ঠিক যেনো love Story পর্ব ৭

ঠিক যেনো love Story পর্ব ৭
Esrat jahan Esha

কিরে রিমলির সাথে যোগাযোগ করতে পারেছিস?
রিমন খুব ভাবনা চিন্তা করে উত্তর করে হ্যা গিয়ে মুখের উপর তোমার দেওয়া টাকা গুলো ছুড়ে দিয়ে এসেছি আর বলেছি কতো টাকা দিলে সে তোমার কাছে আসবে?

কিন্তু ভাইয়া কি বলব তোমাকে রিমলির এতো তেজ তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। আমাকে বলে উঠে তোর ভাইয়ের মতো লম্পট, দূরচরিত্র, একটা লোকের সাথে আমার কোনো কথা নেই খুব কষ্ট দিয়েছে আমায়। ও যদি আমার পিছনে লাগে ওর যে পা টা আছে সেটাও ভেংগে দিবে।
আমাকে পুতল পেয়েছে যখন মন চাইবে নাচাবে মন চাইলে ছুড়ে মারল?
সে আরো নানা কথা তুমি শুনলে কষ্ট পাবে।
সাফওয়ান কতক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে টাকা গুলো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—- বললাম না মূখের উপর ছুড়ে মেরে এসেছি আর নিচে ফেলে দেওয়া টাকা আবার কি তুলে আনা যায়?
— রিমন এটা তুই ঠিক করিস নি। ভদ্রভাবে বুঝালে পারতি আমার তো মাথা অল্পতেই গরম হয়ে যায়। হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে থাকতে মন মেজাজ অল্পতেই খিটখিট করে মাথা গরম হয়ে উঠে। তাই বলে তুই ওর সাথে খারাপ বিহেব করবি? ও কতো রাগ অভিমান নিয়ে আছে আমার উপর জানিস? স্টুপিটের মতো কাজ করিস কেনো?

— আসলে ভাইয়া তুমিই তো বললে।
সাফওয়ান ঠান্ডা মাথায় বলে আমার এই কৃত্রিম পা নিয়ে হাটতে হাটতে আরো ১৫ দিনের মতো লাগবে ততদিনে হাল ছাড়লে হবে না। তুই এক কাজ কর আমার জন্য ৩০টা লাল গোলাপ নিয়ে আয়।
— লাল গোলাপ দিয়ে কি করবে?
— রিমলির কাছে পাঠাবো।
— মানে?
— ও যেনো বুঝে আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি। সাথে একটা চিরকুট দিবো তুই সেটা ওর দরজায় রেখে আসবি।
— এ কাজের জন্য আমার লাভ?
— রিমলিকে যদি পাই তাহলে তোকে আমি তোর পছন্দের বাইক কিনে দিবো।
— সত্যি?
— হুমম।
— ওকে বস তাহলে ব্যবস্থা করছি।
রিমন বাইরে বেড় হয়ে পকেট থেকে টাকা বের করে গায়ের উপর টাকা দিয়ে বাতাস দেয় আর বলে উফফ ভাইয়া তুমি অনেক বোকা টাকা গুলো রিমলির মুখে না আমার পকেটে।

স্যার আপনার হাতের ব্যান্ডিজ খোলার সময় তো প্রায় হয়ে এসেছে দশ দিনের মতো লাগবে। তাহলে আপনি পুরো সুস্থ হয়ে উঠবেন। তারপর আমি আবার আমার কর্ম স্থানে ফিরে যাবো।
—- আচ্ছা রিমলি আমরা তো এক ছাদের নিচে কতো দিন আছি তুমি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর আমাদের কথা মনে পড়বে না? না মানে রুহামাকে মিস করবে না?
রিমলি জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে হ্যা স্যার মনে তো পড়বেই। জিবনের নতুন আর ভিন্ন রকমের একটা অভিজ্ঞতা হলো যা আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকবে। বেশি খারাপ লাগবে রুহামার জন্য সব সময় রুহামাকে মিস করব।

— আমাকে মিস করবে না?
রিমলি একটু লজ্জা পেয়ে বলে জ্বি স্যার মনে তো হবেই বললাম না জিবনের একটা অভিজ্ঞতা।
এর মধ্যে রুহামা এসে রিমলিকে জড়িয়ে ধরে মামুমি কোথায় যাবে? আমাকে রেখে মামুনি আর কোথাও যেতে পারবে না মামুনি সারাজীবন আমার সাথে থাকবে। বলো মামুনি থাকবে না বলো মামুনি থাকবে না?
রিমলি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে কোনো উত্তর দিচ্ছে না। রুহামা রিশাত কে জড়িয়ে ধরে ও বাবাই মামুনি কি আমাকে ছেড়ে যাবে? বলনো না মামুনিকে আমাকে যেনো আর ছেড়ে না যায় আমার মামুনিকে ছাড়া অনেক কষ্ট হয়।

