ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ১৮
অবন্তিকা তৃপ্তি
শাহরিয়ার সিদ্দিক কাব্য প্রায় ছয় মাস পর আজ মহাখালীর বাড়িতে ফিরবে। সিদ্দিক বাড়িতে সেই উপলক্ষে আজ ভীষণ হইচই চলছে। কাব্যের মা শামিমা ছেলের জন্যে সেই সকাল থেকে রান্নাঘরে কাব্যের পছন্দের বিভিন্ন খাবারের আইটেম রান্না করে যাচ্ছেন। ডেজার্ট হিসেবে কাব্য পুডিং বড্ড ভালোবাসে: সেটাও এক ফাকে ওভেনে করে নিচ্ছেন। কাব্যের চাচিরাও কম না কোনোদিক থেকে। এই যে কবিতা,উনি আজ কাব্যের জন্যে ওর পছন্দের গলদা চিংড়ি রাঁধছেন; কাব্যটার ভীষন পছন্দ কবিতার হাতের এই চিংড়ির ঝোল! তারপর প্রেমাও সেই সকাল থেকে আলুর সিঙারা বানাচ্ছেন ঘরে; ছেলেটা এটাও ভীষণ খায়।
বলা যায়, সিদ্দিক বাড়িতে ভীষন ‘বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরবে’ বলে— একপ্রকার হুলুস্থুল কাণ্ড চলছে।
সবার এত হাসি-খুশি; হইচইয়ের মধ্যে ওদিকে কুহু এবং সাদাতের মধ্যে চলছে একটা গোপন একটা সংঘর্ষ! এই তো কুহু আজ প্রায় ছয়দিন ধরে ওর আব্বুর সাথে কথা-টথা বলে না। মূলত এর পেছনে কারণ হচ্ছে; সাদাত এবার কুহুকে সাফসাফ জানিয়েছেন— কুহু এইবার ভার্সিটি হিসেবে সাভারের ড্যাফোডিলেই ভর্তি হতে হবে। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা থেকে দূরে কোথাও চান্স পেলে সাদাত-কবিতাকে দেখবে কে? মেয়ে তো একটাই উনাদের! যার মুখের দিকে চেয়ে সাদাত-কবিতা বেচে আছেন এখনো। কুহু দূরে সরে গেলে— উনাদের কি হবে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ওদিকে কুহু সাদাতের এই হঠকারিতার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। কারণ; ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে স্বয়ং কাব্য ভাই পড়াশোনা করেন। কাব্য ভাই যেখানে পড়েন; সেখানে কুহুও যাবে? ঊর্মি আপু- কাব্য ভাই রোজ ক্যাম্পাসে প্রেম করে বেড়াবেন, এসব কি এবার থেকে কুহুকেও নিজের চোখে দেখা লাগবে? মুখের আঘাত; একের পর এক মেসেজে পাঠানো ছবির আঘাত কি কম পরে গেছিলো কুহুকে ব্যথা দেবার জন্যে?
কাব্য ভাইয়ের সাথে একই ক্যাম্পাসে কুহুও পড়াশোনা শুরু করলে— রোজ কাব্য ভাইয়ের সঙ্গে কুহুর দেখা হবে: সিনিয়র হিসেবে কুহুর তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা লাগবে; এবং সেটা কুহু চাইছে না একদমই। মনেমনে হয়তবা এখনো ভীষণ ভয় হয় কুহুর, যার থেকে ছয়-ছয়টা মাস পালিয়ে বেড়ালো— তার কাছেই ও ফিরে যাবে আবার? তার মুখোমুখি হলে; কুহু নিজেকে আবার সামলাতে পারবে? সম্ভব হবে সেটা?
