তাজমহল পর্ব ২৪

তাজমহল পর্ব ২৪
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী

“কীসের সুখবর?”
তাজদার বলল,”তুমিই তো বললে তুমি বমি করবে।”
শাইনা বিরক্ত হলো। চ বর্গীয় শব্দ করে বলল,
“গায়ের উপর উঠে আসেন কেন কথায় কথায়? কোনো ভদ্রলোক এভাবে কথায় কথায় গায়ের উপর উঠে আসেনা। সরুন আমাকে কিছুক্ষণ ঘুমাতে দিন।”
“রাতে ঠিকই ঘুমিয়েছ। দিনের বেলায় কীসের ঘুম।”
“আমি সারাক্ষণ ঘুমাতে পারি। ঘুমানোর জন্য আমার রাতদিন লাগেনা। সরুন বলছি।”
তাজদার দাঁত কটমট করে তার হাত একটা একদম শক্ত করে চেপে ধরে বলল,”সারাক্ষণ এমন সরুন সরুন করো কেন? আজব!”
শাইনা বলল,”সরুন সরুন না বলে আসুন আসুন বলব?”

“অফকোর্স করবে।”
শাইনা তাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে গেল শোয়া থেকে। একটু শান্তিতে শুতেও পারবে না। কোথা থেকে উড়ে এসে গায়ের উপর পড়বে। সে গটগট পায়ে হেঁটে রান্নাঘরে চলে এল। বড় জা ঝিমলি তাকে দেখে হেসে বলল,
“শাইনা তো চলে এসেছে। কে যেন বললো তুমি ঘুমোচ্ছ।”
জোহরা বেগম বললেন,”এটা ঘুমানোর সময়? এমন কথা তো আগে শুনিনি।”
দাদীমা আনোয়ারা বেগম বললেন,”বিয়ের বছর ঘুম বেশি।”
জোহরা বেগম বললেন,”এইসব কথা নতুন আবিষ্কার হয়েছে নাকি? আমাদের বেলায় তো ছিল না আম্মা।”
আনোয়ারা বেগম কিছু বললেন না। রওশনআরা বললেন,”শাইনা এখানে সিঙ্গারার ডো মেখে রেখেছি। ওখানে পুর ভেজে রেখেছি। লেচি কেটে বানিয়ে তেলে দাও। সবাই চা খাবে।”
শাইনা সিঙ্গারার শেইপ দিতে পারেনা। এগুলো তার বিরক্তিকর কাজ মনে হতো। দাদিমা বসে বসে বানাতো। সে অতটা খেয়াল করতো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছোট ছোট লেচি কেটে বেলে তাতে আলু গোশতের পুর দিয়ে সে সিঙ্গারার শেইপ দিতে গেল। তখুনি ঘটলো বিপত্তি। সে কিছুতেই মনে করতে পারছেনা কিভাবে শেইপ দিতে হয়। ইউটিউব থেকে একটা ভিডিও দেখে নিলেই পারতো।
সে লুচি বেলে রেখে দিল। সবগুলো একসাথে শেইপ দেবে। তার আগে একটা ভিডিও দেখে নেবে।
রওশনআরাসহ সবাই আঁড়চোখে তার কাজ দেখে যাচ্ছে। ঝিমলি বলল,
“শাইনা কয়েকটা রেডি করে তেলে ছেড়ে দাও। এগুলো মাঝারি হিটে ধীরেধীরে ভাজতে হয়।”
শাইনা রওশনআরাকে কিছু বলবে কিনা ভাবছিল ঠিক তখুনি তাজদারের গলার আওয়াজ শোনা গেল।
“আম্মো আমার ব্লু জার্সিটা খুঁজে পাচ্ছি না। ওকে পাঠাও।”
রওশনআরা শাইনার দিকে তাকালো। শাইনা তাকাতেই তিনি ইশারা করলেন,
“যাও।”

