তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪
তাবাস্সুম খাতুন

তিমিরে ঢাকা আঁধার কেটে ধরণীতে আগমন ঘটলো, সূর্যের। চারিদিকে আলোকিত হতে লাগলো। পাখির কিচির মিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সময়টা ভোর ছয়টা। সিমির আচমকা ঘুম ভেঙে গেলো। উঠেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। রুমে এসি থাকার সত্ত্বেও কপাল ঘ্যামছে। হয়তো আজকে আবারো নিশান ভাই কে নিয়ে সেই খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। সিমি চোখ দুটো বন্ধ করে দুইহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো। কিছু ক্ষণ ঐভাবে বসে নিজেকে রিলাক্স করলো। মাথা উঁচিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো সামিয়া এখনো ঘুমিয়ে আছে।

টি টেবিলে থাকা সিমি ওর ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো ভোর ছয়টা চার বাজে। ফজরের নামাজ আজকেও মিস গেলো। সিমি উঠে দাঁড়ালো, ওয়াশরুম এ ঢুকলো ফ্রেশ হতে। সে ব্রাশ করতে গেলে কেন জানি জ্বলছে ঠোঁট এ বেশি পাত্তা দিলো না। মুখ ধোয়ার সময় সিমি য্খন মুখে পানি দিলো সাথে সাথে ঠোঁট যেন অতি মাত্রায় জ্বলে উঠলো। সিমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। উড়না দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো তারপর বেসিং এর আয়নার সামনে নিজের ঠোঁট দেখলো। নিজের ঠোঁট দেখে নিজেই আঁতকে উঠলো, দুই ঠোঁট ফুলে আছে। সাথে নিচের ঠোঁট এ কাঁটা দাগ। সিমি কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললো,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“একি অবস্থা আমার ঠোঁট এর, আল্লাহ কী সে কামড়িয়েছে আমার ঠোঁট?”
সিমির মাথায় আসছে সব আজগুবি চিন্তা ভাবনা। ইঁদুর, তেলাপোকা এইসবে কামড়িয়ে দেই নি তো? সিমি যেমন তেমন ভাবে মুখ ধুয়ে চলে আসলো। এসে সামিয়া কে ডাকতে লাগলো। সামিয়া উঠে বসলো ঘুম থেকে। সিমি কান্না করতে করতে বললো,,
“সামু আমি আর বাঁচবো নাহ রে….!”
সিমির এমন কথা শুনে সামুর ঘুম উড়ে গেলো সে সিমির দিকে তাকিয়ে অধৈর্য কন্ঠে বললো,,,
“কী হয়েছে সোনা? ন্যাসপাতি ভাই আবার স্বপ্নে এসেছে তোকে কিছু বলেছে কী?”
সিমি মাথা দুইপাশে নাড়লো। সামু সিমির হাত ধরে বললো,,

“তাহলে কী হয়েছে? কান্না করছিস কেন?”
সিমি নিজের ঠোঁট এ হাত দিয়ে সামিয়া কে বললো,,
“দেখ সামু রাতে কোন বিষাক্ত প্রাণী আমার ঠোঁট এ কামড়ে দিয়েছে ফুলে গেছে সাথে কাঁটার ডাক। আমি আর বাঁচবো নাহ রে, আমার এখনো বিয়ে হয় নি, নাদুস নুদুস বাচ্চার আম্মু হতে পারলাম নাহ, একটা প্রেম ও আজও করতে পারলাম না, আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না সামু।”
সিমির কথা শুনে সামিয়া ভেবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সে সিমির ঠোঁট এর দিকে তাকিয়ে দেখলো, সত্যিই ঠোঁট জোড়া ফুলে আছে, সাথে কাঁটার দাগ দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু তে কামড়িয়ে দিয়েছে। সামিয়া উঠে দাঁড়ালো সিমি কে বললো,,

“বড়ো আম্মুর কাছে চল। ”
বলে সিমির হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।সিমি ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। সেলিনা চৌধুরী নিচে ছিলেন। নাস্তার আয়োজন করছিলেন। সামিয়া সিমি কে নিয়ে নিচে নামলো। সেলিনা চৌধুরী ডাইনিং টেবিল গোছাচ্ছিলো। সামিয়া গিয়ে বললো,,
“বড়ো আম্মু!”
সেলিনা — “এইযে আম্মু এইখানে আয় বস।”
সামিয়া — “বসার সময় নেই সিমিরে দেখো।”
সামিয়ার কথা শুনে জিহান দাঁড়িয়ে গেলো। সে হাঁটাহাঁটি করতে গিয়েছিলো একটু, এখন বাড়ি ফিরলো। আর তখনি শুনলো সিমির কী হয়েছে, এইটা শুনে জিহান থামলো। এইদিকে সেলিনা সিমির দিকে তাকিয়ে দেখে সিমি কান্না করছে। সেলিনা চৌধুরী সিমির কাছে গিয়ে বিচালিত কণ্ঠে বললো,,

