ডার্কসাইড পর্ব ১৬
জাবিন ফোরকান
ফাঁকা ফ্লাইওভার।দুপাশে টিমটিমে নিয়ন আলোয় প্রজ্জ্বলিত স্ট্রিট লাইটের সারি।বাম প্রান্তে সুউচ্চ ভবন, ছুঁয়ে গিয়েছে আকাশ পর্যন্ত।টাওয়ারের উপর নির্দিষ্ট তালে জ্বলতে নিভতে থাকা লালনীল সিগন্যাল।গগনে ভাসমান বিমানের পাইলটদের তা নজরে পড়ে সহজেই।রাত্রির নৈঃশব্দ্য গুড়িয়ে ফ্লাইওভার বেয়ে সাই সাই করে ছুটে চলেছে বাইক।তার কিছুটা দূরে অনুসরণে বেশ কয়েকটি গাড়ি।একই গতিতে এগোচ্ছে তারাও। বায়ুসমুদ্র কেটে পথে তুলেছে পাল।সাধারণ গাড়িচালকের কপাল কুঁচকে আসে।একদলা বিরক্তি নিয়ে ভাবে, যত্তসব বড়লোকের নষ্ট অওলাদ।মধ্যরাতের ঢাকা শহরের সড়কপথ নিজেদের বাপের রেসিং ট্র্যাক মনে করে।
অত্যন্ত দ্রুত এগিয়ে চলেছে নিহাদ। স্পিডমিটার নির্দেশ করছে ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছে সে।পিছনের গাড়িগুলোর তার নাগাল পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।ভীষণ উপভোগ্য লাগছে বিষয়টি। ফ্লাইওভারের ফাঁকা রাস্তায় ইঞ্জিনের গর্জন তুলে সামিল হওয়া দৌড়পাল্লার প্রতিযোগিতায় এখনো পর্যন্ত বিজয়ীর স্থান তার দখলেই।তার ঠিক পিছনেই বসে আছে আসমান।একহাতে নিহাদের কাধ শক্তভাবে চেপে ধরে রেখেছে।অন্য হাত পকেটে, যেখানে রয়েছে নিজের রিভ*লভার।অ*স্ত্রটি এখনো পর্যন্ত ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি।খুবই সতর্ক কে বি গ্রুপের অনুসরণকারীগণ।খোলাখুলি আ*ক্রমন এড়িয়ে আপাতত দ্রুততায় হারাতে চাইছে।
সামনেই বাক লক্ষ্য করে গতি কিছুটা কমিয়ে আনতে বাধ্য হলো নিহাদ।তাতে পিছনে গাড়িগুলো হুহু করে পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ছুটে আসলো।কোনো পরোয়া নেই তাদের।যেকোনো মূল্যে পাকড়াও করা দরকার তাদের।
ডেস্পারেশন ইজ ডেস্ট্রাকশন—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মনে মনে হাসলো নিহাদ।পিছিয়ে পড়লো তার বাইক।অত্যন্ত দ্রুত ছুটে এলো গাড়ি।যেন ধাক্কা দেবে।দক্ষ হাতে হ্যান্ডেল পাকড়ে নিহাদ আসমানের উদ্দেশ্যে চেঁচালো,
– হোল্ড মি টাইট!
ততক্ষণে আসমান আন্দাজ করেছে তার পরিকল্পনা। বাহু বাড়িয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরলো সে নিহাদকে। ফ্লাইওভারের রেলিংয়ের ধারে ঘেঁষে গেলো নিহাদ, নিঃশ্বাসরুদ্ধ করে ফেললো।গাড়ি দুটো কাছাকাছি আসতেই বাক কাটলো,কঠিন এক ইউটার্ন নিলো।বাইক একপাশে হেলে রীতিমত সড়কলাগোয়া হয়ে গেলো,উদ্দীপ্ত মস্তিষ্ক তবু বজায় রাখলো ভারসাম্য।উভয় গাড়ির মধ্যবর্তী সরু ফাঁকা স্থান দিয়ে বেরিয়ে গেলো বিদ্যুৎগতিতে।অপরদিকে গাড়ির হতচকিত ড্রাইভারগণ নিজেদের অজান্তেই একে অপরের কাছে এসে পড়ল মাঝখানের বাইককে চা*পা দেয়ার আশায়, কাল হয়ে দাঁড়ালো তা।সজোরে ধাক্কা খেলো গাড়ি দুটি।নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে চাকার আর্তনাদ তুলে রেলিংয়ে আছড়ে পড়লো একটি।গাড়ির বনেট উপরে জ্বলে উঠলো স্ফুলিঙ্গ, দুমড়ে গেলো ধাতব শরীরের অর্ধাংশ।
একনজর পিছনে ধোঁয়াওঠা ধ্বংসস্তুপের দিকে তাকিয়ে হাসলো নিহাদ।এক শত্রুর পতন।এবার মহারাজ গাড়ির সৈন্য বাইকগুলোর পালা।দল বেঁধে এগিয়ে আসছে মৌমাছির ঝাঁকের মতন।সেদিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে উচ্চ কন্ঠে নিহাদ ডাকলো,
– আসমান ভাই? তোমার ফোনে গান আছে? একটা গান ছাড়োনা!
