তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১০
তাবাস্সুম খাতুন
চৌধুরী ম্যানসন এর ড্রইং রুমে আবারো সবাই এক হলো। সময়টা তখন দুপুর দুইটা বেজে এক মিনিট। সকাল থেকে এই পযন্ত বাড়ির কারোর খাওয়া নেই। নেই বলতে কেউ খাই নি। সিমি আর নিশানের একটা বিহিত না করে যেন তারা শান্তি পাচ্ছে না। তাই সবাই আবারো এক জায়গায় হলো। বাড়ির কর্তা রা এক সোফায় বসে আছে। গিন্নি রাও বসে আছে আরেক সোফায়। মেহেরিমা তার স্বামী রুবেল আর ছোট ছেলে তিহান এক সোফায় বসে আছে। মিহু, পিহু, তাজ ওরা তিনজন নিজেদের রুমে ঘুমিয়ে আছে। সামিয়া, রাত্রি, জারা, সিমি চারজন একসাথে দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে। নিশান আর জিহান সেই বেরিয়েছে এখনো আসি নি। সবাই নিশ্চুপ এমন সময় মেহেরিমা তার বড়ো ভাই এর উদ্দেশ্য বললো,,
“ভাইজান নিশান যে সিমির ছয় বছর বয়সে তাকে চেয়েছে, মানলাম। তোমরা কথা ও দিয়েছিলে। সবকিছু বললে কিন্তূ এইটা কেন বললে না? সে সিমি কে চাই কেন দিলে না তার কাছে। মানলাম তখন ছোট ছিলো। তাহলে কথা কেন দিলে?”
মেহেরিমার কথা শুনে সবাই নিশ্চুপ রইলো ভুল তো কিছু বললো না মেহেরিমা। এইদিকে জারা সিমি কে বাহু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
“দেখছিস ভাবি, আমার ভাই তোকে কত ভালোবাসে!তোর ছয় বছর বয়সে তোকে বিয়ে করতে চেয়েছে।”
সিমি কিছু বলবে পাস থেকে সামিয়া বললো,,
“ইয়া আল্লাহ কিয়া রোমান্টিক হে।”
সিমি দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বললো,,
“চুপ কর মীরজাফরের বংশধররা, আমি মরছি আমার জ্বালায় উনারা রোমান্টিক ভালোবাসা খোঁজে।”
তাজউদ্দিন এইবার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“মেহেরিমা তোর কথা সঠিক হলেও, আমার কাছে মনে হয় এই বিয়েটা না হওয়ায় উচিত ছিলো। সিমি কে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে!কেন করবে সে এমন? সিমি কি রাজি ছিলো নাকি?”
তাজউদ্দিন এর কথা তেও যুক্তি আছে বলে মনে হয় সবার। সালাউদ্দিন এইবার তার মেয়ে সিমি কে ডাক দিলো। সিমি এগিয়ে গেলো। সবার নজর এখন সিমির দিকে। সিমি মাথা নিচু করে আছে। তাজউদ্দিন কণ্ঠ নরম করে বললো,,
“সিমি মামুনি, তুমি ভয় পেও না, শুধু নির্ভয়ে বলো তুমি কি এই নামহীন বিয়েতে থাকতে চাও নিশানের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে? নাকি থাকতে চাও না? ডিভোর্স চাও?”
তাজউদ্দিন এর কথা সিমি শুনলো সবাই সিমির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সিমি কি বলে সেইটা দেখার জন্য, সিমি কিছু বলতে উদ্যোগ হতে শোনা গেলো পুরুষনালীর কণ্ঠ যেইটা আর কারোর না নিশানের ভয়েস, যে ড্রইং রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো,,
“ও রাজি থাকুক বা না থাকুক, ও আমার ছিলো, আমার থাকবে, মরে গেলেও আমার সাথে মরবে। মৃত্যু আসলে ওকে সাথে নিয়েই আমি তানভীর চৌধুরী নিশান মরবো। তাই ওর রাজি থাকা বা না থাকার কোন প্রশ্ন ওঠে না।”
সবার দৃষ্টি নিশানের দিকে। গায়ে কালো শার্ট যার হাতা ফোল্ট করা, বুকের কাছে দুই তিনটা বোতাম খোলা। হাতে ব্লেজার আরেক হাতে ফোন। সিল্কি চুলগুলো একটু অগোছালো। মুখটা গম্ভীর করে রাখা। তার পাশে জিহান দাঁড়িয়ে আছে একই লুকে মুখটা গম্ভীর করে। নিশান ঘাড় টা একবার ডান বামে ঘুরিয়ে ফুটিয়ে নিলো, যার দরুন আওয়াজ হলো। তাজউদ্দিন রাগান্নিত কন্ঠে বললো,,
“অসভ্য বেয়াদব ছেলে জন্ম দিয়েছি আমি, কোন লজ্জা সরমের বালাই নেই। সেলিনা এই ছেলে আমাদের হতেই পারে না হাসপাতাল থেকে নার্স রা পাল্টিয়ে দিয়েছে।”
তাজউদ্দিন এর কথা শুনে নিশান বাঁকা হেসে একটু এগিয়ে এসে তার আম্মুর উদ্দেশ্য বললো,,
“আম্মু আমার ও মনে হয় এই বাপ আমার না। যদি আমার জন্মদাতা বাপ হতো, তাহলে ঘন্টায় ঘন্টায় নাটক করতো না, উপস সরি সিনেমা।”
নিশানের কথা শুনে সবার মুখ দিয়ে আস্তাগফিরুল্লাহ বাহির হলো। সেলিনা মুখ ঝামটা দিয়ে বললো,,
“ছিঃ নিশান এইসব কি কথা তোমার? সে তোমার জন্মদাতা পিতা সন্মান করতে শেখো। ”
নিশান — “সন্মান তাকেই করা যাই যে সন্মানের মর্ম বোজে। উনাকে সাবধান করে দেন বারবার আমার সম্মানে হাত না দিতে, নিত্য নিত্য নাটক অভিনয় না করতে।”
বলে সিমির হাত ধরতেই সালাউদ্দিন বললো,,
“নিশান তোমার কিসের সন্মান? আমার ঘর থেকে আমার সন্মান আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছো? সন্মান এইটা তোমার সন্মান? আমার সম্মান নেই? আমার মেয়েকে বিয়ে করলে রাতের আঁধারে চুরি করে সন্মান আমার নষ্ট করলে না?”