রিশাত চুপচাপ দাড়িয়ে আছে মেয়েকে উত্তর দেওয়ার মতো কোনো উত্তর রিশাতের কাছে নেই।
হটাৎ দরজায় কেউ বেল দিলে রিমলি গিয়ে দড়জা খুলে কিন্তু বাইরে কাউকেই দেখতে পায় না নিচে তাকিয়ে দেখে অনেক গুলো গোলাপ আর গোলাপের মাঝে একটা চিরকুট।
রিমলি সেগুলো হাতে নিয়ে রিশাত কে উদ্দেশ্য করে বলে স্যার আপনাকে কেউ হয়ত এগুলো পাঠিয়েছে।
রিশাত চমকে উঠে বলে আমাকে কে পাঠাবে আমার এখানে সুনীল ছাড়া আর কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী নেই।
রুহামা রিমলির হাত থেকে গোলাপ গুলো ছো মেরে নিয়ে যায় আর বলে উঠে এগুলো সব আমার। সব গুলো কোলে নিয়ে রুহামা রুমে চলে যায়।

— আরে রুহামা আস্তে যাও গোলাপে কিন্তু কাটা আছে। রিমলিও রুহামার পিছন পিছন রুমে চলে যায়।
রিশাতের কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করছে গোলাপ গুলো কে দিলো? রিমলির বয়ফ্রেন্ড না তো? আচ্ছা আমার রিমলির জন্য এতো খারাপ লাগেছে কেনো? রিমলি চলে যাবে কথাটা মনে হলে কেমন যেনো একটা শুন্যতা কাজ করছে।
আমি মনে হয় একটু বেশি ভাবছি।

রিমলি রুহামার কাছে গিয়ে গেলাপের মাঝখান থেকে চিরকুটা খুলে পড়ে বুঝতে পারে এটা সাফওয়ানের কাজ। রিমলি মনে মনে সিন্ধান্ত নেয় ডাক্তার সুনীলের সাথে কথা বলে খুব তারাতারি চলে যাবে এখান থেকে নাহলে অতীত ওর পিছু ছাড়বে না। কোনো দিন অতীত কে আর জায়গা দিবে না এই প্রতিজ্ঞা করে রিমলি চোখে পানি মুছে চিঠি টা টেবিলের উপর রেখে দেয়।
এদিকে রুহামা আপন মনে গোলাপ গুলো ছিড়ে ছিড়ে চারোদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে আর হাসছে খুব আনন্দ হচ্ছে।

রিশাতের রাতে ঘুম ভেংগে গেলে রিশাত উঠে বসে। হাত ভালো হয়ে গেলেই রিমলি চলে যাবে কেমন যেনো খুব খারাপ লাগছে। রিশাত ভাবতে পারছে না এমন কেনো লাগছে রিমলি তো ওর কেউ না শুধু একজন নার্স আর কিছু না। রিশাত কিছু না ভেবেই রিমলির রুমের দিকে হাটা শুরু করে। রুমে পা দেওয়ার সাথে সাথে আবার পিছিয়ে নিয়ে মনে মনে বলে এভাবে একজনের রুমে ঢোকা ঠিক হবে না। ভুল ঠিক ভেবে লাভ নেই এসেছি যখন মেয়েটাকে দেখে যাই।

রিশাত রুমে গিয়ে দেখে সারা ঘরে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আর তার মাঝখানে রুহামা রিমলিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। রিমলিও মায়ের মতো রুহামাকে আগলে রেখেছে। রিশাত একটু এগিয়ে গিয়ে রুহামা আর রিমলির গায়ে কাথা টেনে দেয়।
রুম থেকে বেড় হয়ে আসতে যাবে তখন টেবিলের উপর একটা ছোট কাগজ দেখতে পায়। টেবিলের কাছে গিয়ে চিরকুট টা হাতে নিলো ডিম লাইটের আলোতে লেখা গুলো পড়া যাচ্ছে না তাই রিশাত রুমে এনে পড়তে শুরু করে।