– কি গান?
– ধুম মাচালে….
পিঠে আসমানের আলতো থাবায় খিলখিল করে হাসতে থাকলো নিহাদ।পরক্ষণেই হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে স্পিড আরো বৃদ্ধি করলো।৭৭ এ গিয়ে ঠেকেছে তা। ভ্রুউম..!হেলমেট না থাকলে এতক্ষণে নিঃশ্বাস নেয়া দায় হয়ে যেতো।তীব্র গতিতে বায়ুর ঝাপটা পোশাক নাড়িয়ে দিচ্ছে।সমস্ত শরীর হয়ে উঠেছে হিমশীতল। ক্ষীপ্র গতিতে এগোলো নিহাদের বাইক।রিয়ার ভিউ মিররে একনজর আসমানের সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার।উভয়েই মাথা নেড়ে নীরব সম্মতিজ্ঞাপন করলো। বাইকের দলের মাঝখানে ঢুকে পড়ল নিহাদ।নিজের একটি হাত বাড়ালো আসমান।
পাশের বাইকের আরোহীর গ*লায় চে*পে বসলো তার বাহু।অত্যন্ত গতিতে ছুটে আসায় সেই ধাক্কার বেগ এতটাই অধিক হলো যে বাইকারোহী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো।হ্যাঁচকা টানে তাকে ঠেলে দিতেই পশ্চাৎ বেগের আ*ঘা*তে নিজের বাইকসহ উল্টে পড়লো সড়কের মাঝেই। অপর বাইকগুলো নিহাদের বাইকের সঙ্গে রেষারেষি শুরু করতে চাইছে।ঘেঁষে এসেছে একেবারে। এতে হীতে বিপরীত ঘটলো।সুযোগ গ্রহণ করলো আসমান।তড়িৎ গতিতে এক পা উঠিয়ে সিটের গ্যাস পাইপে দাঁড়িয়ে পড়ল।উভয় হাতে সিটে ভর দিয়ে ভারসাম্য রেখে দুপা আবদ্ধ করে ছুঁড়ে দিলো।পাশের বাইকের শরীরে জোর ধাক্কায় তা মুহূর্তেই হুড়মুড়িয়ে গেলো। অপর এক আরোহী নিহাদের বাইকের সঙ্গে একই কাজ করতে গেলে ডান পায়ে তার হেলমেট বরাবর আ*ঘা*ত হা*নলো আসমান।নিহাদ এক পা তুলে ঠেলে বাইকের ভারসাম্য নষ্ট করলো।এক মিনিটের মধ্যে তিন তিনটে বাইক গড়াগড়ি খেতে থাকলো রাস্তায়, আরোহীগণ ছিটকে গিয়েছে এদিক ওদিক। অপর একটিমাত্র বাইকের সৌভাগ্যবান আরোহী এহেন কীর্তি লক্ষ্য করে গতি কমিয়ে পিছিয়ে পড়লো।এই মানিকজোড়ের মুখোমুখি হওয়ার মতন গর্ধব সে নয়।
প্রফুল্ল ধ্বনি তুলে হাসতে থাকলো নিহাদ। ফেঁ*টে যাওয়া ঠোঁটে খানিক ব্যথা পেলেও তার প্রফুল্লতায় ভাটা পড়লোনা।দৃষ্টিতে ভর করলো অদ্ভুত এক আবেগ।মিররে চেয়ে আসমানের দৃষ্টির মোকাবেলা করলো সে।
– আই মিসড দিস…..ভেরি মাচ।
উত্তর করলোনা আসমান।চোখ সরিয়ে তাকালো বিস্তৃত অসীম আকাশের তারকারাজির পানে।
মারবেল ভবন।
আজ একদম কাকডাকা ভোরে নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে রোযার।সর্বপ্রথম নিজের দাদুকে দেখে এসেছে সে।স্থিতিশীল তার অবস্থা,ঘুমাচ্ছেন।নিজের হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করে স্থির হয়েছে রোযা।ফ্রেশ হয়ে কিচেনে এসেছে।সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে।চারু ঘুমিয়ে রোযার রুমে।মেয়েটি গতকাল নিজের ফ্ল্যাটে ফেরেনি।একসাথে থেকেছে তারা।এত জলদি উঠবেনা।ভেবে রোযা নিজের জন্য চুলায় চায়ের পাত্র বসালো।পানি ফুটিয়ে দুই চামচ চাপাতা দিলো কড়া লিকারের জন্য।সঙ্গে চিনি এবং দুধ।গাঢ় বাদামী বর্ণে চা উতলে এলে একটা কাপে ঢেলে সবকিছু গুছিয়ে রাখলো।উষ্ণ চা কিছুটা ঠান্ডা হতে হতে কাচের দেয়ালের পর্দা সরিয়ে দিলো।দিবাকরের স্নিগ্ধ রশ্মি চুঁইয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে কাপ হাতে তুলে নিলো।চুমুক দিয়ে চেয়ে রইলো দূর গগনপানে।