নিশান ঠান্ডা কন্ঠে বললো,,
“মেজো চাচ্চু সরি শশুর আব্বা যেই বাড়ির মেয়ের সম্মানের কথা বলচ্ছেন? সেই মেয়ের সম্মান এই বাড়ির ছেলের হাতেই ধ্বংস হয়েছে, so এইসব না ভেবে চিল করেন শশুর আব্বা চিল।”
সালাউদ্দিন — “বুজবে কিভাবে তুমি এক মেয়ে হারা বাপের কষ্ট? আমার মেয়েকে কেড়ে নিয়ে আমাকে নিঃসস করেছো? বুজতে পারছোনা, তুমিও মেয়ের বাপ হবে তখন বুজবে?”
সালাউদ্দিনের কথাই নিশান বাঁকা হেসে বললো,,
“বাবা আমি উহুম ইচ্ছা নেই কোন প্রকার,আমার ইশু কে আমি ব্যাতিত কেউ কষ্ট দেওয়ার সাহস করতে পারবেনা।যদিও বাইচান্স হয়ে যাই, আমার ইশু কষ্ট পাই তো ওই বাচ্চা কেউ আমি ছেড়ে দিবো না খুন করে ফেলবো। So বাচ্চার প্ল্যান নেই। এইসব বাচ্চা কাচ্চা বোরিং।”
নিশানের এই কথা যেন সিমির কানে বাজছে। সে নিশানের দিকে তাকালো। মনে মনে বললো,,
“একি আদাও মানুষ? নিষ্পাপ বাচ্চাকেও খুন করতে চাই? আবার বোরিং ছিঃ, আল্লাহ নিয়তি আমার এই কোন মানুষের সাথে বাধলে তুমি। এমনি এমনি আর আমার মুখ থেকে বিদেশি কুত্তা নাম টা বাহির হয় নি। হারামজাদা।”
নিশানের কথা শুনে কারোর আর কোন কথা বলার ইচ্ছা রইলো না। নিশান সিমির হাত ধরে টেনে সিঁড়ির কাছে নিয়ক গেলো কি মনে করে আবারো দাঁড়ালো ড্রইং রুমে সবার দিকে আবারো তাকিয়ে বললো,,,
“আর বারবার এইভাবে নাটক করা অফ করেন সবাই। Because বার বার ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ও আমি নই।”
বলে নিশান সিমি কে টানতে টানতে নিজের রুমের দিকে নিয়ে গেলো। নিচে সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। জিহান সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে উপরে উঠতে গেলেই মেহেরিমা ডাক দিলো,,
“জিহান দাঁড়াও।”
জিহান দাঁড়ালো। সামিয়া জারা কে ধাক্কা মেরে বললো,,
“ন্যাসপাতি ভাই রোজিনার বাচ্চা সিমি কে নিয়ে পালালো, রেখে গেলো অসহায় জবেদার ভাতার কে। এইবার শুরু হবে জবেদা কে খোঁজা। কারণ জবেদার ভাতার জবেদা কে ছাড়া হয়ে যাচ্ছে গাধা।”
সামিয়ার এমন কথা শুনে জারা আর রাত্রি দুইজনেই মুখ চেপে হাসলো। এইদিকে মেহেরিমা শক্ত কণ্ঠে। জিহান কে বললো,,
“কাকে খুন করতে গিয়েছিলে তোমরা?”
জিহান — “অফিসে গিয়েছিলাম।”
মেহেরিমা — “দুই ভাই ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছ। একজন তো বিয়ে করেছে রাতের আঁধারে চুরি করে তুমি কি করবে?”
