ডার্কসাইড পর্ব ৫৬
জাবিন ফোরকান
উষ্ণতায় মোড়ানো এক আবেশ।শরীরজুড়ে কেমন সুখ সুখ অনুভূতি।জানালা গলে চুঁইয়ে আসা রোদের হাতছানি।এক স্নিগ্ধ শীতল সকাল।বালিশে মাথা ঠেকিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে রোযা,কোমল বিছানা এবং চারিপাশে আরামদায়ক কুশনের অস্তিত্ব তার নিদ্রাকে ভঙ্গ হতে বারংবার বাঁধা দিচ্ছে।আড়মোড়া ভাঙলো খানিক,পরক্ষণেই আবার বালিশে মুখ গুঁজে নয়ন বুজল।নাকে মৃদু এক ঘ্রাণ ভেসে আসছে,বাইরের হিম প্রকৃতির পুষ্পরাজির ঘ্রাণ?চমৎকার।রোযা অনুভব করতে পারছে,উষ্ণতা তার ঘাড় ছুঁয়েছে, অতঃপর পিঠ বেয়ে আরো নিচে।
সহসাই দৃষ্টি মেললো রোযা, মাত্রই নিদ্রার মোহময় আবেশ থেকে বেরিয়েছে।নিজের পিঠে অনুভব করা উষ্ণতা কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়,বাস্তবিক।কোমল স্পর্শ চিনতে তার একটুও ভুল হচ্ছেনা!শিরদাঁড়া বেয়ে ক্রমশ নেমে যাচ্ছে একজোড়া অধর,বিছিয়ে দিচ্ছে আপন স্নেহের আচ্ছাদন।শিউরে উঠলো রোযার সম্পূর্ণ শরীর।ঠিক শীতে নয়,বরং ওই স্পর্শে।বালিশে আঁকড়ে বসলো তার হাত,মুখ গুঁজে মৃদু স্বরে বিড়বিড় করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– আ…আসমান…কি করছো?
কোনো জবাব এলোনা। আপন অনুভবের জগতে ব্যাস্ত স্নেহের কারিগর।তার হাতের ছোঁয়া খেলে যাচ্ছে অঙ্গ প্রত্যঙ্গজুড়ে,থেকে থেকে কাপছে শরীর তার গভীর ছোঁয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে।এই নিগূঢ়তা শারীরিক শক্তি শোষণ করে নিচ্ছে যেন ক্রমশ।জোরপূর্বক নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রোযা বললো,
– সকালে ঘুম ভাঙলে শুভ সকাল বলতে হয়।
আসমান সামান্য থমকালো,তারপর তার ভার জেঁকে বসলো রোযার অবয়বে।তৎক্ষণাৎ উষ্ণতায় ছেয়ে গেলো জ্যোৎস্নার সমস্ত অস্তিত্ব।তার কাঁধ থেকে বাহু পেরিয়ে কব্জিতে এসে ঠেকলো আসমানের প্রগাঢ় স্পর্শ,আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে গেলো লম্বাটে শিরা উপশিরাপূর্ণ পুরুষালি আঙুল।তারপর কপোলে অধরের ছোঁয়া,
– শুভ সকাল আমার জ্যোৎস্না।
রোযার চিবুক ছুঁয়ে নিকটে টেনে অধরে শুষ্ক কয়েক স্পর্শ বিলিয়ে দিলো আসমান।খিলখিল করে হাসলো রোযা,
– তুমি সত্যিই আমার আসমান তো?অন্য কেউ ভর করেনি তোমার অস্তিত্বে,নিশ্চিত?
– হুম….এভাবে কেনো বলছো?
আবারো রোযার অধর স্পর্শ করতে গেলো আসমান, কিন্তু এবার অর্ধাঙ্গিনী তাকে মাঝপথেই থমকাতে বাধ্য করলো।হাত বাড়িয়ে তার এলোমেলো হয়ে থাকা কেশরাশি গুছিয়ে দিতে দিতে বিড়বিড় করলো,
– তুমি এত দুষ্টু হতে পারো জানা ছিলোনা চাঁদ।
– ইউ মিন….রোম্যান্টিক?
রোযাকে নিকটে টেনে কাঁধে মাথা গুঁজলো আসমান, যথারীতি তার ওষ্ঠ অর্ধাঙ্গিনীর মুক্ত কাঁধে ভালোবাসা বিলাতে ব্যাস্ত।মৃদু শব্দ তুলে হাসলো রোযা,তারপর বললো,
– আহ…আসমান,অনেক হয়েছে এবার ছাড়ো।
– একটা দিনেই হাঁপিয়ে গেলে?
– হ্যাঁ,গিয়েছি।আমি ক্লান্ত।আমার কাজ আছে।সমাবেশে যেতে হবে।
– হাঁটতে পারবে নাকি কোলে তুলে নিয়ে যাবো?
আসমানকে দূরে ঠেলছিলো রোযা,কিন্তু অপ্রত্যাশিত প্রশ্নটি শুনে এক লহমায় তার সম্পূর্ণ শরীর স্থবির হয়ে পড়লো।অদৃশ্যমান লালিমায় চেহারা টকটকে বর্ণ ধারণ করলো,কানের লতি উষ্ম হয়ে উঠল শীতল আবহাওয়া নয় বরং লজ্জাবোধে।সটান আসমানের কাঁধে সপাসপ চাপড় বসাতে থাকলো রোযা।
– ইডিয়ট!কি বলতে চাও তুমি হ্যাঁ?আমি তোমাকে ভদ্র ছেলে ভেবে মারাত্মক ভুল করেছি।ঠিকই নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিচ্ছ,গিরগিটি কোথাকার!
হাসলো আসমান,রোযার উভয় হাত পাকড়াও করলো নিজের মুঠোয়।দৃষ্টি মিলিয়ে তীর্যক হাসিমাখা অধরে শুধালো,
– তুমিই বললে তুমি ক্লান্ত,তাই কোলে তোলার প্রস্তাব দিলাম।এখন তুমি সেটাকে ভিন্ন অর্থে নিলে আমার দোষ কোথায়?ইউ হ্যাভ ডার্টি মাইন্ড,নট মি।
তিরতির করে কাপলো রোযার অধর,ক্রোধে।ভ্রু কুঁচকে বললো,
– তুমি ইচ্ছা করে আমাকে জ্বালাতন করছো তাইনা?
ঝুঁকে রোযার নাকে নিজের নাক আলতোভাবে ঘষে আসমান আবেশিত কন্ঠে জানালো,
– হাউ কান্ট আই?ইউ আর সো কিউট হোয়েন ইউ আর অ্যাঙরি!
– ন্যাকামি করার আর জায়গা পাওনা?