ভোরের এই সময়টা বড্ড স্নিগ্ধ।যে স্নিগ্ধতায় পুরোনো সময়ের গ্লানি ঝেড়ে জেগে উঠে শহরগুলো।অদ্ভুত অনুভব করায় এই ভোরের আভা। মানবহৃদয় উথলিত করে তোলে জীবনমুখী চিন্তায়। রোযার আঁখিজোড়া অনুভবে টলমল।চিন্তার দলেরা তার মস্তিষ্কের নিউরন হতে নিউরন আচ্ছন্ন করে রেখেছে।একটিমাত্র বিষয়বস্তু তাতে।আসমান।
আসমানের চেহারা দেখার পর থেকে রোযা কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারছেনা এমন দানবীয় মানবটির জীবনের আপন ইতিহাস।সে কি আদও দানব ছিল?নাকি তাকে দানব হিসাবে তৈরি করা হয়েছে?পৈশাচিক রূপ নিতে বাধ্য করা হয়েছে?কে করেছে?এই সমাজ?কে বি গ্রুপ?তার কপোলের দগদগে ওই চিহ্ন কতটা নিগূঢ় যন্ত্রণার সাক্ষী বহন করে চলেছে।একের পর এক নৃ*শংস খু*ন।শুধুই কি কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এসব সাধন করা হয়েছে নাকি কোনো উদ্দেশ্য নি*হিত?যে ইচ্ছা রোযার জীবনে কোনোদিন অনুভূত হয়নি সেই ইচ্ছা আজ হচ্ছে।একজন পুরুষকে ব্যক্তিগতভাবে জানতে ইচ্ছা হচ্ছে।তাও এমন এক পুরুষকে যার চারিপাশ জুড়ে তুলে দেয়া রয়েছে সুউচ্চ অনুভূতিহীনতার পাথর দেয়াল।সেই দেয়াল ভেদ করে কোনোদিন অনুভূতি ছোঁয়া কি রোযার পক্ষে সম্ভব হবে?
ক্লিক!
কার্ড পাঞ্চের মৃদু শব্দে রোযার ঘোর কাটল। মাথাঝাড়া দিলো সে।কি ভাবছিল!অনুভূতির ছোঁয়া?কিসের অনুভূতি?তার এবং আসমানের মাঝে যা রয়েছে তা নিতান্তই এক চুক্তি।এর বেশি কিছু নয়।এত উদ্ভট চিন্তাদের আস্কারা রোযা কেনো দিলো?জোরপূর্বক মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চায়ের কাপ টি টেবিলে রেখে ঘুরে তাকালো রোযা। পেন্টহাউজের দরজা খুলেছে।ভেতরে প্রবেশ করলো আসমান,তার অনুসরণে নিহাদ।
রোযা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।আসমান এবং নিহাদ উভয়কেই কিছুটা অগোছালো দেখাচ্ছে।পোশাক পরিচ্ছদে ধুলোবালি।নিহাদের কপালজুড়ে ব্যান্ডেজ,হাতের কব্জিতে। আরো কোথাও রয়েছে কিনা তা দেখার উপায় নেই।ঠোঁটের এককোন কিছুটা ফুলে কালচে হয়ে রয়েছে। রোযাকে দেখে তারাও কিছুটা বিস্মিত হয়ে তাকালো।
– কি হয়েছে তোমাদের?
চিন্তিত হয়ে এগিয়ে গেলো রোযা।বিশ্লেষণে কোনোপ্রকার আগ্রহ আসমান প্রদর্শন করলোনা।নিহাদের দিকে ফিরে চাইলো।
– বিশ্রাম নাও। পরে কথা বলবো।
আর কিছু না বলে আসমান সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।তার চলার পথের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে পরক্ষণে নিহাদের দিকে ফিরলো রোযা।ভ্রু উঁচু করে ইশারায় প্রশ্ন ছুড়লো।পাল্টা ভ্রু কুঁচকে সন্দেহ প্রকাশ করলো নিহাদ,রোযার প্রশ্ন বুঝতে পারেনি।
– আপনার এই অবস্থা কেনো?
