ডার্কসাইড পর্ব ৬৭

ডার্কসাইড পর্ব ৬৭
জাবিন ফোরকান

– অপূর্ব!
ডায়েরীর ছবিটির উপর হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করলো রোযা আপনমনে।পুরাতন এক স্মৃতি।তবুও তাজা এক অম্লান বর্ণে।আসমান,সাইকেলের উপর আসীন।অতি উৎফুল্ল ভঙ্গিতে চেয়ে আছে ক্যামেরার উদ্দেশ্যে।তার শুভ্রতাঘেরা চেহারায় নেই বিন্দুমাত্র কলঙ্কের ছোঁয়া। প্রফুল্লতায় ঘেরা এক শিশুসুলভ নিষ্পাপতা।স্রষ্টার অতি সাধনার এক অপার সৌন্দর্যময় সৃষ্টি যেন।বায়ুর ঝাঁপটায় ঘাড় অবধি মসৃণ কেশরাশি তার কপালের চারিপাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে।পরিপুষ্ট অধরজুড়ে বিস্তৃত হাসি,দাঁতের আবছায়া অবয়ব চিকচিক করছে।দিবাকরের স্নিগ্ধ স্বর্ণালী রশ্মি এবং সড়কের ধারের গাছের সারি দৃশ্যটিতে করে তুলেছে স্বর্গীয়।নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া যাচ্ছেনা কিছুতেই।রোযা সম্পূর্ণ নিমজ্জিত তার ভালোবাসার পুরুষটির নির্মল অস্তিত্ব অবলোকনে।

এই অস্তিত্ব তার অতীতের।যে সময় জাগতিক বিভীষিকা তাকে গ্রাস করেনি,নি*ষ্ঠুর মানবতার ব*লি হয়নি তার অবয়ব,সেই সময়কার।ইতালির দিনগুলো, যে মুহূর্তে আসমান ছিলো সবথেকে বেশি খুশি।রোযার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক স্পন্দন অনুভব হলো।নয়ন ক্রমশ অশ্রুসিক্ত হয়ে আসছে তার।এই তার আসমান, সত্যিকার আসমান!কতটা মানুষ লাগছে তাকে!কি সুন্দর হাসতে জানতো সে! ভালোবাসতে জানতো, সুখী থাকতে জানতো,জীবনকে উপভোগ করতে জানতো!অভিশপ্ত ভাগ্য তাকে এক পরিপূর্ণ সুখী মানুষ থেকে রূপান্তর করেছে ক্রুর কঠিন যন্ত্রে।দীর্ঘশ্বাস নির্গত হলো রোযার বক্ষ হতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– এটা চিত্রলেখা তুলেছিলো।আমি বাড়ি ফিরে আসছিলাম লাইব্রেরী থেকে,তখন।
কানের কাছে বিড়বিড় করে উঠলো আসমানের কন্ঠস্বর।রোযা মাথা হেলিয়ে তাকালো।তার নিকট ঝুঁকে রয়েছে অমানিশা।মুখে মাস্ক নেই,যার দরুণ চোয়ালজুড়ে ওই দগদগে দাগ স্পষ্ট।রোযা একটি ঢোক গিললো।একবার আসমান,পরক্ষণে বছর পাঁচেক আগের ছবির দিকে তাকালো।তুলনা করছে সে? উঁহু।নিজের হৃদয়কে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তার ভালোবাসার পুরুষটিকে এই জগতের কতটা নি*ষ্ঠুরতা সহ্য করতে হয়েছে।গোটা পৃথিবী তার পদতলে ক্ষমা চাইলেও সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হবেনা।অজান্তেই মুষ্টিবদ্ধ হলো রোযার হাত,এক ক্রোধ এবং দায়িত্ববোধ অনুভব করলো।

আসমান নিজের সবটুকু আজ তার সম্মুখে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।তাই হয়তো এই স্মৃতির জগতে বিচরণের ক্ষমতা সে লাভ করেছে।কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসার আবেগে পরিপূর্ণ হলো রোযার অন্তর।একের পর এক পাতা উল্টে দেখতে থাকলো ছবি। ডায়েরীজুড়ে পাতার ভাঁজে ভাঁজে পেপার ক্লিপ,আঠা এবং কখনো বা স্ট্যাপলার পিন দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ছবিগুলো।আসমানের সুখের সংসারের ছবি।হাস্যোজ্জ্বল আসমান,অনুভূতিশীল আসমান,এক স্বাভাবিক মানুষ আসমান।পর্বতের চূড়ায়, সমুদ্রের বালুচরে,কখনো বা লাইব্রেরীর পুস্তকের অন্তরালে।অধিকাংশ ছবি তার স্ত্রী, চিত্রলেখা তুলেছে।কখনো সরাসরি,কখনো বা গোপনে।রোযা নিজেকে সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেললো ওই জীবনে।যখন আসমান নিজের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়টুকু অতিবাহিত করছিলো,তখন সে কোথায় ছিল?

মনে পড়েছে।দাদু ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।সবেমাত্র কলেজ সমাপ্ত করে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগটুকুও হয়নি।দাদুকে নিয়ে ছুটেছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে,দেশে কিংবা বিদেশে।অসম্মানিত হয়েছে আপন চাচার নিকট।ভাগ্যের কি পরিহাস!ঠিক যে সময়টায় আসমান নিজের গোটা জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়টুকু অতিবাহিত করছিলো, তখন রোযা পৃথিবীর বিরুদ্ধে সংগ্রামের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল।তখন সামান্যতম সময়ের জন্যও মনে হয়নি,ভাগ্য অদূর ভবিষ্যতে একসূত্রে গাঁথবে তাদের।ভাবতেই সামান্য হাসির রেখা ফুটলো রোযার ওষ্ঠজুড়ে।
ডায়েরীর মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছিয়েই থমকে গেলো রোযা।একটি উড়চিঠি।

“ প্রিয়তমা,
ক্রোধান্বিত হয়েছ কি…….”
থমকে গেলো রোযার হৃদস্পন্দন।সমগ্র চিঠি এড়িয়ে তার দৃষ্টি আবদ্ধ হলো অন্তিম কিছু বাক্যে। পেঁচানো ধাঁচের হাতের অক্ষরে লিখিত,
“ তোমার তরে আপন সমাপ্তি রচেছি,এবার নাহয় কারো তরে নবীন সূচনা রচি?
শক্তি দাও চিত্র,এই নবযাত্রায় প্রার্থনা দাও।
ইতি,
তোমার ব্রোকেন হার্ট। ”

এক ফোঁটা পুরাতন অশ্রুচিহ্ন হলদেটে চিহ্নে রাঙিয়েছে ডায়েরীর পাতাকে।হাত বাড়ালো রোযা, ছুঁয়ে দিতে চাইলো।কিন্তু সম্ভব হলোনা।এর পূর্বেই আসমানের হাত আবৃত করে ফেললো ডায়েরীর পাতা।নয়ন তুলে তার ঠিক পাশেই বসে থাকা স্বামীর দিকে চাইলো রোযা,আসমান নির্বিকার।তার অধরে এক চিলতে হাসি।কোমলতার সঙ্গেই ডায়েরীটি বন্ধ করে ফিরিয়ে নিলো সে। রোযা কোনো বাঁধা দিলোনা।এই ডায়েরী এবং এতে খচিত প্রতিটি শব্দ,বাক্য, অনুভূতি একান্তই আসমানের নিজের।যে গন্ডির অভ্যন্তরে আজ পর্যন্ত কেউ প্রবেশের অনুমতি পায়নি।কিন্তু রোযা,সে ব্যতিক্রম।নিজের হৃদয়ে অতি যত্নে রাখা গোপনীয় বাক্সের ভেতর আসমান তাকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে।এ যে চাওয়ার চাইতেও বেশী!এবং এটুকুই একান্ত জগতের মধ্যকার সীমানা, অনুধাবন করলো রোযা।বিপরীতে তাই পাল্টা হাসলো সেও,নিঃশব্দে।আসমান ডায়েরীটি মেঝের উপর নিজের পাশে দূরে সরিয়ে রাখলো।উভয়ই তারা নিজেদের কক্ষের জানালার ধারে পর্দায় ঘেরা স্বচ্ছ দেয়ালে হেলান দিয়ে পাশাপাশি বসে আছে।উপরের জানালা খোলা থাকায় মৃদু আলোড়নে পর্দাসমূহ দুলছে।রোযা একটি নিঃশ্বাস ফেলে আসমানের কাঁধে মাথা রাখলো।

– তুমি বড্ড নির্মল ছিলে চাঁদ।
রোযার বিড়বিড় কন্ঠস্বরে আসমান নিজের মাথা ঝুঁকিয়ে তার কাঁধে রক্ষিত প্রেয়সীর মাথায় ঠেকালো, দৃষ্টি অদূরে ফেলে বললো,
– আমার বর্তমান কি তোমার অপছন্দের জ্যোৎস্না?
– একটুও না।বরং আমি ভাগ্যবতী,যে তোমাকে এমন এক রূপে পেয়েছি।
আসমান ভ্রু তুলে কিঞ্চিৎ বিস্ময় নিয়ে তাকালো অর্ধাঙ্গিনীর উদ্দেশ্যে,রোযা নয়ন তুলে দৃষ্টি মেলালো তার সঙ্গে।একটি হাত তুলে ছুঁয়ে দিলো বিভীষিকাময় কলঙ্কিত কপোল।

– আফসোস হয়?
ক্ষীণ অরক্ষিত কণ্ঠের বিপরীতে মাথা দোলালো রোযা।উত্তর দিলো,
– না।হয়ত একটা সময় তুমি নিজের সর্বোচ্চ দশায় ছিলে চাঁদ,কিন্তু আমি তোমায় লাভ করেছি ঘোরতর অমাবস্যার মাঝে।তুমি তেমন বিশেষ কিছুই,আসমান।
অমানিশার নয়নজুড়ে সামান্যতম টলটলে অনুভব খেলে গেলো,রোযা সন্নিকটে ঝুঁকে তার কলঙ্কের দাগে নিজের অধর বুলিয়ে দিলো,উভয়ের হাত আবদ্ধ হলো আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে,শক্তভাবে।অতঃপর,
– আমরা ওই অভিশপ্ত ভাগ্যের ম্রিয়মাণ তারকারাজিকে আবারো নতুন করে সাজিয়েছি আমার প্রিয়তম।এই জীবন উপন্যাসের সমাপ্তি বিষাদের নয়,শুধুই আনন্দের।

একটি ঢোক গিললো আসমান,আবেশে নয়ন বুজে এলো তার।নিজের শরীরকে এলিয়ে দিলো তুলনামূলক দূর্বল অথচ উষ্ণতাপূর্ণ ভালোবাসার প্রশান্তিময় আলিঙ্গনের মাঝে।রোযা তাকে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরলো।যেন নিজের সবটুকু অনুভূতিতে মুড়িয়ে নিতে চাইলো।
– আমাদের ভাগ্যে অনেককিছু ঘটে গিয়েছে,আবার অনেককিছু ঘটার বাকি আছে।তবে আমরা একসঙ্গে সবকিছু মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবো,যেমন করে আমরা উভয়ে ভয়াল অতীতের মোকাবেলা করেছি। আমার জীবনে স্রষ্টাপ্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার তুমি আসমান।আর আমি আমার অন্তিম নিঃশ্বাস অবধি তোমায় ভালোবেসে যাবো।এটুকু মনে রেখো প্রিয়, তোমাকে ভালোবেসে জীবনে আমার কোনো আফসোস নেই।আসমান কোনো আফসোসের নাম নয়,তৃপ্তিময় পরিপূর্ণতার নাম।

