ডার্কসাইড পর্ব ৯

ডার্কসাইড পর্ব ৯
জাবিন ফোরকান

ক্রিচ….ক্রিচ….।
ধাতুতে ধাতু ঘর্ষণের শব্দ।
ক্রিচ….
ধা*রালো প্রান্ত দুটি একে অপরের তীক্ষ্ণতার পরীক্ষায় উপনীত হয়েছে।
এমন ধ্বনি সান্দ্রোকে যেন ধীরে ধীরে অমানিশার দুনিয়া থেকে বাস্তব পৃথিবীতে টেনে আনতে শুরু করলো।মিটমিট করে চাইলো সে। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা রইলো বেশ কয়েক সেকেন্ড। তা কিছুটা স্বচ্ছ হয়ে আসতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করলো এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায়। নড়াচড়া করতে গিয়েও সক্ষম হলোনা।তার সমস্ত শরীর কোনো নাইলনের দড়ি দিয়ে শক্তভাবে বাঁধা রয়েছে কিছুর সঙ্গে।

ক্রিচ ক্রিচ শব্দটি তার কর্ণগুহরে আ*ঘা*ত করে চলেছে কোনো এক পরাশক্তির মতন।হৃদযন্ত্র তার স্পন্দিত হচ্ছে দ্রুতলয়ে।যেন মস্তিষ্ক পরিস্থিতির জটিলতা কিংবা ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
কিভাবে এখানে পৌঁছলো সে?
“ পাতাল ”— নামক ক্লাবটিতে দেখা রমণীকে প্রাইভেট রুম পর্যন্ত অনুসরণ করেছিল সান্দ্রো।উপভোগের পূর্বমুহূর্তে তারা দুজন ড্রিঙ্ক করার সিদ্ধান্ত নেয়।হুইস্কিতে চুমুক দিতে দিতে সান্দ্রো নিজের দৃষ্টি দিয়েই বাঙালি রমণীটির শারীরিক মাপজোখ সেরে ফেলেছিল।অতঃপর যেই না ক্ষুধার্ত পশুর ন্যায় নিজের শিকারের উপর হা*মলে পড়তে চলেছিল….
এরপর আর কিছুই মনে নেই!হতভম্ব হয়ে থাকলো সান্দ্রো।ব্যাপার কি?তার স্মৃতিশক্তি কোনোকালে এতটা দুর্বল ছিলোনা যে কোনো নারীর সঙ্গে রাসলীলার মুহূর্তে সে স্মরণ রাখতে পারবেনা!তবে কি এরপরের আর কোনো স্মৃতিই নেই?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ক্রিচ…. ক্রিইচ….
– আহ্! স্টপ ইট!
শব্দটি সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে উঠলো সান্দ্রো।তাতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সবকিছু থেমে গেলো।একদম পিনপতন নীরবতা ভর করলো স্থানটিতে।শুধুমাত্র বহুদূর থেকে কিছু ডাহুক পাখির কলতান ভেসে এলো।এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড…..তারপর….
ক্রিচ…. ক্রিইইইচ!
– ফা***!

মাথা ঝুলে পড়লো সান্দ্রোর।সমস্ত শরীর তার ক্রোধে তিরতির করে কাপছে।প্রচুর টানাটানি সত্ত্বেও কিছুতেই নিজেকে দড়ির বাঁধন থেকে মুক্ত করতে পারছেনা সে।উল্টো এ যেন এক ভিন্নরকম ফাঁদ।যত চেষ্টা করছে, শৃংখলটি তাকে চারিদিক থেকে আরো শক্তভাবে পেঁচিয়ে ধরছে।খানিকটা চোরাবালির মতন। বাঁচার জন্য মানুষ যত প্রচেষ্টা করে, ততই তাকে গভীরে টেনে ধরে আশ্চর্য্য প্রাকৃতিক সৃষ্টিটি।

শব্দটি থামার কোনো নামগন্ধ নেই।বরং সময়ের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার দৌরাত্ম্য। সান্দ্রোর দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ ফিরে এসেছে। আঁধারে চোখ অভ্যস্থ হয়ে পড়ার কারণে সে বর্তমানে আরো স্পষ্টভাবে সবকিছু অবলোকন করতে পারছে। যে স্থানটিতে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে ঠিক কি বলে আখ্যায়িত করা যায় সান্দ্রোর জানা নেই।এদেশী গুদামঘরের সঙ্গে সে মোটেও পরিচিত নয়।মাটির তৈরি মেঝে, চারিপাশে করোগেটেড টিনের দেয়াল। উপরে ছাদটাও খুব সম্ভবত টিনের তৈরী। সান্দ্রো যখন মুখ তুলে তাকালো তখন ঠিক নিজের মাথার উপর জায়গাটিতে খোলা আকাশ এবং তাতে ভাসমান চন্দ্রাংশটি দেখতে পেলো।তার মাথার উপরের বেশকিছু অংশজুড়ে ছাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