– কে বি গ্রুপের পাল্লায় পড়েছিলাম, ফুলটুশী!
বলেই রোযার নাকে তর্জনী ঠেকালো নিহাদ। নাক সিটকে দূরে সরে গেলো রোযা।তাতে বিনোদিত হয়ে নিহাদ হাসতে গেলে ঠোঁটের ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো। ফোলার উপর হাত বুলিয়ে হলরুমের কাউচে এলিয়ে পড়লো।টি টেবিলের উপর পা দুখানা তুলে দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে আদেশ করলো,
– রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এসেছি।এক মগ কফি দাও,একটু মাথার জটটা খুলি।
– ইশ!তুমি কোন বংশের মহারাজ শুনি? আর আমি কি তোমার দাসী? এসেই হুকুম করছ!
এবার আর আপনি বলে সম্মান প্রদর্শনের বালাই করলোনা রোযা।তুমিতে এসে ঠেকেছে।তাতে নিহাদের হাসি চওড়া হলো।হাত বাড়িয়ে রোযার জামার হাতার অংশ টেনে ধরে জড়ানো কন্ঠে বিড়বিড় করলো,
– অ্যাই ফুলটুশী! তোমার মতন আমিও কিন্তু এই বাড়ির কয়েকদিনের অতিথি।ওকে?যদি এই নিহাদের আগুনে জ্ব*লেপু*ড়ে ছারখার হওয়ার ইচ্ছা না থাকে তাহলে এক্ষুণি একমগ কফি হাজির করো চুপচাপ।
– আর একবার ফুলটুশী বললে ঠোঁটের যে কোণ সুস্থ আছে সেটাতেও কালশিটে ফেলে দেবো।
নিহাদের কপালে এক আঙ্গুল ছুঁয়ে জোরে ধাক্কা দিলো রোযা।তাতে কাউচে হেলান দিতে বাধ্য হলো নিহাদ।অধর তার আবর্তিত হলো বক্রভাবে।নিজের চিবুকে আঙুল ছুঁয়ে রোযার মুখপানে সরু দৃষ্টিতে চেয়ে শুধালো,
– হাউ?বায় কিসিং?
– বায় পাঞ্চিঙ!
ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে জবাব দিলো রোযা।এই ছেলে দেখি ফ্লার্টিং করছে!তার প্রতিক্রিয়ায় দারুণ মজা পাচ্ছে নিহাদ।
– আহা ফুলটুশী এত রাগ করছো কেনো?আমি জানি তুমি আমার বদ্দার ডিপোজিট….আসো একটা ডিল করি।আমাকে এক মগ কফি দাও,বিনিময়ে তোমাকে আমি আজকের রাতের থ্রিলিং স্টোরি শুনাবো।
কৌতূহলী রোযার চুক্তিটি পছন্দ হলো।যদিও মুখে স্বীকার করলোনা।ঝট করে উল্টো ঘুরে এগিয়ে গেলো কিচেনের দিকে।কফি মেশিনে পানি ঢেলে কিছুটা উচ্চ কন্ঠেই জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি এখানে থাকলে আমার দাদু যে তোমাকে কেবিনবয় হিসাবে দেখেছে তার কি হবে?
এক মুহুর্ত ভাবলো নিহাদ। কাচের দেয়ালের দিকে ফিরে বিড়বিড় করলো,
– ওনাকে বলো যে আমি আসমান ভাইয়ের খালাতো ভাই হই।
– হ্যাঁ?আমার দাদুকে কি গর্ধব ভাবো?যে এত বড় বিজনেসম্যান তার খালাতো ভাই এক কেবিনবয়?
– এ্যাঁতল্লাই আই তোয়ারে ফুঁউলটুশি হইদ্যি এরি, মদস্টিক হডেয়ারোর! [এজন্যই তোমাকে ফুলটুশী বলি,মাথামোটা কোথাকার!]
