ডার্কসাইড পর্ব ৫৭
জাবিন ফোরকান
প্রথমটায় শুধুমাত্র আঁধার দৃষ্টিগোচর হলো।পরক্ষণে ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক কর্মক্ষমতা ফিরে পেতেই ইন্দ্রিয়সমূহ সচল হয়ে উঠলো।ঘাড়ের দিকটায় চিনচিনে ব্যাথা। কন্ঠতালু শুকিয়ে একেবারে খটখটে হয়ে রয়েছে।সামান্য একটু পানির হাহাকার শরীরজুড়ে।ভারী নিঃশ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় মত্ত জিশান চারিপাশে তাকালো।হিমশীতল বায়ুর ঝাপটা ক্ষণে ক্ষণে তাকে শিহরিত করে তুলছে।কোথায় আছে সে?কালিগোলা আঁধারে বুঝে ওঠা দায়।ধীরে ধীরে টিমটিমে এক আভায় অমানিশা যেন সামান্য দূরীভূত হলো, দৃষ্টিশক্তি স্পষ্ট হলো ক্রমেই।উত্তেজিত জিশান নিজেকে আবিষ্কার করলো শক্ত এক চৌকিতে বাঁধা অবস্থায়।
একটি ছোট্ট কক্ষ। উপরে টিনশেড ছাদ।একপাশের দেয়াল প্রায় বিধ্বস্ত যেখান দিয়ে নিশিরাতের হিম বায়ু অনুপ্রবেশ করছে। দূর থেকে ভেসে আসছে এক জলপ্রবাহের ধ্বনি।
টপ….টপ।
নৈঃশব্দ্য সেই ধ্বনিকে যেন ক্রমশ করে তুলছে অশুভ।নিজের অবাধ্য হৃদস্পন্দনের আওয়াজ ছেয়ে গিয়েছে জিশানের কর্ণকুঠরে।আতঙ্কিত প্রত্যাশা।কোথায় আছে সে?তার চেয়েও বড় প্রশ্ন,কি হতে চলেছে তার সঙ্গে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ধাতুতে ধাতু ঘর্ষণের ধারালো আওয়াজ জিশানকে তার আবেশিত দুনিয়া থেকে সহসাই বাস্তবে টেনে আনলো।অসহায়ের মতন চারিপাশে তাকালো।তবুও কিছুই দৃষ্টিগোচর হলোনা।পানির টপটপ ধ্বনির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে ধাতব ধ্বনি।ক্রমশ এগিয়ে আসছে।সেই অদ্ভুত ভারী প্রভাব আবারো অনুভূত হলো।কেমন যেন,অসহনীয়।এক অশুভ অস্তিত্বের ভার বহন করতে অক্ষম হৃদয়।শরীরের রোমকূপজুড়ে ছড়িয়ে গেলো শিহরণ, আতঙ্কে খাড়া হয়ে উঠলো প্রত্যেক রোম।শুষ্ক কন্ঠে শক্ত ঢোক গিলতে গিয়ে কেশে উঠলো জিশান।আর সম্ভব হচ্ছেনা।চৌকিতে তার হাত পা উভয়ে শিকল দ্বারা সংযুক্ত।নড়াচড়ার উপায় নেই।গলা ছেড়ে চিৎকার করে উঠলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ ছেলে।
– কে তুই?সাহস থাকলে সামনে আয়!
ধাতব শব্দ বন্ধ হলো মুহূর্তখানেকের জন্য,পরবর্তীতে তা পুনরায় চালু হলো।সহ্য করা দায়।আর্তনাদ করে উঠলো জিশান,যেন তার কানে সী*সা ঢে*লে দেয়া হচ্ছে।অবশেষে আঁধারের পর্দা সরিয়ে দেখা দিলো স্বয়ং অমানিশা।ওই একই ধীরস্থির ভঙ্গিতে হেলেদুলে প্রবেশ করলো সে অভ্যন্তরে।জিশান স্তব্ধ হয়ে চেয়ে থাকলো।এই অস্তিত্বের পরাশক্তিধর প্রভাব অনুভবেরও অতীত। মাস্কে আচ্ছাদিত চেহারার অন্তরালে খচিত কৃষ্ণগহ্বর যেন এক ধ্বংসের উপাখ্যান।
– কে তুই?
আবারো প্রশ্ন করলো জিশান।
– আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছিস?তুই জানিস আমার বাবা জানতে পারলে….
– তোরা সবাই বাপের দোহাই দিস কেনো?নিজের বলে কিছু নেই?
কণ্ঠটি অত্যন্ত সুগভীর।যেন বর্ষণের পূর্বে গর্জে ওঠা মেঘরাজি।চেয়ে থাকলো জিশান স্তব্ধ হয়ে।
নিজের কাঁধ ঝাঁকিয়ে অগ্রসর হলো অমানিশা, আসমান।চৌকির পাশে রাখা একটিমাত্র চেয়ারে অতি অবহেলায় বসে পড়ল,হাঁটুর উপর পা তুলে পকেট থেকে বের করলো একটি লাইটার এবং সিগারেট।বস্তুটি প্রজ্জ্বলিত করলেও অধরে ছোঁয়ালো না, শুধুমাত্র দুই আঙ্গুলের ফাঁকে ধরে রাখলো,তার তামাটে ধোঁয়া ক্রমশ গ্রাস করতে আরম্ভ করলো দৃশ্যপট।জিশান হতবিহ্বল চেয়ে থেকে পুনরায় কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল কিন্তু আসমানের কন্ঠ অনুভূতিহীন জিজ্ঞেস করলো,
– অহনার লা*শ কোথায় পুঁ*তে*ছিস?
কম্পিত হলো জিশানের সর্বাঙ্গ।অহনা?কে এই লোক?অহনার কাছের কেউ?কিন্তু ওই মেয়ে তো একটা রাস্তার ফকিন্নি ছিলো,যার এক বুড়ো ঢেমরা মা ছাড়া কেউ নেই দুনিয়ায়।তবে?এই বান্দা কেনো অহনার খবর জানতে চাইছে?
– নাগর নাকি ওই বে***র?
তড়িৎ খেলে গেলো আসমানের শরীরে।দন্ডায়মান হলো, ক্ষীপ্র গতিতে পাকড়াও করলো জিশানের ঘাড়।বেচারা অনুধাবন করতেও পারলোনা কি হচ্ছে,এর পূর্বেই আসমানের গ্লাভস পরিহিত দুই আঙুল ঢু*কে গে*লো তার মুখে।টে*নে বের করলো জি*ভ।বিহ্বল জিশান নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হতেই তার টে*নে ধরা জি*ভে হাতের জ্ব*লন্ত সিগারেটের ডগা চে*পে ধরলো আসমান।যন্ত্রণার বীজ বোপিত হয়েছে যেন। জিশানের হুংকারও শোনালো নিছক গোঙানির ন্যায়।
মিনিটখানেক চললো প্রহার।সিগারেট ফুরিয়ে আসতেই তা দূরে ছুড়ে দিল আসমান।ততক্ষণে জিশান যেন সম্পূর্ণ বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।প্রসারিত দৃষ্টিজোড়া ক্লান্ত এবং আতঙ্কিত ভঙ্গিতে চেয়ে আছে আসমানের দিকে,যেন স্বয়ং মৃ*ত্যুদূতকে নজরে পড়ছে।আসমান হাতের উল্টোপিঠে কপালে জমা ঘামের ফোঁটা মুছে নিয়ে পুনরায় শুধালো,
– অহনার লা*শ কোথায়?
জবাব এলোনা। তিরতির করে কাঁপতে থাকলো জিশানের পু*ড়ে যাওয়া অধর। ভারী নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সহিত সে চেয়ে থাকলো শুধু,দিশাহারা পথিকের ন্যায়।তখনি পাশ থেকে মৃদু গোঙানির শব্দ ভেসে এলো।এতক্ষণ যাবৎ আঁধারির মাঝে খেয়াল হয়নি।কক্ষের একদম এক কোণায় এক রমণী লুটিয়ে রয়েছে,সে বর্তমানে নড়াচড়া করতে আরম্ভ করেছে।সম্পূর্ণ শরীর তার নাইলের দড়িতে আবদ্ধ,মুখে স্কচটেপ। জিশানের ভ্রুজোড়া উচুঁ হলো,অভিসারে লিপ্ত ছিল যার সঙ্গে তাকেও ছাড় দেয়নি এই লোক!জড়ানো কন্ঠে বলে বসলো,
– তু…তুই… ওকেও…
মাথা কাত করলো আসমান।অবিচলিত ভঙ্গিতে তাকালো রমণীর দিকে।বিড়বিড় করলো,
– সে নিশ্চয়ই এই দৃশ্য উপলব্ধি করতে পছন্দ করবে হুম? আফটার অল,শি ওয়ায দেয়ার, অন দ্যাট নাইট।
কম্পন তরঙ্গ খেলে গেলো জিশানের শরীরে।এই রমণী অহনাকে হ*ত্যা*র সময়ে উপস্থিত থাকা দুইজন নারীর একজন,অপরজন গ্রেফতার হয়েছে,লোক দেখানো গ্রেফতার যাকে বলে।কিন্তু একে সেই হীনমন্যতায় মাঝ দিয়ে যেতে দেয়নি জিশান,পছন্দ করে তো খুব!নিজের সঙ্গে বর্ডার ক্রস করে বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।কিন্তু যে বদ্ধ উন্মাদের পাল্লায় তারা পড়েছে, তাতে এই জীবনে আর ভালো থাকা সম্ভব হবে বলে মনে হয়না।
আসমান রমণীর সদ্য জাগ্রত ডাগর ডাগর দৃষ্টি উপেক্ষা করে জিশানে মনোযোগ দিলো।
– আমি শেষবার জিজ্ঞেস করছি।অহনার লা*শ কোথায় গায়েব করেছিস?
– আম…আমি… জানিনা!
উল্টো ঘুরলো আসমান,কক্ষের অপর প্রান্তের আঁধারে আড়াল হয়ে গেলো।বাকরুদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করে গেলো জিশান।এই বান্দা আদতে কে?কেনো এসব করছে তার সঙ্গে?হাজার ভেবেও কুল পাচ্ছেনা।আসমান ফিরে এলো দ্রুতই,এবার তার হাতজুড়ে রয়েছে বোরোসিলিকেটের পাত্র এবং একটি ধারালো সরু ছু*রি।বেল্টের সঙ্গে আলগোছে ঝুলছে ম্যাসিভ নাইফ,তার সঙ্গে দন্ডের মতন একজোড়া ধাতব বস্তু। নানচাক্স!এক লহমায় জিশানের প্রকম্পিত হতে থাকা শরীর সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়লো।
জিশানের সন্নিকটে সরে আসমান হাতের পাত্রটি খুললো,এক হালকা ঝাঁঝালো গন্ধে পরিপূর্ণ হলো বায়ু।তার শিকারী দৃষ্টির নির্বিকার মনোভাবে শিকার কুঁচকে গিয়েছে যেন।নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টায় চৌকি উৎখাতের প্রচেষ্টায় লিপ্ত সে,কিন্তু মৃ*ত্যুদূতের কবল থেকে পলায়ন করা যে অসম্ভব।
– খব…খবরদার!মে*রে ফেল আমাকে….তবুও ওই জিনিস….
