ডার্কসাইড পর্ব ১৯
জাবিন ফোরকান
মাসের শেষ প্রায়।হাতে টাকা কম।মায়ের ডায়াবেটিসের ঔষুধ কিনতে হবে, ছোট বোনের আগামী মাসে পরীক্ষা, তার ফিও দিতে হবে।কিভাবে হবে এতকিছু?বাসাভাড়া মাথায় খরাগের মতন ঝুলছে।এমন শতসহস্র চিন্তা মস্তিষ্ককে প্রশান্তি দিচ্ছেনা।দুশ্চিন্তায় নাস্তানাবুদ হয়ে দোকানের সাথে লাগোয়া ছোট্ট ঘরটার চৌকিতে শরীর ঠেকালো মামুন।ফেটে চৌচির হয়ে আসা ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখলো রাত একটা দুই।
একসময় অবাধ্য মস্তিষ্কও মিইয়ে এলো।নিদ্রার আভাসে স্থবির হয়ে এলো শরীর।ক্লান্তিতে ম্রিয়মাণ প্রতিটি দেহকোষ।পরের দিনের সংগ্রামের জন্য শক্তি সঞ্চয় প্রয়োজন।
ধাম ধাম ধাম!
ধাতব শাটারে জোরে জোরে আঘাতের শব্দে ধড়ফড় করে উঠে বসলো মামুন।আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়!এ কি অশরীরী ভর করলো নাকি?এক লাফে বিছানা ছেড়ে দরজাটা ঠেলে লুঙ্গির প্যাচ দিয়ে হুংকার ছাড়ল সে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– কোন জানোয়ার এই বেইন্নাকালে….
– একটা চটকানা দিবো মামুইন্না!
দোকানের বন্ধ শাটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে মাথায় হাত পড়লো মামুনের।মুখ হা হয়ে গেল ইঞ্চি কয়েক।
– আরে নিহাদ ভাই আফনে?
– ওই ওই,রাত দুইটা কোনো রাত হলো?এত ঘুম কিসের তোর?দোকান বন্ধ কেনো?
মামুনের স্যান্ডোগেঞ্জি টেনে ধরলো নিহাদ।তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি শরীরে শিহরণ খেনিয়ে দিলো যেন।বোঝা গেলো তেঁতে আসে সে।নাহলে রাত দুইটা যে ভোররাত সে কেই বা না বুঝবে? ছেলেটাকে ঘাটিয়ে কাজ নেই।মামুন দ্রুত মুখ ডলে নিদ্রা দূর করলো।
– কি লাগবো ভাই কন শুধু।
– আমারে কয়েক বালতি রং দে।কালো, লাল, সাদা।
এত রাতে রং দিয়ে কি কাজ তা জিজ্ঞেস করে নিহাদের পর্বতসম মেজাজ আরো চড়িয়ে দেয়ার দুঃসাহস না করাই শ্রেয়।ঘর থেকে চাবি এনে শাটারের তালা খুললো মামুন।গভীর রাত্রির নৈঃশব্দ্য চিরে জং ধরা শাটারের ঘড়ঘড় আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হলো।ভেতরে ঢুকে রঙের বালতি প্যাকেট করতে থাকলো সে।
– খালা কেমন আছে?
– এইতো, আল্লাহয় রাখছে ভাই মোটামুটি।
– পুষ্পিতা কি সাইন্স নাকি আর্টস?
– সাইন্স ভাই।ওয় নাকি ডাক্তার হইবো।
– ভালো ভালো। ভালোমত পড়াশুনা করতে বলিস।যদি এস এস সিতে গোল্ডেন পায় তাহলে ওকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ট্রিট দিবো।বলিস।
– আচ্ছা ভাই।
দাঁত দেখিয়ে হাসলো মামুন।নিহাদের হাতে প্যাকেট ধরিয়ে দিলো।কিছুই জিজ্ঞেস করলোনা সে।দ্রুত হাতে নিজের ওয়ালেট বের করলো।পাঁচটা এক হাজার টাকার নোট এক টানে বের করে মামুনের হাতে গুঁজে দিলো।হাহাকার করে উঠলো দোকানি ছেলেটি।
– আরে আরে ভাই…করেন কি করেন কি?এই রঙের দাম দেড় হাজারের বেশি কোনমতেই হইবো না।এ কোয়ালিটি মাল দিসি,স্কিনরে প্রোটেক্ট করে।কিন্তু তাও এই…
– চুপচাপ পকেটে ঢোকা।আরেকটা বেশি কথা বললে এক চটকানায় ঘাড় বাঁকিয়ে দেবো বেত্তমিজ!আমাকে জানোয়ার ডাকে!