কুহুকে ভীষণ অস্থির দেখাচ্ছে; ওর মাথা ঠিকঠাক কাজ করছে না; হ্যাং করছে বারবার। তার ফলস্বরূপ কুহু গতকাল থেকে সাদাতের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। সাদাত মেয়েকে ফল খেতে ডাকেন; চকলেট কিনে এনে ডাকেন— মেয়ে তো তার এত ডাকাডাকির জবাবটুকুও দেয়না। ঘুমের ভান করে রুমে দরজা আটকে পরে থাকে। ওদিকে সাদাতও এইবার কুহুর এই রাগ; অভিমানকে লাই দিতে চাইছেন না। নিজেও আছেন শক্ত অবস্থানে;একমাত্র মেয়ের বিরুদ্ধে।
সাদাতের মতে, কুহুর মানসিক অবস্থা এখনও স্ট্যাবল না। কখন কি করে বসে; কোনো ঠিক নেই সেটাই। সেবার তো একই বাড়িতে উনারা থাকা স্বত্বেও কতবড় অঘটনটা ঘটিয়ে ফেলল, সেদিন কবিতা না দেখতে পেলে— আজ কি হতো? কথাটা এখনো মনে পড়লে গা কেপে উঠে সাদাতের, পশম দাড়িয়ে যায় সমস্ত শরীরের।
আর সেই কুহুকে দূরে পড়তে পাঠালে; সারাক্ষণ ওদের জান হাতে নিয়ে বসে থাকতে হবে। সারাক্ষণ এই চিন্তায় ঘুম হবে না যে— কুহু এখন কি করছে: সেইফ আছে কি না: আবার কোনো রুমের কোনায় বসে কান্না করছে কি না। তার চেয়ে কাব্যের সাথে ওর ভার্সিটিতে পড়াশোনা করুক। কাব্য তো সাথেই থাকবে; দেখেশুনে রাখবে নাহয়। তাই এবার সাদাতও নিজের সিদ্ধান্তে অটল; মেয়েকে প্রশ্রয় দেবার কোনো ইচ্ছে উনার নেই।
কবিতা মাত্রই রান্না শেষ করলেন। কাব্যের জন্যে করে রাখা গলদা চিংড়ি একটা বক্সে সুন্দর করে তুলে রাখলেন; এটা এখন পাঠাতে হবে কাব্যদের ফ্ল্যাটে! কবিতা ঘামে ভেজা মুখখানি আঁচলে মুছতে মুছতে নিজেদের বেডরুমে এলেন। সাদাত সবেই নিজেদের রেস্টুরেন্টের কাজ শেষ করে ঘরে এসেছেন। এসেই সবার আগে ফ্রেশ হয়ে ঘরদোরে কুহুর সার্টিফিকেটের সব কাগজ-পত্র খুলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বের করছেন।
কবিতা কুহুর সার্টিফিকেটসমুহ দেখলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখটা ভার করে এসে স্বামীর পাশটায় বসলেন। কবিতার উপস্থিতি অনুভব করে সাদাত পেপার্স বের করতে করতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন——-‘কুহুর জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল করানো আছে? থাকলে দাও তো ওটা।’
কবিতা চুপচাপ আলমারি থেকে কাগজ ওটা বের করে স্বামীর হাতে দিতে দিতে বললেন——‘আরেকবার ভাবলে হতো না? কুহু তো রাজি না।’
সাদাত পেপার্স নিয়ে ঘাটানো থামিয়ে ফেললেন এ কথায়; পরপর চোখ গরম করে কবিতার দিকে তাকালেন। কবিতা ওই তাকানো দেখে ঢোক গিলে কিছুটা মিনমিন করে জবাবে বললেন ——‘গতকালও আমাকে ধরে প্রায় কান্নায় করে দিচ্ছিলো কুহু। ওর কথা ভেবেই—-‘
সাদাত এই এক ব্যাপারে কুহুর পক্ষ নিয়ে স্ত্রীর এমন আজগুবি কথা শুনতে শুনতে অসম্ভব বিরক্ত! উনি চোখ সরিয়ে আবার ব্যস্ত ভঙ্গিতে কুহুর ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নিয়ে ফাইলে ঢুকাতে ঢুকাতে বলতে লাগলেন——-‘আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি কবিতা। তোমার মেয়েকে এটা জানিয়ে দিয়ো। আগামীকাল কাব্যের সঙ্গে ও কাব্যের ভার্সিটি যাচ্ছে, ভর্তি করে দিবে ওকে কাব্য। আমার আগামীকাল কাজ আছে একটু, তাই যেতে পারছি না। নাহলে আমি নিজেই গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিতাম।’
কবিতা চুপ করে শুনলেন শুধু।পরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়িয়ে বারান্দা থেজে শুকনো কাপড় এনে ভাঁজ করা শুরু করলেন। সাদাত কাজ করতে করতে স্ত্রীর শুকনো মুখটুকু দেখেন। কবিতার মনটা পুড়ছে মেয়ের জন্যে; জানেন সেটা সাদাত। কুহু জন্মের পর সাদাত জানেন— কবিতা মা হিসেবে ঠিক কতটা খুশি হয়েছিল। একটা মানুষকে দুনিয়ার সবটা ধন-রত্ন এনে দিলেও ততটা খুশি হতো না; যতটা খুশি কবিতা কুহুকে কোলে নিয়ে হয়েছিল। সাদাত মেয়ের বাবা হলেও; কুহুর আজ অব্দি সকল ভালো-মন্দ কবিতা নিজে হাতে সামাল দেয়। কখনো সেই কাজে আটকে গেলে; কবিতা অস্থির হয়ে স্বামীর বুকে ঝাপটে পরে কেদে ভাসান! কুহুকে বকা দেওয়া যেত না কখনো কবিতার কারণে! কবিতা মেয়েকে কেউ বকা দিলে মনটা খারাপ করে বসে থাকতেন। সাদাত বকা দিলে সাদাতের সঙ্গে তো দুদিন কথাই বন্ধ করে দিতেন।
আর আজ কুহুর বিরুদ্ধে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে কুহুর চেয়ে বেশি কবিতার কষ্ট হচ্ছে— জানেন সাদাত সেটা: বুঝেনও।
সাদাত ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাইল রেখে উঠে এসে স্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন। তারপর কবিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েই; কোনিটা কাপড় হাতে চুপচাপ চোখ-দুটো নামিয়ে রাখলেন; তাকালেন না স্বামীর দিকে একবারের জন্যে।
সাদাত স্ত্রীর দু কাঁধে হাত রেখে বলতে থাকেন——‘টেনশন কেন নিচ্ছো কবিতা। মেয়ের ভালো আমরা চাইতে পারি না? কুহু সেইফ থাকবে এভাবে। দূরে পাঠালে। না তুমি শান্তিতে থাকবে না আমি পারব। তাই যা হচ্ছে মেনে নাও: মেয়েকেও বুঝাও। পারবে না মেয়ের ভালোর জন্যে একটু কঠিন হতে, আমাকে বিশ্বাস কর?’