ধাতুতে ধাতু ঘর্ষণের শব্দটি বর্তমানে এতটা জোরালো হয়ে উঠেছে যে নিজের মনোযোগ ঠেকিয়ে রাখতে পারলোনা সান্দ্রো।ভ্রু কুঁচকে সামনে চাইলো। ছাদের ফাঁকা অংশ দিয়ে চুঁইয়ে পড়া চন্দ্রাংশের জোছনার আভায় সে পরাবাস্তব দৃশ্যটি প্রথমবারের মতন দেখতে পেলো।তার সমস্ত শরীরে এক তীব্র শিহরণ প্রবাহিত হয়ে গেলো সহসাই।
একটি চেয়ারে বসে রয়েছে একজন।পরনে অগণিত পকেট সম্বলিত গাবার্ডিন এবং লেদার জ্যাকেট।জ্যাকেটের চেইন তোলা একেবারে গলা পেরিয়ে চিবুক পর্যন্ত।চিবুকের উপরের অংশও আবৃত নেক টু ফেস মাস্কে।মাথায় ক্যাপ এবং পায়ে টাখনু পেরিয়ে উপরে উঠে যাওয়া ডার্বি বুট।সবকিছুর একটাই রঙ।আধারের বর্ণ, অশুভের বার্তা, পরাশক্তিদের নির্দেশক, সূর্যরশ্মির শোষক…. কালো।

তার হাত আচ্ছাদিত কালো রাবার গ্লাভসে।সেই হাতে রয়েছে একটি চাপাতি, এবং অন্যটি ম্যাসিভ না*ইফ। নাই*ফটি দিয়ে চাপাতিতে ঘর্ষণের ফলে ক্রিচ ক্রিচ শব্দটি তৈরী হচ্ছে।অতি ধীরস্থিরভাবে কাজটি করে চলেছে সে,যত্নের সাথে।
ভূতুড়ে দৃশ্যটির দিকে চেয়ে একটি শক্ত ঢোক গিলতে বাধ্য হলো সান্দ্রো।
হঠাৎ করে চাপাতিতে ধা*র দেয়া থামিয়ে চোখ তুলে চাইলো পরাবাস্তব সত্তাটি।তাতে শিউরে উঠলো সান্দ্রো।ওই দৃষ্টি বুকে কাপন ধরিয়ে দেয়ার মতন তীক্ষ্ণ।
– হু…. আর….ইউ?

কোনোমতে উচ্চারণ করলো সান্দ্রো।তাতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।এক পা এক পা করে অগ্রসর হতে থাকলো সান্দ্রোর নিকটে।পিছিয়ে পড়ার কোনো জায়গা নেই।তবুও সান্দ্রো নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো।এই দানবটিকে তার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছেনা।
আস্তে আস্তে সান্দ্রোর সামনে এক হাত দূরত্বে উবু হয়ে বসলো সে।হাতের চাপা*তি তার ঝুলছে নিচের মাটির দিকে।
– আসমান।
সান্দ্রোর শরীরে যেন বি*দ্যুৎ খেলে গেলো এমনভাবে প্রকম্পিত হয়ে উঠলো সে।এই ব্যক্তির বজ্র কন্ঠস্বর এবং নাম উভয়ই তাকে বিস্মিত করেছে।
আসমান দ্যা কি*লিং মেশিন— সম্বোধনটি তার পরিচিত।
– হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট!

নিজেকে ভীতির সমুদ্রে সম্পূর্ণ বিলীন হতে দিলোনা সান্দ্রো।সে যদি দুর্বলতা প্রদর্শন করে তাহলেই মুশকিল।বর্তমানে ভিন্ন এক দেশে অত্যন্ত দুর্ধর্ষ এক গুপ্তঘা*তকের হাতে সে বন্দী।এটি তার নিজের রাজ্য নয়, অন্য কারো রাজ্য।তাই চালও দিতে হবে সাবধানে এবং অত্যন্ত ভেবেচিন্তে। সান্দ্রোর প্রশ্নে উবু হয়ে থাকা আসমান সামনে ঝুঁকলো। তার কৃষ্ণগহ্বরের ন্যায় শোষণীয় দৃষ্টিতে যেন আবদ্ধ হয়ে পড়লো সান্দ্রো।
– লাহ্ তুয়া ভিতাহ্। (তোমার প্রাণ)

