ডার্কসাইড পর্ব ৬৫

ডার্কসাইড পর্ব ৬৫
জাবিন ফোরকান

দ্বিতীয় ল্যাপের রেইস চলমান।পিনপতন নীরবতা ক্রমশ নব্য উৎসাহে রূপান্তরিত হয়েছে।গর্জনরত গ্যালারি চেঁচিয়ে নিজেদের প্রতিযোগীদের উৎসাহিত করে চলেছে।প্লেয়ার বিটার নিথ*র শ*রীর ট্র্যাক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।শুধুমাত্র থকথকে র*ক্তা*ক্ত চিহ্ন স্পষ্ট শুষ্ক মাটিজুড়ে।সেই রক্তিম আবহে একদৃষ্টে চেয়ে আছে রোযা।মস্তিষ্ক কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা অনুভূত হচ্ছে তার।তীব্র এক শীতলতা অস্তিত্বজুড়ে।মৃ*ত্যু সে দেখেছে প্রচুর।আলাউদ্দিন নামক কোনো এক কাপুরুষের বিভী*ষিকাময় মৃ*ত্যু*র উপলব্ধির মধ্য দিয়ে তার জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।

অতঃপর শুধু মৃ*ত্যুর মিছিল।একটা সময় সকল অনুভূতি ভোঁতা হয়ে এসেছিল রোযার।কিন্তু আজ,প্লেয়ার বিটার এমন অনর্থক অন্তর্ধান তার চিত্তে চির ধরিয়ে দিয়েছে।বিশেষ করে চারিপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া একদমই ভিন্ন।কয়েক মুহূর্ত নীরবতা থাকলেও বর্তমানে এমন উচ্ছ্বাস তাদের যেন কিছুই হয়নি এই মাত্র দেড় মিনিট আগেই।একটি দীর্ঘশ্বাস নির্গত করলো রোযা,আনমনে দু আঙ্গুল কপালে ঘষে নিজেকে শান্ত করতে চাইলো।এদের মানুষ ভেবে ভুল করছে সে, আঁধার জগতে বসবাসরত নিশাচর পশুগুলো মানুষ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।
প্লেয়ার বিটার উপর যারা বেট করেছিল,ইতোমধ্যেই সর্বস্ব হারিয়ে তারা থমথমে চেহারায় বসে আছে।অপরদিকে টিকে থাকা প্রতিযোগীদের উপর আবদ্ধ অপর সকল মনোযোগী দৃষ্টি।রোযা তাকালো,নিহাদের জন্য হলেও তাকে সবটুকু পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পাঁচটি বাইক খুবই কম দূরত্বে অবস্থান করছে। তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছে ট্র্যাক ঘিরে।দ্বিতীয় ল্যাপের অন্তিম সীমানায় পৌঁছতেই বিচলিত হয়ে উঠল রোযা।নিহাদ এখনো তিন নম্বরে রয়েছে।চতুর্থ জনের সঙ্গে তার তুমুল প্রতিযোগীতা চলছে।কেউ কাউকে ছাড় দিতে যেন নারাজ।অতর্কিতেই ঘটলো ঘটনাটি।নিহাদের পাশের বাইকের ছেলেটি পা তুলে আচমকা বাইকে লা*থি হাঁকিয়ে ঠেলে দিলো।পিছলে গেল নিহাদের বাইক,ভারসাম্য হারিয়ে ছিটকে গেলো ট্র্যাকের লাইনের প্রান্তে।গর্জে উঠল সকলে,কিছু বুঝে ওঠার আগেই রোযা চেঁচিয়ে উঠলো,
– চিটিং!প্লেয়ার সিগমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাউল করা হয়েছে!

আশেপাশে থাকা গার্ড শুধুমাত্র মাথা ঘুরিয়ে অব্যক্ত এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।কিছুই না বলে আবার সামনে ফিরলো।তাতে তেঁতে উঠে রোযা হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে নামতে যাচ্ছিল কিন্তু দিমিত্রীর আঙুলসমূহ অত্যন্ত জোরালোভাবে তার কব্জিজুড়ে পেঁচিয়ে গেলো।এক টানে সোফার নরম গদিতে টেনে বসালো।রোযা নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও তৎক্ষণাৎ সক্ষম হলোনা।রাশিয়ান গ্যাংস্টারের তীব্র দৃষ্টি লাভ করলো।
– দিস ইয গ্যা*ম্বলিং,এভরিথিং ইয ফেয়ার হেয়ার!

স্থবির হয়ে পড়লো রোযা,ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ট্র্যাকের দিকে।যেখানে নিহাদ ইতোমধ্যে পঞ্চম, অর্থাৎ সর্বশেষ স্থানে পৌঁছে গিয়েছে, ল্যাপ শেষ হতে অতি সামান্য দূরত্বই বাকি!চট করে রোযা টাওয়ারের দিকে ফিরল,স্না*ইপার রাইফে*লটি উঁচিয়ে ধরেছে মুখোশ পরিধানকৃত ঘা*তক,পরবর্তী নিশা*নার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত সে।একটি শক্ত ঢোক বেয়ে গেলো রোযার কণ্ঠনালীতে।নিহাদ ট্র্যাকে ফিরে আসলেও বাকিদের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে।তুমুল গুঞ্জন চারিদিকে।হ্যান্ডেলে চেপে বসলো নিহাদের উভয় হাত, অতঃপর যেন এক আ*হত প*শুর হুংকার তুলে এগোলো তার বাইক।এতটা ক্ষীপ্র গতিতে যে ট্র্যাকের শুষ্ক মাটি ধূলো হয়ে চারিপাশ ধূসরিত করে তুললো মুহূর্তেই। প্লেয়ার গামা,ভিকি,আবারো প্রথম স্থানে থেকে অতিক্রম করলো দ্বিতীয় ল্যাপ,তারপরই প্লেয়ার এক্স।তৃতীয় স্থানও দ্রুতই পেরোলো,প্লেয়ার জেড,যে একটু আগেই নিহাদকে ফাউল করে এগিয়ে এসেছে।নিহাদ এবং চতুর্থ স্থানে থাকা প্লেয়ার ওয়াইয়ের মধ্যে লড়াই।আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড।তেড়ে গেলো নিহাদের বাইক।রুদ্ধশ্বাস হয়ে শুধু দেখে গেলো রোযা।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ঘটলো ঘটনাটি।নিহাদ এতটা উচ্চগতিতে প্লেয়ার ওয়াইকে পাশ কাটিয়ে ল্যাপ অতিক্রম করলো যে সাধারণ দৃষ্টিতে তা অবলোকনে বেশ খানিক বেগ পোহাতে হলো।মিটমিট করে তাকালো রোযা ভালোমত লক্ষ্য করার উদ্দেশ্যে।শুধুমাত্র দুই সেকেন্ডের ব্যবধানে নিহাদ প্লেয়ার ওয়াইয়ের পূর্বে ল্যাপ পেরিয়েছে।বাকরুদ্ধ কিছু মুহূর্ত, নিশ্চুপ গ্যালারি।প্লেয়ার ওয়াই সহসাই গতি কমিয়ে আনলো,ফলাফল তার জানা আছে,যেন মৃ*ত্যু*কে প্রলম্বিত করা।আবারো এক ঝটকা,প্লেয়ার ওয়াইয়ের বাইক ছি*টকে গেলো, শরীরটি আছ*ড়ে পড়লো মাটিতে,গড়িয়ে গেলো খানিকটা দূরে একদম ট্র্যাকের লাইনে।তারপর নীরবতা।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে শুষ্ক মাটি আরও একবার রঞ্জিত হলো মৃ*ত্যুতুলির রক্তিম বর্ণে।কম্পিত হলো রোযার সর্বাঙ্গ,দৃষ্টি বুজে নিজে দুহাতের মাঝে মুখ গুঁজলো।বুক চি*রে বেরিয়ে এলো এক দীর্ঘশ্বাস।

দ্রুতই প্লেয়ার ওয়াইকে সরিয়ে নেয়া হলো।খেলা গড়ালো তৃতীয় ল্যাপে।বর্তমানে কোনো প্লেয়ারের অন্তর্ধানেও কারো ভ্রুক্ষেপ হচ্ছেনা।দ্বিগুণ উৎসাহে উল্লাস করে চলেছে সমস্ত গ্যালারি।রোযা শুধুমাত্র নীরব পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।সবটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।ইচ্ছা হচ্ছে পুনরায় রেস্টরুমে গিয়ে একাকী নিজেকে আবদ্ধ করে এক কোণায় চুপচাপ বসে থাকে।কিন্তু তা আপাতত সম্ভব নয়।তার পাশে বসে থাকা দিমিত্রীকে অবশ্য বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছে।হাতের হুইস্কির গ্লাসের বরফকুচি নাড়াতে নাড়াতে প্রজ্জ্বলিত দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে ট্র্যাকে,যেন সে নিশ্চিত এই জু*য়ায় তার পরাজিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

