ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ২১
অবন্তিকা তৃপ্তি
রাতের আধার ক্রমশ বাড়ন্ত! বাইরে ভয়ঙ্কর ঝড়ো- বাতাস। ভীষণ ঠান্ডা-ঠান্ডা আবহাওয়াতেও কায়া ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড ঘেমে গেছে। হাপারের মতো নিঃশ্বাস নিতে নিতে পাগলের মতো অস্থির ভঙ্গিতে ঘুমের ঘরে, মাথা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে কথা বলে যাচ্ছে অবিরাম কারো সঙ্গে———-‘স্নি… আমার স্নিগ্ধকে… আমার স্নিগ্ধকে কেউ বাঁচাও! প্লিজ; কেউ আ.. আসো; ওকে ধরো! কেউ… কেউ বা… বাঁচাও… ওকে! স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধওওও….!’
কায়া এক চিৎকারে হঠাৎ: একদম আচমকা ঘুম থেকে উঠে সোজা বসে গেল! কিছুক্ষণ থম হয়ে নিজের জায়গায় স্থির বসে রইল ওভাবেই: জোরে জোরে নিঃশ্বাস চলছে ওর! তারপর হঠাৎ. . একদম পাগলের মতো আশপাশে দেখতে লাগলো—— ও কোথায় এখন?কই আছে? স্নিগ্ধ কোথায়?
একাদশ শ্রেণিতে উঠার পর থেকে কায়া কুহুর সাথে আর ঘুমায় না, একা ঘুমায়! বর্তমানে ইলেকট্রিসিটি নেই, এসি চলছে না রুমে; ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেছে সম্পূর্ণ রুম! কায়ার মধ্যে ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে; ও পাগলের মতো নিজের শরীর হাতিয়ে দেখলো! পুরো ব্যাপারটা স্বপ্ন কিনা বোঝার চেষ্টা করছে সম্ভবত! পরমুহূর্তে এতেও মন ধাতস্ত না হওয়াতে দ্রুত ফোনটা চার্জ থেকে খুলে কাপতে কাপতে কল লাগাল স্নিগ্ধার নম্বরে!
দুবার কল হয়ে কল কেটে গেল; ওপাশের কেউ রিসিভ করল না অস্থির কায়ার কান্নামাখা কলটা। ওদিকে কায়া পাগল হয়ে যাচ্ছে রীতিমতো! স্বপ্ন কি সত্যি হয়ে যাবে? কায়া এবার আবার কল দিল; ও কেঁদে-কেদেই কলটা করলো! মনেমনে যত দোয়া জানে সব পড়ছে——স্নিগ্ধের কিছু হলে কায়া আর বেঁচে থাকতে পারবে না।
ওর জীবনের প্রথম ভালোবাসা স্নিগ্ধ: আজ অব্দি যেটুকু ভালোবাসা-যত্ন স্নিগ্ধ ওকে দিয়েছে—— কায়া কোনদিন সেটা ভুলতে পারবে না। আর নাইবা বেঁচে থাকতে পারবে লোভী মানুষের মতো ওসব কেয়ার, ভালোবাসাগুলো ছেড়ে দিয়ে? মরে যাবে কায়া; উন্মাদ হয়ে; রয়ে যাবে প্রেমের ভিখারিনী হয়ে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
স্নিগ্ধ কল ধরছে না। কায়া ভয়ানক একেকটা চিন্তায় এবার ফোনটা সেভাবেই হাতে নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল!পরপর মুখে শক্ত করে হাত চেপে ধরল যেন বাইরে ওর কান্নার আওয়াজ না যায়। ফোন হাতে, কেদে কেদে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে থাকল———‘স্নিগ্ধ, ঠি.. . ঠিক আছেন আপনি? প্লিজ, একবার কলটা রিসিভ করে কণ্ঠটা দয়া করে শোনান না আমাকে। আমি পারছি না; আমার ভয় হচ্ছে স্নিগ্ধ; আমি আপনাকে হারাতে পারবো না কোনোদিন; সেই শাস্তি আমার জন্যে অনেক বড় হয়ে যাবে স্নিগ্ধ। প্লিজ স্নিগ্ধ!’