উল্টো ঘুরে ফোঁসফোঁস করতে করতে বাইকের দিকে এগোলো নিহাদ।রঙের প্যাকেট ভালোমত ব্যাকসিটে ঝুলিয়ে মাথায় হেলমেট চড়ালো।অতঃপর বাইকের ইঞ্জিন চালু করে নির্জন সড়ক বেয়ে ছুটে গেলো অদূরে।
হাতে কড়কড়ে পাঁচ হাজার টাকার নোট নিয়ে পুতুলের মতন দাঁড়িয়ে থাকলো মামুন।চেয়ে থাকল পথপানে, যতক্ষণ নিহাদের ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসা অবয়ব চোখে পড়ে।এক ফোঁটা অশ্রু হঠাৎই গড়িয়ে পড়ল তার কালচে গাল বেয়ে,হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে নিয়ে আপনমনে হাসলো শুষ্ক ঠোঁটে।
মারবেল ভবন।
নিজের বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে রোযা।ঘড়ির কাঁটার টিকটিক আওয়াজ কর্ণকুঠরে অসহনীয় ঠেকছে।কিছুতেই মস্তিষ্ক কিংবা হৃদয় প্রশান্ত হতে রাজী নয়।গতকাল রাত থেকেই নিজের রুমের চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে থেকেছে সে।শুধুমাত্র দাদুর খোঁজ এবং বিলাল রেমানের সঙ্গে সন্ধ্যাকালীন চা ব্যাতিত তার মুখদর্শন করেনি কেউই।নামকে স্বার্থক করে খাঁচায় বন্দী চড়ুই হয়ে উঠেছে সে।চিন্তার জগৎ তাকে ক্রমশই টেনে নিচ্ছে গভীর হতে আরো গভীরে।তলিয়ে যাচ্ছে সে অতল অমানিশার গহ্বরে।
চারুলতা এবং আসমান?কি সম্পর্ক তাদের?প্রেমিক প্রেমিকা, স্বামী স্ত্রী, ভাই বোন,প্রাক্তন….কোনটা সঠিক ধরে নেবে সে?এই কি আসমানের অতীত?সুখের অতীত নাকি আঁধারের অতীত?যা হবে হোক।তাতে রোযার এত অন্তরজ্বালা কেনো হচ্ছে?আসমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক একটি চুক্তি।এর বেশি কিছু কোনোকালে ছিল না হবেও না।তাহলে চারুলতার সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্ক নিয়ে অবাধ্য অন্তরে এত ঘূর্ণিপাক কেনো?
প্রথমবারের মতন অনুভূত হওয়া এসব বিশৃংখল অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ এবং মোকাবেলায় রোযা অনভ্যস্ত।
রাত আড়াইটা। সম্ভব হলোনা ছটফট করা।রোযা উঠে পড়ল আরামদায়ক গদি থেকে।আরামকেদারা থেকে টেনে নিলো সিল্কের কোট। ফতুয়ার উপর গায়ে চড়িয়ে পায়ে পায়ে বেরিয়ে এলো সে।প্রবেশ করলো হলরুমে। আধো আলো ছায়ার খেলা বিস্তৃত কক্ষটিকে পরিণত করেছে এক নিশাচরের আস্তানায়।এগিয়ে ভারী পর্দা জোর টানে সরিয়ে রোযা উন্মুক্ত করলো কাচের দেয়াল।সিটি ইউফোরিয়ার আলোকোজ্জ্বল দৃশ্য ভেসে উঠলো দৃষ্টিসম্মুখে।নির্ঘুম রাত্রির অমানিশাকে হার মানিয়েছে হলুদাভ বাতির বহর।সুউচ্চ ভবনগুলোর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকল রোযা।তার নয়নে প্রতিফলিত হলো দূর আকাশে প্রজ্জ্বলিত একটিমাত্র সুখতারা।
ক্লিক!
হতচকিত হয়ে রোযা ঘুরে তাকাতেই তাকে দ্বিগুণ মাত্রায় বিস্মিত করে পেন্টহাউজে প্রবেশ করলো নিহাদ।যথেষ্ট নীরব সে,তবুও রোযার মুখোমুখি হয়ে মুহূর্তেই থমকে গেলো নিজপথে।একহাতে হেলমেট, অপর হাতে বড়সড় একটি প্যাকেট।সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল রোযা।
– ওহ ফুলটুশী!তুমি! ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে।
– কোথায় গিয়েছিলে নিহাদ?
স্থির কণ্ঠের প্রশ্নে নিহাদ ইতস্তত করতে আরম্ভ করলো।
– ওই..না মানে…ইয়ে…
– আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি!
– জেরা কেনো করছো?দারোগা নাকি তুমি?