আসমানের কন্ঠে ইটালিয়ান ভাষার বাক্যটি শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো সান্দ্রো। হাজার চাওয়া সত্ত্বেও কিছুই উচ্চারণ করতে সক্ষম হলোনা বেশ দীর্ঘ একটা মুহূর্ত।অবশেষে সে যখন মুখ খুললো তখন তার কণ্ঠে স্পষ্ট কম্পন টের পাওয়া গেলো।
– কো…কোওসা তিও ফাত…ফাত্তহ্? ( আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?)
জবাব দিলোনা আসমান।হাতের ছু*রি*র ধা*রালো চকচকে প্রান্ত তুলে ধরলো। ধীরে ধীরে তা সান্দ্রোর গালের পাশ বেয়ে নিচে নামতে থাকলো। সান্দ্রো নিজের উভয় হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো।এর সামনে সে কিছুতেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয় কিন্তু খুব বেশিক্ষণ সে নিজেকে শক্ত রাখতে সমর্থ হলোনা।আসমানের ছু*রি তার গাল বেয়ে খানিক নিচে নামতেই চাপ প্রয়োগের দরুণ প্রবেশ করলো ত্বকের ভিতরে।ফি*নকি দিয়ে উঠলো র*ক্ত!
– আআহ… মমফ!

চিৎকার করতে গিয়েও ব্যর্থ হলো সান্দ্রো।আসমান তার মুখ চেপে ধরেছে বাম হাত দিয়ে।ডান হাতে ধরে রেখেছে ছু*রিখানা।একদম নির্বিকার সে।সান্দ্রো ছটফট করতে করতেই তার ছু*রি গাল থেকে একেবারে কন্ঠনালী পর্যন্ত দীর্ঘ একটা ক্ষ*ত সৃষ্টি করলো। সান্দ্রোর অবাধ্যতায় এদিক সেদিক কে*টে যেতেই আসমান শুধালো,
– ওয়ান্ট মি টু কা*ট ইওর থ্র*ট?
তৎক্ষণাৎ জমে গেলো সান্দ্রো। আসমানকে বাঁধা প্রদানের প্রচেষ্টা তার কমে এলো এই ভয়ে যে ছু*রিটা যেকোনো মুহূর্তে তার ক*ণ্ঠে বি*দ্ধ হ*তে পারে।
মনের সাধ মিটিয়ে দীর্ঘ মুহুর্ত সময় নিয়ে সান্দ্রোর গাল থেকে বুক পর্যন্ত র*ক্তা*ক্ত চিত্রকর্ম তৈরী করলো আসমান। যেন মানবদেহে নয় বরং জড়বস্তু কাগজের উপর নিজের অতিপ্রিয় লাল রঙে রাঙিয়ে তুলছে কোনো শৈল্পিক সৌন্দর্য। সান্দ্রোর পরিধানের সাদা শার্ট এবং কালো ফরমাল প্যান্ট সম্পূর্ণ সিক্ত হয়ে উঠেছে চুঁইয়ে পড়া র*ক্তধা*রায়।জী*বন্ত কা*টাকু*টি তার শরীর সহ্য করতে পারেনি, রীতিমত মিইয়ে পড়েছে।খুঁটির সঙ্গে বাঁধা না থাকলে নির্ঘাত এতক্ষণে সে লুটিয়ে পড়ত মেঝেতে।

আসমান উঠে দাঁড়ালো। সান্দ্রোর র*ক্ত ছিটকে উঠে ইতোমধ্যে তার পোশাকে ছোপ ছোপ দাগ দৃষ্টি করেছে।কিন্তু সেসবের পরোয়া নেই তার।কয়েক পা হেঁটে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে মুষড়ে পড়া সান্দ্রোকে পর্যবেক্ষণ করলো সে। এমন দৃশ্য কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অবলোকন করলে হয় নিজের জ্ঞান হারাতো নয়ত তৎক্ষণাৎ অসুস্থতাবোধ করতো। দৃশ্যটির বিভীষিকা তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিতো নির্ঘাত।কিন্তু সান্দ্রোর বিকৃ*ত চেহারা এবং র*ক্তা*ক্ত মানচিত্রখচিত বুকও আসমানকে ঠিক সন্তুষ্ট করতে পারলোনা।তার মস্তিষ্ক শুধু একটি কথাই তাকে বলে চলেছে।
এতটুকু যন্ত্রণা যথেষ্ট নয়। আরও চাই!

