও আমার শুধু সুখ নয়, সুখ পাখি! আমি তাকে নিজের মতো পুষে বড় করবো। পৃথিবীর সকল কিছুর সঙ্গে আমি তাকে পরিচিত করবো। আমি আমার কন্যাকে দুঃখ চেনাবো, সুখ চেনাবো, ক্ষুধা চেনাবো, বাস্তবতা চেনাবো, যাতে আমার মতো একই ভুল আমার কন্যা না করে। তাকে ঘিরে আমার হাজারটা কল্পনা-জল্পনা।

অদ্ভুত এই আনন্দের মাঝে আমার কাঁধে দায়িত্বটাও বেড়েছে। সে ছাড়া-ও আমার পাশে আমার মা রয়েছে, ছোট বোন রয়েছে। বড় হওয়ার সুবাদে তাদের দায়িত্বও আমার। ছোট বোনটা বড় হচ্ছে, সামনে তার পরীক্ষা। এরপর বিয়েসাদীরও একটা ব্যাপার আছে। এতোগুলা মানুষ নিয়ে বসে আর কতকাল খাওয়া যায়? আমার মাথার উপর যে বাবার ছায়া নেই। আমার বটবৃক্ষটা হারিয়ে গেছে সেই কবেই। রেখে গিয়েছে পেনশনের সামান্য কিছু টাকা। আমার বাবা স্কুল মাষ্টার ছিলো কি-না! মা ওটা দিয়েই রয়েসয়ে চলছে। আমি ভাবছি কি করা যায়। আমি এরমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছি। কিন্তু ভালো ফলাফল আসেনি এখনো। যা এসেছিলো, সেই স্বল্প বেতনে আমার পোষবে না। এনিয়ে আমি একটু চিন্তিতও বটে! ভালো চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই আমার। অনার্স কমপ্লিট হতে এখনো আমার দেড়-দু’বছর বাকি। আমার পড়ালেখা শেষ হয়নি এখনো। মাত্র ইন্টারমিডিয়েট সার্টিফিকেট দিয়ে ভালো চাকরি পাওয়াটাও বিলাসিতা! আমি কি যে করি! যতোই হোক, লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে হবে। এরমাঝে যেকোনো একটা কাজ করাও সময়ের দাবি হিসেবে দাঁড়িয়েছে আমার জন্য। কোনো দিকে উপায়ান্তর না পেয়ে বসন্তের এক বিকেলে মা’কে বললাম,

“ভালো চাকরি তো পাচ্ছি না, মা! কি করবো বলতো?”
মা অনেকক্ষণ ভেবে বললো, “তোর জন্য এখন চাকরি পাওয়াটা মুশকিল হয়ে যাবে। চাকরি খোঁজা বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টার খুলতে পারিস, শহরে এটা ভালোই চলবে।”
আমি ভেবে দেখলাম, মায়ের আইডিয়াটা খারাপ না। আমি সেই মোতাবেক এগুলাম। বাসার কাছাকাছি একটা ঘর ভাড়া নিলাম, সেখানে খুলে ফেললাম কোচিং সেন্টার। অনলাইন থেকে শুরু করে, শহরের আনাচে-কানাচে ছাপিয়ে দিলাম আমার “সুখ কোচিং সেন্টার” এর বার্তা।

শিশু থেকে শুরু করে, ইন্টার পড়ুয়া স্টুডেন্টকে আমি পড়াতে পারবো। শুরুতে আমি হাতে গোনা ক’জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করলাম আমার এই যাত্রা। বাচ্চা মায়ের কাছে রেখে, আমি আমার সবটুকু শ্রম আর মেধা এখানে ঢেলে দিলাম। আমি নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে স্টুডেন্টদের পড়াতাম। যার ফলে ওরা ভালো রেজাল্ট করতো। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চারপাশে আমার শুনাম বাড়তে লাগলো। ধীরেধীরে মানুষজন আমার কোচিং সেন্টার চিনতে লাগলো, ভীড় বাড়লো। এরপর আর কখনো আমাকে স্টুডেন্ট নিয়ে ভাবতে হয়নি।
“সৎ পথে সাফল্য রয়েছে। পরিশ্রমই সেই সাফল্যের চাবিকাঠি, যা একদিন সুন্দর ফল দেয়।”