কন্ঠ ধরে এলো আসমানের।তাদের মাঝে ভালোবাসার বাক্য বিনিময়ের ব্যাপারটি সময়ে সময়ে ঘটে থাকে।কিন্তু আজ রোযার প্রতিটি অনুভূতিমিশ্রিত বাক্য তার বুকে এক উথাল পাথাল ঝড় বইয়ে দিচ্ছে।কাঁধে মাথা গুঁজে মুখ ঘষে আসমান তার স্ত্রীর অস্তিত্বে মেশানো সুঘ্রাণ গ্রহণ করলো প্রাণভরে।জড়ানো কন্ঠে বিড়বিড় করলো,
– আমি বড়ই ভাগ্যবান।
– হুম….ভালোবাসো আমাকে?
উৎফুল্ল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো রোযা,তার হাত আসমানের পিঠে প্রশান্তি বুলিয়ে চলেছে।জবাব এলো দ্রুতই,

– জানোনা তুমি?
– জানি,কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছা হচ্ছে।
– বলেছি।
– খুব কম।হাতে গুণতে পারবো আমি।
– তুমি কি চাও আমিও আর দশজনের মতন উঠতে বসতে বউকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে বেড়াই?
– হাহা।অবশ্যই না।তাহলে আমার আসমানের মাঝে আর আসমান আসমান ভাব থাকবেনা।
– মানে?
– আমার আসমানের বুক ফা*টে তবু মুখ ফোটে না।
– আমি কথায় নয়,কাজে বিশ্বাসী।

রোযা পাল্টা কিছু বলতে যাচ্ছিল হেসে উঠে,কিন্তু তা সম্ভব হলোনা।অতর্কিতে নিজের কোমরে আসমানের দুবাহু জড়িয়ে যেতে অনুভব করলো সে।হ্যাঁচকা একটি টান,বোধগম্য হওয়ার পূর্বেই রোযা নিজেকে আবিষ্কার করলো মেঝেতে।কেশরাশি তার ছড়িয়ে পড়লো শীতল পরিচ্ছন্ন মেঝেজুড়ে,আসমানের হাত তার মাথার পিছনে স্থাপিত,বালিশের ন্যায় যেন শক্ত মেঝেতে ঠু*কে কোনোপ্রকার যন্ত্রণা না হয়।ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো রোযা।জানালার পর্দা উড়ে এসে ক্ষণিকের জন্য তার দৃষ্টি অবরুদ্ধ করে ফেললো, হাওয়ার দোলায় তা সরে যেতেই আসমানের অবয়ব দৃষ্টিগোচর হলো স্পষ্ট, ঝুঁকে এসেছে তার উপর।মসৃণ চুলের গোছা তার রোযার কপালে এসে ঠেকলো।একটি হাত যথারীতি রোযার মাথার নিচে,অপরটি কোমরে।এতটা সন্নিকট অনুভবে রমণীর হৃদস্পন্দন যেন সম্পূর্ণ থমকে পড়লো।

– আ…আসমান…
– হুশ…
তপ্ত নিশ্বাসের স্পর্শে রোযা শিউরে উঠলো।সমগ্র রোমকূপজুড়ে যেন শীতল অনুভূতির জোয়ার খেলে গেলো।আসমানের ওই কৃষ্ণগহ্বরে দৃষ্টি মিলতেই বাহ্যিক জগৎ পুরোপুরি বিলুপ্ত হলো।পুরো কক্ষজুড়ে শুধুমাত্র সে এবং তার প্রিয়তম,স্নিগ্ধ সমীরণ এবং কোমল বিকালের অস্তমিত রশ্মি।আসমান আরো একটু নিকটে ঝুঁকলো,তার পায়ের পাতায় রোযার পায়ের অচেতন স্পর্শ ঠেকলো। অধরজোড়া তাতে আবর্তিত হলো অমলিন এক হাসির রেখায়।
– আমি হয়তো আমার মাঝে পূর্বের সেই প্রফুল্লতা,খুশি, আনন্দ,অনুভূতির আস্ফালন ফিরিয়ে আনতে পারবোনা।অতীতের ঘা আমায় প্রকৃত অস্তিত্বকে অভ্যন্তর থেকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।

চেয়ে থাকলো রোযা,দূর্বার হৃদস্পন্দনে সম্মোহিত হয়ে শুনে গেলো হৃদয়রাজের মধুতুল্য মসৃণ কণ্ঠের বক্তব্য।
– তবে আমি কথা দিচ্ছি, নিজের পুনর্গঠন করবো। তা কোনোদিন অতীতের সমতুল্য হবেনা।আমি সেই শ্রেষ্ঠ সময়ে আর ফিরে যেতেও চাইনা,চাইনা স্মরণে আনতে।আমার বর্তমান তুমি রোযা,আর আমার বর্তমান অস্তিত্বও শুধুমাত্র তোমার জন্য উৎসর্গিত।আমার সবচেয়ে খারাপ সময়ে তুমি আমায় খুঁজে পেয়েছে, নিকষ কালো আঁধার থেকে টেনে এনেছ রঙিন এক দীপ্তিময় জগতে….
সামান্য থামলো আসমান,রোযার কোমরে থাকা হাতটি তার প্রবাহিত হয়ে পৌঁছলো উদরে।স্পর্শ করলো তাকে দারুণভাবে,কন্ঠ পূর্ণ হলো এক সিক্ত আবেগে,

– আমার অংশের জন্মদাত্রী তুমি,তোমার মাঝে বেড়ে ওঠা প্রাণ এই পৃথিবীতে আমার পরিচয়ে বড় হবে।ঠিক যেমন করে তোমার দৃষ্টিতে আমি অনন্য,তেমনভাবেই আমার নজরে তুমি এক এবং একমাত্র।আমরা আর পিছনে ফিরে তাকাবোনা।আমার সুখময় অতীত,আমার অন্তরের গোপন বাক্সে সুযত্নে রক্ষিত থাকবে আজীবন।তারাও আমারই অংশ,যেমনটা তুমি।পার্থক্য শুধু, তারা বসবাস করে আমার স্মৃতিতে,এবং তুমি অন্তরের মণিকোঠায়।
রোযার নয়ন ক্রমশই অশ্রুসজল হলো।অনুভূত হলো তার বাম চোখের কোণ বেয়ে ক্ষীণ এক অশ্রুধারা নেমে যাচ্ছে।আসমান দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণ করলো।তিরতির করে কাপছে রোযার অধর,প্রবল আবেগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায়, কাঁধে চেপে বসা আঙুলগুলো আসমানের শার্টের অংশ খামচে ধরে মুঠো পাকিয়ে রেখেছে।সামান্য শব্দ করে হাসলো আসমান,অতি ক্ষীণ হাসি,

– ভালোবাসি।
– ভা…উম..!
রোযা সইতে না পেরে তৎক্ষণাৎ বিপরীত ” ভালোবাসি ” উচ্চারণ করতে চাইলেও সম্ভব হলোনা।এক লহমায় আসমানের অধরজোড়া তার অধরের উপর নিজের অধিকার হাসিল করলো।তীব্র আবেশে রোযার নয়নপল্লব বুজে এলো।নিজেকে সমর্পণ করলো সে স্বামীর অনুভবে,সাগ্রহে।আজ আসমানের স্নেহের মাঝে অদ্ভুত এক মায়া,এক প্রজ্জ্বলিত প্রাণের সঞ্চার অনুভূত হচ্ছে।থেমে নেই তার চন্দ্র,প্রশ্বাস গ্রহণের সময়টুকু পর্যন্ত দিতে নারাজ।বারংবার স্পর্শ,কখনো অধরে,কখনো বা ওষ্ঠে।এবং প্রত্যেক স্পর্শের মাঝে ফিসফিসে কন্ঠস্বরের আবেদন একটিমাত্র শব্দ,
– ভালোবাসি….

মাথার পিছনে আসমানের হাতের আঙুলসমূহ শক্তভাবে আঁকড়ে ধরলো রোযাকে,ক্রমশই নিঃশ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে তার প্রেয়সী।অনুভব করে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিরতি দিলো আসমান শুধুমাত্র আবারো উচ্চারণ করতে,
– ভালোবাসি!
অতঃপর তার স্নেহ অভিযান জারি রইলো।নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছেনা।রোযার সম্মুখে গোটা পৃথিবীর বিলীন ঘটেছে,রয়েছে শুধুমাত্র সে এবং তার আসমান।

ঠিক কতক্ষন অতিক্রান্ত হয়েছে ধারণায় নেই।অবশেষে ক্ষণিকের ক্ষান্ত দিয়ে আসমান যখন রোযাকে মুক্ত করে মুখ তুলে তাকালো,তখন উভয়েই কিঞ্চিৎ হাঁপাচ্ছে।দৃষ্টি মেলে তাকাতেই আসমানের শুভ্রতায় ঘেরা চেহারা নজরে এলো।উজ্জ্বল ফ্যাকাশে ত্বকজুড়ে তার প্রগাঢ় লালিমা প্রস্ফুটিত হয়েছে,কপালে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট চুলের গোছা লেপ্টে রয়েছে চিকচিকে ঘামের বিন্দুতে।শার্টের কলার বোতাম দুটো উন্মুক্ত থাকায় শুভ্রতায় ঘেরা বুকের অংশ নজরে আসছে স্পষ্ট, উঠানামা করছে তা দারুনভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের দরুণ।অদ্ভুত সুন্দর লাগছে প্রিয়তমকে এমন রূপে।

রোযা না পারতে একটি হাত তুলে ছুঁয়ে দিলো আসমানের কপোল,দাগের স্থানে বুলিয়ে আনলো বৃদ্ধাঙ্গুল।অপরদিকে অমানিশার দৃষ্টি আবদ্ধ তার মুখপানে।সঠিকভাবে বলতে গেলে তার সদ্য স্পর্শকৃত অধরজুড়ে, জ্বলজ্বল করছে তা রশ্মির প্রতিফলন ঘটিয়ে।বড়ই বেহায়া দৃষ্টিপাত তাতে।কেমন যেনো অনুভূত হলো বুকের মাঝে।অজান্তেই অ্যাডামস অ্যাপেলে ঢেউ খেলিয়ে একটি শক্ত ঢোক গলাধঃকরণ করতে বাধ্য হলো আসমান।দৃশ্যটি একদৃষ্টে অবলোকন করলো রোযা।এক প্রবল টান অনুভূত হলো হৃদয়ে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাথা উত্তোলিত করে নিকটবর্তী হলো সে, আসমানের গ্রীবার ফুলে ওঠা অংশজুড়ে ছুঁয়ে দিলো নিজের অধর।শক্তভাবে চোখ বুজে ফেললো আসমান, ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত হয়ে এলো তার।রোযার স্নেহের স্পর্শ তার গ্রীবাজুড়ে প্রবাহিত হতে থাকলো।শিরশিরে অনুভবে কাপলো অমানিশা,মেঝেতে আঙুলসমূহ আঁকড়ে বসলো আবেগের তাড়নায়।