– আপনি কি সত্যিই রাফা কায়সারকে ভালোবাসেন?
অতর্কিত প্রশ্নে দিমিত্রী থমকালো।মাথা কাত করে তাকালো রোযার পানে।স্থির চেয়ে আছে রমণী,এক অগ্নিগহ্বর খচিত দৃষ্টিতে তার।রাশিয়ান বান্দা সামান্য হেলে বসলো, ঝুঁকে প্রশ্ন ছুড়লো,
– এখনো সন্দেহ রয়েছে?
– যথেষ্ট।যে নারী র*ক্তের সম্পর্ককেও অবজ্ঞা করতে সক্ষম,তাকে ভালোবাসার মতন কোনো কারণ দেখিনা।
রোযার মন্তব্যে সামান্য হাসলো দিমিত্রী।হুইস্কিতে দীর্ঘ এক চুমুক দিয়ে মাথা ঝাঁকালো।জিভ দিয়ে অধর ভিজিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করলো,

– জগতের প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব একটি গল্প রয়েছে। তা হোক সে মানুষ দেবতুল্য কিংবা শয়তান স্বয়ং।
অন্তিম বাক্যটি উচ্চারণের দিমিত্রীর দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত দেখালো খানিক।তার ফ্যাকাশে মরুজুড়ে খটখটে এক শূন্যতা।পর্যবেক্ষণ করলো রোযা সুচারু দৃষ্টিতে।
– বলতে চাইছেন রাফা কায়সারের নিজস্ব গল্প আপনার হৃদয়কে ছুঁয়ে গিয়েছে?আপনারও কি নিজস্ব এক গল্প রয়েছে যা আপনার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে?
বরাবর রোযার নয়ন বরাবর তাকালো দিমিত্রী, অসামান্য এক শীতলতা তার মুখাবয়বজুড়ে।এই প্রথম এই পুরুষটিকে এতটা গম্ভীর এবং ভারিক্কীরূপে অবলোকন করলো রোযা। গ্রীবাদেশজুড়ে থাকা কণ্টকা*কীর্ণ গোলাপের ট্যাটু তার যেন অব্যক্ত অনুভবে সামান্য কম্পিত হলো।কন্ঠ খাদে নেমে এলো বান্দার,জানালো,

– রোযা,আমি তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।শুধু এটুকু জেনে রাখো,যদি না অতীত স্মৃতি আজও দগদ*গে হয়ে আমার হৃদয়ে গেঁ*থে থাকতো, তবে তুমি এই মুহূর্ত অবধি অক্ষ*ত থাকতে না!
স্থির চেয়ে থাকা রোযার সন্নিকটে ঝুঁকে কানের নিকট ফিসফিস কন্ঠে দিমিত্রী ঘোষণা করলো,
– কেউ কখনো খলনায়ক হয়ে জন্ম নেয়না,এই পৃথিবী তাকে খলনায়কে রূপান্তরিত করে।
বিরতি,অতঃপর,
– তোমার জীবনের নায়ক,অন্যকারো জীবনের খলনায়ক।ভুলে যেওনা কথাটা।
মুষ্টিবদ্ধ হলো রোযার উভয় হাত,দিমিত্রী আসমানকে নির্দেশ করেছে তা স্পষ্ট।বেদনাদায়ক ব্যাপার হলো তার বক্তব্য মিথ্যা নয়।

রেইস চলমান।তৃতীয় ল্যাপ পূরণে বেপরোয়া আস্ফালন প্রত্যেক প্রতিযোগীর।রোযার দৃষ্টি আপনা আপনি আবদ্ধ হলো নিহাদের উপর।ছেলেটি সর্বশেষে,অর্থাৎ চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে।প্রথম স্থানের জন্য প্লেয়ার গামা এবং প্লেয়ার এক্সের মাঝে তুমুল লড়াই চলছে।অপরদিকে নিহাদ এখনো কিছুটা দূরত্বে রয়েছে।আরো একবার পা ঝাঁকি দিলো ছেলেটা, টান অনুভূত হচ্ছে শিরায়,ক্ষণে ক্ষণে কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে। দাঁতে দাঁত চেপে তা সহ্য করে গেলো প্রাক্তন হি*টম্যান। জোরালোভাবে হ্যান্ডেলে হাত চাপলো, স্পিডমিটারে গতি ছাড়ালো হুহু করে।তীক্ষ্ণ শকুনে দৃষ্টি তার প্লেয়ার জেডের উদ্দেশ্যে নিবদ্ধ।তীর্যক হাসির প্রস্ফুটন ঘটলো বিস্তৃত অধরজুড়ে।তাকে টেক্কা দিয়ে পার পাওয়া কি এতই সহজ?প্রতিশোধের উন্মত্ত বাসনাকে কোনোদিন অগ্রাহ্য করতে শেখেনি সে,সুতীব্র য*ন্ত্রণার আখ্যান তার নখদর্পণে খচিত হয়েছে বারংবার।যেন বায়ুর বেগকেও হার মানিয়ে ছুটলো নিহাদ,রুদ্ধশ্বাস দৃষ্টিপাত তার পথজুড়ে।তৃতীয় ল্যাপের অন্তিম বাক।ইঞ্জিনের গর্জন তুলে তা পেরিয়ে গেলো প্লেয়ার গামা এবং এক্স।নিহাদ আরো একটু গতি বৃদ্ধি করলো,এতটা যে বাইকের ইঞ্জিনের জোরালো কার্যক্রমে তার শরীর অবধি কম্পিত হতে থাকলো।কানে শুধুমাত্র যান্ত্রিক গুঞ্জরণ।প্লেয়ার জেডের বরাবর পৌঁছলো সে,অতর্কিতে বাইক তীর্যক হেলিয়ে সন্নিকটে সরে এলো।গ্যালারিতে এক উত্তেজনার হিড়িক পড়লো।

প্লেয়ার জেড কিছু বুঝে উঠতেও সক্ষম হলোনা।নিহাদের বাইক তার সন্নিকটে এসেছে।বাক অতিক্রমের আশায় সে অত্যন্ত দ্রুত গতি বৃদ্ধি করলেও লাভ হলোনা। শিকারী জ*ন্তুর কাছ থেকে নিস্তার বড়ই অসাধ্য।আচমকা হ্যান্ডেল ছেড়ে এগোলো নিহাদের হাত,প্লেয়ার জেডের ঘাড় বাগড়ে ধরে সহসাই হেলমেটসমেত ঠু*কলো সে বাইকের স্পিডমিটার মনিটরে।
একবার,দুইবার,তিনবার!
প্রচণ্ড গুঞ্জনে প্রকম্পিত হলো চারিপাশ, ভৎসর্ণা এবং উৎসাহ মিশ্রিত তাতে।
– ফাউল!ফাউল!
চিৎকার ধ্বনিত হতে থাকলো,তবুও বেপরোয়া নিহাদ।
– আই চিটাইঙ্গা ফুয়া মেডিত পড়িলে লুয়া, আঁর লগে তেড়িবেড়ি কইত্তে আইয়্যুস দেনা…. মদস্টিক![ আমি চট্টগ্রামের ছেলে,আমার সাথে বাঁদরামি করতে এসেছিস…মাথামোটা!

বিড়বিড় করলো নিহাদ।অতঃপর সহসাই পা উঁচু করে এতটা জোরের সহিত প্লেয়ার জেডের বাইককে ঠেললো যে বেচারা ভারসাম্য রক্ষার সুযোগটুকুও পেলনা।হুড়মুড় করে বাইকসমেত উল্টে পড়লো ট্র্যাকে।অপরদিকে নিহাদ তীর্যক সন্তুষ্টির হাসি হেসে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে মুহূর্তেই বাক পেরিয়ে ল্যাপ অতিক্রম করে গেলো।উল্লাসে ফে*টে পড়ল সমর্থকগণ।আবারো এক নিদারুণ ঝটকা।এবার প্লেয়ার জেডের শ*রীর কয়েকবার কম্পিত হয়ে পুনরায় স্থিরতা ধারণ করলো।বাইকের পাশেই শুষ্ক মাটিতে র*ক্তিম নালায় রীতিমত ভাসতে আরম্ভ করলো তার নিশ্চল দে*হ।
বক্ষপিঞ্জরে আটকে রাখা নিঃশ্বাসটুকু অবশেষে নির্গত করলো রোযা।হাতের মাঝে গোলাপটি মুষড়ে পড়েছে তার উদ্বিগ্নতার প্রভাবে।নিহাদ ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয় রোযার জ্ঞানে রয়েছে।কিন্তু রেইসের মাঝে এভাবে তার মহিমা প্রদর্শন আশা করেনি।প্লেয়ার জেড নিঃশেষ হয়েছে।বর্তমানে শুধুমাত্র তিনজন অবশিষ্ট।নিহাদ, প্লেয়ার গামা এবং প্লেয়ার এক্স।অন্তিম ল্যাপ ঘনিয়ে আসছে দ্রুতই।কে নেবে বিজয় ছিনিয়ে?কে টিকে থাকবে অন্তিম লগ্ন অবধি এই জীবন মৃ*ত্যুর সংগ্রামে?