কায়া হাপাচ্ছে রীতিমত! কথাগুলো শেষ করতে না করতে স্নিগ্ধের কল এলো। ফোনের স্ক্রিনে স্নিগ্ধের কল দেখতে পেয়ে কায়া দ্রুতভঙ্গিতে ভঙ্গিতে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো।
ওপাশে স্নিগ্ধ হাসিখুশিভাবেই বলতে চাইলো কিছু———-‘কিরে, দশ মিনিটে ১২টা কল? এত মিস করছিল আমাকে?’
কায়া স্নিগ্ধার কণ্ঠস্বর শোনামাত্রই থম বনে গেল একপ্রকার! চোখের কোণ বেয়ে শেষবারের মতো এক ফোঁটা জল চিন্তা নিবারণ হয়ে অজান্তেই গড়িয়ে হাতের উপর পড়ল। কায়া চুপ করে বুকে হাত চেপে চোখ মুছে বসে থাকল——ওর স্নিগ্ধ বেঁচে আছে; ভালো আছে: কণ্ঠ শুনেছে! আল্লাহ কায়ার কথা শুনেছেন; শুনেছেন উনি।
কায়াকে নিঃশব্দ দেখে স্নিগ্ধ কিছুটা অবাক হলো; সন্দেহ নিয়ে বলল————‘কায়া!’
কায়া চুপ; শুধু ফোপাচ্ছে! স্নিগ্ধ আবার ডাকলোআদুরে ভঙ্গিতে ———-‘এই কায়া? জান ঠিক আছিস তুই?’
কায়া এবারেও চুপ; শুধু নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে স্নিগ্ধের বলা একেকটা শব্দ শুনে যাচ্ছে তৃষ্ণার্তের ন্যায়! স্নিগ্ধ বুঝতে পারলো সম্ভবত কিছু! ও মিহি গলায়; গম্ভীর স্বরে স্রেফ জানালো——‘আমি এখন আমাদের বাসার ছাদে আছি, কায়া!’
ব্যাস: এটুকুই বলা লাগলো স্নিগ্ধের। কায়া চমকে অবাক হয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকাল। চোখের জল বন্ধ হয়ে গেল আপনা-আপনিই! স্নিগ্ধ এটা বলে চুপ করে থাকলো; কায়াও চুপ—- অথচ স্নিগ্ধের সঙ্গে দেখা করার জন্যে কায়া ওড়না খুঁজতে ব্যস্ত তখন।
একসময় কায়া ওড়না পেয়েই ফোন কেটে দিল। স্নিগ্ধ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে আরাম করে দাঁড়িয়ে পরলো। আরাম করে দরজার দিকে স্থির তাকিয়ে রইল——- ও জানে কায়া আসছে! আসবেই ও; মেয়েটার আজ ওকে দরকার সত্যি ছিলো; স্নিগ্ধের আসার দরকার অযথা না; স্নিগ্ধের চিন্তাগুলো অযথা ছিলো না—- সেটা কায়ার নিশ্চুপ শ্বাস-প্রশ্বাসই বলে দিচ্ছে।
কায়া এলো! এক দৌড়ে চার তোলা সিড়ি ভেঙ্গে সোজা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে তাকাল স্নিগ্ধের দিকে। স্নিগ্ধও ওকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল; মৃদু হেসে অতঃপর দুহাত তারপর বাড়িয়ে দিল কায়ার দিকে!
কায়ার ঠোঁট-দুটো তিরতির করে কাপছিলো ভীষণভাবে! কায়া স্নিগ্ধের মুখ-টুকু অক্ষত দেখে শান্তির শ্বাস ফেলে দরজা খামচে ধরে হেলে যাচ্ছিল। স্নিগ্ধ দূর থেকেই হাত বাড়িয়ে ওকে ডাকল———‘জান… কাম, হাগ মি প্লিজ!’
