ডার্কসাইড পর্ব ৬৪

ডার্কসাইড পর্ব ৬৪
জাবিন ফোরকান

ঢাকা,সিক্রেট ক্লাব।
সোফায় বসে দরদর করে ঘামছেন সরকারের নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিনহাজুর রহমান। ডান হাতখানিতে তার একটি রুমাল গুঁজে রাখা,যা কম্পিত হচ্ছে বারংবার।বুকের ভেতর এক ভারী চাপ অনুভূত হচ্ছে,এই বুঝি মোচড় দিয়ে ওঠে!বয়সের কারণে নাকি দুশ্চিন্তায় তা বোধগম্য নয়।একের পর এক ঢোক গলাধঃকরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।জনগণ ক্ষমতাধর সিংহাসনের অধিকারীর এমন অবস্থা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেলে বিহ্বল হতো বৈকি!ক্লাবের মৃদু মন্থর সঙ্গীতের ধ্বনিও আজ তার উত্তাল হৃদয়কে প্রশান্তি দিতে ব্যার্থ। অ্যালকোহলও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেনা।নিজেকে মিনহাজ সাহেবের মনে হচ্ছে ফাঁ*দে আবদ্ধ কোনো দূর্বল শিকার,যার পানে হিং*স্র দৃষ্টি বিছিয়ে রয়েছে নির্দয় শিকারী।

বিপরীত প্রান্তে একদম ফুরফুরে ভঙ্গিতে বসমান বান্দাকে পর্যবেক্ষণ করলেই তার অন্তরে একইসঙ্গে আতঙ্ক এবং সমীহ ভর করছে।হালকা নীল বর্ণের ঢোলা হাফহাতা শার্ট এবং ফরমাল পরিধানে অভিজাত বান্দা এক হাঁটুর উপর অন্যটি তুলে খানিক বেপরোয়া ভঙ্গিতেই বসে আছে।বয়স হিসাব অনুযায়ী পঞ্চাশের কোঠায় হলেও শক্তিশালী যত্নশীল সুঠাম অবয়ব এবং তীক্ষ্ণ গাঁথুনির সুদর্শন চেহারায় তার ধারণা করা মুশকিল।মুখজুড়ে ছড়ানো আধপাঁকা খোঁচা খোঁচা দাড়ি,নাকের নিচের দিকটায় ঢেউ খেলানো গোঁফ।নয়নের দুর্বোধ্য দৃষ্টি,লম্বাটে আঙুলমাঝে প্রজ্জ্বলিত প্ল্যাটিনাম ব্যান্ড।বর্তমানে দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেমান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার বিলাল রেমানের উপস্থিতির মাঝে বেশ গভীর এক প্রভাব রয়েছে।শুধুমাত্র বিত্তের নয়,তার অবয়বে খচিত এক অব্যক্ত ক্ষমতার ইন্দ্রজাল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিলালের পাশে বসে থাকা যুবক ছেলেটি মিনহাজের দ্বিতীয় বিস্ময়ের কারণ।কটকটে সবুজ বর্ণের হুডি এবং কালো জিন্স পরিধানে বান্দার গালজুড়ে গভীর টোলের অস্তিত্ব।দূরদর্শী দৃষ্টিসম্পন্ন চোখজুড়ে শোভিত পঞ্চভূজাকৃতির চশমা।স্থির চেয়ে আছে সে,যেন মাপজোখ সারছে দৃষ্টি দিয়েই।দেশব্যাপী চলমান অহনা হ*ত্যা*র বিচারের আন্দোলনে এই ব্যক্তি সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।অনির্বাণ আহমেদ নামটি চিনতে তাই মিনহাজের কোনোপ্রকার বেগ পেতে হয়নি।
দীর্ঘ নীরবতা ভেদ করে অবশেষে বিলালের শীতল কন্ঠস্বর ধ্বনিত হলো,

– মন্ত্রীসাহেব,আমার সময়ের মূল্য রয়েছে।টাইম ইয মানি, অ্যান্ড মানি ইয পাওয়ার। আশা করছি এই সময় অনর্থক প্রমাণিত হবেনা।যদি হয়….
বাকিটুকু আর উচ্চারণ করলেন না বিলাল।তার সুবিস্তৃত অধরজুড়ে এক চিলতে অশরীরী হাসির প্রজ্জ্বলন ঘটলো।মিনহাজ তাতে স্পষ্ট শিহরিত হলেন।কন্ঠ পরিষ্কার করে বললেন,
– দেখুন মিস্টার রেমান।এই ব্যাপারটা এতটাও সহজ নয়।মন চাইলো আর করে ফেললাম?উহু,হাজারটা আইন কানুন অনুসরণ করতে হয়,প্রস্তুতি নিতে হয়।আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিক আছে,কিন্তু আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীর বিশেষ বিশেষ কিছু বিষয় থাকে যেখানে আমারও হস্তক্ষেপ অসম্ভব।