কবিতা সাথেসাথে সাদাতের ঠোঁটে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে ধরা গলায় বললেন——-‘বিশ্বাস করি আমি আপনাকে, নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। তাই ওমন করে বলবেন না দয়া করে।’
সাদাত হালকা হেসে মাথা নাড়লেন।কবিতা সাদাতের মুখ থেকে হাত নামিয়ে নিলেন। সাদাত আলতো করে স্ত্রীর কপালে ছোট করে একটা চুমু খেয়ে আবার হেটে কুহুর ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
স্বামীর চুমুতেই ঘায়েল কবিতা এবার মৃদু হেসে এগিয়ে গেলেন মেয়ের ঘরের দিকে। কাব্যের জন্যে গলদা চিংড়ি রেধেছেন; ওটা দিয়ে আসুক গিয়ে কুহু।
কবিতা কুহুর ঘরে গিয়ে দেখেন কুহু কোলবালিশ নিয়ে ঘুমাচ্ছে। কবিতা ভ্রু কুচকান— সত্যি কি কুহু ঘুমাচ্ছে? নাকি ভান করছে?
যেমন ভেবেছেন তেমনি হয়েছে। কবিতা সামনে গিয়ে দেখেন— কুহু ঘুমাচ্ছে না; বরং চুপচাপ চোখ খোলা অবস্থাতে শুয়ে আছে— ভাবছে একা একা কিছু একটা নিয়ে। কবিতা ছোট শ্বাস ফেললেন। মেয়েটা আজকাল এত চুপচাপ হয়ে গেছে। ভালো লাগে না কবিতার আর এই অশান্তি!
কবিতা আলগোছে মেয়ের মাথার কাছটায় বসলেন। কুহু তাকে দেখতে পেয়ে চুপ করে বালিশ থেকে মাথা তুলে মায়ের কোলে মাথা রেখে আবার কোলবালিশ চেপে শুয়ে পড়ল। কবিতা হাসতে হাসতে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেব——-‘আব্বুর উপর কি এখনো রাগ আছে আমার মেয়ের?’
কুহু কেবল নিষ্প্রাণ গলায় জবাবে বলল——‘হু!’
কবিতা মৃদু হেসে মেয়ের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বোঝালেন মেয়েকে—-‘ভালো মেয়েরা বাবা-মায়ের উপর রাগ করে না কুহু।
তোমার আব্বু কিন্তু কষ্ট পাচ্ছেন। তাকে কেন কষ্ট দিচ্ছো তুমি এইভাবে? কতবার তোমাকে ডাকলেন মানুষটা; জবাব অব্দি দিলে না; ব্যাড ম্যানার কিন্তু এটা।’
কুহু কবিতার কোলে মাথা রেখে মায়ের দিকে মাথাটা ঘুরিয়ে চোখ তুলে তাকাল; চোখে চোখ রেখে কেমন ধরা গলায় আবারও অনুরোধ করে বললো—-—-‘আমি ড্যাফোডিলে ভর্তি হবো না আম্মু। প্লিজ!’
কুহু প্রায় কাঁদোকাদো হয়েই বললো কথাটা। কবিতা বোধহয় আবার গলে যাচ্ছেন। মেয়েটা কাঁদছে তার? কোথায় যাবেন এবার কবিতা? একদিকে স্বামীর আবদার অন্যদিকে একমাত্র মেয়ের অনুরোধ! দুটোই যে গুরুত্বপূর্ণ কবিতার কাছে। কাকে কি বোঝাবেন উনি?