রোযা কয়েক পা এগিয়ে কঠোর কিছু উচ্চারণ করতে যাচ্ছিল কিন্তু এর আগেই মৃদু পদশব্দ নিরবতায় ছেদ ঘটালো।নিহাদ এবং রোযা উভয়ই মুখ তুলে চাইল। সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে আসছে আসমান।যেন কি এক তাড়া আছে তার।পরিধানে হাতাবিহীন কালো টি শার্ট এবং ট্রাউজার।পাও একদম খালি,মুখে যথারীতি মাস্ক।খানিকটা উদ্ভ্রান্ত দেখালো তাকে।গতকালের পর একবারও আসমানের মুখোমুখি হয়নি রোযা।এক কথায় এড়িয়ে গিয়েছে।আজ এমন সময়ে তাকে দেখে বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভব করলো সে নিজেই বুঝে উঠতে পারলোনা।
আসমান ক্ষীপ্র গতিতে এসে নিহাদের হাত থেকে প্যাকেটটা এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো।একটা শব্দও উচ্চারণ করলোনা,যেমন করলোনা কারো প্রতি দৃষ্টিপাত।বিধ্বংসী এক রূপে হনহন করে এগোলো, সিঁড়ি বেয়ে পুনরায় উঠে গেলো উপরে।তার এহেন আগ্রাসী আচরণে রোযা স্তব্ধ হয়ে থাকলো।নিহাদের দীর্ঘশ্বাস তাকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনলো।
– কি ব্যাপার নিহাদ?
– আজ ১৯ তারিখ।
সবসময় প্রফুল্ল থাকা নিহাদের ছায়ায় আবৃত চেহারা এবং খাপছাড়া উত্তর রোযাকে ভড়কে দিলো ভীষণভাবে।মাথা কাত করে প্রশ্ন ছুড়লো সে।
– তো?আজ কি কোনো বিশেষ দিন?বিশেষভাবে রাগ প্রকাশের দিন?
হাসলো নিহাদ।কিন্তু তার হাসির আড়ালে লুকায়িত হাহাকারটুকু রমণীর দৃষ্টিচ্ছুট হলোনা।নিজের দৃষ্টি এড়িয়ে বুকে হাত ভাঁজ করলো নিহাদ। অস্বাভাবিক শান্ত কন্ঠে বিড়বিড় করলো,
– ২১ সেপ্টেম্বর আসন্ন।চিন্তা করোনা।আসমান ভাইয়ের এই সময়ে এমন উগ্র আচরণ অস্বাভাবিক নয়।
– এত হেঁয়ালি করছো কেনো?২১ সেপ্টেম্বর কি?
উত্তর করলোনা নিহাদ।উল্টো ঘুরে দরজা খুলে বাইরে পা রাখলো।
– আমি একটু বাহির থেকে রাতের বাতাস খেয়ে আসি।
ক্লিক!
পুনরায় বন্ধ হয়ে গেলো দরজা।স্থবির হয়ে রইলো রোযা।গুণে গুণে মিনিট দুয়েক।কপালে হাত ঠেকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চললো নিজের রুমের দিকে।কিছুক্ষণ পরেই আবিষ্কার করলো তার গন্তব্য নিজের অজান্তেই পরিবর্তিত হয়েছে।সে উঠে যাচ্ছে দোতলায়।দানবটির আস্তানায়।
আসমানের রুমের কাছাকাছি এসে যেন সম্বিৎ ফিরল রোযার।এ কি করছে সে?কেনো করছে? কার জন্য করছে কিংবা কোন উদ্দেশ্যে করছে?ঘাট হয়েছে তার!উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলেও আহাম্মক হৃদয় বাঁধ সাধলো। মস্তিষ্ককে শাসালো তীব্র সুরে।
– গর্ধব!
নিজেকে নিজে ধমক লাগিয়ে চললো আবার ফিরতি পথে।আসমানের রুমের সামনে এসে থমকালো।যা আছে কপালে।বোকামির শেষ প্রান্তে এমনিতেও পৌঁছেছে সে।ক্রোধান্বিত সত্তায় জোরে ঠেলে দিলো দরজা।অনুমতি না নিয়ে ছেলেটাকে আরো রাগিয়ে দেয়ার প্রয়াস।তথাপি দরজা খুলে দৃশ্যপট উন্মুক্ত হতেই রোযা নিজের জায়গায় পাথর হয়ে গেলো।