– তুমি কি চাও?অন্য কারো স্ত্রীর সঙ্গে ন্যাকামি করি?তুমি চাইলে তাও সম্ভব,শুধু বলে দাও কার সঙ্গে করতে হবে।
– গর্দান কে*টে নে*বো আসমান তোমার!
সত্যি সত্যি রোযার হাত আছড়ে পড়লো আসমানের ঘাড়ে, কুঁকড়ে গেলো সামান্য বেচারা,তারপর সশব্দে হেসে উঠলো।
– আউচ…হাহা…
– ঢং করো তুমি,ঢং?
– না না,সত্যিই ব্যথা পেয়েছি।
– ইশ,কি*লিং মেশিন নাকি সামান্য ঝটকায় ব্যথা পায়!খুউব বিশ্বাস করলাম!
আসমান ঝুঁকলো,নিজের মাথা কাত করে গ্রীবার অংশ দেখালো।স্বর্ণালী রোদের প্রতিফলনে তার অতি শুভ্র উজ্জ্বল ফ্যাকাশে ত্বকজুড়ে লালচে চিহ্নের ছড়াছড়ি স্পষ্ট।প্রসারিত দৃষ্টি মেলে দৃশ্যপটে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো রোযা।আসমানের বিনোদিত চঞ্চল দৃষ্টি মিলিত হলো তাতে।
– জংলী বিল্লী!
বাকরুদ্ধ রোযার সহ্যসীমা এটুকুই ছিলো।এক ধাক্কায় সে আসমানকে ঠেলে সরালো নিজের নিকট থেকে।অতি দ্রুত বিছানা ছাড়ার প্রচেষ্টায় কম্বলে পা জড়িয়ে হুড়মুড় করে মুখ থুবড়ে পড়ল মেঝেতে।পিছন থেকে আসমানের অট্টহাসির ধ্বনি ভেসে আসতে থাকলো।
– তুমি একটা কমপ্লিট বিনোদন প্যাকেজ।
হাসতে হাসতে বিছানা থেকে উঠে এলো আসমান, মেঝে থেকে কম্বলসমেত রোযাকে জড়িয়ে কোলে তুললো।বেচারী টুকটুকে হয়ে তার ঘাড় জড়িয়ে মুখ লুকিয়ে থাকলো।
– শেষমেষ তোমাকে সেই কোলেই তুলতে হলো,হাহ?
– মেঘতীরে ফিরি একবার,আমি বাবার কাছে তোমার নামে নালিশ করবো।
রোযাকে শক্তভাবে নিজের মাঝে আগলে নিয়ে আসমান ফিসফিসে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– কি নালিশ করবে শুনি?তোমাকে জ্বালাতন করেছি সেটা?আমি পিছিয়ে থাকবো কেনো তাহলে?আমিও জানাবো,কিভাবে জংলী বিল্লীর মতন….
– শাআআট…. আআআপ!
রোযার চিৎকারে তালুকদার নিবাসের পুরাতন ছাদের চালে বসে রোদ পোহাতে থাকা একযুগল কাক দম্পতি আতঙ্কিত হয়ে উড়াল দিলো।মাঝআকাশে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করলো পাখি দুটো,
– কাকাকা….( মাইয়ামানুষের ঢংয়ে টিকিনা! )
– কাকা….কাকাকা…( মানুষের জাতটাই খারাপের খারাপ! )
– উউ…..রোযা আপুউউ!
ডাকে কোনোপ্রকার মনোযোগ নেই রোযার।একদৃষ্টে সে তাকিয়ে রয়েছে দিগন্তের পানে।দৃষ্টিজুড়ে অব্যক্ত এক অনুভূতি খচিত,এক মোহ,এক আবেশ।কেমন ধোঁয়াটে বাসনা যেন।কি এমন ভাবছে সুগভীর মনোযোগে তা ভেবে কূলকিনারা করতে পারছেনা রোযার আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাবিহা,অভিষেক এবং আরিয়ান।
– দিবাস্বপ্ন দেখছে নাকি?
– ঘুমিয়ে আছে মনে হচ্ছে।
– ঘোড়ার মতন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে?চোখ খুলে?
অভিষেকের নিদারুণ বিস্ময় অতিক্রম করে ক্যামেরাহাতে অনির্বাণ অতর্কিতে পিছন থেকে রোযার নিকটে এসে হালকা এক চাপড় বসালো তার মাথায়।তৎক্ষণাৎ ভাবনার দুনিয়া থেকে বাস্তবে পদার্পন করলো রোযা,মুখ ফস্কে বলে বসলো,
– জংলী বিল্লী!
তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সকলে,
– কিসের বিল্লী?দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুকুর বিড়ালের স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?
আরিয়ানের প্রশ্ন রোযার বাকশক্তি কেড়ে নিলো ক্ষণিকের জন্য।পরমুহুর্তেই সে চারিপাশে তাকিয়ে কন্ঠ পরিষ্কার করে বললো,
– অ্যাহেম,দুঃখিত।কোথায় যেন ছিলাম আমরা?ওহ হ্যাঁ,মাইক্রোফোন কোথায় অভিষেক?
দ্রুত কাজে ব্যাস্ত হয়ে যাওয়া রোযার দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো সাবিহা।কোমরে দুহাত রেখে আপনমনে বিড়বিড় করলো,
– ব্যাপারটা কি হলো?
– বিবাহিত মানুষজনের মাঝে মাঝে শর্ট টাইম দিবাস্বপ্ন হতে পারে,চিন্তার কিছু নেই।
পাশ থেকে জবাব ভেসে আসতেই সাবিহা ঘুরে দেখল অনির্বাণ নিজের ক্যামেরার লেন্স পরিবর্তন করছে।একনজর পর্যবেক্ষণ করলো সে সাংবাদিকের কাজ।তারপর দৃষ্টি সরু করে প্রশ্ন ছুড়লো,
– আপনি এক্ষেত্রে খুব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মনে হচ্ছে?
