ডার্কসাইড পর্ব ৩২
জাবিন ফোরকান
রোযা রহমান চড়ুই নামক মানুষটার জীবন কোনো সার্কাসের তুলনায় কম কিছু নয়। এ জীবন বড়োই বৈচিত্র্যময়,যার মোড়ে মোড়ে রয়েছে প্লট টুইস্ট।উত্তাল সমুদ্রে ভাসানো তার জীবনতরী বারংবার জর্জরিত হয়েছে একের পর এক ঝড়ো আঘাতে।তবুও জীর্ণ শীর্ণ হয়ে সে এগিয়েছে,বয়ে চলেছে অসহনীয় অস্তিত্বের ভার।থমকেছে পদক্ষেপ, লোভ হয়েছে নিজেকে হটিয়ে নেয়ার।কিন্তু সুযোগ নেই।অগ্রসর হওয়ার উদ্দেশ্যই এই ভঙ্গুর অস্তিত্বের, থামার অন্তর নেই। শত সহস্র ক্ষত বুকে চেপে পুনর্বার সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে তাকে।এই যেন তার চরম নিয়তি।
এই মুহুর্তেও যেন নিজের হৃদয়জুড়ে জেঁকে বসা পরাবাস্তব পুরুষ আসমানের বক্তব্য উপলব্ধি করেও সে কিছুই অনুভব করতে সক্ষম হচ্ছে না।সেও কি তবে পাথর হয়ে গেলো?এহেন প্রত্যাখানের কলঙ্ক গায়ে মাখবে কি করে সে?
কোনো প্রতিবাদ করলোনা রোযা। আস্তে করে চায়ের কাপ রেখে দিয়ে শুধুমাত্র একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিটল হিমালয়কে জিজ্ঞেস করলো,
– কারণ জানতে পারি?
আসমান তিন সেকেন্ড বাদে জবাব দিলো।
– তোমার গুরুত্বের অবসান হয়েছে এটাই কারণ।
– আসলেই?নাকি তোমার প্রতি অনুভূতি পোষণ করছি বলে?
– ওসব অনুভূতি নয়, করুণা।
ঝট করে আসমানের দিকে ফিরলো রোযা,তার দৃষ্টিজুড়ে প্রগাঢ় আবেগ।তবুও নির্বিকার কৃষ্ণগহ্বর।হিমশীতল তার চাহুনি।
– বারবার করুণা তকমা দিয়ে কেনো অপমান করো আমার আবেদনকে?
– তোমার বয়স কত?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে রোযা খানিক ভড়কে গেলেও নতমুখে উত্তর করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– বাইশ।
– আমি একত্রিশ।
– বয়সের পার্থক্য দেখাচ্ছো?
– উহুম।আমাদের চিন্তাধারার পার্থক্য বুঝিয়ে দিচ্ছি।
– কেমন পার্থক্য?
– এটাই যে তুমি আমাকে করুণা করছো।
– আমি তোমাকে করুণা করছি না!কতবার বলতে হবে যে আই অ্যাম নট…
– ইউ আর!
আসমানের কাঠিন্য অনুভূত হতেই নিঃশব্দ বরণ করলো রোযা।তার দিকে এক পা এগোলো অনুভূতিহীন দানব।
– দিস ইয নট আ ড্রামা প্লট, দিস ইয রিয়ালিটি।আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনে তোমার হৃদয়ে যে করুণার ঢেউ উঠেছে তাকে অনুভূতি ভেবে ভুল করলে নিজেই পস্তাবে। সবে তো বাইশ,গোটা জীবন পরে আছে, আফসোস করবে।
তাকিয়ে থাকলো রোযা,একদৃষ্টে।কিছুই উচ্চারণ করতে সক্ষম হলোনা।আসমান ভুল বলছে না।সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছে।তাই অধিক বিষাদ অনুভব করছে অন্তর।
– আমি একটা অভিশাপ।আমার অস্তিত্বে জড়ানোর অর্থ নিজেকে আঁধারে নিমজ্জিত করা।পাপ আমি,প্রলয় আমি,বিনাশ আমি।এই পাপের মায়ায় পড়ার একটিই পরিণতি—ধ্বংস।
– তার মানে দূরে ঠেলে দিয়ে তুমি আমায় রক্ষা করতে চাইছ সেই ধ্বংস হতে?