কায়া বাকরুদ্ধ! তারপর দু মিনিট সময়টা অব্দি মেয়েটা নিলো না। ও এক দৌড়ে; পাগলের মতো এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল সোজা স্নিগ্ধের বুকের উপর! স্নিগ্ধ আচমকা এমন ঝাপাতে দু’কদম করে পেছিয়ে গেল সহসা! পায়ের জুতো মাটিতে ঘষতে ঘষতে শব্দ তুলল; তারপর থামল! কায়ার পা দূরে মাটি ছেড়েছে; ঝুলে পড়েছে স্নিগ্ধের গলা জড়িয়ে!
স্নিগ্ধও হালকা হেসে কায়ার পিঠটা জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুঁজল; ফিসফিস করে বললো———-‘আমি না থাকলে আমায় এত্ত মিস করিস তুই? জানতাম না তো আমি! কোনদিন বলিসও তো নি; পাষাণ মেয়ে একটা।’
কায়া স্নিগ্ধের পিঠের আবারও খামচে ধরে ইশারাতেই যেন শাসিয়ে উঠল তাৎক্ষণিক! স্নিগ্ধ হাসলো; মন খুলে। আরও শক্ত করে কায়ার পিঠ জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো হাসতে হাসতে!
কায়া কাঁদতে কাঁদতে স্নিগ্ধের ঘাড়ে নাক-মুখ ঘষতে ঘষতে, নাক টেনে টেনে কাঁপতে কাঁপতে বলল———‘আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না আপনি। কোথাও না। বাইক আস্তে চালাবেন; জোরে চালালে আমি আর কথাই বলব না আপনার সঙ্গে। কারোর সঙ্গে কখনো গুন্ডাগিরি করবেন না আর। আমি যেন আপনাকে কোনোদিন শরীরে আঘাত নিয়ে আমার সামনে আসতে না দেখি: শুনেছেন আপনি? আমি পারব না, হারাতে পারব না কোনো মূল্যেই!’
স্নিগ্ধ এসব শুনছে না! ওর মস্তিষ্কে তখন রক্ত ছলকে উঠেছে কায়ার ওই একেকটা বাক্যে! স্নিগ্ধের নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে। ভীষণ বাতাস বইছে ওদের আসেপাশে! পায়ের কাছে ধুলো; পলিথিন উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আকাশে বজ্র চমকাচ্ছে ভীষণ!
এমন একটা উস্কে দেওয়া আবহাওয়া স্নিগ্ধকে মেরে ফেলল: সম্পূর্ণ মেরেই ফেলল। স্নিগ্ধ পাগল হলো; হুঁশ খোয়ালও; নিজের কন্ট্রোল খুইয়ে খেই হারিয়ে আচমকা কায়ার ঘাড়ের চুল সরিয়ে সেথায় গাঢ় এক চুমু গেঁথেই দিল শেষপর্যন্ত।
কায়া আচমকা চুমুতে কেঁপে উঠল; আরও শক্ত করে স্নিগ্ধর শার্ট খামচে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে চাইছিলো যেন। স্নিগ্ধ ভেবেছিল— বরাবরের মতো কায়া ওকে আটকে দেবে; শাসন করবে… কিন্তু কায়া তেমন কিছুই করল না; বরং প্রশ্রয়টাই দেখাল!সেটাই যেন কাল হলো দুজনের জন্যে।
কায়ার মনে ছিলো—- স্নিগ্ধকে হারানোর প্রচণ্ড ভয়। তাই ভালোবাসার মানুষকে একটুখানি কাছে পাওয়ার লোভ ও ছেড়ে দিতে পারেনি তখন। খেই হারিয়েছিল নিজেও। এতে যেন স্নিগ্ধর সাহস বেড়ে দ্বিগুণ হলো; কন্ট্রোল যা ছিলো সব একেএকে আছড়ে পড়ল ছাদের ফ্লোরে।