– তোকে মে*রে ফেললে তো ন্যায়বিচার হবেনা।
মাস্কের অন্তরালে আসমানের অধরজুড়ে প্রস্ফুটিত হওয়া তীর্যক হাসির রেখা দৃষ্টিগোচর হলোনা জিশানের।তার বুকে এক থা*বা বসিয়ে সজোর টানে পরিধানের হালকা বস্ত্র রীতিমত ছিঁড়ে ত্বক উন্মুক্ত করলো আসমান।এক মুহুর্ত সুযোগ প্রদান করলোনা। হাতের পাত্রটি উপুড় করে ঢেলে দিলো,উদর বরাবর।সালফিউরিক অ্যা*সি*ডের তী*ব্র ক্রি*য়ায় ঝ*লসে গেলো ত্ব*ক,গরম তেলে ছেড়ে দেয়া মাছের মতন ফু*টতে আরম্ভ করলো।দে*হাং*শ গলে উদর বেয়ে প্রবাহিত হতে থাকলো তরলের ন্যায়।এহেন বিভীষিকাও অটল হিমালয়ের হিমশীতল দৃষ্টিতে সামান্যতম অনুভূতি প্রদর্শনে ব্যর্থ।বরং তার র*ক্তপি*পাসু আত্মা যেন আজ তৃপ্ত, আরো একবার নিজের অশুভ বাসনা মেটানোর উল্লাসে।
তীব্র ঝাঁঝালো মাং*স গ*লা*র গন্ধে আঁশটে হয়ে উঠলো শুষ্ক হিম বায়ু,অদূরে কোণায় বসে থাকা রমণীর গোঙানি উন্মাতাল হলো।নিজের শরীরে ভূকম্পন খেলে যাচ্ছে তার,এ কি মানব নাকি দানব?এহেন ক্রুরতা?জিশান নিজের মাঝে যেন আর নেই, তার যন্ত্রণা এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে মনেপ্রাণে সো শুধুমাত্র নিজের মৃ*ত্যু কামনা করে চলেছে।
মিনিট পনেরো বাদে অ্যা*সিডের খালি শিশিখানি মেঝেতে ফেললো আসমান।ততক্ষণে জিশানের দে*হে যে চিত্রপট সে খচিত করেছে অ্যা*সিডের ব্যবহারে, তা তাকে সন্তুষ্ট করেছে।নামমাত্র হৃদস্পন্দন জারি আছে শিকারের,এক ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে সে চেয়ে আছে না জানে কিসের উদ্দেশ্যে।শরীর বলতে তার বর্তমানে শুধু গ*লি*ত লা*ভা যেন।তবুও ক্ষান্ত দিলোনা আসমান।লম্বাটে ছু*রিখা*না তুলে যে স্থানে অ্যা*সিড ঢে*লেছে ঠিক একই জায়গায় স্পর্শ করলো তাযেন সব্জি কে*টেকু*টে প্রস্তুত করছে রান্নার উদ্দেশ্যে,এমন ভঙ্গিতে গ*লি*ত মাং*সে*র মাঝে ছু*রি ঢু*কিয়ে দিলো, র*ক্তে*র ফি*ন*কি ছুটে তার মাস্ক আবৃত করলো রক্তিম আবহে।আর সহ্য করা সম্ভবপর হলোনা জিশানের পক্ষে।শরীরের অবশিষ্ট শক্তি ব্যবহার করে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
– মেরিডিয়ান ভার্সিটির পিছনের গোরস্থানের পাশে… নর্দমার কাছের মাটির মধ্যে পুঁ*তে….আহহহহ!!
তবুও থমকালোনা আসমান।তার ছু*রি প্রবাহমান রইলো, র*ক্তকালিতে সে জিশানের মাঝে ফুটিয়ে তুলছে একেকটি অক্ষর।অতর্কিতে পকেটে ভাইব্রেশন অনুভূত হলো।তৎক্ষণাৎ মেঝেতে ছুড়ে দেয়া বস্ত্রটি দলা পাকিয়ে জিশানের মু*খে ঢু*কিয়ে কন্ঠরোধ করে বাম হাত পকেটে ভরলো আসমান।ফোনের স্ক্রিনে কলার আইডি বলছে—মাই মুনলাইট।
রিসিভ করলো আসমান, অপর হাতে নিজের কর্মকাণ্ড জারি রাখলো। জিশানকে রীতিমত জী*ব*ন্ত কে*টে ফে*লা!গোঙাতে গোঙাতে অশ্রুভেজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো ক্ষমতাধর মন্ত্রীর বর্তমানে ক্ষমতাহীন অসহায় সন্তান।
– আসতে দেরী হবে?
পূর্বের বজ্রকন্ঠ নমনীয় হলো আসমানের,যা কক্ষে উপস্থিত উভয় সত্তাকে স্তম্ভিত করে দিলো।কে এমন আছে ফোনের অপরপ্রান্তে?যার ফোন এত গুরুতর অবস্থায়ও এই লোক রিসিভ করেছে?আর তার কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন,অবিশ্বাস্য।
– হুম।তুমি খেয়েছ?
– না,তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
– করোনা।খেয়ে নাও,আমার সামান্য দেরী হবে।
– গতকাল থেকে তুমি কি যে করছো!কোম্পানিতে যাওনি তা জানি।তবে?
– কোম্পানির বাইরে কাজ থাকতে পারেনা?
– তা পারে।তোমার সাথে কি কেউ রয়েছে?
– কেনো?
– হালকা গোঙানি শুনলাম মনে হলো….
– আর ইউ জেলাস?
আসমানের অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন এবং অপরপ্রান্তের নীরবতা অমানিশার অধরে মোলায়েম হাসির উৎপত্তি ঘটালো।
– হাহা….মাই মুনলাইট বিশ্বাস করো আমার সঙ্গে অন্য কোনো মেয়ে নেই….
মেঝেতে অদূরে বসে থাকা রমণীর উদ্দেশ্যে এক পলক তাকালো আসমান,বিড়বিড় করলো,
– কিংবা হয়ত রয়েছে!
– আসমান!
– সন্দেহ করছো আমাকে, হুম?
– জ্বি না।আমি জানি,আমি বাদে আর কোনো মেয়ের মাথার স্ক্রু এতটা ঢিলা নয় যে তোমার কাছে আসার চেষ্টা করবে, হুহ!
– ওটাকে বলে দুঃসাহস,তুমি দুঃসাহসী।
– হয়েছে হয়েছে,এখন আপনাকে মাখনের প্রলেপ দিতে হবেনা।বাসায় আসুন তাড়াতাড়ি।
ফোন হাতবদল করে আসমান জিশানের বুকে পৌঁছলো,অন্তিম পর্যায়ে এক ঘা*তে ছু*রি গেঁ*থে জিজ্ঞেস করলো,
– এত তাড়া কিসের ম্যাম?ডু ইউ ওয়ান্ট মি দ্যাট ব্যাড?
– নীলাদ্রি রেমান নীল ওরফে আআসমাআন!
রোযার চিৎকারে স্পষ্ট কেঁপে উঠলো ফোনের ভলিউম স্পিকার,সামান্য ভ্রু কুঞ্চিত করে কানে কনিষ্ঠা আঙুল চালালো আসমান।হিসিয়ে বললো,
– আশ্চর্য্য।বাংলা সিনেমার নায়কদের মতন সম্পূর্ণ নাম ধরে চেঁচাচ্ছ কেনো?আমাকে বয়রা বানানোর শখ হয়েছে? বাবাগো,কান থেকে র*ক্ত বের করে দিলো!
– তুমি বাসায় আসো খালি একবার,তোমাকে মশলা মাখিয়ে ম্যারিনেট না করলে আমার শান্তি হবেনা।
– কেমন মশলা মাখাতে চাও?
– চুলকানির পাউডার।
– আর ইউ শিওর?তোমার সমস্যা হবেনা?
– আমার সমস্যা হবে কেনো?
– এই যেমন ধরো আমি যদি তোমাকে জড়িয়ে ধরি তখন…
– আ তে আসমান, অ তে অসভ্য!
বিপবিপ শব্দ করে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো।মুচকি হাসলো আসমান,ফোনের স্ক্রিনের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে তা পকেটে ভরলো।জিশান এবং রমণীকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতে দেখে ভ্রুকুটি করলো সে।এক লহমায় তার নমনীয় সত্তার দূরীভন ঘটলো।নিজের কর্ম সমাপ্ত করে অদ্ভুতুড়ে এক কাজ ঘটিয়ে ফেললো সে। জিশানের শিকল ছাড়িয়ে মুক্ত করলো বান্দাকে,অতঃপর দূরে সরে দাঁড়িয়ে কক্ষ থেকে বের হওয়ার পথ দেখিয়ে বললো,
– রান।
প্রায় অ*র্ধমৃ*ত অবস্থায় জিশান মুখ তুলে তাকালো।সে কি স্বপ্ন দেখছে?ক্ষণিকের জন্য বিশ্বাস হলোনা আপন দৃষ্টি।পরমুহুর্তে বেঁচে থাকার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা গ্রাস করলো তার অস্তিত্বকে।সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে নিজেকে টেনে তুললো জিশান।শরীর তার ভগ্নপ্রায়, বক্ষ এবং উদরজুড়ে গ*লি*ত অং*শে অবোধ্য কা*টাকু*টির খেলা।র*ক্তস্না*ত সর্বাঙ্গ।কেউ অবলোকন করলে নির্ঘাত পরপারের বাসিন্দা ভাববে।কিন্তু সুচিন্তা করবার সময় নেই। পায়ে পায়ে নিজেকে বাইরে টেনে নিলো জিশান,মুখ থুবড়ে পড়ল,পরমুহুর্তে আবার হামাগুড়ি দিলো। থেমে গেলেই যে মৃ*ত্যু!
