তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৩

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৩
তাবাস্সুম খাতুন

“বিদেশি কুত্তা তোকে অভিশাপ দিলাম, এই জীবনে তুই বউ পাবি না সারাজীবন সিঙ্গেল বিদেশি কুত্তা থাকবি।”
নিশান জোর গলায় বললো,,
“আমাকে কিছু বলেছিস তুই?”
সিমি হাসি দিয়ে বললো,,
“না না আপনাকে কি আমি কিছু বলতে পারি, আমার মতো পিঁপড়া আপনার মতো হাতির সাথে লরা তাও কল্পনা, সত্যি বলছি আমি কিছু বলি নি।”
নিশান — “না বললেই ভালো, আর দ্রুত বাহির হো, নয়তো আমিই ঢুকে যাবো চেঞ্জ করাতে।”
সিমি — “না না আমি আসছি।”

নিশান আর দাঁড়ালো না, সে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে কিচেন এ গেলো সিমির জন্য খাবার আনতে। ওষুধ খাওয়াতে হবে। নিশান নিচে নেমে দেখে
সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার করছে। সবাই একবার নিশানের দিকে তাকালো তারপর আবারো চোখ নামিয়ে নিজেদের মতো খাওয়াই মনোযোগ দিলো। নিশান কে কিচেন এ ঢুকতে দেখে সেলিনা গেলো। নিশান কে বললো,,
“কিছু লাগবে আব্বু?”
নিশান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
“ইশুর জন্য খাবার নিতে এসেছি।”
সেলিনা – “তুই অপেক্ষা কর আমি দিচ্ছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলে সেলিনা একটা প্লেটে এক প্লেট ভাত, সাথে সবজি রান্না আর মাংস দিয়ে নিশানের হাতে তুলে দিলো। নিশান প্লেট টা নিয়ে আর কোন কথা না বলে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। নিশান চলে যেতে সেলিনা নিশানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কয়দিনের মধ্যে যেন পুরো পরিবারটা এলোমেলো হয়ে গেলো। সেলিনা আবারো ডাইনিং টেবিলে আসে খাবার সার্ভ করতে। নিশান উপরে নিজের রুমে ঢুকলো। দেখলো সিমি রুমে নেই। নিশান টি টেবিলের উপরে প্লেট রেখে ওয়াশরুম এ গেলো না নেই। নিশান ভ্রু কুঁচকালো সে এইবার বেলকুনিতে গেলো। দেখলো সিমি এইদিকে ঐদিকে উঁকি মারছে। নিশান দেওয়াল এ হেলাম দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বললো,,

“তুই কি সম্ভবত পালানোর প্ল্যান করছিস ইশু?”
ইশু নাম শুনে যেন সিমি ভয় পেয়ে গেলো সে দ্রুত পিছনে ফিরে দেখে নিশান দাঁড়িয়ে আছে সিমি কেবলা মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললো,,
“না না একদম না আমি কিভাবে পালাবো? এই জায়গা থেকে পড়লে আমি ইন্নালিল্লাহি হয়ে যাবো নিশান ভাই আমি পাল..!”
বাকি কথা শেষ করার আগেই নিশান সিমির কাছে গিয়ে সিমি কে তুলে রেলিং এর উপরে বসিয়ে দিলো। সিমি ভয়ে নিশানের হাত জড়িয়ে ধরতে গেলে নিশান সরে গেলো। সিমির ডান হাত শুধু টেনে ধরলো। সিমি ভয়ে ভয়ে বললো,,
“আমি পরে যাবো, পরে গেলে মরে যাবো, আমাকে ছেড়ে দেন প্লিজ।”
সিমির কথা যেন নিশান আরো রেগে গেলো। নিশান এইবার সিমি কে শুয়ে দিলো। সিমির অর্ধেক এর বেশি বডি বাহিরে। সিমি চোখ বন্ধ করে বললো,,

“আমার ভয় লাগছে, প্লিজ।”
নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“মরার শখ জাগছে না, হাত ছেড়ে দেই পর নিচে, মরবি না হাত পা ভাঙবে, তাই নিচে পরে যা আমি গুলি করে দিচ্ছি জাগায় মরে যাবি, দেই ফেলে।”
সিমি — “না না একদম না এই ভুল করবেন না, আমার এখনো মরার বয়স হয়নি, নিশান ভাই আমাকে ছে…!”
সিমির কথা শেষ করার আগেই নিশান হাত একটু হাল্কা করলো সিমি একেবারে পরে যেতে নিলেই নিশান ধরে ফেলে রাগানিত্ব কণ্ঠে বললো,,