থমকালো আসমান,তার ঘন ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত হলো, ঠিক ক্রোধে নাকি কৌতুকে বোঝা গেলোনা।রোযা দমলোনা। দৃঢ়চিত্তে মুখোমুখি হলো মেশিনের।
– আমাদের চুক্তি এখনো সমাপ্ত হয়নি। ডিল ছিল কে বি গ্রুপের পতন না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমায় রক্ষা করবে, ব্যবহার করবে।কে বি কোম্পানি এখনো মেরুদন্ড নিয়ে দন্ডায়মান।তাই এই চুক্তি শেষের কারণ দেখছিনা।
– তুমি ভুলে গিয়েছ আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী। চুক্তি আমার থেকে ভালো আর কেই বা বোঝে?
মাস্কের আড়ালে না দেখলেও রোযা নিশ্চিত আসমানের ঠোঁটে একটি তীর্যক হাসির প্রস্ফুটন ঘটেছে।
– তোমাকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, করবো।ঠিক সেই কারণেই তোমার দূরে যাওয়া প্রয়োজন।বর্তমানে আমি কে বি গ্রুপের মেইন টার্গেট।শত্রুকে হেলাফেলা করার উপায় নেই।তোমার জন্য সবচেয়ে বিপদজনক স্থান বর্তমানে এই পেন্টহাউজ।আমার যত নিকটবর্তী থাকবে,তত বিপদ বাড়বে।
চমকে উঠলো রোযা।তার মস্তিষ্কজুড়ে চলছে চিন্তার ঘূর্ণিপাক।আসমানকে বুঝতে তার বেগ পেতে হচ্ছে।তবে এটুকু স্পষ্ট,যেকোনো মূল্যে তাকে দূরে সরাতে বদ্ধ পরিকর হিমালয়।তাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা নেই রোযার মাঝে।
– নিজেকে অমানিশায় ডুবিও না।চলে যাও,নতুনভাবে গড়ে তোলো আপন অস্তিত্ব। ভুলে যাও অতীত।নিহাদ যে ফ্ল্যাট নিয়েছে তার পাশেরটিতে তুমি থাকবে।সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।প্রস্তুতি নাও প্রস্থানের।
একবারও কাপলো না আসমানের কন্ঠ।বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হচ্ছে না তার।রোযার প্রতি নেই কোনো আবেদন।তবুও নিজের রক্ষকের দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর সে।ব্যাপারটি রোযাকে দারুণভাবে আহত করলো।মাথা নিচু করে ফেললো সে।গড়িয়ে নামলো এক ফোঁটা অশ্রু, গাল বেয়ে। পরোয়াহীন আসমান, উল্টো ঘুরে চুপচাপ এগিয়ে গেলো। সিঁড়ি বেয়ে উঠলো উপরে।নিজের রুমের অভ্যন্তরে আড়াল হয়ে গেলো।রোযার দৃষ্টি যা অবলোকনে সক্ষম হলোনা তা হলো নিজের রুমে প্রবেশ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে আসমানের বুক থেকে নির্গত হওয়া দীর্ঘশ্বাস।
কায়সার এম্পায়ার।
কাচের টেবিলের উপর বরফপূর্ণ পাত্রে সজ্জিত উত্তেজক তরলের বোতলগুলো এতটাই মূল্যবান যে তাদের কাঁচঅবয়বজুড়ে বিচিত্র সব নকশা খচিত রয়েছে।এর মাঝে সবচেয়ে অধিক আগ্রহ রয়েছে ম্যাকাল্যান স্কচ হুইস্কির বোতলে,যা স্কটল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় অভিজাতদের বিলাসী আবেদন পূরণে।
একজন স্টাফ পাশাপাশি সজ্জিত দুটো গ্লাসে মূল্যবান প্রিমিয়াম ম্যাকাল্যান ঢেলে তাতে বরফকুচি মেশালো। বুদবুদে ফেনা ওঠা ইন্দ্রিয় ক্ষমতা বিলুপ্তিকারী পানীয়টি পরিবেশন করে পুনরায় ফিরে গেলো নিজের জায়গায়।টেবিলের দুইপাশে রক্ষিত রাজকীয় সোফায় মুখোমুখি বসা কে বি অধিপতি বাদশাহ কায়সার এবং কালো জগতের নিয়ন্ত্রক সাইফের দিকে নীরব দৃষ্টিপাত ঘটালো। বাদশাহর পূর্বেই গ্লাস তুলে নিলো সাইফ,কোনপ্রকার পরোয়া না করে এক চুমুকে নিঃশেষ করলো সমস্ত পানীয়।স্টাফকে পুনরায় ইশারা করলো আরেক গ্লাস তৈরী করতে।
– আমার সঙ্গে জরুরী সাক্ষাতের ইচ্ছা?প্ল্যান রেডি?