রোযা সরে আসতেই দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেললো আসমান।দাঁতের মাঝে নিজ অধর কামড়ে ধরলো,নয়ন মেলে এক অব্যক্ত গভীরতম দৃষ্টিতে তাকালো প্রেয়সীর দিকে।ঘাড়ের পাশ বেয়ে তার চিকচিকে দ্যুতি ছড়িয়ে গড়িয়ে নামলো একটি ঘামের ফোঁটা।ঝুঁকে রোযার কপালে কপাল ছুঁইয়ে আবেশিত কন্ঠে আসমান বিড়বিড় করলো,
– বিধ্বংসী রমণী।
– লোভনীয় পুরুষ।
কর্ণগোচর হতেই প্রজ্জ্বলিত হলো আসমানের নয়নজোড়া,খিলখিল করে হাসলো রোযা।উষ্ণতার আবহে ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হলো তার শরীর।অমানিশা তাতে তীর্যক হাসলো,মাথা কাত করে শুধালো,
– মেঝেতে ঠান্ডা লাগছে?বিছানা ফাঁকা আছে,যাওয়া যাক?
দ্বিগুণ শব্দ করে হাসলো রোযা।

– আমি বুঝিনা তোমার কন্ঠে এরকম কথা কেনো এতটা নিষ্পাপ শোনায়!
এবার হাসলো আসমানও। অর্ধাঙ্গিনীর নাকে নাক ঘষে জানালো,
– কারণ আমি তাই!
– আ…আস…আসমান ভাই!
অতর্কিতে নিজের কল্পনার দুনিয়া থেকে বাস্তবে পদার্পণ করতে বাধ্য হলো আসমান।গাড়ির জানালা থেকে মুখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই নিহাদকে আবিষ্কার করলো।নিজের রিভ*লভারে ম্যাগাজিন ভরে সচেতন দৃষ্টিতে তাকালো শিষ্য গুরুর উদ্দেশ্যে।
– আমরা এসে পড়েছি।

এটুকুই।গাড়ির দরজা খুলে গেলো।আসমান,নিহাদ এবং তাদের হিটটিমের অবশিষ্ট সদস্যগণ বাইরে বেরিয়ে এলো।নিজের পরিধানের জ্যাকেটের কলার তুলে আসমানের নিগূঢ় কৃষ্ণগহ্বর তাকালো সামনে দন্ডায়মান সুউচ্চ বিল্ডিংটির দিকে।কে বি গ্রুপের ল্যাবরেটরি,যা তাদের পতনের পর সরকারিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।নিলামে সেটি ক্রয় করেছিল কোনো এক বিদেশী ব্যক্তিত্ব। তা যে রাফা কায়সার স্বয়ং কিংবা তার গ্যাংস্টার স্বামী ছিলো তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বিল্ডিংটির দিকে চেয়ে আরো একবার ভেসে উঠলো অপ*হৃত হওয়ার মাত্র কিছুদিন আগেও রোযার সঙ্গে অতিবাহিত করা তার মুহূর্তটি।মুষ্টিবদ্ধ হলো অমানিশার উভয় হাত,তীব্র প্রতিজ্ঞায়।এবার কোনো ছাড় নয়,নয় কোনো পরাজয়।তার পাশে এসে দাঁড়ালো নিহাদ এবং অন্যান্যরা।অপেক্ষারত হিং*স্র শিকারী একেকজন।শুধুমাত্র আদেশের অপেক্ষা।অবশেষে ধ্বনিত হলো সেই আদেশনামা।

– লেটস্ গো।
প্রত্যেকের ভারী পদক্ষেপে কোনো শব্দ না হলেও অদ্ভুত এক প্রভাব ছড়িয়ে পড়ল গোটা স্থানের ভূমিজুড়ে।এগিয়ে গেলো সকলে।রূদ্রচিত্ত অমানিশা এবং তার মুক্ত বিহঙ্গ সহচর,আবদ্ধ তারা এক অমোঘ প্রতীক্ষায়।
এ তাদের অন্তিম লড়াই।
দ্যা এন্ড গেইম।

শক্ত টাইলসে আবৃত মেঝেতে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে চারুলতা।তার উভয় হাত পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আবদ্ধ রাখা হয়েছে।হাঁটু বুকের নিকট টেনে এমন এক ভঙ্গিতে সে অবচেতন হয়ে আছে যেন তার আদতে কোনো জ্ঞান নেই।কপালের নিকট ক্ষতে র*ক্ত জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে আছে।আনমনে ঢোক গিলে খুবই সন্তপর্নে সামান্য দৃষ্টি মেললো চারু,আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করলো। নাহ্,কোনো গার্ডকে নজরে আসছেনা।তার কোনো জ্ঞান নেই ভেবে তারা কক্ষটির বাইরের দরজার সামনে আমোদ স্ফূর্তি করছে।এই সুযোগ!গত আধঘণ্টা যাবৎ অতি প্রচেষ্টায় একটু একটু করে হ্যান্ডকাফ থেকে হাত বের করতে সক্ষম হয়েছে সে।আকৃতিতে কব্জির তুলনায় বড় হওয়ায় সুবিধা হয়েছে,নতুবা এই বিদ্যা কাজে লাগানো আদতেই দুষ্কর।রাফা কায়সারের গার্ডদল রমণীদের হেলাফেলা করেছে।এটাই তাদের পতনের মূল কারণ!

তীর্যক হাসি হেসে চারু অতি নিঃশব্দে উঠে বসলো।চারিদিকে তাকালো।বাইরে থেকে গার্ডদের কথোপকথনের ম্রিয়মাণ শব্দ ভেসে আসছে।সে দুপায়ে উঠে দাঁড়ালো।এতক্ষণ যাবৎ শুয়ে থাকায় সামান্য টলে উঠলো শরীর।অতঃপর সক্রিয় হলো সর্বাঙ্গ।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারিপাশে পর্যবেক্ষণ চালালো।তেমন কিছুই নেই।অতএব, প্যান্ট গোটাতে আরম্ভ করলো।একেবারে উরু পর্যন্ত তুলে বেল্ট দিয়ে আটকানো ছু*রিখানি বের করো নিলো। ক্যাপ খুলে একপাশে ফেলে সেটি বুকের নিকট তুলে ধরে সতর্ক বাঘিনীর ন্যায় অগ্রসর হলো শিকারী।বিন্দুমাত্র ভয় হচ্ছেনা তার।বরং উৎফুল্ল অনুভূত হচ্ছে।প্রচণ্ড উত্তেজনায় স্পন্দিত হচ্ছে হৃদযন্ত্র। ক্যারাটে ব্ল্যাকবেল্ট হোল্ডার সে এমনি এমনি হয়নি,এমন শত্রু মোকাবেলায় ভীতির তুলনায় দুঃসাহস অধিক কাজ করে তার।দ্রুত বেরিয়ে রোযাকে খুঁজে বের করতে হবে।এমন পণের সহিত সে চাপানো দরজা দিয়ে সামান্য উঁকি দিলো বাইরের করিডোরে।

ভাগ্য সহায় রয়েছে। চারজন গার্ডের প্রত্যেকে পিছন ফিরে রয়েছে।একজনের হাতে মোবাইল,তাকে ঘিরে পর্যবেক্ষণ সকলের।বিভিন্ন শব্দ ভেসে আসছে সেখান থেকে।গেইম খেলছে।উপলব্ধি করে চারুর হাসি বিস্তৃত হলো।ভালো,খুব ভালো!মোক্ষম সুযোগ তার। জুতোজোড়া আগেই খুলে নিয়েছে যেন কোনোপ্রকার শব্দ না হয়।এবার গুটি গুটি পায়ে এগোলো চারু, দেয়ালের সঙ্গে মিশে একেবারে ছায়া হয়ে। ছু*রির প্রান্তে চেপে বসলো তার আঙ্গুল।নয়ন তীক্ষ্ণ হলো মনোযোগে, সুদর্শনার চেহারায় ফুটলো হিং*স্রতার কুঞ্চন।

– হাহা!বলেছিলাম রিভাইভ নে।
– এখনি এই অবস্থা তুই মেইন বসের সামনে তো মিউমিউ করবি।
– চুপ!মনোযোগ দিতে দে!
তবে সে মনোযোগ আর দেয়া সম্ভব হলো না।অতর্কিতে নিঃশব্দ শিকারী বিড়ালের ন্যায় একজনের ঘাড় ব*রাবর গেঁ*থে গে*লো ছু*রির ধা*রালো প্রান্ত।ককিয়ে উঠতে গিয়েও সম্ভব হলোনা,চারুর অপর হাত মুখ চেপে ধরেছে শক্তভাবে।ফি*নকি দিয়ে ছুটলো র*ক্ত, হাঁটুতে আ*ঘা*ত হেনে নুইয়ে ফেলে হোলস্টার থেকে রিভ*লভার হাতিয়ে নিলো রমণী।বাকি তিনজন সঙ্গীর সঙ্গে এমন কার্যক্রমে এতটাই হতবিহ্বল যে প্রতিক্রিয়া করার মনোবলটুকুও পেলনা।মেঝেতে র*ক্তা*ক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়তেই যেন ঘোর কাটলো তাদের।

– বিচ!
চেঁচিয়ে উঠে ছুটে গেলো একজন,আঁকড়ে ধরলো চারুলতার গ্রীবাদেশ।তবে পিছপা হওয়ার লক্ষণ নেই তার মাঝে,মাথা কাত করে ভগ্ন কন্ঠে উচ্চারণ করলো,
– অ্যান্ড ইউ আর আ স্কাউন্ড্রেল!