সান্দ্রোর যে অবস্থা তাতে তাকে এই অবস্থায় এখানে ফেলে রেখে গেলে র*ক্তক্ষরণে সে মা*রা যা*বে আগামীকালের মধ্যেই।এত সহজ মৃ*ত্যু দেয়া অসম্ভব।র*ক্তপিপাসা মেটেনি আসমানের।
সান্দ্রো বহু কষ্টে এখনো পর্যন্ত নিজেকে সজ্ঞানে রেখেছে।আসমান তার মুখ ধরে না রাখলেও বর্তমানে চিৎকার করার শক্তিটুকু পর্যন্ত তার মাঝে নেই।দুর্বল শরীরে দৃষ্টিও ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে।এই কি সেই ন*রক যার সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে সাবধানবাণী দেয়া থাকে?আর এই আসমান কি সেই নরকের প্রহরী?নাহ, প্রহরীর এত ক্ষমতা কোথায়?আসমান নরকের প্রহরী নয় বরং নরকরাজ! যার এক হুকুমে মহাকাল থেকে পৃথিবীর বুকে নেমে আসে স্বয়ং নরক!
কিন্তু কেউ তো তাকে কোনোদিন সান্দ্রোকে বলে দেয়নি পৃথিবীতে স্বর্গের পাশাপাশি ন*রকও বিদ্যমান থাকা সম্ভব!
নিজের ইটালিয়ান ব্যবসায়ী পিতার একমাত্র সন্তান সান্দ্রো, যার অধীনে শাসিত হয় গোটা একটি বিজনেস এম্পায়ার এবং “মিস্টিক রিপার”খ্যাত মাফিয়া গোষ্ঠী!জীবনে শত সহস্র পাওয়ার ভিড়ে কোনোদিন না পাওয়া কি তা টের পায়নি সান্দ্রো।সোনার চামচ নিয়ে বড়ো হওয়া এবং অতঃপর উচ্ছন্নে যাওয়ার এই যাত্রায় কোনোদিন এমন এক পরাশক্তির মোকাবেলা করতে হবে তা কল্পনাতীত ছিল সান্দ্রোর।

এই আসমান কি আদতেই একটি মেশিন?নাকি বদ্ধ উন্মাদ?তাকে বর্ণনা করার কোনো শব্দ রয়েছে কি এই পৃথিবীর কোনো ভাষার ব্যাকরণে?
আসমানকে পুনরায় নিজের দিকে এগোতে দেখলো সান্দ্রো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো সে,তাতে জিহ্বায় র*ক্তে*র নোনতা এবং ধাতব স্বাদ পেলো সহসাই। তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা কিছু বের করলো আসমান।ভালোমত তাকিয়ে সান্দ্রো উপলব্ধি করলো, জিনিসটি একটি সিরিঞ্জ।যথাযথভাবে উল্লেখ করলে, একটি ফাঁকা সিরিঞ্জ!

– নো… নো….ক্রেজি…. সাইকো…. ইউ আর আ ফা**কিং সাই*কোপ্যাথ ড্যাম ইট!
সান্দ্রোর দূর্বল কণ্ঠের প্রতিবাদী ধ্বনিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ বোধ করলোনা আসমান।দুই হাতে সিরিঞ্জটি তুলে ধরে পিস্টন টানলো।কোনো ওষুধ কিংবা তরলে নয়, বায়ুতে পূর্ণ হতে থাকলো সিরিঞ্জটি। ২০ – ৫০ মিলি বায়ু মানবদেহে তী*ব্র শারীরিক য*ন্ত্রণা, ধমনী এবং হার্ট ব্ল*কেজ থেকে আরম্ভ করে দীর্ঘ বেদনার কারণ হতে পারে। ৫০ এর উপরে হার্ট ফেই*লিয়র কিংবা নিশ্চিত মৃ*ত্যু।
বরাবর ২৫ মিলিতে থামলো আসমান।তার দৃষ্টিতে প্রকাশ পেলো সন্তুষ্টি।
সান্দ্রোর দিকে অগ্রসর হতেই কুঁকড়ে গেলো সে।খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারছে যে এই দানবটি তার সঙ্গে কি করতে চাইছে।একবারে মা*র*বে না…. ধুঁকে ধুঁকে মা*র*বে!
– মাই ড্যাড উইল কি*ল ইউ!

দেহের অবশিষ্ট শক্তিটুকু একত্রিত করে অন্তিমবারের মতন চিৎকার করে উঠলো সান্দ্রো।তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলোনা আসমান।অবিচলিত ভঙ্গিতে সে চেপে ধরলো সান্দ্রোর বাহু।বরাবর ধম*নীতে পু*শ করে দিলো সিরিঞ্জের সবটুকু বায়ু। সান্দ্রোর মনে হলো তার সমস্ত শরীরে এক বেদনাদায়ক তরঙ্গ খেলে গেলো।ধীরে ধীরে একটা চিনচিনে ব্যথা তার বুকে ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করলো।শরীর কেমন ছেড়ে দিচ্ছে।ঠিকমত নিঃশ্বাসও নিতে পারছেনা।অক্সিজেন যেন হুহু করে নিঃশেষ হয়ে আসছে।
মু*মূর্ষু অবস্থায় ছটফট করতে থাকা রোগীর ন্যায় আসমানের দিকে চাইলো সান্দ্রো।কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে অসমর্থ সে।শুধু তার অসহায় অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে একটিমাত্র প্রশ্ন আসমানের উদ্দেশ্যে,
“ কেনো এমন য*ন্ত্রণাদায়ক মৃ*ত্যু?”