“কী হয়েছে আম্মু তুমি কান্না কর কেন?”
সিমি কিছু বলতে পারছিনা, তাই সামিয়া বললো,,
“আর বলো না বড়ো আম্মু, এই সিমির ঘুম কত গভীর জানো তো! আর সেই ঘুমের সুযোগ নিসে ইঁদুর নয়তো তেলাপোকা ঠোঁট দুটো কামড়িয়ে ফুলিয়ে ফেলছে কেটে গেছে। এখন ওই বলে নাকি আর বাঁচবে না।”
সামিয়ার কথা শুনে সেলিনা চৌধুরী সিমির ঠোঁট ভালো ভাবে দেখতে লাগলো। ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললো,,
“উহুম কোন বিষাক্ত প্রাণী কামড়ে দেই নি, তুই নিজেই কামড়িয়েছিস তোর ঠোঁট, ঘুমের ঘোরে, যা এন্টিসেপতিক মলম লাগিয়ে নে ঠোঁটে ভালো হয়ে যাবে।”
সিমির চোখের পানি মুছে বললো,,
“সত্যি বলছো তো বড়ো আম্মু?”

সেলিনা মাথা নাড়লো। সিমি খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো। সামিয়া কে নাহ নিয়েই দৌড়ে উপরের রুমে চলে গেলো। সামিয়া সেলিনার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“বড়ো আম্মু এই সিমি ছাগলের দশ নাম্বার বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।”
সামিয়ার কথা শুনে সেলিনা হেসে দিলো তারপর নিজ কাজে মনোযোগ দিলো। আর সামিয়া জারার রুমের দিকে গেলো। অপরদিকে জিহান সামিয়ার মুখ থেকে যখনি শুনলো বিষাক্ত ইঁদুর বা তেলাপোকা সিমির ঠোঁট কামড়িয়েছে। সে আর দাঁড়ালো নাহ সোজা উপরে নিশানের রুমে ঢুকলো। লক খুলাই ছিলো জিহান রুমে ঢুকলো। রুম অন্ধকার। জিহান লাইট অন করলো। আলোকিত হলো রুম। বেডে খালি গায়ে উবুড় হয়ে শুয়ে আছে নিশান। ব্লাঙ্কেট কোমর পযন্ত দেওয়া। জিহান নিশানের কাছে গিয়ে ব্লাঙ্কেট সরিয়ে দিলো। তারপর জিহানের হাত ধরে টেনে তুললো। নিশান কে এইভাবে ঘুম থেকে এইভাবে তোলায় তার ভীষণ রাগ হলো। ঘুমুঘুমু চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে জিহান বসে আছে, নিশান ঐভাবে বললো,,

“হারামি, আমাকে এইভাবে ঘুম থেকে তুললি কেন?”
জিহান — “শালা ঘুম থেকে বাহির হো, আয়ান আর অভি তোর প্রপার্টির দিকে তাকিয়ে ছিলো বলে হাত ভাঙলি, আর এইদিকে যে তোর জিনিসে ভাগ বসালো সেইটা একবারও দেখছিস?”
জিহানের কথা শুনে নিশান শান্ত কণ্ঠে বললো,,
“কে ভাগ বসালো?”
জিহান — “বিষাক্ত প্রাণী, ইঁদুর /তেলাপোকা তোর প্রপার্টির ঠোঁট কামড়ে ফুলিয়ে ফেলছে।”
জিহানের কথা শুনে নিশানের কাশি উঠে গেলো। রীতিমতো কেশেই যাচ্ছে থামাথামীর নাম নেই। জিহান নিশানের পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,,

“কিরে যক্ষা রোগ কোথা থেকে বাঁধালি তুই?”
নিশান নিজেকে শান্ত করলো কাশি একটু কমে আসলে বললো,,
“তুই এই কথা কিভাবে জানলি?”
জিহান — “বাড়িতে ঢোকার সময় ওদের কথা শুনলাম তাই।”
নিশান রাগী দৃষ্টিতে জিহানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“তুই ইশুর দিকে তাকিয়েছিস?”
জিহান চোখ ছোট ছোট করে বললো,,
“হ্যা তাকিয়েছি।”
জিহানের বলতে দেরি হলেও নিশান জিহানের কলার ধরতে দেরি হলো নাহ নিশান জিহানের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,