আসমানের রুমের একপাশের দেয়াল রঙে রঞ্জিত।তরল সাদা রং চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে মেঝেতে।মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে রঙের বালতি।বিশাল দেয়াল ক্যানভাসের সামনে দন্ডায়মান আসমান,যার কালো পোশাকজুড়ে রঙের ছোপ ছোপ দাগ।রোযা এসেছে সেটি খেয়াল করেনি,কিংবা খেয়াল করলেও নজর দেয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি।মেঝেতে রাখা রঙের একটি বালতি তুলে সজোরে ছুঁড়ে দিলো দেয়ালে।আঘাতের তোরে পাত্র ভেঙে ছিটকে গেলো চারিপাশে।ছিটকে ছিটকে গেলো লাল রং।চারিপাশে।আসমানের ঊর্ধ্বাঙ্গ আবৃত করলো রঙিন আবহে।কোনো চিন্তা নেই তার, নেইন নূন্যতম অনুভূতি।নিজের দুই হাত কালো রঙের বালতিতে চুবিয়ে তুললো আসমান।ছুঁয়ে দিলো দেয়ালে।অপটু হাতে অদ্ভুতুরে চেষ্টায় ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকলো এক নারীর মুখায়ব।
দরজার সাথে দন্ডায়মান রোযা নিজের দৃষ্টি ফেরাতে পারলোনা দৃশ্যটি থেকে।বেরসিক রঙ ছিটকে অভিজাত কক্ষটির সর্বনাশ করছে।অশুভ বর্ণতায় ছেয়ে ফেলছে মূল্যবান বহু জিনিসপত্র।কিন্তু কারিগরের বিশ্রাম নেই।উভয় হাতে দেয়ালে অদেখা এক নকশা প্রস্তুতকরণে ব্যাস্ত সে।হাতের চালনা, কালো রঙের র*ক্তছোঁয়া টান ক্রমশই যেন এক করুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।অতি ক্ষীপ্র,দুর্বার,রীতিমত পাগলপ্রায় আসমান।যেন এক অবাধ্য চিত্রশিল্পী নিজের মৃ*ত্যুচিত্র একে চলেছে।
এক মুহূর্তে থামলো সে।দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে হাঁপালো। রোযার অব্যক্ত নয়নে প্রতিফলিত হলো শৈল্পিক নিদর্শন।এক নারীমূর্তি তৈরির আপ্রাণ প্রচেষ্টা।অপটু কর্মে দেখতে লাগছে কদাকার।তবুও যেন কোথাও একটা আর্তনাদ লুকায়িত রয়েছে চিত্রপটে।সাদা ক্যানভাস, তাতে কালো বর্ণে এলোমেলো রমণীর অবয়ব, শুধুমাত্র দীর্ঘায় চুলরাশি বোঝা সম্ভব।তার পাশেই ছোপ ছোপ র*ক্তের মতন লালচে ঢেউ।এর কি অর্থ?আনমনে এগিয়ে গেলো রোযা।আসমান তখনো হাঁপাচ্ছে, হঠাৎই ঘটালো সে কাণ্ডটি।লাল রঙ নিঃশেষ হয়েছে আগেই।রমণীর ঠোঁটে দেয়ার মতন বর্ণ অবশিষ্ট নেই।অতএব,তুলে নিলো বালতির ভাঙা অংশ।স্পর্শ করলো নিজের কালো রঙে ভর্তি হাতে।জোর টানে কালোর দুনিয়া ভেদ করে উদগিরিত হলো র*ক্তস্নাত প্রবাহ।মুহূর্তেই তা ছুঁয়ে দিলো রমণীর ঠোঁটে, অতি যত্নে গড়া র*ক্ত নিজের, তাকিয়ে রইলো বিমুগ্ধ নয়নে,যেন এর তুলনায় চমৎকার কোনো দৃশ্য এই আঁখি দর্শনে সক্ষম হয়নি কোনোকালে….
– পাগল হয়ে গিয়েছ?
দৃঢ় বন্ধনীতে রোযা চেপে ধরলো আসমানের কব্জি।এক টানে সরিয়ে নিলো দেয়াল থেকে।দৃষ্টিতে তার অগ্নিশিখা,দুর্বার দুঃসাহস।কি*লিং মেশিনের কৃষ্ণগহ্বর রূপান্তরিত হয়েছে প্রজ্জ্বলিত তারকারাজিতে।
– একটা চড় দিয়ে সব পাগলামি ছুটিয়ে দেবো, আঁকাআঁকি করা ঘুচিয়ে দেবো জন্মের মতন, ইডিয়ট!
আসমানের র*ক্তাক্ত হাত নিজের দুহাতে চেপে ধরলো রোযা। রঙ ছোঁয়ার পরোয়া করলোনা।উদগ্রীব হয়ে তাকালো এদিক সেদিক।উৎকণ্ঠা নিয়ে শুধালো,
– ফার্স্ট এইড কিটটা কোথায় রেখেছ?
মিনিফ্রিজের উপরের তাকে লাল বর্ণের ক্রস অঙ্কিত বাক্সটি নজরে পড়লো।দ্রুত ছুট লাগালো।সেটা হাতে নিতেই লক্ষ্য করলো আসমান পুনরায় ফিরেছে নিজের কাজে।হাতের ক্ষত ঘষে ঘষে রাঙিয়ে তুলছে দেয়াল।গভীর থেকে গভীরভাবে।অন্তর যেন ধপ করে পতিত হলো সমুদ্রমাঝে।দৌড়ালো রোযা,ঊর্ধ্বশ্বাসে।
– আসমান!