আমি এই মন্ত্রে বিশ্বাসী। আমি নিজের লক্ষ্য অটুট রেখে পরিশ্রম করতে লাগলাম। খুব শীঘ্রই সে ফল পেতে লাগলাম আমি। কয়েক ব্যাচে ভাগাভাগি করে এখন স্টুডেন্ট পড়াতে হয় আমাকে। আমাকে এতে হেল্প করছে তন্নিও। এরমধ্যে, ওর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন তন্নিও আমার সেন্টারে ছোট বাচ্চাদের পড়ায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের দু’বোনের একটা গতি হয়েছে। এখন আর “কাল কি খাবো, বাসা ভাড়া কীভাবে যোগাড় করবো, বাচ্চার খরচ কীভাবে চালাবো?” এ নিয়ে ভাবতে হয় না আমাদের। আমাদের এই সাফল্যে সবচেয়ে খুশী আমার মা। মা তার সবটুকু দিয়ে আমাদের পাশে থাকছে, সব কাজে সাপোর্ট করছে। আমি টের পেলাম, বাচ্চা, মা-বোন নিয়ে মানসিক শান্তির কমতি নেই আমার। আমার দুনিয়া ঝলমল করছে ওদের ছোঁয়ায়। এরপর আর আমাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

সেবার এক বিকেলের কথা। যথারীতি বিকেলে কোচিং সেন্টারে বসে আমি বাচ্চাদের পড়াচ্ছিলাম। আচমকা, কোত্থেকে যেন এলো, রিধান ভাই। সে মাঝেমধ্যে প্রায়ই সময় পেলে আমাদের এখানে আসে, বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে, ঘুরে যায়। এবার এসেছে বেশ কিছুদিন পর। তা-ও আমি তাকে দেখে আগ্রহ দেখালাম না। আমি যথারীতি তাকে এড়িয়ে যাই, এড়িয়ে চলি। আজও গেলাম। এতে অবশ্য রিধান ভাইয়ের কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। তার আচরণ স্বাভাবিক! রিধান ভাই বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে আমাকে এক প্রকার হুমকি করলো,

“আমায় একটা রং চা খাওয়া তো, তনু?”
আমি একবার বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বললাম, “চা আপনি নিচে গিয়ে খেয়ে আসুন, রিধান ভাই। এটা আমার পড়াবার জায়গা, বাসা নয়। এখানে আমি চা-নাস্তা নিয়ে বসে থাকি না।”
রিধান ভাই কিয়ৎক্ষণ আমার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে চেয়ে রইলো আর কিছু বললো না। আমি সেসবে আগ্রহও দেখালাম না। রিধান ভাই বসে রইলো আমার কোচিং এর একটা চেয়ারে। আমার বাচ্চাদের পড়ানোর টাইম শেষ, আমি তাদের ছুটি দিলাম। ওরা চলে গেলো। রিধান ভাই তাও বসে আছে। বিরক্ত হলাম আমি। মানুষটা কি এখানে আজীবন থাকার কথা ভাবছে? আমি এক পর্যায় বললাম,

“যাচ্ছেন না কেনো?”
“আমি এখানে থাকলে অসুবিধা কি তোর?”
রিধান ভাইয়ের পাল্টা প্রশ্নে আমি আবারও বললাম,
“অবশ্যই আমার অসুবিধা আছে। আপনি চলে যান রিধান ভাই, আর কখনো এখানে আসবেন না।”
রিধান ভাই সঙ্গে সঙ্গে কিছু বললো না। অনেকক্ষণ পর বললো,
“এক্ষুনি চলে যাবো? আরেকটু বসি।”
“বসে কি করবেন? আমার আরেক ব্যাচ পড়ানো বাকি, ওরা চলে আসবে। আপনি চলে যান।”
“বারবার আমাকে চলে যেতে বলছিস কেন, তনু? তোর কি মনে হয়, আমি এখানে বসে, ঘুমতে এসেছি। অনেক কাজ ফেলে এখানে এসেছি।”
“আসছেন কেন, আমি কি আসতে বলেছি আপনাকে?”
রিধান ভাই আমার কথা পাত্তা দিলো না। বললো,
“তোর একটু সময় হবে? বের হবি একটু আমার সঙ্গে?”
আমি তার দিকে আর তাকালাম না। উল্টো দিকে ফিরে বললাম,
“না।”