ছু*রি সম্বলিত হাতটি তার গার্ডের ঘাড়ে বসতে চাইলেও সম্ভব হলোনা,তড়িৎ প্রতিক্রিয়ায় তা গাঁ*থলো কাঁধ বরাবর। আর্তনাদধ্বনি এক।একেবারে হা*ড়ের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় চারু সেটি পুনরায় টেনে বের করতে সক্ষম হলোনা।এর আগেই তৃতীয়জন পিছন থেকে তার দীঘল চুলরাশি টেনে ধরলো,হ্যাঁচকা টানে আ*ছড়ে ফেললো মেঝেতে।বরাবর মাথায় আ*ঘা*ত পেলো চারুলতা, রিভ*লভারটি আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইলেও সম্ভব হলোনা।অপরজন পা দিয়ে সেটি লাথি দিয়ে সরিয়ে তার হাতখানি চেপে ধরলো।য*ন্ত্রণায় শরীর কুঁকড়ে এলেও সামান্যতম বেদনাধ্বনিও নির্গত করলোনা চারু।পুনরায় লাফিয়ে উঠতে চাইলো।মস্তিষ্কে বইছে চিন্তার ঝড়।হাবিব কি এখনো হিটটিম নিয়ে পৌঁছায়নি?আসমান,নিহাদ খবর পায়নি?দেরী কেনো হচ্ছে?নাকি আদতে সে তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে?রোযার চিন্তায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সে।পুরুষের ভয়ে রুমের কোণায় কুঁকড়ে থাকা রমণী সে নয়,তেজস্বী তার চলন।এতটা উৎকণ্ঠা সহ্য করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল তার পক্ষে।তবে এমন বেকায়দায় পড়তে হবে ভাবেনি।

হাল ছাড়ার পাত্রী চারু নয়।কোমর তুলে নির্দিষ্ট কোণে হেলিয়ে পা দুটো মেঝেতে ঠেলে নিজেকে উত্তোলন করতে চাইলো।ঠিক তখনি তার মুখ বরাবর আ*ছড়ে পড়লো ভারী কেডস পরিধানকৃত গার্ডের লা*থি!এতটা জোর তাতে,উপরন্তু মুখমন্ডলের মতন এক স্পর্শকাতর অঙ্গ….চারুর দৃষ্টিপ্রদীপ নিভে গেলো দপ করে।শুধু অনুভব করলো মেঝেতে গড়িয়ে গিয়ে সে ধাক্কা খেয়েছে দেয়ালের সঙ্গে।পিঠ টনটন করে উঠলো। কেশরাশি লেপ্টে গেলো শরীরজুড়ে।ব্যথার অনুভূতি সর্বাঙ্গে।মুখে র*ক্তে*র ধাতব এক নোনতা স্বাদ পাওয়া গেলো।তৎক্ষণাৎ কেশে উঠে কয়েক দলা র*ক্ত মেঝেতে থু করে ফেললো চারু।হাসফাঁস করছে তার বুক।দৃষ্টি নেই বললেই চলে।মাথাটা ঘুরছে প্রচন্ড বেগে।ঝাপসা হয়ে ক্রমেই ফিরে আসতে থাকলো নয়নের আলো তার।মস্তিষ্ক অনুধাবন করলো,এই তার দূর্বলতম সময়।শত্রু এখনি আ*ক্র*মণ করবে তাকে। হলোও তাই।বায়ুর ঘূর্ণন অনুভব করলো,নিজের ঘাড় বরাবর ধেয়ে আসছে তা।ঝাপসা নয়নে তার অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হলো।

তৎক্ষণাৎ ঘুরে গিয়ে গার্ডের হাত পাকড়াও করলো, নিজের ধা*রা*লো দাঁত বসিয়ে দিলো ত্বকে।এই বুঝি মাং*স খু*বলে নেবে!হাহাকার করে উঠলো গার্ড,ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলে উভয় হাতে তার পা পাকড়াও করে সজোর টানে তাকে আ*ছ*ড়ে ফেললো মেঝেতে।সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাফিয়ে উঠলো চারু।ছুটলো অদূরে পরে থাকা রিভ*লভার লক্ষ্য করে।কিন্তু তাকে কোমর জাপটে ধরে টেনে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়লো একজন। চড়ে বসলো শরীরে।এই গার্ডদের মাঝে সবথেকে শক্তিশালী, যে কিছুক্ষণ পূর্বে তাকে লা*থি হাঁকি*য়েছে।চারুর নিঃশ্বাস রুদ্ধ করে ফেললো সে গ্রীবা চে*পে,খা*মচি বসালো রমণী আত্মরক্ষায়,লাভ হলো না।অক্সিজেনের অভাবে ক্রমশ ছটফট করতে থাকলো শরীর তার,এই গার্ডের ভারে নড়াচড়াও দায়।ঝুঁকে এলো অশুভ পুরুষটি,হেসে অশ্রাব্য শব্দ উচ্চারণ করলো,

– বে****!
রিভ*লভার তার সহসাই ঠেকলো চারুর কপালে।রমণীর বিদ্ধ*স্ত অবয়ব,র*ক্তা*ক্ত মুখমন্ডল পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে তাকে।শুধুমাত্র ট্রিগার টানার অপেক্ষা।অন্তিম লড়াই না করে হার মেনে নেয়ার পাত্রী নয় চারু।সেও হাঁটু উত্তোলন করলো,উদ্দেশ্য গার্ডের সবথেকে অরক্ষিত ও দূর্বল অংশ।তবে প্রশ্বাস নিতে না পারার দরুণ শক্তির অভাবে ভুগছে সে।সম্ভব হবে কি?তাকে পারতেই হবে!গার্ডের আঙুল যে ট্রি*গা*রে…
টাং!

মানব করো*টির সঙ্গে ধাতুর সং*ঘর্ষের তীব্র এক শব্দ। গার্ডকে সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়তে দেখলো চারু, পরক্ষণেই শক্তিশালী বান্দা তার পাশেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো,আঁকড়ে ধরলো নিজের মাথা।কিছুটা দ্বিধান্বিত চারুলতা হতবিহ্বল হয়ে তাকালো।দৃশ্যটি তার নয়নে খচিত হলো আজীবনের এক স্মৃতি হয়ে।
দন্ডায়মান তার তরুণ প্রেমিক,অব্যক্ত এক ভালোবাসা, নিহাদ!সুদর্শন চেহারাজুড়ে ছেলেটির ধূলোবালির ছাপ।তবে তাতে সৌন্দর্য্য বিন্দুমাত্র কমেনি তার।বরং প্রস্ফুটিত হয়েছে যেন দ্বিগুণভাবে।ঘন ভ্রু জুড়ে তীব্র এক কুঞ্চন,বিস্তৃত অধরে ক্রোধের আবর্তন।হাতে ধরা লম্বাটে একটি ধাতব পাইপ,যার প্রান্তে এখনো র*ক্তে*র দাগ স্পষ্ট!চেয়ে থাকলো নিহাদ কয়েক মুহূর্ত। চারুলতার সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হলো তার।আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো সে শখের রমণীকে।এলোমেলো চুলরাশি,ঘর্মাক্ত এবং র*ক্তা*ক্ত শরীর, গ্রীবাজুড়ে লালচে চিহ্ন,দূর্বল প্রেয়সী তার।ওই প্রফুল্ল নয়নে ক্রমেই অগ্নুৎপাত হতে খেয়াল করলো চারু।

হাত বাড়িয়ে এক টানে চারুলতাকে দাঁড় করালো নিহাদ।সামান্য টলে পড়ে যেতে নিতেই বুকের মাঝে টেনে নিলো রমণীকে।এক হাতে ধাতব পাইপটি ধরে রেখে অপর হাতে চারুর অধরের ক্ষতে আঙুল বোলালো নিহাদ। দৃষ্টিতে তার শতগুণ প্রজ্জ্বলন ঘটলো।ঘাড়ের কাছে শিরা উপশিরাসমূহ স্পষ্ট জাগ্রত হলো টকটকে হয়ে। বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে চারুর নিচের ঠোঁট টেনে মুখ খুলতে বাধ্য করলো সে।অভ্যন্তরের র*ক্তগঙ্গা যেন অতি কষ্টে অন্তরে আবদ্ধ করে রাখা উন্মত্ত আ*ত্মাকে এক লহমায় মুক্ত করে দিলো।

– এটা কে করেছে?
অস্বাভাবিক শোনালো নিহাদের কন্ঠস্বর। চারুলতা হতবাক।এই ছেলেটি এভাবে কথা বলতে জানে,তার কন্ঠস্বর এতটা ভারিক্কি এবং শূণ্য হতে পারে এর পূর্বে কোনোদিন কল্পনাও করেনি সে।সামান্য শিহরণ খেলে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে চারুর,মাথা কাত করে আনমনে তাকালো মেঝেতে লুটিয়ে কাতরাতে থাকা গার্ডের দিকে।তার দৃষ্টি লক্ষ্য করে তাকালো নিহাদও।স্থির হলো নিশানা।ঝুঁকে চারুলতার র*ক্তা*ক্ত কপোলে অধর ছুঁয়ে তাকে একপাশে সরালো নিহাদ।অতঃপর দুহাতে বাগড়ে ধরলো ধাতব পাইপটি।রিভ*লভার থাকা সত্ত্বেও ব্যবহারের কোনো লক্ষণ দেখালো না।
স্বয়ং মৃ*ত্যু*কে এগিয়ে আসতে দেখলো গার্ড।

– না!
চিৎকার তার প্রতিধ্বনিত হওয়ার সময়টুকুও পেলনা।নিহাদের অতি আ*গ্রাসী আ*ঘা*ত আছ*ড়ে পড়তে থাকলো তার মুখমন্ডল বরাবর, একের পর এক!কোনো বিরতি নেই,নেই থামার লক্ষণ।
– ইউ ডেয়ার টু টাচ মাই ফ্লাওয়ার!
কুঁকড়ে গেলো সে,পাইপটি দিয়ে তার মুখ মেঝের সঙ্গে চেপে ধরে নিহাদ দাঁতে দাঁত ঘষে বিড়বিড় করলো,
– আমার পুষ্প আমার অধিকার।ওই পুষ্পের গায়ে সামান্যতম আঁচড়ের পরিণাম…মৃ*ত্যুদণ্ড!
অব্যাহত রইলো কার্যক্রম।গার্ডের মা*থা কিংবা মু*খ বলে আর কিছুই বাকি রইলোনা,সবটাই মি*শে গিয়েছে মেঝের সঙ্গে,র*ক্ত এবং ম*গ*জে!তবুও নিস্তার নেই, আ*ঘা*ত চলমান।নিহাদের এমন প্রলয়ংকরী নিষ্ঠুর অবতারের পানে একদৃষ্টে চেয়ে থাকলো চারুলতা, একবারের জন্যও দৃশ্যটির বিভীষিকা তার নয়ন বোজাতে সক্ষম হলোনা।

কক্ষের চেয়ারে বসে সিগারেটে অধরে চেপে রাফা তাকিয়ে আছে স্বচ্ছ দেয়ালের বাহিরে।একুশ তলা ভবনের সতেরো তলার এই কক্ষটি তার কোনো এক অজানা কারণে ভীষণ প্রিয়।অজানা অবশ্য নয়,এর মধ্য থেকে বাইরের দৃশ্য বড়ই মনোরম দেখায়।নিঃশব্দ রাফা।চারিদিকে কোনোপ্রকার আওয়াজ নেই।শুধু এক গমগমে ভারী অনুভব।কিছুতেই প্রশান্তি হচ্ছেনা অন্তরে।বারংবার ওই রমণীর দৃপ্ত কন্ঠস্বর বাজছে কর্ণগুহরে।
” আপনার পতনের জন্য আপনিই দায়ী রাফা!”
সহসাই হাসির ধারায় আবর্তিত হলো কায়সার কন্যার টকটকে ওষ্ঠজোড়া। অবজ্ঞার হাসি হাসলো সে।সিগারেটের অংশটুকু মেঝেতে ছুড়ে ফেলে ক্রোধান্বিত কন্ঠে বিড়বিড় করলো,