“আমি তোর কি লাগি?”
সিমির এখন জ্ঞান নেই সে বাঁচতে পারলে যেন হয়, তাই সেইভাবেই বললো,,
“আমার চাচাতো ভাই।”
চাচাতো ভাই এই কথা যেন নিশানের রাগে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো সে নিজেকে শান্ত করে আবারো বললো,,
“আমাদের সম্পর্ক কি?”
সিমি — “ভাই আর বোন।”
নিশান এইবার সিমি কে নিচে নামিয়ে দুই পাশে হাত দিয়ে আটক করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“তিন কবুল বলে স্বামী মানিয়ে এখন ভাই বোন মারাস?”
সিমি কাঁদো কাঁদো ভয়েসে বললো,,
“আসলে আমি খুব ভয় পেয়েগেছিলাম তাই ঐসব উল্টোপাল্টা বলছি রাগ করবেন না প্লিজ নিশান ভাই আ..!”
নিশান আবারো সিমি কে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে ডান গালে জোরে একটা চড় মেরে রেলিং ঘেঁষে একদম নিচু করে বললো,,

“ইডিয়েট দেখেছি but তোর মতো আজাইরা ইডিয়েট আমি দেখি নি, সর ছেমরি।”
বলে সিমি কে চেলে দেওয়ার মতো করে ফেলে দিয়ে বেলকুনি থেকে চলে গেলো। রুমেও থাকলো না সোজা রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো। সিমি গালে হাত দিয়ে নিশানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো,,
“একশোবার তোকে ভাই বলবো শালা বিদেশি কুত্তা, নিশান ভাই ও বলবো না তোকে আমি ন্যাসপাতি ভাই বলবো, এনাকোন্ডা, হাতি, বিদেশি কুত্তা, ইঁদুর, ছাগলের দশ নাম্বার বাচ্চা, মিয়া খলিফার এক্স। থাক আজ এই পযন্ত, বাকিগুলো কালকে এক্সপ্লেইন করবো হুউউউ।”

বলে সিমি রুমে ঢুকলো। রুমে ঢুকে টি টেবিলের উপরে দেখে প্লেটে ভাত তরকারি রাখা। সিমির এমনিতেই প্রচন্ড ক্ষুদা লাগছিলো। খাবার দেখে যেন আরো ক্ষুদা বেড়ে গেলো। সে সোফায় গিয়ে বসলো। আলাদা একটা প্লেট। নিয়ে সেখানে অল্প ভাত আর তরকারি নিয়ে খেতে শুরু করলো।
এইদিকে নিশান সোজা ছাদে চলে আসলো। এসে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো। সিগারেট এ টান দিতে লাগলো। রাগে তার মাথা ফেঁটে যাচ্ছে সয্য হচ্ছে না, কিছু। সিগারেট এ আর দুই টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দিলো। সে ছাদ থেকে নেমে গেলো। রুমে না ঢুকে উল্টে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। নিশান কে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে জিহান দেখলো। এই রাতে নিশান কোথায় যাচ্ছে এইটা জানতেই জিহান তার পিছু পিছু গেলো। নিশান গাড়িতে উঠতেই জিহান উঠে বসলো। নিশান জিহান কে দেখে রাগে কটমট করতে করতে বললো,,

“কি সমস্যা তোর? গাড়িতে উঠছিস কেন?”
জিহান ভাবলেশিন হয়ে বললো,,
“তোর বাপের গাড়ি যে উঠতে পারবোনা, এইটা আমার জানের জিগারের গাড়ি তাই উঠে পড়ছি তোর সমস্যা হলে নেমে পর।”
নিশান নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,,
“দেখ ভালো লাগছেনা নেমে পর।”
জিহান ভোলাভালা উত্তর দিলো,,
“কিভাবে নামতে হয় আমি জানি না তো?”
নিশান আর কথা না বাড়িয়ে স্টেয়ারিং ঘোরালো। ফুল স্প্রিড এ গাড়ি চালাতে দেখে জিহান বললো,,
“আব্বে এইভাবে এত স্প্রিড এ চালাস কেন ভাই, তুই তো বিয়েও করেছিস আমি তো এখনো করি নি।”
নিশান — “বিয়ের গুষ্টি মারি চুপ কর বস, নয়তো পাছায় লাথি দিয়ে বাহির করে দেবো।”
জিহান চোখ ছোট ছোট করে বললো,,

“এই সাহস তোর এখনো হয় নি সোনা।”
নিশান — “এইসব সোনা তোনা বলবি না।”
জিহান — “আমি তো সোনা বলেছি তোনা না।”
নিশান জিহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,,
“মেয়ে মানুষ নাকি তুই উপস সরি! তুই কি তৃতীয় লিঙ্গ?”
জিহান দুই গালে হাত দিয়ে তওবা করতে করতে বললো,,
“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ কুত্তা হারামি, আমি তৃতীয় লিঙ্গ অসভ্য বেয়াদব? কিভাবে ভাবলি তুই? আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুই নিজেই তৃতীয় লিঙ্গ।”
নিশান বাঁকা হেসে বললো,,
“দেখেছিস কখনো?”

