তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩২
তাবাস্সুম খাতুন
রাত একটা বাজতেই, নিশানের গাড়ি এসে থামলো চৌধুরী মঞ্জিলে।নিশান নামলো ধীর পায়ে হেঁটে সদর দরজার কাছে গিয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। পুরো বাড়ি অন্ধকার এত রাতে তো আর কারোর জেগে থাকার কথা না। নিশান কোন দিকে না তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে গেলো। রোজিনা মেয়ের মাথার কাছে বসে ছিলো রুমের দরজা খোলায় শব্দ হতেই সে তাকালো নিশান কে দেখে উঠে দাঁড়ালো। নিশানের কাছে এসে বললো,,,
“খেয়েছিস কিছু?”
নিশান গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,,,
“না।”
রোজিনা — “খাবার এনে দেবো আমি।”
নিশান — “ইচ্ছে নেই।”
রোজিনা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
“বড়ো আফা কোথায়?”
নিশান — “জিহান may be হাসপাতালে নিয়ে গেছে?”
রোজিনা ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কি করেছিস?”
নিশান একই ভাবে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,,,
“প্রশ্নের জবাবদিহিতা করতে বলছি না। এখন আসতে পারেন।”
রোজিনা একবার সিমির দিকে তাকালো পরে নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আচ্ছা সিমির জ্ঞান ফিরেছে অনেক আগে। তোকে খুজছিলো বললাম বিজনেস এর কাজে গেছে একটু খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিসি।দেখে রাখিস আমি গেলাম।”
বলে রোজিনা চলে গেলো। রোজিনা চলে যেতেই নিশান রুমের দরজা অফ করে দিলো। দরজা অফ করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো অস্বস্তি লাগছে যেন। টানা এক ঘন্টা সাওয়ার নেওয়ার পরে নিশান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। সে কাভার্ড থেকে একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর একটা কালো টিশার্ট বাহির করে পরে নিলো। চুলগুলো শুকিয়ে সুন্দর করে সেট আপ করে বেডে গেলো। বেডে গিয়ে বসে সিমির মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সিমির পোশাক চেঞ্জ করে দিয়েছে রোজিনা এখন একটা থ্রি পিস পরে আছে সে। নিশান টি টেবিলের উপর থেকে জগ থেকে পানি ঢাললো গ্লাসে গ্লাস টা হাতে নিয়ে এক গ্লাস পানি সিমির মুখে ঢেলে দিলো। এইভাবে পানি পড়াই সিমি ধরফড়িয়ে উঠে বসলো।সে ঘুমের মধ্যে কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলো। এত সুন্দর স্বপ্নে হুট্ করে এক সমুদ্র পানি আসলো ওকে ডুবিয়ে দিলো। সে নিজের মুখ থেকে পানি সরিয়ে চুল সরিয়ে বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে লাগলো। নিশান গ্লাস টা রেখে দিলো। সিমি পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে নিশান ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সিমি নিশান কে দেখে বললো,,,
“আপনি এইভাবে আমার গায়ে পানি দিলেন?”
নিশান কোন উত্তর দিলো না। সিমি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো,,,
“কত সুন্দর স্বপ্ন তে আপনি সমুদ্র আনলেন কেন? উমম আমি পুরা ভিজে গিয়েছি ধ্যাৎ।”
বলে বেড থেকে নামতে গেলে নিশান সিমির হাত শক্ত করে ধরে সিমি পিছু ফিরতে যাবে এর মধ্যেই সিমির হাত টেনে ধরে বেডে ফেলে দিলো। নিশান সিমির দুইপাশে হাত দিয়ে আটক করে নিলো। সিমি ভয় পেয়ে গেলো এইভাবে আচমকা ফেলে দেয়াই। ও চোখ খিচে বন্ধ করে আছে। নিশান সিমির মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“ড্রেস পাল্টিয়েছিস কেন? ”
সিমি ঢোক গিললো ও চোখ খুলতে পারছেনা ভয় লাগছে বললো,,
“আম্মু পাল্টিয়ে দিসে।”
নিশান একই ভঙ্গিতে বললো,,,
“কোনোদিন আমার সামনে তো ঐসব ড্রেস পরিস না। তো ওই ছেলের সামনে পড়লি কেন?”