কবিতা স্বামীর কথা মাথায় আনেন। মনে পড়ে সাদাতের একটা কথা——-‘মেয়ের ভালোর জন্যে একটু কঠিন হতে পারবে না কবিতা?’
কবিতা সঙ্গেসঙ্গে উত্তর পেয়ে গেলেন। উনি ছোট শ্বাস ফেলে মেয়ের ঘন ছোট কাঁধ সমান চুলে উনার নরম হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বোঝালেন—-‘তোমার আব্বু আমার কথাও তো শুনছেন না এইবার। তোমাকে চোখের সামনে না দেখতে পেলে ওই মানুষ পাগল হয়ে যাবে মা। বুঝো উনাকে। তুমি আমাদের না বুঝলে আর কে বুঝবে? কটা বাচ্চা আমাদের বলো!’
কুহু চুপচাপ কোলবালিশ চেপে শুয়ে থাকল; মায়ের কথাটা কতটা ওর কানে গেল কে জানে! কবিতা এইবার হালকা হেসে মাথাটা ঝুঁকে মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললেন——-‘আমাদের তো এইটাই একমাত্র বাচ্চা; আমাদের একটামাত্র কুহু; রাইট আম্মু?’
কুহু চুপচাপ মায়ের আদরটুকু নিলো; কোনো কথা বলার বাহানা পেল না আর। কবিতা কখনো কুহুর কোনো অনুরোধ ফেলেন নি; আজ ফেলছেন। অর্থাৎ কুহু বুঝে গেছে— আর যাই হয়ে যাক; ওকে ড্যাফোডিলেই ভর্তি হতেই হবে। ওর হাতে আর কোনো পথ খোলা নেই।
কবিতা এইবার কুহুকে তাড়া দিতে লাগলেন———-‘এখন উঠো জলদি। কাব্যের জন্যে চিংড়ি করেছিলাম। কায়া তো বাড়ি নেই। তুমি গিয়ে ওটা দিয়ে আসো একটু। উঠো উঠো!’
বলে কবিতা কুহুর মাথা কোল থেকে নামিয়ে উঠে শাড়ি ঠিক করছেন। কাব্যের বাসায় যাবে শুনেই কুহু ভ্রু কুচকালো; সঙ্গেসঙ্গে তাড়াহুড়ো করে বললো ——-‘আমি কাব্য ভাইয়ের ফ্ল্যাটে যাবো না আম্মু।’
পরমুহূর্তেই কবিতার কুঁচকানো ভ্রু দেখে থেমে গেল কুহু। কবিতা এইবার কেন যেন সন্দেহ করলেন; বললেন——‘কেন যাবে না? কাব্যের সঙ্গে কি হয়েছে তোমার আমাকে সত্যি করে বলো তো। কাব্যকে তো তুমি অনেক মানতে: কিন্তু গত ছয়মাসে তোmart আচরণ ওর প্রতি এমন কেন হয়ে যাচ্ছে? এটা বেয়াদবি কুহু। আমাদের মেয়ে আর যাই হোক— বেয়াদব না;রাইট?’
কবিতা ভ্রু কুচকে ঠান্ডা গলায় মেয়েকে শাসিয়ে গেলেন। কুহু জবাবে চুপ থাকলো শুধু। কবিতাকে কি করে বোঝাবে কুহু— কাব্যের সঙ্গে ওর সম্পর্কের তিক্ততা ঠিক কতটুকু!
কবিতা আবার তাড়া দিয়ে ফের চলে গেলেন রান্নাঘরে। উনি যেতেই কুহু দ্রুত শার্লিনকে কল লাগালো। ওপাশে শার্লিন কল রিসিভ করলে কুহু ফরফর করে বলে গেল——-‘আম্মু আমাকে কাব্য ভাইয়ের ঘরে পাঠাতে চাইছেন। কিন্তু আজ কাব্য ভাই বাড়ি আসছেন। যদি দেখা হয়ে যায়?’
শার্লিন সবেই বিছানায় বসেছিল। কুহুর কথা শুনে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই জবাব দিল——-‘দেখা হলে হবে। এখানে সমস্যা কি?’
কুহু ভ্রু বাকালো, বললো———‘তোর মনে হয় আমি তাকে সামলে দেখতে পেলে স্বাভাবিক থাকতে পারবো? আমার রাগ উঠে যাবে শার্লিন; খু-ন করেও ফেলতে পারি আমি তাকে— বিশ্বাস কর।’
শার্লিন হামি ছেড়ে স্রেফ বলল——-‘পারবি তুই, তোর এই জেদ তোর শক্তি! যা এখন; উনার সাথে দেখা কর; ফেইস কর তাকে। ফেইস করতে পারলেই আমি বুঝবো তুই নিজেকে কেমন বদলে ফেলেছিস।’
কুহু শুনে অবাক হয়ে বলল——-‘তুই এখনো বিশ্বাস করিস আমি কাব্য ভাইয়ের এখনো দুর্বল আছি?’