জিশান দৃষ্টির আড়াল হতেই আসমান ফিরলো, মেঝেতে বসে প্রচণ্ড বেগে কাঁপতে থাকা রমণীর সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো।বাঁধন মুক্ত করার কোনো লক্ষণ না দেখিয়ে নিজের র*ক্তা*ক্ত ছু*রি উদ্যত করলো।তাতে গুঙিয়ে উঠে দৃষ্টি বুজে ফেললো রমণী।আসমানের গম্ভীর কন্ঠস্বর জানালো,
– নারী বলে রক্ষা পেলেন,গর্ববোধ করার কিছু নেই।স্মরণে রাখবেন,আপনি এক নিকৃষ্ট নারী,নর্দমার কীটের চাইতেও অধম।জন্মদাত্রী নন, দংশিনী আপনি।
এটুকুই,আসমানের হাত সজোরে আ*ঘা*ত হা*নলো তার ঘা*ড় বরাবর।জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো সে মেঝেতে। দৃষ্টিপাতও করলোনা আসমান।উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে এলো কক্ষ থেকে।বেল্ট থেকে নানচাক্স টেনে খুলে হাতের মাঝে ঘোরাতে ঘোরাতে সম্মুখে অগ্রসর হলো।জিশান বেশিদূর যায়নি,টলতে টলতে এগোচ্ছে নির্জন সড়ক বেয়ে। ওভারব্রিজের দিকে যাচ্ছে, ঠিক যেমনটা আসমান চায়।এগোলো অমানিশা,দ্রুত।তার ভারী পদক্ষেপধ্বনি জিশানকে ঘুরতে বাধ্য করলো। মৃ*ত্যুদূ*তের উপস্থিতি টের পেতেই উদ্ভ্রান্ত হয়ে ভারসাম্যহীন ছুটতে আরম্ভ করলো মন্ত্রী সন্তান।তীর্যক হাসলো আসমান,হাতের নানচাক্স আবর্তন করে মুঠোয় পুরে বিড়বিড় করলো,
– রান, অ্যায মাচ অ্যায ইউ ক্যান!
অনুসরণ করলো সে জিশানকে,ধীরপায়ে।প্রাণপনে ওভারব্রীজ বেয়ে ছুটতে থাকলো জিশান,হৃদস্পন্দন তার থমকে গিয়েছে।দ্রুত,অতি ক্ষীপ্র,তীব্রবেগে ধেয়ে আসছে তার ধ্বং*স!
রাত্রির অন্তিম প্রহর।তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মাঝে জীর্ণশীর্ণ প্রকৃতি।সুদূর দিগন্তজুড়ে নব্য ভোরের আবছায়া রেখাংশ।দিবাকর উদিত হতে চলেছে খুব শীঘ্রই।তার স্বর্ণালী আলোকচ্ছটা যেন আজ একটু বেশিই রঙিন হয়ে ফুটবে ধরিত্রীর বুকে।শীতের দাপট উপেক্ষা করে সড়কের প্রান্তে একে একে জড়ো হয়ে চলেছে অগুণতি মানুষ।অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী।কিন্তু জনসাধারণের কমতি নেই।সড়কের ধারে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর দলও যোগদান দিয়েছে এক মহাযাত্রায়।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি সফল হয়েছে।ইকবাল আহসানের পদত্যাগের আশ্বাস দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী,অন্যথায় তাকে বহিষ্কার করা হবে দাবী মেনে।কিন্তু এটুকুতে সন্তুষ্ট নয় জনতা।সত্যিকারের দাবী এখনো অপূরণীয়।জিশান আহসান সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে।দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি এতটাই ঠুনকো এবং অযোগ্য?অহনা হ*ত্যা*র মূল আসামী আটক হওয়া না পর্যন্ত এই আন্দোলন থামবে না।আজ সকলের যাত্রা স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে।মহান স্তম্ভের চেতনার সামনে এক নব্য সূচনার সূত্রপাত ঘটবে যেন আজ।প্রত্যেক বিদ্রোহী আজ সড়কে নেমেছে মশাল হাতে।ছোট ছোট আলোর উৎসে ছেয়ে গিয়েছে সড়কের পর সড়ক।এ যেন এক ঝাঁক জোনাকির দল।রাত্রির আঁধার ঝেঁটিয়ে বিদায় করে তারা ছিনিয়ে আনবে মুক্তির সূর্য।
আলোর পথযাত্রী— এই বিদ্রোহী দলের নাম।
রোযা একদম সামনের সারিতে অবস্থান করছে। সোয়েটশার্ট পরিধানে তার।দৃপ্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার সকল সঙ্গীদের পানে।আজ কোনো ভাষণ দেবে না সে,কোনো আহ্বানও জানাবেনা।প্রকাশের কিছু নেই,অন্তরে প্রত্যেকের অনুভূতি খচিত। চারুলতাও আজ যোগদান করেছে মিছিলে।সামান্য উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে সে আশেপাশে তাকাচ্ছে।অভিষেক,আরিয়ান এবং সাবিহা অন্তিম প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যাস্ত।অপরদিকে অনির্বাণ নিজের ড্রোন ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করছে,একটি যন্ত্রাংশ সকলের মাথার উপর ঘুরপাক খেয়ে চলেছে, বন্দী করছে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ক্যামেরার ফ্রেমের মাঝে।রোযা হাতঘড়ির দিকে তাকালো, অতঃপর দিগন্তের উদ্দেশ্যে।দিবাকর উঁকি দিয়েছে, গাঢ় সোনায় ক্রমশ মুড়িয়ে দিচ্ছে যেন অসীম গগন।দীর্ঘ প্রশ্বাস টানলো রোযা।হাত তুলে মুষ্টিবদ্ধ করলো।ইশারার অর্থ,জয়যাত্রার সূচনা।
এগোলো রোযা,তার হাতে কোনো মশাল নেই।রয়েছে শুধু মুক্ত স্বাধীন দেশের লাল সবুজের নিশান।বায়ুর ঝাঁপটায় উড়ছে তা স্রোতস্বিনীর প্রবাহ হয়ে।তার পদযাত্রা অনুসরণে অহনার মা, চারুলতা।দুপাশে অভিষেক, আরিয়ান।উভয়ের হাতে প্রজ্জ্বলিত মশাল, দৃষ্টিজুড়ে নেতৃত্বের কাঠিন্য।অনির্বাণ সাবিহাকে নিজের ডিজিটাল ক্যামেরা ধার দিয়েছে,ড্রোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাস্ত সে।সাবিহা প্রত্যেক মুহুর্ত সংরক্ষণ করছে নিজের দৃষ্টি এবং ফ্রেমে।আজ সকলের মাঝেই এক ভিন্ন ধরণের অনুভূতি,কেমন যেন অদ্ভুত এক প্রশান্তি।এ যেন সংগ্রামের মিছিল নয়,বরং বিজয়ের মিছিল।শুষ্ক প্রকৃতি,হিম বায়ু, নৈঃশব্দ্য এবং আলোর ভিড়ের মাঝেও হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়া শান্তির প্রবাহ অদ্ভুত ঠেকছে।আশেপাশে পুলিশের গাড়ি,অনেক সদস্য টহল দিচ্ছে।কতিপয় স্থানে বিজিবির সদস্যও মোতায়েন রয়েছে।তারা মিছিল অনুসরণে আসছে ঠিকই,কিন্তু কোনপ্রকার বাঁধা সৃষ্টি করছেনা।নীরব সমর্থন যেন,আপন দেশের মানুষ ও তাদের সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা।
রোযা চারিপাশে তাকালো,সকলের ঐক্যবদ্ধ চেতনা অনুভূত হলো অন্তরে।বায়ুর শো শো ঝাপটার সঙ্গে তার কণ্ঠের মিশেল ঘটলো খানিক অপ্রত্যাশিতভাবেই। গুণগুণ কন্ঠে রোযা গাইতে আরম্ভ করলো,
~ও আলোর পথযাত্রী
এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না
এ বালুর চরে আশার তরণী তোমার যেন বেঁধো না~
কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত হয়ে থাকলো সকলে।অভিষেক এবং আরিয়ান একে অপরের মাঝে অব্যক্ত দৃষ্টি বিনিময় করলো।রোযার সঙ্গে সর্বপ্রথম কন্ঠ মেলালো চারুলতা,তারপর সাবিহা।একে একে সকলে।সম্মিলিত কন্ঠে যেন সুরেলা প্রকম্পন খেলে গেলো ধরিত্রীজুড়ে, ছেয়ে ফেললো সমস্ত অস্তিত্বকে।
~আমি শ্রান্ত যে, তবু হাল ধরো
আমি রিক্ত যে, সেই সান্ত্বনা
তব ছিন্ন পালে জয় পতাকা তুলে
সূর্য তোরণ দাও হানা
আলোর পথযাত্রী
এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না~
মিছিল সড়ক পেরিয়ে ক্রমশ সামনে অগ্রসর হচ্ছে, দৃপ্ত দৃষ্টি সকলের দৃশ্যপটে বিস্তৃত।এ যেন এক নতুন উপাখ্যান রচনার সময়কাল।কন্ঠে কন্ঠে ছড়িয়ে পড়েছে এক চেতনার আবাহন।মিছিলের একদম সামনে থাকা রোযার পা হঠাৎ করেই থমকে গেলো।তার অনুসরণে থাকা অগুণতি বিদ্রোহীও থামতে বাধ্য হলো।সঙ্গীতের সুরেলা ধ্বনি মিইয়ে আসেনি তখনো, দূর মিছিলের প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে তখনো। কারণ তারা বর্তমানে সামনের দৃশ্য উপলব্ধিতে ব্যর্থ।
দিবাকরের স্নিগ্ধ রশ্মি ধরিত্রীকে ছেয়েছে।তার মাঝে প্রজ্জ্বলিত হয়েছে মশাল।সেই আভার তোরণে সামনে প্রস্ফুটিত এক ওভারব্রীজ।এতক্ষণ আঁধারে দৃষ্টিগোচর হয়নি।কিন্তু নিকট থেকে আলোর খেলায় সবকিছু স্পষ্ট।ওভারব্রিজের রেলিং থেকে ঝুলছে এক মানবদে*হ।উভয় হাত আবদ্ধ শিকলে,যার প্রান্ত আবদ্ধ রেলিংয়ে পেঁচিয়ে রাখা নানচাক্সের সঙ্গে। র*ক্তসিক্ত অবয়বেও এই পিশাচের অস্তিত্ব যেন কোনোক্রমেই ভুলবার নয়।
জিশান আহসান!
ঝুলে আছে তার দে*হ,ঠিক যেমনভাবে একটা সময় সে অহনা নামক এক মেয়েকে বর্ব*রভাবে ঝুলিয়ে রেখেছিল হলের বারান্দায়।সকলে দেখেছে সেদিন অবিচার,এবং আজ প্রত্যক্ষ করছে একই ভঙ্গিতে প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচার!এখনো জী*বন্ত মন্ত্রীপুত্র,ক্ষীণ নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে তার বুক ওঠানামা করতে দেখা যাচ্ছে।ওই বুকজুড়ে বীভ*ৎসতার চিহ্ন,যে চিহ্ন ইনিয়ে বিনিয়ে উদরে গিয়ে ঠেকেছে।গোটা গোটা অক্ষর তার ঘোষণা করছে একটিমাত্র কিংবদন্তীকে।
—নেমেসিস!