বাদশাহর দিকে শূন্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সাইফ মাথা হেলালো।উত্তর হ্যাঁ নাকি না তা ঠিক বোধগম্য হলোনা।তাতে বিরক্ত হয়ে বাদশাহ জানালেন,
– সময় নষ্ট করোনা সাইফ।আলফা অন্তিম সুযোগ দিয়েছেন।এবারও যদি ব্যর্থ হই শুধুমাত্র আমি নই তার সঙ্গে তুমিও…
– আপনি আছেন বলে আমার অস্তিত্ব তা কোন পাগলে বললো?
ভড়কে গেলেন বাদশাহ,নীরবে তাকিয়ে রইলেন সাইফের দিকে।হেলান দিলো সোফায়, দ্বিতীয় হুইস্কি তুলে ঠোঁটে ছুঁয়ে বিড়বিড় করলো,
– আমি ছিলাম শুরু থেকেই।আপনি হাত মিলিয়েছেন আপনার প্রয়োজনে,আমি আমার স্বার্থে।উই আর পার্টনারস,নট বস অ্যান্ড এমপ্লয়ী।
ছেলেটি উগ্র।শীতল মস্তিষ্কের গুরুতর অপ*রাধী।বাদশাহ জানেন।এই বান্দা তাকে প্রায়শই আসমানের কথা স্মরণ করায়।যদিও দুইজনের উদ্দেশ্য ভিন্ন।একজন করে প্রয়োজনে,অপরজন বিকৃত আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে।এই পার্থক্য।তাই একে খুব বেশি ঘাটানোর মতন ভুল স্বয়ং বাদশাহও এড়িয়ে চলেন।
– সাইফ।আমাকে সরাসরি জানালে ভালো হতো। ভণিতা ভালো লাগে না।
তবুও বেপরোয়া দীর্ঘ চুমুক দিয়ে দ্বিতীয় গ্লাস নিঃশেষ করে তা টেবিলে ঠেকালো সাইফ।একটি হেঁচকি তুলে মৃদু হেসে জানালো,
– সিটি ইউফোরিয়া।ভবনের নাম মারবেল। ছাব্বিশ তলায় রেমানের মেয়ে এবং ত্রিশ তলার পেন্টহাউজে রেমানের ছেলে।
– ছেলে!
– নীলাদ্রি রেমান নীল ওরফে আসমান।
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন বাদশাহ।যে কাজ তার সমস্ত সার্চ টিম মিলেও করতে পারেনি সেই কাজ সাইফ হুট করে কিভাবে করলো?আদতেই হুটহাট করেছে নাকি দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানের ফল?কতদিন ধরে সে খোঁজ করে চলেছে আসমানের?
পকেট থেকে লাইটার বের করে একটা সিগারেট ধরালো সাইফ।কয়েকটি সুখটান দিয়ে সিলিংয়ের দিকে চাইলো।বাদশাহ তখনো স্তব্ধ হয়ে রয়েছেন।
– আসমানের কাছে আমার পুরো বায়োডাটা আছে।যেকোনো সময় খালাস করে দেবে।
– এর আগেই আমাদের আঘাত হা*নতে হবে।
– উহুম।
বাদশাহর কথায় আঙুল তুলে মাথা নাড়লো সাইফ।হাসলো অদ্ভুতুড়ে শব্দ তুলে।
– লেট হিম ক্যাচ মি।উই উইল বিট হিম অন হিয ওন গেইম।
– তোমার প্ল্যান?
একটি ছোট্ট নোটপ্যাড বের করলো সাইফ পকেট থেকে।ছুঁড়ে দিলো বাদশাহ কায়সারের সামনে,খানিক অবজ্ঞার সাথেই।ভ্রুকুটি করে তা তুলে খুললেন তিনি, মেলে ধরলেন। সাইফের কন্ঠস্বর নিশাচরের অশুভ আভাস তুলে জানালো,
– রেমানদের তুলে নিন।বাকিটা আমি সামলাবো।
একবার নোটপ্যাড আরেকবার সাইফের দুশ্চিন্তামুক্ত চেহারার পানে তাকালেন তিনি। সিগারেটে নিজেকে বিলিয়ে খুবই আয়েশী মুহূর্ত অনুভবে ব্যাস্ত সে।
মারবেল ভবন।
নিজের সবকিছু গোছগাছ করে ফেলেছে রোযা।দুটো ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছে একপাশে। রুমটিও সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে ফেলেছে।চারিপাশে চেয়ে তার বুক হতে এক দীর্ঘশ্বাস নির্গত হলো।শুরু থেকেই সে জানতো, এই জীবনের সমাপ্তি ঘটবে একদিন।তবুও বাস্তবতা মেনে নিতে এতটা যন্ত্রণা হচ্ছে কেনো?ভাগ্য যেন তাকে চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কত বড়ো ভুল পথে সে পা বাড়িয়েছে।জীবনে অতর্কিতে ঘূর্ণিঝড় হয়ে প্রেম এসেছিল,সেই প্রেমানুভূতির রঙিন দোলায় ধরাকে সরা জ্ঞান করে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল অজান্তেই।বাস্তবতার চা*বুক তাকে আঘা*ত করেছে ভীষণভাবে।এক ঝটকায় পড়িয়ে দিয়েছে জীবনপাঠ।
হিমশীতল হিমালয় তার তরে টলেনি, কোনোদিন টলবেও না।যে অনুভূতিহীন হৃদয়ের শিলালিপিতে খচিত হয়েছিল চিত্রলেখার অমর প্রেমের আখ্যান, তাতে নতুন করে মহাকাব্যের সূচনা করা রোযার নিকট পিপীলিকার পদক্ষেপে মরুভূমি পাড়ি দেয়ার ন্যায়ই অসম্ভবপ্রায়।তবে কি দমে যাবে সে?পরিত্যাগ করবে?পিছিয়ে আসবে নিজের অনুভূতি থেকে?অনুভূতি ভোলা কি এতই সহজ?নতুন করে আরো একবার সে বেঁচে থাকতে শিখবে? কার জন্য?সবকিছু ছেড়ে অনিশ্চিতের পথে পা বাড়াতে প্রস্তুত সে?