শার্লিন ভ্রু নাচিয়ে; স্বাভাবিক গলায় বলল——-‘হ্যাঁ বিশ্বাস করি। এখন তুই দুর্বল না হলে সেটা প্রুভ দে আমাকে। যা আজ; উনার সাথে সামনাসামনি ফেইস কর। একই বাড়িতে থাকিস তোরা কুহু; এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে রাখতে পারবি নিজেকে? যেটা একদিন হবে: সেটা নাহয় আজই হোক!’
কুহু শার্লিনের কথা শুনে রাগ হলো ভীষণ। শার্লিনের ওর প্রতি এমন অপবাদ ওর জেদকে আরো তরতর করে বাড়িয়ে দিল। কুহু দাতে দাঁত পিসে বলল——‘ঠিকাছে আমি যাব। তোর প্রুভ চাইতো; দিব আমি প্রুভ! এখন রাখ ফোন।’
‘ওকে!’ —-শার্লিন টুক করে ফোনটা কেটে দিল।
কুহুর জেদ হলো ভীষন! ও কাব্য ভাইয়ের যেখানে ছায়াও মারাতে ইচ্ছুক না আর: সেখানে শার্লিন ওকে সন্দেহ করছে? প্রুভ চাইছে ওর থেকে? এই শার্লিনকে এখন কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে কুহুর।ওকে, ডান! দিবে কুহু ওকে প্রুভ। আজকেই দিবে; এক্ষুনি দিবে।’
কুহু উঠে ওড়না হাতে তুলে সেটা গায়ে জড়ালো। তারপর কবিতার দেওয়া গলদা চিংড়ি নিয়ে চললো শামিমাদের ফ্ল্যাটে!
দরজায় কলিং বেল দিলে: শামিমা এসে দরজা খুলে দিলেন। এতক্ষণ রান্নাঘরে থেকে ঘামে ভিজে গেছেন শামিমা; ক্লান্তি চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে।
অথচ উনি কুহুকে দেখেই আদরে গদগদ হয়ে দ্রুত ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলেন; আহ্লাদ নিয়ে বলেন——-‘কেমন আছিস রে কুহু।কতদিন পর এলি।’
কুহুর যে রাগ নিয়ে এসেছিল এই ফ্ল্যাটে; শামিমার আহ্লাদে সেই রাগ ধুয়েমুছে কেন যেন সাফ হয়ে গেল। কুহুও হালকা হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরল একহাতে।ভাবে ও—একটা মানুষের জন্যে কুহু ওর আশেপাশের কতগুলো আদরের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, এটা ভেবেই নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে এখন ওর ভীষণ। শামিমা কুহুকে ছেড়ে দিয়ে বললেন——-‘আয়, আয়! ভেতরে আয়।’
কুহু চুপচাপ খবরের বক্স নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সবার আগে ওর চোখ গেল কাব্যের রুমের দিকে! রুমের দরজা আটকানো। আচ্ছা, কাব্য ভাই কি বাসায়? কুহুর বুকটা হঠাৎ কেন যেন ধকধক করছে। কতটা মাস পরে তার দেখা পাবে কুহু। দুজনের দেখা হবে, যা হওয়া উচিত নাই একদমই!
কুহুর সামনে ওই পাষাণ লোকটা এলে কুহু মেজাজ ঠিক রাখতে পারবে না আজ মোটেও। ওই স্বার্থপর লোকটা আজ কুহুর সামনে না আসুক: একবারের জন্যেও তার চোখে চোখ না মিলুক; না মিলুল; না মিলু—-‘
বাকিটা শেষ করার আগে রান্নাঘর থেকে শামিমা চেচালেন——-‘কুহু, স্টোররুম থেকে একটা বড় হাড়ি আছে: ওটা নিয়ে আয় না একটু মা।’
কুহুর ভাবনায় ছেদ ঘটল। ও নিজেকে শক্ত করল— আজ ওই মানুষটা ওকে একবার কিছু বলে দেখুন না— কুহু কুরুক্ষেত্র করে দিবে এই বাড়ি। একবার সামনে এসে দাঁড়ালে কুহু ফিরেও তাকাবে না। আগের দিন বাঘে খেয়েছে।কুহুও এখন আগের মতো নিজের সময় অপচয় করে ওই লোকের আগেপিছে ঘুরবে না, অনেক হয়েছে।
কুহু জবাবে শামিমাকে বলল—-‘আনছি বড়মা।’
বলে কুহু আরো একবার সতর্ক চোখে কাব্যের রুমের দিকে নজর দিয়ে এগুলো স্টোররুমের দিকে।
রুমে ঢুকেই নাক-মুখ কুচকে মুখে-নাকে ওড়না চাপলো কুহু। পুরো রুমে ভোটকা একটা গন্ধ। তারউপর আলু-পেঁয়াজ-রসুন একপাশে রাখার ফলে সেটা থেকেও গন্ধ বেরুচ্ছে। কুহু নাকে ওড়না চেপে আশপাশ খুঁজলো; কোথায় রেখেছেন বড়মা হাড়িগুলো?
