ডার্কসাইড পর্ব ১০
জাবিন ফোরকান
সবজি কাটা শেষে প্যানে হালকা তেল দিয়ে তাতে পিয়াঁজ দিয়ে নাড়তে নাড়তে ব্লেন্ডারে কিছু টমেটো পেস্ট করে নিলো আসমান।তার সঙ্গে স্প্যাগেটি সস মিশিয়ে বাটিতে রাখলো।সিদ্ধ স্প্যাগেটি সিংকে ধুয়ে তা প্যানের সবজিতে ঢেলে সস দিয়ে মিশ্রিত করে নিলো। সঙ্গে লবণ, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং পেপরিকা পাউডার দিতে ভুললোনা।মিনিট কয়েক নাড়ার পর দুটি প্লেটে ঢেলে চিজ দিয়ে গার্নিশ করে দিলো সে।রোযা লোভনীয় খাবারের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো।একটাও শব্দ উচ্চারণে সক্ষম হলোনা।
স্প্যাগেটি সরিয়ে রেখে ফ্রিজ থেকে আপেল, আঙ্গুর এবং একটি বড়সড় কলা বের করলো আসমান।পুনরায় কাটিং বোর্ডে তা রেখে ছোট ছোট কিউব আকারে কাটতে শুরু করলো।কাজটা করার সময় তার হুডির ঢোলা হাতা নেমে আসছে বারবার।কোনমতে টেনেটুনে আসমান ঠিক করছে, হাত দিতে পারছেনা ফলের রস লেগে থাকায়।ব্যাপারটা খেয়াল করে রোযা কেবিনেট থেকে নেমে এগিয়ে গেলো।
– আ… আমি সাহায্য করি?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনুমতি চাইলো রোযা।সে একটা বিষয় খেয়াল করেছে, আসমান মানুষের স্পর্শ পছন্দ করেনা। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় নানাভাবে একে বিশ্লেষণ করা যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অবস্থা পি টি এস ডি বা পাস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার।এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কোনো দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কারণে মানুষ কোনোকিছুকে এড়িয়ে চলতে আরম্ভ করে বা ভয় পেতে শুরু করে।আসমানের ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার পি টি এস ডি রয়েছে কিনা তা রোযার পক্ষে জানা সম্ভব নয় তাই সে অনুমতি চাওয়া শ্রেয় মনে করলো।
রোযার প্রশ্নে এক মুহুর্ত ভাবলো আসমান।তারপর মাথা নেড়ে নিজের হাত এগিয়ে দিলো।রোযা হালকা হেসে সাবধানে আসমানের হাত স্পর্শ করলো।তার ত্বক ছোঁয়া এড়িয়ে সে হুডির হাতা ভাঁজ করে করে গুটিয়ে তুলে দিলো একেবারে আসমানের কনুই পর্যন্ত।প্রথমবারের মতন আসমানের অতিরিক্ত শুভ্রতর ত্বক এতটা কাছ থেকে লক্ষ্য করার সুযোগ পেলো সে।আসমানের দুই বাহুই যথেষ্ট শক্তিশালী, তা তার পেশী এবং শিরা উপশিরার অস্তিত্ব দেখে বোঝা সম্ভব।নিশ্চয়ই শারীরিক কসরত করে সে।
মাস্কের উপর থেকে এক পলক রোযার দিকে তাকালো আসমান,তারপর নিজের হাত সরিয়ে নিলো সহসাই।রোযাও দূরে সরে গেলো।পুনরায় ফলে মনোযোগ দিলো সে।রোযা ভেবেছিল হয়ত ছোট্ট একটা ধন্যবাদ পাবে সে, কিন্তু আসমান হঠাৎ করেই কেমন পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।রোযা দেখতে পাচ্ছে ফল কাটার সময় তার ঘন ভ্রুজোড়া বারবার কুঞ্চিত হয়ে আসছে।হয়ত কিছু একটা ভাবছে সে।প্রশ্ন করে তার মেজাজ আরো বিগড়ে দেয়া থেকে বিরত রইলো রোযা।
আধ ঘণ্টার মাথায় আসমানের কাজ সম্পন্ন হলো। চিজ স্প্যাগেটি, এবং ফ্রুট সালাদ।রোযার প্লেটগুলো আসমান কিচেনের সঙ্গে লাগোয়া টেবিলে রাখলো।
– আপনি এত ভালো রান্না করতে জানেন?
দীর্ঘ নীরবতার পর বুলি ফুটলো রোযার।আসমান তার দিকে এক পলক তাকালো।পরবর্তীতে কিচেন অ্যাপ্রোন খুলতে খুলতে জানালো,
– শিখেছি।
– ওহ। কারো কাছ থেকে?নাকি আমার মতন ইউটিউব দেখে?