উত্তর—না।
সংগ্রামের দিনগুলো তাকে ধৈর্য্য শিখিয়েছে, শিখিয়েছে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া। আরো একটি সুযোগ নেবে সে।নিজেকে সৎভাবে প্রকাশ করবে।তারপরও যদি না হয় তবে…..
মাথা ঝেড়ে বেরিয়ে এলো রোযা।কামিজের ওড়না টেনে শরীরে জড়িয়ে নিলো।করিডোর পেরিয়ে হেঁটে যেতেই দাদুর রুমের মুখোমুখি হলো।খানিক আনমনেই ভেতরে ঢুকলো দরজা খুলে।পরিপাটি করে সজ্জিত কক্ষটি।শুভ্র বিছানার পাশে এখনো ক্যানোলাযুক্ত স্ট্যান্ড এবং হুইলচেয়ার রয়েছে।নিজের জীবনের অন্তিম দিনগুলো এখানেই অতিবাহিত করেছেন ইউনূস রহমান।সুখে ছিলেন কি তিনি?অন্তত শেষ সময়ে তাকে একটু ভালো রাখতে পেরেছিল কি রোযা?বৃদ্ধ দাদুর হাস্যোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি হৃদয়কোণে ভেসে উঠতেই নয়ন ভরে এলো জলে।হাতের উল্টোপিঠে মুছতে হলো অশ্রুর প্রবাহ।
বিশ মিনিট একাকী দাদুর বিছানায় বসে কাটিয়ে অতঃপর উঠলো রোযা।শেষবারের মতন অবলোকন করে নিলো কক্ষটি।এই মায়া তাকে পরিত্যাগ করতেই হবে।বেরিয়ে এলো বাইরে।হলঘরের ডিজিটাল ঘড়ির রিডিং ঘোষণা করছে রাত্রি ১২ টা বেজে ১৫ মিনিট।চারিপাশ নিস্তব্ধে আচ্ছন্ন।রোযার প্রস্থানের খবর নিহাদ ব্যতিত আর কেউই জানেনা এখনো।
ধীরপায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো রোযা।ভারী চাপ জেঁকে বসলো বুকে তার।দানবের আস্তানার আতঙ্কে নয়।বিষাদের জমা পর্বতের গাঢ় অভিসারে।এগিয়ে গেলো সে।ক্রমেই যেন নিজের সর্বনাশের পথে অগ্রসর হচ্ছে।আসমানের রুমের দরজা হালকা চাপানো।একটি শক্ত ঢোক গলাধঃকরণ করলো রোযা, এই কক্ষে প্রবেশের অধিকার সে হারিয়েছে পূর্বেই।তবুও, শেষ বারের মতন, সামান্যতম আশাটুকু আঁকড়ে ধরতে সে এসেছে।ভেতরে প্রবেশ করলো।পরিপাটি গোছালো রুম শূণ্য।জানালা উন্মুক্ত, বায়ুতে দুলছে ভারী পর্দা।দেয়ালে অঙ্কিত রক্তিম কর্মটি এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়নি, দেয়নি আসমান।আজও রয়ে গিয়েছে।তার ভাগ্য নামক অভিশাপের শৈল্পিক সাক্ষী হয়ে। দেয়ালটির মুখোমুখি দাঁড়ালো রোযা।অবলোকন করলো দীর্ঘক্ষণ।কম্পিত হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো রমণীর মুখাবয়ব।কতটা যন্ত্রণা সহ্য করেছে সে!কিভাবে শিকার হয়েছে মর্মা*ন্তিক এক উপাখ্যানের?