শাইনা দ্রুত বেরিয়ে গেল। তাজদার ফোনে চোখ ডুবিয়ে রেখেছে। শাইনার উপস্থিতি টের পাওয়ামাত্রই চোখ তুলে তাকালো। শাইনা দ্রুতপায়ে হেঁটে ঘরে চলে যাচ্ছে। তার কথা এত সিরিয়াসলি নিয়েছে? অবিশ্বাস্য!
শাইনা ঘরে এসে দ্রুত ফোন হাতে নিল। তাজদার সিদ্দিকী ওয়াইফাই কানেক্ট করে দিয়েছিল বিয়ের পরের দিন। সে দ্রুত সিঙ্গারাকে কিভাবে শেইপ দিতে হয় তার ভিডিও সার্চ করে দেখতে লাগলো। তাজদার ঘরে এসে বলল,
“আমার জার্সি কোথায়? ‘
শাইনা ফোনে চোখ রেখে আঙুল দেখালো আলমিরার দিকে।
” ওখানে।”
তাজদার সেখানে খোঁজাখুঁজি করলো। বলল,
“পাচ্ছি না।”
শাইনা কাবার্ড দেখিয়ে বলল,”ওখানে খুঁজে দেখুন।”
তাজদার সেখানেও দেখলো। বলল,

“পাচ্ছি না।”
শাইনা বলল,”মেশিনের ভেতর দেখুন।”
“দেখেছি। আশ্চর্য! আমার সাথে কথা বলছে ফোনের দিকে তাকিয়ে।”
শাইনা ফোন থেকে চোখ তুললো না তারপরও।
তাজদার বলল,”আমার জার্সি কোথায় মমতাজ?”
শাইনা জবাব দিল না। তাজদার লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এসে তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিতেই শাইনা বলল,
“ধুর বাবা। কাজের সময় বিরক্ত করলে একদম ফালতু লাগে। সারাক্ষণ কেমনে এসবের নাটকের তলে থাকে আল্লাহ মালুম। একটা কাজও শান্তিতে করতে পারব না। প্যানপ্যান করতে থাকে কানের কাছে।”
তাজদার ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো। শাইনা চমকে গেল। তাজদারের দিকে অবাক চোখে তাকাল। তাজদার তার দিকে কপাল কুঁচকে চেয়ে অসম্ভব শীতল কণ্ঠে বলল,

“কি বললে আরেকবার বলো।”
শাইনা বলল,
“আমি একটা জরুরি কনটেন্ট দেখছিলাম। আপনার জার্সি কোথায় সেটা আমি কি করে জানব আশ্চর্য! আপনার কোনো জিনিসপত্রের খোঁজ আমি রাখিনা। সেটা আপনিও জানেন। জেনেশুনে এত নাটক করার মানে কি? নাকি এখন বলবেন জার্সিটা আমি চুরি করে আমার ভাইদের দিয়ে ফেলেছি? আপনার জেরা করা দেখে তো তেমনই মনে হচ্ছে।”
তাজদার কপাল কুঁচকে তার দিকে চেয়ে রইলো। শাইনা বিছানা থেকে ফোনটা কুড়িয়ে নিতে যাবে ঠিক তখুনি তাজদার ফোনটা নিয়ে নিল। তারপর ওয়াইফাই ফরগেট দিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে বেরিয়ে গেল। শাইনা ফোন কুড়িয়ে নিয়ে দেখলো ওয়াইফাই আর কানেক্ট হচ্ছে না। পাসওয়ার্ডটা সে মুখস্থ করে নিয়েছিল। সেটা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তাজদারের উদ্দেশ্য বলল,

“আমার কাছে আরও একটি ফোন আছে।”
তাজদার ফিরলো তার দিকে। মাথাটা হালকা কাত করে কিছু একটা চিন্তা করলো। তারপর সোজা শাইনার দিকে হেঁটে এল। শাইনা দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়ালো। লোকটা একদম গা ঘেঁষে হাঁটে তাই।
তাজদার ঘরে ঢুকে রাউটারের ক্যাবল এলোমেলো করে দিয়ে বেরিয়ে গেল। লাইন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। শাইনা তার পিছু পিছু আবারও ঘর থেকে বের হলো। তাজদারকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,
“আমার সিমে নেট আছে।”
তাজদার থমকালো। একটু ফিরে তার দিকে চেয়ে রইলো কপালটা কুঞ্চিত রেখে। তার কপালটা সারাক্ষণ ওরকম কুঁচকে থাকে। কোনোদিনও ওটা মসৃণ থাকেনা। সেই ছোটবেলা দেখে শাইনা দেখে আসছে। লোকটার ভেতরটা তার কপাল দেখে বোঝা যায়।