রোযা ভেবেছিল এই প্রশ্নের জবাব আসমান দেবেনা।কিন্তু কিচেন টিস্যু দিয়ে চুলার চারিপাশ মুছতে মুছতে মৃদু কন্ঠে আসমান জানালো,
– একজনের কাছ থেকে।
এটুকুই। রোযাও খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করলোনা। আসমান টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলতে গেলে টেবিলের উপর রাখা তার ফোনটা কোমল রিংটোনের শব্দে বেজে উঠল।কাছাকাছি থাকায় রোযা সেটা তুলে আসমানের দিকে বাড়িয়ে দিলো।তবে কলার আইডি সে দেখে ফেলেছে ইতোমধ্যেই।
“ বাবা ”
এই নামেই সেভ করা।আসমান ফোন রিসিভ করলো রোযার সামনেই।নিজে থেকে কিছুই বললোনা। অপর প্রান্ত থেকে বলার অপেক্ষা করলো।
– বিয়ে করেছ শুনলাম।
নীরব আসমান।তার অভিব্যক্তিতে পরিবর্তন এলোনা।
– ঠিক বিশ্বাস করতে পারলামনা।
এবারেও নিঃশব্দ আসমান।ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ভেসে এলো।
– একবার বললে পারতে।
– সরি।
আস্তে করে বললো আসমান।টেবিলের পাশে দাঁড়ানো রোযা এই প্রথম আসমানকে কাউকে সরি বলতে শুনে হতবাক হয়ে রইলো।ওপাশ থেকে কি বলা হচ্ছে তা অবশ্য সে শুনতে পাচ্ছেনা,তবুও এটুকু বুঝতে সে সক্ষম যে মানুষটাকে আসমান ভীষণ সম্মান করে। তা তার অব্যক্ত দৃষ্টিতেই বোঝা যাচ্ছে।
– ঠিক আছে।যা ভালো মনে হয় করো, কিন্তু নিজের কোনো ক্ষতি করে নয়।
– আচ্ছা।
– আমি বাংলাদেশে আসছি আগামী মাসে।তোমার স্ত্রীর সঙ্গে একটু সাক্ষাৎ করা জরুরী।
এক মুহূর্তের জন্য ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রইলো আসমান।পরবর্তীতে জানালো,
– ঠিক আছে।
– টেইক কেয়ার।
ফোনের লাইন কেটে গেলো।স্ক্রিনের দিকে এক মুহুর্ত চেয়ে থেকে পরবর্তীতে ফোন ট্রাউজারের পকেটে ভরে ফেলল আসমান।রোযার দিকে একবারও আর তাকালোনা।একটা ট্রেতে নিজের খাবারগুলো তুলে নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো।টেবিলে বসে তাকে সিঁড়ি বেয়ে দুই তলায় আড়াল হয়ে যেতে দেখলো রোযা।
নিজের চেহারা নিয়ে এত কিসের রাখঢাক যে সামান্য খাবারটুকু পর্যন্ত সামনে বসে খেতে পারেনা?মনে মনে ভাবলো রোযা।পরক্ষণে একটা নিঃশ্বাস নির্গত করে খাবারে মনোযোগ দিলো।প্রথম চামচ মুখে দিয়েই রোযা স্বীকার করতে বাধ্য হলো… আসমান দারুণ একজন রাঁধুনী!