সিমি চোখ খুললো নিশানের চোখের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ বন্ধ করে নিলো। সিমি বলে উঠলো,,,
“আমার ঐসব পোশাক নেই সামিয়ারা দিয়ে গেছিলো। আমার সাথে তো কেউ ছিলো না তাই রুমে ঐটা পরে নাচ করছিলাম।”
নিশান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,,
“চোখ খোল।”
সিমি বুজতে না পেরে বললো,,,
“হুমমম…”
নিশান ধমক দিয়ে বললো,,,,
“চোখ খোল।”
সিমি দ্রুত চোখ খুলে ফেললো। নিশানের চোখের দিকে তাকাতেই চোখ আবারো নামিয়ে নিলো। নিশান আবারো ধমক দিয়ে বললো,,,
“ইডিয়েট আমার চোখের দিকে তাকা।”
সিমি কেঁপে উঠলো। সে নিশানের চোখের দিকে তাকালো নিশানের চোখের গভীরতা তাকে দিচ্ছে না এইভাবে তাকিয়ে থাকতে সে চোখ বন্ধ করতে গেলেই নিশান বলে উঠলো,,,
“খবরদার ইশু তুই যদি চোখ বন্ধ করিস। তাহলে তোকে যে কি করবো আমি নিজেও জানিনা।”
সিমি আর চোখ বন্ধ করতে পারলোনা তাকালো নিশানের চোখ জোরাতে। সিমির কেন জানি মনে হচ্ছে এই গভীর কালো চোখ তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। সিমি তাকিয়ে আছে নিশান বলে উঠলো,,
“টানা এক ঘন্টা তুই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবি। যদি বন্ধ করে ফেলিস। So একেবারেই বন্ধ করে দেবো কষ্ট করে আর খুলতে হবে না।”
সিমি ঢোক গিলছে বারবার সে তাকিয়ে আছে নিশানের চোখের দিকে। শাস্তি টা রোমান্টিক হলেও সে পারছেনা এইভাবে তাকাতে তবুও সে নিজেকে বাঁচাতে তাকিয়ে আছে। নিশান সিমির আরো কাছে আসলো নিশানের গরম নিশ্বাস সিমির মুখে উপচে পড়ছে। সিমির দম বন্ধ হয়ে আসছে, সে যেন দম নিতেই ভুলে গেছে চোখ নামাতে যেতেই নিশান সিমির ঠোঁটে শব্দ করে চুমু খেলো। সিমি চোখ বড়ো বড়ো করে নিশানের দিকে তাকালো চোখ লাল হয়ে গেছে সে নিশ্বাস নিচ্ছে না। নিশান স্লো ভয়েসে বললো,,,
“নিশ্বাস নে।”
সিমি ঐভাবেই আছে। নিশান সিমির কানের কাছে গিয়ে বলে উঠলো,,,
” নিশ্বাস নে। নয়তো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।”
সিমি শ্বাস নিলো জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।আর একটু হলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যেত। নিশান সিমির কানের লতিতে কামড় দিলো সিমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। নিশান সিমির মুখের দিকে তাকালো, সিমি চোখ খিচে বন্ধ করে আছে। নিশান সিমির গালে শব্দ করে চুমু দিলো। সিমির কপালেও শব্দ করে চুমু দিলো। সিমি নিশানের ছোঁয়া তে বারবার কেঁপে উঠছে। নিশান উঠে বসলো। সিমি এখনো ঐভাবেই শুয়ে আছে, নিশান উঠে আলমারি খুললো। সেই জায়গা থেকে একটা ধার ওয়ালা ব্লেট নিলো, সেইটা নিয়ে সিমির কাছে গেলো। সিমি কে উঠিয়ে নিজের কোলে বসালো ব্লেট টা সিমির গলার কাছে দিতেই সিমি চিৎকার করে বললো,,,