শাইনা বাঁকা হাসছে তাজদার সিদ্দিকীকে জব্দ করতে পেরে। তাজদার ঘরে আসবে এইরকম কোনো সম্ভাবনা ছিল না। সে হঠাৎ শাইনাকে চমকে দিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালো। শাইনা দরজার সামনে থেকে সরে পড়লো। ঘরের এককোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাজদার দরজা বন্ধ করলো। শাইনা অবাক হয়ে বলল,
“বড়আম্মুকে ডাক দেব আমি।”
তাজদার তার দিকে এগিয়ে এল। শাইনা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। সে ভয় পাচ্ছে নাকি? সে একদম নড়লো না। বরং তাজদারের দিকে তাকিয়ে শক্ত হয়ে নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। তাজদার সত্যি সত্যি তার দিকে এগিয়ে আসছে মনে হতেই সে একলাফে দূরে সরে গিয়ে বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“কি ঠিক আছে?”
শাইনা কথা হারিয়ে বসলো।
“ইয়েমানে আমি সব মেনে নিচ্ছি। দূরে যান। আপনার গায়ে গন্ধ!”
তাজদার সিদ্দিকী গর্জে উঠলো এবার।
“কীহ!”
শাইনা নাকচেপে ধরে বলল,
“হ্যাঁ, ঘাম আর পারফিউমের মিশ্রণে বাজে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। আপনার টিশার্টটা থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমার কাছে আসবেন না।”
শাইনা বমি করার ভান করলো। তাজদার টিশার্টটা তুলতে তুলতে বলল,”ওকে!
শাইনা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ালো। আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখলো তাজদার সিদ্দিকী টিশার্টটা খুলে ফেলছে। সে মুখ ফিরিয়ে নিল দ্রুত। তাজদার একটানে টিশার্টটা খুলে ফেললো। তারপর শাইনার মুখে ছুঁড়ে মারলো। শাইনা সেটা তার মুখে ছুঁড়ে মারলো। বলল,

“কি বাজে স্মেল! ছিহ!”
তাজদার টিশার্টটা নিয়ে তার কাছে এগিয়ে এল। শক্ত করে তাকে ধরলো। শাইনা পালাতে পারলো না। তাজদার তার মুখে টিশার্টটা ঘষে দিল। তারপর সেটা শাইনার গলায় বেঁধে দিয়ে বলল,
“My sweat is your perfume, got it?”
শাইনা নিঃশ্বাস আর চোখ একসাথে বন্ধ করে রেখেছে। তাজদার তার সাথে শাইনাকে মিশিয়ে নিয়ে শাইনার গায়ে তার ঘাম মেখে দিয়ে ছেড়ে দিল। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে শাইনার দিকে আঙুল তুলে বলল,
“Shaina Momtaz, say thank you. I just sprayed you with my VIP edition sweat. Yours for free, courtesy of me!”
শাইনা টিশার্টটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল,”পারফিউম না পাঠা ছাগলের গন্ধ।”

তাজদারের ঠোঁট বেঁকে গেল।
“আই সি! তুমি পাঠার সাথে ঘুমিয়েছ?”
শাইনা ফুঁসে উঠে বলল,”আপনিই সেই পাঠা।”
“তোমার বরের নাম পাঠা। হাউ সুইট!”
বলেই হেসে উঠে বেরিয়ে গেল।
তাজদার চলে যেতেই শাইনা রান্নাঘরে এল। সিঙ্গারার শেইপ দিয়ে তেলে ভাজার সময় ঝিমলি তার পেছনে এসে দাঁড়াতেই শাইনা চট করে সরে দাঁড়াল। ঝিমলি একটু চমকে গেল।
“ভয় পেয়েছ?”
শাইনা মৃদুস্বরে বলল,”না এমনি।”
সে নিজের গা শুঁকে দেখলো তাজদার সিদ্দিকীর গায়ের স্মেলটা নাকে লাগছে কিনা। লাগছে!
সে কারো পাশে দাঁড়ালো না ভুলেও।

তাসনুভা ট্যুরে গিয়েছে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। সম্ভবত দুইদিন পর ফিরবে বলেছে। রওশনআরাকে পইপই করে বলে গিয়েছে যাতে বাবা আর ভাইয়াদেরকে বলে সে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে। এমনকি তার হবু শ্বশুরবাড়ির মানুষকেও। রাতে তাকে বাড়িতে না দেখে রায়হান হঠাৎ প্রশ্ন করলো, নুভা কোথায়?
তৌসিফ মুখ ফস্কে বলে উঠলো,”ঘুরতে গিয়েছে।”
তাজদার খাওয়া থামিয়ে বলল,”কোথায়?”
রওশনআরা বলে উঠলো,”শাম্মিদের বাড়িতে। ওখানে দুইদিন থাকবে।”
রায়হান বলল,”এই সময় ওকে এত বেড়াতে হবে কেন?”
রওশনআরা বললেন,”ও কারো কথা শোনে?”
তাজউদ্দীন সিদ্দিকী বললেন,”বেড়াতে যখন গিয়েছে তখন বেড়িয়ে চলে আসুক। এত কথার দরকার নেই।”
রায়হান একটু অসন্তুষ্ট হলো। বলল,
“শাম্মিদের বাড়িতে বেড়াতে যাবে আর সেখান থেকে কোথাও ঘুরতে যাবেনা কথাটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলো না।”