জিহান এর সরল জবাব,,
“দিনের আলোয় মেয়ে সহ মেয়ের বাবা কে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো, Because সাক্ষী হিসাবে তার বাবা কে রাখবো।”
বলে জিহান উপরে উঠে যেতে নিলেই মেহেরিমা আবারো বললো,,
“দুই ভাই বিদায় হও। যতসব মানুষ করতে পারলাম না অসভ্য হয়েছে দুইটা। ”
জিহান আর দাঁড়ালো না নিজের রুমে চলে গেলো। রাত্রি ফিসফিস করে জারা আর সামিয়া কে বললো,,
“দেখেছিস আমার ভাইয়ের কত এটিটিউড।”
সামিয়া বাহবা দিয়ে বললো,,
“হ্যা জবেদার ভাতারের এটিটিউড সমুদ্রের তলে।”
নিশান সিমি কে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা লক করে দিলো। সিমি নিশান কে বললো,,
“আপনি কি আদাও মানুষ? ঘৃন্না হচ্ছে আপনার প্রতি আমার।”
নিশান হাতে থাকা ব্লেজার আর ফোন টা বেডে চেলে ফেললো। শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে সিমির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,,
“I don’t mind baby.. ঘৃন্না কর আমাকে, আমি ঘৃন্না পাওয়ারই যোগ্য। তবে আসক্তি হতে আসবি না। আমার লাইন এ পৌঁছাতে গেলে তোকে আবারো জন্ম নিতে হবে।”
এইদিকে নিজের দিকে নিশান কে আসতে দেখে সিমি পিছাতে লাগলো তুতলানো কন্ঠে বললো,,
“এ.. এ.. এক.. একি.. কো.. কথা.. ই.. এস.. চেন..?”
নিশান শার্ট খুলে চেলে ফেলে দিলো, সিমির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,,
“উম জান তুতলাচ্ছ কেন?”
সিমি পিছাতে পিছাতে একদম দেওয়াল এর কাছে চলে আসলো। দেওয়াল এ পিঠ ঠেকলো। যাওয়ার আর রাস্তা নেই। নিশান দুই হাত দেওয়াল এ রেখে সিমি কে আটক করলো। নিশান সিমির আরো কাছে আসলো। তাঁদের মাঝে আর দুই ইঞ্চি ফাঁকা আছে। সিমি একই ভাবে বললো,,
“ক.. কি.. কো.. কর.. চেন..!”
নিশান সিমির চোখের দিকে তাকিয়ে হাঁস্কি টোনে বললো,,
“সামান্য লিপ কিস করবো। জান ঠান্ডা হয়ে থাকো।”
বলেই নিশান সিমির কোমল ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে করে নিলো। সিমির চোখ জোড়া বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। নিশান সিমির কোমরের খাঁজে এক হাত দিলো। আরেক হাত সিমির গালে। সিমির রেসপন্স না পেয়ে সে কামড় বসালো জোরে। সিমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলে। দম বন্ধ হয়ে আসছে নড়তেও পারছেনা। এইদিকে নিশান আবারো সিমির কোমরের খাঁজে চাপ দিলো। কিন্তূ সিমি রেসপন্স করছে না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে নিশান সিমি কে ছেড়ে দিলো। সিমি ছাড়া পেতেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। এর মধ্যে নিশান সিমির গলায় মুখ দিলো। ঘাড়ের কাছে জোরে কামড় দিলো। সিমি চোখ মুখ খিচে রইলো। নিশান সিমির গলায় চুমু দিতে লাগলো। গলায় ঝুলানো উড়না যেন তাকে বাঁধা দিচ্ছে। নিশান উড়না টা এক টানে খুলে ছুড়ে ফেলে দিলো। নিশান সিমির গলা থেকে চুমু দিতে দিতে নিচে নামতেই। সিমির কান্নার শব্দ শুনতে পেলো। সিমির কান্না যেন তাকে বাঁধা দিলো। সে দ্রুত সরে গেলো সেই জায়গা থেকে। ফ্লোরে পরে থাকা উড়না টা সিমির দিকে চেলে দিয়ে বললো,,
“বেড়িয়ে যা।”
সিমি এখনো ঐভাবে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। নিশান জোরে চেঁচিয়ে বললো,,
“কথা কানে যাই না, I say get out…!”
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৯ (২)
সিমি আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। সে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। সিমি চলে যেতেই নিশান বেলকুনিতে গেলো। রাগ হচ্ছে তার প্রচুর। বেলকুনিতে থাকা ফ্লাওয়ার বাস টা জোরে আছাড় মারলো। রুমে গিয়ে টি টেবিলতুলে জোরে আছাড় মারলো। ডেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে জোরে ঘুষি মারলো আয়না তে। আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। কিছু কাঁচ তার হাতেও বাঁধলো রক্তে ভিজে যাচ্ছে ফ্লোর। নিশান ঐভাবে বেলকুনিতে গেলো। একটা সিগারেট ধরালো সেইটাই টান দিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। বাইরে আকাশ মেঘলা করে আসছে হয়তো পানি হবে। দেখতে দেখতে বাতাস শুরু হয়ে গেলো। নিশান এখনো ঐভাবে ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে সিগারেট এর উপরে সিগারেট টানতে লাগলো।