– বুলশি*ট!
– চাঁদের অপেক্ষায় আছেন বুঝি?
কন্ঠস্বরটি রাফার সর্বাঙ্গে শিহরণ খেলিয়ে দিলো।এক ঝটকায় পিছন ফিরে তাকালো সে।কক্ষের প্রবেশপথে দন্ডায়মান রমণী মুহূর্তের জন্য তাকে সম্পূর্ণ হতবিহ্বল করে তুললো।আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো সে অমানিশার মহারাণীকে।র*ক্তস্নাত শুভ্র অবয়ব,যেন পবিত্রতার মাঝে পঙ্কিলতার ছোঁয়া।কোমরে জড়ানো হোলস্টার,এক হাতে বেসবল ব্যাট যেটি কাঁধের উপরে ঝুলিয়ে রেখেছে।ছোট ছোট ক্ষত চেহারায়,প্রজ্জ্বলিত নয়নমাঝে স্বয়ং প্রলয়।দৃপ্ত কঠোর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে,উদ্দেশ্য রাফা কায়সার।

এক পা অগ্রসর হলো রোযা,তার পরিধানের হিলের মসৃণ আওয়াজ প্রতিধ্বনি তুললো কক্ষের ধাতব দেয়ালজুড়ে।বিস্মিত রাফা পর্যবেক্ষণ করলো তার উভয় পদজোড়া।কালো বর্ণের জুতোগুলো ঠেকছে অ*স্ত্রে*র ন্যায় ধারালো।এক অনন্যসাধারণ প্রভাব যুক্ত করেছে তা রোযার অবয়বমাঝে।না চাইতেও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে বাধ্য হলো রাফা।তার এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ায় মাথা হেলিয়ে তীর্যক হাসলো রোযা।
– আপনি বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন, চাঁদ কখনো মাটিতে নেমে আসেনা।
প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্ভীক দুঃসাহসী আবেদন রাফাকে মুগ্ধ করলো, তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়।বিহ্বল ভাব কাটিয়ে দুহাত একত্রিত করে কায়সারকন্যা করতালি দিয়ে জানালো,

– ওয়েল ডান কিটেন।তুমি স্বয়ং রাফা কায়সারের প্রত্যাশার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছ। হাউ ইমপ্রেসিভ!
বরাবর রাফার সামনে এসে থামলো রোযা,উভয় রমণীর মাঝে শুধুমাত্র এক হাত সমান দূরত্বের দেয়াল।এক পাশে অশুভ কালোর অস্তিত্ব,অপর পাশে হিমশুভ্রতার দুর্বোধ্য অনুভূতি।পবিত্রতা বনাম পাপ?উহু,এ অনুভূতি বনাম আসক্তি।
– সীমা তো ছাড়াতেই হতো কায়সার।আপনার অশুভতার অন্ধকার রাজ্যে এই দীপ্তির অনুপ্রবেশ আপনাকে ধ্বং*স করতে চলেছে।
রোযার চেহারায় ক্রোধের ছায়া রাফাকে উত্তেজিত করে তুললো,হেসে উঠে সে শুধালো,

– ধ্বং*স?তুমি করবে?আমাকে?দিবাস্বপ্ন দেখছো বোধ হয়?
রোযা কিছুই বললোনা।শুধু পাল্টা হাসলো।পরক্ষণেই ঘটলো ঘটনাটি।হাতের বেসবল ব্যাট দুহাতে চেপে সজোর আ*ঘা*ত হা*নলো রাফার মুখমন্ডল বরাবর।ছিটকে গেলো রাফা,দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে অবাধ্য শরীর তার লুণ্ঠিত হলো মেঝেতে।বেপরোয়া রোযা থামবার পাত্রী নয়,দ্বিতীয় আ*ঘা*ত করলো রাফার উন্মুক্ত মসৃণ উরু বরাবর।হিসিয়ে উঠল আঁধাররানী, এলোমেলো হয়ে আসা চুলে র*ক্ত ছি*টকে ওঠা চেহারায় তাকালো দীপ্তির দিকে।যেন তার নয়ন থেকেই অদৃশ্যমান শক্তি নির্গত হয়ে গ্রাস করে নিতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বীর সমস্ত অস্তিত্বকে।
– যতবার আসমানের অবয়বে ওই কলঙ্কের ছোঁয়া দেখেছি,ততবার আমার অন্তর উন্মত্ত ক্রোধশিখায় দ*গ্ধ হয়েছে।যে হাত কখনো কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করতেও বারংবার কেঁপে উঠেছে,সেই হাতই জীবন কে*ড়ে নেয়ার নেশায় মত্ত হয়েছে।

বলে গেলো রোযা,রাফা তার পায়ের সামনে কুঁকড়ে রয়েছে।তবুও এক অদ্ভুত অশুভ প্রভাব ঘিরে আছে তাকে। ঝুঁকলো রোযা, রাফার চুলের গোছা নিজের হাতে মুঠি পাঁকিয়ে এক জোরালো টানে রীতিমত হিঁচড়ে নিলো মেঝেজুড়ে কয়েক ইঞ্চি।
– আই উইল ফা*কিং কি*ল ইউ!
হুংকার ছুড়লো রাফা,তবে বেদনার দরুণ তার কন্ঠ ভগ্ন শোনালো।বিপরীতে রোযার অট্টহাসি প্রতিধ্বনি তুললো কক্ষজুড়ে।
– ঠিক।ঠিক এমনটাই অনুভূত হয়েছিল আমার।নিজের হাতে কায়সার রাজত্বের কফিনে অন্তিম পেরেক ঠো*কার স্বপ্ন আমার দীর্ঘদিনের।

– ইউ বিচ্!
ঝুঁকলো রোযা,তার হাতের মাঝে তখনো রাফার চুলের গোছা শক্তভাবে আবদ্ধ। সেটি টেনে রমণীর মাথা উঁচু করলো,ঘাড়ে টান খেয়ে না চাইতেও হিসিয়ে উঠতে বাধ্য হলো রাফা।রোযা য*ন্ত্রণাটুকু অনুভব করলো প্রাণভরে।
– মিসেস সেল্ফ পিটিফুল উইম্যান,স্মৃতির পাতা হাতড়ে দেখুন,আজ থেকে বছর কয়েক আগে আপনি ঐ বদ্ধ ঘরে কেমন নরক রচেছিলেন।শুভ্রতাকে গ্রাস করার বাসনা আপনাকে অন্ধ করে দিয়েছিল।আর আপনি নিজ হাতে নিজের আসক্তিকে কলঙ্কিত করেছেন।

– ও আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে নির্বাচন করেছিলো, তাই আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।প্রয়োজনে আবার করবো।ওর মুখে আমার নাম ছাড়া কারো নাম শোভা পায়না। হি ইয মাই টয়,অনলি মাইন!
বেসবল ব্যাট ফেলে রাফার গ্রীবা চে*পে ধরলো রোযা দুহাতে,তার ইচ্ছা হলো ওই মুহূর্তেই সবকিছুর ইতি টানতে।ছটফট করতে থাকলো রমণী তার বাঁধনমাঝে, বড্ড উপভোগ্য হলো তা।রোযার নয়ন টলটলে হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অনুভূতিতে।

– কুকুর,খেলনা,দৈহিক চাহিদা এসবের সঙ্গে তুলনা না করে যদি একটাবার আসমানকে ভাইয়া,বন্ধু কিংবা অনুভূতি হিসাবেও ভাবতেন,তবে আজ ভবিষ্যত অন্যরকম হতে পারতো রাফা!আমি একদম ঠিক বলেছি।আপনার ভাগ্যের অধঃপতনের পিছনে আপনিই দায়ী,একমাত্র আপনি!
– শাট… আপ!
চিৎকার করে উঠে অতর্কিতে নিজের হাঁটু তুলে রোযার উদর বরাবর আ*ঘা*ত করতে গেলো রাফা।হতচকিত হয়ে রোযা সহসাই পিছিয়ে গেলো, রাফার হাঁটু আঁকড়ে ধরলো নিজের উদরের থেকে কয়েক ইঞ্চিমাত্র দূরত্বে।পরক্ষণেই দৃষ্টি মেলালো সে অশুভের সঙ্গে,

– নট মাই বেইবি!
সহসাই রোযার হাতে উঠে এলো ছু*রি,আসমান এবং নিহাদের শেখানো বিদ্যা কাজে লাগিয়ে একের পর এক ধারালো ঘূর্ণিপাক তুললো সে।নমনীয় শরীর তার বেঁকে এলো,যেন হাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে তা। রাফা পরাজিত হওয়ার পাত্রী নয়।এড়িয়ে যেতে থাকলো প্রত্যেকটি আ*ক্রমণ,রোযার কব্জি ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ক্ষীপ্রতার সঙ্গে পেরে ওঠা দুষ্কর ঠেকলো।তার বাহু এবং উরুতে গাঢ় র*ক্তা*ক্ত দাগ কে*টে গেলো রোযার ছু*রি।তেঁতে উঠে রাফা ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলো শ*ত্রুর উপর,কিন্তু তার ক্রিয়াকে ব্যবহার করে অতর্কিতে মাঝে চেয়ারটি ছুঁড়ে দিলো রোযা।ধপাস করে শক্ত মেঝেতে আছড়ে পড়লো রাফা,মাথা ঠু*কে গেলো তার,গ*লগল করে বেরিয়ে এলো র*ক্ত।মুহূর্তের জন্য দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে এলো রমণীর,সেই সুযোগ গ্রহণ করলো রোযা।কক্ষের দেয়ালের সামনের পিলারের সঙ্গে বাঁধলো সে রাফার উভয় হাত, পা দুটো মেঝেতে সংযুক্ত স্থায়ী টেবিলের পায়া বরাবর আবদ্ধ করলো।নাইলনের দড়ির বাঁধন তা,নিজেকে মুক্ত করা বড্ড মুশকিল।সম্বিৎ ফিরে পেয়ে নিজেকে আবদ্ধ দশায় আবিষ্কার করে স্তব্ধ হয়ে থাকলো রাফা।চিন্তার ঝড় বইতে আরম্ভ করলো তার মস্তিষ্কজুড়ে।তবে কি আদতেই পতন ঘটতে চলেছে তার?