মাথা ঘুরিয়ে সাবিহার দিকে তাকালো অনির্বাণ। বললো,
– আমি দুগ্ধপোষ্য শিশু নই।অভিজ্ঞতা?তা একটু আধটু আছে বৈকি।
বিব্রত বোধ করলো সাবিহা,এমন সরল জবাব প্রত্যাশা করেনি।দৃষ্টি ফিরিয়ে বিড়বিড় করলো,
– আপনি বলেছিলেন আপনার কোনো পিছুটান নেই।
কিছুটা অভিমানী শোনালো সাবিহার কন্ঠস্বর,তাতে দৃশ্যমানভাবে থমকালো অনির্বাণ।ভ্রু কুঞ্চিত করে চাইলো মেয়েটির উদ্দেশ্যে।কপোলে টোলের উদ্ভব ঘটিয়ে তার অধরে ফুটলো তীর্যক হাসির রেখা।
– তার অর্থ এই না যে আমার কোনো অতীত ছিলোনা।রাইট?আই ডেটেড এনাফ।
– ভালো।
সাবিহা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উল্টো ঘুরল,আর কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া করলোনা।বাকিদের উদ্দেশ্যে এগোতে গেলো সে,কিন্তু সহসাই তার কব্জি চেপে ধরলো অনির্বাণ।বিস্মিত দৃষ্টি ফিরিয়ে একনজর ধবধবে সাদা ওভারসাইজড হুডি পরিধানে সাংবাদিক অনির্বাণ আহমেদকে পর্যবেক্ষণ করলো সাবিহা, তারপর তাকালো তার হাত ধরে রাখা শক্তিশালী বাহুর বাঁধনের দিকে।অনির্বাণ স্পর্শ পরিত্যাগের কোনো লক্ষণ প্রদর্শন করলোনা,বরং তার আঙুলসমূহ দ্বিগুণ শক্তিতে চেপে বসলো সাবিহার কব্জিজুড়ে।তীর্যক হাসি তার ক্রমেই বিস্তৃত হলো।
– আই অ্যাম সিঙ্গেল নাউ,আর ইউ ইন্টারেস্টেড?
তড়িৎ খেলে গেলো সাবিহার শরীরে,সজোরে এগোলো তার মুষ্টিবদ্ধ হাত।কিন্তু একেবারে অনির্বাণের মুখের সঙ্গে এক ইঞ্চি ব্যবধানে থামলো তা।বেচারা ভড়কে গেলো,দৃষ্টিতে ফুটলো বিস্ময়।অতর্কিতে সাবিহার হাতখানি ছেড়ে দিলো।মেয়েটি নিকটে সরলো,তারপর দৃপ্ত কন্ঠে বললো,
– এতদিন হয়ত ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে পাকা খেলোয়াড় হয়েছেন।প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করে ধরাশায়ী হতে না চাইলে তাই থাকুন,মিস্টার জার্নালিস্ট।
এটুকুই।উল্টো ঘুরে বাকিদের দিকে চলে গেলো সাবিহা। খেয়ালও করলোনা তার অবয়বে কতক্ষন যাবৎ দৃষ্টি বিছিয়ে রইলো অনির্বাণ।সাংবাদিকের তীর্যক হাসিখানি ক্রমশই সন্তুষ্টির কোমল স্নিগ্ধ হাসিতে রূপান্তরিত হলো।নিজের চুলে আঙুল বুলিয়ে অতঃপর সে পুনরায় ক্যামেরায় মনোযোগ দিলো।
অপরদিকে যাত্রার সম্মুখভাগে এলো রোযা।নিজের মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করেছে সে।অপ্রয়োজনীয় সকল চিন্তা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র লক্ষ্যের চিন্তা। সড়কজুড়ে জমায়েত হওয়া অগুনতি মানুষ তার সম্পূর্ণ শরীর এক নব্য উদ্যমে পরিপূর্ণ করলো।সামনে তাকালো সে দৃপ্ত দৃষ্টিতে।পুলিশের ব্যারিকেড নজরে আসছে,যদিও তারা নিজেরাও জানে এই ব্যারিকেড কয়েক সেকেন্ডও বিদ্রোহী জনতাকে রোখার সামর্থ্য রাখেনা।মাইক্রোফোন তুলে রোযা ঘোষণা করলো,
– আজ আমরা সকলে আমাদের বোনের র*ক্তে*র মূল্য আদায়ে একত্রিত হয়েছি।দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি আমরা, সফলতা হয়ত আমাদের দ্বারপ্রান্তে। হাল ছেড়ে আপোষ করার কোনো প্রশ্নই আসেনা।স্বরাষ্ট্র দপ্তরে আজ আমাদের দখল হোক।জয়ী হোক বিদ্রোহ।
বিপরীতে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল সম্পূর্ণ স্থান।রোযা এক মুহুর্ত অপেক্ষা করলো,তারপর বললো,
– আজ আমাদের মাঝে রয়েছেন আমাদেরই মা, এক দুঃখিনী সন্তানহারা মা,এক রত্নগর্ভা যার সন্তান কোনোদিন অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেনি। আমি চাইবো তার কথা আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি এবং হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করি।
তৎক্ষণাৎ নীরবতায় ছেয়ে গেলো চারিপাশ।রোযা পাশে তাকিয়ে অহনার মাকে ইশারা করলো,সাবিহা এবং অভিষেকের সহায়তায় তিনি এগোলেন।কম্পিত হাতে ধরলেন মাইক্রোফোন।সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।বৃদ্ধার ভগ্ন কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হলো চারিপাশে।
– আমার আম্মাজানরে ওরা নিষ্ঠুরভাবে মা*র*ছে!কেউ নাই এই দুনিয়ায় আমার আম্মাজান ছাড়া, একলা অসহায় আমি। সব থেইক্যা বড়ো আফসোস আমার আমি বাঁইচা থাকা সত্ত্বেও আম্মাজানরে ওরা বেওয়ারিশ উপাধি দিলো!একটা বারের জন্যও সন্তানের লা*শটু*কুন দেখার ভাগ্য পর্যন্ত এই অধম মায়ের হয়নাই!
থামলেন তিনি মুহূর্তের জন্য,অদ্ভুতভাবে তার ভগ্ন কন্ঠও কেমন যেন দৃপ্ত হয়ে উঠল,এক দুর্বার শক্তির আস্ফালন তাতে।
– মুই মুক্কুশুক্কু মানুষ,অতশত বুঝিনা।কিন্তু এইটুক বুঝি, দেশের আমলা মন্ত্রীরা অবশ্যই জনগণের ভালার জইন্য মসনদে বসে।কিন্তু এইডা কেমন মসনদ যে মসনদে জনগণের র*ক্ত লাইগ্যা থাকে?
নিস্তব্ধপুরী।জবাব হয়না এই প্রশ্নের।টপটপ করে অশ্রু গড়ালো বৃদ্ধার কপোল বেয়ে,কাপতে কাপতে বললেন,
– এই দেশের জনগণ হিসাবে আমার অধিকার চাই আমি, আমার আম্মাজানের খু*নে*র বিচার চাই। আম্মাজানের বিচার আদায়ে তোমরা রাস্তায় নামছো, তোমরাও আমার সন্তান আব্বা আম্মারা।তোমাগো উপরেও ওই মসনদের মালিকেরা গু*লি চা*লাইলো!চইলা গেলো কেউ,আরেক মায়ের বুক খালি কইরা।আল্লাহ…. তুমি কেমনে সহ্য করো এই অবিচার?