চতুর্থ ল্যাপে শুধুমাত্র প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় পথ ঘুরল।পঞ্চম ল্যাপের সর্বশেষ মুহূর্তে সামান্য কিছু সেকেন্ডের ব্যবধানে নিহাদ প্লেয়ার এক্সের পূর্বেই সীমারেখা অতিক্রম করে গেলো।ফলাফলস্বরূপ প্লেয়ার এক্সের ব*লিদান উপলব্ধি করলো প্রত্যেকে।কিন্তু ততক্ষণে যেন সবকিছু সয়ে এসেছে।উত্তেজনাকর এই লড়াই উপভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছেছে সকলকে।

অন্তিম ল্যাপ।নিহাদ বনাম প্লেয়ার গামা, ভিকি।আনমনে দুহাত চেপে তাকিয়ে থাকলো রোযা, অনুধাবনও করলোনা কখন তার অন্তরজুড়ে প্রার্থনার বুলি প্রবাহিত হতে থাকলো।কন্ট্রোল রুমের গ্লাস উইন্ডো থেকে চারুলতার দৃষ্টিও ট্র্যাকে নিবদ্ধ,মনিটরে দেখে সে মোটেও শান্তিলাভ করছেনা।উদ্বিগ্নতা এবং উত্তেজনায় তার হাত ঘর্মাক্ত হয়ে উঠছে,পরিধানের ফরমাল প্যান্টে বারংবার মুছে নিতে হচ্ছে।না চাইতেও অবাধ্য হৃদস্পন্দন হয়েছে আকাশচুম্বী।সোফায় বসে থাকা দিমিত্রী পর্যন্ত এখন পর্যন্ত গা ছাড়া ভাব নিয়ে থাকলেও বর্তমানে তার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু রেসিং ট্র্যাক। দর্শকসারি অতি বিহ্বলতায় একদম স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।সমস্ত ধরিত্রী অপেক্ষমাণ।

ভিকি ছুটছে সামনে।একটি ল্যাপও সে দ্বিতীয় স্থানে সমাপ্ত করেনি,সবার পূর্বে থাকাটা একদম স্বভাব হয়ে গিয়েছে তার।তবুও পিছন থেকে ক্রমশ ছুটে আসা বায়ুঘূর্ণিকে উপেক্ষা করা দায়।একটি ঢোক গিলে প্রস্তুতি নিলো ভিকি।সামান্য কমিয়ে আনলো বাইকের গতি।তাতে খুব সহজেই নিহাদের বরাবর হলো সে। ব্যাপারটি বাকি সকলকে হতবাক করলো।কিন্তু চিন্তাশক্তি কাজ করার আগেই ভিকি আচমকা হাত বাড়িয়ে নিহাদের বাইকের হ্যান্ডেল চাপলো,প্রচণ্ড এক টান,তাতে এলোমেলো হয়ে ট্র্যাক থেকে ছিটকে গেলো নিহাদ।বাইক হেলে গেলো তার।হৃদস্পন্দন থমকে গেলো রোযার,কন্ট্রোল রুমে থাকা চারুলতারও।উভয় রমণী হতবিহ্বল দৃষ্টিপাত করে আছে।

সহসাই গুরুর আদর্শ শিষ্য যেন নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রদর্শন ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিলো।হ্যান্ডেলে থাকা ভিকির হাতটি সে সরিয়ে নেয়ার পূর্বেই বাগড়ে ধরলো।জোরালো এক টান,অতঃপর এতক্ষণে রীতিমত অবশ হয়ে আসা বাম পা তুলে কোমর বরাবর সজোর আ*ঘা*ত। নুয়ে পড়ল ভিকি,অত্যন্ত কষ্টে ভারসাম্য বজায় রাখলো নিজের।সোজা হলো নিহাদ,হেলমেটের অভ্যন্তরে কপাল বেয়ে তার ঘামের ফোঁটা গড়িয়ে নামছে।নিঃশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে উঠছে।সমস্ত শরীর থেকে থেকে যেন কম্পিত হচ্ছে বৈ*দ্যুতিক তরঙ্গে। বুঝলো নিহাদ,খুব বেশিক্ষণ সম্ভব নয়। পায়ের সম্পূর্ণ জোর হারিয়ে ফেলার পূর্বেই তাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।

অত্যন্ত দ্রুত বাইকের ভারসাম্য দখল করে পাশের ভিকির দিকে তাকালো নিহাদ।সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই মুহুর্তেই।বাইক হেলিয়ে পাশে সরে এলো সে,ভিকির বাইককে ঠেললো একেবারে এক প্রান্তে। সমাপ্তিরেখা সন্নিকটে, আর মাত্র কিছু সেকেন্ড।একটি ঢোক গলাধঃকরণ করলো নিহাদ,তাকালো ভিকির পথ বরাবর।সামনের বাকেই এক সামান্য উঁচু স্থান,ওটুকুই যথেষ্ট। অপর জনকে সামান্য ওদিকে ঠেলে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে!এগিয়ে গেলো দুজনই,দুর্ধর্ষ গতিতে। ভিকির কার্যক্রমে স্পষ্ট যে সেও নিহাদের পরিকল্পনা অনুসরণ করতে চলেছে।শুধুমাত্র সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা।যে পূর্বে পৌঁছাতে পারে সেই…..
ভিকি এক ঝটকায় নিহাদের টায়ার বরাবর ঠেলতেই খেই হারিয়ে সেই উঁচু স্থানের দিকে ঝুঁকে পড়ল নিহাদ।বিজয়ীর হাসলো হাসলো ভিকি,অবশেষে জিত তার মুঠোর মাঝে!

– থ্যাংক ইউ, শা*লা!
নিহাদের প্রফুল্ল উদগীরণ শ্রবণ হলো হেলমেটের বাঁধা এবং ইঞ্জিনের গুঞ্জনের মাঝেও।স্তব্ধ হলো ভিকি।চিন্তাভাবনায় ছেদ পড়ল নিহাদের অতর্কিতে গতি পরিবর্তনে।তীব্র বেগে উঁচু স্থানটিতে ধাক্কা দেয়ায় তার বাইকটি রীতিমত শূন্যে লাফিয়ে কয়েক মিটারখানেক দূরত্ব অতিক্রম করলো হাওয়ার মাঝেই।খুব বেশি হয়ত নয়।কিন্তু রেইসের সমাপ্তিতে যথেষ্ট।একেবারে ভিকির সম্মুখ বরাবর মসৃণ ভঙ্গিতে ট্র্যাক ছুঁলো নিহাদ,মাথা হেলিয়ে পিছনে চেয়ে তীর্যক হাসলো। জিভ বেরিয়ে এলো তার অবজ্ঞাসূচক ভঙ্গিতে,স্পষ্ট অনুভব করলো ভিকি।অতঃপর…..

নিহাদের বাইক সর্বপ্রথম ট্র্যাকের ফিনিশিং লাইন অতিক্রম করলো তীব্র গতিতে।যেন শব্দতরঙ্গের ভূ কম্পন খেলে গেলো সম্পূর্ণ গ্যালারিজুড়ে।করতালি এবং উল্লাসিত ধ্বনিতে উদ্ভাসিত হলো সমস্ত ধরিত্রী।একটি ঝটকায় ভিকির শরীর বাইকসমেত আছ*ড়ে পড়লো ট্র্যাকে।গড়িয়ে গেলো খানিকটা দূর অবধি, অতঃপর স্থবির হয়ে পড়লো।বাইকে বসেই এক হাত তুলে হাওয়ায় মুষ্টিবদ্ধ করে ছুড়লো নিহাদ,উৎফুল্ল বিজয়ীর ভঙ্গিতে।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো রোযা। চারিপাশের হট্টগোলের মাঝে সামান্য একটু প্রশান্তি পাওয়া যাচ্ছে যেন অবশেষে।অপরদিকে কন্ট্রোল রুমে দাঁড়ানো চারুলতা দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।তখনো কাপছে তার বুক দুরুদুরু।

নিহাদের বাইক থেমে এলো। আস্তে করে নামলো সে, তবে হেলমেট খুললোনা।কোমরে হাত রেখে নিজের শরীর বাঁকিয়ে মাং*সপেশির চলন ঠিকঠাক করলো।পরক্ষণে তাকালো চারিদিকে।তার উপর বেট করা প্রত্যেকে যেন মাটিতে চাঁদ নেমে এসেছে এমন ভঙ্গিতে উল্লাস উদযাপন করছে।আপনমনে হাসলো নিহাদ।উভয় পা তার কম্পিত হচ্ছে,দাঁড়ানোর শক্তিটুকু অবশিষ্ট নেই।অবশ রীতিমত।কিছুটা খুঁড়িয়ে হাঁটলো সে। জয় তার দুয়ারে ধরা দিয়েছে অবশেষে? স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৃষ্টি স্থাপিত হলো অদূরে টাওয়ারের নিকটবর্তী কন্ট্রোলরুমে।অস্বচ্ছ এক অবয়বকে নজরে এলো।বুঝতে কিছুই বাকি রইলোনা অবয়বের অর্থ,ওই দীঘল কেশরাশির ছায়াই যথেষ্ট উপলব্ধিতে। হেলমেটে হাত ছুঁয়ে একটি ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো চট্টলার বান্দা।আপাতদৃষ্টিতে তা গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত মনে হলেও সত্যিকার মানুষটির অনুধাবনে যথেষ্ট,তাকেই সকল অর্জন উৎসর্গ করেছে তার প্রিয়তম।

– প্লেয়ার সিগমা?
কণ্ঠটি নিহাদকে মোহের দুনিয়া থেকে টেনে এক লহমায় বাস্তবে নিয়ে এলো।ঝট করে পিছনে ফিরতেই রাশিয়ান গ্যাং নেতা দিমিত্রীর অবয়ব নজরে এলো,এগিয়ে আসছে ট্র্যাক ধরে,হাতে ঝুলন্ত একটি হেলমেট।স্তব্ধ হয়ে রইলো নিহাদ,মস্তিষ্ক তার বেগ পোহাচ্ছে।গ্যালারি থেকে ট্র্যাক পর্যন্ত পৌঁছলো কখন এই বান্দা?উপরন্তু…. হেলমেট?এক উপলব্ধির শিহরণ খেলে গেল তার শিরদাঁড়া বেয়ে। তা সত্যি প্রমাণিত করে দিমিত্রী মুখোমুখি এসে থমকালো।হেলমেট সমেত হাতটি তুলে গ্যালারিভর্তি দর্শককে বাকরুদ্ধ করে দিয়ে গ্যাংস্টার ঘোষণা করলো,
– আই অ্যাম চ্যালেঞ্জিং ইউ, অন আ ডে*থ রেইস!