নিজের সুবিশাল অফিস কেবিনরুমের চেয়ারে বসে বাইরের শহরটার দিকে চেয়ে রয়েছেন বাদশাহ কায়সার।সময়টা পড়ন্ত বিকাল।দিবাকর ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছে গগনের পশ্চিম প্রান্তে।তার ছায়ামাখা সোনালী রৌদ্র এসে সম্পূর্ণ কেবিন আচ্ছাদিত করে তুলেছে।দিনের এই সময়টি তার ছেলের ভীষণ প্রিয় ছিল। বর্তমানে যে চেয়ারে তিনি বসে আছেন ঠিক সেখানেই আজ থেকে এক মাস আগেও বসত তার ছেলে।কিন্তু আজ সেই ছেলে পাড়ি জমিয়েছে না ফেরার দেশে।
পিতার কাঁধে সন্তানের লা*শ— এই বাক্যটির মর্মার্থ বর্তমানে বাদশাহ কায়সার তীব্রভাবে অনুভব করছেন।তার বাহ্যিক অবয়বে তাকে এক পরিমিত সত্তার অধিকারী মনে হয় সর্বদাই।কিন্তু তিনি নিজের অন্তর চি*রে দেখাতে পারছেন না স্নেহের সন্তানের চলে যাওয়ায় কতটা র*ক্তক্ষরণ তার হৃদয়ে হচ্ছে অনবরত।পরপর পাঁচ কন্যার পর একমাত্র পুত্রসন্তান এই নাবিল।অতি আদরের এবং শখের এই সন্তানের খ*ন্ডিত বিখ*ণ্ডিত মরদে*হ তিনি চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ করার মনোবল পাননি।
জেদী হোক, কুলাঙ্গার হোক, মেয়েবাজ হোক, তার নিজের ঔরসজাত সন্তানই তো!তাছাড়া পুরুষমানুষ একটু আধটু ওইরকম করতেই পারে, এটা তাদের জন্মগত অধিকার! পুরুষমানুষের জন্মই হয় নেতৃত্ব প্রদানের জন্য। সারাদিন কাজে কর্মে ব্যাস্ত থেকে রাত বিরাতে আয়েশ স্ফূর্তি করতে মন চাইতেই পারে। এটা খুব দোষের কিছু নেই।
কিন্তু তার সন্তানকে এভাবে অকালে চলে যেতে হলো কেনো?চিতাবা*ঘের আ*ক্রমণ?হাস্যকর!এক চরিত্রহীনার পাল্লায় পড়ে তার ছেলে নিজেকে ধ্বং*স করার মতন মহাবোকা নয়।সেভাবে মানুষ করা হয়নি তাকে। কপালে হাত ঠেকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বাদশাহ কায়সার।বহু পূর্বেই তিনি শপথ নিয়েছেন, নিজের ছেলের পরিণতির জন্য দায়ী ব্যক্তিকে পাকড়াও করলে জ্যান্ত ছাড়বেন না কোনোদিন!
– স্যার….
নম্র কণ্ঠের সম্বোধন কানে যেতেই চেয়ার ঘুরিয়ে পিছন ফিরলেন বাদশাহ। দরজার সামনে আকাশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশারায় ভেতরে আসার অনুমতি প্রদান করলেন।আকাশ এগিয়ে এসে খানিক বিরক্তির সাথেই একটি ফাইল রেখে দিলো বাদশাহ কায়সারের সম্মুখে।কে বি গ্রুপের অধিপতি সেটি হাতে তুলে নিলেন।তার সদা নির্ভার চেহারায়ও অদ্ভুত এক বিস্ময় ফুটে উঠল সহসাই।
– স্যার, আর অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
আকাশের দিকে তাকালেন বাদশাহ।তার বিশ্বাসযোগ্য এই ছেলেটির সর্বদাই নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করে থাকে।কিন্তু আজ এর মাঝেও এক উদ্ভ্রান্ততা প্রকাশ পাচ্ছে।
– প্রথমে আলাউদ্দীন, এরপর নাবিল স্যার আর এখন সান্দ্রো।ডোন্ট ইউ থিঙ্ক দিস ইজ আ ক্লিয়ার সিকুয়েন্স?
– সিকুয়েন্স অব হোয়াট?
কঠোর এবং কর্কশ কন্ঠে শুধালেন বাদশাহ।যেন নিজের সর্বশক্তি ব্যবহার করে অস্বীকার করতে চাইছেন পরিস্থিতিকে।আকাশ জবাব দিতে সক্ষম হলোনা।দৃষ্টি নামিয়ে তাকিয়ে থাকলো মেঝের দিকে।দীর্ঘ কয়েক মিনিট অস্বস্তিকর নীরবতা ভর করলো সম্পূর্ণ কেবিনজুড়ে।বাদশাহ ততক্ষণে বেশ মনোযোগ দিয়ে ফাইলটি বারম্বার পড়লেন।তার ঈষৎ বয়স্ক চেহারার কপালে কয়েক সারি চিন্তার ভাঁজ পড়ল।চোয়াল ঝুলে পড়লো এক প্রকার হতাশায়।কিছুটা দূর থেকেও পিনপতন নীরবতার মাঝেও কে বি সাম্রাজ্যের অধিপতির দ্রুতগতির হৃদস্পন্দন ধ্বনি স্পষ্ট কর্ণগোচর হচ্ছে আকাশের।শীতল বাতাস ছড়িয়ে দেয়া সত্ত্বেও এসির প্রভাব কাটিয়ে তার মাথা থেকে একটি আতঙ্কের ঘামের ফোঁটা টলটল করে নামছে নিচের দিকে।
বাদশাহ কায়সারের কম্পিত কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হলো হঠাৎই।
– তোমার কি ধারণা?ও বেঁচে আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর করার দুঃসাহস আকাশ প্রদর্শন করলোনা।নীরবে তাকিয়ে রইলো বাইরের শহুরে দৃশ্যের পানে।ফাইলটা সরিয়ে রাখলেন বাদশাহ।নিজেও অনুসরণ করলেন আকাশের দৃষ্টি।দ্বিতীয় দফায় নিরবতা নেমে এলো।তবে তার তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পূর্বে বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন,
– ওই মেয়েটার কি খবর?