জিশান আহসানের ভগ্ন শরীরজুড়ে খচিত প্রতিশোধী নেমেসিসের র*ক্তা*ক্ত প্রতীক।যেখান থেকে জিশানকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে,ঠিক সেখানটাতাতেই উদীয়মান এক কালো পতাকা।ওই নিশানের মাঝে ধবধবে শুভ্র অক্ষরে লিখা,
— জাস্টিস প্রিভেইলস।
স্তব্ধ সকলে,স্থবির অস্তিত্ব। দূর থেকে ভেসে আসা সঙ্গীতের মূর্ছনা,এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার দৃশ্যপট।অবশেষে কি তবে সত্যিই বিদ্রোহীরা বিজয়ী হলো?রোযার বুকের ভেতর এক অসহনীয় আবেগের ঝড় উঠলো,স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা সে।হাঁটু ভেঙে মাটিতে বসে পড়লো।নয়ন বেয়ে বিনা কারণেই গড়াতে থাকলো অবাধ্য অশ্রুধারা।তার আশেপাশে সরে এলো সকলে।মিছিলের কাছে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওভারব্রীজের বর্বর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে ছুটতে থাকলো,দ্রুতই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো,ঝুলন্ত দে*হ*টিকে রক্ষায়।তাদের হৃদযন্ত্র কাঁপছে।এ কেমন দৃষ্টান্ত?অত্যন্ত কদর্য এবং বিভৎস এই কর্ম সকলের মানসিক প্রশান্তি হরণ করে নেয়ার কথা।কিন্তু অদ্ভুতভাবে তা হচ্ছেনা।উল্টো এক প্রচন্ড তৃপ্তি অনুভূত হচ্ছে।এই যেন সকলের হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা ছিলো।একই পরিণতি বরণ করুক অহনার ধ*র্ষ*ণকারী।
আজ তাই ঘটেছে।পিছনে দিবাকরের আলো ওভারব্রীজের দৃশ্যপট সিক্ত করে তুলেছে,স্বর্ণালী মোহে অত্যন্ত কদর্যতাও ঠেকছে স্বর্গীয়।চেয়ে থাকলো একদৃষ্টে,রোযা,অভিষেক,আরিয়ান,সাবিহা,অনির্বাণ, চারুলতা,অহনার মা এবং তার সঙ্গে বাকি সকলে।কেউই দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে না।বরং সিক্ত আবেগে দেখছে,উপলব্ধি করছে এক নতুন ইতিহাসকে।যে ন্যায়ের সংগ্রাম তারা আরম্ভ করেছিল,আজ যেন সেই ন্যায় পরিপূর্ণতা পেয়েছে।ক্ষমতাকে টেক্কা দিয়ে সেই ন্যায় ছিনিয়ে আনা হয়েছে সত্যের তরে। বোনের সম্ভ্রম, বোনের র*ক্ত আজ যথার্থ মূল্য লাভ করেছে।সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ রইলো দৃশ্যে,ওই দৃষ্টান্তে।যেখানে উড়ছে বিজয় নিশান।
জাস্টিস প্রিভেইলস—নেমেসিস।
তাদের আহ্বানে আজ সত্যিই সাড়া দিয়েছে নেমেসিস, ছিনিয়ে এনেছে বিচার সকলের তরে।নেমেসিস সত্যি,এক অমোঘ সত্যি।
মেঘতীর।
হলঘরের দেয়ালঘড়ি জানান দিচ্ছে সময় ভোর পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিট।বাহির থেকে দিবাকরের রশ্মি বনেদী দেয়ালের কারুকার্যের ফাঁকফোকর বেয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। তা মেঝেতে অদ্ভুত মাধুর্যে এক চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেছে যেন।ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার যান্ত্রিক শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে হলঘর বেয়ে কিচেনের উদ্দেশ্যে।খুব বেশিদিন হয়নি যন্ত্রটি ব্যবহার করছে নিহাদ,তবে এর মধ্যেই সকল ফাংশন আয়ত্বে এনে ফেলেছে।অক্ষমতা নয়,বরং ব্যাপারটিকে সে কল্পনা করছে বাইক কিংবা গাড়ি চালানোর মতোই।তাতে অবশ্য অন্তরের খেদটুকু দূরীভূত হয়না, তবুও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সকলের সামনে প্রফুল্লতা বজায় তো থাকে।
কিচেনে প্রবেশ করে রেফ্রিজারেটরের দিকে এগোলো নিহাদের হুইলচেয়ার।সম্পূর্ণ শরীর তার ঘেমে রয়েছে খানিকটা,হৃদস্পন্দন এখনো অস্বাভাবিক গতিতে স্পন্দিত হয়ে চলেছে।কিছুক্ষণ আগেই এক দুঃস্বপ্ন দেখেছে,কি দেখেছে তাও স্মরণে আনতে পারছেনা।কিন্তু সেই ভয়াল অনুভূতি তাকে চারিপাশ থেকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে রেখেছে যেন। কন্ঠতালু শুকিয়ে খটখটে মরুভূমি হয়ে আছে।শীতল পানির বড্ড প্রয়োজন তৃষ্ণা মেটাতে এবং মস্তিষ্ককে প্রশান্ত করতে।প্রয়োজন হলে বাড়ির কাউকে ডাকার কথা তার,কিন্তু ইচ্ছা হয়নি।নিজেকে খুব বেশি বোঝা বানাতে ইচ্ছুক নয় সে।বিশেষ করে চারুলতার উপর।মেয়েটি নিঃশব্দে তার সেবাযত্ন করে যায়,নড়াচড়া থেকে আরম্ভ করে খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত।যদিও তাদের কথোপকথনে মিষ্টতার চাইতে ঝগড়ার উপস্থিতি বেশি থাকে,কিন্তু তার বিরক্তির রেশ জড়ানো কণ্ঠের আড়ালে সহানুভূতিটুকু নিহাদ স্পষ্ট টের পায়।অতর্কিতে সেদিন হাসপাতালের ঘটনাটি স্মরণে আসতেই নিহাদ থমকে গেলো।
কেনো?কোন উদ্দেশ্যে অমন করেছিল চারুলতা?
এই প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত লাভ করেনি নিহাদ।তাদের মাঝে সেই মুহূর্ত নিয়ে একটিও বাক্য বিনিময় হয়নি। উভয়ে এমন আচরণ করে গিয়েছে যেন সবকিছু ঠিক আছে,তাদের সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসেনি।অনুভূতির সঙ্গে আর কতদিন সম্ভব হবে এই লুকোচুরি খেলা?
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো নিহাদ।অন্তরে তার ধ্বনিত হলো,
“ যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছেনা।আমি তোমার যোগ্য নই।এই ছন্নছাড়া জীবন কোন বাঁধনে বাঁধবো আমি?আমার যে কোনো উদ্দেশ্য নেই।মুক্ত বিহঙ্গ আমি।ছুটে চলাই যার কর্ম।বর্তমানে সেই ক্ষমতাটুকুও আত্মসাৎ করেছে ভাগ্য।কাছে এসোনা,আর দূর্বল করোনা আমাকে।দূরে চলে যাও,ভালো থাকো,তোমাকে লাভের যোগ্য এক পুরুষের সঙ্গে ঘর বাঁধো। ”
কথাগুলো চারুলতাকে সরাসরি বলা অসম্ভব।মাথা ঝাঁকালো নিহাদ,নিজের চিন্তাগুলো দূর করলো। রেফ্রিজারেটরের দরজা খুলে আবিষ্কার করলো পানির বোতল একদম উপরের সারিতে সাজানো রয়েছে।বসে থেকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়,হাত উঁচু করে চেষ্টা করলো নিহাদ,তাও পৌঁছানো গেলোনা।
– শিট।
অশ্রাব্য শব্দে উচ্চারণ করে আশেপাশে তাকালো সে, কাউকে ডাকবে কি?কিন্তু এত ভোর ভোর?চারুলতা এবং রোযা বাড়িতে নেই এটুকু জানে,বিলাল রেমান নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছেন।বিরক্ত করা উচিত হবে কি?ধুর, সঙ্গে করে ক্রাচও নিয়ে আসেনি।নিজেকে নিজে খানিকক্ষণ ভৎসর্ণা করে অবশেষে আরেক দফায় দীর্ঘ প্রশ্বাস টেনে হুইলচেয়ারের হাতল চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করলো,
– একটুখানিই তো…পারবি তুই।অবশ্যই পারবি, তোকে পারতেই হবে!
নিজের ব্যান্ডেজ পরিধানকৃত পায়ে সামান্য ভর দিয়ে শরীরকে টেনে তুললো নিহাদ।তারপরই অনুভব করলো,কতবড় ভুল করে ফেলেছে।সম্পূর্ণ শরীরে তার যন্ত্রণার তরঙ্গ খেলে গেলো,এক লহমায় পা ভারসাম্য ছেড়ে দিলো শরীরের।ফ্রিজের তাক আঁকড়ে ধরতে চাইলেও লাভ হলোনা, পিছলে গেলো হাতও।চোখ বুঁজে নিলো নিহাদ, আরো যন্ত্রণা?ব্যাপার নয়,হজম করে নেবে তাও।কিন্তু ভাগ্যের পরিকল্পনা এবার ভিন্নকিছুই ছিলো। মুহূর্তের মাঝে নিজের পিঠে বলিষ্ঠ হাতের উপস্থিতি টের পেলো নিহাদ,শক্তিশালী বাহুর বাঁধন তার পতন ঠেকালো দৃঢ়ভাবে।ভারসাম্যহীন শরীর তার আশ্রয় লাভ করলো পাথরকঠিন বিস্তৃত বক্ষমাঝে।
চট করে মাথা হেলিয়ে পিছনে তাকালো নিহাদ। হৃদস্পন্দন তার থমকে গেলো এক মুহূর্তের জন্য।এই পরিচিত অস্তিত্ব,তার নিগূঢ় প্রভাব,অন্তর নিহাদের পূর্বেই টের পেয়েছে।আসমান!ঠিক যেমনটা তার কৈশোরের ভিত্তি হয়ে থেকেছে মানুষটি,আজ আবারও তার আশ্রয়স্থল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যেন।বিনা কারণেই নিহাদের নয়ন টলটল করে উঠলো। মেঘতীরে আসার কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও একটিবারের জন্যও আসমানের সঙ্গে তার কথোপকথন হয়নি।আসেনি তার ভাই তাকে দেখতে, একবার দুবার মুখোমুখি হয়েছে হলঘরে এবং জিমে ব্যায়ামের সময়।কিন্তু নিহাদকে দেখলেই আসমান তৎক্ষণাৎ উল্টো ঘুরে ভিন্ন পথ দেখতো।বিষয়টা নিহাদের জন্য ভীষণ কষ্টকর,অভিমান জমেছে তার এই মানুষটির প্রতি।কিন্তু সত্যিই যখন আসমান নিকটে এসেছে তখন সেই অভিমান যেন অশ্রু হয়ে গলে যেতে চাইছে।
নিহাদের দৃষ্টিমাঝে তাকালো আসমান,বৃদ্ধাঙ্গুলি বাড়িয়ে নয়নকোণে জমা অশ্রুফোঁটা মুছে দিলো।কিশলয়ের মতন কাপলো নিহাদের অধর,অতি আবেগে বুজে এলো নয়নপল্লব।আসমান কোনো কিছু উচ্চারণ না করে নিঃশব্দে তাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে দিলো।হাঁটু মুড়ে বসে পা দুটো নিজের হাতে তুলে কিছুটা নিরীক্ষণ চালালো।নীরবে তাকিয়ে থাকলো নিহাদ।অবশেষে উঠলো আসমান, রেফ্রিজারেটরের তাক থেকে পানির বোতল নিয়ে নিহাদের দিকে বাড়িয়ে দিলো,বিস্তৃত হেসে তা গ্রহণ করলো তার শিষ্য।
– থ্যাংক ইউ।
আসমান নির্বিকার তাকিয়ে থাকলো,নিহাদকে পানি পান করতে দেখলো খানিকটা সময়জুড়ে।তারপর কোনকিছু উচ্চারণ না করেই কিচেনের বাইরে যেতে পা বাড়ালো।দৃশ্যটি উপলব্ধি করে অন্তরে অভিমানী ঝড় বয়ে গেলো নিহাদের।
– আসমান ভাই?