যদিও আমার হাতে এখন অনেকখানি সময়। পরবর্তী ব্যাচের স্টুডেন্টরা আসতে এখনো ৩০/৪০ মিনিট বাকি। যতোই হোক, সমাজের কাছে আমি একজন ডিভোর্সি নারী। ডিভোর্সি নারীদের কতশত দোষ। এরা কাজের জন্যও যদি কোনো পুরুষের সঙ্গে কথা বলে, সমাজের মানুষ সেটাও বাঁকা চোখে দেখে। সেখানে রিধান ভাই বড়ই বেপরোয়া। আজকাল কেমন কেমন করে তাকায় সে আমার দিকে! তার গভীর চোখে চোখ রাখার মতো দুঃসাহস আমার হয় না। গল্পের আসল লেখিকা, সুমাইয়া আফরিন ঐশী। আমি কোনো বদনামের ভাগীদার হতে চাই না! আমার কল্পনা ভিন্ন, বাস্তবতাও ভিন্ন! যতোই আমি প্রতিবাদি আর সাহসী নারী হই, এই সমাজেই আমি করছি বাস। এখানকার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাকে থাকতে হয়। আমার সম্মান আমাকেই ধরে রাখতে হবে যে!
আমার থেকে কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে রিধান ভাই উঠে দাঁড়ালো। পকেট থেকে কিছু চকলেট বের করে টেবিলে রাখলো, গম্ভীর কণ্ঠে একবার আমায় শুধালো,

“সুখের জন্য এনেছিলাম।”
এরপর আর একমুহূর্তও দেরী করলো না, রিধান ভাই। বাইরে বের হলো। এই জিনিস সে প্রায়ই করে। সুখকে খুব স্নেহ করে, রিধান ভাই। কিন্তু, চকলেট আদৌও সুখের জন্য? আমার বাচ্চা মেয়ে। সে কি করে চকলেট খাবে? তাকে আমি এসব কখনোই দেই না। তবুও, ওর বয়স ছ’মাস থেকেই রিধান ভাই আসলে ওর নামে চকলেট নিয়ে আসে। কারণ কি?
এ কারণ ভাবতে চাই না আমি। আমার ভাবনার মাঝেই, রিধান ভাই অনেকদূর চলে গেলো। আমি তাকে পিছন থেকে ডাক দিলাম,

“রিধান ভাই?”
রিধান ভাইয়ের পা থেমেছে কিন্তু লোকটা আর পিছনে ফেরেনি। আমি চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
“আপনি আর কখনো এখানে আসবেন না, রিধান ভাই। এমনকি আমাদের বাসাতেও না।”
রিধান ভাই প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না, এমনকি আমার দিকে তাকালোও না। এলোমেলো পায়ে আমার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হলো। মানুষটা কি কষ্ট পেলো আমার ব্যবহারে? আমি এসব একটিবারও ভাবলাম না। কেবল চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিলাম, এরপর আবারও ব্যস্ত হলাম নিজের কাজে।

আজ শুক্রবার। আমার ছুটির দিন। এই দিনটাতে সুখের সঙ্গেই আমি কাটাই। মেয়েটা সপ্তাহে একদিন মা’কে কাছে পেয়ে ছাড়তেই চায় না, বারবার কোলে উঠে জাপ্টে ধরে মা’কে। বুকের সঙ্গে মিশে থাকে। তখন কি যে সুখ সুখ লাগে আমার! আজও সুখকে নিয়ে বসার ঘরে বসে ছিলাম আমি। তন্নি, মা আজ বাসায় নেই। ওরা দু’জন এক আত্মিয়ের বিয়েতে গিয়েছে। আমি যাইনি। বাসায় আজ আমি আর আমার সুখ। হঠাৎ, পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি এলো আমাদের বাসায়। এই ভাবিটা খুব ভালো। কিন্তু, কথা একটু বেশিই বলে। আজও শুরু হলো তার কথার ঝুলি।