– এক্সপার্ট টিম কাজ করছে।কিন্তু তার অবস্থান জানা সম্ভব হচ্ছেনা।
তৎক্ষণাৎ যান্ত্রিক কণ্ঠস্বরে জবাব দিলো আকাশ।বাদশাহ মুহূর্তকয়েক কি যেন ভাবলেন।
– সামান্য একটা কলগার্ল এতগুলো দিন ধরে এক্সপার্টদের চোখে ধুলো দিয়ে আড়ালে রয়েছে বিষয়টা মানতে পারলাম না।
– আমি দুঃখিত স্যার। স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি যে আমাদের টিমের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
– উহুম। দ্যা গার্ল ইজ বিইং প্রোটেকটেড।
আকাশ চুপ করে রইলো।মাথা তুলে তার দিকে তাকালেন বাদশাহ।বাইরের অস্তমিতের আভা ছেলেটির কঠোরতাপূর্ণ চেহারায় প্রতিফলিত হচ্ছে।কলপ দেয়া চুলের মাঝেও গুটিকতক পরিপক্ক চুল রুপোর ন্যায় চিকচিক করছে।
– আমি জানি তুমি নিজেও একই ধারণা করেছ আকাশ।
– জ্বি।মেয়েটিকে রক্ষা করা হচ্ছে।খুব সম্ভবত এর পিছনে কোনো রাঘববোয়ালের হাত রয়েছে।
– রাঘববোয়াল নাকি হাঙর তা তো সময়ই বলে দেবে।
অদ্ভুত হাসিতে আবর্তিত হলো বাদশাহ কায়সারের অধরযুগল। কপালে দুই আঙ্গুল ঠেকিয়ে তিনি ভ্রু উচু করে ব্যক্ত করলেন,
– মেয়েটির বাবা না কি যেনো…
– দাদু। ইউনূস রহমান। হোমকেয়ার হসপিটাল, ক্যান্সার ইউনিট, কেবিন নং ১৮।
একটানা বলে গেলো আকাশ।তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ পেলো বাদশাহর দৃষ্টিতে।তিনি ইঞ্চি দুয়েক দৈর্ঘ্যের অধিকারী কাঁচা – পাকা সংমিশ্রণে তৈরি দাড়িতে হাত বুলিয়ে আদেশ দিলেন,
– তুলে ফেলো। কান টানলে মাথা এমনিতেই এসে হাজীর হবে।
নীরব সম্মতি জ্ঞাপন করে আকাশ উল্টো ঘুরলো। আজ্ঞা পালনে বিলম্ব ব্যাতিত কার্যক্রমে লিপ্ত হবে সে।তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন বাদশাহ। দাড়িতে হাত বুলাতে থাকলেন।তার কপালে পুনরায় চিন্তার ভাঁজের উদয় ঘটলো।
একটি পরীক্ষা করছেন তিনি।এই পরীক্ষার ফলাফল শূন্য হওয়াই শ্রেয়।কিন্তু রাঘববোয়ালের বদলে যদি জালে কোনো মেশিন ধরা পড়ে…. তাহলে কি করবেন তিনি?
সেই মেশিনকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে হবে। আরও একবার।
মারবেল ভবন।
অস্বস্তি নিয়ে হলরুমের কাউচে বসে আছে রোযা।তার মুখোমুখি বসে পায়ের উপর পা তুলে তার উপর আবার ল্যাপটপ রেখে কিছু করে চলেছে চারুলতা।মেয়েটার পরনে আজ টি শার্টের বদলে টপ,সঙ্গে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট।গোলাকার ফ্রেমের চশমার লেন্সের আড়ালে খানিক ফ্যাকাশে বর্ণের চোখজোড়া এক মাধুর্যের দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
আসমান বাসায় নেই।সে গতকাল রাতেই কোথাও বেরিয়েছে।অবশ্যই কোথায় গিয়েছে এবং কেনই বা গিয়েছে তার কোনো ধারণা রোযার নেই।ঘুম থেকে উঠে ফ্রিজের সাথে চুম্বক দিয়ে আটকানো ছোট্ট একটা নোট পেয়েছিল সে।
“ উইল বি লেইট….”