“আমাকে মারবেন না। আমি তাকিয়ে থাকবো তবুও আমাকে মারবেন না যা বলবেন তাই শুনবো।”
নিশান ম্লান হাসলো। সে সিমি কে এক হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সিমির বাম পাশের গলায় ব্লেট দিয়ে গভীর ভাবে ক্ষত করে নিজের নামটা লিখে দিলো Nishan… গভীর ক্ষত তে সিমি ছটফট করছে। জ্বালা করছে টার রক্ত ও বাহির হয়েছে। নিশান রুমাল দিয়ে রক্ত গুলো মুছে দিলো। তারপর সেইখানে ফুঁ দিতে লাগলো সিমির একটু আরাম লাগলেও জ্বলছে প্রচুর। নিশান উঠে ফাস্ট এইড বক্স আনলো। সিমির ক্ষত তে এন্টিসেপ্তিক মলম লাগিয়ে দিলো। সিমির এত পরিমান জ্বালা করছে যাr দরুন নিশান কে খামচে ধরছে। নিশান আস্তে আস্তে ফুঁ দিচ্ছে আর মলম লাগাচ্ছে। মলন দেওয়া শেষ হতেই নিশান একটা জল টেপ সিমির গলায় লাগিয়ে দিলো। সিমির মুখে হাত দিয়ে নিজের চোখে চোখ রাখালো নিশান। সিমি নিশানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে যেই চোখের দিকে তাকিয়ে সে নিজেই নিজেকে দেখতে পারছে। নিশান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,,
“দশ বছর আগে তোর নাম আমার বাম পাশের বুকে খুব যত্ন করে খোদাই করে লিখেছি যেন সবাই আমার থেকে দূরে থাকে, কোন নারী আমাকে ছুঁয়ে না দিক,আমি এক নারীর প্রতিই আসক্তি। তাই এখন আমার নাম তোর গলায় লিখে দিলাম কারণ কেউ তোকে স্পর্শ করার আগে জানুক তুই অন্যের নামে বন্ধী তানভীর চৌধুরী নিশানের ব্যাক্তিগত প্রপার্টি।”
নিশানের কথা শুনে সিমি হতবিহব্বল হয়ে গেলো। হুস ফিরতেই দ্রুত নিশানের টি শার্ট খুলে ফেললো নিশানের বাম পাশের বুকে তাকাতেই দেখতে পেলো খুব গভীর ক্ষত। যেইখানে লিখা আছে সুন্দর করে ইশু…
সিমি এইটা দেখে চোখের কোনে পানি জমলো সে হাত বুলালো বললো,,,
“এত গভীর ক্ষত কেন করেছেন? ব্যাথা লাগে না বুজি আপনার?”
নিশান সিমির দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“কারণ তোর অবস্থান এই গভীরের থেকেও বেশি গভীরে। সামান্য এইটাতে আমার কোন ব্যাথা হয় না।”
সিমির চোখ ভর্তি পানি চিকচিক করছে। সিমি নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“এমন কেন আপনি? সবসময় পাগলামি করেন নিজেকে আঘাত দেন কষ্ট হয় না বুজি?”
নিশান বললো,,,
“কে আছে কষ্ট করার জন্য?”
সিমি নিশানের মুখ দুই হাত দিয়ে ধরে বললো,,,
“কেউ নেই মানে? আমি কি মরে গেছি আপনার কাছে?”
নিশান রাগী চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“বিলিভ মি ইশু মরার কথা বলে দেখ নিজ হাতে খুন করে দাফন করে ফেলবো।”
সিমি হুট্ করে নিশানের গলা জড়িয়ে ধরলো হুঁ হুঁ করে কান্না করে দিলো। সিমির কান্না দেখে নিশান রাগানিত্ব কণ্ঠে বললো,,,
“তোকে বলেছিলাম না কান্না করবি না। তুই শুনতে পাস না নাকি আমার কথা?”