স্নিগ্ধ আস্তে করে কায়ার ঘাড় থেকে শুরু করে গলায় একের পর এক চুমু দিতে পাগল! সহসা কায়ার মাথাটা আলগোছে পিছিয়ে গেল পেছনের দিকে; হেলে পড়তে চাইলো যেন ওর শরীর অস্বাভাবিক শিহরণে! অথচ স্নিগ্ধ তো আছে সামলে নেবার জন্যে। স্নিগ্ধ আলগোছে কায়ার পিঠ আগলে একের পর এক ঝড় তুলতে লাগল কায়ার গলায়! কায়া স্নিগ্ধর হাত খামচে ধরে স্রেফ বাধা দেবার নিম্ন চেষ্টাটুকু করে বলল——— ‘থাম… থামুন স্নি——’
সঙ্গে সঙ্গেই স্নিগ্ধ কায়ার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসল নিবিড়ভাবে! কায়ার কথাগুলো গিলে ফেলল; স্নিগ্ধ পাগলামি করছে ভীষণ! কায়া ওকে আটকাতেও পারছে না; কিংবা হয়তোবা নিজেই টলে গেছে; আচ্ছন্ন হয়ে গেছে বলে আটকাতেও কেন যেন আর পারছে না। কায়ার মন চাচ্ছে স্নিগ্ধ থেমে যাক; এটা অন্যায়! অথচ কায়ার শরীর বলছে তো অন্য কথা! ও স্নিগ্ধকে চায়: আজই চায়! সেটা যেকোনো মুল্যে..।
কায়া নিজেও স্নিগ্ধকে সমান তালে ঠোঁটে চুমু খেতে পাগল। স্নিগ্ধ এইবার একটু সরলো, কায়ার বুজে থাকা চোখের দিকে চেয়ে ঝুঁকে এসে হালকা হেসে দুষ্টুমি নিয়ে বলল——— ‘ইউ আর সো ড্যাম টেস্টি, জান! লাই… লাইক এ স্ট্রবেরি!’
বলেই চোখ টিপলো স্নিগ্ধ! কায়া লজ্জা পেল; লজ্জায় মাথা ঘুরিয়ে চলে যাবে পেছনে— পেছন থেকে স্নিগ্ধ ওর হাতধরে টান দিয়ে ওকে আবার আচমকা নিজের বুকের উপর ফেলে দিল! কায়াকে পেছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ঘাড়ে পাগলের মতো চুমু দিতে থাকল ঘাড়ের আশেপাশে। ওর একেকটা চুমুতে কায়ার জান হাতে চলে আসছে; শিহরণে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। কায়ার মধ্যে এটুকু শক্তি নেই স্নিগ্ধকে আটকে ফেলার জন্যে; অথচ এখনও সময় আছে।
হাতের বাইরে সবকিছু চলে যাওয়ার আগে স্নিগ্ধকে আটকাতে হবে! অথচ পারছে না তো! ওকে সম্পূর্ণ স্নিগ্ধ নিয়ন্ত্রণ করছে। স্নিগ্ধের আদরে এতটা নেশা, এতটা ঘোর? কি করে সম্ভব?
কায়ার ভাবনার মধ্যেই স্নিগ্ধ কায়াকে হঠাৎ কোলে তুলে নিলো দুহাতে। কায়া চমকে উঠে দুহাতে স্নিগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরল। স্নিগ্ধর চোখে-মুখে প্রবল এক নেশা; আসক্তি! কায়াকে আজ অবৈধভাবে নিজের সঙ্গে পিষে ফেলার আসক্তি কতটা খারাপ পরিণতি ওদের জন্যে বয়ে আনবে— সে সম্পর্কে ভালোবাসার নেশায় মাতাল এই কাপল সম্পূর্ণ অজ্ঞাত!
