তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৪

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৪
তাবাস্সুম খাতুন

সিমি অনেক ক্ষন চিন্তা ভাবনা করে রুম থেকে বাহির হলো। পুরো বাড়ি একবার চক্কর দিলো, এমনকি ছাদেও ঘুরে আসলো। বাড়ির বাইরেও ঘুরে আসছে। সে মূলত নিশান কে খুজছে ও আদাও বাড়ি আছে কিনা। য্খন নিশান কে কোথাও পেলো না। সিমি এইবার তার বড়ো আব্বুর রুমের সামনে এসে নক করলো। রুমের ভিতরে সেলিনা বেডের একপাশে ঘুমিয়ে আছে আর তাজউদ্দিন সোফায় বসে নিউজ পেপার পড়ছে। সিমি কে দেখে তাজউদ্দিন ভিতরে আসতে বললো। সিমি হাত কুচলাতে কুচলাতে ভিতরে ঢুকলো। তাজউদ্দিনের সামনে দাঁড়াতে তাজউদ্দিন বললো,,

“বস আমার পাশে।”
সিমি বসলো তার পাশে। তাজউদ্দিন বললো,,,
“খেয়েছিস দুপুরে?”
সিমি মাথা নাড়লো। তাজউদ্দিন আবারো প্রশ্ন করলো,,
“ভার্সিটি কবে যাবে?”
সিমি মাথা নিচু করে জবাব দিলো,,,
“কাল থেকে যাবো তবে…!”
তবে কথা শুনে তাজউদ্দিন স্বাভাবিক ভাবেই বললো,,,
“তবে কি হয়েছে মামুনি?”
সিমি ঢোক গিলে বললো,,,
“আসলে বড়ো আব্বু, আমার বান্ধবী পলি একটু আগে কল দিয়ে বললো কালকে ভার্সিটি তে একটা প্রজেক্ট এর বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সিমির কথা শুনে তাজউদ্দিন বলে উঠলো,,,
“হ্যা তাতে কি হয়েছে?”
সিমি — “আসলে ওই প্রজেক্ট এর জন্য কিছু সরঞ্জম লাগলে।”
তাজউদ্দিন — “আচ্ছা আমি ড্রাইভার বা তিহান কে পাঠাচ্ছি।”
সিমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,,,
“না না বড়ো আব্বু ওরা পারবে না। দেখে শুনে আনতে হবে।”
তাজউদ্দিন ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“তাহলে তুমি যাবে?”
“হ্যা।”
“আচ্ছা সমস্যা নেই, সাথে জারা বা সামিয়া কে নিয়ে যেও।”
সিমি মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বললো,,,
“উহুম আমার একা গেলেই হবে, সেইখানে আমার ফ্রেন্ড আছে আপাতত আমি এখন বেরোবো সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরবো।”

তাজউদ্দিন একটু ভেবে বললো,,,
“আচ্ছা একা যাও সাথে ড্রাইভার নিয়ে যাও।”
সিমি ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বললো,,,
“বড়ো আব্বু আমি একা যেতে চাই। কথা দিচ্ছি সন্ধ্যার মধ্যে বাড়িতে ফিরবো। প্লিজ বড়ো আব্বু প্লিজ।”
তাজউদ্দিন সিমির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
“আচ্ছা যাও। তবে টাইম কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে বাসায়।”

সিমি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো রুমে। আলমারি থেকে একটা কালো লং থ্রি পিস বাহির করে ওয়াশরুম এ ঢুকলো। একেবারে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস পরে বেড়িয়ে আসলো। সে আয়নার কাছে দাঁড়িয়ে চুলগুলো সুন্দর করে আছড়িয়ে খোঁপা করে নিলো। মুখে পন্ডস ক্রিম আর ঠোঁটে লিপ বাম দিলো। উড়না দিয়ে মাথা সহ বুক ঢেকে নিলো, একটা কালো ওয়ান টাইম মাস্ক মুখে দিলো। নিজেকে আয়নাতে ভালো ভাবে দেখে নিলো। আলমারি থেকে নিজের একটা পার্স নিলো তার ভিতরে পাঁচশো টাকা আর ফোন টা হাতে নিলো সময় টা দেখে নিলো ২ টা বেজে ৫৫ মিনিট। সিমি বড়ো একটা নিশ্বাস নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো বাড়ি থেকে খুব সাবধানে।