অবশ্যই, উত্তর করলোনা আসমান।মানুষ হলে হয়তো মৃ*ত্যুপথযাত্রী এই ব্যক্তিকে এমন মৃ*ত্যু প্রদানের কারণটুকু বলতো, কিন্তু সে তো একটা মেশিন।মেশিনের কোনোপ্রকার মানবিক অনুভূতি হয়না।
অতএব, সান্দ্রোর প্রশ্ন নিরুত্তর। নিজের পকেটে সিরিঞ্জটি ভরে উল্টো ঘুরলো আসমান।
– প্রেগো কেনোন চিসিয়া পোস্ত আলইনফ্যার্নো। ( প্রার্থনা করি যেন জাহান্নামেও জায়গা না হয়)
আসমানের অন্তিম বাক্যটি প্রতিধ্বনিত হলো সান্দ্রোর কর্ণকুঠরে।দৃষ্টিপ্রদীপ নিভে আসতে থাকলো তার। নরকয*ন্ত্রণা অনুভব করতে করতে সে স্থির নয়নে চেয়ে রইলো দূরে, যেখানে ধীরে ধীরে হেঁটে বেরিয়ে যাওয়া আসমানের অবয়ব দেখা যাচ্ছে।

আজ সান্দ্রোর পিতার মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি কিংবা তার সহযোগী শক্তিশালী ইটালিয়ান মাফিয়া গ্যাং….. কোনকিছুই তাকে বাঁচাতে সক্ষম হলোনা আসমান নামক এই দানবের কবল থেকে।
চোখ বুজে ফেললো সান্দ্রো।সে জানে, এই চোখ আর কোনোদিন খুলবেনা।এত অধিক মাত্রায় য*ন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে যে শরীরের নার্ভ সিস্টেম সেই অনুভূতিটুকু পর্যন্ত অনুভবে সক্ষম নেই আর।

হিমশীতল বায়ুতে প্রকৃতি পরিপূর্ণ। ঘণ্টাখানেক আগে ঝিরঝিরে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিল।এখন অবশ্য বৃষ্টির বদলে শুধুমাত্র ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আকাশ ঘন কালো মেঘপুঞ্জে আচ্ছাদিত।সেই মেঘের আড়াল থেকে ক্ষণে ক্ষণে নববধূর ন্যায় উঁকি দিয়ে নিজের দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে চন্দ্রাংশ।সম্পূর্ণ চন্দ্রের সাক্ষাৎ লাভ আজ সম্ভব নয়, তার অংশ অবলোকন করেই একটু স্বস্তিলাভ।

বিশাল আমগাছটার নিচে পার্ক করে রাখা পোর্শে ওয়ান সেভেন এইট বক্সস্টারের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রোযা নিজের ফোন ঘাটছে।গাড়িটার মডেল সে বের করেছে এই ফোন ঘেঁটেই। পোর্শে গাড়ি এমনিতেই বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।এই রেসিং মডেলের দাম বাংলাদেশী টাকায় ৫০ লাখ ৫০ হাজারের মতন!তথ্যটি উদঘাটনের পর রোযা তব্ধা খেয়ে রইলো।কোনোদিন কারো বাইক কিংবা অটোরিকশার গায়েও হেলান দেয়ার সুযোগ মেলেনি তার।আর বর্তমানে সে কিনা আধ কোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন সেই এর মালকিন! বিষয়টি উপলব্ধি করতেই রোযা আস্তে করে সরে পড়লো। পোর্শে থেকে একহাত দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো।
কিছুক্ষণ আগেই ঘূর্ণিঝড়ের অংশ দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এমন নিউজ দেখেছে রোযা।ঢাকার দিকে ধেয়ে আসতে খুব বেশি দেরী নেই।আবহাওয়ার উন্মাদনা তাই অনুভূত হচ্ছে বেশ।পায়চারি করতে থাকলো সে। পরনের খয়েরী শাড়ী আর হাতছাড়া টপে শীতল বায়ুকে ঠেকাতে সক্ষম নয়।শরীরের লোম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বায়ুর ঝটকা এলেই।

আজ একটা ক্লাব থেকে কোনো এক ইটালিয়ান শিকার পাকড়াও করতে আসমানকে সাহায্য করেছে রোযা।অবশ্যই কোনো প্রশ্নের বালাই ছিলোনা।তাদের মধ্যকার ডিলের প্রধান শর্তই ছিল বিনা প্রশ্নে আসমান যা বলবে তা করতে বাধ্য থাকবে রোযা।তবুও চিন্তা না করে সে থাকতে পারছেনা।একের পর এক মানুষকে নৃশং*সভাবে হ*ত্যা করছে আসমান।কিসের জন্য?শুধুমাত্র নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির আশায়?আসমান কি আদতেই মানসিকভাবে অসুস্থ?কিন্তু তার আচার ব্যবহারে তাকে যথেষ্ট বিচক্ষণ মনে হয়। এসবের মাধ্যমে কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছে আসমান?শুধুমাত্র খু*ন*ই নয়, তার খু*নের ধরণ অতিরিক্ত পা*শবিক। এহেন বর্ব*রতার কারণ? রোযা মিলিয়ে উঠতে পারলোনা।আসমান তার কাছে বরাবরের মতোই এক অধরা রহস্য হয়েই রইলো।