“তনু, কি হয়েছে জানো?”
“কি হয়েছে?”
“মাহিমে…..”
মাহিম, মাহিম নামটা শুনতে পেয়েই র ক্ত গরম হয়ে গেলো আমার। আমি তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,
“আমার সামনে এই নামটা কখনো উচ্চারণ করবেন না, ভাবী। কতবার নিষেধ করেছি আপনাকে?”
জগতের একটাই নাম, যা আমি ভীষণ ঘৃণা করি। এই নামটা আমার বক্ষঃস্থল থেকে আমি মুছে দিয়েছি। এই নাম আমি আর শুনতে চাই না, জানতে চাই না। কিন্তু, এই ভাবিটা বারবার এই নামটাই বলে। কারণ, উনি মাহিমদের এলাকার লোক। কীভাবে কীভাবে যেন সে আমাকে চিনে ফেলছে। তবুও, আমি তাকে শুরু থেকেই এসব বলতে বারণ করেছি। আজ অনেকদিন পর আবারও শুরু হলো উনার পুরোনো কথা। এতে এবার চরম রাগই লাগছিল আমার। উনি এমন কেন? এরমধ্যে, ভাবী আবারও বললো আমায়,
“তুমি মাহিমকে খুব ঘৃণা করো তাই-না, তনু?”

আমি এবার সুখকে আঁকড়ে ধরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। উনার থেকে উল্টো দিকে ঘুরে বললাম,
“ওরা আমার ঘৃণাতেও নেই, ভাবী। ওরা রয়েছে আমার অভিশা/পে, আমার গোপন দীর্ঘশ্বাসে।”
“তোমার অভিশা/প ওদের জীবনে লেগেছে, তনু। খুব করে লেগেছে! তুমি জিতে গেছো তনু, তুমি জিতে গেছো।
জেল থেকে বের হওয়ার পর মাহিমদের খুব ভালোই চলছিলো। কিন্তু, তোমার অভিশা/প ওদের পিছু ছাড়েনি, পিছু ছাড়েনি।
জানো, মাসখানেক আগে মাহিমদের সহোপরিবার এক্সি/ডেন্ট করেছে। ওদের মেয়েটা সেই জায়গাতেই মা রা গেছে। মাহিম ও তার স্ত্রী ম/রতে ম/রতে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু, এ বাঁচার থেকে ম রে যাওয়াটাও মন্দ নয়। মাহিমের তো দু’টো পা’ই তো কা টা গেছে। এখন চলতে-ফিরতেও পারছে না একা-একা। ওর বউয়েরও মাথাতে আঘাত লেগেছে, মস্তিষ্কে র-ক্তক্ষরণ হয়েছে। এর চিকিৎসা চালাতে চালাতে মাহিম তো পথে বসেছে।”