থামলোনা আসমান,এগিয়ে চললো।যেন যত দ্রুত সম্ভব পরিত্যাগ করতে চায় এই স্থান।হাতের আঙুলসমূহ পানির বোতলের চারিপাশে চেপে বসলো নিহাদের, হুইলচেয়ার ফিরিয়ে অতর্কিতে প্রশান্ত স্থির কন্ঠে বলে বসলো,
– তোমার শরীর থেকে র*ক্তের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।
পলকের মাঝে থামলো আসমান,তবে ফিরে তাকালোনা।উভয় হাত শরীরের দুপাশে ঝুলে পড়লো, মুষ্টিবদ্ধ হলো তা।
– কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
আরেকটু এগোলো নিহাদ,সতর্ক নজর তার আসমানের প্রতি বিছানো।
– কার মৃ*ত্যুপরোয়ানা জারি হলো আজ?
মুষ্টিবদ্ধ হাত মুক্ত হলো আসমানের।এক মুহুর্ত নীরবতা,অতঃপর প্রতিধ্বনিত হলো তার বজ্রকন্ঠস্বর।
– মৃ*ত্যুপরোয়ানা নয়, ন্যায়বিচার।
এটুকুই। দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেলো আসমান, সিঁড়ি বেয়ে ক্ষীপ্র গতিতে উঠে নিজের কক্ষের দিকে আড়াল হয়ে গেলো।সম্পূর্ণ সময়জুড়ে তার চলার পথে চেয়ে থাকলো নিহাদ। অধরে অধর চেপে মেঝের দিকে ফিরলো,ছোট্ট এক শান্তির নিঃশ্বাস নির্গত হলো তার বক্ষ থেকে।তীর্যক হাসি ফুটলো অধরযুগলে।কি*লিং মেশিন আসমান কখনো ন্যায়বিচার করেনা,তার শিকারকে সে সর্বদাই সম্পূর্ণরূপে ধ্বং*স করে ক্ষান্ত দেয়।কিন্তু নিজের পদ্ধতি পাল্টেছে সে, ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে?ব্যাপারটি অবিশ্বাস্যই বটে।
মেশিন নয়,আসমান অবশেষে একজন সত্যিকার মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে।
সকাল প্রায় দশটা।পরিশ্রান্ত হয়ে মেঘতীরে ফিরে এসেছে রোযা এবং চারুলতা। রুদ্ধশ্বাস এক অভিযানের মধ্য দিয়ে যেন গিয়েছে তারা গত কয়েক ঘন্টায়।জিশান আহসানের মুমূর্ষু দে*হ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,নিরাপত্তা বাহিনী জোরদার ব্যবস্থা নিয়েছে।যেখান থেকে তাকে পাওয়া গিয়েছে,সেই স্থানের আশেপাশে এক পরিত্যক্ত একতলা বিল্ডিংয়ের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক রমণীকে,যে অহনা হ*ত্যামা*মলার তৃতীয় আসামী। গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে।জিশান আহসানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং এমন এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন নিয়ে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গিয়েছে মিডিয়ায়। একে একে সকলের জবান খুলেছে যেন।অনির্বাণ আহমেদের রিপোর্ট প্রদানের পরপরই অন্যান্য সকলেও যেন এই নেমেসিস আর তার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অভূতপূর্ব ধারণাকে বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করছে।ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইকবাল আহসানের পদত্যাগের ঘোষণা এসেছে, বিকালনাগাদ তার প্রাতিষ্ঠানিক নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।এক কথায়, এ যেন অপরাজেয় শিক্ষার্থী পরিষদের চূড়ান্ত বিজয়।
চারুলতা এবং রোযা কারোরই বুঝতে বাকি থাকেনি এই ঘটনার পর্দার অন্তরালে সত্যিকারের নিয়ন্ত্রক কে।কিন্তু এক নীরব সম্মতিই উভয়ের মাঝে স্থান করে নিয়েছে,কেউ কোনপ্রকার কথা বলেনি এই সম্পর্কে।ফিরেই চারুলতা প্রথম নিহাদের ঘরের দিকে গেলো।বিষয়টা রোযাকে সামান্য বিস্মিত করলেও তেমন কিছু না ভেবে সে পায়ে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের কক্ষে পৌঁছালো।তারপরই দৃশ্যটি নজরে এলো তার।বিছানায় কম্বল গায়ে গুটিশুটি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আসমান।হালকা ভেজা মসৃণ চুলে তার সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে।রোযা সন্তপর্নে এগোলো। কাঁচের জানালার ভারী পর্দা টেনে দিলো, যেন অতিরিক্ত ঔজ্জ্বল্য ব্যাঘাত না ঘটায়।তাতে সম্পূর্ণ কক্ষ আবছায়া আরামদায়ক আলো আঁধারিতে নিমজ্জিত হলো।
রোযা বিছানার কাছে এলো।ঝুঁকে দেখলো নিজের চাঁদকে।বড্ড প্রশান্তির নিদ্রায় বিচরণ করছে সে।কিছু উপলব্ধিতেই অর্ধাঙ্গিনীর বাকি নেই।বিছানার পাশে বসে অতি যত্নে আসমানের কপালে হাত বুলিয়ে দিলো রোযা, তারপর ঝুঁকে স্নেহের চুম্বন আঁকলো।দুঃসাহস দেখিয়ে পুষ্ট অধরেও ছুঁয়ে দিলো নিজের কোমল আদর।বিড়বিড় করলো,
– ধন্যবাদ আমার চাঁদ।
সরে যেতে চাইলেও সম্ভব হলোনা।তার একটি হাত অতর্কিতে চেপে ধরলো ঘুমন্ত আসমান।জোরালো একটি টানে রোযা রীতিমত তার বুকে আছড়ে পড়লো।কম্বলের অন্তরালে তাকে আড়াল করে নিয়ে নিজের উষ্ম আলিঙ্গনে চেপে নিলো আসমান।চোখ না খুলেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বিড়বিড় করলো,
– ঘুমাও।
প্রথমটায় স্থির হয়ে থাকলেও পরবর্তীতে হাসি ফুটলো রোযার অধরে। আঁকড়ে ধরলো সে আসমানকে,নয়ন বুজলো অতি প্রশান্তি নিয়ে।এই সুখের আলিঙ্গন সে কোনোদিন সমাপ্ত করতে চায়না।
মেরিডিয়ান ভার্সিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পিছনদিকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেকার এক গোরস্থানের উপস্থিতি রয়েছে।তেমন কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই,শুধুমাত্র উঁচুনিচু বন্ধুর পথের মাটি এবং অযত্নে শুষ্ক পাতায় আবৃত ভূমি বাদে।তার একদম পাশ ঘিরেই বয়ে গেছে নর্দমা, জলাবদ্ধতা নিরসনে এটি খনন করা হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে।তার পাশ ঘিরেই মলিন স্থানজুড়ে তাজা পুষ্পরাজির ছড়াছড়ি।হাসনাহেনা,গোলাপ,রজনীগন্ধা, বেলী…..অভাব নেই কোনকিছুর।সুঘ্রাণ সমস্ত পরিবেশ এক ভিন্ন আবেশে মাতিয়ে তুলেছে যেন।ভার্সিটির অনেক শিক্ষার্থীই ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আশেপাশে।
হলের সামনের সড়কপথে একটি গাড়ি এসে থামলো।ভেতর থেকে বাইরে পদার্পণ করলো রোযা।তার সঙ্গী আরিয়ান,অভিষেক,সাবিহা।অনির্বাণ আহমেদ নিজের রিপোর্ট এবং সামনের কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে,এই স্থানে সে সবার আগেই এসেছে তথ্য সংগ্রহের জন্য তাই আজ আসেনি।সাবিহা অহনার মাকে বাইরে নামতে সাহায্য করলেন।শুধু তিনি নন, আজ মালিহার বাবা মাও এসেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
সকলে এগোতে এগোতে রোযা অপেক্ষা করতে থাকলো।কয়েক মিনিটেই তার অবসান ঘটলো।একটি জ্বীপ এসে থামলো।এক লাফে নামলো চারুলতা।তারপর পিছনের ডেক থেকে ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার বের করে আনলো।রোযা এগোলো সাহায্যে।প্যাসেঞ্জার সিটে বসে থাকা নিহাদকে সাহায্য করলো হুইলচেয়ারে বসতে।তারপর ঝুঁকে মোলায়েম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি নিশ্চিত যে তুমি এখানে থাকতে চাও?