জিহান — “দেখা লাগে নাকি তোর আচরণে বোঝা যাই।”
নিশান — “উহুম দেখতে হয়, তুই চাইলে দেখতেই পারিস আমরা আমরাই তো আমি তৃতীয় লিঙ্গ কিনা চেক করে দেখ। তবে আমি সিওর 100% তুই তৃতীয় লিঙ্গ।”
জিহান মুখ ভাঙছিয়ে বললো,,
“চেক করে দেখে নে আমি পুরুষ সলিট পুরুষ।”
নিশান — “তোর মুখের ভাষা কিন্তূ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
জিহান — “যার বেস্ট ফ্রেন্ড এর মুখের ভাষা মাশাআল্লাহ,, তো সেই হতভাগার মুখের ভাষা কি আস্তাগফিরুল্লাহ হবে?”
নিশান হাল্কা হেসে ঠোঁট কামড়ে বললো,,

“আস্তাগফিরুল্লাহ, মাশাআল্লাহ র তফাৎ বুঝোস তুই?”
জিহান — “অপমান করছিস নাকি তুই?”
নিশান — “উহুম ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দিচ্ছি।”
জিহান — “ষ্টোকে বাঁশ অনেক আছে, আর লাগবে না। But আমরা যাচ্ছি কোথায়?”
নিশান — “তোর শশুর বাড়ি।”
জিহান হেসে বললো,,
“আমার শশুর বাড়ি কোন দিকে ভাই?”

নিশান — “তোর বউ যেইখানে থাকে সেখানে।”
জিহান — “আমার বউ কই?”
নিশান — “তোর শশুর বাড়ি যেইখানে সেইখান।”
জিহান — “তো সেই শশুর বাড়িটা কোথায়?”
নিশান এইবার ধমক দিয়ে বললো,,
“শালা চুপ কর, সেই থেকে বকবক করে যাচ্ছে, আর একটা কথা বলে দেখনা সত্যিই তোর পাছায় লাথি মেরে আমি ফেলে দেবো।”
জিহান ঠোঁটে শাহাদাত আঙ্গুল দিলো তার মানে সে চুপ। নিশান গাড়ি চালাতে লাগলো। কোন এক অজানা গন্তব্যর দিকে।

এইদিকে সিমি খাওয়া শেষ করে বাকি খাবারের দিকে তাকিয়ে আফসোস করে বললো,,
“ইস বিদেশি কুত্তা টা খেলো না, আফসোস হচ্ছে, বিশেষ করে খাবার গুলোর জন্য। আহারে বেচারা টা মনে হয় রেগে গেছে।”
বলে কিছু মনে পড়তেই সিমি নিজেকে শাসিয়ে বললো,,
“সিমি না না এইসব ভাবা যাবে না, আফসোস একদম না, একদম ওই বিদেশি কুত্তার জন্য মন খারাপ করা যাবে না। শালা বিদেশি কুত্তা আস্ত একটা জলহস্তী।”

বলে সিমি উঠে দাঁড়ালো। সে ওয়াশরুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। তারপর বেডে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো। ঘুম আসছে না আর। বিকালে যেই জ্বর টা ছিলো সেইটা এখন নেই। দেহ ঠান্ডা হয়ে আছে। সিমি তার বালিশের পাশে থাকা ফোন টা হাতে নিলো। ফেইসবুক এ ঢুকে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। হুট্ করে একটা ছবি তার সামনে আসলো যেইটা ছিলো নিশান এর। আইডির নাম বড়ো করে লেখা Tanvir Choudhuri Nishan সিমি ছবিটা দেখলো। নিশান ঘাড় কাত করে যেন কি দেখছে খুব মনোযোগ সহ করে, দেখার মধ্যে বাঁকা হাসি দিয়েছে সেই সময় পিক টা তোলা হয়েছে মন্দ লাগছে না প্রায় 4k রিয়েক্ট সাথে কমেন্ট ও এক হাজার এর কাছাকাছি। আবার ক্যাপসন দেওয়া আছে I want you.. সিমি এইটা পরে বিড়বিড় করলো,,
“এই বিদেশি কুত্তার কাকে চাই আবার?”

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১২

সে এইবার কমেন্ট বক্স এ ঢুকলো।বেশিরভাগ মেয়েদের আইডি দেখলো কিছু কমেন্ট সে পড়লো। So cute, nice, আমি আছি তো বেবি আমাকে নিয়ে যাও। সিমি এইগুলো পরে কি রিয়েকশন দেবে যেন ভুলে গেসে। সে আবারো কিছু পড়লো। বেবি তোমার বিয়ে করতে চাই।তোমার বাড়ির ঠিকানা দাও আব্বু আম্মু পাঠিয়ে দিচ্ছি। এই দুটো কমেন্ট পরে সিমি উচ্চসরে হেসে উঠলো। সিরিয়াসলি এরা বাঘের গুহায় কত সুন্দর ভাবে আসতে চাই। তবে এইটা দেখে সিমির মনে শয়তানি খেলে গেলো। তার আইডির নাম যা দেওয়া হয়তো চিনবে না নিশান ভাই। আইডির নাম বৃষ্টি বিলাস। আর আইডি পিক এক কার্টুন মেয়ের। তাই সে এইবার সদুই তিনজনের কমেন্ট এ চৌধুরী ম্যানসন এর ঠিকানা দিয়ে দিলো।তারপর ফেইসবুক থেকে বেড়িয়ে ফোন রেখে ঘুমের দেশে পারি জমাতে লাগলো। মূল কথা,এইখানে কি হয়েছে সে জানেনা।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৩ (২)