কেউ যেন দেখতে না পাই। সে দ্রুত পথে বাড়ি ছেড়ে কিছু দূর হেঁটে গিয়ে রিক্সার জন্য দাঁড়ালো। পাঁচ মিনিট দাঁড়াতেই সে রিক্সসায় উঠে বসলো। রিক্সা য়ালা মামাকে ঠিকানা টা বললো যেন পৌঁছে দেই। রিক্সা চলতে শুরু করলো। কিন্তু তার দৃষ্টি এইদিকে ওইদিকে ঘুরাতে লাগলো। মনের ভিতরে ভয় জাগছে যদি নিশান দেখে ফেলে তো সব শেষ। নিশান দেখার আগে তাকে ফিরতে হবে। দেখতে দেখতে সিমি সেই কফি শপের সামনে চলে আসলো। ভাড়া মিটিয়ে কফি শপের ভিতরে ঢুকলো। ফোনে টাইম দেখলো তিনটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট। চারটা প্রায় বেজেই গেছে। সিমি ভিতরে ঢুকে একটা ফাঁকা টেবিল চেয়ার এর কাছে গিয়ে বসলো। নিজের জন্য একটা কোল্ড কফি অর্ডার দিলো।তার কাছে কফি দিয়ে যেতেই হুট্ করে একটা মহিলা এসে তার পাশে বসলো। সিমির মতো মাক্স তার মুখেও আছে। সিমি ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। মেয়েটা বলে উঠলো,,,

“মিসেস নিশান চৌধুরী? আপনার স্বামীর কুকীর্তি কি আপনি দেখতে চান না?”
সিমি মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,,,
“মেসেজ কৃত ব্যাক্তি আপনি?”
মেয়েটা হাসলো নিজের ব্যাগ থেকে দুইটা ছবি বাহির করলো। সেইটা সিমির দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,,,
“এত কিছু জেনে লাভ কি? কুকর্ম ফাঁস করে দিচ্ছি এইগুলো দেখেন।”
সিমি কিছু না বলে ছবি দুইটা হাতে নিলো। নেওয়ার সাথে সাথে সে চোখ বন্ধ করে নিলো এক পলক দেখেই। মেয়েটা বললো,,,

“মিসেস চৌধুরী? এইভাবে চোখ বুজবেন না, আপনার হাতে লটারি লাগছে দেখেন ভালো ভাবে দেখেন লটারির টিকিট এইটা।”
সিমি চোখ খুললো দেখলো ছবি দুইটা। দুইটা ছবি নিশানের উহুম শুধু নিশানের না। একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়ার মুহূর্ত আর তখনি তোলা ছবিটা। সিমির চোখে পানি টলমল করছে। মেয়েটা নিজের ফোন বাহির করে বললো,,,
“এইটুকু না আরো আছে। এখন ভেঙে পড়লে কি হবে?”
বলে মেয়েটা নিজের ফোনের গ্যালারি তে ঢুকে কিছু ছবি দেখায় সিমি কে। যেই ছবি গুলো নিশানের মেয়েদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। বাজে ভাবে টাচ করছে মেয়েদের। এমনকি পতিতালয়ে যাচ্ছে সেইসব ছবি। সিমি এইগুলো ভালো দেখে নিজের কান্না আর আটকাতে পারছেনা। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। মেয়েটার ফোন মেয়েটাকে দিয়ে দিলো সিমি। সিমি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললো,,,

“আপনি কে? আর এইসব আপনি কিভাবে জানলেন?”
মেয়েটা হেসে বললো,,,
“দেখেন আপনি মনে করেন যে এখন একটা লটারির টিকিট কেটেছিলেন। এখন সেইটাতে আপনি জিতে গেছেন পনেরো লক্ষ টাকা পেয়েছেন। কিভাবে পেয়েছেন? এইগুলো জেনে লাভ কি? টাকা পেয়েছেন এইটা নিয়েই আনন্দ হয়ে থাকেন।”

বলে মেয়েটা যেইভাবে আসছিলো। সেইভাবেই চলে গেলো। সিমির কান্না থামানো যেন বড়ো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। সে ছবি নিজের ফোন আর ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কফির বিল পরিষদ করে বেড়িয়ে গেলো কফি শপ থেকে। সে কফি শপ থেকে বেড়িয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কান্না করতে লাগলো সে আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারছেনা কষ্ট হচ্ছে। সিমি নিজের মুখের মাক্স খুলে ফেললো। বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে লাগলো। চোখ নাক লাল টুকটুক করছে। এইদিকে সিমি কে দেখে কেউ একজন কল দিলো নিশানের ফোনে। নিশান তখন রাগের মাথায় গাড়ি নিয়ে চলে গেছিলো নির্জন কোন এক রাস্তায় এখন রাগ কমে আসলে সে বাড়ি ফিরছিলো। সিমির পিছনে লাগিয়ে রাখা এইখানে ঐখানে থাকা স্পা দের কল দেখে নিশান ভ্রু কুঁচকে কল রিসিভ করলো। নিশান কে কিছু বলতে না দিয়ে সে বললো,,,