সিমি — “আপনি বলেছিলেন আমি কান্না করতে পারবো দুইটা কারণে। আপনার জন্য আপনার দেওয়া যন্ত্রনা গুলো তে। আমি এখন কান্না করছি আপনার জন্য আমাকে আটকিয়ে লাভ নেই।”
নিশান শুনলো না সিমির বাহু টেনে ধরলো সিমি কে শক্ত কন্ঠে বললো,,,
“আগলা পীড়িত আমার পছন্দ না। কান্না অফ কর আর জামা পাল্টিয়ে আয় কুইক।”
সিমি চোখের পানি মুছে ঠোঁট ফুলিয়ে নিশানের মুখের দিকে তাকালো। কোন কথা না বলে নেমে গেলো। একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুম এ ঢুকে গেলো। ওয়াশরুম আমি গিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো,,,
“শালা বিদেশি কুত্তা তোকে আর পীড়িত দেখাবো না আমি যা ভাগ শালা দূরে গিয়ে রাগ দেখাবো। বালের জামাই জামাইয়ের জন্য কান্না করলেও নাকি আগলা পীড়িত দূর বাল।”
বলে জামা পরে বেড়িয়ে আসলো। নিশান নিজের জায়গায় শুয়ে পড়েছে। সিমি কোন কথা না বলে চুপচাপ বেডে শুয়ে পড়ল। নিশান লাইট অফ করে দিলো। সিমি কে টেনে নিজের বুকের মধ্যে নিলো সিমি সরে যেতে চাইলেই নিশান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,,
“তুই যদি আর একবার সরে যাওয়ায় চেষ্টা করিস তো বেলকুনিতে গিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।”
সিমি আর কিছু করলো না চুপচাপ বিড়াল ছানার মতো ঘাপটি মেরে নিশানের বুকের ভিতরে শুয়ে রইলো। নিশান ও সিমি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।
রাতের আঁধার কেটে ধরণীতে সূর্যের আগমন ঘটলো। সকাল সাত টা বেজে পাঁচ মিনিট। সামিয়ার ঘুম মাত্র ভাঙলো। সে চোখ পিটপিট করে খুলে কিছু ক্ষণ চুপচাপ উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আবারো চোখ বন্ধ করলো। চোখ খুলে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে সাত টা বাজে। সে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকালো বেড দেখলো না যেমন কার বেড তেমনি আছে। কোন এলোমেলো নেই। সামিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,,,
“জবেদার ভাতার কি রাতে বাড়ি ফিরি নি?”
এইটা বলে নিজেই তাজ্জব বনে গেলো দ্রুত বলে দুই গালে হাত দিয়ে তওবা করতে করতে বললো,,,
“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ ছি ছি সামু তুই কবে থেকে জবেদার ভাতারের জন্য চিন্তা করতে লাগলি। দূরে গিয়ে জবেদার সাথে বাসর করুক তুই বিন্দাস থাক।”
বলে উঠে দাঁড়ালো কাভার্ড থেকে নিজের জামা নিয়ে ওয়াশরুম এ ঢুকে গেলো। একেবারে সাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নিলো। পাঞ্চ কিলিপ দিয়ে আটকিয়ে নিয়ে, রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। সে আশেপাশে তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো তিন ভাই একসাথে নাস্তা করছে সাথে ফুপ্পা আর তিহান ও আছে। রোজিনা, কিয়া, মেহেরিমা খাবার সার্ভ করছে। কিন্তু সেলিনা নেই এইটা দেখে সামিয়ার কপাল কুঁচকে গেলো। সে ড্রইং রুমে গেলো সেখানে সোফায় বসে ছিলো জারা, রাত্রি, পিহু, মিহু আর তাজ। সামিয়া গিয়ে তাঁদের পাশে বসলো। জারা সামিয়া কে বলে উঠলো,,,
“কালকে পার্টিr মধ্যে হুট্ করে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন মহারানী?”