ঠিক কতক্ষন রোযা অপেক্ষা করেছে হিসাব নেই। হাতঘড়িতে বর্তমানে সময় দেখাচ্ছে ভোররাত ৩ টা ৩৫।এর মাঝে এমন এক নির্জন স্থানে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে একলা রোযা।তার সামনে খানিক অরণ্যের মতন জায়গা।তার ওপাশে খুব সম্ভবত আগে বসতি ছিলো।কোনো অবৈ*ধ কারখানা।সেখানেই টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সান্দ্রোকে।রোযা আসমানকে অনুসরণ করেনি।সে জানে আসমান কতটা নিষ্ঠুর রূপ ধারণ করতে সক্ষম।তার অস্তিত্বের সেই কদর্যতা পুনরায় উপলব্ধি করার প্রশ্নই জাগেনা।
অবশেষে রোযার অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটলো। দূর থেকে হেঁটে আসতে দেখা গেলো আসমানকে।তার অবয়ব অবলোকন করে কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে পড়লো রোযা। কালো লেদার জ্যাকেটে র*ক্তে*র ছাপ।হাতের গ্লাভসজোড়া পুরোটাই র*ক্তে চুপচুপ করছে।চাপাতি এবং ম্যাসিভ না*ইফ দুটো আলগোছে ঝুলছে।অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আসমানকে এমন রূপে পর্যবেক্ষণ করে রোযা আগের মতন হতবিহ্বল হয়ে উঠলোনা আর। এমনটিই সে আশা করেছিল, খুব একটা ব্যাতিক্রম ঘটেনি।

আসমান গাড়ির কাছে পৌঁছে নিজের গ্লাভসদুটো এক টানে খুলে ফেললো।অ*স্ত্র এবং গ্লাভস একটি প্যাকেটে ভরে গাড়ির বক্সে ফেলে রাখলো।রোযা নিঃশব্দে তাকিয়ে দেখলো শুধু তার কার্যক্রম। একটা পানির বোতল বের করে রোযার দিকে এগিয়ে দিলো আসমান।কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে সে সেটা হাতে নিলো, ইশারায় বুঝল কি করতে হবে।পানির বোতল খুলে পানি ঢালতেই আসমান নিজের হাতজোড়া থেকে র*ক্ত ধুয়ে নিল। রোযা বোতলের মুখ বন্ধ করতে করতে সে কোমরে হাত দিয়ে চারিপাশে তাকালো।যেন কি এক চিন্তায় আছে।
– স…সান্দ্রো…

মিনমিন করে বলে উঠলো রোযা।যদিও আসমান তাকে কি পরিণতি দান করেছে জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তার।তবুও অস্বস্তিকর পরিবেশটা কাটাতে চাইছে সে।আসমান রোযার দিকে ফিরলোনা।চেয়ে থাকলো আকাশের দিকে। তারপর হঠাৎ বললো,
– আপাতত বেঁচে আছে,খুব বেশিক্ষণ থাকবেনা। ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হবে।
প্রথমবারের মতন আসমানের কন্ঠে এক ধরনের তৃপ্তি প্রকাশ পেলো, নাকি রোযার ভুল ধারণা? একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।আসমানের সঙ্গে এই পথে আসার সময় যতটুকু বুঝতে পেরেছে সে যে এই জায়গাটি অত্যন্ত নির্জন এবং এক কথায় পরিত্যাক্ত।বিশেষ করে একটি ভৌতিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে এই এলাকাকে ঘিরে।মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে।কেউ ভুলক্রমে এলেও জঙ্গলের ওপাশের কারখানায় কোনোদিন হানা দেয়ার সাহস করবেনা। সান্দ্রোর মৃ*তদে*হ গ*লে প*চে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে, কেউ টেরও পাবেনা!কি ম*র্মান্তিক মৃ*ত্যু!
আসমান পিছনে ফেরায় রোযা নিজের চিন্তা থেকে বাস্তবে পদার্পণ করলো।পিশাচটির মৃদু কন্ঠস্বর ধ্বনিত হলো তার কানে,