অশ্রুতে পরিপূর্ণ হলো অগুণতি নয়ন।এক সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ সকলের অন্তরকে ক্ষ*ত বিক্ষ*ত করেছে।অহনার মাকে পাশ থেকে আগলে নিলো রোযা,সামলাতে চাইলো।তার বুকে মাথা ঠেকিয়ে তিনি বলে গেলেন,
– সঠিক বিচার চাই।আমার আম্মাজান,আর যেসব মায়ের বুক খালি হইসে সবার বিচার চাই!কি জানি এক নেমেসিস নেমেসিস করে সবাই? সেয় নাকি একাই বিচার করে?ক্ষমতার বিরুদ্ধে যু*দ্ধ করে?আজকে সেই নেমেসিস কোথায়?সে কি পারেনা এই অনাচারের বিচার করতে?সবার মুখে আজকে তালা কেনো?আসলে কেউই নাই,নিজের লড়াই নিজেদেরই লড়তে হইবো।ওই ক্ষমতার মসনদ ভাইঙ্গা দেও তোমরা, তোমাগো সাথে আমি আছি।
তৎক্ষণাৎ গর্জে উঠলো যেন সম্পূর্ণ গণজোয়ার।ক্রমাগত শ্লোগানধ্বনি এবং অভিসম্পাতে প্রকম্পিত আকাশ বাতাস।অহনার মা ভীষণ মুষড়ে পড়েছেন, তাকে একপাশে সরিয়ে নেয়া হলো।মাইক্রোফোন তুলে রোযা নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে ঘোষণা দিলো,
– তবে আরম্ভ হোক এই ন্যায়ের যাত্রা,ভেঙেচুরে যাক ওই ক্ষমতার ব্যারিকেড।আরো একবার জয়ী হোক বিদ্রোহ।
রোযার বক্তব্যের সমাপ্তির সাথে সাথে এগোতে আরম্ভ করলো বিশাল মিছিল।কানায় কানায় পরিপূর্ণ সড়ক, কোথাও কোনো তিল ধারণের স্থান নেই।সকলের সামনে এগোলো রোযা,সঙ্গী আরিয়ান এবং অভিষেক।পিছনেই সাবিহা,আর অহনার মা।ক্রমান্বয়ে বাকি সকলে।রোযার হাতে লম্বাটে একটি রডের দণ্ড।সেটা তুলে সে ইশারা করলো সম্মুখের ব্যারিকেডের ওপাশের পুলিশবাহিনীর দিকে।চিৎকার করে বললো,
– আপনারা প্লীজ সরে যান, ন্যায়ের পক্ষে থেকে আপনাদের পুরুষত্বের প্রমাণ দিন।আমরা আপনাদেরই ছেলেমেয়ে,ভাইবোন।এদের বুকে তামার বু*লে*ট ঠু*ক*তে যদি বিবেক না কাপে তবে আপনারা সকলে একেকটা অমানুষ!
অগ্নিকন্যা,তার সঙ্গী শত সহস্র সৈনিক।প্রত্যেকে একেকটি জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড যেন।যাদের প্রতি ঠিক ভীতি নয়, বরং প্রগাঢ় সম্মান অনুভূত হয়।পুলিশবাহিনী একে অপরের মাঝে দৃষ্টি বিনিময় করলো,অতঃপর কোনোপ্রকার নির্দেশ ব্যতীতই একে একে সরে দাঁড়ালো ব্যারিকেডের নিকট থেকে।অন্তিম পুলিশ সদস্য অবিশ্বাস্যভাবে সামরিক ভঙ্গিতে স্যালুট ঠুকলো মিছিল লক্ষ্য করে, বললো,
– গুঁড়িয়ে দিন।
এটুকুই।তীর্যক হাসলো রোযা,দৃষ্টি টলটলে হলো তার গর্বে।সকলের সামনে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেলো, জোরালো লাথি হাঁকলো ব্যারিকেডে।ধাতব দেয়াল প্রথমে টললোনা।একের পর এক আগ্রাসী আ*ক্র*মণ।ভেঙে গেলো ক্ষমতার দেয়াল।দুঃসাহসী বিদ্রোহীরা ছুটে এলো। একে একে আছড়ে পড়লো যেন সমুদ্রের ঢেউ হয়ে,ভাসিয়ে নিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা।দৃপ্ত দৃষ্টি মেলে সবটা পর্যবেক্ষণ করে গেলো রোযা।
কিছুক্ষণ পর মিছিল মূল সড়কে এলো,পূর্ণ হলো ভিন্ন এক শ্লোগানে।আশেপাশের সকল মানুষের হৃদয়ে যেন ক্ষণে ক্ষণে প্রকম্পন ধরিয়ে দিলো এমন ন্যায়ের আহ্বান।
– নেমেসিস….গর্জে ওঠো!নেমেসিস….আবার মা*রো!
– নেমেসিস….বারংবার….নেমেসিস…. চাই আবার!
উত্তাল রাজপথ।বিস্তৃত গগন পেরিয়ে উত্তপ্ত পাতালপুরী অবধি গোটা ধরিত্রীর বুকে প্রকম্পন তুলে ধ্বনিত হয়ে চলেছে উন্মাদনা জাগানিয়া শ্লোগান।বুকে কাপন ধরিয়ে দেয়া,অন্তরে বি*স্ফো*রণ ঘটিয়ে দেয়া এক প্রতিশোধবাসনার উপাখ্যান।আজ কোনো বিরাম নেই,নেই কোনো শৃঙ্খল।ন্যায় নিজে থেকে ধরা দেয়না, তা আদায় করে নিতে হয়।সেই ন্যায়ের কান্ডারী যেন ক্ষমতার র*ক্তচক্ষুকেও উপেক্ষা করে ক্ষমতার চাইতেও ক্ষমতাবান হয়ে দন্ডায়মান, প্রতিশোধের মূর্ত প্রতীক হয়ে।
– নেমেসিস!নেমেসিস!
সুউচ্চ ভবনের ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে প্রবল বায়ুর ঝাপটার মাঝেও নিচের সড়কের পিপীলিকার মতন দৃষ্টিগোচর হওয়া সংগ্রামীদের আহত পশুর ন্যায় জোরালো হুংকার যেন সমস্ত অস্তিত্বজুড়ে প্রতিহিংসার বা*রুদ ছড়িয়ে দেয়।
কে এই নেমেসিস?
জানা নেই।
কোথায় এই নেমেসিস?
জানা নেই।
নেমেসিস আদও সত্য?