হঠাৎ উপরে দেখলো কুহু; ওই তো রাখা আছে সব হাড়ি! কুহু স্টোর রুম থেকে চেঁচিয়ে বলল——-‘বড় না; টুল লাগবে তো।’
শামিমা রান্নাঘর থেকে বললেন——-‘আমার রুমে আছে টুল। নিয়ে আয় না মা।’
কুহু কি করবে আর? চুপচাপ শামিমার রুমে একটা টুল যা পেল সেটাই নিয়ে এলো। স্টোর রুমে টুলটার উপর দাড়িয়ে ও অনুভব করলো— টুলটা ভীষণ নরম; যেকোনো মুহূর্তে কুহুর ভারে ভেঙ্গে পড়বে বুঝি।
কুহু যতবার এটার উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে— ততবার টুলটা নড়ে নড়ে উঠছে। এখন তো কুহু এটাতে উঠবে কিনা সেটাই ভাবছে। পরমুহূর্তে আবার ভাবলো— এক মিনিটে হাড়ি নিয়েই নেমে যাবে— টুলটা ভাঙার আগেই।
যেই ভাবা সেই কাজ। চুপচাপ; অতি সাবধানে কুহু টুলে উঠে দাঁড়াল। ইস; এখনো ভীষন নড়ছে এটা: এবার ভেঙ্গে পরে মা গেলেই হলো।
কুহু এবার হাড়ি খুঁজতে গিয়া ঘটল আরেক বিপত্তি। বড় হাড়ি একদন ভেতরের দিকে ঠেসে রেখেছেন শামিমা। কুহু ছোট হাড়িগুলো তাই সরাতে লাগল একের পর এক। নাকে ক্রমাগত ডাস্ট ঢুকছে; আর সেটার জন্যে ও হাঁচি দিচ্ছে একটার পর একটা। ওদিকে একটু পর পর হাঁচির তালে কুহুর টুল নড়ে উঠছে বারবার। কুহু কয়েকবার সতর্ক চোখে টুলটা দেখছে! এটা কি ভেঙ্গে যাবে নাকি এক্ষুনি? আল্লাহ, না ভাঙ্গে যেন। কুহু আল্লাহ আল্লাহ করে হাড়ি খুঁজছে; ওদিকে হাচি দিতে দিয়ে অবস্থা কাহিল ওর।
কাব্য গোসল করে সবে রুম থেকে বেরিয়েছিল,গায়ে শুধু একটা ট্রাউজার; উপরে টিশার্ট-শার্ট কিছুই নেই। ডাইনিং রুমে পানি খাবে বলে এসেছিল ও। স্টোর রুম থেকে একটা পর একটা হাঁচির শব্দে কাব্য ভ্রু কুঁচকালো। স্টোর রুম থেকে আসছে না আওয়াজটা.. .
পরমুহূর্তে মেজাজটাই গরম হয়ে গেল কাব্যের। মা-কে কতবার বলেছে কাব্য— স্টোর রুমে না যেতে। কত ময়লা ওইখানে: ডাস্ট এলার্জি আছে এই নারীর— এটা আর ঠিক কতবার বোঝাবে কাব্য।
বিরক্ত ভঙ্গিতে কাব্য সেভাবেই পানির গ্লাস রেখে স্টোর রুমের দিকে এগুলো। আর তখুনি বিপত্তি ঘটল। কুহুর টুলটার একটা পায়া ঠাস করে হঠাৎ ভেঙ্গে গেল। কাব্য ঠিক সেসময়েই স্টোর রুমে এলো। কুহুও তখন একটা হাড়ি হাতেসমেত ঠাস করে পরে গেল টুল থেকে।
কাব্য সেটা দেখামাত্রই বড়বড় চোখে দৌড়ে এলো——‘সাবধানে..!’
আচমকা এমন একটা অঘটনে কুহু তো চোখ-মুখ খিছে ভেবেই নিয়েছে— ওর হাড়-হাড্ডি আজ নাই হয়ে যাবে ভেঙ্গেচুড়ে! কিন্তু পরমুহূর্তে দুটো শক্ত হাত যখন কুহু নিজের কোমরে অনুভব করল; ধীরে ধীরে সাহস করে কুহু ওর চোখ দুটো খুললো!
