তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৩ (২)

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৩ (২)
তাবাস্সুম খাতুন

রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট, নিশানের গাড়ি থামলো নির্জন এক পরিবেশে। যেইখানে কোন গাড়ির আওয়াজ নেই, মানুষের আওয়াজ নেই। একেবারে স্তব্ধ নিশ্চুপ, রাস্তা টা একটু উঁচু। ডান পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে, আর বা পাশে আছে গ্রাম্য এলাকা, তবে রাস্তা ছাড়া অনেকটাই দূরে। নদীর বুকে আঁচড়ে পড়ছে চাঁদের আলো, কি সুন্দরই না দেখাচ্ছে যেন প্রকৃতি কে অনুভব করতে হলে এইখানে আসতে হবে। নিশান গাড়ি থেকে নামলো। নিশানের সাথে জিহান ও নামলো। নিশান গাড়ির ডিক্কির উপরে উঠে বসলো জিহান ও তাই করলো। নিশান একটা সিগারেট বাহির করে ধরিয়ে টান দিতে লাগলো। একই ভাবে জিহান ও তাই করলো। নিশান চোখ ছোট করে বললো,,

“আমার কপি করিস তুই?”
জিহান নিজের মতো সিগারেট এ টান দিতে দিতে বললো,,
“আমার বয়ে গেছে তোকে কপি করতে, সিগারেট তুই ও খাস আমিও খাই, পাড়ার মানুষ ও খাই তাই এইখানে কপি করার কোন প্রশ্ন আসে না।”
নিশান আর কিছু বললো না চুপ রইলো, দীর্ঘ নিরাবতা পরে জিহান বললো,,
“এইখানে আসলি কেন?”
নিশান — “এমনি।”
জিহান — “কোন বিষয় নিয়ে কি সিমির সাথে রাগ করেছিস?”
নিশান সিগারেট এ টান দিয়ে বললো,,
“তোর বোনটাই হলো রাগের একটা ফ্যাক্টরি, তাই কিছু করলেও কি না করলেও কি, তোর বোনের কাছে গেলে আমার রাগ দ্বিগুন হয়ে যাই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জিহান — “তোর কথার মানে বুজলাম না।”
নিশান — “সব কথা সবাইকে বুজতে নেই।”
জিহান — “বাল বুজবো শালা এই পযন্ত একটা ভালো ভাবে কিছু বলিস নি তুই, আচ্ছা বাদ্দে এইসব একটা কথা বল।”
নিশান সিগারেট এ শেষ টান দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,,
“বল…!”
জিহান — “অডিও বুক কি এখনো শুনিস?”
নিশান বাঁকা হেসে বললো,,
“কেন শুনবো না?”
জিহান — “মানে এখনো শুনিস?”
নিশান — “সন্দেহ আছে কোন।”

জিহান — “না, তবে বিয়ে হয়ে গেছে আমার বোন তোর সাথে থাকে এখন কিভাবে শুনিস?”
নিশান — “তো বিয়ে হয়ে গেছে বউ আছে, তাতে আমার অডিও বুক শোনা তে কি আসে যাই?”
জিহান একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,,
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, উত্তর দিবি?”
নিশান — “বলে ফেল।”
জিহান গলা পরিষ্কার করে বললো,,
“আমি যেহেতু তোর বন্ধু তাই জিজ্ঞাসা করছি।”
নিশান বিরক্ত কণ্ঠে বললো,,
“কথা না ঘুরিয়ে মেইন জায়গায় একশন মার শালা।”
জিহান একটু কেশে বললো,,
“ইয়ে মানে তোদের ফার্স্ট নাইট কি শেষ?”

নিশান আচমকা জিহানের দিকে তাকালো চোখ ছোট ছোট করে, জিহান যেন এই প্রশ্ন করেও বিপদে পড়লো এই সাইকো বেডা এখন তাকে মারে, আরে না মারবেনা।নিশান চোখ নামিয়ে নিলো হেলাম দিয়ে কপালে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“যেইদিন তার সম্মতি পাবো, সেইদিন তাকে আপন করে নেবো, কিন্তূ জোর করবো না।”
জিহান অবাক কণ্ঠে বললো,,,
“ভাই তাহলে তুই এইসব শুনে কিভাবে ঠিক থাকিস? মানে কন্ট্রোল করিস কিভাবে?”
নিশান বাঁকা হেসে বললো,,
” কোল্ড জেল আছে।”