জানা নেই।
তবুও আজ উত্তাল গণসমুদ্র আহ্বান জানিয়ে চলেছে এক কিংবদন্তীকে।যুগে যুগে যত অবক্ষয় ঘটবে,পর্দার অন্তরাল থেকে নেমেসিস তার বিনাশ ঘটাবে। ধ্বংসকের বিনাশক সে,ক্ষমতার ত্রাস।
এক অসহনীয় বাসনা অনুভূত হলো আসমানের অন্তরে। শ্লোগানের তেজ দ্বিধার দেয়ালকে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে।এহেন প্রার্থনা উপেক্ষা করা দায়।এক সর্বহারা জননীর অশ্রু বিসর্জন দগদগে হয়ে খচিত হয়েছে তার হৃদয়ে।কে নেমেসিস?সে নাকি ভিন্ন কেউ তার পরোয়া আসমানের আদও নেই।
আড়াল থেকে আর নীরব পর্যবেক্ষণ নয়,এবার পালা এই উন্মাতাল আহ্বানে সাড়া দেয়ার।
ক্ষমতার গদি উপড়ে ফেলতে আরো একবার জাগ্রত হওয়ার পালা নেমেসিসের।
হাসপাতালের কেবিনটি আজ আলোকোজ্জ্বল।ভালোই রোদ উঠেছে।এই রোদের তেজ নেই।এক স্নিগ্ধ আবহ চারিপাশজুড়ে। কাঁচের দেয়াল ভেদ করে বাইরের বিস্তৃত সড়কের পানে নিবদ্ধ নিহাদের দৃষ্টি। হুইলচেয়ারে বসা, কোলের উপর ব্যান্ডেজকৃত হাত দুখানা গুছিয়ে রাখা।পাশে দাঁড়ানো চিকিৎসক একটি ক্লিপবোর্ড হাতে নিগূঢ় পর্যবেক্ষণ করছেন।অপরদিকে একজন নার্স আলতোভাবে নিহাদের স্থবির হয়ে থাকা পা টেনে নড়াচড়ার চেষ্টায় লিপ্ত আছে।ফাঁকা সড়ক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচে তাকালো নিহাদ।
পাথরের মতন শক্ত লাগছেনা পা দুটো বর্তমানে,সামান্য যেন অনুভূতি অনুভব হচ্ছে।নার্সকে সহযোগিতা করল সে, আপ্রাণ প্রচেষ্টায় নিজেও সামান্য নাড়তে সক্ষম হলো।ধীরে ধীরে ব্যায়াম করানো হচ্ছে তাকে।চিকিৎসক প্রায় দশ মিনিট যাবৎ নিগূঢ় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে পরবর্তীতে বললেন,
– হুম,গুড।ইউ আর রিকভারিং ফাস্টার দ্যান এক্সপেক্টেড।মনোবল বজায় রাখুন।যথাযথ থেরাপি এবং রিহ্যাবিলিটেশনের মাধ্যমে হয়ত আপনার চলাচলের শক্তি ফিরে আসবে দ্রুতই।তবে তাড়াহুড়ো করা যাবেনা।অন্যথায় হিতে বিপরীত হবে।পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে শরীরকে।
নিহাদ মাথা তুলে চিকিৎসকের দিকে তাকালো।চশমার লেন্সের ভেতর থেকে তাকিয়ে তিনি ক্লিপবোর্ডে নিহাদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা এবং অগ্রগতি টুকে নিচ্ছেন।কিছুক্ষণ ইতস্তত করলো নিহাদ, তারপর দ্বিধা ঝেড়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
– একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল ডক্টর।
– বলুন।
– আমি কি আবারো আগের মতন বাইক চালাতে পারবো?
থামলেন চিকিৎসক,এক নজর বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালেন নিহাদের মুখপানে।তারপর মৃদু হেসে বললেন,
– এই প্রথম এমন কোনো রোগী দেখছি যে আদতে আমি হাঁটতে পারবো কিনা জিজ্ঞেস করার বদলে জানতে চাইছে সে বাইক চালাতে পারবে কিনা।
তার হাসি নিহাদের অধরেও সংক্রমিত হলো।এই চিকিৎসক কোনো কাঠখোট্টা ধরণের ব্যক্তি নন।মধ্যবয়স্ক,তার আচার ব্যবহারে অমায়িক এবং সহযোগী ভাব স্পষ্ট।কিছু কিছু চিকিৎসকের ব্যবহারেও নাকি মানুষের অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যায়—এমন এক প্রচলিত ধারণা রয়েছে।নিহাদ এর পূর্বে বিশ্বাস করেনি।তবে সত্যিই এমন কিছু থেকে থাকলে ইনি অবশ্যই তেমনি একজন চিকিৎসক। ঝুঁকলেন তিনি,নিহাদের পা আরেক দফায় নিরীক্ষণ করে জানালেন,
– আপনাকে মিথ্যা বলবোনা।তবে এখনো বিষয়টি স্পষ্ট নয়।পূর্বে আপনাকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে হাঁটাচলার শক্তি অর্জন করতে হবে।বাইক একটি ভারসাম্য রক্ষার যন্ত্র।এর ক্ষেত্রে পায়ের প্রয়োগ অত্যধিক,শক্তিশালী বাহু এবং ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন রয়েছে।আগে আপনার পুরাতন শক্তি ফিরে পান, তারপর নিশ্চয়ই পারবেন।অন্যথায় আজকাল হ্যান্ড কন্ট্রোলড বাইকও বাজারে পাওয়া যায়,আপনি তাও ব্যবহার করতে পারেন।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিহাদ,তারপর মাথা দোলালো।
– আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ ডক্টর।
– মাই প্লেযার।আপনি এখন খানিকটা বিশ্রাম নিন, ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপির ধকল কাটানো দরকার, যার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম।
মাথা দোলালো নিহাদ,হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে এগোলো বিছানার দিকে।ঠিক তখনি দেয়ালে তার দৃষ্টি আটকে গেলো ক্ষণিকের জন্য।হাসপাতালের সামনের ফাঁকা সড়ক বেয়ে একটি বি এম ডব্লিউ এসে থমকেছে।ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো এক যুবক, পরিধানে ফরমাল শার্ট এবং প্যান্ট। চোখজুড়ে বড়সড় গোলগাল ফ্রেমের চশমা।প্যাসেঞ্জার সিটের দরজা সে নিজে এগিয়ে খুললো,তার হাতে হাত রেখে বাইরে পদার্পণ করলো সুদর্শনা এক রমণী।নিহাদের বুকের মাঝে যেন এক যন্ত্রণাদায়ক তরঙ্গ খেলে গেলো।
চারুলতা!