– গুড জব টুডে।
রোযার চোয়াল ঝুলে পড়লো।নিজের শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে সে বিশ্বাস করতে পারলোনা।আসমান কি এইমাত্র তার প্রশংসা করলো?সে কি আদও ঠিক শুনেছে?সে যাই হোক, তাতে তার হঠাৎ করে এতটা ভালো লাগছে কেনো?কি আশ্চর্য!এই দানবের প্রশংসা আবার হৃদয়ে ভালো লাগা সৃষ্টির কারণ হতে পারে নাকি?হঠাৎ দমকা হাওয়ায় শিউরে উঠলো রোযা।স্মরণ হলো যে তার বাহুজোড়া উন্মুক্ত,তাতে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।রোযা নিজের শাড়ির আঁচলটি টেনে নিতে নিতে আসমান এগোলো।হতভম্ব হয়ে রোযা খেয়াল করলো আসমান নিজের জ্যাকেটের চেইনে হাত দিয়েছে।
এক মিনিট! এই ছেলে কি এখন তাকে নিজের জ্যাকেট ধার দেবে?ঠিক সিনেমা কিংবা ড্রামা সিরিজের নায়কদের মতন?রোযার হৃদস্পন্দন থমকে পড়লো।যদিও জ্যাকেটে শুষ্ক র*ক্তছোপ লেগে রয়েছে, তা যদি আসমান নিজে রোযার শরীরে জড়িয়ে দেয় তাহলে তা উপেক্ষা করা কি সম্ভব হবে তার পক্ষে?

জ্যাকেটটি অর্ধেক খুলে নিজের বাহু নড়াচড়া করলো আসমান।গরম লাগছে তার, শীতল বায়ু প্রবেশের জন্য গলা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।রোযা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল দৃশ্যটির দিকে।এতক্ষণ কি ভাবছিল সে?কি আশা করছিল? নির্ঘাত তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে! টাস করে নিজের কপালে চাপড় বসালো সে।
আসমান রোযার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই বিব্রতবোধ করে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো রোযা।কন্ঠ পরিষ্কার করে বললো,

– এখন নিশ্চয়ই বাড়িতে ফিরবো? দয়া করে বলবেন না আরো কোনো কাজ আছে।
– হুম,বাসায় ফিরবো।
বলে ড্রাইভিং সিটের দিকে এগোলো আসমান।রোযা প্যাসেঞ্জার সিটের দখল নিতে নিতে সে ইগনিশনে চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিতেই মৃদু গর্জন করে চালু হয়ে গেল দ্রুতগতির ৩০০ হর্সপাওয়ারের শক্তিশালী ইঞ্জিন।আসমান স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করতেই নিজের আসনে বসে অন্যমনস্ক হয়ে রোযা ভাবলো,
কি অবলীলায়ই না সে আসমানের বাড়িকে বর্তমানে নিজের বাড়ি বলে আখ্যায়িত করে ফেললো!
কপালে হাত ঠেকিয়ে একটি নিঃশ্বাস ফেললো রোযা।
পরদিন।

সন্ধ্যা সাতটা বিশ।ঘড়িতে সময় দেখে রোযা প্রথমে বিশ্বাসই করে উঠতে পারেনি যে এতটা সময় সে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে!আজ ভোরনাগাদ মারবেলে ফিরে সোজা নিজের কক্ষে গিয়ে বিছানায় আছড়ে পড়েছিল রোযা।এরপর আর হুশ হয়নি।কিন্তু তাতে সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো এবং সে টেরটুকুও পেলোনা এটা কেমন ব্যাপার?জীবনে প্রথম বোধ হয় টানা এতটা দীর্ঘ সময় জুড়ে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে সে।

এর পিছনে অবশ্য কিছু কারণ রয়েছে।প্রথম কারণ তার কক্ষের বিছানা বেশ আরামদায়ক।তার আগের চৌকি ছিলো আরেক পরিবারের ব্যবহৃত কম দামে কেনা জিনিস।সামান্য নড়লেই এমন শব্দ করতো যে তাতে নিদ্রায় বিপত্তি।দ্বিতীয় কারণ… এই কারণটি একটু অদ্ভুত।আসমানের সঙ্গে প্রথম নিজের চিলেকোঠার ঘরে কাটানো রাতে রোযা একবিন্দু ঘুমাতে পারেনি।কিন্তু বর্তমানে তার বাড়িতে তারই নাকের ডগায় সে আয়েশে মুহূর্তযাপন করছে।এর অর্থ হয়ত রোযা আসমানকে ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছে।যতই দানব পিশাচ হোক না কেন, রোযার সঙ্গে তার তো কোনো শত্রুতা নেই।প্রয়োজন না পড়লে কোনপ্রকার ক্ষতি করবে বলে মনে হয়না।