খুব বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলোনা রোযা।তার হৃদয় চুরমার হয়ে আসছে অতীত স্মরণ করেই।তাই পিছিয়ে এলো।নজর পড়ল তাকের টেডি বিয়ারে।ছোট্ট পরীটা!নিষ্পাপ কোমল প্রাণটিও রক্ষা পায়নি!কি দোষ ছিল তার?যন্ত্রণার আধিক্য সহ্য করা সম্ভব হলোনা।ওই পুতুল ছুঁয়ে দেয়ার দুঃসাহস এড়িয়ে রোযা উল্টো ঘুরলো।নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে তাকালো সামনে।একপাশের ট্যারেসের দরজা খোলা।এগিয়ে গেলো পায়ে পায়ে।সংলগ্ন বিস্তৃত বারান্দায় পা রাখতেই হিম সমীরণের ঝাপটা সর্বাঙ্গে শিহরণ খেলিয়ে দিলো।
কৃত্রিম সবুজ ঘাসের কার্পেটে আচ্ছাদিত বারান্দার একদম মাঝ বরাবর একটি ধাতব দোলনা।বসার জন্য ছোট একটি টেবিল,পাশে দুটো নিচু সোফাসেট।চারিপাশের সৌন্দর্য্য অবলোকনে খুব বেশি সময় নষ্ট এড়িয়ে রোযা এগোলো দোলনার দিকে।যেখানে অস্তিত্ব পরাশক্তির।
দোলনায় মৃদু লয়ে দোল খেয়ে চলেছে আসমান।দৃষ্টি আবদ্ধ গগনপানে।তার চাহুনি দিয়েই যেন ওই মেঘের পটে চিত্রলেপন ঘটিয়ে চলেছে।রোযার উপস্থিতি অনুভব করেছে আরো আগেই।তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই।এগিয়ে দোলনার বিপরীতে মোড়া পেতে বসলো রোযা, নিঃশব্দে।দীর্ঘ একটি মুহূর্ত পেরোলো নৈঃশব্দ্য আলোড়নে।যা ভেদ করলো রমণীর স্থির অতর্কিত আহ্বান।
– আমাকে একটা সুযোগ দেয়া যায়না?
নীরবতা।
– আমি দুঃখিত।
এবারেও নিরুত্তর হিমালয়।যথারীতি মৃদু তরঙ্গ তুলে দোলনা দুলে চলেছে।ধাতব ধ্বনি নীরবতার দেয়ালে করাঘাত তুলছে।রোযা দৃষ্টি নত করলো।
– সবকিছু কি আরো একবার নতুন করে শুরু করা যায়না?আমি জানি,তোমার জন্য বিষয়টি কঠিন, কঠিন নয় এক প্রকার অসম্ভব।তবুও,বেহায়া নির্লজ্জের মতন ভিক্ষা চাইছি।এটুকু দয়া আমায় করবে আসমান?
কোনো ভাবান্তর নেই, দৃষ্টিপাতও বিলীন নৈসর্গে।দ্বিধান্বিত হলো রোযা।পরক্ষণে তা ঝেড়ে এগোলো, হাঁটু মুড়ে বসলো দোলনার সামনে,উভয় হাত স্থাপন করলো মানবের উরুতে,আলতোভাবে।
– নিজের জন্য ভিক্ষা চাইছি আসমান।আমি যে নিজের অজান্তেই এই অন্তরকে উৎসর্গ করে ফেলেছি তোমার নামে।আমাকে একটু সুখ দেবে?
– না!
হৃদয় ক্ষ*ত বিক্ষ*ত হলো মুহূর্তেই।তবুও অবাধ্য আচরণ।একটুখানি অনুভূতি লাভের তাড়না।
– এই চুক্তির সম্পর্ককে বাস্তব সম্পর্কে বদলানো যায়না?
– যায়না।
– আমার অনুভূতি মূল্যহীন?