দীঘল কেশরাশি গুছিয়ে সে যুবককে কিছু বললো, অদূর থেকে কথোপকথন শোনা অবশ্যই সম্ভবপর নয়।যুবক মাথা হেলিয়ে বিস্তর হাসলো,তারপর চারুলতার হাতের পিঠে আলতো করে চুমু খেয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।বিদায় জানালো চারু হাত নেড়ে তাকে।কেন যেন দৃশ্যটি আর দেখা সম্ভবপর হলোনা নিহাদের পক্ষে।দ্রুত হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে নিলো সে।জিনিসটার সঙ্গে এখনো অভ্যস্থ হতে পারছেনা। এঁকেবেঁকে পৌঁছলো নিকটে,তাকে বিছানায় উঠে বসতে সহযোগিতা করলো নার্স এবং চিকিৎসক।তারপর উভয়েই প্রস্থান করলো।বালিশে হেলান দিয়ে নিঃশব্দে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো নিহাদ।
নিজের মস্তিষ্ককে বর্তমানে জোরপূর্বক ভারী চিন্তাভাবনা থেকে নিহাদ সরিয়ে রাখে।জীবনের সব টানাপোড়েনে সংযুক্ত হয়ে খাঁচায় বন্দী পাখির মতন ছটফট করবার ইচ্ছা তার নেই।চারুলতার ব্যাপারটা তার কাছে তেমন কিছুই।নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সে নিজেই নিশ্চিত নয়।কিন্তু এইযে যন্ত্রণা,না পাওয়ার বিরহবেদনা,এসবকে অস্বীকার করা সম্ভব?আফসানা রেমান চারুলতা, রেমান পরিবারের সদস্য এবং ভবিষ্যত ব্যবসার একজন যোগ্য কর্ণধারও বটে।আর নিহাদ?শুধুমাত্র একটি নাম ব্যতিত তার পরিচয়ের বিশেষ কিছুই নেই।নিজেকে নিয়ে বিন্দুমাত্র হীনমন্যতা ছিলোনা তার হৃদয়ে।কিন্তু বর্তমান যেন সব হিসাবকে পাল্টে দিয়েছে সম্পূর্ণ।নিজের অকেজো পায়ের দিকে তাকালো নিহাদ,অতঃপর সঙ্গে রাখা হুইলচেয়ার।ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে জীবন তার,মুক্ত স্বাধীন।উচ্ছল ছুটে চলায় বিরাট বাঁধা পড়েছে।অন্যের বোঝায় পরিণত হয়েছে সে।এত এত যদি কিন্তুর দোলাচলের ভিড়ে আকাশকুসুম পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কি তার আদও করা উচিত?নিজের অন্তর নিজেকেই ধিক্কার জানালো দারুণভাবে।
মৃদু শব্দে কেবিনের দরজা খুললো।নিহাদ একনজর তাকালো।ভেতরে প্রবেশ করেছে চারুলতা।তার দীঘল কেশের মাঝে বর্তমানে ভিন্ন কোনো রঙের অস্তিত্ব নেই, শুধুমাত্র গভীর মসৃণ কালো।পরিধানের ব্যাগি টি শার্ট এবং জিন্সে সদ্য ফ্যাশন শো থেকে বেরিয়ে আসা কোনো মডেলের চেয়ে ভিন্ন কিছু মনে হচ্ছেনা তাকে।তবে বেশিক্ষণ তাকালোনা নিহাদ,দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।কোনো কথা বললোনা চারু,ভেতরে ঢুকে একটি লাগেজ বের করলো।নিহাদের অনুমতি ব্যতীতই ব্যবহারের জন্য আনা জিনিসপত্র এবং গোটা কতক কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিলো সে।
– তোমার বয়ফ্রেন্ড?
আচমকা নিহাদের প্রশ্নে চারুলতা থমকালো।হাতের বইগুলো লাগেজে রেখে ফিরে তাকালো।ছেলেটার দৃষ্টি বাইরের পানে আবদ্ধ,চেহারায় অদ্ভুত স্থিরতা। অনুধাবনে বেগ পোহাতে হলোনা চারুকে।পুনরায় কাজে মনোযোগ দিয়ে জানালো,
– কয়েক মাস আগে আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখছিল বাবা এবং ভাইয়া।তাদের একজন।
– ওহ।কি করে?
– প্রফেসর।অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের।
– বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে যাবে?
– আমরা শুধুমাত্র দেখা করেছি নিহাদ, আ সিম্পল ডেট নাথিং মোর।
– কৈফিয়ত চাইছিনা আমি, চিল।
বিছানায় হেলান দিলো নিহাদ।তারপর দৃষ্টি ফেরালো চারুর দিকে।মেয়েটা নিজের কাজ শেষ করে লাগেজ বন্ধ করলো।দুহাত ঝেড়ে নিহাদের দিকে ফিরে বললো,
– সবকিছু প্রস্তুত।আর কিছু বাকি আছে কিনা তোমার দেখো।আগামীকাল বাবা আসবে,তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাবো।
– ওটা আমার বাড়ি নয়।
আনমনে বিড়বিড় করলো নিহাদ।তাতে চারুলতা নিজের কেশরাশি আঙুল চালিয়ে গুছিয়ে নিতে নিতে জবাব দিলো,
– অবশ্যই।তুমি তো ডাস্টবিনে থাকো।কুকুরের পেটে তো আর ঘি হজম হয়না।চব্বিশ ঘণ্টা সেবা শুশ্রুষা পাবে,পাশে থাকার মানুষ পাবে তা তোমার সহ্য হচ্ছেনা।
কিঞ্চিৎ হাসলো নিহাদ,মাথা ঝাঁকিয়ে চারুলতার দৃষ্টিতে চেয়ে জানালো,
– হাহা,দুঃখিত আপু। আপনাকে ইদানিং বেশি জ্বালাতন করে ফেলছি মনে হচ্ছে।ব্যাপার না,এই অক্ষমকে একটুখানি সময় দিন,আপনার ঘাড় থেকে খুব শীঘ্রই নেমে যাবো।
– আরেকবার বলো তুমি অক্ষম,তোমার ঐ দুই পায়ে কষিয়ে এমন দুটো লাথি দেবো যে কেঁদে কুল পাবেনা, চিংটা কোথাকার!
বিস্তৃত হাসলো নিহাদ, চারুলতা ভ্রু কুঁচকে তার বিছানার পাশে বসলো।
– এমনিতে শুধু বড়ো বড়ো বক্তব্য দাও, চিটাইঙ্গা ফুয়া মেডিত পড়িলে লুয়া।এবার দেখবো,আসলেই কেমন চিটাইঙ্গা ফুয়া তুমি!
– এটা কি চ্যালেঞ্জ ছিলো?