এটুকুই। লিখাটুকু বুঝতেও বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে রোযাকে।হয়ত খুব তাড়াহুড়োয় লিখেছে নাহলে বিরক্তি নিয়ে লিখেছে।লিখেছে যে এই বেশি! নাহলে আসমান উধাও বলে আরেক চোট পোহাতে হতো তাকে।
বাড়ি ফাঁকা পেয়ে আজ তাই গোটা সকাল রোযা একা একা চিন্তাভাবনা করে কাটিয়েছে।কিভাবে দাদুর চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করবে। আসমান নাবিলের বেলায় পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিল।তেমনটাই চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল তারা।কিন্তু সান্দ্রোর বেলায় সেসব নিয়ে কোনো কথা হয়নি।তাদের মাঝে যে কনট্র্যাক্ট তাতে নিজেকে রক্ষা করার বিনিময়ে আসমানকে সহযোগিতা করছে রোযা, টাকার বিনিময়ে নয়।তাই আসমানের কাছে নতুন করে টাকা চাইতেও তার লজ্জাবোধ হচ্ছে।
এমনিতেও এই মিথ্যা সম্পর্কের বাহানায় তার সম্পূর্ণ ভরণপোষণ বর্তমানে আসমানের উপরই নির্ভরশীল।নিজের থাকাখাওয়ার জন্য কোনো অতিরিক্ত খরচ তাকে করতে হচ্ছেনা।ছেলেটা প্রচুর অর্থের মালিক।কিন্তু তাই বলে কি তাকে এভাবে ব্যবহার করা সম্ভব?রোযার বিবেকে বাঁধছে।অর্থের যে খুব প্রয়োজন তার!কি করবে?
সন্ধ্যার পর হাজির চারুলতা।নিজের বানানো পুডিং নিয়ে এসেছিল।আসমান নেই জেনে আর ফিরে যায়নি।গল্প জুড়ে দিয়েছে রোযার সঙ্গে।যেহেতু ডেলিভারি দেয়ার সময় চারুলতা তাকে একবার দেখেছিল তাই নিজের অতীত নিয়ে খুব একটা মিথ্যা বলেনি রোযা। সত্যির সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে তার এবং আসমানের অদ্ভুতুড়ে এক প্রেমকাহিনী তৈরী করেছে সে।
“ সেই ছিল কি বৃষ্টি মুখর রাত! একটা হোটেলরুমে নীলের সঙ্গে রাত্রিযাপন করেছিল আরিয়া। অন্যসব কাস্টমারের মত নীলকে ভুলে যেতে পারেনি সে, যেমন পারেনি নীল নিজে।পেরিয়ে যায় কতগুলো দিন!হঠাৎ একদিন, বাড়তি উপার্জনের আশায় সে যখন চারুলতাকে কিছু ডেলিভারি দিতে আসে,তখন নিজের পেন্টহাউজের জানালা থেকে আরিয়াকে দেখতে পায় নীল।তারপর আর কি?চলে অনুসরণ। আরিয়ার কষ্টের জীবন সহ্য করতে না পেরে নীল বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাকে তৎক্ষণাৎ।আরিয়াও খুশিতে অশ্রুসিক্ত হয়ে নীলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভালোবাসা জাহির করে। লায়লা মজনুর অমর প্রেমকাহিনীর শুভসমাপ্তি ঘটে। ”
নিজের কাহিনী শুনে নিজেই তাজ্জব বনে গিয়েছিল রোযা।কিভাবে সম্ভব হলো তার পক্ষে সবথেকে বকওয়াস এই গল্প রচনা করা?সাহিত্যের নোবেল পরের বছর তার নামে উৎসর্গ হলো বলে!শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার সব কথা শুনে চারুলতা মুচকি হেসে বলেছিল,
– তাই বুঝি?
মেয়েটির হাসির অন্তরালে কত কি লুকায়িত ছিলো তা উদঘাটনে ব্যর্থ রোযা।নিজের ভাইয়ের মতন বোনটিও যেন রহস্যের চাদরে ঘেরা।যদিও সদা উৎফুল্ল থাকে সে, তবুও অদ্ভুত এক অমানিশার অস্তিত্ব তার অবয়বে টের পেতে বেগ পোহাতে হয়না রোযাকে।
কিছুক্ষণ আগেই রোযার পরনের কামিজের সেলাই খুলে যাওয়া অংশ নিয়ে কথা ওঠে।সে আগে খেয়ালই করেনি টান খেয়ে কখন খুলে গেছে।পোশাক আশাক নিয়ে কথা তার ড্রেসিং রুম পর্যন্ত গড়ায়।রীতিমত তোলপাড় চালিয়ে বেছে বেছে গোটা তিনেক শাড়ী আর চারেক কামিজ বাদে সবকিছুই ভাগাড়ে ফেলেছে চারুলতা।তারপর ল্যাপটপ নিয়ে বসে যায় নিজের ভাবীর নতুন পোশাকের অনলাইন শপিংয়ে।
– এটা দেখো আরিয়া…
চারুলতা ল্যাপটপের স্ক্রিন ঘুরিয়ে ধরতেই রোযা ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরল।চোখ পিটপিট করে দেখলো। ফ্লোরাল প্রিন্টের কিছু ফ্রক।দৈর্ঘ্যে রোযার হাঁটুর নিচ অবধি পড়বে।সঙ্গে চাইলে প্যান্টের ব্যবস্থা রয়েছে।
– সুন্দর না?