– হ্যাঁ।
– আসমান…
কাঠখোট্টা একরোখা জবাব রোযার অশ্রুপাত ঘটালেও তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে উঠলো সে, উঁচু হয়ে দুহাত বাড়িয়ে স্পর্শ করলো আসমানের মুখ।ইচ্ছা হলো মাস্কটি টেনে সরাতে,কিন্তু সে দুঃসাহস না করে নিজের দিকে ঘোরালো ওই কৃষ্ণগহ্বর।টলটলে অনুভুতিপূর্ণ দৃষ্টি মেলালো তাতে।সামান্যতম আশায়।
– তুমি অভিশাপ,এই অভিশাপের দংশনে আপন অস্তিত্ব মেটাতে চাই। তুমি প্রলয়,এই প্রলয়ের ঘূর্ণিপাকে নিজেকে বিলীন করতে চাই।তুমি বিনাশ, এই বিনাশের বিনাশিনী ঢাল হয়ে লড়তে চাই।আফসোস নেই,পরোয়া নেই,এই অনুভূতিতে হোক আমার সর্বনাশ,হোক আমার ধ্বংস।
চেয়ে রইলো কৃষ্ণগহ্বর,মুহূর্তের জন্য তাতে প্রজ্জ্বলিত অব্যক্ত অনুভবের উপলব্ধি করা গেলো।ঝাপসা দৃষ্টিতে তা অবলোকনে ব্যর্থই রইলো রোযা।পুনরায় জানালো,
– আমি বদল চাইনা।আমি এই কণ্টকাকীর্ণ পথের সঙ্গী হতে চাই।অমানিশার নিশাচর হতে প্রদোষের দীপ্তির সন্ধানের কারণ হতে চাই।এই জীবন,এর উদ্দেশ্য,এর প্রয়োজন,সবকিছুর অংশ হয়ে বাঁচতে চাই।অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছি বহু আগেই,তাতে ডুবে হারানোর ভয় এই অন্তরে নেই।
ধীরে ধীরে নিজের কপোল থেকে রোযার দুহাত সরালো আসমান।তাকালো,কঠোর এক শীতলতা নিক্ষেপ করে।
– আবেগ বড়ই বেহায়া এবং অনুভূতি মিথ্যাবাদী।
নিজেকে গুটিয়ে নিলো রোযা।তার জবাব সে পেয়ে গিয়েছে একটি বাক্যেই।তবুও আশ্চর্য্যজনকভাবে তার কান্না আসছেনা।অধিক শোকে হৃদয় পাথর হওয়া কাকে বলে আজ সে অনুভব করছে চরমভাবে।রীতিমত হাসতে ইচ্ছা হচ্ছে তার,প্রচণ্ড শব্দ করে এক পরিতৃপ্তিময় হাহাকারের হাসি।নিশ্চল হিমালয় নিগূঢ় দৃষ্টিপাত ঘটালো তার অভিমুখে।
– এই জীবন ঔপন্যাসিকের উপন্যাসের পাতা নয়।অনুভূতির জলোচ্ছ্বাসে জীবনতরী দিশা বদলাবে না কোনোদিন।লক্ষ্যে অবিচল,প্রতিশোধে উন্মত্ত এই প্রলয়ংকরী আত্মা।বহির্শক্তির আগমন এখানে নিষিদ্ধ।আমার আমি এবং এই আমির গন্তব্য,অসীম প্রেমের সংঘর্ষে কোনোদিনও টলবে না।
তাকিয়ে থাকলো রোযা,সম্মোহিত হয়ে।এই প্রত্যাখানের বেদনার মাঝেও যেন কোথাও এক টুকরো ভালো লাগা লেপ্টে রয়েছে।আসমান ঝুঁকলো, নিজের মাস্ক খুলে নিলো।ওই বিভীষিকাকে সঙ্গী করে তাকালো অনুভূতির মাঝারে,অনুভূতির বিনাশক।তার বজ্রকন্ঠ প্রতিধ্বনিত হলো সমস্ত ধরিত্রীজুড়ে।
– আমি আসমান,প্রাকৃতিক অসীমতার ধারক নই, ধ্বংসকাব্যের সূচনাযন্ত্র।এই অস্তিত্ব আবেগের বাহক নয়, মৃ*ত্যুপরোয়ানার দলিল।
রোযার পৃথিবী এক লহমায় শূন্যতার আচ্ছাদনে নিমজ্জিত হলো।তবে তাতে খেদ নেই,আফসোস নেই।শুধুই দীর্ঘশ্বাস।
প্রলম্বিত নীরবতা।অতঃপর উঠলো আসমান।
– আগামীকাল নিহাদের সঙ্গে যাবে।আর হ্যাঁ, বাবাকে কিছু জানিওনা।তার সঙ্গে আমি পরে কথা বলবো।
চলে যাচ্ছিল,কিন্তু অতর্কিতে মায়াবী অথচ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠটি তাকে থমকাতে বাধ্য করলো।
– আমার জন্য অনেক করেছ,আর নয়।
উঠে দাঁড়ালো রোযা।মুছে নিয়েছে নিজের অশ্রু।তার সঙ্গে সকল আবেগ অনুভূতিও। অধরে তার বর্তমানে ঝুলন্ত নির্লিপ্ত হাসি।মুখোমুখি হলো সে অনুভূতিহীনতার।
– এবার আমাকে মুক্তি দাও আসমান,সত্যিকারের মুক্তি।
দ্বিধান্বিত হয়ে চেয়ে থাকলো হিমালয়।এই রমণী তাকে হতবাক করেছে।রোযা মাথা হেলিয়ে বললো,
– আমার জীবন,কতদিন অন্যের ভরসায় বাঁচবো?দাদুর জন্য নিজেকে চুক্তিতে বেঁধেছি।আর প্রয়োজন নেই।এই শৃঙ্খলের সুরক্ষাভেদ করে আপন পথে চলতে চাই।নিহাদের সঙ্গে নয়,আমি নিজেই আগামীকাল চলে যাবো।
– কোথায় যাবে?