– অবশ্যই।পারলে খুব জলদি সুস্থ হয়ে হেঁটে দেখাও, তখন বিশ্বাস করে নেবো তুমি সত্যিই গুরু দেবের একনিষ্ঠ শিষ্য।
– আমি হাঁটতে পারলেও কি আর না পারলেও বা কি?নাথিং ম্যাটারস।
– ইট ডায ম্যাটার….
বিরতি দিলো চারু সাময়িক,তারপর মাথা নেড়ে নিজের শব্দগুলো পরিবর্তন করে বললো,
– আসমান ভাইয়ার জন্য হলেও।
নিহাদের হাত মুষ্টিবদ্ধ হলো,স্পষ্টত দৃষ্টিগোচর হলো।দীর্ঘ এক মুহুর্ত নীরবতা,শুধুমাত্র নীরব সঙ্গ।তেমন কোনো ঝগড়া হচ্ছেনা আজ তাদের মাঝে।এই নীরবতাও যেন অব্যক্ত বহু অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে দিচ্ছে।অবশেষে মুখ খুললো নিহাদ।আচমকা প্রসঙ্গ বদলে বলে বসলো,
– অক্সফোর্ডের প্রফেসর।খুব শিক্ষিত আর সুপুরুষ তাইনা?জলদি বিয়ে করে নাও চারুলতা,বহুদিনের শখ আমার এক পেত্নীর বিয়ে খাবো।শুভকাজে দেরী করতে নেই।
হাসপাতালের বিছানায় হেলান দেয়া অবস্থায় নিহাদের উৎফুল্ল কণ্ঠের এই আবেদন চারুলতাকে স্তব্ধ করে দিলো।দৃষ্টিপাত করলো সে নিগূঢ়।
– তুমি সত্যিই চাও আমি বিয়ে করে ফেলি?
প্রশ্ন ছুড়লো চারু।তাতে নিহাদ সামান্য হাসলো। ঝুঁকলো সামনে,দুই পায়ে আলতোভাবে নিজের আঙুল বুলিয়ে এনে অধরের হাসি ক্রমশ বিস্তৃত করলো,
– কেনো নয়?বয়স তো কম হলোনা।মেয়েরা নাকি ত্রিশ বছরে বুড়ি হয়ে যায়?তুমি দাদীমা হওয়ার প্রথম পর্যায়ে আছো।
চারুলতার মাঝে দৃষ্টিপাত ঘটালো নিহাদ,মাথা কাত করে সামান্য ভ্রুকুটি করলো যেন,
– বিয়েতে দাওয়াত দেবে তো?আবার আমি অক্ষম বলে দূরে ঠেলে দিওনা।
ছেলেটার প্রত্যেকটা কথায় ক্রোধ অনুভূত হতো,কিন্তু বর্তমানে তা শুধুই বিষাদের আবেদন।এই ছেলে কি আদতেই অবুঝ?নাকি ভান ধরে আছে?এতটাই ফেলনা চারু তার নিকট?একটাবার হয়ত বলতে পারতো, দাবী উত্থাপন করতে পারতো।এতগুলো দিন হাসপাতালে কাছাকাছি থাকার পরেও কি এতটুকু অধিকার জন্মায়নি?হ্যাঁ, আশি শতাংশ সময় তারা ঝগড়া করেই কাটিয়েছে।নিহাদ পা কেনো ঠিকমত রাখছেনা,কেনো উচ্চশব্দে দেবের গান শুনছে,কেনই বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করছে…..সব বিষয় নিয়ে তাদের বাকবিতণ্ডাই বেশি হয়েছে।কিন্তু গভীর রাত্রিতে ঘুমের ঘোরে নিহাদ যখন দুঃস্বপ্ন দেখে বিড়বিড় করে,তখন চারুলতা যে তার মাথার কাছে বসে কপালে হাত বুলিয়ে দেয় তা কি ছেলেটা কোনোদিনও টের পায়নি?নাকি আদতেই চারুকে সে শুধুমাত্র একজন ঝগড়ার সঙ্গিনী হিসাবে দেখে?তার অন্তর জুড়ে কি শুধুই অহনার অস্তিত্ব?উহু,ঈর্ষা নয়।এক শূন্যতা অনুভব করলো চারুলতা।তার অনুভূতি কি আজীবন অপূর্ণই থেকে যাবে?
নিহাদ একমনে বকবক করেই যাচ্ছে।বিন্দুমাত্র উপলব্ধি করছেনা পাশে থাকা মানুষটার হৃদয়ে চলমান দৌরাত্ম্য।সহ্য হলোনা চারুর।অনুধাবন করতে অক্ষম সে নিজের কার্যক্রম।মস্তিষ্কের সংকেত দারুণভাবে উপেক্ষা করলো অন্তর,অতর্কিতে এগোলো।নিহাদ বিড়বিড় করে বলছিলো,
– আমি দেবের খোকাবাবু যায় লাল জুতো পায় গানে নাচতে না পারলেও অন্তত…..উম্!
বক্তব্য সমাপ্ত করতে নিহাদ অসমর্থ রইলো।তার কলার আঁকড়ে ধরলো চারুলতা,জোরালো এক টান। অতঃপর,নিজের অধরে কোমল এক ওষ্ঠের মধুমিশ্রিত উপস্থিতি অনুভব করলো নিহাদ।এতটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়ল তার মস্তিষ্ক যে সম্পূর্ণ শরীর স্থির রইলো।এটা কি হচ্ছে?কেনোই বা হচ্ছে?অনুধাবন কিংবা ভাবনা চিন্তার বিন্দুমাত্র সময় নেই।নিহাদের নয়ন দূর্বল হয়ে আপনাআপনি বুজে আসলো।প্রচণ্ড ইচ্ছা হলো সন্নিকটে টানতে,দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে।সম্ভবপর হলোনা।আবেগ নিয়ন্ত্রণে উভয় হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো নিহাদ।
ক্ষীণ এক মুহুর্ত মনে হলো সুদীর্ঘ,প্রগাঢ় এক অনুভূতির বিনিময়,তারপর সরে গেলো চারুলতা। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে অতি সন্নিকট থেকে চাইলো নিহাদের উদ্দেশ্যে,ছেলেটির নিষ্পাপ নয়নজোড়া ডাগর ডাগর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,অবিশ্বাস খচিত তাতে।সদ্য ছোঁয়া অধর তার মৃদু আভা প্রতিফলন করে চিকচিকে দ্যুতি ছড়াচ্ছে।হৃদস্পন্দনের তীব্র বেগ উপেক্ষা করে চারুলতা নিহাদের অধরের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করলো,
– আই লাইক ইয়াঙ্গার মেন….নিহাদ।
ভাবলো কোনো জবাব আসবেনা, এই ছেলেটিকে সে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দিয়েছে।কিন্তু নিহাদ তো নিহাদই।নিজের সহজাত বৈশিষ্ট্যে সে বৃদ্ধাঙ্গুল ছোঁয়ালো আপন অধরে,আঁকিবুঁকি কেটে চারুলতার উদ্দেশ্যে ধোঁয়াটে দৃষ্টিতে চেয়ে বিড়বিড় করলো,
– ভেরি টেস্টি।
তৎক্ষণাৎ যেন হুশ হলো চারুলতার,এইমাত্র কি করলো সে?আর কি বললো?কূলকিনারা করা সম্ভব হলোনা।শরীর তার কাপছে অনুভূতির তোপে।উঠলো রমণী,এক ছুটে কেবিনের বাইরে আড়াল হয়ে গেলো পলকের ব্যবধানে।একদৃষ্টে চেয়ে থাকলো নিহাদ তার চলে যাওয়ার পথের দিকে।অতঃপর মাথা নিচু করে নিজের দুহাতের দিকে তাকালো,থরথর করে কাপছে তা,শীতের মাঝেও সম্পূর্ণ শরীর যেন টগবগে তাপমাত্রায় ফু*ট*ছে।এবং হৃদস্পন্দন?সীমা ছাড়িয়েছে তা এযাবৎকালের।এ কেমন অনুভূতির দোলাচল?