সামান্য হেসে মাথা দোলালো নিহাদ। উঁচুনিচু পথে হুইলচেয়ার বেয়ে যাওয়া কষ্টকর,তাই চারুলতা পিছন থেকে শক্তভাবে ধরে রাখলো যেন কোনক্রমেই নিহাদ ভারসাম্য না হারায়।রোযা এবং তাদের উপস্থিত হতে দেখে সকলে ফিরে তাকালো,সামান্য কৌতূহলী দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হলো হুইলচেয়ারে বসা নিহাদের উদ্দেশ্যে।কিন্তু বান্দা নির্বিকার,দৃষ্টি তার আবদ্ধ সামনে ফুলে ফুলে সজ্জিত ভূমির দিকে।
গত কিছুদিন আগেই অহনার অব*শিষ্টাংশ এখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।সকল প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত এবং নমুনা সংগ্রহের পর দ্রুততম সময়ে তা অহনার মায়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়।এখানেই তার দাফ*নের সিদ্ধান্ত হয়।স্থানটি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হবে।অপরাজেয় শিক্ষার্থী পরিষদের প্রধান হিসাবে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হয়েছে রোযা এবং বাকিদের।যে হলে অহনাকে নৃশং*সভাবে খু*ন করা হয়েছে, তার নাম পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ মেয়েদের হলে পরিণত করার দাবী উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি বর্তমান কর্তৃপক্ষের পক্ষে।মেরিডিয়ান একাডেমিক হল ১ এর বর্তমান নাম,
অপরাজিতা হল।
অহনা নামক এক অপরিজিতার তরে যে মহাকাব্য রচিত হয়েছে তার যথাযথ সম্মান প্রদানের দায়িত্ব যেন সকলে নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অপরিজিতা যেন তা করে দেখিয়েছে।ক্ষমতার মসনদও ছাড় পায়নি সত্যের কবল থেকে।জিশান আহসান বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অবস্থার উন্নতি ঘটলেই তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। পূর্ব থেকে আটককৃত ব্যক্তিদেরও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।ইকবাল আহসানের পদত্যাগকে কেন্দ্র করে সরকারের অধীন অনেক ব্যক্তির অবস্থানই নড়বড়ে হয়ে উঠেছে।যার দরুণ ভঙ্গুর অবস্থান থেকে শক্ত অবস্থানে ফিরতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধ্য সরকার।এবং নেমেসিস?সকলের মুখে মুখে বয়ে চলা কিংবদন্তী হয়ে বেঁচে আছে সে।মজলুমের আস্থা,ক্ষমতার ত্রাস।যেন নেমেসিস আবারো সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে,কোনো এক প্রয়োজনে।তাই হয়ত আঁধার জগতের পা*পীদেরও পাপকার্য সম্পাদনে হাত কেঁপে ওঠে।এমনি এক প্রভাবশালী অস্তিত্ব নেমেসিস।
চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে নেমেসিস কিভাবে বিচার আদায় করতে হয়।ক্ষমতার মসনদের সাধ্য কি এহেন জোরদার দৃষ্টান্ত উপেক্ষা করে?
সকলের পিনপতন নীরবতা এবং ভাবনাচিন্তার অবসান ঘটলো ক্রন্দনধ্বনিতে।অহনার মা সহসাই লুটিয়ে পড়লেন ফুলেল সজ্জিত জমিনের উপর।তার আর্তনাদ সকলের হৃদয়কে স্থবির করে দিলো যেন।এক জন্মদাত্রীর হৃদয় নিংড়ানো হাহাকার,জগতে এর চাইতেও যন্ত্রণাদায়ক কি হতে পারে?
– আম্মাজান….আমার আম্মাজান….
এটুকুই শুধু উচ্চারণ সম্ভব হচ্ছে বৃদ্ধার পক্ষে।রোযা এবং সাবিহা এগোলো।সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মালিহার মাও।অহনার মাকে তিনি বুকে জড়িয়ে নিলেন,
– কাদবেন না বোন,আমাদের মেয়েরা অমর,ওরা ম*রে*নি।লাখো লাখো ছেলেমেয়ের অন্তরে, একটা গোটা দেশের মানুষের অন্তরে ওরা বসবাস করে।জীবন দিয়ে ন্যায়বিচার কিনেছে ওরা,এমন দুঃসাহসীর জন্মদাত্রী হওয়ার সৌভাগ্য কতজনের হয় বলুন তো?
মালিহার মাকে আঁকড়ে ধরে কেঁদে গেলেন অহনার মা।দৃশ্যপট লক্ষ্য করে সকলেই নিজেদের নয়নে জমা অশ্রু মুছে নিলো,কেউবা ঝরতে দিলো।বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও উপস্থিত হয়েছেন।জাহিদ সকলের সামনে,তিনি আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।তাকে ঘিরে সকল শিক্ষার্থীর অবস্থান।কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ছোট্ট একটি বক্তব্য রাখলেন তিনি,ভরসা দিলেন নিজের ভাইবোন, সন্তানের মতন শিক্ষার্থীদের এক সুস্থ সমুজ্জ্বল ভবিষ্যত উপহার দেয়ার।অহনা এবং মালিহা?মেরিডিয়ান তথা গোটা দেশের ইতিহাস তাদের উৎসর্গ স্মরণ করবে আজীবন।
রোযা মনোযোগ দিয়ে জাহিদের কথা শুনছিল,তখনি অতর্কিতে তার কাঁধে হাত রাখলো কেউ।ঘুরে তাকিয়ে অহনা মা এবং মালিহার বাবা মাকে লক্ষ্য করে সে থমকে গেলো।অহনার মা রোযার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– তুমি আমার আম্মাজানের লাইগ্যা যা করছো, তা মনে হয় আপন র*ক্তও করেনা আম্মা!তোমারে কি কমু মুই জানিনা,শুধু দোয়া থাকবে, এই জন্মদাত্রীর আত্মায় প্রশান্তি দিসো তুমি,তোমার খুব ভালো হইবো।
– ধন্যবাদ দিয়ে তোমার অবদানকে ছোট করবোনা।আমাদের মেয়েরা যদি জীবন দিয়ে এই ন্যায়ের পথে অবদান রেখে থাকে তবে তুমি অবদান রেখেছ নিজের নেতৃত্ব,শ্রম এবং র*ক্তবিন্দু দিয়ে।বহু প্রচেষ্টা হয়েছে তোমাকে দমানোর,কিন্তু তুমি দমে যাওনি। নির্ভীক লড়ে গিয়েছে।তোমার প্রতি আমার অশেষ শ্রদ্ধাবোধ না।দোয়া করি,জীবনে খুব সুখী হও আর এভাবেই ন্যায়ের পথে চলো।
মালিহার মায়ের কথায় রোযার নয়নে টলটল করে উঠলো।কোনো বাক্যই উচ্চারণ সম্ভব হলোনা তার পক্ষে।সাবিহা,আরিয়ান,এবং অভিষেককেও মালিহার মা বললেন,
– আমার মেয়ের সহপাঠী ও বন্ধু বান্ধব তোমরা, তোমরাই ওর উৎসাহ প্রেরণা,সবকিছু।তোমাদের এই ত্যাগ,এই লড়াই এবং আমার মেয়ে,অহনা তথা গোটা দেশের জন্য দৃষ্টান্তমূলক এই ন্যায়বিচার এনে দেয়ার মহযাত্রার কথা স্মরণে থাকবে সকলের আজীবন।আমার মেয়ে তো নেই,কিন্তু তোমরা আছো, তোমাদেরই প্রার্থনায় রাখবো আমি।তোমরাই আমার ছেলেমেয়ে।
– আন্টি!!
আবেগ ধরে রাখা সম্ভব হলোনা।আরিয়ান,সাবিহা এবং অভিষেক একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়লো মালিহার মায়ের বুকে।অতি স্নেহে আপন সন্তানদের মতন তাদের আগলে নিলেন তিনি,আলিঙ্গনের উষ্ণতায় সিক্ত করলেন।এমন এক আবেগী দৃশ্য শিক্ষকদের নয়নও অশ্রুতে ভরপুর হতে বাধ্য করলো।
সকলে যখন এক অনুভূতিখচিত মুহূর্তে ব্যাস্ত,তখন নিজের হুইলচেয়ার নিয়ে অহনার কব*রের নিকটবর্তী হলো নিহাদ।একনজর চেয়ে থাকলো,আনমনে পকেট থেকে বের করলো একটিমাত্র তাজা টিউলিপ।কোনো অশ্রু নেই নিহাদের দৃষ্টিতে,আছে একঝাঁক অব্যক্ত অনুভূতির প্রজ্জ্বলিত তারকারাজি।ঝুঁকে টিউলিপটি শুভ্র বেলীর মাঝে স্থাপন করে নিহাদ বিড়বিড় করলো,
– এই কলুষিত পৃথিবী তোমার যোগ্য নয়।ওপারে ভালো থেকো,লেডফিঙ্গার।
দীর্ঘ মুহূর্ত নীরবতা,তারপর সহসাই মৃদু কন্ঠস্বর ভেসে এলো পাশ থেকে,
– অনুভূতি জন্মেছিল?
উবু হয়ে হুইলচেয়ারের পাশে অবস্থান করা চারুলতার অবয়বে দৃষ্টিপাত করলো নিহাদ,সামান্য বিস্ময় ফুটলো তার সুদর্শন চেহারায়।পরবর্তীতে তা রূপান্তরিত হলো নির্মল হাসিতে।
– একটু।
প্রথমবারের মতন নিহাদকে সৎ জবাব দিতে উপলব্ধি করে চট করে ফিরে তাকালো চারুলতা।তার প্রসারিত দৃষ্টিমাঝের লোকায়িত অনুভূতি নিহাদের হাসিটি বিস্তৃত করলো।
– আমার নিজের প্রতিচ্ছবি,এক রমণীর মাঝে।ক্ষণিকের আলাপ,তবুও দীর্ঘ ভালোলাগার রেশ। ভবিষ্যৎ হয়তবা আমাদের একই পথের পথিকে পরিণত করতে পারতো।এমনসব আবেগকে ঠিক অনুভূতি বলা যায় কিনা আমার জানা নেই।
– এবং বর্তমান?