নিশানের কথা শুনে জিহান কেশে উঠলো। নিশান কিছু বলবে তখনি তার ফোনে নোটিফিকেশন আসলো। নিশান উঠে বসলো ফোন হাতে নিয়ে দেখলো। ফেইসবুক থেকে আসছে, নিশান ফেইসবুক ওপেন করলো। যেই পিক এ সিমি নিশানের বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলো সেইটা একদম তার সামনে আসলো। নিশান সম্পূর্ণ টা পরে ঠোঁট চেপে ধরলো। জিহান নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে, নিশান কে কিছু বলতে না দেখে জিহান বললো,,
“কিরে কি হলো আবার?”
নিশান ফোন অফ করে জিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“তোর বোনের সতীনের ঘর করার ইচ্ছা হচ্ছে, বুজলি?”
জিহান বুজতে না পেরে বললো,,
“মানে কি আমি বুজতে পারলাম না।”

নিশান — “বোঝার দরকার নেই, কয়দিন পরে লাইভ দেখে নিস্।”
বলে নিশান নেমে গেলো, জিহান ও নামলো ও বললো,,
“লাইভ দেখবো মানে?”
নিশান গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো,,
“মানে আমি লাইভে আসবো, তুই কমেন্ট করিস। ওঠ গাড়িতে।”
জিহান উঠে বসলো নিশানের কথা সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, কিচ্ছু বুজতে পারছেনা। নিশান আবারো গাড়ি ঘোরালো। গাড়ি যে আবারো কোথায় যাচ্ছে জিহান জানে না, তবে সে আর কোন প্রশ্ন করলো না। গাড়ি ঐভাবেই আপন গতিতে চলতে লাগলো।

— “তোর সতীনের ঘর করার খুব ইচ্ছে তাই না ইশু?”
সিমি কাঁপা কণ্ঠে বললো,,
“না না আমি আমি ও.. ঐটা.. ফাজ.. লামো.. করে.. করছি…”
নিশান হাতে থাকা ছুড়ি টা এইপাসে ঐপাশে ঘুরাতে ঘুরাতে সিমির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,,
“উম্ম বেবি তুতলাচ্ছ কেন?”
সিমি ভয়ে পিছাতে পিছাতে দেওয়াল এ পিঠ ঠেকলো সে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,,
“ভা.. ভাইয়া. প্লিজ আমাকে মারবেন না আমাকে ছেড়ে দিন।”
নিশান এক হাতে ছুড়ি ধরে আছে আরেক হাত দেওয়াল এ রাখছে, ছুড়ি টা সিমির মুখে দিয়ে টেনে আনতে আনতে বললো,,

“মারবো না তো জান, আদর করবো, তুমি সত্যি চাও আমি বিয়ে করি?”
সিমি — “না না আমি আমি তো মজা করেছি সত্যিই বলছি।”
নিশান এর মুখের ভাব পাল্টে গেলো সে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,,
“মজা সব বিষয়ে তুই মজা মারাস? আমি কি তোর দাদা লাগি নাকি যে মজা করবি। বালের মজা সর।”
বলেই নিশান ছুরিটা সিমির পেটে ঢুকিয়ে দিলো, রক্ত বেরোচ্ছে প্রচন্ড,সিমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। তার কণ্ঠের আওয়াজ ও যেন বেইমানি করছে বেরোচ্ছে না, কষ্ট। হচ্ছে তার আর নিশান খিলখিল করে হাসছে। চোখ দুটো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেলো। মরে গেছে সে, বেঁচে নেই আর। ঠিক তখনি কানে ফজরের আজানের ধ্বনি শুনতেই সিমি বেডের উপরে লাফ দিয়ে উঠলো। উঠে লাইট অন করলো পেটে হাত দিয়ে দেখলো না রক্ত নেই, ছুড়ি নেই। সিমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে পাশে টি টেবিলে থাকা জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে এক ঢোকে সম্পূর্ণ শেষ করলো। সারা দেহ ঘেমে গেছে। এসি চালানো আছে তাও ঘাম হচ্ছে। সিমি মাথা চেপে ধরে নিজেকে রিলাক্স করতে লাগলো। এইভাবে প্রায় দশ মিনিট লাগলো স্বাভাবিক হতে। স্বাভাবিক হতে সে নিজেই নিজেকে বললো,,

“সিমিরে সময় থাকতে দ্রুত ডিলেট কর তোর কমেন্ট, নয়তো এই ভয়ঙ্কর স্বপ্ন টা সত্যি হয়ে যাবে।”
বলে সিমি নিজের ফোন হাতে নিয়ে সেই পিক এর কমেন্ট এ ঢুকে অনেক খুঁজে নিজের কমেন্ট বাহির করলো তারপর ডিলেট করে। দিয়ে বুকে হাত দিয়ে দুই তিনবার জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো,,
“যদি বাঁচতে চাস তাহলে এইরকম ভুল আর কখনো করবি না, সিমি বাঘের গুহায় যেচে কোনো সময় যাবি না সাবধান করে দিলাম। কি স্বপ্ন মাইরি, আমি তো মনে করছি আমি মরেই গেছি।”
সিমি আর বেডে বসলো না সে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুম এ ঢুকে ফ্রেশ হতে গেলো।