কায়া আলগোছে স্নিগ্ধর বুকে মুখ গুঁজে কিভাবে যেন ওর গায়ের ঘ্রাণ শুঁকতে ব্যস্ত হয়ে আছে। স্নিগ্ধ কায়াকে নিয়ে চলল ছাদের চিলেকোঠার ঘরটায়। ওখানে লাইট জ্বালিয়ে দিতেই সম্পূর্ণ ঘর আলোকিত হয়ে গেল। আজকেই কবিতা নিজে চিলেকোঠার এই ঘরটা ঠিক করিয়ে রেখেছেন আগামীকাল মেহমান এসে থাকবে বলে।
নতুন বিছানা; জিনিসপত্রের ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে; এসি ঠিক করানো হয়েছে। আজ যেন আশেপাশের সবকিছুই এই পাগল-উন্মাদ কাপলকে আরও উস্কে দিচ্ছে!
স্নিগ্ধ আলগোছে কায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিল! কায়া চোখ খুলে স্নিগ্ধর মুখের দিকে তাকাল! স্নিগ্ধ আলগোছে কায়ার কপালে চুমু খেলো; কায়ার খুলে ফেলা চোখ সহসা আবার বন্ধ হয়ে গেল।
স্নিগ্ধ চুমু খেলো একের পর এক কায়ার সুন্দর; কান্নাভেজা পুরো মুখটুকুতে! কায়া বিছানার চাদর খামচে ধরলো হাতের নখের সাহায্যে! স্নিগ্ধের বোধহয় ওটুকু সহ্য হলো না। ও ওই হাত চাদর থেকে টেনে সরিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ করে ধরল হঠাৎ!
কায়া তাকাল স্নিগ্ধর মুখের দিকে! অপলক তাকিয়েই রইলো। ওর চোখ অসম্ভব ভালোবাসায় টলমল করছিল তখনো।
স্নিগ্ধ তো পুরুষ! ও তো বুঝে ওই চাহনির মানেটা কি? স্নিগ্ধর হঠাৎ কি হলো! ও কায়ার উপর থেকে উঠে হঠাৎ নিজের পরনের শার্ট টেনেটেনে খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল বেডের পাশে!
কায়া এবার, অনেকক্ষণ পর রীতিমত আতকে-চমকে উঠল! স্নিগ্ধ আবার কায়ার উপর ততক্ষণে শুয়ে পড়েছে। কায়া ভ্রু কুঁচকে ফেলেছে; ওর আবেগ–ওর মোহ সম্পূর্ণ কেটে গেছে! স্নিগ্ধ তখনও উন্মাদ; ও কায়ার ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে মাতাল গলায় বলছে——— ‘তুই এত সফট বেবি; মনে হচ্ছে আমার ভেতরেই ঢুকে যাবি আরেকটু চেপে ধরলে! বেস্ট ফিলিংস, জান! খেয়ে ফেলি তোকে একদম?’
কায়ার মাথায় এবার হুঁশ আসে! কি করতে যাচ্ছে ওরা? এটা.. . অবৈধভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছিল ওরা? কায়ার দু বছরের রিলেশনের এতটা সংযম দেখিয়েছে, আর আজ? সবটা খুইয়ে ফেলল ও; একরাতেই?
ছিহ. . . !
কায়ার নিজের প্রতি ঘেন্না ধরে গেল কেন যেন আচমকা। কে হঠাৎ, আচমকা স্নিগ্ধকে গায়ের শক্তিতে ধাক্কা দিয়ে বসলো! স্নিগ্ধ আচমকা ধাক্কায় তাল সামলাতে না পার্স পিছিয়ে সরে যায় কায়ার উপর থেকে! কায়ার সারা শরীর কাঁপছে; ও জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে ও ভয় এবং আতঙ্কে উঠে বসে স্নিগ্ধের খুলে ফেলা ওড়নাদ্রুত গায়ে মেলে ফেলল।
স্নিগ্ধ অবাক হয়ে তাকাল কায়ার দিকে; ওর চোখে-.মুখে তখনো নেশা। কাটেনি একদম! ও কায়ার হাতটা চেপে ধরে বলল———————-‘কি হলো?’