কাধ খামচে ধরে সরিয়ে আনলো দেয়ালের কাছ থেকে,কিন্তু দানবকে রুখে সাধ্য কি তার? ঠেলে পুনরায় এগোলো,বুকে হাত রেখে পিছনে ধাক্কা দিয়ে সরাতে থাকলো রোযা।অতর্কিতে আক্রা*ন্ত হলো তার গ্রিবাদেশ।আসমানের বলিষ্ঠ হাত চেপে বসলো, নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে গেলো সম্পূর্ণ।অশরীরী দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো রোযা,টলটলে আবেদনে।কিন্তু মায়া নেই, দয়া নেই, করণা নেই, অনুভূতি নেই পরাশক্তির অন্তরে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কৃষ্ণগহ্বরে নিজেকে বিলীন করলো রোযা।দৃষ্টি থেকে তার বিদায় নিলো আতঙ্ক, ঘিরে ধরলো আবেগের মায়াজাল।
অনুভূতি বনাম অনুভূহীনতা আজ মুখোমুখি।
টললো হিমালয়। ঢিলে হয়ে এলো হাতের বাঁধন।ফুসফুসে প্রবেশ করলো অক্সিজেন।নিঃশ্বাস নিলো রোযা,একটুখানি।তার কন্ঠ তখনো আবদ্ধ আসমানের হাতের।সম্মুখে ঝুকলো পিশাচ,তার অপর হাত উঠে এলো।ছুঁয়ে দিলো রোযার কপাল,নামতে থাকলো সমস্ত চেহারা বেয়ে।তরল কালো রঙের ভেজা শিরশিরে অনুভূতি রোযার অবয়বে তরঙ্গ প্রবাহিত করলো,বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যেন!শরীরের সমস্ত রোমকূপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল শীতল শিহরণ।অতি যত্নে তাকে অশুভ বর্ণে রাঙিয়ে তুলছে পরাশক্তিরাজ।
আসমানের হাত নামলো রোযার কাঁধে,সিল্কের বাঁধা সরিয়ে প্রবেশ করলো গভীরে।কালো রঙের দাগে কলঙ্কিত হলো রোযার অঙ্গ।ভ্রু কুঁচকে চোখ বুজে নিলো মানবী।এতটা নিগূঢ় স্পর্শ সহ্য করা যায়।শিউরে উঠে অস্ফুট উচ্চারণ করলো,
– আ… আস…মান…
থমকালো স্পর্শ,তার সঙ্গে খুললো চোখের পাতা।দৃষ্টি মেলে চাইলো রোযা,অব্যক্ত এক অনুভূতিমাঝে।আসমানের তর্জনী উঠে এলো উপরে, কন্ঠনালী বেয়ে সরাসরি অধরে।যেন নিজের প্রিয় খেলনা ছুঁয়ে দেখছে কোনো শিশু।হৃদস্পন্দন বিলুপ্ত হয়েছে রোযার, মস্তিষ্ক হারিয়েছে বিচার বিবেচনাবোধ।আসমানের বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে গেলো তার নিম্ন ওষ্ঠে,কালো রঙের পাশাপাশি লেপ্টালো রক্তিম র*ক্ত। ডানে বামে, উপরে নিচে…. বৃদ্ধাঙ্গুল বয়ে গেলো আপন গতিতে।
মুখে র*ক্তের নোনতা এবং রঙের তেতো স্বাদ টের পেলো রোযা। থু করে ফেলতে যাচ্ছিলো,কিন্তু আসমানের আঙুলের বাধায় পড়তে হলো।ঠোঁট তর্জনীতে আবদ্ধ করে রেখেছে সে।
– হ্যাভ ইউ এভার টেস্টেড ইওর ব্লা*ড?
মাস্কের অন্তরাল থেকে প্রশ্নটি রোযাকে বিষাক্ত আবেগে ব্যাকুলিত করে তুললো।
তার নিকটে ঝুকলো আসমান,অদ্ভুত এক উষ্ণতা ছড়িয়ে।কানে তাড়িত কণ্ঠটি ঘূর্ণিঝড় তুললো।
– আই ডিড… ইট টেস্টস লাইক হেল!
গা গুলিয়ে উঠলো রোযার।আসমানের আঙুল একটুখানি সরতেই থু করে ফেললো সে একপাশে।তবুও যেন মুখের ভিতর বিস্বাদ অনুভূত হচ্ছে।
“ আর ইউ ইনসেইন?”— রোযার বিতৃষ্ণা খচিত চেহারা লক্ষ্য করে এমন প্রতিক্রিয়া আশা করলো আসমান।তথাপি তার ন্যায়ই প্রত্যাশায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রোযার কন্ঠস্বর শুধালো,
– কেনো?তুমি কি ভ্যাম্পায়ার?নাকি ভ্লাদ দ্যা ড্রাকুলা?