– আমাকে আইন কানুন শেখাচ্ছেন?আপনাদের অর্থে পালতু বাহিনী মনিবের কথা না মেনে যদি অন্য কারো ইশারায় নেচে অভ্যস্থ হয়ে থাকে তবে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে আমি সত্যিই শংকিত।
হাসিমাখা কন্ঠেই জানালেন বিলাল,কিন্তু তার অভিব্যক্তিতে শীতল সতর্কবাণী স্পষ্ট। ঘাড় ডলতে আরম্ভ করলেন মিনহাজ,কোনক্রমেই এই বান্দাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয় ভালোমতই অনুধাবন হচ্ছে তার।অনির্বাণ এতক্ষণ যাবৎ নীরব পর্যবেক্ষণ চালালেও বর্তমানে মুখ খোলাকেই সমীচীন মনে করলো।সোফায় নড়েচড়ে বসে একটি কোল্ড ড্রিংকের গ্লাস তুলে নিয়ে চুমুক দিলো সে,অতঃপর বললো,
– সরকারের এক্ষেত্রে এত গড়িমসির কারণ?তাহলে কি সরকারেরও স্বার্থ রয়েছে এতে? হুম, ইট উইল বি আ ভেরি হট টপিক।খুব শীঘ্রই খতিয়ে দেখে একটা ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।
– না না,তুমি এসব কি বলছো ছেলে?

ঘাবড়ে গেলেন মিনহাজ,তার উতলা ভাব লক্ষ্য করে তীর্যক হাসলো অনির্বাণ।দৃষ্টি বিনিময় করলো বিলাল রেমানের সঙ্গে।দীর্ঘ প্রশ্বাস টানলেন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,তারপর বললেন,
– সোজা ভাষায়,আপনারা আমাদের ব্ল্যাকমেইল করছেন তাইতো?
উত্তরে শুধু সামান্য শব্দ করে হাসলেন বিলাল।সোফায় এলিয়ে রাখা নিজের নি লেন্থ কোটটি তুলে নিয়ে বাহুতে ঝুলিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।তার কার্যক্রম অনুসরণ করলো অনির্বাণও।এক চুমুকে সম্পূর্ণ গ্লাস নিঃশেষ করে হুডি ঝেড়ে উঠে পড়ল। হাতঘড়িতে তাকালো সময় দেখার উদ্দেশ্যে।

– আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন।আপনার সরকারের অবস্থান ভালো নয়,আমার কাছে অনেক কিছু পোষানো বাকি আছে তাদের।এর মাঝেই নির্বাচনে যদি বিরোধী দল জয়ী হয়,তাহলে আগামী এক দশকে ক্ষমতার সিংহাসন লাভের বাসনা আপনাদের ত্যাগ করাই শ্রেয়। আফটার অল…..
ঝুঁকলেন বিলাল,মিনহাজের দৃষ্টিতে নিজের নিগূঢ় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মিলিয়ে মৃদু কন্ঠে ঘোষণা করলেন,
– আই অ্যাম রিয়েলি হার্ড টু প্লিয……

বরফখন্ডে পরিণত হলেন মিনহাজ,যেন সামান্যতম নড়চড়ও অপরপক্ষকে রুষ্ট করতে যথেষ্ট।তীর্যক হাসলেন বিলাল,দুই আঙ্গুলে তার কপোল ছুঁয়ে পরপর তিনবার চাপলেন,এক অবোধ্য ইশারা।তারপরই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সোফাকে পাশ কাটিয়ে এগোলেন।অনির্বাণ নিজের চশমা ঠিকঠাক করে হতবিহ্বল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে তাকালো,
– পাগলেও নিজের ভালো বোঝে।জনগণের দৃষ্টিতে সরকার যোগ্যতা হারিয়েছে।নাহলে আমার মতন এক ক্ষমতাহীন শখের সাংবাদিক আজ এখান পর্যন্ত উপস্থিত হওয়ার যোগ্যতা রাখতো না, জনগণই আমায় সেই ক্ষমতা দিয়েছে।আপনার আগে এই গদিতে যে ছিল সে বর্তমানে কারাগারের কপাটে আবদ্ধ,তার ছেলে ফাঁ*সিকাষ্ঠে ঝো*লার প্রহর গুণছে।কোন অবস্থানে আছেন মাথায় রাখবেন আশা করি।কে বি গ্রুপ নেই আপনাদের রক্ষার জন্য।

মৃদু হেসে টেবিলে রাখা ল্যাপটপ থেকে পেনড্রাইভ খুলে নিয়ে পকেটে ভরলো অনির্বাণ।তারপর বিলালকে অনুসরণ করলো।উভয় ব্যক্তির চলার পথের দিকে নিশ্চল চেয়ে রইলেন মিনহাজ। কাঁধের উপর এক হাত দিয়ে কোট ঝুলিয়ে অপর হাত প্যান্টের পকেটে ভরে এগিয়ে যাচ্ছেন বিলাল। মুখজুড়ে নির্বিকারতা।একটিমাত্র অস্তিত্ব,অথচ তার প্রভাবের কোনো কমতি নেই।ক্ষমতাও বিত্তের সামনে নতজানু।চূড়ান্ত ক্ষমতা আসলে কার?কোনো উত্তর পেলেন না মিনহাজ।
ক্লাবের বাইরে আসতেই অনির্বাণের পকেটে থাকা ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো।বের করতেই কলার আইডিতে ভেসে ওঠা নামটি তার অন্তরে প্রশান্তি ছুঁয়ে দিলো।খানিকটা হেঁটে দূরে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ঠেকালো সে।রমণীর উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর ভেসে এলো,