ক্লিক ক্ল্যাক!ক্লিক ক্ল্যাক!
হিলজোড়ার পদধ্বনির ক্রমান্বয় প্রতিধ্বনি রাফার কর্ণগুহরে ঠেকলো শিহরণ জাগানিয়া অশরীরীর ন্যায়।এগিয়ে আসছে প্রেতাত্মা এক।অফহোয়াইট বর্ণের গাউনে প্রস্ফুটিত স্বর্গীয় অপ্সরীর রূপের অন্তরালে এক বি*ষাক্ত ভয়াল পিশাচীনি যেন।নিজের দানব সঙ্গীর যোগ্য সহধর্মিনী, পরাশক্তিরাজের দানবী মহারাণী।
এগিয়ে আসছে রোযা।
পরিধানে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার হিল।

স্মৃতিরা কড়াঘাত করলো ভীষণভাবে।এ যেন হুবহু সেই অতীতের প্রতিচ্ছবি।না চাইতেও স্মৃতির নিষ্ঠুর ছায়া রাফার সমস্ত অবয়বকে মোহিত করে তুললো।স্মরণে এলো সেই অলৌকিক সুখচ্ছবি।হিমালয়তুল্য শুভ্রতার মাঝে পরম যত্নে কতটা অপরূপ র*ক্তচিত্র খচিত করেছিলো সে।আসমানের শরীর থেকে থেকে কেঁপে উঠছিল,তবুও একটি বেদনাদায়ক শব্দও সে নির্গত করেনি।প্রশস্ত বু*কজুড়ে রাফা ধারালো ব্লে*ডের প্রান্ত ঘষে ঘষে চেঁ*ছে তুলেছিল ত্বক, ছু*রির ধা*র ছুঁয়ে একেবারে কাঁধ থেকে উদর পর্যন্ত টেনে এনেছিল,যেন নিজের জন্মদিনের কেক কা*টছিল মহা উৎসাহে, এমনি ঝিলিক শোভা পাচ্ছিল তার চেহারায়।ফিনকি দিয়ে উঠেছিল র*ক্ত,বড় প্রশান্তি হয়েছিল ওই র*ক্তে কব্জি অবধি ডুবিয়ে।যখন আসমানের প্রাণপাখি ছটফট করছিলো অবাধ্য হয়ে,তখন সে তৃপ্তিভরে পর্যবেক্ষণ করেছিল।বড্ড ইচ্ছা হয়েছিল,বস্ত্রের বাঁধা সরিয়ে নিজের খেলনাখানির উন্মুক্ত সুগঠিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে,নিজেকে বিলিয়ে দেয় সুখসাগরে।কিন্তু সম্ভব হয়নি তা।কি কারণে?জানা নেই তার।

শুধু এটুকু জানে,আসমানের ক্ষ*ত বি*ক্ষ*ত চেহারার পানে চেয়ে পৈশাচিক আনন্দ হয়েছিল।তার শুভ্রতা কলঙ্কে আচ্ছাদিত হয়েছে,সে ব্যতিত আর কেউ কোনোদিনও শুভ্রতার প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করবেনা।শুভ্রতা নিশ্চয়ই রাফার পদতলে নতজানু হবে,নিজেকে সমর্পণ করে ভিক্ষা চাইবে, ” গ্রহণ করো আমায়…”!হাসির উদ্রেক ঘটেছিল সমস্ত শরীরে তার।হাত বুলিয়ে এনেছিল ছি*ন্নভিন্ন কপোলজুড়ে,কোনো এক সময়ে যা ছিল রমণীমাত্র দৃষ্টিপাতে আগ্রহী হওয়ার কারণ।যখন সে হি*লের গোড়ায় হিমশুভ্রতার মুখজুড়ে কলঙ্ক রচতে মগ্ন ছিল,তখন আসমানের কোনোপ্রকার নড়চড় করার ক্ষমতা অবশিষ্ট ছিলনা।র*ক্ত উগ*ড়ে আসছিল,ফেলে দেয়ার কোনো উপায়ও ছিলনা।আপন র*ক্ত#ধারা অতি অসহায় হয়ে গলাধঃকরণ করতে বাধ্য হয়েছিল আসমান!আর সেই দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে তৃপ্তিতে পূর্ণ হয়েছিল রাফার অন্তর।আপন হাতের প্রান্তজুড়ে জিভ বুলিয়ে এনেছিল সে,শুভ্রতার র*ক্ত,বড়ই মধুময় স্বাদ তার!
বর্তমানে সেই দৃশ্য স্মরণে এনে অজান্তেই শিউরে উঠলো কায়সার কন্যা।সেইসব বিভীষিকার কি পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে?কেমন অনুভব করবে সে আপন র*ক্তে*র স্বাদ গ্রহণে?

ভাগ্য যেন অট্টহাসি হেসে জানালো,” আপন কর্মফল ভোগ কর কায়সার!”
রাফা একচুল নড়তে সক্ষম হলোনা।তার শরীর ঝটকা দিয়ে উঠলো খানিক,তবুও নিজেকে মুক্ত করা দায়। শিকারীনি মেঝেতে রাখা তার মাথার এক পাশে এসে থমকালো।কোমরে দুহাত রেখে ঝুঁকলো,হিল পরিহিত বাম পা তার উত্তোলিত হলো,একেবারে রাফার সযত্নে রক্ষিত টকটকে মসৃণ ঠোঁটের নিকট।মাথা কাত করে বিস্তর হাসলো অমানিশার দীপ্তি, রাফার তীব্র দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হাসতে হাসতে শুধালো,
– আঁধারের মহারাণীকে তবে কলঙ্কিত করা যাক?

না চাইতেও কণ্ঠতালু বেয়ে এক শক্ত ঢোক নেমে গেলো রাফার।স্থবির হয়ে চেয়ে থাকলো রোযার নিগূঢ় দৃষ্টিমাঝে,যে অগ্নিখচিত নয়নে স্বয়ং আসমানের প্রতিফলন। হিমশুভ্রতা প্রতিশোধ নেয়নি,কিন্তু তার অর্ধাঙ্গিনী বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেও নারাজ।রাফা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলো,পরক্ষণে ঝটকা দিয়ে উঠল,
– তুমি কি আদও পারবে?
রাফার ধ্বং*সযজ্ঞ অনুসরণ করা বড়ই অসম্ভব। বিনাশরাণী রাফা কায়সারের ন্যায় অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করা কতজনের পক্ষেই বা সম্ভব?অন্তিম মুহূর্তে তার তীর্যক হাসি রোযার অভিব্যক্তির পরিবর্তন ঘটালো না,বরং বিস্তৃত করে তুললো অশরীরী প্রফুল্লতাকে।আরো একটু ঝুঁকলো রোযা,রমণীর অধরে হিলের ডগা ছুঁইয়ে ঘোষণা করলো,

– আমার তরে যে চাঁদ গোটা পৃথিবীর সঙ্গে লড়তে সক্ষম, তার তরে এই জ্যোৎস্না স্বয়ং নরক রচতেও দ্বিধা করবেনা।
এক সেকেন্ড বিরতি,অতঃপর,
– আসমান আপনার আসক্তি,এবং আমার অনুভূতি।এখানেই আমাদের পার্থক্য,রাফা কায়সার!
বি*স্ফারিত নয়নে চেয়ে থাকলো দুর্বোধ্য রমণী,আজ বড্ড দূর্বল সে।উহু,ঠিক দূর্বল নয়।এক ভিন্ন অনুভূতি অনুভব করছে,পরাজয়ের।একটা সময় সে ওই শুভ্রতাকে আপন র*ক্তে*র স্বাদ আস্বাদনে বাধ্য করেছিলো,এবার তার পালা।সবথেকে পরিহাসের ব্যাপার,তার এই পরিণতি দানকারী আসমান স্বয়ং নয়, বরং তার স্ত্রী, রাফার প্রতিদ্বন্দ্বী এক সাধারণ রমণী।সাধারণ নাকি অসাধারণ?

রোযা নিজের উভয় হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো,রাফা নিজের চোখ বুজে ফেলেছে শক্তভাবে।যেন বরণ করে নিয়েছে নিজের পরিণতিকে।ইচ্ছা হলো নিজেকে সরিয়ে নেয়, ওই মুহূর্তেই ধ্বনিত হলো,
– কি হলো? ভয় পেয়েছ?করতে পারছনা তাইনা? আফটার অল,রাফা কায়সার এই ইহজগতে একজনই!
রাফার অট্টহাসি তী*রের মতন বি*ধলো রোযার অন্তরজুড়ে।
– রাফার মতন নিষ্ঠুর হতে চাও?তবে আগে নিজের র*ক্ত আস্বাদন করে দেখো কেমন স্বাদ তার!
থমকে গেলো রোযা এক মুহূর্তের জন্য,থরথর করে কাঁপলো সর্বাঙ্গ তার উপলব্ধিতে।অতর্কিতে বহু আগে মারবেল ভবনের পেন্টহাউজে ঘটা ঘটনা ভেসে উঠলো মস্তিষ্কে।সেপ্টেম্বর মাসের সময়টায়,আসমান কিভাবে উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল,দেয়ালে লাল কালো বর্ণে রাঙিয়ে তুলছিলো চিত্রকে।রোযা গিয়েছিল তাকে রুখতে,তার গ্রীবা আঁকড়ে ধরে হিমশীতল হিমালয় পরিহাসের হাসি হেসে বলেছিলো,

” হ্যাভ ইউ এভার টেস্টেড ইওর ওউন ব্লা*ড?”
” আই ডিড…ইট টেস্টস লাইক হেল!”
প্রকম্পিত হলো রোযা, রাফার দিকে চেয়ে ভগ্ন কন্ঠে বিড়বিড় করলো,
– আপনি আসমানকে….!
আবর্তিত হলো আঁধাররানীর অধর এক অবজ্ঞার আবহে,
– আই ডি…. আক!

উচ্চারণ করতে সক্ষম হলোনা রাফা,এর পূর্বেই রোযার হিলের ডগা এক তীব্র আক্রোশে ঢু*কে গি*য়ে রমণীর মু*খের ভে*তর একেবারে কন্ঠতালু অবধি ঠেকলো।নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে গেলো রাফার সম্পূর্ণ,কেশে উঠলো। হিলের আঁকাবাকা গড়নের ধা*রালো ধাতুতে তার মুখের ভেতরের অংশ ছি*ন্ন হয়ে র*ক্তপা*ত ঘটলো মুহূর্তেই।রোযা সামান্য মোচড় দিলো, আঁতকে উঠলো রাফা।দুহাতে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরলো রোযার পা,কিন্তু তাতে কি প্রলয় টলে?অমানিশার মহারাণীর সমস্ত মুখমন্ডল ক্রোধে কুঞ্চিত,দুহাত মুষ্টিবদ্ধ এতটা জোরের সহিত যে আঙুলের সংযোগস্থান ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে,বহু কষ্টে নিবারণ করছে সে নিজেকে পৈশা*চিকতা প্রদর্শন থেকে।
রাফার বুকের উপর এক অসহনীয় চাপ জেঁকে বসলো।নিঃশ্বাস নেয়া দায়,নড়াচড়া করলেই হিল কন্ঠতালুর আরো অভ্যন্তরে গেঁ*থে যাচ্ছে।হাসফাঁস করতে থাকলো সে,খা*মচে ধরলো রোযার পা,র*ক্ত নির্গত হলো ত্বকে ধা*রালো নখরের আঁ*চড়ে,তবুও নিটল অমানিশার অর্ধাঙ্গিনী। আরো চাপ প্রয়োগ করলো সে। রাফার দৃষ্টিপ্রদীপ নিভে আসতে থাকলো,গা গুলিয়ে ওঠা ব*মিভাব এবং মুখের ভেতর আপন র*ক্তের স্বাদ!ফেলে দেয়ার উপক্রম নেই কোনো।ক্রমশ জড়ো হচ্ছে তা, অধরের কোণ বেয়ে গড়াচ্ছে লালার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে।অসহায়ত্ব,মৃ*ত্যু আকাঙ্ক্ষা এবং নর*কযন্ত্রণা।এমনটাই কি সেদিন অনুভব করেছিলো আসমান?

