তাজমহল পর্ব ২৯
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
তাজদার আবারও ফোন করলো। ফোন রিসিভ করলো দাদীমা। শাইনা যদিও চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু সে ঘুমিয়ে পড়েছে এমন না। সে সব শুনছিল। দাদীমা ফোন রিসিভ করে বলল,
”ঘুম নাই বর বউয়ের চোখে।
আমি দু’জনার মাঝখানে ঘুমিয়ে আছি সুখে।”
তাজদার গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করল,
“ফোনের মালিক কোথায়?”
দাদীমা হেসে উত্তর দিলেন,”ঘুম।”
তাজদার কপাল কুঁচকে বলল,”এত তাড়াতাড়ি মানুষ ঘুমায়?”
দাদীমা শান্ত স্বরে বললেন,
“অনেক কান্নাকাটির পর ঘুমিয়েছে।”
“কান্না কীসের?”
দাদীমা হেসে বললেন,
“ওই আর কি, বরের জন্য কাঁদে। তুমি নাকি জড়িয়ে ধরে ঘুমাইতা?”
তাজদার দ্বিগুণ শব্দে গলা ঝেড়ে বলল,
“আচ্ছা রাখলাম।”
দাদীমা মুচকি হেসে বললেন,
“আসল কথা শোনো।
“জি।”
দাদীমা এবার গুরুগম্ভীর স্বরে বলল,
“তোমার বউয়ের নাকি ঘুম আসছেনা। তোমার কাছে চলে যেতে চায়। কিন্তু যেতে পারছেনা। তুমি তুলে টুলে নিয়ে গেলে ও কিছু মনে করবে না।”
তাজদারের কপাল কুঁচকে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে কয়েক পা এদিক-ওদিক হাঁটল। জিজ্ঞেস করল,”আর ইউ সিরিয়াস?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দাদীমা ভুরু তুললেন,”গালি দিলে?”
“না না, আপনি যা বলছেন তা সত্যি?”
দাদীমা বিরক্ত স্বরে বললেন,
“তুমি কি আমার থালতো ভাই লাগো যে মশকরা করতে যাব?”
তাজদার একটু বিরক্তি প্রকাশ করলো চোখ বুঁজে আবার চোখটা বিরক্তির সাথে খুলে। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“যদি সত্যি হয় তাহলে নিজেই তো আমার কাছে চলে আসতে পারে।”
দাদীমা বললেন,”আমার নাতিন কি ছেলের হাতের মোয়া নাকি লন্ডনের ব্যাটা? আমার নাতনির অনেক দাম।”
তাজদার যথেষ্ট রেগে আছে। কিন্তু সেটা দাদীমাকে বুঝতে না দিয়ে বলল,
“সেটাই তো দেখছি। কাল সকালে পাঠিয়ে দেবেন।”
“মাগোমা। বললেই হলো নাকি।”
“তাহলে? এখন কি আমাকে পায়ে ধরে আনতে হবে?”
দাদীমা গুরুতর ভঙ্গিতে বললেন,”আমার নাতি তোমার কাছে আর যাবে না। মাথা উঁচু করে যেতে পারলে যাবে নইলে যাবে না।”
তাজদার চুপ করে রইলো। রাগে কাঁপছে সে। শাইনা ফোন কেটে দিয়ে দাদীমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি শেষে কি দারুণ কথা বললে দাদী।”
দাদীমা বললেন,এটাও বলেছি তুই তার জন্য কাঁদছিলিস।”
শাইনা চোখ বুঁজে নিয়ে বলল,”বেকুব হলে বিশ্বাস করবে। এত বেকুব না যতটা দেখায়।”
তাসনুভার শ্বশুরবাড়ি থেকে একটার পর একটা অভিযোগ এসেছে। তাজউদ্দীন সিদ্দিকীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে সেইসব কথা শুনে। খুব আপত্তিকর কথাবার্তা বলেছে তারা। বলেছে, তাদের মেয়ে কক্সবাজারের ছেলেপেলে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে, হোটেলে ছিল। মুখে নেওয়া যায় না এমন ধরণের আপত্তিকর কথা বলেছে। এইসব কুৎসিত অপবাদ মেনে নেওয়া তাজউদ্দীন সিদ্দিকীর পক্ষে অসম্ভব ছিল। গলা শক্ত করে, চোখ রাঙিয়ে তিনি জবাব দিলেন,
“আমার মেয়ে একশোবার একা একা ঘুরতে যাবে। ওকে আমি বলেছি ঘুরতে যেতে। আপনারা এইসব বাজে কথা বলার সাহস পান কোথা থেকে? আমেরিকায় থেকেও এই ধরণের বাজে মানসিকতা কি করে পোষণ করেন?”
বলা যায় রীতিমতো কথা কাটাকাটি লেগে গিয়েছে। ফোনের উপর ফোন, তর্কের পর তর্ক চলছে এখন দুই পক্ষের মধ্যে। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী বলেছেন,
“ওরা ওরকম সস্তা মানসিকতার আগে থেকেই জেনে গিয়ে ভালো হয়েছে।”
যদি কোনো পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি এখনো দুই পক্ষ। তবে বিরোধ এখনো চলমান।
তাজদার এই ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি। রওশনআরা ভয়ে আছে। সে যদি সত্যি সত্যি বাড়ি থেকে চলে গিয়ে থাকে তাহলে এই ঝামেলা আর কমার নয়। তাছাড়া সে বাড়ি থেকে চলে যাবে এমনভাবে যেখানে তার হাজারটা যুক্তি দাঁড় করানো থাকবে। শাইনা সেখানে খুব নগন্য একটা যুক্তি। আর এতে করে কেউ বলতে পারবে না দোষ তোমার ছিল। তোমার কারণেই শাইনা আজ ওই বাড়িতে।
তাজদার চলে যাওয়ার সময় দাদীমা আনোয়ারা বেগম কথা বলেছে তাজদারের সাথে। সে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে,
“আমি তাজউদ্দীন সিদ্দিকীর সাথে কোনো তর্ক করতে চাই না। না মা রওশনআরার সাথে কোনো কথা বলতে চাই। আমি তাই তাই করব যা আমার মন চাইবে। দিজ ইজ নট এ ফ্যামলি। ইটস এন এনটায়ার ফ্যাক্টরী অফ ডেভিলস।
আনোয়ারা বেগম বলল,”নুভার বিয়েটা নিয়ে ঝামেলা চলছে।”
“সো হোয়াট? এই ফ্যামিলিতে ঝামেলা ছাড়া কোন কাজ হয়েছে?”