রোযা হতচকিত হয়ে গেলো নিহাদের কথা শুনে।তার কন্ঠে চট্টলার ভাষার কিছু শুনবে সেটা সে কল্পনা করেনি। অদ্ভুত হলেও সত্য তার সঙ্গে বিষয়টা বেমানান লাগছেনা।তবে কি এই ছেলের বাড়ি চট্টগ্রাম?নাকি এমনিতেই জানে?প্রশ্ন করার সুযোগ রোযা পেলনা।এর আগেই আঞ্চলিক ভাষার টান পাল্টে শুদ্ধ ভাষায় নিহাদ বললো,
– বলবে যে আমি একটা অকর্মার ঢেঁকি।বাবা মায়ের সাথে রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়ে ওইরকম কাজ করতে গিয়েছিলাম। পরে টিকতে না পেরে ভাইয়ের কাছে চলে এসেছি।
মাথা দোলালো রোযা।ব্যাক্ষা অপছন্দ হয়নি। দ্রুত হাত চালালো,কাহিনী জানতে আর তর সইছেনা তার।
সবুজে আবৃত সমগ্র উপত্যকা।দৃষ্টিসীমার আড়ালে থাকা হ্রদের টলটলে পানির সৌন্দর্য্য অসাধারণ।শীতকালে সেই পানির উপর পুরু বরফের আস্তরণ পরে। উপত্যকাও নিজের হরিৎ বর্ণ ত্যাগ করে ধারণ করে হিমের শুভ্রতা। তুষারপাত ইউরোপের দেশগুলোতে বহু দেখা হয়েছে।কিন্তু এই কাশ্মীর অঞ্চলের তুষারপাত দেখার বাসনা আজও মেটেনি।অন্তর সেই কামনাও হয়ে উঠেছে তৃষ্ণার্ত।
টেবিলের উপর কাঠের তৈরি বাটিতে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা রিগান জোশ। লাল মরিচের ঝোলে আবৃত টসটসে ছাগমাংসের কাশ্মীরি খাবারটি দেখেই অন্তরে লোভ সৃষ্টি হচ্ছে।পাশেই আবার উষ্ম নান।বহু কষ্টে চিত্ত দমন করে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে আছে রাফা কায়সার।
– আমি কি বলেছি কানে গিয়েছে?
ওপাশের বাদশাহ কায়সারের বক্তব্যে শুধু আনমনে মাথা দোলালো সে।সকাল সকাল নাস্তার সময়ে বাবার ভিডিওকলে যথেষ্ট বিরক্ত সে।
– জামাইকে নিয়ে দুবাই নয়তো আমেরিকা চলে যাবে।ভিসার ব্যবস্থা আমি করব দ্রুত।
একবার পিছনে চেয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা অনাবৃত পুরুষালি দেহটার দিকে চাইলো রাফা। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন। ঘাড় এবং পিঠজুড়ে লালচে কাম*ড়ের দাগ।হাতের কব্জিতেও মৃদু নীলচে দাগ হয়ে গিয়েছে, হ্যান্ডকাফের বদৌলতে। গ্লসে উদ্ভাসিত ঠোঁটে সমস্ত পিঠ পর্যবেক্ষণ করলো সে।নিজের বাবার কন্ঠে আবারো ছেদ পড়ল মনোযোগে।
– কোনদিকে তাকিয়ে আছো রাফা?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনের দিকে তাকালো।
– উফ ড্যাড! তুমি কি তোমার মেয়েকে শান্তিতে হানিমুনটুকু করতে দেবেনা নাকি?কি শুরু করেছ এসব বলোতো?আমেরিকা যাওয়ার হলে আগেই যেতাম।আমার পছন্দ কাশ্মীর।আমি এখানে শীতকাল পর্যন্ত থাকবো।
– রাফা!আমি যা বলছি তোমার ভালোর জন্যই।তুমি জানোনা এখানে কি শুরু হয়েছে!
– কি শুরু হয়েছে?
জবাব এলোনা।বাদশাহ কায়সারের প্রতিচ্ছবি নিশ্চল রইলো।এক মুহুর্ত পর জবাব এলো,
– তোমার এত জানতে হবেনা।তুমি শুধু…
শেষ হওয়ার আগেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠা লাল চিহ্ন চেপে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিলো রাফা।ফোন সুইচড অফ করে হ্যান্ডব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো।কি সুন্দর রিগান জোশ খাওয়ার বাসনা পূরণ করতে যাচ্ছিল।তাতে জল ঢেলে দিলো বুড়ো। খাবার ঢাকা দিয়ে রেখে বারান্দায় চলে এলো।ধরালো একটি বেনসন সিগারেট।ঠোঁটে লাগিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে নির্মল দৃষ্টি চেয়ে রইলো দূর উপত্যকার পানে।কি অপরূপ এই প্রকৃতি!
মৃদু গোঙানিতে পিছনে ফিরে তাকালো।অর্ধ অনাবৃত পুরুষটি ঘুমের ঘোরে নড়াচড়া করছে।শীত লাগছে উদাম পিঠে।সিগারেট শেষ করে এগিয়ে গেলো রাফা।ঠোঁটে মিটমিটে হাসি।বিছানায় বসে কোমল হাতটি ছুঁয়ে দিলো পিঠে।
– স্ততে দেয়ালেশ? [ কি করছো?]