“ভাই আপনি কোথায়? ভাবি দেখছি এইখানে দাঁড়িয়ে কান্না করছে প্রচুর।”
নিশানের কুঞ্চিত ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো সে বলে উঠলো,,,
“কোথায় সে?”
ছেলেটা ঠিকানা দিলো। নিশান দ্রুত গাড়ি ঘোরাতে লাগলো। লোকটার বলে দেওয়া ঠিকানা তে পৌঁছানোর জন্য। এইদিকে সিমি অনেক কান্না করছে মন টা একটু হাল্কা লাগতে উড়না দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে মাক্স পরে রিক্সার জন্য পিছু ফিরতেই হুট্ করে কেউ একজন তাকে ডাক দিলো,,,
“সিমি…”
সিমি পিছনে ফিরলো। দেখলো একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে ফর্মাল পোশাকে। সিমি নিজেকে শক্ত করলো ঠিক করে নিলো। সে বললো,,,

“কে আপনি?”
ছেলেটা হেসে সিমির কাছে এসে বললো,,,
“এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে সিমি আমাকে?”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“দুঃখিত ভাইয়া আমি আপনাকে চিন্তে পারলাম না। কে আপনি? আমাদের কি আগেও দেখা হয়েছে?”
ছেলেটা বলে উঠলো,,,
“দশ বছরের আগের স্মৃতি তে ফিরে যাও। দেখো তো সেই স্মৃতিতে তোমার নীল ভাইয়া বলতে কেউ আছে কিনা? যাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলে।”
সিমি অবাক কণ্ঠে বললো,,,

“কিহহহ আপনি নীল ভাইয়া? সিরিয়াসলি?”
নীল মাথা নাড়লো। সিমি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে উঠলো,,,
“কোথায় ছিলেন এতদিন ভাইয়া? জানেন আপনাকে কত খুজেছি? সেই যে হাসপাতালে গেলেন আমাকেও বন্ধী করলো পরে ছাড়া পেয়ে আপনাকে খুঁজে পাই নি আমি। কোথায় ছিলেন এতদিন?”
নীল হেসে বললো,,,

“সেইদিন আমার হাত ভেঙে দেওয়ার পরে আব্বু আর আম্মু আমাকে আর রাখি নি দেশে আমেরিকা নিয়ে চলে গেসিলো। সেইখান থেকেই পড়াশোনা শেষ করছি। আর অনেক কষ্টে তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। ফাইনালি দেখা হয়েই গেলো।”
সিমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,

“সত্যি বলতে নীল ভাইয়া অতীত বড়ো বিষাদ ময়। আমার জীবনে মেয়ে ছাড়া কেউ বন্ধু হতে পারতো না। টাও সেইটা চাচাতো বোন বাদে অন্য কেউ না। মেয়ে তো দূর ছেলেরা চোখ তুলে তাকালে তাকে আর পাওয়া যেত না। খুব ভয়ে থাকতাম। হুট্ করে একদিন আপনি আসলেন বন্ধুত্ব হলেন আমার সাথে। আমি না করেছিলাম তখন আপনি বলেছিলেন।”
সিমি কে বলতে না দিয়ে নীল বললো,,,

“বন্ধুত্ব হয়েছি বন্ধুত্বের মান রাখবো, সকল বিপদে তোমার সাথে থাকবো। শুধু বন্ধুত্বের হাত একবার বাড়িয়ে দিয়ে দেখো। আমি ছেলেটা কিন্তু অতটাও খারাপ ও না। আমি সইতে পারবো আমাকে কেউ খুন করলেও।”
নীলের কথা শুনে দুইজনে হেসে উঠলো। নীল বললো,,,
“তো তুমি এইখানে কি করছো? শুনছি বিয়ে করেছো? হাসব্যান্ড কোথায়?”
হাসব্যান্ড এর কথা মাথায় আসতেই সিমি চোখ বুজলো নিজেকে সামলিয়ে বললো,,,
“নিজের কাজে আছে আমি আসছি এইখানে একটা দরকারে।”
নীল — “আচ্ছা চল এক কাপ কফি খাই। অনেক বছর পরে দেখা হলো অনেক কথা আছে তোমার সাথে।”
সিমি হেসে বললো,,,