ধ্বংস?নাকি সূচনা?
সময় রাত তিনটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট।অভিসার সমাপ্ত করে বিছানায় অত্যন্ত অলস ভঙ্গিতে চিৎ হয়ে রয়েছে জিশান আহসান।তার বুকের মাথা রেখে নিদ্রার জগতে বিচরণ করছে এক স্বল্পবসনা রমণী। সিগারেটে মনোযোগ দিয়ে সিলিংয়ের দিকে চেয়ে আছে জিশান।এই কয়েকটা দিন তার উপর দিয়ে যেন রীতিমত কেয়ামত বয়ে গিয়েছে।তবে সবকিছুই সে ঠিকই হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে।পরিকল্পনা সম্পন্ন।শুধুমাত্র আগামীকালের সূর্যোদয়ের অপেক্ষা, একদম সুনসান ভোরের।তারপরই জেটিতে বাঁধা যে বোট অপেক্ষা করছে, তাতে করে সংগোপনে বর্ডার পেরিয়ে যাবে সে।ধরাছোঁয়ার একেবারে বাইরে।করুক এরা আন্দোলন যত পারে।ব্যাপার না,তার বাবাও শীঘ্রই পদত্যাগ করবে।সবকিছু শান্ত হলেই বিদেশে পাড়ি জমাবে,বাবা ছেলের মিলন হবে অচিরেই। তা নিয়ে বেশি চিন্তিত নয় জিশান।
পাশে তাকালো,ঘুমন্ত রমণীকে লক্ষ্য করে আবারও বাসনায় পূর্ণ হলো অন্তর।পুনরায় হা*ম*লে পড়লো ক্ষুধার্ত প*শুর মতন,রমণীর নিদ্রাভঙ্গ হলো।কিন্তু সে মোটেও বিরক্ত নয়,বরং জরুরী অভিসারে বেশ খুশিই। আঁকড়ে ধরলো সে জিশানকে নিজের মাঝে।ঠিক তখনি খুট করে এক আওয়াজ।
থমকালো জিশান।ভীষণ বিরক্ত হয়ে মুখ তুলে তাকালো দরজার দিকে।
– কে রে?আমাকে ডিস্টার্ব করতে মানা করেছি! ভোর হতে এখনো ঘন্টাখানেক বাকি আছে।শান্তি দে!
– তোর ক*বরে শান্তি থাকবেনা নিশ্চিত।
কণ্ঠটি যেন শিহরণ খেলিয়ে দিলো সম্পূর্ণ শরীরে।সহসাই হাট করে খুলে গেলো কক্ষের দরজা,সশব্দে আ*ঘা*ত হা*নলো দেয়ালে।স্তম্ভিত জিশান এবং রমণী উভয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসলো।বাইরের টিমটিমে হলদেটে আলো প্রতিফলিত হয়ে স্পষ্ট হলো এক অবয়ব।অশুভ এক ছায়ামূর্তি,পরিধানে কালো জ্যাকেট এবং গাবার্ডিন।চেহারা আবৃত মাস্কে।শুধুমাত্র নিগূঢ় কৃষ্ণগহ্বর দৃশ্যমান তার নয়নজুড়ে।উভয় হাত পকেটে ভরা।তেমন হুম*কিস্বরূপ কিছুই নেই সঙ্গে।তবুও শুধুমাত্র তার অস্তিত্বই যেন যথেষ্ট এক পরাবাস্তব জগৎ তৈরিতে।ওই অবয়ব থেকে খুব সূক্ষ্ম অভিসম্পাতের রশ্মি প্রবাহিত হচ্ছে যেন।পরাশক্তির দল ঘুরপাক খাচ্ছে চারিপাশে।
রমণী জিসানকে আঁকড়ে ধরলো নিজেকে রক্ষার আশায়।একটি শক্ত ঢোক গিললো জিশান।কন্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও সম্ভব হলোনা।প্রচণ্ড কাপলো তা।
– ক…কে…কে তুই?
কোনো জবাব এলোনা। ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে এলো বান্দা।রমণীর পানে দৃষ্টিপাতও করলোনা।তার সম্পূর্ণ মনোযোগ আবদ্ধ জিশানের উদ্দেশ্যে।পকেট থেকে বেরিয়ে এলো তার ডান হাত।গ্লাভস পরিধানকৃত সেই হাতে লম্বাটে বোরোসিলিকেট গ্লাসের অভ্যন্তরে ঈষৎ হলদেটে ঘন তরলটি জিশানকে বাকরুদ্ধ করে দিলো।মৃদু আভার মাঝেও পাত্রের লেবেল স্পষ্ট।মা*নুষের খু*লি*র চিহ্ন,এবং পাশে খচিত,
সালফিউরিক অ্যা*সিড।
ডার্কসাইড পর্ব ৫৫
– তু….তুই…
জিশানের আতঙ্কিত কণ্ঠের বিপরীতে সামান্য হাসির ধ্বনি ভেসে এলো।মাথা কাত করে অচেনা আগন্তুক ঘোষণা করলো,
– আপনি এমনিতেও বর্ডার ক্রস করছেন না আজ।সো লেটস্ প্লে মাই ফেইভরিট গেইম। আ গেইম অব ডে*থ!
সম্পূর্ণ জগৎ এক লহমায় থমকে গেলো জিশানের জন্য।