– আমার স্বামীকে আদর করছি।
রাশিয়ানের জবাব ভেসে এলো বাংলাতে।মৃদু হাসি ফুটলো পুরুষটির অধরে।কোনো বাঁধা প্রদান করলোনা।এই বাঙালি রমণীতে বিলীন সে।রাফা ঝুকলো।কিছুক্ষণ পূর্বে সিগারেটে পো*ড়া ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ঘাড়ে।মেরুদন্ড বেয়ে তা নামলো পিঠে।ঠোঁটের বদলে বেরিয়ে এলো দাঁত,নব্য চিহ্নের সূচনা ঘটাতে।
তবুও কোথাও যেন একটা অতৃপ্তি রয়ে গিয়েছে।এই পিঠে বাসনা মিটছেনা। দৃষ্টিমাঝে বারংবার ভেসে উঠছে বলিষ্ঠ সেই মাং*সপেশীসম্বলিত পিঠ,শুভ্রের চেয়েও শুভ্র ত্বকে আবৃত।শুভ্রতার মাঝে জাগ্রত হওয়া নীলচে শিরা উপশিরা নজরে পড়ে।শিশুসুলভ চেহারায় অব্যক্ত যান্ত্রিকতার ছোঁয়া।সেই কামনার পিপাসা মেটেনি,আর কোনোদিন মেটানো সম্ভব নয়।এই রাশিয়ান তাকে সেই বাঙালিত্বের স্বাদ দিতে সক্ষম হবেনা আজীবনেও।
ভেবে একটি তপ্ত নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক থেকে।
একটি টিস্যু দিয়ে ইউনূস রহমানের মুখ মুছে দিয়ে ঔষধ বের করতে থাকলো রোযা। নাতনীর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকলেন তিনি।মেয়েটি এত নমনীয় কেনো?এতটা স্নিগ্ধ,কোমল এবং পবিত্র আর কেউ হয়?নার্স থাকা সত্ত্বেও প্রায়শই তার যত্ন আত্তিতেই সময় অতিবাহিত করে রোযা।ব্যাপারটা তাকে পীড়া দিচ্ছে।স্বামীর সংসার আবার উচ্ছন্নে ভাসায়নি তো?বোধ হয় না।জামাই তাকে একবার দেখতে এসেছিল, অসুস্থ হওয়ার পরদিন।যদিও খুব একটা কথাবার্তা হয়নি,তবুও বসেছিল প্রায় এক ঘন্টা।চুপচাপ রোযার কাজ দেখে গিয়েছে।
– এই নাও দাদু।এটা খেয়ে নাও লক্ষী ছেলের মতন।
ইউনূস রহমান হেসে ঔষধ সেবন শেষ করলেন।তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চাদর তুলে দিলো রোযা।কপালে হাত বোলাতে বোলাতে তিনি প্রশ্ন করলেন হঠাৎ।
– তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো চড়ুই?রাগ করবেনা তো?
হাসলো রোযা।
– তোমার সাথে রাগ?তাও আমি?দাদু? কবে থেকে এত পর হলাম আমি তোমার?
ইউনূস মাথা নাড়লেন।কষ্ঠহাসি হাসলেন।পরক্ষণেই খানিক উদাস হয়ে পড়লেন।
– জামাই… ওর কি কোনো সমস্যা আছে?
রোযা এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো।সত্যি বলতে এই প্রশ্নটি সে শুরু থেকেই আশা করছিলো।ইউনূস এতদিন পরে সেটা করেছেন।মৃদু হাসলো রোযা। আড়চোখে খেয়াল করলো নার্সও নিজের কাজ করতে করতে উদগ্রীব হয়ে কান খাড়া করে রেখেছে।কৌতূহলী হওয়া অস্বাভাবিক নয়।সবসময় মাস্ক পরে থাকা কোনো বান্দার সম্পর্কে অন্তরে এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া যথাযথ।দাদুর কপালে হাত রেখে রোযা মিষ্টি কন্ঠে জানালো,
– কলেজে থাকলে অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল।চোয়ালে আঘা*ত লেগেছিল গুরুতর।স্থায়ী চিহ্ন রয়ে গিয়েছে।
– ওহ।
ইউনূসের দৃষ্টি কেমন ঘোলাটে হয়ে উঠল,দুশ্চিন্তায়।নিজের কপালে চলতে থাকা রোযার হাতখানা খপ করে ধরে তিনি শুধালেন।
– এই কারণে তোমাকে বিয়ে করেনি তো চড়ুই?সত্যি করে বলো! নাহলে এমন ঘরের ছেলে কেনো আমাদের মতন নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েকে….
– উহুম দাদু।একদম নয়।
না চাইতেও রোযার কন্ঠ কিছুটা উঁচু হয়ে উঠল।নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করলো তৎক্ষণাৎ।মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
– নীল অমন ছেলে নয় দাদু।ও আমার পরোয়া করে বলেই বিয়ে করেছে।আর আমিও।
– ওকে ভালোবাসো? ভালবাসতে পেরেছ এমন মানুষকে যার চেহারা বিকৃত?