মুষ্টিবদ্ধ হলো নিহাদের উভয় হাত,হেলমেটের অন্তরাল থেকে টানা টানা নয়নজোড়া তার ধারালো দৃষ্টিতে তাকালো কণ্টকাকীর্ণ অশুভের উদ্দেশ্যে।তার পায়ের মৃদু কম্পন এড়ালোনা রাশিয়ানের শকুনে নজর,তীর্যক হাসলো সে।
গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য হতবাক হয়ে উপলব্ধি করলো রোযা।নিহাদের দূর্বলতা স্পষ্ট,তার শরীরের পক্ষে সম্ভব নয় আরো একবার এই ঝোড়ো মুহূর্তের মধ্য দিয়ে বিচরণ করা।তার উপর, দিমিত্রী?বাইক?এ কি আসলেই জানে সে কি করছে?অবশ্যই জানে! গ্যালারিভর্তি মানুষের সম্মুখে সদ্য বিজয়ী প্রতিযোগীকে চ্যালেঞ্জ করার উদ্দেশ্য,কিছুতেই রেইস এড়াতে সক্ষম হবেনা তার প্রতিপক্ষ।অমোঘ এক বিজয়,আত্মতৃপ্তি।

দাঁড়িয়ে থাকাকে আর সমীচীন মনে হলোনা রোযার।দুহাতে গাউনের প্রান্ত চেপে ধরে গ্যালারি বেয়ে নামতে গেলো।কিন্তু অতর্কিতে তার কব্জিতে জড়িয়ে গেলো শক্তিশালী আঙুলের বাঁধন। স্পর্শটি শিহরণ খেলিয়ে দিলো সমস্ত শরীরে।ঝট করে পিছনে চাইলো রোযা, উপলব্ধি কড়া নাড়লো অন্তরে তার।দন্ডায়মান,অমানিশা স্বয়ং,তার স্বামী!
রোযার কোমরে জড়িয়ে গেলো আসমানের অপর হাত, এক লহমায় অর্ধাঙ্গিনীকে নিকটে টেনে নিলো নিজের।

গ্যালারিজুড়ে কৌতূহল,উত্তেজনা এবং বিশৃংখলার ফায়দা সে ভালোমতই নিচ্ছে।মাস্কের উপর স্থাপিত কৃষ্ণগহ্বর খচিত নয়ন চারিপাশে বুলিয়ে আনলো একবার। রোযাও অনুসরণ করলো তার দৃষ্টি।বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করলো, দিমিত্রীর একজন গার্ডও আশেপাশে উপস্থিত নেই!এতক্ষণ যাবৎ রেইসের উত্তেজনায় সে খেয়ালই করেনি।মস্তিষ্ক ব্যাক্ষা প্রদানের আগেই আসমান ঝুঁকে এলো,নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে মৃদু কণ্ঠে আদেশ করলো,
– তুমি এক্ষুণি এই স্থান ত্যাগ করবে রোযা,নো কোয়েশ্চেনস!
স্থির হয়ে থাকলো রোযা, প্রাণভরে গ্রহণ করলো অমানিশার অস্তিত্বের অশুভ সুবাস,শরীর জুড়ে লেপ্টে তার র*ক্তে*র সুঘ্রাণ।

দ্যা রেইস অফ ডে*থ বর্তমানে এক নাটকীয় মোড় নিয়েছে। গ্যালারিজুড়ে এক অস্বস্তিকর নীরবতা।
ট্র্যাকের শেষ প্রান্তে মুখোমুখি বাইকে অবস্থানরত একজোড়া দুর্বোধ্য অস্তিত্ব।প্লেয়ার সিগমা,কে বি গ্রুপের প্রাক্তন হিটম্যান নিহাদ বনাম রাশিয়ান গ্যাং ডায়নোসোরাসের নেতা দিমিত্রী ভলকভ।কেউ কাউকে ছাড় দিতে বিন্দুমাত্র নারাজ।নিহাদের গ্লাভস পরিহিত হাতের জোর ঘূর্ণিতে হিং*স্র সিংহের গর্জন ধ্বনিত করছে শক্তিশালী রেসিং মডেলের বাইকের ইঞ্জিন।শরীর মানিয়ে নিতে বেগ পোহালেও অটল সে,রীতিমত পাথরে পরিণত হয়ে আসা পা দুখানা সে জোরের সঙ্গে চেপে রেখেছে বাইকের প্রান্তে।তার বিপরীতে দিমিত্রীর বাইকের কর্কশ আর্তনাদ এবং পাম্প থেকে নির্গত হওয়া ধোঁয়ার ঘূর্ণিপাক।দুই ক্ষুধার্ত নৃ*শংস জান্তব মুখোমুখি, পর্যবেক্ষণ করছে একে অপরকে সাবধানী চিত্তে, যেকোনো মুহূর্তে থা*বা উঁচিয়ে হা*মলে পড়তে প্রস্তুত।

বিস্ময়কর ব্যাপারটি ঘটলো তখনি।অতর্কিতে একটি পোর্শে ধীরগতিতে এসে থামলো দিমিত্রীর পাশাপাশি।উভয় জান্তব খানিক বিহ্বল হয়ে পাশ ফিরে তাকালো ড্রাইভারকে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে।লেদার জ্যাকেট সম্বলিত হুডি এবং ব্যাগী জিন্সে আবৃত অবয়বমাঝে হিমালয়তুল্য শীতলতা।পরিধানের মস্ত হেলমেট যা আড়াল করে রেখেছে, তা হলো নিগূঢ় কৃষ্ণগহ্বরের শোষণীয় দৃষ্টি এবং প্রলয়াকাঙ্খা।অমানিশা স্বয়ং,বুঝতে একটুও কষ্ট হলোনা নিহাদের।বিস্ময়ে ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে উঠলো তার,পরক্ষণেই অধরে ফুটলো তীর্যক এক হাসির রেখা।
দিমিত্রী হ্যান্ডেলে আঙুল চেপে খানিক বিব্রত ভঙ্গিতে গাড়িতে হেলমেট পরে বসে থাকা আসমানের উদ্দেশ্যে তাকালো।যেন তৃতীয় এক প্রতিযোগীর আগমনের অর্থ উপলব্ধিতে সে ব্যর্থ।তাতে স্টিয়ারিংয়ে ফিঙ্গার্লেস গ্লাভসে আচ্ছাদিত তর্জনী বুলিয়ে এনে মাথা ঘুরিয়ে চাইলো অমানিশা,বিড়বিড় করলো,

– দিস ইয গ্যা*ম্বলিং,এভরিথিং ইয ফেয়ার হেয়ার, রাইট?
একদৃষ্টে চেয়ে রইলো দিমিত্রী,খুব সতর্কতার সঙ্গে যেন সে হিসাব কষছে।নিহাদ নিজের বাইকের দুপাশে কনুই রেখে ঝুঁকলো সামনে,বলে বসলো,
– পোর্শের সঙ্গে পাল্লা দিতে ভয় পাচ্ছেন?
সামান্য হাসলো দিমিত্রী,মাথা কাত করে অভাবনীয় এক কন্ঠে উত্তর করলো,
– দ্যা মোর কনটেস্টেন্ট, দ্যা বেটার থ্রিল।

অব্যক্ত এক দৃষ্টি বিনিময় হলো প্রত্যেক পুরুষের মাঝে।ভিন্ন সকলের উদ্দেশ্য,কিন্তু যাত্রাপথ এক।এ যেন ধ্বং*স গড়ার খেলা।যার সমাপ্তিতে কার বিজয় লিখিত রয়েছে সকলের ধারণারও অতীত।গ্যালারির দর্শকগণ উত্তেজিত হলেও বর্তমানের পর্যবেক্ষণ তাদের অন্তরকে এক ব্যাখ্যাতীত অনুভূতিতে আবেশিত করলো বৈকি।
ট্র্যাকের প্রান্তে একে একে সার দিয়ে দাঁড়ালো নিহাদের বাইক,মধ্যখানে আসমানের পোর্শে এবং অপরপ্রান্তে দিমিত্রীর বাইক।প্রত্যেকের দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ।অপরদিকে উপস্থিত অন্যান্যদের দৃষ্টি এবং অন্তর সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত শুধুমাত্র তাদের দৌড়পাল্লা পর্যবেক্ষণে।ইতোমধ্যে বেটিং আরম্ভ হয়েছে।কোটি কোটি টাকা অবহেলিতভাবে গ্যালারির নিচে স্থাপিত টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।অত্যন্ত বেপরোয়া জু*য়ারীদের কার্যক্রম।অবৈধ সম্পদ আহরণে যেমন সীমারেখা নেই, তেমন ব্যায়ের মাধ্যমে নিজের গৌরব উন্মোচনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই।এমনি ধনকুবের একেক অশুভ অস্তিত্ব।