এক মুহুর্ত নির্বাক চেয়ে থাকল আসমান।রোযাও কটমট করে বিপরীত আগ্রাসী দৃষ্টি নিক্ষেপে ব্যাস্ত।পরক্ষণেই তাকে হতবিহ্বল করে দিয়ে খিলখিলে এক মৃদু হাসির আওয়াজ ভেসে এলো কানে।নিজের শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে বিশ্বাস করতে বেগই পেলো রোযা।
হাসলো আসমান….টানা দশ সেকেন্ড।
বরফখন্ডে পরিণত হওয়া রোযার নিকটে ঝুকলো।তার চুল থেকে কালো সাদা বর্ণালীর মিশ্রণ টপটপ করে গড়াতে থাকলো পরণের সিল্কের কোটের উপর।যেন হোলি খেলেছে উভয়ে।অশুভ বর্ণের হোলি।আসমানের ভারী নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের ধ্বনি শিহরণ তুললো অঙ্গজুড়ে।যেন বিশ্রাম নিচ্ছে শিকারী পশু,বহু কাঙ্ক্ষিত এক বিশ্রাম।
একবার, দুইবার….
নিজেকে সন্নিকটে টেনে আসমানের বুকের কাছে কান পাতলো রোযা।শুনতে থাকলো ধীরগতির অবিচলিত হৃদস্পন্দন।তাহলে হৃদয় আছে তার!স্পন্দিত হচ্ছে আর পাঁচটি সাধারণ মানুষের মতোই।মুহূর্তের গাঢ়ত্ব এতটাই অত্যধিক যে নিজেকে আটকে রাখা সম্ভব হলোনা।
– কাকে আঁকতে চাইছিলে?
প্রশ্নটি উত্থাপিত হতেই ঘুমন্ত শিকারীর নিদ্রাভঙ্গ হলো। সটান ঠেলে দিলো রোযাকে দূরে।দেয়ালে ধাক্কা খেলো শরীর।বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকলো রোযা, দানবিক দৃষ্টিমাঝে।ক্রমশই র*ক্তপিপাসু হয়ে উঠছে তা।
ফোনের ভাইব্রেশনে আসমান পকেটে হাত ভরলো।ফোন তুলে কানে লাগালো।যথারীতি নৈঃশব্দ্য।তারপর ফোন কেটে পুনরায় পকেটভর্তি করলো।উল্টো ঘুরে কাবার্ড খুলে গায়ে জড়ালো কালো হুডি।রঙের দাগের পরোয়া করলোনা বিন্দুমাত্র।টুপি মাথায় তুলে একটা ওয়েস্টব্যান্ড লাগালো কোমরে।তাতে একটা ছোটখাট ব্যাগ।ভেতরে কি আছে তা রোযার বোধগম্য হওয়ার আগেই মাস্ক বদলে নতুন মাস্ক পরে হনহন করে এগোলো আসমান বাইরের দিকে।একটিবার শুধু দৃষ্টিপাত করলো রোযার পানে,অতঃপর অদৃশ্য হয়ে গেলো রুম থেকে।
কোথায় গেল এত রাতে?
রোযা জানে,প্রশ্নের উত্তর পাবেনা।তার হৃদয় বর্তমানে কোনোপ্রকার প্রশ্ন করা কিংবা অনুভূতি অনুভব করার অবস্থায়ও নেই।কি হয়ে গেলো তার সাথে এইমাত্র?কি ব্যাক্ষা এর?
দেয়াল ঘেঁষে মেঝেতে বসে পড়ল রঙে কলুষিত হওয়া রোযা।দুহাতে আকড়ে ধরলো হাঁটু।আসমানের র*ক্ত জমাট বেঁধেছে তার ঠোঁটের চামড়ায়।অদ্ভুত এক শূন্যতা অন্তরজুড়ে।আপনা আপনি রোযার দৃষ্টি আপতিত হলো দেয়ালে।যে দেয়ালজুড়ে অংকিত রয়েছে শুধুই হাহাকার এবং যন্ত্রণা…….
ভোরের টিমটিমে আভায় উদ্ভাসিত বুড়িগঙ্গার তট। পঁচাপানির গন্ধ গায়ে জ্বালা ধরালেও প্রভাতকাল এখানে অতিপ্রাকৃত।কালো জলে স্বর্ণালী দীপ্তির ছোঁয়া বড়ই হৃদয় হরণীয়া। দূর সদরঘাটে লঞ্চের নিত্য যাতায়াত।দীর্ঘ সিটির শব্দ,মানুষের কোলাহল এবং কুলিদের হাকডাক;সম্মিলিত প্রচেষ্টা জাগ্রত করে তুলছে ঘুমন্ত নগরীকে।
দূষিত জলের নির্জন ঘাটে ভাসমান অকর্মা লঞ্চটি।রং উঠে জং ধরে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা।মেরামত করে চালানোর উপায়ও অবশিষ্ট নেই।পড়ে আছে লোহার জঞ্জাল হিসাবে বিক্রি হওয়ার আশায়।যদিও এখনো ভাসছে নদীর জলে।প্রভাতী বায়ুতে এদিক সেদিক দুলছে ক্ষণে ক্ষণে।
লঞ্চের ছাদের চিমনিতে শিকলে আবদ্ধ রায়হান।বেধড়ক পিটু*নিতে অবস্থা কাহিল।শরীর ছাড়ানোর শক্তিটুকু যেন নেই। কারা হা*মলা করেছিল তার উপর?ওই মাঙ্গের নাতি আশিক?একবার শুধু বাপ মা তাকে বাঁচাক,তারপর হচ্ছে ওই আশিকের।চোদ্দ গুষ্টি খালাস করে দেবে,বংশ হবে নির্বংশ।অলস মস্তিষ্ক তার শয়তানের কারখানাই হয়ে থাকলো যতক্ষণ না মিটমিটে আলোয় ছাদে কাউকে উঠে আসতে দেখলো।
আগাগোড়া কালো পোশাকে মোড়ানো এক সত্তা। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে আসছে ধীরগতিতে।লোহার মেঝেতে তার ভারী বুটজুতো শব্দ তুলছে।না চাইতেও এক শিহরণ অনুভূত হলো রায়হানের।এই অস্তিত্বের এক অশরীরী প্রভাব রয়েছে।
– ক…কে তুই?