রাফার দুহাত সমস্ত শক্তি হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। নয়নপল্লব বুজে এলো প্রায়।রোযার উদ্দেশ্যে তার আত্মসমর্পনী দৃষ্টিপাত।শুধুমাত্র কয়েকটি মোচড়ের অপেক্ষা। চিরচির করে ফেঁ*ড়ে যা*বে রাফার কপোল, একই কলঙ্কে কলঙ্কিত হবে সে।রোযা আরো গভীরে ঢো*কালো নিজের হিলের প্রান্ত,রাফা বিষম খেলো।মুখের ভেতর জ*মা র*ক্তটুকু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলোনা, ঢোক গিলতে বাধ্য হলো সে।এই কি নরক?
অতর্কিতে রাফাকে সম্পূর্ণ বিস্মিত করে দিয়ে রোযা নিজের পা সরিয়ে নিলো,হিলের র*ক্তা*ক্ত ডগা তুলে মেঝেতে সরে দাঁড়ালো।নিস্তব্ধ নিথর চেয়ে থাকলো রাফা আধখোলা দৃষ্টিতে,হাঁপাচ্ছে রোযা।শরীর তার কম্পিত হচ্ছে অব্যক্ত আলোড়নে।

– ঠিক বলেছেন আপনি।কেউ কোনোদিন রাফা কায়সার হতে পারবেনা।
ফিসফিসে শোনালো কন্ঠস্বর।তবে দূর্বলতাটুকু মুহূর্তের জন্য মাত্র।পরক্ষণেই প্রতিধ্বনিত গর্জনে প্রকম্পিত হলো কক্ষটি,
– আর কেউ কোনোদিন রাফা কায়সার হতে চাইবেও না!রাফা কায়সার এক অভিশাপের নাম!
এগোলো রোযা,এই বুঝি আরো একবার ক্ষ*ত বিক্ষ*ত করে শত্রুকে।কিন্তু তা এড়িয়ে রোযা পা তুলে হিলের ডগায় রাফার বিদ্ধস্ত অবয়ব ছুঁয়ে দিলো,মাথা হেলিয়ে জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে ঘোষণা করলো,
– আপন র*ক্তের স্বাদ কেমন লাগলো, পিশাচীনি? মধুসিক্ত,নাকি বি*ষাক্ত?ধমনীজুড়ে যে দূষিত প্রবাহ বইছে তার স্বাদ কোনোদিনও স্বর্গীয় হতে পারেনা।
বিরতি, ঝুঁকলো রোযা, রাফার কৌতূহলোদ্দীপক দৃষ্টিতে নিজ দৃপ্ত নয়ন মিলিয়ে বললো,

– আমি চাইলে আপনাকে কলঙ্কিত করতে পারি।কিন্তু আমি তা করবোনা।কারণ আমি ভয় পেয়েছি?উহু।এর কারণ আমি আপনার মতন হতে চাইনা রাফা কায়সার! যদি আমি আপনার কার্যক্রমের অক্ষরে অক্ষরে পুনরাবৃত্তি ঘটাই,তবে আপনার এবং আমার মাঝে পার্থক্য থাকলো কোথায়?আমি আপনি নই রাফা,এবং আপনার মতন একজন বিপথগামী রমণী কোনোদিনও আমি হতে পারবেনা।আজ আপনাকে কলঙ্কিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছে আমার ভীতি নয়,বরং আমার আপনার সামান্যতম প্রতিফলনটুকুও ত্যাগ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা!
রাফা স্থির চেয়ে থাকলো, কোনোপ্রকার অভিব্যক্তি নেই রমণীর মাঝে।শুধু একরাশ বিস্ময় এবং ম্রিয়মাণ হয়ে আসা জীবনপ্রদীপ।শিরদাঁড়া টানটান করে দন্ডায়মান হলো রোযা।

– এই অন্তর আপনাকে নিজ হাতে হ*ত্যা করার তীব্র বাসনায় ভুগেছে।বিশ্বাস করুন,আমার শিরা উপশিরায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধুমাত্র আপনার বিনাশের প্রলয়ংকরী অভিলাষ প্রবাহিত হচ্ছে। ক্রুরতা প্রকাশে আমার হাত কাঁপবেনা বিন্দুমাত্র।তবুও আমি নিজেকে নিবারণ করছি, আর এখানেই আমাদের পার্থক্য।একবার ভেবে দেখুন একটা মানুষ উপস…!পিশাচিনী ঠিক কতখানি ঘৃণিত হলে প্রতিশোধ বাসনায় উন্মত্ত আ*ত্মাও সংকোচে মুখ ফিরিয়ে নেয়! অ্যান্ড দ্যাটস ইওর প্লেস রাফা কায়সার, লাইক অ্যান ইনসেক্ট!
রাফা র*ক্তা*ক্ত অধরযুগল ফাঁক করলো,কিন্তু কিছুই উচ্চারিত হলোনা।এর পরিবর্তে এক অদ্ভুতুড়ে হাসির ধারায় ছেয়ে গেলো রমণীর মুখ।মুহূর্তের মাঝে রোযা স্থির হয়ে পড়লো, বিপদসংকেত!ঝট করে পিছনে ফিরতে চাইলেও সম্ভব হলোনা।এর পূর্বেই একটি লম্বাটে ধাতব নলের প্রান্ত এসে ঠেকলো তার ঘাড় বরাবর।সামান্য দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকালো রোযা। পি*স্ত*ল!এবং নিশানাকারী বান্দা….

– আকাশ!
সিক্ত কন্ঠে অট্টহাসির সঙ্গে মিশ্রিত রাফার কন্ঠস্বর আতঙ্ক জাগানিয়া।রীতিমত বদ্ধ উন্মাদের হাসি যেন তা।রোযা সন্তপর্নে পিছনে ঘুরল,মুখোমুখি হলো সেই চিরায়ত মুখখানির,কে বি গ্রুপের ছায়া,আকাশের।একটি চোখ আবদ্ধ তার আইপ্যাচের অন্তরালে,অন্য চোখে তীব্র দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রোযার উদ্দেশ্যে।সামান্য হাসলো বান্দা, রাফার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে।
– নাইস ট্রাই, বাট দিস এন্ডস নাউ!
একটি ঢোক গিলে মুষ্টিবদ্ধ হাতে চেয়ে রইলো রোযা।একবারের জন্য দৃষ্টি সরিয়ে নিলোনা পি*স্ত*লের নল থেকে।

করিডোরের প্রান্তে আসতেই প্রথম বাঁধার সম্মুখীন হতে হলো আসমানকে।দুজন গার্ড,উত্তেজিত ভঙ্গিতে ছুটে আসছে।অপর প্রান্তে গোলযোগের শব্দ শোনা যাচ্ছে।প্রস্তুত আসমান এক হাতে নিজের রিভ*লভার তুলে নিলো,অপর হাতে পকেট থেকে বের করলো তার সঙ্গী নানচাক্স।একজন গার্ডের নি*শানা ডিঙিয়ে সহসাই নানচাক্সের জোরালো আ*ঘা*তে আছ*ড়ে ফেললো তাকে মাটিতে।দ্বিতীয় আ*ক্রম*ণের সময়টুকুও দিলোনা।রিভ*লভারের বু*লেট ঠু*কলো কপা*লের মাঝখানে।ছি*টকে উঠলো র*ক্ত এবং গ*লিত মগ*জের মিশ্রণ।বেপরোয়া ভঙ্গিতে তা এড়িয়ে অপরজনের গ্রীবায় নানচাক্সের শি*কল জ*ড়িয়ে আবদ্ধ করলো।ছটফট করতে থাকা শরী*রটি বাঁকিয়ে কনুই ব্যবহার করে ঘাড়ের শিরদাঁড়া বরাবর নিজের কব্জিতে সংযুক্ত হি*ডেন ব্লে*ড গেঁ*থে দি*লো।র*ক্তপাতের উদগীরণ ঠেকলো তার মাস্ক পর্যন্ত।দুহাত অতি ঘৃণায় ঝেড়ে পা দিয়ে নি*থর দে*হদুটো পা দিয়ে সরিয়ে অগ্রসর হলো কি*লিং মেশিন।

করিডোরের প্রান্ত পেরোতেই দৃশ্যটি নজরে এলো।হাবিব এবং তাদের হিটটিমের দুইজন একদল অজানা ঘা*তককে ব*ধ করতে ব্যস্ত।অপর একজন নিজের উরু চেপে দেয়াল ঘেঁষে বসে আছে,খুব সম্ভবত আহ*ত সে।সুচারু পর্যবেক্ষণ চালালো অমানিশা।পোশাকের বুকের অংশে অংকিত পেঁচার চিহ্ন মনোযোগ কেড়ে নিলো তার।অজান্তেই শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাওয়া এক শীতল স্রোত অনুভব করলো আসমান।
আলফা!
রাফার সঙ্গে এই পরিকল্পনায় তবে কি আলফাও যুক্ত?
উদঘাটন কিংবা বিশ্লেষণের সময় নেই।ক্ষীপ্র গতিতে এগোলো সে হাতের নানচাক্স বনবন করে ঘুরিয়ে ঘূর্ণিপাক তুলে।মেঝেতে হাবিবকে আছড়ে ফেলে তার উপর চড়ে বসা পেঁচাবাহিনীর সদস্যের মাথা বরাবর সেটি ছুঁ*ড়ে দিতেই উল্টে পড়লো সে।অতঃপর রিভ*লভারের বু*লে*টে বি*দ্ধ হলো তার বু*ক।তৎক্ষণাৎ উঠে বসে হাবিব পিছনে ফিরলো।আসমানকে লক্ষ্য করে সে একইসঙ্গে প্রশান্তি এবং উৎকণ্ঠা অনুভব করলো।

– এরা…কিভাবে?
আরেক পেঁচা বাহিনীর সদস্যের গ*লা চে*পে দেয়ালের সঙ্গে লেপ্টে ধরে রেখে হুংকার ছুড়লো আসমান।হাবিব উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রিভ*লভারে ক্ষীপ্র গতিতে নতুন ম্যাগাজিন ভরতে ভরতে উত্তর করলো,
– জানিনা ভাই।আমাদের ধারণায়ও ছিলনা। ম্যামকে গার্ড দিতে যখন আমরা ওই রুমে যাচ্ছিলাম তখনি অতর্কিতে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
থমকালো আসমান ক্ষণিকের জন্য।হাতের হি*ডেন ব্লে*ড শিকা*রের মু*খে ঢু*কিয়ে সম্পূর্ণ গেঁ*থে ফে*লে প্রা*ণনাশ নিশ্চিত করলো।তারপর এক ঝটকায় ফিরে তাকালো।
– রোযা কোথায়?
হিটটিমের একটি ছেলে এক আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলো পথ।
– আপনি যান ভাই,রাফা কায়সারের সাথে আছে ম্যাম।আমরা এদিকটা সামলে নিচ্ছি।বাকিরাও এসে পড়েছে, আমরা পারবো আপনি যান।