– সবকিছু ঠিক আছে?
মৃদু হেসে যেন তার চিন্তাকে দূরীভূত করতে চাইলো অনির্বাণ।
– সাবিহা,সবকিছু ঠিক আছে,চিন্তা করোনা।
এক মুহুর্ত নীরবতা।তারপর সাবিহা প্রশ্ন করলো,
– রোযা আপুর কোনো খবর আছে?কি পরিস্থিতি জানো কিছু?মিস্টার রেমান তোমাকে কিছু বলেছে?প্লীজ অনির্বাণ,লুকিও না,আমাকে বলো।আমার ভীষন চিন্তা হচ্ছে।
নৈঃশব্দ্য।চট্টগ্রামের খবর অনির্বাণের কাছে থাকলেও তা সাবিহার সঙ্গে বিনিময় করার উপযোগী নয়,অন্তত আপাতত নয়।কথা ঘুরিয়ে তাই অনির্বাণ বললো,

– চিন্তা করোনা সাবিহা।আমরা সবাই চেষ্টা করছি।সকলে আছে,মিস্টার রেমান,মিস্টার নীল,নিহাদ…. তারা রোযার কিছু হতে দেবেন না।দেখবে উনি ঠিক সুস্থ সবলভাবে ফিরে আসবেন।
– তুমি যাই বলোনা কেনো অনির্বাণ,আমি কিছুতেই অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হতে পারছিনা।
– তোমার কোনো দোষ নেই,ডু ইউ হেয়ার মি?সবটাই আমার সিদ্ধান্ত ছিল,আর তার মাশুল আমিই গুণছি।
– কিন্তু তুমি যা করেছ তাও তো আমার জন্যই!
– হুশ।আমি এই সম্পর্কে কথা বলতে চাইনা।রাত হচ্ছে, লক্ষ্মী মেয়ের মতন খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।আর হ্যাঁ, ডক্টর যে স্ট্রেস রিলিফ ঔষধ দিয়েছেন, তা নিতে একদম ভুলবেনা।

– আমি ঘুমাবোনা।
– কেনো?
– তাহাজ্জুদ পড়বো।রোযা আপু আর সবার জন্য দোয়া করবো।
থমকালো অনির্বাণ, আপনমনে এক কোমল হাসির প্রস্ফুটন ঘটলো তার অধরে।একটি নিঃশ্বাস ফেললো সে,অতঃপর নমনীয় কন্ঠে জানালো,
– আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার মন যাতে শান্তি লাভ করে তাই করো।
– তুমি সাবধানে থেকো অনির্বাণ,আমি জানি তুমি আমাকে বলছোনা কিন্তু ব্যাপারটা আদতেই গু*রুতর।তবুও আমি তোমাকে আটকাচ্ছি না,কারণ আমি তোমার পথে কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চাইনা।তোমার নির্ভীকতা এবং সংগ্রাম আমার গর্ব।

– আহা, আরও একটু বলো,শুনতে ভালো লাগছে।
– বাকিটুকু সরাসরি বলবো।এখন রাখছি।শুভরাত্রি।
– শুভরাত্রি ডিয়ার।
অন্তিম মুহূর্তে এক লাজমিশ্রিত হাসির আওয়াজ শুনলো অনির্বাণ।তারপরই ফোন কেটে গেলো।বিস্তৃত হাসিমাখা অধরে আবেশিত মুহূর্তের সমাপ্তি ঘটিয়ে ফোন পকেটস্থ করলো শখের সাংবাদিক।তারপর উল্টো ঘুরলো।এগিয়ে গেলো অপেক্ষারত গাড়ির উদ্দেশ্যে,যার প্যাসেঞ্জার সিটে ইতোমধ্যে বিলাল রেমান বসে আছেন।তার পাশে চড়ে বসতেই গাড়ি ঢাকা শহরের সড়কপথ বেয়ে অগ্রসর হলো মাঝারি গতিতে। বিলালকে আইপ্যাডে মনোযোগ দিয়ে কিছু করতে লক্ষ্য করে অনির্বাণ শুধালো,
– আপনি কি চট্টগ্রামে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন?
কোনো জবাব এলোনা বিলালের তরফ থেকে।স্ক্রিনের আভায় তার অধরে প্রজ্জ্বলন ঘটা সূক্ষ্ম হাসিটুকুই অনির্বাণের কাছে যেন সবকিছু ঘোষণা করে দিলো।