“অন্য একদিন আজকে হাতে বেশি সময় নেই।”
নীল — “তাহলে চল আমি বাড়ির সামনে নামিয়ে দেবো।”
সিমি মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বললো,,,
“না না আমি যেতে পারবো রিক্সা করে।”
নীল ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“সত্যি তো?”
সিমি — “হ্যা।”
নীল — “আচ্ছা তাহলে চল রিক্সা তে তুলে দেই।”

সিমি মাথা নাড়ালো। এইদিকে এদের কথার মধ্যে নিশানের গাড়ি এসে থামলো তাদের সামনে। সিমি আর নীল ভ্রু কুঁচকে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। হুট্ করে গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো নিশান। নিশান কে দেখে নীল হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো,,,
“মিস্টার চৌধুরী যে? কেমন আছেন?”
নিশান নীল কে পাত্তা না দিয়ে সিমির কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“তোর সাহস কত বড়ো হয়েছে? তুই এইখানে আসছিস।”
সিমি নিশানের দিকে পাশ ফিরে ঘুরে জবাব দিলো,,,
“সাহস আপনার যত দূর আমারো তত দূর। সেই সাহস অনুযায়ী আসছি।”
বলে হাঁটতে লাগলেই। নিশান সিমির হাত টেনে ধরে বললো,,
“আমাকে ইগনোর করিস তুই?”
সিমি হেসে বললো,,,

“ইগনোর করার যোগ্যতা আনলে অবশ্যই করবো। হাত ছাড়ুন আমার।”
সিমির এমন কথা যেন নিশানের রাগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে ও সিমি কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির ব্যাক সিট্ এর দরজা খুলে জোরে চেলে ফেলে দিলো। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিট্ এ বসে ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো। নীল এত টা সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিলো। ওরা চলে যেতেই শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ওর কালকে ফ্লাইট। সিমির সাথে একটু কথা বলতে চেয়েছিলো ইচ্ছে টা পূরণ হয়েছে এইটাই অনেক। সে মূলত একটা প্রজেক্ট সম্পর্কে মিটিং এর জন্য এই কফি শপে আসছিলো। বেরোনোর সময় দেখে সিমি কান্না করছে তাই আর নিজেকে আটকাতে পারি নি। সিমিr কাছে চলে গেলো দুটো কথা বলতে। নীল আর দাঁড়ালো না। সেও তার গাড়িতে উঠে বসলো গাড়ি চলতে থাকলো তার নিজ গন্তব্যের দিকে।

চল্লিশ মিনিটের রাস্তা নিশান বিশ মিনিটের মধ্যে ফুল স্প্রিডে চালিয়ে আনলো। তার রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। সে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে পিছনের দরজা খুলে সিমির হাত জোরে চেপে ধরলো সিমি ব্যাথা পেলো সে বলে উঠলো,,,
“ধরতে হলে আস্তে ধরুন নয়তো ছাড়ুন।”

নিশান কোন উত্তর না নিয়ে সিমি কে টানতে টানতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। ড্রইং রুমে কম বেশি অনেকে আছে। সবাই তাঁদের দিকে তাকালো নিশান কাউকে পরোয়া না করে চলে গেলো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে। এইদিকে বাড়িr সদস্য একে ওপরের দিকে তাকাচ্ছে। না জানি কি হয়? আপাতত তারা স্বামী স্ত্রী এই বিষয়ে নাক না গলানোই উচিত। নিশান সিমি কে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিয়ে তাকে জোরে বেডে চেলে ফেললো। সিমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো তখন গাড়িতে এইভাবে চেলে ফেলাই ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে এখন আবার।নিশান সিমির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে রাগানিত্ব কণ্ঠে বললো,,,

“এই তোর সাহস কতবড়ো যে তুই একা একা নাগর দের সাথে দেখা করতে গেছিস?”
নাগর শব্দ টা সিমি শুনে তেতে উঠলো সে আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো,,,
“নাগর? থু এইগুলো তো আপনার আছে একপ্রকার টিসু। আমি কি আপনার মতো?”
নিশান সিমির এমন কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“তুই আমার মতো মানে? কি বুজাতে চাচ্ছিস আমাকে? Je আমি কত মেয়ের সাথে থাকছি?”
সিমি হেসে বললো,,,