ক্ষুধায় পেটে মোচড় দিয়ে উঠতেই রোযা কিচেনের দিকে এগোলো।এত সংকোচের বালাই করে লাভ নেই।সুবিশাল কিচেনে প্রবেশের পর প্রথম পাঁচ মিনিট রোযা শুধুমাত্র চারিদিকে তাকিয়েই অতিবাহিত করলো।ক্রিম শেডে আচ্ছাদিত সর্ম্পূণ কিচেনজুড়ে রয়েছে কেবিনেট। দেয়ালে ঝুলন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখার তাক। ডিশওয়াশার, কফি মেশিন,ওভেন থেকে আরম্ভ করে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল বস্তুই উপস্থিত রয়েছে।এমন কিছুও রয়েছে যাদের নাম পর্যন্ত রোযা জানেনা।এই আসমান কি আদও রান্না করে?মনে তো হয়না।তাহলে এত জিনিস রাখার মানে কি?তার মতন ছেলেরা গ্রোসারি স্টোর থেকে কেনা প্যাকেটজাত খাবার কিংবা ইনস্ট্যান্ট নুডুলসের উপর ভর করে চলবে, এমনটাই স্বাভাবিক ধারণা।ভেবে রোযা ফ্রিজের দিকে গেলো।নিশ্চিত ক্যানফুড নাহয় চকলেটজাতীয় কিছু পেয়েই যাবে এমন আশা নিয়ে ফ্রিজের দরজা খুলে রোযা বরফের মতন জমে গেলো। একি!সে কি ভুল দেখছে?
সম্পূর্ণ ফ্রিজের তাকজুড়ে সজ্জিত রয়েছে শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল।ফ্রিজিং সেকশনে ক্যান ফুডের পরিবর্তে রয়েছে মাছ – মাংসের প্যাকেট। আদা রসুনবাটারও আলাদা জায়গা বিদ্যমান।রোযা হা করে তাকিয়ে রইলো। একি! এই ছেলে রান্না করে খায় নাকি?

অসম্ভব! নিশ্চয়ই রোযা এসেছে বলে কোনো এক সময় কিনে এনেছে।নাহলে হয়ত সেই ছাব্বিশ তলার চারুলতা এসে রান্না করে দিয়ে যায়। হুম,তাই হবে।নিজের মনকে বুঝ দিয়ে যেই না ফ্রিজের দরজা আটকে পাশে ফিরল রোযা, অমনি বিপরীত প্রান্তে কেবিনেটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আসমানকে খেয়াল করে আতকে উঠলো সে। কিছুক্ষণের জন্য ভয়ই পেয়ে গিয়েছিল এমন অতর্কিত আগমনে।কিন্তু আসমান এলো কখন?রোযা অনুধাবনও করলোনা।
রোযা বিব্রতবোধ করে সরে যেতেই আসমান এগিয়ে ফ্রিজ খুললো।নিচের চেম্বার থেকে একটি আপেল বের করে রোযার দিকে ছুঁড়ে দিলো।

– আপাতত এটা খান।আমি কিছু রান্না করছি।
আপেলটা ক্যাচ ধরে ফ্যালফ্যাল করে আসমানের দিকে তাকিয়ে রইলো রোযা।
– আপ….আপনি?রান্না করবেন? আপনি নিজে?
রোযার প্রশ্নে আশেপাশে তাকালো আসমান।
– আমি ছাড়া আর কেউ আপনার সামনে আছে কি?
– না মানে…

ঢোক গিলে চুপ করে গেলো রোযা।আসমান তার প্রতি খুব একটা আগ্রহ প্রদর্শন করলোনা।পরিধানের হুডির উপর জড়িয়ে নিলো কিচেন অ্যাপ্রোন। হাতা গুটিয়ে উন্মুক্ত করে নিলো লম্বাটে আঙুল সম্বলিত হাতজোড়া।অপরদিকে রোযা দেয়ালের কেবিনেটের উপর নিজেকে টেনে তুলে আপেলে কামড় দিতে দিতে অত্যন্ত মনোযোগী ভঙ্গিতে আসমানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।যেন এই ছেলে তার খাবারে কিছু উলটপালট মেশাতে না পারে… হ্যাঁ তাই!এমন নিবিড় পর্যবেক্ষণের এমন উদ্ভট অজুহাতই দাড় করালো রোযা।
কি রাঁধবে এই ছেলে? মা*নুষের মাং*সে*র বিরিয়ানি?র*ক্তে*র ড্রেসিংয়ের সালাদ?কিংবা হাড়গো*ড়ের নেহারী?মনে মনে বিনোদনের জন্য প্রস্তুত হলো রোযা।কিন্তু তাকে পুনরায় বিস্ময়ের সপ্তম পর্যায়ে ঠেলে দিলো আসমান নামক এই পুরুষ।

ডার্কসাইড পর্ব ৮

প্যাকেট থেকে স্প্যাগেটি বের করে সিদ্ধ হতে দিলো আসমান। গাজর, ক্যাপসিকাম, মাশরুম এবং হোয়াইট অনিয়ন নিলো ফ্রিজ থেকে।সিংকে খোসা ছাড়িয়ে ভালোমত ধুয়ে নিলো সবজি। ছু*রি তুলে চপিং বোর্ডের উপর পিঁয়াজ রেখে অভিজ্ঞ ভঙ্গিতে কাটতে লাগলো সে।কাঠের বোর্ডের টাক টাক শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো সমস্ত রান্নাঘরজুড়ে। রোযা শুধু নিষ্পলক চোখে দেখেই গেলো।যেন ইউটিউব ভিডিওর কোনো শেফকে দেখছে সে এমন অনুভূতি হচ্ছে।

ডার্কসাইড পর্ব ১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here