দাদুর প্রশ্নে স্থির হয়ে গেলো রোযা।কয়েক সেকেন্ড দ্বিধায় ভুগলো।অতঃপর বুঝল ইউনূস তাকে পরীক্ষা করছেন।অনুভূতির দোরগোড়ায় আত্মসমর্পণ না করে সে আদতে বিচার বুদ্ধি এবং বিবেক প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা পরখ করে দেখতে চাইছেন।রোযার অধরে বিস্তৃত এক হাসির প্রস্ফুটন ঘটলো।হালকা নুয়ে সে দাদুর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
– ও আমার চাঁদ দাদু…. আমার ভাগ্যাকাশের একমাত্র সুখের চাঁদ।
সন্তুষ্ট হলেন ইউনূস রহমান। নাতনীকে টেনে নিলেন আলিঙ্গনে।দাদু নাতনীর এহেন আবেগী মুহূর্তে বাধ সাধতে চাইলোনা নার্স।এগোলো কিচেন থেকে পানি নিয়ে আসতে।রুমের বাইরে পা দিতেই ভূত দেখার মতন করে আতকে উঠলো।বাড়ির কর্তা দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত ভাঁজ করে দন্ডায়মান,নিশ্চুপে।নার্সের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হলো।মাস্কের উপর আঙুল তুলে ইশারায় চুপ থাকার নির্দেশনা দিলো। আজ্ঞা পালন করে নার্স নিজের কাজে পা বাড়ালো। অর্ধফাঁক হয়ে থাকা দরজা দিয়ে অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করলো আসমান।সবকিছুই তার কর্ণগোচর হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর।
চারু ও চারু, তুমি একটা গরু।
লাল চুলের বাহারে, প্রাণ জ্বলে আহারে।
তেজে ভরা শরীর, খাল কাটা কুমির।
হাটে লটক মটক, ডাকবো নাকি ঘটক?
সাবার করে ফিন্নি, আস্ত শাকচুন্নি।
কেবিনেটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে সুরে সুরে গেয়ে চলেছে নিহাদ।পাশেই কিচেনের চুলোতে ফিরনি তৈরী করছে চারুলতা।নিহাদ আসমানের পেন্টহাউজে থাকছে আজ দুইদিন হতে চললো।নিজের বন্ধু হিসাবে পরিচয় দিয়ে কয়েকদিন থাকার ব্যবস্থা সেরেছে আসমান।নিরাপদ জায়গা খুঁজে পেলে নিহাদ চলে যাবে।রোযার দাদু অবশ্য এই সম্পর্কে অজ্ঞাত।তিনি জানেন নিহাদ আসমানের খালাতো ভাই।দুইদিনের মাঝেই চারুলতার সঙ্গে তার এক অলিখিত শত্রুতাচুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে।এর পিছনে একটা কাহিনী রয়েছে।সেটি ঠিক কি তা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি রোযার পক্ষে।উভয় বান্দাই এক্ষেত্রে মুখে কুলুপ এঁটেছে।
নিহাদের গানে অসহ্য চারুলতা হাতের গরম চামচ ঠেসে ধরার ভয় দেখালে নিহাদ লাফিয়ে কেবিনেট থেকে নেমে পড়ে।হাসতে হাসতে চারুলতাকে ভেংচি কেটে এগোতে চাইলেই ক্ষিপ্ত চারুর কনুইয়ের গুতো হজম করতে হলো তাকে।এদের আচরণ দেখলে মনে হয় এরা পূর্বপরিচিত।আসমানকে নিহাদ আগে থেকেই চেনে।সেক্ষেত্রে তার বোন চারুকে চিনতেও পারে।হয়ত চারুলতা এই রহস্যের সঙ্গে যুক্ত,কোনো না কোনোভাবে।শুধু আচরণে প্রকাশ পেতে দেয়না।ভাবলো রোযা।
– আমি আজকেই ভাইয়াকে বলবো এই অথর্বটাকে তুলে রাস্তায় ফেলে আসতে!
– হ্যাঁ তোমার কথায় উঠবস করে তো বদ্দা!
উভয়ের মাঝে তৃতীয় বিশ্বযু*দ্ধের সূত্রপাত ঘটার আগেই রোযা এগিয়ে গেলো।নিহাদের টি শার্ট ধরে টেনে কিচেনের বাইরে এনে কাউচে ফেললো।
– ওহ ফুলটুশী! সো এগার… হাহ?
– তোমার এসব বস্তাপঁচা বক্তব্য বস্তায় ভরে চুপচাপ বসো।ড্রেসিং করিয়ে দেই।আজ দুইদিন হচ্ছে।
– ডাক্তার নাকি তুমি?