প্রশ্নের উত্তর প্রদানে অনাগ্রহী সত্তা উবু হয়ে বসলো রায়হানের সামনে।
– তুই যেই হস না কেনো, একদম কিন্তু শেষ জাইনা রাখিস!আমার মায় খাদ্যমন্ত্রী,আর বাপ…
– জানতে চেয়েছি?
কন্ঠটি এতটাই গভীর যে রায়হানের ভেতরে শব্দগুলো যেন জট পাকিয়ে গেলো।পকেট থেকে হাত বের করলো সে।তাতে একটি ধা*রালো চা*পাতি।গলা শুকিয়ে এলো রায়হানের।
– নিজের শনি নিজে ডাইকা আনিস না।স্বরাষ্টমন্ত্রী কিন্তু আমার দুঃসম্পর্কের খালু লাগে!
– বাপ চাচা নানা খালা দাদা…ছত্রিশ গুষ্টির গৌরব ছাড়া নিজের কিছু থাকলে বলো।
থতমত খেয়ে গেলো রায়হান।এ কেমন বান্দা?কি বলবে একে?ভয়ডর কিছু কি আদতেই নেই এর?অবশ্যই নেই।থাকলে নিশ্চয়ই…
– আহহহহ!!
ভাবনা সমাপ্তির আগেই আর্তচিৎকার বেরিয়ে এলো কন্ঠ থেকে।মুহূর্তেই আবদ্ধ হলো তার মুখ,গুঁজে দেয়া হলো ভারী কাপড়।শুধু গোঙানি।বদ্ধ উন্মাদের পাল্লায় পড়েছে রায়হান।উহুম,উন্মাদ নয়।স্বয়ং মৃ*ত্যুদূত!
শরীরের চা*ম*ড়া একটু একটু করে কে*টে নি*চ্ছে চাপা*তি দিয়ে।অতি যত্নে কাজটা করছে। টুকরোগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে।প্রভাতের কাকের দল দূরে ঠুকরে ঠুকরে আস্বাদন করছে তা।দৃশ্যটি লক্ষ্য করে গা গুলিয়ে উঠলো রায়হানের।শারীরিক যন্ত্রণা কোথায় সে জানেনা।শুধুমাত্র দেখতে পাচ্ছে র*ক্ত,র*ক্তের সাগর!
রায়হানের সমস্ত হাত এবং বুকের চা*ম*ড়া তুললো, এক ঘন্টা ব্যয় করে।ততক্ষণে তেজস্বী দিবাকর নিজের চোখ রাঙানি দেখাতে শুরু করেছে।কাপছে সমস্ত শরীর,নরক যন্ত্রণায়।এটুকুও যথেষ্ট নয় র*ক্তা*ক্ত চিত্রকর্ম রচয়িতার জন্য।পকেট থেকে বের করলো একটি কৌটো,মরিচের।মাথায় ঢেলে দিলো।
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা — প্রবাদের বাস্তব প্রতিফলন।
রায়হানের অমানুষিক গোঙানির আজ একটাই অর্থ, সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে মৃ*ত্যু দেয়….অতি দ্রুত!
খালি কৌটো ফেলে হাত ঝাড়া দিলো সে।তাকালো আকাশের দিকে,যেথায় উদিত হয়েছে রবি।বিড়বিড় করলো,
– হুম… বার্বিকিউ হতে আর বেশি দেরী নেই।
রায়হানের অশ্রুসিক্ত দৃষ্টি,আকুতি,আর্তনাদ কিংবা হাহাকার;বিন্দুমাত্র টলাতে সক্ষম হলোনা তাকে।নিজের কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে প্রাণভরে চা*ম*ড়া তু*লে নেয়া দে*হাং*শ অবলোকন করলো সে।তার নয়নজুড়ে প্রকাশ পেলো তৃপ্তি।
– খোদা যেন তোকে অতি ধীর মৃ*ত্যু দান করেন।
– উম…উমমম….