সামিয়া ফিসফিস করে বললো,,,
“ওই জবেদার ভাতার আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে রুমে রাখছিলো। বলছিলো যেন বাহির না হয়।”
রাত্রি অবাক হয়ে বললো,,,
“বের হতে বারণ করেছে তবুও এত কিছু হলো টাও বেরোলি না বাহ্ বাহ্।”
সামিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কি হয়েছে? আমি সত্যি কিছু জানিনা আমি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।”
জারা — “সত্যি কিছু জানিস না।”
সামিয়া মাথা দুইপাশে নাড়ালো মানে সে কিছু জানে না। জারা আর রাত্রি কালকের সম্পূর্ণ ঘটনা সামিয়া কে খুলে বললো। সবটা শুনে সামিয়া আঁতকে উঠলো বললো,,,
“সিমি এখন কেমন আছে?”
জারা — “ভালো আছে ভাইয়া আছে ওর কাছে।”
সামিয়া — “আর বড়ো আম্মু, মিষ্টি এরা কোথায়?”
রাত্রি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
“জানিনা কালকে রাতে টাও একটার সময় শুধু নিশান ভাই বাড়িতে আসছে জিহান ভাইয়া আসি নি। তারাও কেউ আসি নি, কোথায় আছে জানিনা।”
সামিয়া গিয়ে জারার পাশে বসলো। জারা কে জড়িয়ে ধরলো জারা সামিয়ার বুকে মাথা রাখলো কিছুক্ষন পরে বলে উঠলো,,,
“দুই মাস আগেও পরিবার টা এমন ছিলো না বল সামু?”
সামিয়া জারা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
“আবারো আগের মতো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।”
জারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
“হবে কিনা গ্রান্টি নেই। আম্মু সিমি কে সয্য করতে পারে না আচ্ছা সিমির তো কোন দোষ নেই। ওর মতো নিষ্পাপ কে কেউ আদর না করে থাকতে পারে। জানিস সামু কালকে য্খন সিমি কে আম্মু খারাপ কথা বলছিলো আমার মনে হচ্ছিলো যেন আমাকে বলছে কথাগুলো। আম্মু এমন কেন করলো আজ যদি ঐখানে আমি থাকতাম আম্মু কি পারতো এমন বলতে?”
সামিয়া জারার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,
“বড়ো আম্মু ছোট বেলার বিষয় টা ধরে আছে। চিন্তা করিস না দেখবি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
জারা হাসলো চোখের কোনে আসা পানি মুছে নিলো। সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
“এমনটা যেন হয়। যেন মনে হয় এইটা দূরসপ্ন। ঘুম ভাঙলেই আবার আগের মতো।”
সামিয়া কিছু বললো না। সারাদিন হাসতে খেলতে থাকা মেয়েটার মনেও অনেক কষ্ট প্রকাশ করে না। কিন্তু আজ যেন বেশি আঘাত প্রাপ্ত তাই তো কিছু প্রকাশ করলো। সামিয়া জারা কে ঐভাবেই জড়িয়ে ধরে আছে। এইদিকে রাত্রি ও ঐভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। পিহু, মিহু আর তাজ ওদের তিনজনের ভ্রু কুঁচকে দেখছিলো সেই সময়ের ওদের নাস্তা করার জন্য ডাকে। সবাই উঠে দাঁড়ালো নাস্তা করতে গেলো। জারা নিজের চোখের পানি মুছে আবারো সবার সাথে হাসি তে মশগুল হয়ে গেলো।
সকাল দশটা বাজে। সেলিনা হাসপাতলে নিজের কেবিনে শুয়ে আছে। তাকে সেলাইন দেওয়া হয়েছে। আর কিছু মেডিসিন দিসে। সেলাইন শেষ হলে চলে যেতে পারবে। জিহান সারারাত এইখানেই ছিলো। এখন সেলিনার রুমে ঢুকলো সেলিনা চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। জিহান সেলিনার একপাশে বসলো ডাক দিলো,,,
“বড়ো মামী।”
সেলিনা চোখ খুলে তাকলো। জিহানের দিকে সেলিনার অবস্থা খুব খারাপ। দেহের পুরো এক পাশ ঝলসে গেছে। ডাক্তার মেডিসিন দিয়েছে আপাতত জ্বালা যন্ত্রনা যেন কম হয়। জিহান সেলিনার একটা হাত ধরে বললো,,,
“বড়ো মামী আমি বুজতে পারছি তোমার কষ্ট। কিন্তু এইটা ভেবে দেখো একটু। নিশান কে মেরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল যেন সে পরবর্তী তে সিমি কে আঘাত করতে না পারে। সিমি কে ভুলতে পারে কিন্তু সেইটা হলো না নিশান এসে আবারো সিমি কে নিজের করে নিলো। খেয়াল করে দেখেবন নিশান কিন্তু সিমির জন্যই বেঁচে আছে। আর ওর বেঁচে থাকা তাকে যদি এইভাবে হত্যা করতে চান তাহলে সে কিভাবে বাঁচবে?”