– পেটে টান না পড়লে তাই হতাম।
তেরছা জবাব দিলো রোযাও।নিহাদকে তাতে দমে যেতে লক্ষ্য করে মিটিমিটি হাসতে থাকলো চারুলতা।যেন কি জিত হাসিল হয়েছে তার। রোযা কিট থেকে অ্যান্টিসেপটিক, তুলো আর নতুন ব্যান্ডেজ বের করলো।নিহাদের পাশে বসে আগের ব্যান্ডেজ খুলে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে মুছে নিতে থাকলো। দাতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সয়ে গেলো নিহাদ।পরমুহুর্তে হঠাৎ করে একটি কাণ্ড ঘটালো।সটান রোযার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।বিব্রত রোযা হতবাক হয়ে চেয়ে থাকল।কিচেন থেকে চারুলতাও।
– করো করো ফুলটুশী।ভালো লাগছে।
– একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো!ওঠো!
– অসুস্থ মানুষের সঙ্গে এরকম করতে পারবে?অন্তরে বাঁধবে না?
ছলছল করে উঠলো নিহাদের টানা টানা চোখ।কি অদ্ভুত! এ কোন গিরগিটির পাল্লায় পড়া গেলো?নিজের অস্বস্তি গোপন রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রোযা।দ্রুত হাত চালালো নিহাদের কপালে।
– আউচ! আস্তে….মানুষ আমি রোবট না!
– একদম চুপ!
ব্যান্ডেজ সমাপ্ত করেই রোযা ঠেললো নিহাদকে সরার জন্য।সে উঠে দাঁড়াবে।কিন্তু বাকা হাসিতে উদ্ভাসিত নিহাদ দুষ্টুমিভর দৃষ্টিতে তার মুখায়বে চেয়ে হঠাৎ হাত বাড়ালো। কাঁধের পাশে ঝুলতে থাকা রোযার চুলরাশি টেনে নিয়ে বিড়বিড় করলো,
– ইউ আর সো সুইট মাই ফুলটু… আইক!
বাক্যটি সমাপ্ত হওয়ার আগেই নিজের বাহুতে হ্যাঁচকা টানে রোযার কোলে শোয়া থেকে সটান উঠে দাঁড়ালো নিহাদ।এতটাই জোর ছিল সেই টানে যে মুখ থুবড়ে পড়তে পড়তে টি টেবিল আঁকড়ে ধরে নিজেকে রক্ষা করলো সে।বিস্মিত রোযা খেয়াল করলো আসমানকে।স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহাদের দিকে।
– হোয়াট দ্যা হেল ব্রো?
– সেদিন রাতে ডাক্তারের চেম্বারে ব্যান্ডেজ করার সময় তো তার কোলে উঠতে দেখিনি তোমাকে।
আসমানের শীতল কণ্ঠস্বরে নিহাদ ঠোঁট গোল করে শীষ বাজালো। ঘাড়ের পিছনে দুহাত রেখে দৃষ্টি এড়িয়ে বললো,
– ওটা তো ব্যাটামানুষ ছিলো! আমি সোজাসাপ্টা মানুষ, বাকা পথে হাঁটিনা।
আসমান রোযার দিকে ফিরলো। বললো,
– ওর ড্রেসিংয়ের দায়িত্ব এরপর থেকে আমার।
এটুকুই।কোনপ্রকার ব্যাক্ষা না দিয়ে সে চললো সিঁড়ির দিকে।নিহাদ মিছিমিছি ব্যাথিত হওয়ার ভং ধরে পিছু নিলো তার।
– আরে ভাই এমন জুলুম করোনা আমার উপর।তোমার হাত না লোহা!ওই কোমল হাত রেখে আমি কেনো…
ঝট করে পিছন ফিরল আসমান।তার নিগূঢ় কালো দৃষ্টিতে অদ্ভুত এক প্রজ্জ্বলন খেয়াল করলো নিহাদ।যা মুহূর্তেই তার মজা নেয়ার ধান্দায় জল ঢেলে দিলো। ঢোক গিলে স্থির হয়ে পড়ল সে।
– সবকিছু নিয়ে মজা করা আমি পছন্দ করিনা।
স্থির নয়নে চেয়ে থাকল নিহাদ।সিঁড়ির ধাপে এক পা রাখতেই তার কন্ঠ আসমানকে থমকাতে বাধ্য করলো।
– আর ইউ….
ডার্কসাইড পর্ব ১৫
ঘুরে তাকালো আসমান,বরাবর নিহাদের চোখের দিকে।ওই কৃষ্ণগহ্বর খচিত নয়নে একঝাঁক শূন্যতা ব্যাতিত আর কিছুই খুঁজে পেলনা নিহাদ।দ্বিধান্বিত কন্ঠে সমাপ্ত করলো,
– জেলাস?
শূন্যতার মাঝে হঠাৎ এক ক্ষীণ সঞ্চারণ দৃষ্টি এড়ালোনা নিহাদের।বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো তার, ঢোক গিললো আনমনে।