“তা নয়তো কি? ছিঃ নিজের প্রতি ঘৃণা হয় এমন কাপুরুষ কে আমি ভালোবাসছি।”
বলে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই নিশান সিমির গাল জোরে টিপে ধরে হুহংকার ছেড়ে বললো,,,
“তোকে বলতে দিয়েছি বলে কি তুই মাথা কিনে খাবি? তুই কাকে কাপুরুষ বললি? আর বাসছিস কেন ভালো? তোকে বলেছি যে আমাকে ভালোবাস। Fuck your ভালোবাসা।”
বলে গাল ছেড়ে দিলো। সিমির চোখ দিয়ে টিপটিপ করে নোনা পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।সে নিজেকে ঠিক করে বললো,,,

“আসলেই আমার ভালোবাসা fuck সত্যিই পার্থক্য এইটাই আমি দেরিতে বুজলাম।”
নিশান টি টেবিল তা জোরে চেলে ফেলে দিয়ে বললো,,,
“দেখ ইশু আমাকে রাগবি না। রাগলে কিন্তু তুই আস্ত থাকবি না।”
সিমিও একই ভাবে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,
“মিস্টার তানভীর চৌধুরী নিশান। ভুলে যাবেন না আমরা একই বংশের মাথা গরমের রক্ত আমার শরীরেও বয়ে বেড়াচ্ছে আমিও কিন্তু তছনছ করতে পারি সবকিছু।”
সিমির কথা শুনে নিশান একই ভাবে বললো,,,,
“সাহস বাড়ছে তোর প্রচুর।এইসব কথা শিখাচ্ছে কে তোক?”
সিমি — “শিখাবে কেন আমি কি ফিডার খাই আমি বুজি না? দুপুর বেলায় আপনি আমাকে বলেছিলেন শুধু শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া আমাদের মাঝে কিছু নেই। আমি কি শুনতে ভুল করছি?
সিমির এই কথা শুনে নিশান চিৎকার দিয়ে বললো,,,

“তোর মাথায় আদাও সেন্স আছে কিসের সাথে কি মিলাচ্ছিস তুই?”
সিমি — ” সত্যিই সেন্স নেই। এইজন্য তো অন্য জায়গায় গিয়ে বসে থাকেন। ”
সিমির কথা শেষ হতে নিশান সিমির কাছে এসে সিমির বাহু ধরতে গেলেই সিমি নিশানের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে বললো,,,
“ছুঁবেন না আপনি আমাকে। ওই নোংরা হাত যেই যেই মহিলা ছুঁয়েছেন তাঁদের গিয়ে আবারো ছুঁয়ে দেন। পাপ দিয়ে ভরা আপনার হাত। খবরদার আমাকে ছুঁতে আসলে তুলকালাম বাঁধিয়ে দেবো আমি।”
সিমির কথা শুনে নিশান সিমির দিকে তাকিয়ে রাগানিত্ব কন্ঠে বললো,,,

“তুই আমাকে কি বুজাতে চাচ্ছিস? আমি কত মেয়ের সাথে থেকেছি?”
সিমি ব্যাঙ্গ করে হেসে বললো,,,,
“যে যাই পতিতা লয়ে তার আবার মেয়ের সংখ্যা গণনা করতে হবে হাস্যকর ব্যাপার।”
সিমির কথা শেষ হতেই নিশানের শক্ত হাতের চড় পড়লো সিমির গালে। সিমি গালে হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়লো। নিশান বলে উঠলো,,,

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৩

“তোর ধারণা আছে ইশু তুই কত বড়ো কথা আমাকে বললি? আমি খারাপ তাইতো? জানিনা তোকে আমার নামে কে কি বলছে। তবে শুনে রাখ আমি বলছি তোকে। আজ এই মুহূর্ত তোকে ছেড়ে আমি চলে যাচ্ছি তুই আমার বিষয়ে জানা সব তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত পাবি কিন্তু আমাকে আর পাবি না। আমার হাত তো পাপে পরিপূর্ণ আমি ছুঁলে তুই অপবিত্র হবি।দেখিস তুই আমার একটু সন্নিকটে আসার জন্য তুই তরপিয়ে মরবি ইশু তবুও আমাকে পাবি না কোন সময়ের জন্য। বলেছিলাম না তোর সাথে আমার শুধু শারীরিক সম্পর্ক। সময় আসলে সব বুজবি শুধু আমি এই তানভীর চৌধুরী নিশান কে তুই কখনো আর পাবি না।ছেড়ে দিলাম আজ থেকে তোকে আমি থাক তুই তোর মতো।”
বলে আর দাঁড়ালো না নিশান। বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। এইদিকে নিশান চলে যেতে সিমি হুঁ হুঁ করে কান্না করতে লাগলো ফ্লোরে বসে। কি থেকে কি হয়ে গেলো এইটুকু সময়ের মধ্যে তার সাথে। তার হিসাব সে মিলাতে লাগলো।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here