তারপর.. . কুহুর চোখ-দুটো চোখের সামনে কাব্যের অবাক-ভয়ার্ত ভরা দু চোখ ভেসে উঠল! কাব্যের হাতদুটো তখনো সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরেছে কুহুর সরু-নির্মেদ কোমরখানা। কুহুর দুহাত কাব্যের নগ্ন কাঁধ আতঙ্কে চেপে ধরে রেখেছে। কুহু তাকিয়ে রইল;কেমন যেন!
কুহুর চোখ-দুটো যেন কারবালার প্রান্তরের তৃষ্ণার্ত এক যোদ্ধার মতো! ওর চোখ দেবে রইলো কাব্যের দুই গাঢ় চোখে! কুহু হুশ খুইয়ে তাকিয়েই রইল; অপলক, আমরণ; পিপাসায় ডুবে।
কিন্তু যখন কাব্য হঠাৎ কিছুটা ধমকেই বলে উঠলো——-‘ভাঙা টুলে কোন পাগলে উঠে কুহু? এখন যদি পড়ে যেতি; কোমরটা ভাঙতো তো এখুনি।’
কাব্যের গলার সেই অতি-পরিচিত আওয়াজে কুহুর ধ্যান ফিরল তখুনি। একে একে মনে পরে গেল— কাব্যের বেইমানি; ওর সঙ্গে স্বার্থপরতা করা: কুহুর হৃদয় টুকরা টুকরো করে ভাঙা— ছয় মাসের পুরনো জীবনের একেকটা কালো-বেদনাদায়ক সবটুকু অধ্যায়!
কুহুর চোখের ভাষা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। মায়াবী দুই চোখে ধীরে ধীরে ভর করতে লাগল অপরিসীম রাগ-জেদ-ঘেন্না!
কুহুর নরম দিল, যা কাব্যকে এত মাস পরে দেখে নরম হয়ে গেছিল; তা আবার কঠিন হয়ে এলো।
কুহু হঠাৎ নিজেকে সামলে রাগের মাথাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো কাব্যকে নিজের থেকে। আচমকা ধাক্কায় হঠাৎ দু পা পিছিয়ে কুহুর দিকে অবাক চোখে তাকালো কাব্য। কাব্যের তখন হঠাৎ চোখ গেল কুহুর চুলের দিলে। কুহু কবে টম বয়দের মতো চুল কাটা শুরু করেছে? ওকে তো আগে এভাবে কোনদিন দেখা হয়নি। কাব্য ট্রেনিংয়ে যাবার পর থেকেই কি এমন হেয়ার কাট দেওয়া শুরু করেছে কুহু? কার থেকে শিখে করছে এই কাট? অতি বিশ্রী লাগছে কুহুকে এই হেয়ার কাটিং-এ কাব্যের কাছে।
কাব্য তাই সেটা বলতেও গেল——-‘কুহু তুই এই হেয়ার কাটটা. .!’
বাকিটা শেষ করার আগেই কুহু কাপতে কাপতে ও কোনরকমে মেঝে থেকে হাড়িটা নিয়ে নিলো; তারপর কাব্যকে পাশ কাটয়ে হনহনিয়েশামিমার কাছে চলে এলো। কাব্য পেছন থেকে হাত উঁচিয়ে একবার ডাকতে গেলো—-‘ক…কুহু!’
কুহু জবাব দিল না। ও এই মানুষটার সঙ্গে একটা কথাও বলতে চায়না। মুখটুকু অব্দি দেখতে চায়না এই লোকের। তারপরেও এই লোক কুহুর সামনে কেন এলো? কেন স্পর্শ করলোওকে? কোন অধিকারে? কুহুর হৃদয় ভাঙার পর; কুহুজে ওভাবে ভেঙ্গেচুড়ে দেবার পর এই লোকের সবটুকু অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে কুহু, কিচ্ছু বাকি রাখেনি আর. . কিচ্ছু না।
কুহু হনহনিয়ে শামিমার কাছে গেল। কাব্যও রুম থেকে সাদা রঙের টিশার্ট একটা পরে পেছন পেছন এলো— হয়তো ও ভীষণ অবাক হচ্ছে কুহুর এই পরিবর্তনটুকু দেখে। এতদিন তানিম বলত কুহুর এসব পরিবর্তনের কথা। কাব্য পাত্তা দেয়নি তখন তনিজের কথা। কারণ তখনো নিজের চোখে দেখা হয়নি যে কুহুর এই পরবর্তন।কিন্তু এখন. . . চঞ্চল কুহু থেকে এই কঠিন রণচণ্ডী কুহুর জার্নি কাব্যকে রীতিমত হতবিহ্বল করে রেখে দিয়েছে! এ কোন কুহুকে ও দেখছে— নিজেরই তো বিশ্বাস হচ্ছে না কাব্যের।কুহু কবে এতটা. . .!