– হু…?
‘ ম ’ শব্দটি আর উচ্চারিত হলোনা রোযার কন্ঠ থেকে।নিচের ট্যাগে দৃষ্টি আটকে গেলো তার। চার হাজার!একটা মাত্র ফ্রক কিনা চার হাজার? রোযাকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে যেন বিনোদিত হলো চারুলতা।হাসতে হাসতে জানালো,
– এগুলো ইমপোর্টেড। চীন আর কোরিয়া থেকে আসে।
জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো রোযা।বুঝতে পারলোনা তার কি বলা উচিত।চারুলতা থেমে নেই।কার্সর সরিয়ে সে একটার পর একটা দেখিয়ে চলেছে।পাঁচ, দশ, বিশ,ত্রিশ হাজার এমনকি লাখে গিয়ে ঠেকলো কিছু শাড়ী!শেষমেশ পঁয়তাল্লিশ হাজারের আসমানী বর্ণের এক গাউনে থামলো চারুলতা।মিষ্টি হেসে জানালো,
– মনে হচ্ছে রঙটা তোমাকে দারুণ মানাবে।
– হে হে!
হাসার চেষ্টা করলেও রোযার হাসির শব্দটা আর্তনাদের মতন শোনালো।ঘামতে শুরু করেছে সে।কি করবে?এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে মুক্তিলাভ করবে?
– আগামী সপ্তাহে ইউফোরিয়া সোসাইটির ইয়ার পার্টি রয়েছে।সদস্য হিসাবে সকলেই সপরিবারে যোগদান করবে।আমাদেরও যেতে হবে। রেমান পরিবারের পুত্রবধূ হিসাবে যথাযথ প্রদর্শন প্রয়োজন।
হালকা চোখটিপ দিলো চারুলতা।তাতে কিছুটা বিব্রতবোধ করলো রোযা।এই মেয়ে আবার সেদিন শরবত খাইয়ে উপদেশ দেয়ার মতন কাহিনী করবেনা তো?রোযার ইতস্ততভাব বোধ হয় লক্ষ্য করলো চারুলতা।ল্যাপটপ নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরো কিছু অপশন দেখতে দেখতে সে বললো,
– এটা আমার উপহার থাকবে, ননদিনী হিসাবে তোমার জন্য।আমি একজন ফ্রিল্যান্সার ।
অতিরিক্ত তথ্যটুকু চারুলতা কেনো প্রদান করেছে তা উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হলোনা রোযা। ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জন এই দেশে মোটেও নগণ্য নয়।তাছাড়া রেমান পরিবার যথেষ্ট সম্পদশালী।নাহলে এমন ভবনে একটি গোটা পেন্টহাউজ, ফ্ল্যাট এবং পোর্শের মতন গাড়ির মালিক হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
রোযাকে দেখিয়ে একের পর এক পোশাকের অর্ডার দিতে আরম্ভ করলো চারুলতা।মূল্য হিসাব করতে করতে রোযার রীতিমত বুক ধড়ফড় অবস্থা। চারুলতাকে থামাতে সে তার হাত চেপে ধরলো।
– ব্যাস ব্যাস! অনেক হয়েছে….আর নয়!
রোযার আতঙ্ক লক্ষ্য করে একগাল হাসলো চারুলতা।হাসলে তার গালে টোল পড়ে, বেশ মিষ্টি লাগে দেখতে।ভ্রু দুলিয়ে দুষ্টুমির ভান করে সে বললো,
– ডোন্ট ওয়ারি….ব্রো হ্যায প্ল্যাটিনাম কার্ড!