চারুলতার প্রশ্নে নিহাদ ঝুঁকলো,একটি হাত বাড়িয়ে সুদর্শনার কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা কেশগুচ্ছ কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে জানালো,
– বর্তমান আমার দৃষ্টিসম্মুখে।
ধকধক করে জোরালোভাবে স্পন্দিত হলো চারুলতার হৃদযন্ত্র,অতঃপর আর সম্ভব হলোনা।অহনার জন্য চোখ বুজে নীরব প্রার্থনা শেষে নিহাদের হুইলচেয়ার ধরলো সে।অগোচরেই ধীরে ধীরে ভিড় পাশ কাটিয়ে উভয়ে চলে গেলো,অজানা এক পথের উদ্দেশ্যে।
অতিবাহিত হলো আরো সপ্তাহখানেক।অপরাজেয় শিক্ষার্থী পরিষদ এখনো বর্তমান,যদিও তাদের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটেছে।তবে সত্যিকার অর্থে জিশান আহসান এবং তার সহযোগীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এই পরিষদের কার্যক্রম থামবেনা।আন্দোলন পরবর্তী সময় রোযা,সাবিহা, অভিষেক এবং আরিয়ানের জীবনে হয়ে উঠেছে স্বাভাবিকের তুলনায় ব্যতিক্রম।বিভিন্ন টিভি টক শোর আমন্ত্রণ রক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।যদিও রাজনীতি সম্পর্কিত কোনো কর্মকাণ্ডে তারা যুক্ত হতে রাজী নয়, তারপর একপ্রকার টানাহেঁচড়া চলছেই।বিশেষভাবে রোযাকে নিয়ে।ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রস্তাব আসতে আরম্ভ করেছে রোযার নিকট,সে যদি সত্যিই রাজনীতি বেছে নেয় তাহলে তার পথ বর্তমান হিসাবে একপ্রকার সুগমই।বিলাল রেমান এবং আসমান এই সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি,তারা শুধু এটুকুই বলেছে সিদ্ধান্ত রোযার।সে যাই করতে ইচ্ছুক থাকুক না কেনো একজন বাবা এবং একজন স্বামী হিসাবে অবশ্যই তাদের পূর্ণ সমর্থন তার সাথে থাকবে।অনির্বাণ আহেমেদের পরিবর্তন ঘটেছে ব্যাপকই।তার সোশাল মিডিয়ায় অনুসারীর সংখ্যা মিলিয়নের ঘর পেরিয়েছে।নেমেসিস সম্পর্কিত প্রথম রিপোর্ট প্রদানের পর তার দুঃসাহসিক সাংবাদিকতা এবং সত্যকে তুলে ধরার নির্ভীক লড়াই সকলক্ষেত্রে সমাদৃত হয়েছে।ইতোমধ্যে বিভিন্ন চ্যানেল হামলে পড়েছে তাকে রিক্রুট করতে।কিন্তু আপন জগতের নেতা অনির্বাণ কারো অধীনস্থ হওয়ার পক্ষপাতী নয়।সে আগের মতই চলছে, সত্যকে অনুসরণ করে,স্বাধীন সৈনিক হয়ে।
আজ হাবিবকে নিয়ে একবার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আসমানের।গোপন কাজ রয়েছে।গোপন বলতে বাড়ির বাকিদের কাছ থেকে গোপন। হাল ছাড়েনি সে,আলফার খোঁজ অব্যাহত রয়েছে।বান্দা দেশে আছে নাকি ইতালি ফিরেছে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে গিয়েছে।প্রথমে সত্যিকারে শত্রুর অবস্থান চিহ্নিত করতে হবে,তারপর পরিকল্পনা সাজাতে হবে।কি করবে আসমান?আলফাকে খু*ন করবে?আদও সম্ভব তার পক্ষে?হ্যাঁ,একটি হিটটিম রয়েছে তার।বিপরীতে আলফার নেতৃত্বে পরিচালিত হয় গোটা এক মাফিয়া সাম্রাজ্য।জয়ের আশা ক্ষীণ, তবুও আসমান কখনো হাল ছাড়তে শেখেনি।
পরিধানের ইন্ডিগো বর্ণের শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে আসমান এগোচ্ছিল ঠিক তখনি কক্ষে প্রবেশ করলো হুইলচেয়ার।ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকালো আসমান,নিহাদ ফ্যালফ্যাল করে নিষ্পাপ এক শিশুসুলভ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার উদ্দেশ্যে।ঘণ্টা দুয়েক আগে চারুলতা এবং নার্স তাকে ব্যায়ামের জন্য জিমে নিয়ে এসেছিল তা আসমান দেখেছে।কিন্ত এই ছেলে এখানে কি করছে?খানিক কৈফিয়তের ভঙ্গিতে নিহাদ বললো,
– ঘেমেনেয়ে একেবারে একাকার হয়ে গিয়েছে।আমাকে গোসল করতে একটু সাহায্য করবে?
অধর ফাঁক হলো আসমানের,তবে প্রশ্ন করার পূর্বেই নিহাদের উত্তর চলে এলো।
– ওই পেত্নী…. আই মিন চারু একটা জরুরী কাজে বাইরে গিয়েছে।আর নার্স…আমি ছেলেমানুষ।তার কাছে লজ্জা লাগে।
নিহাদের একজন পুরুষ সহযোগীও রয়েছে অবশ্যই।কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাপারটি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।আসমান ছোট্ট এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো,এই ছেলের উদ্দেশ্য এতটাই স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ যে তার রীতিমত হাসি আসছে।
– আসমান ভাই…. প্লীইইজ…তোমাকে গুরু দেবের দোহাই!
কাচুমাচু ভঙ্গিতে আবদার করলো নিহাদ।তার দৃষ্টির প্রার্থনা এতটাই উপেক্ষার অযোগ্য যে আসমান মাথা ঝাঁকিয়ে প্রচেষ্টা করেও সক্ষম হলোনা।অবশেষে হার মেনে নিজের কক্ষের বাথরুমের স্লাইডিং ডোর খুললো।নিহাদ নিষ্পলক চেয়ে থাকলো কিছু মুহূর্ত, যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা।তারপর চওড়া হাসি ফুটলো ছেলেটার অধরে।
– ইউ আর দ্যা বেস্ট ব্রো!
হুইলচেয়ার নিয়েই ঢুকলো নিহাদ।আসমান নতুন তোয়ালে এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে এলো।নিঃশব্দেই তাকে হুইলচেয়ার থেকে বাথটাবে বসতে সাহায্য করলো।পানির তাপমাত্রা ঠিক করে কল ছাড়লো আসমান,এক টানে নিহাদের পরিধানের টি শার্ট খুলে নিলো।স্পঞ্জে বাথ ওয়েল নিয়ে সামান্য আঁচে ঘষতে থাকলো পিঠ,ঠিক যেন এক শিশুকে গোসল করাচ্ছে সে।নিঃশব্দে ভাইসুলভ স্নেহটুকু গ্রহণ করতে থাকলো নিহাদ।সে অসুস্থ হলে মাঝে মাঝে আসমান এভাবেই তাকে গোসল করিয়ে দিতো।আজ সেই স্বর্ণালী অতীতের কথা ভীষণভাবে মনে পড়ছে।তাই যেন আবার ফিরে এসেছে জীবনে।
নিহাদের পা সাবধানে রেখে আসমান স্টুল নিয়ে পিছনে বসলো।হাতের তালুতে শ্যাম্পু নিয়ে তার চুলে আঙুল চালাতে চালাতে হঠাৎ নিহাদ নীরবতা ভেঙে বলে বসলো,
– আর কতদিন এড়িয়ে চলবে আসমান ভাই?
এক মুহূর্তের জন্য স্থবিরতা।পরক্ষণেই আবার ক্রিয়া চলমান থাকলো।যেন নিহাদের প্রশ্নের কোন প্রভাব পড়েনি আসমানের উপর।সে নিজের কাজেই ব্যাস্ত।
– হাসপাতালে একবারও আমাকে দেখতে যাওনি।কতটা খুঁজেছিলাম তোমাকে জানো?আমি আর কোনোদিন হাঁটতে পারবো কি পারবো না নিয়ে যখন সন্দেহ ছিল,তখন খুব করে চেয়েছি তোমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে নিজেকে উজাড় করে কাদতে।কিন্তু তুমি যাওনি।এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হলে বলো তো?তোমার চোখের সামনে আমি থাকি,দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা। এরপরও এতটা ক্রুরতা কেনো?
– আমি নিষ্ঠুর,নির্দয়,অনুভূতিহীন মেশিন।ভুলে গিয়েছ আমার সত্যিকার পরিচয়?
কর্ণগোচর হতেই নিহাদ দাঁত দিয়ে অধর কামড়ে ধরলো।আসমান মুখ খুলেছে,বেদনাদায়ক বাণী উচ্চারণ করতে?তাই। ঝুঁকলো আসমান,নিহাদের কাঁধে দুহাত চেপে অশুভ এক কন্ঠে জানালো,
– ভুলে যেওনা, আমিই সে যে ব্যবহৃত পুরাতন জড়বস্তুর মতন তোমাকে ছুঁড়ে ফেলেছি। প্রয়োজনে আবার ফেলবো।আমার কাছে ভ্রাতৃত্ব কিংবা অনুগামীতার কোনো মূল্য নেই।আমি শুধু ব্যবহার করতে জানি।ঠিক বাদশাহ কায়সারের মতন।
সজো*রে নিহাদের হাত আ*ঘা*ত হান*লো বাথটাবের শক্ত প্রান্তে।কর্কশ কন্ঠ তার প্রতিধ্বনিত হলো উষ্ণতায় ধোঁয়াটে বাথরুমের দেয়ালে দেয়ালে।
– আর একবার কথাটা উচ্চারণ করলে ঘু*ষিটা তোমার মুখ বরাবর পড়বে!
কিঞ্চিৎ হাসলো আসমান।
– মা*রবে তুমি আমাকে?
– প্রয়োজন পড়লে তাই।
– দুধের দাঁত পরেছে এখনো?
– গুরুজনেরাও ভুল হতে পারে,শিশুরাও পারে নতুন শিক্ষায় তাদের শিক্ষিত করতে।
নীরব থাকলো আসমান।নিহাদ চট করে ফিরে তাকালো তার দিকে।ক্রুব্ধ তার দৃষ্টি,তবে তার মাঝেও কোথাও যেন এক বেদনা এবং নমনীয়তা লুকানো রয়েছে।
– তুমি নিষ্ঠুর?ক্রুর? মানছি,কিন্তু তা কাদের জন্য? যারা অন্যের জীবন দূর্বিষহ করে তোলে তাদের জন্য।আমাকে জড়বস্তুর মতন ছুঁড়ে ফেলেছ?মানলাম।কিন্তু তুমি তো বাদশাহ কায়সারের মতন নিজের র*ক্তকে নিঃশেষ করতে চাওনি!বাদশাহ কখনো তার অনুগামীকে পরিত্যাগ করার পর প্রতিশোধ নিতে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ক্ষমতাধর শত্রুর মুখোমুখি হতে যায়নি,বাদশাহ কখনো অন্তরাল থেকে রক্ষা করেনি, বাদশাহ কখনো গোপনে হাসপাতালের পাশের বিল্ডিংয়ে নিরাপত্তার জন্য স্নাইপার বসিয়ে রাখেনি,বাদশাহ কখনো নিজের বাড়িতে পরিবারের সদস্যের মর্যাদায় আগলে নেয়নি,বাদশাহ কখনো এক ছন্নছাড়াকে নতুন পরিবার দান করেনি।তবে কেনো এই অনর্থক তুলনা?