“লজ্জা করে না তোর, আমার প্রপার্টির দিকে তাকিয়েছিস? তোর চোখ তুলে ফেলমু আমি বেয়াদব।”
জিহান নিশানের থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিশান কে বেডে ফেলে জিহান নিশানের পেটের উপরে উঠে নিশান কে আটকে রেখে বললো,,
“আমার চোখ তোলার আগে তোর চোখ তুলবো শালা, সিমি আমার বোন হয়, ওকে আমি সবসময় বোন ভাবি, আর তুই থাকতে আমার বোনের ঠোঁট কেন বিষাক্ত কিছু তে কামড়িয়ে দিলো আনসার দে আমাকে?”
নিশান চোখ বন্ধ করলো তারপর শান্ত কণ্ঠে বললো,,
“বিষাক্ত বলা বন্ধ কর বাল।”
জিহান ভ্রু কুঁচকে বললো,,

“কেন কেন?”
নিশান — “আমাকে দেখে তোর কী মনে হয়? আমি বিষাক্ত প্রাণী? আমি ইঁদুর, তেলাপোকা?”
জিহান ভালোভাবে নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“ইঁদুর, তেলাপোকা না তুই দেখতে অতটাও খারাপ না।”
জিহানের কথা শুনে নিশান চোখ ছোট ছোট করে বললো,,
“অপমান করছিস তুই আমাকে?”
জিহান নিশানের উপর থেকে নেমে বেডে বসে বললো,,
“আদাও তোর মান আছে তো?”
নিশান উঠে দাঁড়ালো ওয়াশরুম এর দিকে যেতে যেতে বললো,,
“মান নেই বলে এত কিছু থাকলে তোর বোন সইতে পারতো নাহ।”
নিশান কে ওয়াশরুম এ যেতে দেখে জিহান আবারো বললো,,

“এই এই চলে যাচ্ছিস কেন? উত্তর দে আমাকে আগে আমার বোনকে বিষাক্ত প্রাণী কেন কামড়াবে? আমার বোনের যদি এখন কিছু হয় তোকে কিন্তূ?”
জিহানের কথা কেড়ে নিয়ে নিশান বললো,,
“তোর বোন হয় ইশু, তাই এত ক্ষণ চুপ ছিলাম but এখন মুখ খুলতেই হচ্ছে, তোর বোন কে রাতে চুমু খাওয়া শিখাচ্ছিলাম, এইজন্য ওই অবস্থা। আর কিছু হলে তোর বোন কে আমার কাছে পাঠিয়ে দিস। একরাতের ভিতরে প্রফেশনাল করে দিবো।”
বলেই নিশান ওয়াশরুম এ ঢুকে গেলো। জিহান জোরে বললো,,
“মুখে লাগাম টান বেয়াদব পোলা, আমার বোনটার কী অবস্থা করলি ছি।”

সকাল আট টা ত্রিশ বাজে। বাড়ির কর্তা রা নাস্তা করে নিজেদের অফিসে চলে গেছে। নিশান আর জিহান নাস্তা নাহ করেই চলে গেছে। কোথায় গেছে জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর দিলো না। সিমি, জারা, রাত্রি, সামিয়া, মিহু, পিহু আর তাজ। সবাই স্কুল কলেজ এ যাবে। সেলিনা, রোজিনা, কেয়া আর মেহেরিমা ওরা চারজন পরে খাবে। রাত্রি সিমিদের সাথে অর্নাস ফার্স্ট ইয়ার এ ভর্তি হবে। তাজউদ্দিন প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলে রাখছে তাই আর কোন সমস্যা হবে না। সিমিদের খাওয়া শেষ হলে তারা বেড়িয়ে পড়লো। বাড়ির গাড়ি তাদের রেখে আসবে। তারা চার বান্ধবী একই রকমের একি রং এর গাউন আর হিজাব পড়ছে। একই রকম লাগছে তাদের। গাড়িতে ব্যাক সিট্ এ বসলো রাত্রি আর সিমি। পিছনে বসলো জারা আর সামিয়া। সামনে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। উদ্দেশ্য ভার্সিটির দিকে।এক ঘন্টা মধ্যে তারা ভার্সিটি পৌঁছালো। চারজনে একসাথে নেমে পড়লো। তারা ক্যান্টিনে গেলো। চারজন এক জায়গায় বসে আড্ডা দিতে লাগলো। সামিয়া বললো,,