চট্টগ্রাম।
“দ্যা রেইস অফ ডে*থ”
কুচকুচে কালোতে আচ্ছন্ন বিলবোর্ডের মাঝে টকটকে রক্তিম অক্ষরে প্রজ্জ্বলিত লেখাটির উদ্দেশ্যে একদৃষ্টে চেয়ে আছে রোযা।অন্তরে ঠিক কেমন অনুভূত হচ্ছে ব্যাখ্যা করা দায়।চারিদিকের গুঞ্জন বহুগুণে বৃদ্ধিলাভ করেছে।গ্যালারি পরিপূর্ণ আঁধার জগতের সঙ্গে যুক্ত ক্ষমতাবান সকল অস্তিত্বের উপস্থিতিতে।সকলেই উত্তেজিত,স্পষ্ট তাদের লালসা চরিতার্থ করবার বাসনা।মানব হৃদয়ের ভ*য়াল উদ্দেশ্য সাধনের ব্যাকুলতা দেশী বিদেশী চেহারাসমূহ জুড়ে।না চাইতেও শরীরে শিহরণ খেলে যায় তা উপলব্ধি করে।রোযা নিজের সোফায় বসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে,তার দৃষ্টি খুঁজে ফিরছে ভিড়ের মাঝে আপন অস্তিত্বসমূহকে।আসমান আছে,সে নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা ব্যতীত আসেনি।অর্থাৎ নিহাদও রয়েছে, থাকতে পারে চারুলতাও,হাবিব,বিলাল রেমান?নাকি রোযা অধিক চিন্তা করছে?নিজের পরিকল্পনা আসমান সুস্পষ্ট করেনি,শুধু ভরসা রাখতে বলেছে।নিজের ভূমিকা নিয়ে কিঞ্চিৎ দ্বিধায় ভুগতেই পাশ থেকে একটি কৌতুকপূর্ণ কন্ঠস্বর ভেসে এলো,

– মৃ*ত্যু দেখার অভ্যাস আছে?
মাথা কাত করে রাশিয়ান গ্যাং নেতার প্রলুব্ধ দৃষ্টিমাঝে চেয়ে রোযা বিস্তর হাসলো। কোনো উত্তর করলোনা।মৃ*ত্যু?এই দিমিত্রীর ধারণায়ও হয়ত নেই কতটা বিভীষিকাময় পথ পাড়ি দিয়ে রোযা এই পর্যায়ে পৌঁছেছে।যাত্রাপথ জুড়ে ছিল নৃশং*সতা,ভয়া*বহতা এবং অবক্ষয়ের চরম প্রদর্শন। দুঃসাহসী সত্তায় পরিণত হয়েছে সে,খেলতে শিখেছে স্বয়ং মৃ*ত্যুর সঙ্গেও।তার হাসিটুকু দিমিত্রীর নিকট ঠেকলো বেশ রহস্যময়।কিছু উচ্চারণের প্রচেষ্টায় অধর কিঞ্চিৎ ফাঁক হলেও তার পূর্বেই এক ঘোষণা প্রতিধ্বনিত হলো,
– ওয়েলকাম ডিয়ার ডার্কনেস,আর ইউ রেডি টু গ্যা*ম্বেল?
উত্তরস্বরুপ করতালি এবং উৎফুল্ল চিৎকারে পরিপূর্ণ হলো গ্যালারি।উত্তেজনার প্রবাহ স্পষ্ট টের পাওয়া সম্ভব।অভিজ্ঞ সুদর্শনা রমণীগণ সেই উত্তেজনায় আপন মাধূর্য বিলিয়ে পরিবেশ ক্রমশ আসক্ত এবং মাদকীয় করে তুলছে।
– দ্যা রেইস….বিগিন’স!

প্রবল উৎসাহী গর্জন যেন।সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারির পার্শ্ববর্তী সিঁড়ির গোড়ায় দেখা মিললো এক শক্তিশালী অস্তিত্বের।রাত্রির আঁধার এবং মোহনীয় আভা মিলেমিশে একাকার।তাতে নিগূঢ় কালো বাইকস্যুট পরিধানে ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তাকালো রোযা, সামান্য দৃষ্টি সরু করলো স্পষ্টভাবে দেখার আশায়।কালো বাইকস্যুটের বুকের দিকটায় এক মানব খু*লি*র প্রতিচ্ছবি,সেই করোটির অভ্যন্তরে দাউদাউ প্রজ্জ্বলিত অ*গ্নিশিখা।হাত আবৃত ভারী প্যাড সম্বলিত গ্লাভসে,পায়ে ইঞ্চি তিনেক সোলসমান উচ্চতার কেডস্।কোমরে ঝুলন্ত একটি ধাতব চেইন,ঠিক ডিজাইন নাকি অ*স্ত্র হিসাবে তা বোধগম্য নয়।সম্পূর্ণ চেহারা লোকায়িত হেলমেটের অন্তরালে,যে হেলমেটের শরীরজুড়ে অঙ্কিত এক দুর্ধর্ষ ড্রাগন।অতর্কিতে তাকালে হিং*স্র কোনো শিকারী জন্তু বই ভিন্ন কিছু মনে হবেনা তাকে।

– প্লেয়ার সিগমা!ওর্থ অব ইওর চয়েয?
ঘোষণা হতেই সকলের আগ্রহ এবং উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ হলো চারিদিক।স্থির চেয়ে রইলো রোযা, সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা প্লেয়ার সিগমাকে তার কিছুটা পরিচিত ঠেকছে।অত্যন্ত বেপরোয়া অঙ্গভঙ্গি,ফুরফুরে মেজাজ, তর্জনী আঙুলে চাবির রিং বনবন করে ঘুরিয়ে চলেছে।সুঠাম শরীর এবং পদক্ষেপ ফেলার ধাঁচ, রোযাকে একজনের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে দারুণভাবে।
নিহাদ!