হাসলো রোযা।বিনা কারণেই আকর্ষণীয় ঠেকলো তা।
– আমার জন্য চিন্তা করছো? করোনা।আমি নিজের ব্যবস্থা করতে জানি।খোদা রয়েছেন মাথার উপরে।তিনি রিযিক দেবেন।
আসমান নির্বিকার চেয়ে থাকলো।তবুও তার অভিব্যক্তিতে সামান্য পরিবর্তন দৃষ্টি এড়ালোনা।ওই ক্ষীণ অনুভূতিই যেন রোযাকে খুশি করতে যথেষ্ট।বিচ্ছেদ বিরহ ভুলে সে এগোলো।ব্যক্ত করলো,
– তুমি আমার জন্য যা করেছ তার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কোনোদিন শেষ করা যাবেনা।তবুও বলছি।ধন্যবাদ আসমান।বলেছিলে অতীত ভুলে যেতে,কিন্তু অঙ্গীকার করছি কোনোদিন ভুলবোনা।আমি বাঁচবো,কারো জন্য না হলেও নিজের জন্য,নিজের মতো করে।নিজের পাওয়া না পাওয়া পূরণ করবো,স্বপ্ন দেখবো সুখের।এই স্থানে কাটানো মুহূর্ত,বাবা,চারুলতা,নিহাদ এবং তুমি…আমার সুখস্মৃতি হয়ে সর্বদা আমার অন্তরে থাকবে।
পিছিয়ে যেতে আরম্ভ করলো রোযা,উদ্দেশ্য প্রস্থান।তবুও আসমানের পানে দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত তার।যেন অন্তিমবার অবলোকন করে নিচ্ছে প্রাণভরে।চেয়েই রয়েছে আসমান,এই প্রথম নিজেকে সম্মোহিত অনুভব করছে মুহূর্তের গভীরতায়।বারান্দা ত্যাগ করার আগে একবার ঘুরলো রোযা,ওই নিগূঢ় আঁধারমাখা নয়নে চেয়ে মৃদু হেসে ঘোষণা করলো,
– কোনো আফসোস নেই।তোমার ঐ কলঙ্কে আমি দেখেছি আমার ধ্বংস….. এটুকু মনে রেখো চাঁদ।
চলে গেলো রোযা।একবারও পিছন ফিরলোনা।আজ থেকে সে মুক্ত, চিরমুক্তি তার পদতলে।
চেয়ে থাকল আসমান,একই ভঙ্গিতে। ধীরে ধীরে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো তার উভয় হাত।চেপে ধরলো মাথা, ধপ করে বসে পড়লো দোলনায়। বুজে নিলো দৃষ্টি, গলাধঃকরণ করলো সকল অবলা শব্দ।
পরদিন।
বিলাল রেমান জরুরী মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়ে হলরুমে নামলেন।ফরমাল বুট পায়ে বাঁধতে বাঁধতে মিষ্টি ধ্বনিতে মুগ্ধ হলেন।
– বাবা আপনার কফি।
হেসে মুখ তুলে চাইলেন।রোযার হাস্যোজ্জ্বল মুখ তার দিনের সূত্রপাত যেন শুভ করে তুললো। মগ হাতে নিলেন।
– থ্যাংক ইউ মামণি।
– আমি বেঁধে দিচ্ছি ফিতা।
বলে হাঁটু ভাঁজ করে বসে বুটের ফিতা সুন্দরমত বাঁধলো রোযা।
– বাইরে যাচ্ছি।কিছু আনতে হবে?
– না বাবা,দরকার নেই।
– তোমার কিছু লাগবে?
হাসলো রোযা।মাথা দুলিয়ে জানালো,
– হ্যাঁ,আপনার দোয়া।
– তা তো অবশ্যই করি সবসময়।দোয়া করি তুমি যেন জীবনে অনেক অনেক সুখী হও।
রোযার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন বিলাল।চোখ বুজে তা গ্রহণ করলো মেয়েটি।
– সব কিছু ঠিক আছে তো মামণি?