সেলিনা কোন কথা বললো না। জিহান আবারো বলা ধরলো,,,
“বেশি কিছু বলবো না। শুধু এইটুকু অতীত ভুলে যান। সবসময় অতীত নিয়ে পরে থাকলে হয় না। সিমি মেয়েটা ভারী মিষ্টি আগলিয়ে নেন দেখবেন শান্তি লাগবে। নিশান কিন্তু তার মধ্যেই বেঁচে আছে ভেবে দেখেন। এখন আমি যাই একটু পরে আপনাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।”
বলে জিহান চলে গেলো। সেলিনা চোখ বন্ধ করে নিলো চোখের কোন বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। জিহানের বলা প্রতিটা কথাই সত্যি। কেন নিজ হাতে ছেলেকে হত্যা করবে সে? সে যদি ভালো থাকে তবে তো সবই ভালো। সন্তানের সুখই তো মায়ের সুখ।
“ভাই আজকেই কি চলে যাবেন?”
বডিগার্ড এর কথা শুনে নীল নাস্তা করতে করতে বললো,,,
“না দুইদিন পরে যাবো কাজ আছে।”
বডিগার্ড — “বড়ো স্যার ফোন দিচ্ছে বারবার।”
নীল — “কি জন্য?”
বডিগার্ড — “ছোট ভাই কিভাবে মারা গেছে এইটার জন্য। আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আমি বলেছি আপনার বলা কথা গুলো। টাও মানে না আপনার সাথে কথা বলবে। আমি বলেছি আপনি তবুও শুনছে না।”
নীল শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো,,,
“যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। যেন কোন ভাবে যোগাযোগ করতে না পারে। এই দুইদিন আমি রিলাক্স এ থাকতে চাই যার জন্য এসেছি তাকে নিয়ে যেতে পারলাম না তবে শান্তিতে দেখে যেতে পারি যেন।”
বডিগার্ড আর কিছু বললো না চলে গেলো। নীল নাস্তা শেষ করে টিসু দিয়ে মুখ মুছলো। এক গ্লাস পানি খেলো ফোন টা হাতে নিলো ওয়ালপেপারে সিমির হাস্যউজ্জল একটা ছবি। নীল সেই ছবির দিকে তাকিয়ে নিজেও হাসলো বললো,,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩১
“অন্যের বউ এর ছবি নিজের ফোনে সেভ করে রাখা পাপ। এইটা জানা সত্ত্বেও তোমার ছবি কিভাবে কেটে দেবো বলো? আমি দুনিয়ার চোখে ভালো হলেও। তোমার জন্য পাপিষ্ট পুরুষ হতে সমস্যা নেই। একটাই ইচ্ছে যাওয়ার আগে তোমার সাথে সরাসরি দেখা করবো। পাপিষ্ট পুরুষ আর তার শ্যামা পাখি। করবে তো আমার সাথে দেখা? আমাকে ভুলে গেলে আবারো মনে করিয়ে দেবো আমি কে।”
বলে হাসলো। তারপর উঠে দাঁড়ালো নিজের ব্লেজার টা গায়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। গাড়িতে বসে কোন এক অজানা গন্তব্যের দিকে পারি জমাতে লাগলো।