“তোরা জানিস আজকে কী হয়েছে?”
তিনজনে সামিয়ার দিকে তাকালো। সামিয়া বললো,,
“আজকে আমাদের রোজিনার বাচ্চা সিমির ঠোঁটে কিস করেছিল ইঁদুর/তেলাপোকা।”
সামিয়ার কথা শুনে রাত্রি আর জারা উচ্চসরে হেসে দিলো। সিমি চোখ ছোট ছোট করে সামিয়ার দিকে তাকালো। জারা সিমির দিকে তাকিয়ে বললো,,
“প্রথম কিস ফিল কেমন দস্ত? মানুষ দেই নি তাতে কী ইঁদুর/তেলাপোকা তো দিসে?”
রাত্রি — “ইয়া ইয়া অনুভূতি কেমন বল বল?”
ওদের দুইজনের প্রশ্নের জবাব দিলো,,

“আরে কিভাবে বলবে অনুভূতির কথা? স্বপ্নে জামাই এর উপরে এপ্লাই করতে গিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে শেষ করছে, স্বপ্নের কথা মনে নেই বলে, ইঁদুর/তেলাপোকার দোষ হয়েছে।”
সামিয়ার কথা শুনে জারা আর রাত্রি হাসছে সিমি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“আমি কিন্তূ এইবার উঠে যাবো।”
সামিয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,,
“আরে যা যা কোথায় যাবি যা।”

সিমি সত্যি উঠে দাঁড়ালো সে ওদের দিকে একবার তাকিয়ে নিলো কেউ কিছু বললো না। সে এইবার এক দুইপা যেতেই হুট্ করে একটা ছুরি তার সামনে দিয়ে চলে গেলো পাশে থাকা এক ছেলের পীঠ বরাবর গেঁথে গেলো। ছেলেটা জায়গায় শুয়ে পরে ছটফট করতে লাগলো। সিমির এইটা দেখে যেন মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। জারা সামিয়া রাত্রি সিমি কে টানছে নিজের দিকে কিন্তূ সিমির যেন কোন হুস নেই। পরপর গুলির আওয়াজ শোনা গেলো সামিয়া, জারা রাত্রি চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করলো। এক মিনিট দুই মিনিট তিন মিনিটের মাথায় সবকিছু নীরব হয়ে গেলো। কোন শব্দ চিৎকার আর হচ্ছে নাহ। সামিয়া রা চোখ খুললো সামনে তাকিয়ে দেখলো তিনটা ছেলে ফ্লোরে পরে আছে রক্তাত অবস্থাই, ক্যান্টিনে আর কেউ নেই। হয়তো স্যার ম্যাডাম রা আসতে দিচ্ছে নাহ। সামিয়া চারিদিকে ভালো ভাবে তাকালো তার চোখ সিমি কে খুজছে কিন্তূ পাচ্ছে নাহ কোথাও। সামিয়া, জারা আর রাত্রির দিকে তাকিয়ে বললো,,

“সিমি কই ওকে দেখছি না তো?”
জারা — “বাইরে চল হয়তো অতিরিক্ত ভয়ে শকড হয়ে গেছে বাহিরে থাকতে পারে।”
জারার কথাই যুক্তি আছে। তাই ওরা তিনজন বাইরে বেড়িয়ে আসলো। ক্যান্টিনের বাইরে মানুষ ভীড় করে আছে। সামিয়া, জারা, রাত্রি, সিমি কে খুঁজতে লাগলো এই ভিড়ের মধ্যে। না দেখা মিললো না। তারপর তারা অন্য জায়গায় খুঁজতে লাগলো। এইভাবে এইখানে ঐখানে ক্লাস দিয়ে পুরো ভার্সিটি খুঁজলো দুই ঘন্টা ধরে সিমির কোন খোঁজ তারা পেলো নাহ। সামিয়া আর জারার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। রাত্রি তাদের সামলাচ্ছে। জারা ফোন হাতে নিয়ে কল লাগালো তার আব্বুর ফোন এ। দুইবার রিং হতে কল ধরলো তাজউদ্দিন। কল ধরতেই জারা কান্না করে দিলো। মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে তাজউদ্দিন বিচলিত কণ্ঠে বললো,,