“তোমার বউকে তুমি গিয়ে নিয়ে আসতে পারো।”
“সে আসবে না। আমি একটা জেদী মেয়েকে বিয়ে করেছি। আপাদমস্তক রওশনআরা সিদ্দিকীর ফটোকপি। শ্বাশুড়ির সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে জব্দ করছে। আমাকে পাগল না বানিয়ে সে আসবে না।”
“মহা মুশকিল তো। আমি তাকে জিগ্যেস করবো সে পাগল স্বামীর সাথে সংসার করতে ইচ্ছুক কিনা। নইলে যেন তাড়াতাড়ি চলে আসবে।”
“হার আনসার উইল বি ”ইয়েস”।”
আনোয়ারা বেগমের হাসি পেলেও তিনি হাসলেন না। বললেন,”শার্ট তো কুঁচকে গেছে দাদুভাই।”
তাজদার নিজের শার্টটির দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। এই প্রথমবার সে কুঁচকানো শার্ট গায়ে দিয়েছে। আর এটার জন্য দায়ী শাইনা মমতাজ। হাতের কাছে পেলে আগে ঠাস করে একটা দেবে পিঠের উপর।
শাইনাদের বাড়ির পেছনে পেয়ারা গাছ ছিল। সেখান থেকে সে পেয়ারা পেড়েছে কয়েকটা। চাচাতো বোনদের নিয়ে ঘাটে বসে মরিচ দিয়ে খচখচ করে খাচ্ছিল তখুনি সেখানে তিতলি এল। শাইনাকে সবটা খুলে বললো। শাইনা বলল,
“কোথায় গিয়েছে বলেনি?”
তিতলি বলল,”ঘুরতে টুরতে চলে যাবে। দেশে আসার পর থেকে তো কোথাও ঘুরতে যায়নি। আম্মু একটা কথা বলতে বলেছে তোমাকে।”
শাইনা মনে মনে ভাবছিল তিতলি এরকম কিছু বলবে। আর সেটাই সত্যি হলো। তিতলি বলল,
“আম্মু বলেছে ভাইয়ার সামনে যোগাযোগ রাখতে। আম্মুর ফোন রিসিভ করেনি। আব্বুর সাথে তো কথাই বলবে না। বড় ভাইয়া রেগে আছে। ফোন দেবে না। তোমাকে সকাল থেকে একবারও ফোন দেয়নি?”
শাইনা দুই পাশে মাথা নাড়লো। তিতলি বলল,
“এখন একটা ফোন দাও।”
শাইনা বলল,”রাতে করবো। এখন রিসিভ করলে তুমি কথা বলবে।”
তিতলি বলল,”আচ্ছা।”
শাইনা তাজদারের নাম্বারে কল দিল। রিং পড়তে লাগলো। কিছুক্ষণ পর রিসিভ হলো। তিতলি শুরুতেই সালাম দিল।
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমি তিতলি।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। তুমি ওখানে কি করছো?”
“আপনি আম্মুর ফোন রিসিভ করছিলেন না।”
“আমি তোমাকে কি প্রশ্ন করেছি?”
তিতলি দাঁত দিয়ে নখ খুটতে লাগলো। বলল,
“আমি আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি।”
“ফোন রাখো। ঘরে যাও।”
তিতলি ফোন রেখে দিল। শাইনার দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“নাও।”
শাইনা জানতে চাইল,”কি বললো?”
তিতলি বিরক্ত হয়ে চলে যেতে যেতে বলল,”ধুর আমাকে বকা খাওয়ানোর জন্য সবাট পাঠায়। আমি বাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যাব।”
শাইনা তার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো। শাইনা মেসেজে টাইপ করলো।
“কোথায় যাওয়া হয়েছে?”
লিখে মেসেজটা পাঠিয়ে দিল। যদিও তার ফোনে অত বেশি ব্যালান্স নেই।
কিছুক্ষণ পর মেসেজের রিপ্লাই এল।
“Oil Your Own Machine.”
শাইনা লিখলো,”I’m about to block you.”
তাজদার পাঠালো,”LOL . Cowards use these words most.”
শাইনা বলল,”টা টা বাই বাই।”
ওপাশ থেকে মেসেজ এল,”আমি এগুলোর স্ক্রিনশর্টস রাখছি। সালিশ বিচারে এগুলো দেখাব। তাছাড়া তুমি ফেসবুকে কাকে কাকে আমার নামে বিচার দিয়েছ, কি কি বদনাম করেছ, আমাকে কি কি গালি দিয়েছ সব আমি আনিসের কাছে পাঠাচ্ছি।
শাইনা বলল,”এই না।”
তাজমহল পর্ব ২৮
“দ্যান সে আই লাভ ইউ তাজদার সিদ্দিকী।”
“মরে গেলেও না।”
“আনিসের হোয়াটসঅ্যাপে আজ রাতের মধ্যে সব চলে যাবে।”
শাইনা লিখলো,”জারগো বেডা হত্তুন।”