চিরকুটে লেখা ছিলো
আমার প্রিয়তমা রিমলি,
প্লিজ রিমলি আমাকে ক্ষমা করো। জানি আমি অনেক অপরাধ করেছি সব মাফ করে শেষ বারের মতো একটা সুযোগ দাও। দেখো তোমাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না। রানী করে রাখব তোমাকে।
রিশাত চিরকুট রাগে ছিড়ে ফেলে আর বলে উঠে কষ্ট দিয়ে এখন আসছে ভালো সাজতে। এমন একটা মেয়েকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারে। রিমলি খুবই ভালো একটা মেয়ে ওকে কষ্ট দেওয়া তোর মোটেও ঠিক হয়নি।
রিমলি তোর কাছে কোনোদিন ফিরে যাবে না। তুই ওকে আবারো কষ্ট দিবি।

রিমলি সকালে উঠে হসপিটাল গিয়ে ডাক্তার সুনীলের কাছে যায়।
— স্যার আসব?
— রিমলি যে আসো আসো।
— স্যার কয়েকদিন পরেই রিশাত স্যারের হাত ঠিক হয়ে যাবে। আর আমাকেও মুক্ত করে দিবেন কয়েক দিনের ছুটিতে আমি বাড়ি চলে যাবো।
ডাক্তার সুনীল কতক্ষণ চুপ থেকে বলে আচ্ছা রিমলি তুমি কি রুহামার মা হয়ে যেতে পারো না?

— কি বলছেন স্যার?
— ঠিকিই বলছি তুমি অনেক ভালো মেয়ে আর রুহামা তোমাকে খুব ভালোবাসে তুমি কি পারো না মা মরা মেয়েটার মা হতে। জানি তোমার কাছে এই প্রস্তাব রাখাটা অন্যায় তবুও বলছি রিশাতের বয়স বেশি না ওর মা ওকে অল্প বয়সে বিয়ে করিয়েছে।
— স্যার আপনি আমাকে কি পেয়েছেন? দেখুন স্যার আমাকে ক্ষমা করুন আমি কখনো বিয়ে করব না। প্লিজ স্যার আমাকে আর কোনো পরিক্ষার সামনে দাড়া করিয়েন না।
ডাক্তার সুনীল কিছু একটা ভেবে বলেন আচ্ছা ঠিক আছে রিশাতের হাত ঠিক হলেই তুমি ছুটি পাবে।
— ধন্যবাদ স্যার।
রিমলি দ্রুত পায়ে বাসায় চলে আসে।

রিশাত— কোথাও গিয়েছিলে?
— হ্যা হসপিটালে গিয়েছিলাম।
রিশাত রিমলিকে আর কোনো প্রশ্ন করে না। তবে মনে কেমন যেনো একটা কষ্ট অনুভব হলো রিমলি কি সাফওয়ানকে দেখতে গিয়েছিল হসপিটালে?তাহলে কি রিমলি সাফওয়ানের কাছে ফিরে যাবে?
যাবে যাক তাতে আমার কি? আমার কেনো কষ্ট হচ্ছে?
ও ওর ভালোবাসার কাছে ফিরে যাবে যাক সুখি হোক। ভালো থাকুক সব সময় মেয়েটা আমার অনেক উপকার করেছে।

ঠিক যেনো love Story পর্ব ৬

রিমলি রুমে গিয়ে ভাবছে সুনীল স্যার এগুলো কি বলছেন? রুহামার মা আমি কিভাবে হবো? আর রিশাত স্যার সে কি আমাকে কখনো মেনে নিবে? সে তো পরী ম্যাডাম কে এখনো অনেক ভালোবাসে।
নাহ এটা হয় না। উফফ এখান থেকে বের হতে পারলে হয় জানিনা জিবনের শেষ পাতায় কি আছে।
এর মধ্যে রিমলির ফোনে বাড়ি থেকে ফোন আসে।
রিমলি ফোন তুলে দেখে ওর সৎ মা ফোন দিয়েছে।

— আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন?
—- হুমম ভালো আছি।
— শোনো তোমার জন্য খবর আছে ভালো একটা সমন্ধ এসেছে তাই সামনের মাসের পাঁচ তারিখ তুমি বাড়িতে আসবে আট তারিখ তোমার বিয়ে।

—- মা আপনাকে আমি বললাম না আমি বিয়ে করব না।
— তুই বিয়ে করবি না তোর ঘার বিয়ে করবে। তোর বাবা অসুস্থ সে চায় তোর বিয়ে দেখে যেতে ছেলে পুলিশে জব করে। আগে একটি বিয়ে ছিলো কিন্তু ডিভোর্স হয়ে গেছে। তোমার ছবি দেখে তোমাকে পছন্দ করেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আট তারিখ বিয়ে।
রিমলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিমলির সৎ মা ফোন কেটে দেয়।
রিমলি কতক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে সিন্ধান্ত নেয় বিয়েটা করে নিবে। তারপর ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

ঠিক যেনো love Story পর্ব ৮