কায়া কাপছিল, ও সেভাবেই দ্রুত স্নিগ্ধর হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিল। স্নিগ্ধ আরও অবাক হলো যেন। ও নিজেও শোয়া থেকে কায়ার পাশে উঠে বসল! কায়া স্নিগ্ধের চোখে চোখ মেলালো না, কাঁপতে কাঁপতে বলল——————‘এটা… এটা আমরা কি করে ফেললাম স্নিগ্ধ?’
স্নিগ্ধ অবাক হয়েছে, ওর মাথায় তখনো পাপ-পুণ্যের ব্যাপারটা ফাংশন করতে পারেনি। ও সেভাবেই বলল——— ‘কি করে ফেললাম মানে?’
কায়া এবার স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে কেঁপে কেঁপে বলল——— ‘মা. . মানে বুঝেন না আপনি? আ. . আমরা আনম্যারেড, স্নিগ্ধ!’
স্নিগ্ধও এ ম্যারেড কথাত শুনে কেমন যেন ক্ষেপে গেল! ও কায়ার হাত চেপে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গভীর, রাগী কণ্ঠে বলল——— ‘সো হোয়াট?’
কায়া চোখ ছোট ছোট করে তাকালো——— ‘সো হোয়াট মানে? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া, আমরা কতবড় মহাপাপ করতে যাচ্ছিলাম?’
বরাবরের মতো স্নিগ্ধ জীবনে যা চেয়েছে— তাই পেয়ে এসেছে। কোনটা পাপ- কোনটা পুণ্য সেটা যাচাই করতে ইচ্ছে হয়নি। আর এমন একটা অবস্থাতে এই পাপ-পুণ্য যখন যাচাই করতে হচ্ছে: স্নিগ্ধের মাথাটা তখন এমনি গরম হয়ে এলো।
স্নিগ্ধ ক্ষ্যাপা গলায় কায়ার দিকে চেয়ে বলল——— ‘পাপ? হোয়াট রাবিশ! আমি তোকে ভালোবাসি না? নাকি তোর মনে হচ্ছে আমি একটা খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার টাইপ ছেলে?’
স্নিগ্ধ রেগে যাচ্ছে দেখে কায়া স্নিগ্ধর হাত ছেড়ে দিয়ে ওকে বোঝানোর জন্যে বলার চেষ্টা করলো————-‘আমি এটা মিন করিনি। কিন্তু স্নিগ্ধ যা পাপ তা পাপই! আমি এটা——’
কায়া বাকি কথা বলার আগে স্নিগ্ধ কায়ার দিকে চেয়ে আহাম্মক গলায় বলল——— ‘মানে? তুই আমাকে ট্রাস্ট করিস না? ওহ; ফাইন! আমি তো এটা জানতামই না। খুব ভালো!’
স্নিগ্ধ কায়ার হাত ছেড়ে দিল ভীষন হতাশ-ভঙ্গিতে।
কায়ার চোখ টলমল করছে, ও অস্ফুটে বলল——— ‘ট্রাস্ট? আমাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাথে ট্রাস্টের কিসের সম্পর্ক?’
স্নিগ্ধ এবার মেজাজ হরিতে চিৎকার করে বলল——— ‘আছে সম্পর্ক! তোর কাছে আমার কাছে আসা পাপ মনে হচ্ছে আজ! তারমানে আমি যে তোকে ভালোবাসি সেটা তোর কাছে কোনো মূল্য নেই; রাইট?’