থমকালো সে,বরাবর গ্যালারির মাঝে, দিমিত্রীর সোফার পাশেই।চকিতে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো।হেলমেটের প্রশস্ত উইন্ডো বেয়ে অভ্যন্তরের চাহুনি পর্যবেক্ষণ সম্ভব না হলেও রোযা স্পষ্ট উপলব্ধি করলো তার দিকেই চেয়ে আছে বান্দা।তার ধারণা সত্যি প্রমাণিত করে নিজের পকেটে হাত ঢুকিয়ে অতর্কিতে একটি তাজা লাল গোলাপ বের করলো ব্যক্তিটি,দীর্ঘ এক পদক্ষেপে দূরত্ব পেরোলো,গার্ডের পরোয়াও করলোনা।গোলাপটি বাড়িয়ে ধরলো রোযার দিকে,তার কন্ঠস্বর গমগম করে উঠলো মৃদু আলোড়নে,
– প্রস্ফুটিত সাদা গোলাপের জন্য একটি লাল গোলাপ।
আশেপাশের মানুষগুলো অত্যন্ত আগ্রহের সহিত চেয়ে আছে।এমন কোনো দৃশ্য কেউ আশা করেনি।আড়চোখে রোযা পাশে বসে থাকা দিমিত্রীকে দেখলো।রাশিয়ান বান্দা সোফার হাতলে হেলান দিয়ে সূচারু দৃষ্টিতে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে,কোনপ্রকার সন্দেহ কিংবা বিপদের আভাস নেই,শুধুই সতর্কবার্তা।হাত বাড়িয়ে গোলাপটি গ্রহণ করলো রোযা,ব্যক্তির হেলমেটের উদ্দেশ্যে চেয়ে তীর্যক হেসে বিড়বিড় করলো,

– ধন্যবাদ,প্লেয়ার সিগমা।
“ ধন্যবাদ…. নিহাদ!”
দ্বিতীয় বাক্যটি শুধুমাত্র অন্তরেই ধ্বনিত হলো রোযার।দর্শন সম্ভব না হলেও হেলমেটের অন্তরালে থাকা বিস্তৃত অধরে প্রস্ফুটিত হওয়া হাসির মাত্রা অনুভবে তাকে বেগ পোহাতে হলোনা।পিছিয়ে গেলো নিহাদ, হেলমেটে দু আঙ্গুল ছুঁয়ে দিমিত্রীর উদ্দেশ্যে স্যালুটের ভঙ্গি করে সিঁড়ি বেয়ে গ্যালারি থেকে নিচে নেমে গেলো।হেঁটে গেলো রেসিং ট্র্যাকের তিন নম্বর বাইকের দিকে।সোফায় বসে হাতের তালুর মাঝে কণ্টকহীন গোলাপটি চেপে ধরে রেখে দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণ করে গেলো রোযা।নিহাদ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি, সাইকেল চালানোর অভ্যাস করলেও বাইকের সঙ্গে সে এখনো ঠিক মানিয়ে নিতে পেরেছে কিনা তা রোযার জ্ঞানে নেই।দুশ্চিন্তা হচ্ছে তাই।একে একে প্লেয়ার বিটা,প্লেয়ার গামা,প্লেয়ার এক্স রেসিং ট্র্যাকে প্রবেশ করলো।চেয়েই থাকলো রোযা, উত্তেজনার পারদ ক্রমেই আকাশচুম্বী হচ্ছে তার।

ছয় ছয়জন রেসার নিজেদের বাইকে চেপে বসেছে।মৃদু আলোর ঝলকানিতে প্রত্যেকের অবয়ব স্পষ্ট।কেমন এক অশুভ ভঙ্গি খচিত তাদের অস্তিত্বে,একে অপরকে কোনোপ্রকার ছাড় দিতে বিন্দুমাত্র রাজী নয় তারা।দেবেই বা কেনো?সাধারণ কোনো রেইস নয় এটি,জীবন মৃ*ত্যুর লড়াই!রোযার নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে রীতিমত,বাইকের ইঞ্জিনের গর্জনধ্বনিতে মুখরিত সমগ্র স্থান।