– প্লেয়ার্স…গেট, সেট…গো!
বু*লেটধ্বনি।তৎক্ষণাৎ একত্রে গর্জিত হলো দুটো শক্তিশালী বাইক এবং নীরব ঘা*তক পোর্শের শত অশ্বশক্তিসম্পন্ন ইঞ্জিন।তীব্র গতিতে এগিয়ে গেলো দিমিত্রী,তার পিছনেই নিহাদ।সর্বশেষে আসমান,উভয় হাত তার স্টিয়ারিংয়ে,সতর্ক দৃষ্টি গ্যালারির উদ্দেশ্যে আপতিত।পরক্ষণে সুগভীর দৃষ্টি তার নিহাদকে পর্যবেক্ষণ করলো।ছেলেটি একটি পা সম্পূর্ণ ঝুলিয়ে রেখেছে,অপরটি স্ট্যান্ডে রাখা।শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে দূর্বলতা প্রদর্শিত হলেও হাল ছাড়তে নারাজ।এতক্ষণ যাবৎ যা হয়েছে তা একটি নাটকের অংশ ছিল,কিন্তু বর্তমানে যা হচ্ছে তা সম্পূর্ণই সিলেবাসের বাহির থেকে আসা প্রশ্নপত্রে দেয়া পরীক্ষার ন্যায়।যার ফলাফল কি হবে তার সুনিশ্চিত ভবিষ্যতবাণী অসম্ভব।তাই আসমানের চিন্তাও দ্বিগুণ আকৃতি ধারণ করেছে। দিমিত্রীর এমন বহির্ভূত আচরণ থেকেই এক অজানা কাব্যের সূত্রপাত ঘটতে যাচ্ছে যেন,ইতোমধ্যেই টের পাওয়া যাচ্ছে তা।

নিজের দূর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার শিক্ষালাভ করা নিহাদ কোনোক্রমেই হাল ছাড়বার পাত্র নয়।পরিস্থিতি যত কঠিন এবং অপ্রত্যাশিতই হোক না কেনো, হারার আগে হার মেনে নেয়ার কোনো অর্থ হয়না।সে এখনো জীবিত, বক্ষপিঞ্জরের আশ্রয়ে হৃদযন্ত্র স্পন্দিত হয়ে চলেছে।অর্থাৎ,সে এখনো লড়াই চালিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে!দৃঢ় মনোবল এবং তীব্র মনোযোগে ঘন ভ্রুজোড়া কুঞ্চন ধারণ করলো তার। দিমিত্রী আদতেই একজন দূর্দান্ত বাইকার,যা এর পূর্বে কোনোদিন উপলব্ধি করার সুযোগ হয়নি নিহাদের।একবার পিছনে পোর্শের উদ্দেশ্যে তাকালো সে,হেলমেট পরিধানকৃত আসমানের মৃদু এক ইশারা অনুভব করলো।পাল্টা মাথা হেলিয়ে সামনে ফিরলো,হ্যান্ডেলে চেপে বসলো তার উভয় হাত, গতি বৃদ্ধি করলো পুনরদ্যমে। দিমিত্রীর বরাবর হতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হলোনা।

রাশিয়ান বান্দা মাথা হেলিয়ে তাকালো তার উদ্দেশ্যে,মনে হলো যেন তীর্যক হাসলো আপনমনে।পরক্ষনেই অতর্কিতে এক ঘূর্ণন তুললো,১৮০ ডিগ্রি কোণে বাইক ঘুরিয়ে নিহাদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো ধোঁয়াটে কুয়াশা এবং ট্র্যাকের শুষ্ক ধূলাকণার।হেলমেটের অভ্যন্তরেও কেশে ফেললো নিহাদ। দিমিত্রী ততক্ষণে তার ধরাছোঁয়ার বহু দূরে পৌঁছে গিয়েছে।এমনকি আসমানের পোর্শেও তাকে অতিক্রম করে ফেলেছে। সাইড ভিউ মিররে নিহাদকে লক্ষ্য করলো আসমান।ছেলেটির শরীর সামান্য বেঁকে গিয়েছে,বোধ হয় যন্ত্রণা হচ্ছে কিংবা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণে কষ্ট হচ্ছে।তৎক্ষণাৎ অ্যাক্সিলারেটর চাপলো আসমান,এক হাতে স্টিয়ারিং এবং অপর হাতে ধরলো গিয়ার।তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকলো গতি তার।ক্রমশ সন্নিকটে পৌঁছলো দুরন্ত দিমিত্রীর।মাথা হেলিয়ে তার গাড়ির অস্তিত্ব লক্ষ্য করে ভ্রুকুটি করলো রাশিয়ান গ্যাংস্টার।নিজের গতি বৃদ্ধি করলো,তার প্রক্রিয়া অনুসরণ করলো আসমানও।একবার বাইক,পরক্ষণে পোর্শে।তুমুল এক প্রতিযোগীতা আরম্ভ হলো উভয়ের মাঝে।গ্যালারির দর্শকগণ উদ্বিগ্ন এবং উত্তেজিত ভঙ্গিতে চেয়ে আছে।

পাশে সরে এলো দিমিত্রী।বান্দার উদ্দেশ্য আঁচ করে দুহাতে বনবন করে স্টিয়ারিং ঘোরালো আসমান।কর্কশ আর্তনাদ তুলে বাক কাটলো পোর্শে,টায়ারের ঘর্ষণে ধোঁয়াটে বর্ণ ধারণ করলো বায়ু। দিমিত্রীর আ*ক্রমণ এড়িয়ে তাকে পাল্টা ধা*ক্কা দিলো গাড়ি,হেলে পড়লো বাইক সামান্য,তবুও জোরদার ভারসাম্য বজায় রাখলো আরোহী।বান্দার এমন ক্রিয়া স্বয়ং আসমানকেও সামান্য বিস্মিত করলো।সুযোগটি গ্রহণ করলো দিমিত্রী।তৎক্ষণাৎ বাইক হেলিয়ে সন্নিকটে সরলো,তাকালো গাড়ির টায়ারের দিকে।উদ্দেশ্য কি বোঝা সম্ভব হলোনা তার,যতক্ষণ না পকেট থেকে ধা*রালো কিছু পেরেকের মতন সরঞ্জাম উঁকি দিলো।

একটি ঢোক গলাধঃকরণ করলো আসমান,মুহূর্তের মাঝে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দিলো, উদ্দেশ্য গাড়িকে ট্র্যাকের প্রান্তে সরিয়ে নেয়া।তার পিছিয়ে আসা অনুভব করে বিজয়ীর হাসি হাসলো রাশিয়ান বান্দা,এক লহমায় ছুঁড়ে দিলো হাতের সবকিছু ট্র্যাকের মাঝে।আসমানের পোর্শের টায়ারের দিকে গড়িয়ে গেলো তা।

হঠাৎ অবিশ্বাস্য গতিতে তেড়ে এলো দ্বিতীয় বাইকটি। দিমিত্রী এবং আসমান উভয়েই হতবিহ্বল হয়ে খেয়াল করলো নিহাদকে।বাইকের পিছনের টায়ার মাটিতে ঠেকানো,সামনের টায়ার ভারসাম্য রক্ষা করে ভূমি থেকে তুলে ধরেছে শূন্যে।পেরেকের মাঝে এঁকেবেঁকে পথ করে মুহূর্তেই দিমিত্রীর বাইকের নিকটে এলো,এক ঝটকায় বাইককে সোজা করে মাটিতে ঠেকালো।কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই ৩৬০ ডিগ্রি কোণে বনবন করে বাইক ঘুরিয়ে তুমুল এক বায়ুঘূর্ণি তুললো চারিপাশে। দিমিত্রী তার নিজের পরিকল্পনায়ই বশ হতে বাধ্য হলো। ধূলোর কারণে দৃষ্টি ধোঁয়াশা হয়ে গেলো তার,নিঃশ্বাস সামান্য রুদ্ধ হয়ে এলো।ওই অবস্থায়ও নিহাদের হেলমেটের অন্তরালে দৃষ্টি গেলো তার,জিভ বের করে ভেংচি কাটছে তাকে এই পাগলাটে বান্দা!এক হাতে হ্যান্ডেল ধরে অপর হাত শূন্যে তুলে দেখাচ্ছে,দুই আঙ্গুলে ভিক্টোরি সাইন দেখিয়ে তুমুল বেগে তাকে পাশ কাটিয়ে অগ্রসর হয়ে গেলো ট্র্যাকে।হতভম্ব হয়ে রইলো দিমিত্রী।