“কী হয়েছে আম্মু তুমি এইভাবে কান্না করছো কেন? কী হয়েছে? কোন সমস্যা হয়েছে?”
জারা কান্না করতে করতে বললো,,
“আব্বু সিমি কে খুঁজে পাচ্ছিনা আমরা, সব জায়গায় খুজলাম পেলাম না।”
তাজউদ্দিন জোরে বলে উঠলো,,
“কিহহহ।”
জারা সবকিছু খুলে বললো। জারার সম্পূর্ণ কথা শুনে তাজউদ্দিন বললো,,
“আম্মুরা তোমরা তিনজন বাড়িতে চলে আসো দেখো ড্রাইভার আঙ্কেল দাঁড়িয়ে আছে, আমি সিমি কে খুঁজছি কান্না থামাও, সিমি মামুনির কিছু হবে নাহ।”

বলে তাজউদ্দিন কল কাটলো। তারপর তারা তিনজন গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। এইদিকে তাজউদ্দিন থানায় কল করে জানালো সিমি কে খুঁজে না পাওয়ার সম্পূর্ণ বিষয় টা। পুলিশ বললো,,
“২৪ ঘন্টা না হলে তো হারিয়ে যাওয়া কোন কেস আমরা নিতে পারবোনা স্যার।”
তাজউদ্দিন — “পারবেনা মানে কত টাকা লাগবে, সব দেবো খুঁজো আমার মামুনিকে।”
বলে কল কেটে দিলো। তাজউদ্দিন তার দুই ভাই কে বললো। সিমির আব্বু সালাউদ্দিন মেয়েকে খুঁজে না পাওয়ার কথা শুনে ভেঙে পড়ার অবস্থা। তাও দুই ভাই এর সাথে মিলে মেয়েকে খুঁজতে বেরোলো।

সময় টা দুপুর দুইটা চল্লিশ। পুরো শহর দুইবার চক্কর দেওয়া হলো সিমি কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে নাহ। রোজিনা চৌধুরী কান্না করছে। সেলিনা চৌধুরী আর কেয়া চৌধুরীর চোখেও পানি। বাড়ির তিন কর্তা তারাও মন মরা হয়ে গেছে মেয়েকে খুঁজে নাহ পেয়ে কিছু ভালো লাগছে নাহ কারোর। সামিয়া, জারা ও কান্না করছে রাত্রি তাদের সামলাচ্ছে। ঠিক সেইসময় সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো জিহান। জিহানের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সিমি। সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে জিহানের সাথে সিমি কে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। সিমি একদম ভালো আছে। সবাই দৌড়ে সিমির কাছে গেলো। এইটা ঐটা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো সে কোথায় ছিলো কোথায় কিভাবে গেলো? কিন্তূ সিমি চুপ করে আছে। জিহান কেউ একই প্রশ্ন করলো জিহান সিমি কে কোথায় পেলো? জিহান চুপ করে আছে। এর মধ্যে নিশান ও সদর দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো।এত এত প্রশ্ন শুনে নিশান বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,
“এত কিছু শোনার কোন মানে আছে কী? বাড়ির মেয়ে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরেছে এইটাই অনেক। জারা ওকে রুমে নিয়ে যা। আর জিহান আমার সাথে আয়।”

বলে নিশান উপরে নিজের রুমের দিকে গেলো। নিশানের পিছু পিছু জিহান ও গেলো। নিশানের কথা শুনে পুরো বাড়ি ঠান্ডা হয়ে গেলো। জারা এসে সিমি কে নিয়ে উপরে উঠলো। সাথে সামিয়া আর রাত্রি ও গেলো।
সিমি কে রুমে নিয়ে এসে বেডে বসালো। জারা সিমির মুখের দুইপাশে হাত দিয়ে বললো,,
“জান তুই ঠিক আছিস তো?”
সিমি — “হ্যা আমি ঠিক আছি, but নিশান ভাই ঠিক নেই।”
জারা — “কেন ভাইয়ার কী হয়েছে?”

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩

সিমি — “আমাকে বাঁচতে গিয়ে আঘাত পেয়েছে?”
সিমির কথা শুনে ওরা তিনজনে অবাক হলো সামিয়া বললো,,
“কী হয়েছিল একটু বল তো? তুই কোথায় চলে গিয়েছিলিস? আর ভাইয়া তোকে কোথায় পেলো?”
সিমি বড়ো একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,,
“বস তোরা আমি বলছি সবকিছু….
**ফ্ল্যাশব্যাক..

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৫