স্পঞ্জে চেপে বসলো আসমানের হাত,দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সে।নিহাদ আবারো হুংকার দিলো যেন,
– চুপ কেনো?জবাব দাও!আজ যদি তোমার জায়গায় আমি আর আমার জায়গায় তুমি থাকতে তখন তুমি কি করতে?এভাবে পাষাণের মতন নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে?কিসের অপরাধবোধ তোমার?ভাইয়ের কাছে ভাইয়ের কোনো অপরাধবোধ থাকতে পারে?যদি সুযোগ থাকতো তবে কি তুমি আমাকে রক্ষায় ওই আলফার গোটা বাহিনীকে এক ঝটকায় নিঃশেষ করে দিতে না?
কোনো জবাব আসছেনা।নিহাদের আবেগের চিৎকার সীমা ছাড়ালো যেন,আসমানের কলার চেপে ধরলো সে,উচ্চশব্দে বললো,
– তোমার তো একটা গোটা পরিবার আছে।কিন্তু আমার কি আছে?আমার কাছ থেকে আমার আসমান ভাইকে কেনো কেড়ে নিচ্ছো?তাকে কেড়ে নেয়ার অধিকার তোমার আছে?স্বার্থপর,কাপুরুষ!
– নিহাদ!
আসমানের হাত উত্তোলিত হলো, চড় বসালো নিহাদের কপোলে।প্রতিক্রিয়ায় বাথটাবের দেয়ালে ধাক্কা খেলো সে।পানির উচ্ছলন।অতঃপর, পিনপতন নীরবতা।কয়েক মুহূর্ত রুদ্ধশ্বাস অবস্থান।ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে তাকালো নিহাদ,চেহারায় তার কান্নামাখা এক পরিতৃপ্তির হাসি।আর সহ্য হলোনা আসমানের।জোরালো টানে নিহাদকে নিজের বক্ষমাঝে আগলে নিলো,তাকে পাল্টা আঁকড়ে ধরলো নিহাদ।
– আসমান ভাই….
– নিহাদ…
– আমাকে ভালোবাসো তাইনা?
– খুব।
– আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
– ক্ষমা করে দিও এই অধম ভাইকে।
– তুমি আগলে নিয়েছ,এই অনেক।
দীর্ঘ এক মুহুর্ত আবেগের বিনিময় ঘটলো।দুটো মানুষ।একজন গম্ভীরতা এবং অপরজন প্রফুল্লতার আড়ালে নিজেদের অনুভূতি সংগোপনে লুকিয়ে অভ্যস্থ।তবে আজ তাদের মাঝে অপরাধবোধ কিংবা অভিমানের দেয়াল গুঁড়িয়ে গিয়েছে।জয়ী হয়েছে ভ্রাতৃত্ব।র*ক্তের সম্পর্ক নেই।তবুও অন্তরের এই নিগূঢ় টান যেন তার চাইতেও ব্যাপক।
অবশেষে আসমান আলিঙ্গন ভাঙলো।নিহাদের অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বোলালো। বিড়ালছানার ন্যায় সগর্বে তা গ্রহণ করলো নিহাদ।আসমানের ভ্রু কুঞ্চিত হলো,বলে বসলো,
– আমি জানি তুমি দরজার বাইরেই আছো।ভেতরে এসো রোযা।
জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে দরজা পেরিয়ে উঁকি দিলো রোযার হাস্যোজ্জ্বল মুখ।
– আরে না না।আমি আর বিরক্ত করবোনা।ইউ টু কন্টিনিউ।
– ফুলটুশীইইই!আসো আসো।আসমান ভাইয়ের তুলনায় তোমার হাত নরম বেশি,একটু মাথা ধুইয়ে দিয়ে যাও।
সত্যি সত্যি মাথা ঝুঁকিয়ে ধরলো নিহাদ,তাতে খিলখিল করে হাসলো রোযা।ভ্রুকুটি করলো আসমান,মাথায় হালকা চাটি দিয়ে বললো,
– এই না বললে তুমি পুরুষমানুষ?লজ্জা লাগে?
– রোযা তো আমার দশটা না পাঁচটা না একটামাত্র ভাবীজান।ও যদি আমাকে….
পাশ থেকে স্পঞ্জ তুলে তৎক্ষণাৎ নিহাদের মুখে ঘষে দিলো আসমান।তাতে বেচারা ভড়কে গিয়ে পানিতে আছড়ে পড়লো,
– ওয়াক…ওয়াক… থু!
– আমার বউয়ের থেকে দূরে থাকবে তুমি।
– এমন প্রতিহিংসা আল্লাহ সহ্য করবেনা!
উভয় ভাইকে নিজেদের সহজাত রূপে ফিরে আসতে লক্ষ্য করে রোযা নিজের হৃদয়ে অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করলো।অবশেষে বোধ হয় সত্যিই সুখ ফিরে এলো রেমান পরিবারের মানুষগুলোর মাঝে।
কিছুক্ষণ বাদে নিহাদের গোসল সেরে তাকে নিচে নিয়ে গেলো আসমান।হলঘরে বসে থাকা চারুলতা, হাবিব এবং বিলাল যেন অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হলো। সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে আসমান,তার কাঁধে উপুড় হয়ে ঝুলছে নিহাদ। পিছনে রোযা হুইলচেয়ারটি টেনে নিয়ে আসছে।আড়চোখে নিজেদের মাঝে দৃষ্টি বিনিময় করলেন বিলাল এবং চারুলতা।পরিকল্পনা কি তবে স্বার্থক?
– গভীর জলের ফিস আমি গভীর জলের ফিস, পাবলিক তাই নাম দিয়েছে খোঁকা চারশো বিশ…
– শাট আপ!
নিহাদের বেসুরো সুর বন্ধ হলো আসমানের চপাটে।খিলখিল ধ্বনি তুলে হাসতে আরম্ভ করলো সে।আসমানের গ্রীবা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
– আমার ওজন জানো?
– আমি বহন করতে পারবোনা এমন নয়।
– বয়স হয়েছে তোমার,কোমরে ব্যথা উঠলে আমি দায়ী নই।
– ছুঁড়ে ফেলবো একদম সিঁড়ির নিচে!
হু*মকি দিলেও তা আসমান করলোনা।বরং নিচে নেমে সাবধানে নিহাদকে সোফায় বসিয়ে দিলো।তারপর দৌঁড়ে ফিরে গেলো,রোযার কাছ থেকে হুইলচেয়ার নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামিয়ে এনে রাখলো।কেউই তাকে নিহাদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি কিংবা অবনতি নিয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করলোনা।সোফায় বসা নিহাদ ততক্ষণে হাবিবের দিকে নজর দিয়েছে।একটি গিটার নজর কেড়েছে তার।
– কিরে মামুর ব্যাটা?তুই কবে থেকে গিটারবাজ হলি?
– আমার বোনের জন্য কিনেছি।
– তা এখানে কি শো অফ করতে এসেছিস?তোর বেতন বেড়ে গিয়েছে নাকি?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে হাবিব জবাব দিলো,
– আসমান ভাইয়ের কাছে একটু জানতে চেয়েছিলাম যে…..
– আরে রাখ তোর আসমান ভাই!মিউজিকের গুরু তো আমি!ও কাচকলা বোঝে।সারাদিন প্রস্তর যুগের বিরহের গান শোনে।তোর বোনের কি বিরহের গান গাওয়ার বয়স?আমাকে দে… দেখ খালি আমার ক্যালমা!
হাবিবের অনুমতির পরোয়া না করেই নিহাদ গিটার কেড়ে নিলো রীতিমত।অতঃপর…..
~টুনি আমার জানেরই জান পরানের পরান
টুনির মায়রে খাইতে দিমু সুপারি আর পান
টুনি বধূ সাজবো, টুনি লজ্জা পাইবো
টুনিরে লইয়া আমি বাসর সাজাবো~
হতবিহ্বল আসমান।এতটা বাজখাঁই এবং তাললয়হীন কণ্ঠস্বরের ঝংকার তার বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে যেন।কিন্তু রেমান পরিবারের বাকিদের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।তারা নিহাদ নামক এক পাগলাটে পুরুষের উন্মাদনায় যোগ দিয়েছে। চারুলতাও কাককণ্ঠী গলা ছেড়ে যোগদান করেছে পৃথিবী কাঁপানো কনসার্টে। হাবিবও তালে তালে হাততালি দিচ্ছে,যদিও তালের মায়রে বাপ করে ছেড়েছে নিহাদ।সবথেকে রোমহর্ষক ব্যাপার বিলাল এবং রোযা পাঞ্জাবী ড্যান্সের মতন খানিক অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে কনসার্টের ব্যাকআপ ড্যান্সার হিসাবে যোগ দিয়েছে।শুধুমাত্র আসমান তাদের মাঝে থ হয়ে রয়েছে।কিছুতেই হজম হচ্ছেনা এই কারবার।
~ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না
যার তার লগে ডেটিং করে আমায় চেনে না~
নিহাদের বেসুরো ভয়ানক কন্ঠস্বর এবং হাতের গিটারের মারাত্মক কর্কশ আর্তনাদে সঙ্গীতটি শোনালো হাহাকারের মতন।হতবিহ্বল আসমান সোফায় বসে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো। চারুলতা, হাবিব যোগদান করেছে নিহাদের সুর….উহু বেসুরের রাজত্বে।অপরদিকে শ্বশুড় বউমা জুটি সোফার পিছনে তালে তালে নৃত্যশৈলীতে ব্যাস্ত।যেন ক্লাবের জোরদার মিউজিকের মাঝে ছেড়ে দেয়া হয়েছে দুই নেংটি ইদুরকে। গিটারখানি নিহাদ আঙুল চালাতে চালাতে প্রায় ভেঙেই ফেলছে, ধপধপে শব্দে সম্পূর্ণ মেঘতীর জুড়ে যেন ভূকম্পন খেলে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
চারিপাশের দক্ষযজ্ঞের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো আসমান,কপালে হাত চালালো।অসম্ভব,সে এই মানসিক বিকারগ্রস্থ পরিবারের সদস্য হতেই পারেনা!
ডার্কসাইড পর্ব ৫৬
কিন্তু ঠিক পরমুহুর্তেই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের মুখে অকৃত্রিম হাসির উদগীরণ লক্ষ্য করে আসমানের অন্তর অনুভূতির জোয়ারে সিক্ত হলো।এমন একটা পরিপূর্ণ পরিবারই তো তার স্বপ্ন।অবশেষে এই পরিবার পূর্ণতা পেয়েছে,উদিত হয়েছে সুখসূর্য।সকলের আনন্দের অগোচরে মুষ্টিবদ্ধ হলো আসমানের হাত।আর লুকোচুরি নয়। লড়বে সে, লড়বে তার পরিবারের সুখের তরে। আলফা হোক কিংবা রাফা কায়সার….প্রত্যেক শত্রুর ভয়াল থা*বা থেকে নিটল হিমালয় হয়ে রক্ষা করে যাবে সে তার প্রশান্তির নীড়কে।