কায়া ছোট শ্বাস ফেলে, স্নিগ্ধ পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু তারমানে এটা নয় যে—- ওকেও ওর সাথে তাল মেলাতে হবে।
কায়া দিবার নিজেকে শক্ত করে জবাব দিল——— ‘অন্তত এই ব্যাপারে তোমার স্রেফ ‘ভালোবাসার’ মূল্য নেই! বিয়ে ছাড়া যা হবে; তা পাপ; পাপই হবে! এটার সাথে ট্রাস্ট, আমার তোমাকে ভালোবাসা— এসবের কোনো মূল্য নেই, স্নিগ্ধ!’
স্নিগ্ধ চুপ করে কায়ার দিকে তাকিয়ে রইল! কায়া নিশ্চুপে উঠে দাঁড়াল! ওড়না ভালো করে গায়ে মেলে বেরিয়ে যাবে, হঠাৎ স্নিগ্ধ পিছন থেকে কায়ার হাত চেপে ধরে। কায়া আচমকা থেমে গেল; ও পেছন ফিরে তাকাল। স্নিগ্ধ স্পষ্ট লক্ষ করেছে—- কায়ার কাঁদছে। তারমানে কায়া এতটা কাছাকাছি আসা মেনে নেয়নি, স্নিগ্ধকে খারাপ ভেবেছেই! ও গড!
স্নিগ্ধ নিশ্চুপে কায়ার চোখের জল-টুকু দেখল। কায়া মাথাটা নামিয়ে ফুপাচ্ছে শুধু; একবারের জন্যে তাকাচ্ছে না স্নিগ্ধের দিকে।
এই দৃশ্য দেখামাত্রও আত্ম-সম্মানে ভরপুর কায়ার প্রেমিকের মাথা ঠিক থাকলো না। ও কায়ার দিকে চেয়ে হঠাৎ কেমন করে যেন বলে বসল———— ‘দেন লেটস গেট ম্যারিড! বিয়ে করব তোকে; আজ; এক্ষুনি; এই মাঝরাতে! তবুও তুই বুঝ একটু—- তুই যেটুকু ঘনিষ্ঠ হয়েছি; নিজের হবু হাজবেন্ডের সাথেই হয়েছিস; সেই হাজবেন্ড যে তোকে ভালোবাসে, যাকে তুই ভালোবাসিস!’
কায়া চমকে তাকিয়ে শুনে যায় শুধু, পরপর স্নিগ্ধর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে থেমে থেমে বলল——— ‘পা. . পাগল হয়ে গেছেন আপনি। হুঁশে এসে কথা বলুন!’
স্নিগ্ধ উঠে দাঁড়ালো। কায়ার সামনে দ্রুততার সাথে এগিয়ে এসে ওর দু’ বাহু চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলল——— ‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ: পাগল হয়ে গেছি আমি। আমি যাকে ভালোবেসে ছুঁয়েছি, তার কাছে এটা পাপ মনে হচ্ছে। আমিই ভুল; আমি খারাপ! সব আমি, আমি, আমি! এখন আমি সব ভালো করতে চাইছি: বিয়ে করব তোকে; সব পাপ মুছে পূর্ণ অধিকার নিয়ে তোকে ছুবো। তোর চোখে আমি আজ আমার প্রতি ঘেন্না দেখেছি, কায়া। ওটা দেখার আগে আমি——’
স্নিগ্ধ থামল; কায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধর দিকে; অস্ফুটে মাথাটা নিচু করও বলতে চাইলো কিছু—— ‘ও… ওটা আমার ঘেন্না ছি.. ছিল না।’
ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ২০
স্নিগ্ধ জবাব দিল না। কায়ার হাত ছেড়ে দ্রুতগতিতে মেঝে থেকে শার্ট নিয়ে গায়ে পরে ফেলল! তারপর কায়ার হাত চেপে বেরিয়ে গেল চিলেকোঠার ঘরটা থেকে! কায়া পেছন থেকে বারবার বাধা দিচ্ছে: একদম শুনছে না স্নিগ্ধ!