“সে প্ল্যাটিনাম কার্ড থাকুক আর কোহিনুর কার্ড থাকুক! তোমার ভাই এসব দেখলে আমাকে উনিশটা ছু*রি*র গুতো দেবেনা কিংবা কে*টেকু*টে বুড়িগঙ্গায় ভাসাবেনা তার গ্যারান্টি কি?”— বলতে চাইলেও বলতে পারলোনা রোযা।শুধু জোরপূর্বক হাসলো যেন কি এক মজাদার কথা বলেছে চারুলতা।
ঠিক তখনি বিকট রিংটোনে বেজে উঠলো রোযার ফোন।এক উদ্ভট মেটালিক ব্যান্ডের কর্কশ কন্ঠে গান।গান না বলে তাকে অবশ্য শব্দদূষণ বলা শ্রেয়।ফোনের থেকে দূরে থাকলে রিংটোন না শোনা কিংবা ঘুমে থাকলে উঠতে না পারার ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে এমন করেছে রোযা।দাদু যেহেতু হাসপাতালে তাই যেকোনো মুহূর্তে ইমার্জেন্সির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় তাকে।
পেন্টহাউজের প্রশান্ত পরিবেশের মাঝে উৎকট শব্দটি চারুলতাকে পর্যন্ত হতচকিত করে তুললো।রোযা দ্রুত ফোন হাতে নিলো।কলার আইডিতে ডক্টর ওয়াসিম আহমেদ নামটি ভাসতে দেখেই রোযার বুকটা যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। তার দাদুর ডাক্তার, রাত বাজে আটটা!এর আগে মাত্র একবারই রাতে তিনি কল দিয়েছিলেন রোযাকে, প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল সব আশাই সেদিন।কিন্তু স্রষ্টার আশীর্বাদে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলেন ইউনূস রহমান।
কিন্তু এবার?
– হ্যা… হ্যালো?
কাপা কাপা কন্ঠে ফোন রিসিভ করলো রোযা।দূরে সরে দাঁড়ালো চারুলতার থেকে।ডক্টর ওয়াসিমের চাপা কন্ঠস্বর শোনা গেলো দ্রুতই,
– মিস রোযা?
– জ্বি বলুন ডক্টর।কোনো সমস্যা?আমি কি আসবো এক্ষুনি?দাদু ঠিক আছে?
– আপনার দাদু ঠিক আছেন কিন্তু…
– কিন্তু?
বিস্মিত হলো রোযা, তথাপি কন্ঠস্বর শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।
– আমি জানিনা বিষয়টি ঠিক কেমনভাবে আপনাকে বলা উচিত। আই থিঙ্ক সামথিং ফিশি ইজ গোয়িং এরাউন্ড হেয়ার।
– মানে?একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ?
রোযার কন্ঠে আকুতি ঝরে পড়লো।ডক্টর ওয়াসিম দ্রুতকন্ঠে বললেন,
– আজ সন্ধ্যায় দুইজন লোক আসে হাসপাতালে।আমার কাছ থেকে আপনার দাদু সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জিজ্ঞাসা করে।আমি প্রথমে রাজী হইনি ইনফর্মেশন শেয়ার করতে,এটা হাসপাতালের পলিসির বাইরে।কিন্তু কর্তৃপক্ষ ফোন করে আমাকে জানায় যে তাদের যেন সর্বরকম সহযোগিতা করা হয়।তারা চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ আগেই দেখলাম জনতিনেক লোক আপনার দাদুর কেবিনের দিকে যাচ্ছে। নার্সকেও বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।বিষয়টি আপনাকে জানানোর কথা নয় আমার, উপরমহলের নিষেধ রয়েছে।কিন্তু একজন ডাক্তার হিসাবে নিজের রোগীর প্রতি দায়িত্ব আমি কিছুতেই অবহেলা করতে পারিনা, আর মানুষ হিসাবেও নয়।
রোযার পা ভেঙে আসছিলো কিন্তু দেয়ালে হেলান দিয়ে সে নিজেকে রক্ষা করলো।মুহূর্তেই থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার সমস্ত শরীর।
– সামওয়ান ভেরি পাওয়ারফুল ইজ ট্রায়িং টু ডু সামথিং।খুব বেশিক্ষণ ট্যাকেল দেয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে।
– ডক্টর প্লীজ… এক ঘন্টা!শুধুমাত্র একটা ঘণ্টা সময় দিন আমাকে!আমি এক্ষুনি আসছি… প্লীজ!
রোযার দুই নয়ন উপচে অশ্রু গড়াতে আরম্ভ করেছে।ডক্টর ওয়াসিম এক মুহুর্ত নিশ্চুপ থাকলেন।অতঃপর জানালেন,
– ঠিক আছে।এক ঘন্টা আমি যেকোনো অজুহাতে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।
– ধন্যবাদ ডক্টর! অনেক অনেক ধন্যবাদ! আমি আসছি! আমার দাদুর কিছু হতে দেবেন না প্লীজ!