সকাল আট টা বাজে। বাড়ির সকলে ডাইনিং টেবিলে সকালের নাস্তা করছে, সাথে সিমি ও আছে। কিন্তূ নিশান আর জিহান নেই, তারা এখনো বাড়ি ফেরে নি কোথায় আছে কেউ জানেনা। আজকে সিমি ভার্সিটি যাবে, অনেকদিন হয়ে গেছে তারা ভার্সিটি যাই না।
তাজউদ্দিন সিমি কে উদ্দেশ্য করে বললো,,
“ভার্সিটি কি আর যাবে না?”
সিমি মাথা নিচু করে বললো,,
“জি বড়ো আব্বু আজকে থেকে যাবো।”

তারপর আর কোন কথা হলো না সবাই চুপ। যে যার মতো নাস্তা করতে লাগলো। নাস্তা শেষ করে সিমিরা বিদায় নিয়ে চলে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্য। বাড়ির কর্তারা নিজেদের অফিসে গেলো। সিমিরা নিজেদের গাড়ি করে যাচ্ছে। সামিয়া জারা কে ডাক দিয়ে বললো,,
“জানিস জাওড়া পাখি, একজন বিয়ে করে বর পেয়ে আমাদের ভুলে গেছ।”
জারা একটু দুঃখ প্রকাশ করে বললো,,
“হ্যা রে সামু রামু আমরা এখন কেউ না, এখন তার জামাই তার সব।”
সিমি চোখ ছোট ছোট করে তাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“তোরা কি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে বলছিস?”
সামিয়া — “না না তোকে বলবো কেন? তুই তো জামাই নিয়ে বিজি আমাদের কথা আর কি শুনবি।”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“আমি বুজতে পারছি তোরা আমাকে মিন করছিস?”
জারা এইবার রাত্রি কে বললো,,
“শোন্ রাতের নেশা আমরা আজ থেকে তিন বান্ধবী, রোজিনার বাচ্চা সিমি তার জামাই কে নিয়ে থাক।”
সিমি এইবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“হারামির দলেরা আমি মরছি আমার জ্বালায়, উনারা আসছে গাছে তুলতে।”
সামিয়া — “কি রে কি জ্বালায় মরস।”
সিমি — “ওই বিদেশি কুত্তা আমার জীবন তাকে কয়লা করে দিলো।”
রাত্রি — “কয়লা কি বেঁচতে পারবো।”
সিমি চোখ রাঙিয়ে বললো,,
“হোপ বেডি।”

জারা — “ঠিকই তো বললো রাতের নেশা, বাবা তুই কি স্বার্থপর হয়ে গেছিস এক ছাদের নিচে থেকেও তোর সাথে কথা বলতে পারি না।”
সিমি জারার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“এইগুলো তোর ওই বিদেশ ফেরত ভাই কে বল, শালা হাতি আমার জীবন টা তেজপাতা করে দিলো। কথা নেই বাত্রা নেই ঠাস ঠুস্ করে মারতেই আছে, আমার গাল টা মনে হয় সরকারি পেয়েছে।”
জারা হাসি দিয়ে বললো,,
“আমার ভাই কে নোবেল দিতে হবে, এই কাজ টা আরো আগে কেউ করলে ভালো হতো। ভাবিজান আমার ভাই তার জায়গায় ঠিকই আছে।”

জারার কথা শুনে সামিয়া আর রাত্রি হেসে দিলো। সিমি রাগে ফুসছে। জারা সিমি কে দেখে বললো,,
“এই দেখ এই দেখ আমার ভাবিজান এখন আমার ভাই এর মতো হয়ে গেছে, কিভাবে রেগে আছে দেখ। ফুল ন্যাসপাতি ভাই এর কপিক্যাট।”
সিমি এইটা শুনে মুখ ঐদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,,
“অসম্ভব আমি ওই বিদেশি কুত্তা কে কোন কালেই কপি করি নি করবো না।”

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৩

সামিয়া — “সময় আসলে আরো দেখা যাবে বেবি।”
সিমি — “হ্যা দেখিস ভালো ভাবে দেখিস।”
তাদের গল্প করার মধ্যে গাড়ি ভার্সিটি তে পৌঁছালো। তারা চারজন নেমে গেলো। ক্লাসের দিকে রওনা দিলো।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৪

1 COMMENT

Comments are closed.