কুহু হাড়িটা শামিমার পাশে ঠাস করে রাখল।কাব্য হাড়ি রাখার শব্দে কানে আঙুল চেপে ধরল; কানে এত জোরে লাগলো আওয়াজটা! যেন কাব্যকেই হাড়িটা দিয়ে আঘাতটা করলো কুহু!
শামিমা মাংস কষাচ্ছেন। কুহুকে দেখে বললেন——-‘হাড়িটা পেলি শেষ অব্দি; দে আমাকে।’
বলে শামিমা কুহুর কাছ থেকে হাঁড়ি ধোয়ার জন্যে নিবেন; কুহু আচমকা বলে উঠল———‘বাড়িতে হেক্সিসল আছে বড়মা?’
শামিমা হাড়ি ধুতে ধুতে জবাবে বললেন——-‘আছে; ড্রইং রুমে দেখ তো। গতকালই ওখানে রেখেছি। ড্রইং রুমের টিভির ড্রয়ারে আছে।’
কুহু রান্নাঘর থেকে বেরুলে: কাব্যকে দেখে সামনে দাঁড়ানো। কাব্য ভ্রু কুচকে কুহুর একেকটা কাজ তীক্ষ্ম নজরে দেখছিলো তখনো! কি করতে চাইছে এই মেয়ে— ভেবে পাচ্ছে না মূলত কাব্য!
কুহু কাব্যকে একবার দেখলো; কাব্যও তাকিয়ে ছিলো তখন। কুহু কিছু বলল না; কিচ্ছু নাহ! চুপচাপ কাব্যকে পাশ কাটিয়ে ড্রইং রুমে গেল।কাব্য ডাইনিং রুমে বুকে আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কুহুর কাজ দেখছে চুপচাপ।
তারপর কুহু যা করল— ড্রইং রুম থেকে হেক্সিসলের বোতল বের করে সেটা পাগলের মতো স্প্রে করতে লাগলো জামার উপর দিয়েই কোমরের কাব্যের স্পর্শ করা স্থানে।
কাব্য এইবার হা হয়ে গেল রীতিমত! কুহু হেক্সিসল পাগলের মতো স্প্রে করে ঘষতে লাগল নিজের কোমরের জামা! জামাটা হেক্সিসলের কারণে ভিজে যাচ্ছে একদম, কুহুর ওদিকে হুশ-জ্ঞান নেই। ও কাব্যকে একবার দেখে; টলমলে অথচ ভয়ানক জেদী চোখে দাঁত কামড়ে হেক্সিসল দিয়ে কতক্ষণ স্প্রে করে সাথে ঘষতে লাগলো কোমরের ওই পাশটুকু!
কাব্য এইবার থমথমে মুখে দেখছে কুহুর ওই পাগলামি। কুহু হেক্সিসল দেওয়া শেষ হয়ে ওটা একপ্রকার ছুড়ে ফেলল সোফার উপর। কোমরের ওদিকের অংশের সম্পূর্ণ জামা ভিজে গেছে কুহুর। কাব্য দেয়ালে হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেছে ততক্ষণে।
কুহু থমথমে পেয়ে এগিয়ে এললো কাব্যের দিকে। কাব্যের সামনে এসে মুখোমুখি দাড়িয়ে চোখে চোখ রাখল। কাব্যও কুহুর চোখের ভেতরটার জেদ-রাগ- ঘেন্না পরিমাণ করতে ব্যস্ত তখন।
কুহু দাঁতে দাঁত পিসে স্রেফ হিসহিসিয়ে কটা কথা বলল———‘সম্ভব হলে আপনার স্পর্শ করা কোমরের এই অংশ আগুনে পু ড়িয়ে দিতাম আমি। আর এটা তো সামান্য জীবাণুনাশক!’
ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ১৭
বলেই কুহু কাব্যের দিকে ঘেন্নার দৃষ্টি ছুড়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল কাব্যদের ফ্ল্যাট থেকে। কাব্য চুপচাপ কুহুর যাওয়াটা দেখলো; একটা কথা, একটা শব্দও আজ ও কেন যেন উচ্চারণ করতে পারলো না।
কাব্য একসময় কেমন যেন নিজের দুহাত তুলে নিজেই উল্টেপাল্টে দেখল; মনেমনে ভাবনা এলো হঠাৎ বাচ্চাদের ন্যায়—‘আমার ছোঁয়াচে রোগ তো নেই। কুহু এমনটা কেন—‘
বাকিটা ভাবতে পারলো না আর কাব্য। মাথা ঘুরিয়ে আবার সদর দরজার দিকে তাকাল; দরজাটা এখনো কুহুর ধাক্কায় দুলছে!