ফোন কেটে দিলো রোযা।শরীর ছেড়ে দিয়ে হুড়মুড় করে পরে যেতে নিচ্ছিলো সে কিন্তু চারুলতা এসে ধরে ফেললো তাকে।চিন্তিত কন্ঠে জানতে চাইলো,
– কি হয়েছে আরিয়া?কোনো দুঃসংবাদ মনে হচ্ছে।
জবাব দেয়ার মতন অবস্থায় রোযা নেই। কাউচে পড়ে থাকা আসমানের হুডি নিয়ে সে এক ছুটে ড্রেসিং রুমে ঢুকলো। কুর্তির সাথে পড়ার জন্য একটা জিন্সপ্যান্ট রয়েছে তার।সেটা পায়ে গলিয়ে সোজা ছুটলো কিচেনে।নিজের হ্যান্ডব্যাগে ভরে নিলো কিচেন নাই*ফ এবং মরিচের গুড়োর কৌটো।
সামওয়ান ভেরি পাওয়ারফুল, যে হোমকেয়ারের মতন স্বনামধন্য এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে পর্যন্ত বাগে আনতে সক্ষম— বুঝতে কিছুই বাকি নেই রোযার।
কে বি গ্রুপ!
তার দাদুকে রক্ষা করতে হবে ওই শিকারীদের হাত থেকে।আগেই কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে সে!নিজের নয়, বরং দাদুর নিরাপত্তার কথা ভাবা উচিত ছিল!কিন্তু হোমকেয়ারের মতন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কারো কব্জায় যাওয়া সম্ভব এটা কল্পনা করতে পারেনি সে।
অর্থের সম্মুখে ক্ষমতা ঝুঁকতে বাধ্য।
আজ নতুন করে আবারও প্রমাণিত হলো, অর্থই প্রকৃত ক্ষমতা!
রোযার মস্তিষ্ক বর্তমানে নিজের দাদু ছাড়া আর কিছুই ভাবতে সমর্থ নয়।দুঃসাহসের ডানায় ভর করে সে এগোলো দরজার দিকে। চারুলতার কন্ঠস্বর তাকে রুখলো তৎক্ষণাৎ।
– আরিয়া! হোয়াট ইজ হ্যাপেনিং?
চরকির মতন পিছন ঘুরে তাকালো রোযা।মায়াবী মেয়েটির অবয়বে প্রথমবারের মতন এক অদ্ভুত কঠোরতার ছাপ লক্ষ্য করে চারুলতা হতবাক হয়ে রইলো।
– হোমকেয়ার হসপিটাল, ক্যান্সার ইউনিট, কেবিন নং ১৮। নীল ফিরে আসলে বলবেন।
এটুকুই। চারুলতাকে বিন্দুমাত্র কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রোযা বেরিয়ে গেলো বাইরে।তার যাওয়ার পথে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো চারুলতা।
এক ঘন্টা পর।
চারুলতা হলরুমে একের পর এক চক্কর কেটে চলেছে।অদ্ভুত এক আশঙ্কায় তার হৃদস্পন্দন ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দরজার লকে কার্ড পাঞ্চের শব্দ আসতেই উত্তেজিত হয়ে ফিরে তাকালো সে।দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো আসমান।তার হাতে একটা প্যাকেট।সেই প্যাকেটে শোভা পাচ্ছে একজোড়া চকচকে বর্ণের ধাতব নানচাক।
আতঙ্কিত চারুলতাকে দেখে আসমান থমকে পড়লো। ভ্রু উচু করে চাইলো,এই অভিব্যক্তিই তার প্রশ্ন।
– আ…আরিয়া একটু আগে….
কোনোপ্রকার সময় নষ্ট না করে ব্যাক্ষা দিলো চারুলতা।ব্যাক্ষা সমাপ্ত হতেই আসমান পুনরায় উল্টো ঘুরে এগোলো দরজার দিকে, একটা প্রশ্ন পর্যন্ত করলোনা।
ডার্কসাইড পর্ব ৯
– আমিও আসি?
– না!
আসমানের কন্ঠ প্রতিধ্বনিত হলো সমগ্র হলঘরে।পিছনে ফিরেও তাকালোনা সে। চারুলতাকে রেখে সোজা বেরিয়ে গেলো দরজার বাইরে।করিডোর ধরে লিফটের দিকে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ফোন বের করে একটা নম্বর ডায়াল করলো আসমান।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বহুদিন বাদে প্রথমবারের মতন আসমান নিজে থেকে বলে উঠলো,
– নিহাদ……