– গো হোম অ্যান্ড ক্রাই লুজারস!
উচ্চকন্ঠে বলে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে নিহাদ রীতিমত বায়ুর বেগে ছুটে গেলো।তার বাচ্চামো লক্ষ্য করে এমন গু*রুতর মুহূর্তেও হেসে ফেললো আসমান।এই ছেলে কোনোদিন শুধরাবে না।অবশ্য সে পরিবর্তন হোক তা আসমান চায়ও না।নিহাদের এই ছন্নছাড়া উৎফুল্ল বৈশিষ্ট্যই তাকে আর পাঁচজন সাধারণের মাঝে অসাধারণ করে তোলে।নিহাদ তাদের পেরিয়ে যেতেই হতবিহ্বল দিমিত্রীর দিকে নজর গেলো তার,তীর্যক চাহুনি হেনে আসমান গিয়ার চেপে ধরে এগিয়ে গেলো ট্র্যাকে।

মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের বিস্ময়ের পর্ব সমাপ্ত করে দিমিত্রী গতি বাড়ালো।হৃদস্পন্দন তার সীমা ছাড়িয়েছে।উদ্বেগে নয়,ক্রোধে।কিন্তু আত্মবিশ্বাসী অস্তিত্ব সে,শেষ হাসি হাসবে সেই।অধর তার এই মুহূর্ত থেকেই হাস্যরেখায় উদ্ভাসিত হলো।অতি ক্ষীপ্র গতিতে ছুটলো আসমানের পোর্শের উদ্দেশ্যে,সহসাই গাড়ির পিছনের হেডলাইট বরাবর প্রচণ্ড এক ধা*ক্কা হা*নলো।সম্মুখ বেগের কারণে আসমান ছিটকে গেলো সামনে,শুধুমাত্র সিটবেল্টের বাঁধনের কারণে রক্ষা হলো কিছুটা,টান লাগলো বুকের অংশে,হেলমেট ঠু*কে গেলো স্টিয়ারিংয়ে।এক ঝটকায় জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো আসমান, দিমিত্রীর দ্বিতীয় ধাক্কা তাকে ট্র্যাকের পাশে ঠেলে দিলো।অভিজ্ঞ ভঙ্গিতে সামনে এগিয়ে গেলো রাশিয়ান আরোহী, বাকা হাসলো আসমানকে লক্ষ্য করে।পরমুহুর্তেই বাইক ছুটিয়ে তেড়ে গেলো নিহাদের উদ্দেশ্যে।

প্রস্তুত নিহাদ নিজের বাইকের নিয়ন্ত্রণ নিলো মুহূর্তেই। দিমিত্রী পাশে পৌঁছে সহসাই তার দিকে হাত বাড়িয়ে গ্রীবাদেশ আঁকড়ে ধরলো,কম যায়না নিহাদও।পাল্টা দিমিত্রীর কণ্টকাকীর্ণ গোলাপ চিহ্নিত কন্ঠ জাপটে ধরলো,উভয় বাইক হেলেদুলে পাশাপাশি চললো।রাশিয়ান শক্তির সঙ্গে এই দূর্বল শরীরে পেরে উঠতে বেগ পোহাতে হচ্ছে নিহাদের,সম্পূর্ণ দে*হ ঘর্মাক্ত হয়ে পড়েছে।দাঁত দিয়ে অধর কা*মড়ে এক ঝটকায় দিমিত্রীকে স্পিড মনিটরের উপর ঠেললো।তার অবশ পা লক্ষ্য করে লা*থি হাকালো গ্যাংস্টার। কুঁকড়ে গেলো নিহাদ,বাইক ভারসাম্য হয়ে পড়ল,এই বুঝি আছড়ে পড়লো ট্র্যাকে।

বিজয়ীর বেশে হাসলেও তা চিরস্থায়ী হলোনা দিমিত্রীর অধরে।ঘূর্ণিঝড় হয়ে তেড়ে আসা পোর্শে এক লহমায় পার্শ্ববর্তী স্থান দখল করলো।মুহূর্তের মাঝে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে নিহাদের শিরদাঁড়া স্পর্শ করে জোর ঠেলায় বাইকটি সোজা করে দিলো আসমান।প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে নিহাদ বাইকের দখল নিজ আওতায় নিলো,তারপরই জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো ড্রাইভিং সিটে থাকা গুরুর উদ্দেশ্যে।উহু,শুধুমাত্র তার গুরু নয়।তার বড়ভাই!যেকোনো মুহূর্তে যে তার জন্য সর্বোচ্চটুকু দিয়ে লড়তে প্রস্তুত।এক অমলিন হাসি ফুটলো চট্টলার মুক্ত বিহঙ্গের ঠোঁটে,আসমানকে অবলোকন করে পাশে দিমিত্রীর দিকে তাকালো।

রাশিয়ান বান্দার দৃষ্টি হতচকিত হলো।দুই বাংলাদেশী যো*দ্ধা,একজনের দূর্বার বাইক,অপর জনের হিং*স্র পোর্শে,পাশাপাশি তুমুল গতিতে অগ্রসর হওয়া এবং তার উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা দৃষ্টি এক হিমশীতল শিহরণ খেলিয়ে দেয় সমস্ত অস্তিত্বে।এই জুটিকে মাত দেয়া ওই অন্তরীক্ষের মাঝে তারকারাশি গণনার ন্যায়ই অসম্ভব।নিজের অজান্তেই এক শক্ত ঢোক দিমিত্রীর কন্ঠনালী বেয়ে পাকস্থলীতে নেমে গেলো।

তার বিচলিত মুহূর্তের সুযোগ নিলো নিহাদ।এক ঝটকায় বাইক ঘুরিয়ে এনে দেহের সর্বশক্তি কাজে লাগিয়ে মোক্ষম এক আ*ঘা*ত হা*নলো দিমিত্রীর বাইকে।সর্বাঙ্গ কাপলো তার, যন্ত্রণাতরঙ্গ খেলে গেলো শিরদাঁড়ায়।তবুও অটল সে।সম্মুখে এগিয়ে কয়েক ঘূর্ণি কেটে তীব্র গতিতে বাইক উঁচিয়ে ছুটে গেলো সামনে।পিছনে ফেলে গেলো এক পরাজয়ের উপাখ্যান।দিমিত্রী ভারসাম্য হারিয়ে ট্র্যাকের বাইরে ছিটকে গেলো।অপরদিকে দ্রুত নিকটে আসতে থাকা সমাপ্তিরেখা এক লহমায় পেরিয়ে গেলো নিহাদ।তীব্র উল্লাসে এবং মাতমে ফে*টে পড়ল গ্যালারি।এবার কোনোপ্রকার উদযাপন করলোনা নিহাদ।বাইকটি থামিয়ে লাফিয়ে নামলো নিচে,হাঁটু ভেঙে এলো তার।দুহাত মাটিতে ঠেকিয়ে নতজানু হয়ে বসলো, ইচ্ছা হলো হেলমেট খুলে ছুঁড়ে ফেলে।তীব্র কাঁপুনি দিচ্ছে শরীর,অপরদিকে পা দুটো যেন আর শরীরের অংশ নয় এমন ভঙ্গিতে স্থবির হয়ে রয়েছে।হাঁপাচ্ছে সে, হৃদযন্ত্র স্পন্দিত হচ্ছে দারুণভাবে।তার অবয়বের পানে চেয়ে রইলো প্রত্যেকে।সদ্য যু*দ্ধ জয়ী এক আপ্লুত সৈনিক যেন।

অপরদিকে দিমিত্রী ট্র্যাকে উঠে এলেও সমাপ্তিরেখা অতিক্রম করতে সক্ষম হলোনা।এর পূর্বেই তাকে থমকাতে বাধ্য করলো আসমানের পোর্শে।১৮০ ডিগ্রি ঘূর্ণি কেটে বাইকের মুখোমুখি থামলো সে,তৎক্ষণাৎ বাইক থামিয়ে তীব্র দৃষ্টিতে তাকালো দিমিত্রী।উভয়ই হাঁপাচ্ছে,হৃদযন্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমে বুক ওঠানামা করছে স্পষ্টভাবে।পরক্ষনেই ঘটলো ঘটনাটি।এক লাফে নিজের বাইক থেকে নেমে এলো দিমিত্রী, ধৈর্য্যের বাঁধ অতিক্রান্ত হয়েছে তার।অপরদিকে আসমানও পোর্শের দরজা খুলে পা রাখলো মাটিতে।দুই প্রান্ত থেকে জোর কদমে একে অপরের দিকে এগিয়ে এলো দুই বান্দা।সন্নিকটে পৌঁছানো সঙ্গে সঙ্গে সুঠাম শরীরের অধিকারী দিমিত্রীর জোরালো মুষ্টিবদ্ধ আ*ঘা*ত আছড়ে পড়ল আসমানের হেলমেট বরাবর।এতটাই শক্তিসম্পন্ন হলো তা যে হেলমেটের উইন্ডোতে চির ধরে গেলো। কোনোপ্রকার দ্বিধা ছাড়াই সেটি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলো আসমান,নিজের মাস্ক পরিধানকৃত সহিং*স অভিব্যক্তি নিয়ে তাকালো রাশিয়ানের উদ্দেশ্যে।