– ৫ কোটি ফর প্লেয়ার এক্স।
– ১৭ কোটি ফর প্লেয়ার বিটা।
– ৩০ কোটি ফর প্লেয়ার এক্স।
জু*য়ায় মত্ত জু*য়ারীদের টাকার অংক ক্রমশই সকল সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।আনমনে ঢোক গিললো রোযা,এমন ধরনের কোনো অভিজ্ঞতা এর পূর্বে কোনোদিন হয়নি তার।
– ২০ কোটি ফর প্লেয়ার গামা।
– ৫০ কোটি,ফর প্লেয়ার সিগমা!
কন্ঠস্বরটি ধ্বনিত হতেই পাশ ফিরে দিমিত্রীকে তীর্যক হাসতে খেয়াল করলো রোযা, অধরজুড়ে একটি সিগারেট জড়ানো,দীর্ঘ সুখটানের সহিত চেয়ে আছে সে ট্র্যাকের দিকে।
– গেট…. সেট….
স্পিকারে ধ্বনিত হলো।তৎক্ষণাৎ সামনে ফিরলো রোযা।ছয়জন রেসারের হাতই জেঁকে বসেছে হ্যান্ডেলে।তীব্র আওয়াজ তুলছে ইঞ্জিনে।
– গো!

কর্ণগুহরে পীড়া জাগানো এক তীক্ষ্ণ বু*লেটধ্বনি, তা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ল জান্তবগুলোর শত শত হর্সপাওয়ারের প্রচণ্ড হুংকারে।ট্র্যাকের স্টার্টিং লাইনের মাটি রীতিমত উপ*ড়ে এলো শক্তিশালী টায়ারের মুহুর্মুহু ঘর্ষণে।যেন মরুভূমির বায়ুঝড় ঘনিয়েছে প্রান্তরে।ক্ষীপ্র গতির সঙ্গে বেগ পোহাতে হলো দৃষ্টিতে।শুধুমাত্র অসীম শক্তিতে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় যেন একেকটি বাইক।গ্যালারি উৎসাহী ধ্বনিতে ফে*টে পড়ল মুহূর্তেই।

নিহাদ ট্র্যাকের হিসাবে রয়েছে তৃতীয় স্থানে।সকলের সামনে এক নম্বর স্থানটি দখলে প্লেয়ার গামার, ভিকির।বায়ু কে*টে অচিন্তনীয় গতিতে এগোচ্ছে ছেলেটি।নিহাদের উভয় হাত দ্বিগুণ জোরে চেপে বসলো হ্যান্ডেলজুড়ে।প্রথম বাক আসন্ন।গতি কমিয়ে আনলো সে, শাই শাই করে অপর বাইকগুলো অতিক্রম করে গেলো তাকে।তীর্যক হাসলো সে আপনমনে।প্লেয়ার বিটা দ্বিতীয় স্থানে থাকলে বাক অতিক্রম করতে গিয়ে টায়ারের প্রান্ত ছিটকে গেলো তার,মুহূর্তেই ট্র্যাক থেকে বাইরে ছিটকে গেলো। তৎক্ষণাৎ বাইক কাত করলো নিহাদ,রীতিমত ট্র্যাকের মাটিতে গিয়ে ঠেকলো তার হাঁটু, ইঞ্চি কয়েকের ফারাক শুধুমাত্র।পদার্থবিদ্যার হিসাব মস্তিষ্কে গেঁথে আছে তার,বস্তুর ভরকেন্দ্র ঠিক রেখে কতটা কোণে নিজেকে বাঁকানো সম্ভব।এক লহমায় বাকটি পেরিয়ে পুনরায় সোজা হলো সে,প্লেয়ার বিটা ট্র্যাকের মাঝে ফিরে আসতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ফেলেছে।সেটুকুই যথেষ্ট অন্যদের সুযোগ গ্রহণে। সমর্থকদের উৎসাহময় আবেদন মাথায় রেখে গতি বৃদ্ধি করলো নিহাদ।ক্রমশ একের পর এক বাইককে পিছনে ফেলে ভিকির পিছনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো সে।ছেলেটা ভয়ং*কর ধরণের পারদর্শী রেসিংয়ের ক্ষেত্রে।একটি দীর্ঘ প্রশ্বাস টানলো নিহাদ,আর মাত্র দুটো বাক বাকি রয়েছে।এরপরই…. মৃ*ত্যুখেলা আরম্ভ!

গ্যালারি থেকে রোযা নিঃশ্বাসরুদ্ধ করে চেয়ে আছে।যদিও আন্দাজ ভিন্ন কিছু বলছে,তবুও নিজের দুশ্চিন্তা কিছুতেই লাঘব করতে সক্ষম হচ্ছেনা সে। গোলাপ স্পর্শরত দুহাত তার প্রার্থনার ভঙ্গিতে একত্রিত হয়েছে, আধখান মুখ ঢেকে চেয়ে আছে ট্র্যাকের দিকে।অন্তিম বাকে পৌঁছেছে সবাই।প্লেয়ার সিগমা,অর্থাৎ নিহাদ এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে।কারণটা রোযার বোধগম্য হয়েছে।কিছুক্ষণ আগেই সে নিহাদকে বাইকের স্ট্যান্ড থেকে পা সরিয়ে ঝাঁকি দিতে লক্ষ্য করেছে।অর্থাৎ,ছেলেটি অস্বস্তিবোধ করছে।পায়ে সমস্যা হয়নি তো কোনো?আদও কি হতে চলেছে?