আসমান কোনো আপত্তি প্রদর্শন করলোনা।বাকিরা শ*ত্রুদের রুখে রাখতে রাখতে করিডোর বেয়ে সে ছুটে গেলো।তার হৃদস্পন্দন হার মেনেছে।এতটা প্রকাণ্ডভাবে স্পন্দিত হচ্ছে যেন এই বুঝি লুটিয়ে পড়ল।তবে আসমান নিজের পতন হতে দিলোনা।অর্ধাঙ্গিনী এবং নিজের অংশের টান তাকে নির্দিষ্ট কক্ষের সামনে এসে দাঁড় করালো। প্রবেশপথে থমকে দাঁড়িয়ে অভ্যন্তরের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতেই তার হৃদস্পন্দন এবার সম্পূর্ণ স্থির হয়ে পড়ল যেন। বি*স্ফা*রিত নয়নে তাকালো দৃশ্যপটে।
একপাশের টেবিল ঘেঁষে দন্ডায়মান র*ক্তস্নাত,বিক্ষ*ত রোযা।তার কপালে পি*স্ত*ল ঠেকিয়ে দাঁড়ানো আকাশ।এবং সদ্য মেঝে থেকে উঠে চেয়ারের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো বিদ্ধ*স্ত রাফা।মুখের দুপাশ থেকে উ*ষ্ণ তরল র*ক্ত গড়িয়ে নামছে তার, দৃষ্টিজুড়ে এক ধোঁয়াশা।যেন প্রবল অস্তিত্বকে অনুভব করতে পেরেছে,এমন ভঙ্গিতে সহসাই রমণী ফিরে চাইলো আসমানের দিকে।ওই ভয়ং*কর মুখশ্রী পরিপূর্ণ বিভীষিকায় হাসলো সে,তৃপ্তির হাসি।

– ফাইনালি!
চেয়ারের উপর ধপ করে বসে পড়ল রাফা,ওই অবস্থায়ও হাঁটুর উপর হাঁটু তুলে রাজকীয় ধাঁচে দৃষ্টি ফেললো সামনে,হাতের র*ক্তা*ক্ত আঙুলের মাঝে ঘুরপাক খেতে থাকলো সিগারেটের টুকরো।বেখেয়ালি পদক্ষেপে এগোলো আসমান,দৃষ্টি তার রোযার দিকে।প্রেয়সী ঘুরে তাকালো তার আগমনে, দৃষ্টিজুড়ে বিন্দুমাত্র দূর্বলতা নেই,নেই কোনো অসহায়ত্ব।আছে শুধু ক্রোধ এবং ঘৃণা।তার উদ্দেশ্যে নয়।ওই আঁধাররাণীর উদ্দেশ্যে।
অতর্কিত ঘটনাটি ঘটলো তখনি।আসমান কয়েক পা প্রবেশ করতেই এক যান্ত্রিক শব্দ হলো।
ক্রিং! ক্লাক!

কক্ষের দরজাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে!ঝট করে সকলে তাকালো সেইদিকে।ধাতব দরজার দুপাশ স্লাইড করে এসে মিলিত হয়ে পড়েছে,সামান্যতম ফাঁক ফোঁকর নেই।উপরের স্ক্রীনজুড়ে জ্বলজ্বল করছে লাল বর্ণের বাতি,যেন বিপদসংকেত।একপাশের ইলেকট্রিক্যাল স্ক্রীনে দৃষ্টিপাত হয়েই বুঝতে আর কিছু বাকি রইলোনা আসমানের।

দরজাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।নির্দিষ্ট কোনো কোড ছাড়া এই দরজা খোলা অসম্ভব।ধাতব হওয়ার ভেঙে ফেলার কোনো সুযোগ নেই।সেই কাজ সাধন করতে চাইলেও যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হবে।ওটুকুই যথেষ্ট রাফা এবং আকাশের জন্য।এই কক্ষের মাঝে আসমান ও রোযাকে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে।বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ অসম্ভব।কিসের জন্য?তার উত্তর একমাত্র রাফার নিকটই রয়েছে।কারণ সেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি ল্যাবরেটরির মতন কক্ষ ও স্থান বেছে নিয়েছে।অবশ্যই এই বিল্ডিংজুড়ে গোপনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রলেপ রয়েছে যা সম্পর্কে বাইরের মানুষের ধারণা নেই বললেই চলে।এই সুযোগটাকে এভাবে কাজে লাগানো রাফার পক্ষেই সম্ভব।
পুনরায় ভেতরে তাকালো আসমান।সে ইতোমধ্যে ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে সন্দেহ নেই।আপাতত পরাজয়ের কথা না ভেবে ভবিষ্যতে মনোযোগ দেয়া দরকার।তার অর্ধাঙ্গিনী অ*স্ত্রে*র মুখে,বিষয়টি তাকে মোটেও সুস্থির থাকতে দিচ্ছেনা।

হাতের ডিভাইসটিতে কক্ষের লক সিস্টেম অন করার কার্যসিদ্ধির পর তা ছুঁড়ে ফেললো রাফা অবহেলায়।বোঝা গেলো,এই ডিভাইস দ্বিতীয়বার ব্যবহারের উপযোগী নয়।অতি অলস ভঙ্গিতে লাইটার তুলে সিগারেট ধরাতে চাইলো সে। ক্ষ*ত বিক্ষ*ত হাত তার কাপতে থাকলো,অসুবিধা সৃষ্টি করলো কাজে।তাতে ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত হলো রাফার।
– মিসেস জ্যোৎস্না আক্রোশ প্রদর্শনে কমতি রাখেনি।
ঝটকা দিয়ে উঠলো রোযা,তাতে আকাশ তাকে দ্বিগুণ জোরে চেপে ধরে পি*স্ত*লের সেফটি লক খুললো।অন্তিম হু*ম*কি।আসমানের দৃষ্টি পতিত হলো রোযার উপর,সমস্ত শরীর পেরিয়ে থামলো উদরে।
– স্ট্রিপ।

অবশেষে সিগারেট জ্বালতে সক্ষম হয়েছে রাফা।দীর্ঘ সুখটানে হাওয়া তামাটে ধোঁয়ায় মাতিয়ে সে আদেশ করলো।তখনো স্থির চেয়ে রইলো আসমান রোযার দিকে।তার উদ্দেশ্যেই আদেশ ধ্বনিত হয়েছে।স্ত্রীকে জিম্মি করে তাকে বশ করার এক হাস্যকর কিন্তু বর্তমানে কার্যকরী প্রচেষ্টা।
– না আসমান!

ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে একটুও সময় নিলোনা রোযা। তীব্রভাবে নাড়লো মাথা।আসমান শুধু নির্বিকার চেয়ে রইলো,পরক্ষণেই নিজের পরিধানের জ্যাকেটের জিপার টেনে উন্মুক্ত করলো আপন অবয়ব। রাফার অধর কুঞ্চিত হলো হাসির ধারায়।অতি আয়েশী ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে সে ওইরকম ভগ্নপ্রায় অবস্থায়ই পর্যবেক্ষণ করে গেলো শুভ্রতাকে।অত্যন্ত বিধ্বংসী দেখালো তার এহেন দুর্বোধ্য আচরণ।
একটা শব্দও উচ্চারণ করলোনা আসমান।ধীরে ধীরে নিজের জ্যাকেট খুলে টি শার্ট ধরলো।এক হাতে দ্রুত টানে সেটি খুলে উন্মুক্ত করলো নিজের ঊর্ধ্বাঙ্গ।মেঝেতে ফেলে দিলো আবৃতকারী বস্ত্র।অতি নিগূঢ় পর্যবেক্ষণ চালালো রাফা,তার ক্ষতচিহ্ন সম্বলিত প্রশস্ত বুক এবং উদরজুড়ে।রোযার শরীরে তড়িৎ খেলে গেলো যেন।কিন্তু পি*স্ত*লের নল তাকে রুখতে বাধ্য করছে। উদরমাঝে কেমন অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে,যেন তার ভালোবাসার অংশও পিতা মাতার এই সংকটলগ্নে শংকিত।

– কাম হেয়ার।
আঙুল তুলে অত্যন্ত বেহায়া আদেশ ছুড়লো রাফা।অবশ্যই,আসমান অনুসরণ করলো।লম্বা কয়েক পদক্ষেপে পৌঁছলো রাফার বসে থাকা চেয়ারের নিকট।একবারের জন্যেও রমণীর সঙ্গে দৃষ্টি মিললো না তার।সে চেয়ে আছে একপাশে,যেখানে দন্ডায়মান তার অর্ধাঙ্গিনী।ব্যাপারটি লক্ষ্য করে খিলখিল করে হাসলো রাফা।মুখ র*ক্ত এসে যাওয়ায় থু করে ফেললো তা একপাশে।অতঃপর তৃতীয় আদেশ ধ্বনিত হলো,
– নিল ডাউন।

কম্পন খেলে গেলো আসমানের সুগঠিত মাং*সপেশীজুড়ে।প্রথমবারের মতন দৃষ্টি ফিরিয়ে সে তাকালো রাফার নয়ন বরাবর।দাঁতে অধর কাম*ড়ে ধরে রাফা আবারো বললো,
– আই সেইড নিল ডাউন….বিফোর মি।
আকাশের তর্জনী চেপে বসলো পি*স্ত*লের ট্রি*গারের উপর।ওইটুকুই আসমানের স্বগর্ব অবস্থান ভাঙার জন্য যেন যথেষ্ট।মেঝের দিকে তাকালো সে।অতঃপর এক হাঁটু স্থাপন করলো,পরবর্তীতে অপর হাঁটু,মেঝেতে বসলো উভয় গেড়ে।রাফা কায়সারের সম্মুখে অবনমিত হলো তার সমস্ত অস্তিত্ব।সহস্র চাওয়া সত্ত্বেও কিছুই উচ্চারণ করতে সক্ষম হলো না রোযা।শুধু নির্বিকার চেয়ে রইলো।আসমান আজ তার জন্য নতজানু হতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি।কেমন অনুভূত হচ্ছে তার?

ন*রক অনুভূতি!
– কে যেনো বলেছিল চাঁদকে কখনো মাটিতে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়?
রোযার দিকে তাকালো রাফা।নিজের পা তুললো, বৃদ্ধাঙ্গুলটি আসমানের চিবুকে ঠেকিয়ে উত্তোলন করলো মাস্ক পরিধানকৃত শুভ্র মুখখানি।বিড়বিড় করলো,
– আজ স্বয়ং চাঁদ আমার পদতলে,তুমি হেরে গিয়েছ জ্যোৎস্না।

ডার্কসাইড পর্ব ৬৬

স্থির চেয়ে রইলো রোযা।ওই আঁধাররাণী এবং তার শিয়রে নতজানু অমানিশার পানে।যেন এক মহারাণী এবং ক্রীতদাস।আফসোস হচ্ছে প্রথমবারের মতন।
রাফা কায়সারকে ধ্বং*সে স্বয়ং রাফা কায়সারে পরিণত হওয়ার গ্লানিটুকু বরণ করা অতি জরুরী ছিল!

ডার্কসাইড পর্ব ৬৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here