আমার কি যে হলো! আচমকা, বুকের ভেতর থেকে একটা ভার চলে গেলো। মানুষের এইরকম একটা মর্মা/ন্তিক ঘটনা শুনে কেউ হাসতে পারে? কি অদ্ভুত! আমার মুখে চাপা হাসি লেগেছে। ভাবী আমাকে, আমার অদ্ভুত আচরণকে আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় শুধালো,
“তুমি খুশী হয়েছো, তনু?”
“জানি না। তবে, আমার মনে হয়, এর থেকে আনন্দদায়ক খবর আমি আর কখনো শুনিনি।”
ভাবী হাসলো। বললো খুব জোরালো গলায়,
“পাপ কাউকে ছাড় দেয় না, কাউকে ছাড়ে না। এটা তো ওদের পাওনা ছিলো।”
আমিও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চনমনে গলায় বললাম, “রব কাউকে ছাড় দেয় না, তাই না ভাবী?”
ভাবী হাসলো। আমার দিকে এগিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“জানো, ডক্টর বলেছে, ওরা আর কখনো বাবা-মা হতে পারবে না।”
ঠিক সেই সময়ই আমি উপলব্ধি করলাম, রবের বিচার এই জগতে বসেই হয়। রব যা করে, বান্দার মঙ্গলের জন্যই করে। আমরা অনেক সময় সেটা দেরিতে উপলব্ধি করি। আজ মনে হচ্ছে, আমার রাজ্য সুখেই ভরা। আমি আমার সুখকে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে, সুখী সুখী গলায় আওড়ালাম,
“অতঃপর সেদিন মানুষ চিনেছি,
ঠকেছি, তবুও আমি ভালো থেকেছি।
শিখেছি প্রতারণার মাঝে সত্যের খোঁজ,
হারিয়ে গিয়ে ফিরে পাওয়ার মজাটা বুঝেছি।
যে ঠকিয়েছে, সে শিখিয়েছে আমায়—
বিশ্বাস ভাঙলে কেমন করে গড়া যায়।
তাই তো আজ বলি নিশ্চিন্ত মনে,
ঠকেছি বলে, তবু সুখে আছি প্রাণভরে।”

[নোট বার্তা–১ঃ বিয়ে হলো একটি জীবন মেয়াদী চুক্তি, যা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাই এ বিষয়টাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়া উচিত। এই তো, আজকাল শহরের আনাচে-কানাচে নিত্যনতুন মুখ। অহরহ অপরিচিতদের সঙ্গেই আমাদের বসবাস। তারা আমাদের জানে না, আমরাও তাদের জানি না। তবুও, চলার পথে আমাদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়, প্রণয় হয়, আবার মনের বোঝাপড়াও হুট করে হয়ে যায়। কিন্তু আদতে আমরা তাদের চিনি না, জানি না, তবুও বিশ্বাস করে বসি।
তাই বলে কি সবাই বিশ্বাসযোগ্য? উঁহু! ভালো-খারাপ মিলিয়েই তো আমরা মানুষ। তাই আমাদের সচেতন হওয়া উচিত, অন্তত বিয়ে করার ক্ষেত্রে। ডিফেন্স লং রিলেশনশিপের অপরিচিত কাউকে বিয়ে করার আগে তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা দরকার। অন্তত একবার হলেও দরকার তার ঠিকানা অনুযায়ী বাড়িতে গিয়ে আশেপাশের মানুষদের জিজ্ঞেস করা, আদৌ মানুষটা ভালো কি-না! সে আমাকে সবটা সত্যি বললো কিনা, তার সঙ্গে আমি সুখী হবো কিনা!
এটা বাছ-বিচার করার ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের আর কোনো মেয়ের সংসার না ভাঙুক। অন্তত আমার মতো অন্ধ বিশ্বাস করে কোনো মেয়ে আর না ঠকুক। সংসার হোক সুখের, জীবনসঙ্গী হোক বিশ্বস্ত!
জীবনসঙ্গী মানেই তো সেই মানুষ, যার উপস্থিতি শুধু আপনার পাশে থাকা নয়, বরং আপনার মানসিক শান্তি ও সান্ত্বনার উৎসও হয়ে ওঠা।

ঠকেছি পর্ব ৬

নোট বার্তা — ২৫ সালে এই গল্পটার সিজন-২ আসবে। সেখানে তনয়া ও রিধান ভাই থাকবে, তাদের ভালোবাসা থাকবে। তবে, গল্পের নামটা চেঞ্জ হতে পারে। চেঞ্জ হবে কিনা, সেটাও জানিয়ে দিবো। যাইহোক, সব মিলিয়ে গল্পটা কেমন ছিলো? আজ শেষ পর্বে সবাই সবার অনুভূতি শেয়ার করবেন। ভালো লেগেছে গল্পটা?

সমাপ্ত