– খুব বড় ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছ।
এটুকুই উচ্চারিত হলো, ক্ষীপ্র গতিতে এগোলো দিমিত্রী। মুষ্টি পাকানো হাত তার ঠেকলো আসমানের তালুতে, প্রতিহত করেই তার কব্জি পেঁচিয়ে বাহুখানি বাঁকিয়ে ধরলো অমানিশা।নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সুযোগটুকুও দিলোনা সে প্রতিপক্ষকে।হাঁটু তুলে পাঁজর বরাবর আ*ঘা*ত হা*নলো। নুয়ে পড়ল দিমিত্রী,তার হেলমেট খুলে সেটি ব্যবহার করেই মু*খ বরাবর ঘা*ত করলো আসমান।এতদিনের সব আক্রোশ,ক্রোধ,ঘৃণা সব উপচে পড়লো তার প্রতিটি কর্মে।রোযার বন্দী দশা,এই বান্দার তাতে প্রধান ভূমিকা পালন আসমানের উন্মত্ত প্রতিশোধী আ*ত্মাকে উন্মুক্ত করেছে।র*ক্তপিপাসায় যেন কন্ঠতালু শুকিয়ে এসেছে।সমস্ত গ্যালারি তাদের এই খেলা পিনপতন নীরবতার মাঝে উপভোগ করে চলেছে যেন। কারোর তাড়া কিংবা ইচ্ছা কোনোটাই নেই এই আস্ফালনকে বন্ধ করবার।
দূরে ছিটকে গিয়ে কোনোমতে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করা দিমিত্রী মাথা তুলে আসমানের দিকে তাকালো, নিজের মুখে র*ক্তে*র স্বাদ পাচ্ছে সে,অধরের কোণে জমা ফোঁটাটি বেপরোয়াভাবে মুছে নিলো সে।

– ভুল করছো তুমি।
দিমিত্রীর বক্তব্যের উত্তরস্বরুপ আসমান এক পা এগোলো,টানটান শিরদাঁড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের নিগূঢ় কৃষ্ণগহ্বর মেলালো রাশিয়ানের ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে।
– ভুল তো আপনি করেছেন,আমার জ্যোৎস্নাকে আবদ্ধ করার দুঃসাহস দেখিয়ে।
ক্ষ*তপূর্ণ ওষ্ঠের হাসিটি দিমিত্রীর বিস্তৃত হলো।মাথা হেলিয়ে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ চালালো।বললো,

– জ্যোৎস্নার চাঁদ….মেয়েটি ভুল কিছু বলেনি দেখছি।
আসমান স্থির থাকলো,শুধুমাত্র মুষ্টিবদ্ধ হলো তার উভয় হাত। অদূর থেকে দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে নিহাদ, বুঝতে পারছেনা আদতে এখন কি হতে চলেছে। দিমিত্রী অত্যন্ত ধীরপায়ে হেলেদুলে এগোলো আসমানের দিকে, যেন কোনো তাড়া নেই,নেই কোনো ভীতি।বেপরোয়া ভঙ্গিতে নিকটবর্তী হয়ে বলে বসলো,
– আফসোস,তোমার জ্যোৎস্না আমার অশুভ ছায়ায় মলিন হয়েছে।অমাবস্যার ছায়া হয়ে তাকে প্রতিটি রাতে আমি একটু একটু করে গ্রাস করেছি!এমন অপবিত্র জ্যোৎস্নাকে কি তুমি কোনোদিন গ্রহণ করতে পারবে… চাঁদ?
নিজের হৃদস্পন্দনটুকু অনুভূত হলোনা আসমানের।এক লহমায় এগোলো, দিমিত্রীর গ্রীবাদেশ পাকড়াও করে তাকে আছ*ড়ে ফেললো মাটিতে। মস্তিষ্ক বিশ্লেষণের আগেই সুতীব্র আবেগের তাড়নায় অমানিশার হাতে উঠে এলো হিডেন ব্লে*ড।এই বক্তব্যের পর রাশিয়ান গ্যাংস্টারকে ছেড়ে দেয়া নিজের পৌরষত্ব বিসর্জন দেয়ার সামিল।

– স্বয়ং কলঙ্ককে অপবিত্রতার ভীতি প্রদর্শন করছেন?অত্যন্ত হাস্যকর।
বিরতি। ঝুঁকলো আসমান,তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত ঘটালো দিমিত্রীর নয়ন বরাবর,প্রজ্জ্বলিত তার দৃষ্টি এক অব্যক্ত আবেগে।
– যদি পৃথিবীর সমস্ত কদর্যতাও ওর শরীরকে নি*ষ্পেষিত করে,তবুও আমার দৃষ্টি সেই কদর্যতার ভিড়ে এক উজ্জ্বল দীপ্তিময়ী নক্ষত্রের প্রতিফলন দেখবে।জ্যোৎস্নার সঙ্গে চাঁদের বন্ধন শারীরিক নয়,আত্মিক!
হিডেন ব্লে*ডে আঙুল চেপে আসমান দাঁতে দাঁত ঘষে বিড়বিড় করলো,
– অমাবস্যার সাধ্য কি চাঁদের জ্যোৎস্নাকে গ্রাস করে!
এক মুগ্ধতা ফুটলো ফ্যাকাশে দৃষ্টিমাঝে,হেসে জানালো,
– দারুণ!তবে আফসোস,তোমার এই অনুভূতি বড়ই অবাস্তব।আদতে যে রোযা এক অশুভ কালোতে ঢেকে যাওয়া অধরা অস্তিত্ব!
তীর্যক হাসলো আসমান, ব্লে*ডটি সে নিয়ে এলো দিমিত্রীর কন্ঠ বরাবর।নির্দ্ধিধায় ঘোষণা করলো,

– যদি রোযা অশুভ কালো অস্তিত্ব হয়,তবে আমি বর্ণান্ধ!
বাক্যটি দিমিত্রীকে থমকাতে বাধ্য করলো।ফ্যালফ্যাল করে তাকালো সে আসমানের উদ্দেশ্যে।অমানিশার দীপ্তির প্রতি প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাস এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে তার ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর প্রয়াস রাশিয়ান গ্যাংস্টারের হৃদয়েও অনুভূতির ঝড় তুললো।ক্ষীপ্র গতিতে এগিয়ে আসতে দেখলো সে আসমানের ব্লে*ডটিকে,অতঃপর……
এক ঝটকায় আসমানের শরীর পাশের মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। ব্লে*ডটি ছিটকে গেলো দূরে।নিজের বাহুতে প্রচণ্ড য*ন্ত্রণা অনুভূত হলো, অপর হাতে সেটি চেপে ধরতেই উষ্ণ ধারা টের পাওয়া গেলো।হাতটি তুলে ধরতেই মৃদু আভায় উদ্ভাসিত হলো রক্তিমতার চিহ্ন।শরীর সামান্য কুঁকড়ে এলো আসমানের,সহ্য করলো য*ন্ত্রণাটুকু দাঁত দিয়ে ঠোঁট কা*মড়ে।বু*লেট!তার বাম বাহু ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে,র*ক্তের ধারা ক্রমশ জ্যাকেটের হাতা ভিজিয়ে তুলছে।
অদূরে নিহাদ এতক্ষণ যাবৎ নিজের শরীরকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় হস্তক্ষেপ করতে না পারলেও বর্তমান দৃশ্য তার চিত্তকে নাড়িয়ে দিলো।সমস্ত গ্যালারি প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে।সমস্ত লোক ট্র্যাকে নেমে এসেছে,যার মাঝে অর্ধেকের নিকটই রয়েছে পি*স্ত*ল এবং রিভ*লভার জাতীয় অ*স্ত্র।যার প্রত্যেকটি তা*ক ক*রা একটিমাত্র বান্দার উদ্দেশ্যে।আসমান!

দিমিত্রী সব জানতো!
উপলব্ধির শিহরণ খেলে গেলো নিহাদের সর্বাঙ্গে। লাফিয়ে উঠলো সে,পা জোড়ার কম্পন মানলো না।এক ছুটে পৌঁছতে চাইলো আসমানের কাছে,কিন্তু সম্ভব হলোনা।একদল অ*স্ত্রধারী তাকেও ঘিরে ফেললো।রেসিং ট্র্যাকের বর্তমান অবস্থা অ*স্ত্রে*র মুখে জিম্মি হয়ে যাওয়া আসমান এবং নিহাদ।