ভাবনা সমাপ্তি হওয়ার পূর্বেই প্রথম ল্যাপের সমাপ্তি ঘটলো।প্লেয়ার গামা প্রথম সমাপ্তিরেখা অতিক্রম করে নিজের যাত্রা জারি রাখলো।একে একে প্লেয়ার এক্স, অতঃপর নিহাদ রেখাটি অতিক্রম করে ছুটে গেলো।বাকি দুজন রীতিমত একসাথেই পেরোলো স্থানটি।শুধুমাত্র প্লেয়ার বিটা অন্তিম প্রান্তে রয়ে গেলো। ধ্বক করে উঠলো রোযার বুক।দৃশ্যটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ঘটলেও রমণীর অনুভূত হলো যেন তা দীর্ঘ সময়জুড়ে তার সামনে সংঘটিত হচ্ছে।প্লেয়ার বিটা মাত্র তিন সেকেন্ড বাদেই সমাপ্তি রেখা অতিক্রম করলো।

ভ্রুম!
তীব্র এক ইঞ্জিনের আর্তনাদ,ঝটকা দিয়ে উঠল প্লেয়ার বিটার সমগ্র শরীর।চাকার কর্কশ প্রতিধ্বনি যেন অশুভ কলতান।বাইকটি সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লো।ছিটকে গেলো প্লেয়ার বিটার দে*হ*টি,ট্র্যাকের প্রান্তে আছড়ে পড়লো।এক লহমায় সমগ্র গ্যালারিজুড়ে পিনপতন নীরবতা,শুধুমাত্র দ্বিতীয় ল্যাপে অগ্রসর হতে থাকা অবশিষ্ট পাঁচটি বাইকের ইঞ্জিনের গুঞ্জরণ।নিথর পড়ে রইলো প্লেয়ার বিটার শ*রীর,অন্যপাশে তার বাইক।ক্রমশই ট্র্যাকের শুষ্ক মাটি ভিজে উঠতে আরম্ভ করলো,তাজা র*ক্তে!আচমকা পিছনে ফিরলো রোযা।টাওয়ারের উপর স্থাপিত অ*স্ত্র দুটির একটি থেকে মৃদু ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে তখনো।অনুধাবনে আর কিছুই বাকি রইলোনা।
আয়োজক তার কথা রেখেছে।
এ আসলেই এক জীবন – মৃ*ত্যুর জু*য়াখেলা!

আঁধারির মাঝে দন্ডায়মান গার্ড অন্তিম মুহূর্তে শুধুমাত্র নিজের ঘাড়ে এক চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলো।তীব্র এক আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চাইলো কন্ঠনালী বেয়ে, কিন্তু মুখে চেপে যাওয়া গ্লাভস পরিহিত হাতটির কারণে সেই ধ্বনি অত্যন্ত ম্রিয়মাণ শোনালো।জোরালো এক প্রশ্বাস টানতে চাইলেও হৃদযন্ত্র সায় দিলোনা,ঘাড় গড়িয়ে নেমে আসা উত্ত*প্ত র*ক্তিম তরল অনুভূত হলো।এরপরই যেন দপ করে দৃষ্টিশক্তি নিভে গেলো।
গার্ডের দে*হ এলিয়ে পড়তেই আসমান নিঃশব্দে সেটি টেনে নিলো করিডোরের অভ্যন্তরে, বাথরুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে গার্ডের মোবাইল ফোনটি বের করে নিলো।অদূরে দন্ডায়মান চারুলতার দিকে ছুঁড়ে দিলো।

– ত্রিশ সেকেন্ড, ডু হ্যাক ফাস্ট!
এটুকুই।মুহূর্তের মাঝেই করিডোরের অপরপ্রান্তে আড়াল হয়ে গেলো আসমান।অন্যদিকে চারুলতা অত্যন্ত দ্রুত কি প্যাডে আঙুল চালিয়ে নিজের অভিজ্ঞতায় আয়ত্ত্ব করা হ্যাকিং ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গার্ডের সকল সেক্টরের অ্যাক্সেস লাভ করলো। ফোন হাতে নিয়েই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলো,কন্ট্রোল রুমের উদ্দেশ্যে।ইতোমধ্যে গার্ডের প্রোফাইল ব্যবহার করে অপর একজন গার্ডকে মেসেজ করে ফেলেছে সে।
” একটু করিডোরের ভেতরে আয়, দেখ কি পেয়েছি!”