তাজউদ্দীন কপাল কুঁচকে তাকান রওশনআরার দিকে। রওশনআরা সরে গেল সেখান থেকে। তিতলি সবাইকে বেড়ে দিচ্ছে। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী তার দিকে মুরগীর কলিজা বাড়িয়ে দিল। তিতলি সেটি মুখে নিল। তিতলি গিলা আর কলিজা খেতে ভালোবাসে। গিলা, কলিজা সবসময় তার পাতেই উঠে। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী তাকে দুই লোকমা ভাতও খাইয়ে দিল। ছোট মেয়ে তার তার ভাগে আদরের ভাগ সবসময় একটু বেশি।
তৌসিফের পাতে একটা মুরগীর গিলা উঠেছে। সে তিতলিকে বলল,”খাবি?’
তিতলিকে একলাফে তার চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়ালো। তৌসিফ বলল,”ভাত খেয়ে ফুরোতে পারছিনা। দুই লোকমা খাবি তবেই দেব। সাথে একটা লেগপিস ফ্রি।”
তৌসিফের পাশের চেয়ারটা খালি। তিতলি চেয়ার টেনে বসলো। রওশনআরাকে বলল,

“আম্মু আমি আর ভাত খাব না তাহলে।”
রওশনআরা বিরক্ত হলো। মেয়েটা অভ্যাস খুব খারাপ। অন্যের হাতে ভাত খাবে। নিজের হাতে খেতে চাইবে না। ছোট থেকে এই অভ্যাসটা হয়েছে। এখনো কমছেনা। তৌসিফ তাকে ঠেসেঠুসে সব ভাত খাইয়ে দিল। তিতলি লেগপিসটা খাচ্ছিল ধীরেসুস্থে। তৌসিফ সেই ফাঁকে মুরগীর গিলাটা টুপ করে নিজের গালে পুরে চিবোতে লাগলো। তিতলি মুখে লেগপিস নিয়ে ছলছলে চোখে চেয়ে রইলো। শাইনা হাসছে তাদের কান্ড দেখে।

শাইনা রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছে। তাজদার সিদ্দিকী খেয়েদেয়ে বেরিয়েছিল আর বাড়ি আসেনি। ফজরের নামাজ পড়ে কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে দরজা খুলতেই তাজদার হঠাৎ হাজির। তার দিকে খেপাটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তুমি ইচ্ছে করে দরজা খোলোনি তাই না?”
শাইনা অবাক! ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে বলল,
“মানে?’
“মানে আবার কি? কাল রাতে বাড়ির সবাই এসে দরজা ধাক্কালো। কিন্তু তোমার ঘুম ভাঙলো না। কি আজব! এমন মরার মতো কেউ ঘুমায়? আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে দরজা খোলোনি।”
শাইনা দুইপাশে মাথা নেড়ে বলল,”ছিঃ মিথ্যে কথা।”
তাজদার ঘরে ঢুকে এল। শাইনা পিছিয়ে গিয়ে বলল,”সত্যি বলছি। আমি তো আরও ভাবছিলাম আপনি কোথায় গিয়েছেন।”

“তুমি অপেক্ষা করেছ?”
“অনেক রাত অব্দি জেগেছিলাম।”
“তারমানে অপেক্ষা করেছ?”
“দরজা খোলা রেখেছিলাম তাই ঘুম আসেনি।”
“মানে দরজা খোলা রেখে অপেক্ষা করছিলে?”
শাইনা তার দিকে পিছিয়ে যেতে যেতে বলল,
“দরজা খোলা থাকলে আমার ঘুম আসেনা তাই জেগেছিলাম। দরজা বন্ধ করার পর ঘুম চলে এসেছিল।”
“কতক্ষণ জেগেছিলে?”
“দুইটা অব্দি!”
“দুইটা অব্দি অপেক্ষায় ছিলে?”
শাইনা তাকে সরিয়ে দিতে যাবে তখুনি তাজদার তার কোমর জড়িয়ে ধরে হ্যাঁচকা ঝাঁকুনি দিয়ে তুলে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে বলল,