দিমিত্রীর খিলখিলে প্রফুল্ল হাসির ধ্বনিতে উদ্ভাসিত হলো সমস্ত প্রাঙ্গণ।অত্যন্ত ধীরে উঠলো আসমান, পকেটে একটি রুমাল রয়েছে তার।সেটি বের করে নিজের বাহুতে পেঁচালো।সুচারু দৃষ্টিতে নিজেকে ঘিরে রাখা প্রত্যেক অ*স্ত্রধারী ব্যক্তির দিকে তাকালো।সামান্যতম ফাঁকফোকর নেই,অগুণতি অ*স্ত্র তার মস্তিষ্ককে ঘিরে রয়েছে,বিন্দুমাত্র নড়চড়ও বু*লে*টের গর্জনের কারণ হবে।তবুও নিটল হিমালয়, নতজানু হতে নারাজ।কৃষ্ণগহ্বর জুড়ে নির্ভীক ভঙ্গি তার।তাতে অদূরে দাঁড়ানো দিমিত্রীকে বেশ বিনোদিত মনে হলো।গ্যালারির অর্ধেক মানুষই তার নিজস্ব লোক,আর সকলের হু*মকিস্বরূপ অবস্থানের বিপরীতে একটিমাত্র অস্তিত্বের উচ্চশিরে দন্ডায়মান অবয়ব তাকে মুগ্ধ করলো।বুঝতে অবকাশ রইলোনা,কেনো তার স্ত্রী এই চাঁদকে গ্রাসের অভিলাষে মত্ত।কোমল চাঁদ নয় এ, শীতলতার আবেশে স্থবির করে দেয়া মহাচন্দ্রের উদ্ভাস সে।আর এই মহাচন্দ্রকে বেকায়দায় ফেলার পরিতৃপ্তি দিমিত্রীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গজুড়ে সুখ শিহরণ খেলিয়ে দিলো।

– চেকমেট…. দ্যা গ্রেটার মুন!
রাশিয়ান গ্যাংস্টারের কণ্ঠের উদগীরণ ট্র্যাকের মাঝে নীরব উদ্বেগ খেলিয়ে দিলো।স্থির দৃষ্টিতে তাকালো আসমান, নড়লো না একচুল,অন্যথায়….ঝাঁ*ঝরা হ*য়ে যাবে তার সমস্ত অস্তিত্ব। দিমিত্রী বিস্তৃত হাসি নিয়ে এগিয়ে এলো,অ*স্ত্রের বলয় ভেদ করে অভ্যন্তরে প্রবেশ করলো,মুখোমুখি হলো অমানিশার।
– এক দুর্ধর্ষ রেইসের আয়োজন,জাহাজ থেকে আমাকে শুষ্ক মাটিতে টেনে আনার দূর্দান্ত পরিকল্পনা।
হাততালি দিয়ে উঠে আবারো হাসলো দিমিত্রী।পরক্ষণে সেই হাসি ম্রিয়মাণ হয়ে এলো তার।নিঃশব্দ আসমানের অবয়বে চেয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

– একটাই ভুল হয়ে গিয়েছে তোমার।প্রতিপক্ষকে অবজ্ঞা করে ফেলেছ।এতটাও বুদ্ধিহীন ভাববে তুমি আমায়, কল্পনা করিনি মিস্টার…মেশিন!
উদ্দেশ্য আসমানের নিকট থেকে প্রতিক্রিয়া লাভ।কিন্তু তা সম্ভব হলোনা।নির্বিকার হিমালয় সেই একই স্থির দৃষ্টিতে দেখছে তাকে।হারের পর্যায়েও তার কোনোপ্রকার আগ্রাসন নেই। বিনোদিত হলো দিমিত্রী।
মাথা কাত করে কৌতুকপূর্ণ কন্ঠে শুধালো,
– তোমার আমার মধ্যে পার্থক্য কি জানো?
নৈঃশব্দ্য।তাতে তীর্যক হাসির ঝিলিক তুলে রাশিয়ান বান্দা ঝুঁকলো,বরাবর কৃষ্ণগহ্বরে আপন ফ্যাকাশে নজর মিলিয়ে জানালো,

– আই অ্যাম আ গ্যাংস্টার,অ্যান্ড ইউ আর আ লোন ওল্ফ।
মাস্কের অন্তরালে একটি শক্ত ঢোক গলাধঃকরণ করলো আসমান,দিমিত্রী মিথ্যা বলছেনা।তার নিজস্ব দল রয়েছে,যেখানে আসমান সর্বদাই একা।এখানেই হয়ত দিমিত্রীর জয়।তবুও কম্পিত হলোনা তার চিত্ত,বরং স্বগর্বে উত্তোলিত হলো নিগূঢ় শোষণীয় কৃষ্ণগহ্বর, বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলো,
– বাঘ কখনো দল বেঁধে শিকার করেনা,মিস্টার ভলকভ!
বক্ষমাঝে এক শীতল শিহরণের উপস্থিতি স্পষ্ট টের পেলো দিমিত্রী।এই অবিচল বান্দার নিশ্চিত পরাজয়ের প্রান্তে দাঁড়িয়েও অকুতোভয় অভিব্যক্তি তাকে আরো একবার স্মরণ করিয়ে দিলো কত বিচিত্রই না হতে পারে স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষ!এক পদক্ষেপ অগ্রসর হলো আসমান, অ*স্ত্রের ঝনঝন ধ্বনিও তাকে এবার রুখতে সক্ষম হলোনা। দিমিত্রীর প্রগাঢ় শূণ্যতাঘেরা নয়নে নিজের দৃপ্ত অমানিশাখচিত দৃষ্টি ফেলে বললো,

– ইফ ইউ আর আ গ্যাংস্টার, আই অ্যাম দ্যা মন*স্টার।
চোখের পলক ফেলার পূর্বেই ঘটনাটি ঘটলো।যেসব ব্যক্তি আসমান এবং নিহাদের উদ্দেশ্যে অ*স্ত্র তা*ক করে রেখেছিল,তারা অতর্কিতে নিজেদের নিশানা ঘুরিয়ে একে অপরের দিকে ফিরলো।টাওয়ারের চারিপাশ থেকে স্না*ইপার দল নিজেদের রেড ডট ফেললো ট্র্যাকের চারিদিকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর বুক বরাবর।সকলে হতভম্ব এবং দ্বিধান্বিত হয়ে চারিদিকে তাকালো। দিমিত্রী এক ঝটকায় নিজের লোকদের দিকে তাকালো,প্রত্যেকের মাথায় অ*স্ত্র ঠেকিয়ে রেখেছে অপর কেউ।দৃশ্যটি এমন যে মধ্যিখানে আসমান,নিহাদ।তাদের ঘিরে বলয়ে দিমিত্রীর লোকজন, এবং তাদেরও ঘিরে রয়েছে অপর এক পক্ষ,যাদের পরিচয় সম্পর্কে রাশিয়ান গ্যাংস্টার সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।কি হচ্ছে এখানে?মস্তিষ্কে এক দারুণ বিপদসংকেত অনুভূত হলো দিমিত্রীর।তারপরই,

– এক্সকিউজ মী…প্লীজ জায়গা দিন,আমার এন্ট্রির সময় হয়ে গিয়েছে।
অচেনা কন্ঠস্বরটি শ্রবণ হতেই দিমিত্রী ফিরে তাকিয়ে বলয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেখলো কাউকে।আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো সেই অস্তিত্বকে। বাইকস্যুটজুড়ে ধুলোবালি এবং র*ক্তে*র ছোপ লেপ্টে রয়েছে ছেলেটির।এই প্রথমবার সুদর্শন তীক্ষ্ণ মুখখানি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
প্লেয়ার গামা,ভিকি!
এ না ম*রে গিয়েছিল?
দিমিত্রীর হতবিহ্বল দৃষ্টি লক্ষ্য করে তীর্যক হাসলো ভিকি।নিজের পোশাকে লেপ্টে থাকা র*ক্ত ঝাড়ার ভান ধরে বিড়বিড় করলো,

– আহা,শুকিয়ে একদম কালশিটে পরে গিয়েছে গো। ঘষে ঘষে তুলতে হবে দেখছি।
নয়ন তুলে হতবাক রাশিয়ানের মাঝে দৃষ্টি ফেলে দুহাত পকেটে গুঁজলো ভিকি।তারপর প্রফুল্ল ভঙ্গিতে জানালো,
– আমার পরিচয়টা দেয়া হয়নি তাইনা?অফিসার আরিফিন কবির,ফ্রম….ইন্টারপোল!
ব*জ্রপাত হলো যেনো দিমিত্রীর অভ্যন্তরে,প্রসারিত দৃষ্টিতে হতবাক চেয়ে রইলো সে এবং জি*ম্মি হয়ে পড়া যার সকল লোক।দ্বিগুণ বিস্ময় প্রদান করে ধ্বনিত হলো সেই অমিত বজ্রকন্ঠস্বর,
– চেকমেট….গ্যাংস্টার দিমিত্রী ভলকভ!

আসমানের বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হলো বারংবার,এক অশরীরী রূপকথার ন্যায়।পলকহীন নয়নে চেয়ে থাকলো দিমিত্রী,মস্তিষ্ক তার বিশ্লেষণে অক্ষম।তার অক্ষমতায় চূড়ান্ত সীমায় ঠেলে দিয়ে নিহাদ অতি অবহেলায় বলয় ভেদ করে আসমানের পাশে এসে দাঁড়ালো।গুরুর কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের তর্জনী চিবুকে ছেয়ে বিস্তর হেসে জানালো,

ডার্কসাইড পর্ব ৬৪

– ইউ প্লে গেমস্, অ্যান্ড উই প্লে ট্রিকস… বেইবি!
কোনোপ্রকার প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করলোনা দিমিত্রী,শুধু অনুভূত হলো এক ভ*য়াল অনুভূতি।ঠিক যেমনটা হয়, ফাঁদে পরে হাসফাঁস করতে থাকা শিকারের।অথচ এতদিন সে জানতোও না,সে আদতে শিকারী নয় বরং শিকারের চরিত্রে ছিল!

ডার্কসাইড পর্ব ৬৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here