দুই মিনিটের টাইমার সেট করলো নিজের হাতঘড়িতে।এর পরেই দ্বিতীয় জনকে মেসেজ করবে সে।পরক্ষণে তৃতীয় জনকে।আবার চতুর্থ জন।এভাবে……যতজন সম্ভব।বাইরে থেকে ভেসে আসা প্রফুল্ল ধ্বনি এবং গ্যালারি জুড়ে চিৎকার চেঁচামেচি সব অতর্কিতে উধাও হয়েছে।চারিপাশে নীরবতা লক্ষ্য করে ঝট করে দরজা খুলে কন্ট্রোল রুমে ঢুকলো চারুলতা।মনিটরে দৃষ্টি যেতেই উপলব্ধি করলো,খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে।

করিডোরের একদম প্রবেশ পথের দেয়ালের একপাশে এসে থমকালো আসমান।লেপ্টে ফেললো নিজেকে আলো আঁধারির মাঝে।যেন এক ছায়া সে,অমানিশা স্বয়ং, আঁধার তার হুকুমের দাস।এমন ধরণের গু*প্ত হ*ত্যা আজ ঠিক কতদিন বাদে সম্পন্ন করছে হিসাবে নেই তার।বহু পুরাতন সব স্মৃতি স্মরণে আসছে তার।যে সময়টায় কে বি অধিপতির পালিত কুকুর হয়ে এর চাইতেও ভয়ং*কর সব পরিস্থিতিতে কাজ করত সে, হ*ত্যা ক*রত যন্ত্রের মতন।তাই বাদশাহ কায়সার তাকে সম্বোধন করেছিলেন,”কি*লিং মেশিন” নামে।আজ আরো একবার ভাগ্য তাকে এই নামটির স্বার্থকতা আদায়ে ঠেলে দিয়েছে মৃ*ত্যু নিয়ে লীলাখেলা করবার দুয়ারে। আর সে করছেও তাই।করে যাবে,নিজের ভালোবাসার তরে,নিজের অংশের তরে।যদি সমস্ত পৃথিবীকেও একটু একটু করে নিঃশেষ করতে হয় তার জন্য,আসমান করবে!

পদশব্দ ভেসে এলো।সতর্ক হলো আসমান।আঙুলের ভাঁজে লম্বাটে সরু অথচ ধা*রালো ব্লে*ডখানি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরলো। দিমিত্রীর গার্ড সন্নিকটে,তার ছায়ার প্রতিফলন ঘটছে করিডোরের মৃদু আভায় উদ্ভাসিত মেঝেজুড়ে।আসমানের কৃষ্ণগহ্বর তাতে নিবদ্ধ হলো।রুদ্ধশ্বাস কয়েক মুহূর্ত।গার্ড প্রবেশ করলো নিজের ফোনের দিকে চেয়ে,আশেপাশে তাকালো।কিন্তু ঠিক তার পাশেই দেয়ালে লেপ্টে থাকা আঁধারমানবকে তার দৃষ্টিগোচর হলোনা।ফোনের স্ক্রীন থেকে মুখ তুলে বিপরীত প্রান্তে তাকালো।ওটুকুই প্রয়োজন ছিলো শিকারীর।বিড়ালের ন্যায় নিঃশব্দে এগোলো আসমান, বায়ুর ক্ষীপ্রতার সঙ্গে সামঞ্জস্য গতিতে বাড়ালো ব্লে*ড।এক হাত পাকড়াও করলো গার্ডের মুখ, অপর হাতে গ্রী*বাজুড়ে জোরালো একটি টা*ন।ধাতুতে মাং*সপি*ন্ড ঘ*র্ষণের দুর্বোধ্য এক শব্দ।কুলকুল স্রোতস্বিনীর ঢেউ হয়ে ফি*নকি দিয়ে ছোটা র*ক্তধারা।

আলতো করে ধরাশায়ী শরী*রটি দেয়ালে ঠেকিয়ে রাখলো আসমান,থকথকে র*ক্তে তার গ্লাভস চুপচুপে হয়ে গিয়েছে।ভীষণ বিরক্তিবোধ হলো তাতে।এক ঝটকায় খুলে তা পকেটস্থ করে অপর পকেট থেকে একজোড়া নতুন রাবার গ্লাভস বের করে হাতে জড়ালো।চকিতে তাকালো র*ক্তফোঁটায় আবৃত হাতঘড়িতে।এক মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ড অতিক্রান্ত হয়েছে। মাত্র দশ সেকেন্ড সময়!তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হলো,করিডোর পেরিয়ে একটি থামের আড়ালে নিজেকে আবৃত করে ফেললো।

ডার্কসাইড পর্ব ৬৩

হাঁটু মুড়ে বসে অদূরে গ্যালারির দিকে তাকালো।আত্মপ্রত্যয়ী দৃষ্টি তার কৃষ্ণগহ্বরজুড়ে।দিমিত্রীর আরো একজন গার্ডকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো করিডোরের দিকে।অতি ক্ষীণ এক প্রলয়সুলভ হাসির আবির্ভাব ঘটলো অমানিশার অধরে,র*ক্তা*ক্ত ব্লে*ডে চে*পে বসলো আঙুল।মনে মনে সাজিয়ে নিলো,এবার নিশা*না করবে বরাবর হৃদপি*ণ্ডকে। দিমিত্রীর গার্ড টেরটুকুও পেলনা…..
অপেক্ষারত মৃ*ত্যুদূত স্বয়ং,পরবর্তী শিকারের আশায়।

ডার্কসাইড পর্ব ৬৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here