“তুমি অপেক্ষা করছিলে শাইনা মমতাজ?”
শাইনা বলল,”হ্যাঁ ওটাকে অপেক্ষায় বলে। তো?”
তাজদার বলল,”গুড! আমাকে সারারাত ঘরের বাইরে রাখার জন্য তোমার আগামী কয়েকঘন্টা ঘর থেকে বেরোনো বন্ধ।”
শাইনা টেবিল থেকে নেমে এল। তাজদারের কথা না শুনে চলে যাচ্ছিল। তাজদার দাঁত কটমট করে বলল,”ওই আমি কি বলেছি?”
শাইনা তৎক্ষনাৎ তার দিকে ফিরলো। কথার ধরণটা এত বাজে! শাইনা তার মুখভঙ্গি দেখে রেগে সোজা চলে যাচ্ছিল। তাজদার তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,

“তোমাকে আমি কক্সবাজার নিয়ে গিয়ে ওখানে পানিতে চুবিয়ে মারব প্রমিজ।”
শাইনা হাত ছাড়িয়ে নিতে ভুলে গেল। অবাক হয়ে বলল,”মেঝ ভাইয়া কলিগদের নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছে। আমি জীবনেও যাব না ওখানে। মাথা খারাপ নাকি?”
তাজদার বলল,”আমি যাব। তোমাকে নিয়েই যাব।”
শাইনা বেরিয়ে গেল হাত ছাড়িয়ে নিয়ে। রওশনআরা ঘরে কোরআন তিলাওয়াত করছে। শাইনা ভেবেছিল চুলায় আগুন দেবে। তাদের বাড়িতে আগে ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয়। তারপর চুলায় আগুন ধরানো হয়। সে আগে রান্নাঘরটা ঝাড়ু দিল। তারপর চা করলো। নাশতা আছে। চা ফ্লাক্সে ভরে রাখলো। তার জন্য একমগ তাজদারের জন্য এককাপ নিয়ে ঘরে এল। তাজদার পিঠ দেখিয়ে ঘুমোচ্ছে। শাইনা একমগ চা শেষ করলো। তারপর তাজদারের চাও নিজে খেল। তারপর এককোণায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। এত তাড়াতাড়ি ঘুম ওঠার অভ্যাস নেই তার। কথার ভয়ে উঠে গিয়েছে। বউ ঘুম থেকে চা করেনা এটা নিয়ে কতশত কথা।
কিছুক্ষণ পর তাজদার মাথা তুলে তার দিকে তাকালো।

“আমার চা কই?”
জবাব এল,”খেয়ে ফেলেছি।”
“হোয়াট!”
শাইনাকে হ্যাঁচটা টান দিয়ে নিজের বুকের নিচে নিয়ে এসে তাজদার বলল,”তুমি এত চা খাও কি করে?”
শাইনা তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,”ছাড়ুন, চা এনে দিচ্ছি।”
“না, আমার দরকার নেই। আমি চা খেতে অতটা পছন্দ করিনা।”
“চা সবার পছন্দ হওয়ার কথাও না।”
তাজদার মাথা দুলিয়ে বলল,”আচ্ছা!”
শাইনা ধীরে বলল,”আমি ঘুমাব।”
তাজদার ভ্রু কুঁচকে বলল,”মানা কে করেছে?”
“এভাবে ধরে রাখলে ঘুমানো যায় নাকি? আজব!”

তাজমহল পর্ব ২৩

তাজদার তার দিকে খেপাটে দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। যেন শাইনাকে সে গলা টিপে মেরে ফেলবে। শাইনা তার এই ভয়ংকর চেহারাটা চেনে। সে একটু নিভে গেল। তাজদার সিদ্দিকীর দিকে তাকাল, তারপর দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল।
আবার একটু সময় পরে আবার তাকাল, আবার চোখ নামাল। শেষমেশ তাজদার সিদ্দিকী তাকে জড়িয়ে ধরে রেখে নিঃশব্দে তার গলার উপর মুখ রাখলো। শাইনা কাঁপতে কাঁপতে গুটিয়ে গেল, আর তাজদারের মুখ তার গলার কোমল ভাঁজে আরও গভীরভাবে চেপে গেল।

তাজমহল পর্ব ২৫