– নো পেইন অ্যান্ড অ্যাক্সেপ্ট পেইন!
এটুকুই।উল্টো ঘুরল সে।র*ক্তা*ক্ত গ্লাভস টেনে খুলে পকেটে ভরলো।চা*পাতি ছুঁড়ে ফেলল বুড়িগঙ্গার জলে।অতঃপর নেমে গেলো, সিঁড়ি বেয়ে।একবারও তাকালোনা পিছন ফিরে।
নিথর চেয়ে থাকল রায়হান,ক্রমেই চড়চড় করে জ্বালা উঠছে সর্বাঙ্গে।তার দৃষ্টি আপতিত দূরে,যেখানে খুবলে খুবলে শরী*রের চা*ম*ড়া খাচ্ছে আবর্জনার পাখিরা।
কি তার অপরাধ?কে এই ন*রপিশাচ?
জবাব দিলো সূর্যের তেজস্বী আলোর বর্ষণ,গরম তেলে ভাজা মাছের মতন ছটফট করে উঠলো রায়হান।
সকাল সকাল গোসল সারতে হয়েছে রাত্রির গাত্রবর্ণ ধুয়ে মুছে অন্তর এবং শরীর উভয় সাফ করতে।অতঃপর সিটি ইউফোরিয়ার সুপারমার্কেটে গিয়েছে রোযা।দুইটি উদ্দেশ্যে।এক, সকালের নাস্তার জন্য কিছু জিনিস প্রয়োজন, বিলাল রেমানের উদ্দেশ্যে কিছু নিবেদন করা উচিত।দুই,কিছুটা মুক্ত পরিবেশ দরকার অস্তিত্বের। কেনাকাটা শেষ করে মারবেলে ফিরে লিফটে ঢুকলো রোযা। তা থমকালো ছাব্বিশ তলায়।
ডিং করে দরজা খুলতেই মুখোমুখি হলো চারুলতা। একে অপরের দিকে নীরব দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো উভয় রমণী।অতঃপর একটি নিঃশ্বাস ফেলে প্রবেশ করলো সে, ত্রিশ তলার বোতাম চাপাই আছে।চারুলতার গন্তব্যও আসমানের পেন্টহাউজ।
অস্বস্তিকর নীরব এক পরিবেশ।লিফট খুলতেই হনহন করে রীতিমত ছুটলো রোযা।যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ঢুকে চারুলতার দৃষ্টির আড়াল হতে চায়।দরজার সামনে থমকেই হঠাৎ মনে পড়ল কার্ড নিতে ভুলে গিয়েছে!পিনকোড জানা নেই।হতাশায় চুল ছিঁ*ড়ে ফেলার আগেই চারুলতা হাত বাড়ালো।রোযা সরে গেল,ভাবলো পিনকোড দেবে।কিন্তু তাকে হতবাক করে দিয়ে দরজা আড়াল করে রোযার মুখোমুখি হলো লাস্যময়ী সুদর্শনা তরুণী।নিজের বুকে হাত ভাঁজ করে চাইলো।
– আমি কোনোপ্রকার ভনিতা করবোনা।যা বলার সরাসরি বলছি।আমি আসমানকে ভালোবাসি।
সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠলো যেন রোযার।হাতের মুঠো শক্ত করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মুহূর্তেই।চারুলতার কন্ঠ কর্ণপাত করতে না চাইলেও হতে বাধ্য হলো।
– কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আসমানও আমাকে ভালোবাসে।
– মজা করছ আমার সাথে চারুলতা?
অদূরে চেয়েই প্রশ্ন ছুড়লো রোযা।এগোলো সুদর্শনা, ছুঁয়ে দিলো তার কাঁধ।কন্ঠ খাদে নামিয়ে বিড়বিড় করলো,
– ভিডিওতে যাকে দেখেছ সে আমি না।আমার জমজ বোন।
ব*জ্রাহত হলেও বোধ হয় মানুষ এতটা হতচকিত হয়না যতটা রোযা হলো।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো,অবিশ্বাস নিয়ে।চারুলতা স্থির কন্ঠে জানালো,
ডার্কসাইড পর্ব ১৮
– আমি চাইনা আসমানকে নিয়ে কিংবা আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো ভুল ধারণা পোষণ করুক কেউ।আমার ওর প্রতি ভালোবাসা….নিষিদ্ধ নয়।আসমান আমার ভাই নয়…. দুলাভাই!
একজন মানুষের উপর পরপর দুবার ব*জ্রপা*ত হওয়া কি সম্ভব?
– ভিডিওতে যাকে দেখেছ সে আসমানের স্ত্রী, আমার বড় আপু….. চিত্রলেখা…….
রোযার হাত থেকে সশব্দে শপিং ব্যাগ মেঝেতে পড়ে গেলো।টমেটো সসের কাচের বোতল ছিটকে চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ল,থকথকে র*ক্তে*র মতন।