– সবকিছুই ঠিক আছে। আপনি যান,তাড়াতাড়ি ফিরবেন কিন্তু।বেশি রাত করবেন না।এবং সাবধানে থাকবেন সবসময়।
বিলাল রেমানের কেমন যেন অনুভূত হলো।নিজের অন্তরের খেদ নিজেই বুঝে উঠতে পারলেন না। সময়ও ক্ষেপণ করা যায়না।মিটিংয়ের দেরী হয়ে যাচ্ছে, অতি জরুরী তা কে বি গ্রুপের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার জন্য।তাই উঠে দাঁড়ালেন।
– আই উইশ ইউ আ প্রোডাকটিভ ডে।
রোযার কপালে স্নেহ একে তিনি বাইরে গেলেন,তাকে বিদায় জানালো রোযা,হাসি মুছলোনা তার এক মুহূর্তের জন্যও।
বিলাল রেমান চলে যাওয়ার ঠিক আধ ঘণ্টা বাদেই নিজের ব্যাগপত্রসমেত মারবেল ভবনের নিচে অপেক্ষারত গাড়ীর সামনে এলো রোযা।আশেপাশের গার্ড এবং দারোয়ান ভাবলো সে বুঝি নিজের বাবার বাড়ি যাচ্ছে।রোযার সাহায্যার্থে তাকে সঙ্গ দিচ্ছে নিহাদ।যদিও উভয়ে যাবে ভিন্ন ঠিকানায়, তবুও যাত্রা একইসাথে।চারুলতা এসেছে বিদায় জানাতে।মেয়েটি মুখ ফুটে কোনোদিন স্বীকার না করলেও রোযা নিশ্চিত সে সবই জানে।তাদের চুক্তির বিয়ে সম্পর্কেও।
নিহাদ গাড়ির ডিকিতে ব্যাগপত্র রাখতে রাখতে চারুলতা রোযাকে টেনে নিলো একপাশে।তার হাতে একটি কার্ড গুঁজে বলল,
– এটা রাখো।আমার বান্ধবী, ফারিয়া।ওর সঙ্গে যোগাযোগ করো।ওর ক্যাফে বিজনেস আছে,তোমার কাজ হয়ে যাবে।
অন্য সময় হলে হয়ত রোযার চোখে জল জমতো, কিন্তু আজ জমলোনা,বরং অধরে ফুটলো হাসি। কার্ডটি নিয়ে চারুলতার হাত ঝাকিয়ে বলল,
– থ্যাংক ইউ চারু।
– ভালো থেকো আরিয়া।
– এখন অন্তত আমার আসল নামটা বলতে পারো।
– ভালো থেকো…রোযা!প্লীজ ভালো থেকো!
অতর্কিতে তাকে জড়িয়ে ধরলো চারুলতা।তার পিঠ চাপড়ে রোযা হাসিমাখা কন্ঠে অনুরোধ করলো,
– আসমানের খেয়াল রেখো।
চারুলতা আর কিছু উচ্চারণ করতে পারলোনা।রোযা বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।ড্রাইভিং সিটে নিহাদ,আজ সে বাইকের বদলে গাড়ি চালাচ্ছে ব্যাগপত্র বহনের উদ্দেশ্যে।এক নজর দৃষ্টি মেলালো সে রোযার সঙ্গে।
– চলো নিহাদ।
– আর ইউ শিওর?আরেকবার ভেবে…
– আমি নিশ্চিত,মুক্তি বড্ড প্রশান্তিময়।
চালু হলো ইঞ্জিন, ধীরে ধীরে মারবেল ভবনের সামনের সড়কে এসে পড়ল গাড়ি।অতঃপর এগোলো সামনে, ক্রমেই দূরে, আরো দূরে।
ডার্কসাইড পর্ব ৩১
চেহারাও ঔজ্জ্বল্য থাকলেও বুক ভাসলো হাহাকারে।অদৃশ্যমান তা লোকচক্ষুতে।একদিন ঠিক যেভাবে এই নীড়ে আগমন ঘটেছিল অতর্কিতে,আজ ঠিক সেভাবেই সকল বন্ধন ছিন্ন করে রোযার জীবন চলেছে এক অজানার উদ্দেশ্যে।
আজ থেকে রোযা এবং আসমানের পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অনুধাবনটি এতটাই অসহনীয় ঠেকলো যে জানালায় তাকিয়ে নিজেকে ভবিষ্যতের চিন্তায় বিলীনে বাধ্য হলো রোযা।সমাপ্তি ঘটেছে এক মিথ্যায় মোড়ানো সম্পর্কের,নিঃশেষ হয়েছে চুক্তি,পরাজিত হয়েছে অনুভূতি।
