তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৮
তাবাস্সুম খাতুন
রাতের আঁধার কেটে ধরণীতে সূর্যের আগমন ঘটলো। নীরব হয়ে থাকা ব্যাস্ত শহরটা আবারো গাড়ি ঘোড়া দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলো, ব্যাস্ত হয়ে পড়লো ব্যাস্ত শহরের অলিগলি সহ বড়ো বাড়িতে থাকা মানুষগুলো। পাখিরা কিচির- মিচির ডাক দিয়ে উড়ে যাচ্ছে এই গাছের ডাল থেকে, অন্য গাছের ডালে। মাসটা অক্টোবর শীতের প্রভাব পড়ছে চারিদিকে, ঠান্ডা বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে শহর জুড়ে, কোথাও কোথাও আবার হাল্কা কুয়াশা ও দেখা মিলছে…
সময়টা ভোর ছয়টা। চৌধুরী ম্যানশনে যেন ভোর থেকেই পাখির মতো কিচির মিচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সেলিনা, রোজিনা, কিয়া আর মেহেরিমা সকালের নাস্তা তৈরী করছে একটু পরেই তাজউদ্দিন, সালাউদ্দিন, জামালউদ্দিন, রুবেল অফিসের জন্য বেড়িয়ে যাবে। এইদিকে সিমি, জারা, রাত্রি আর সামিয়া ওরা চারজন ও আজ দ্রুত যাবে যেহেতু তাঁদের উপরে দায়িত্ব পড়েছে সবকিছু ঠিক থাক করতে হবে। জিহান আর নিশান ফজরের আজানের সময় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে, আপাতত কোথায় গেছে কেউ জানে না। মিহু, পিহু,তিহান, তাজ ঘুমের দেশে হারিয়ে আছে আজকে ওরা চারজন কেউ স্কুল – কলেজ – ভার্সিটি যাবে না। তাই পরে উঠবে ঘুম থেকে।সামিয়া, জারা আর রাত্রি তিনজনে মিলে ফ্রেশ হচ্ছে। এইদিকে সিমি এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি। সাড়ে ছয়টা বাজতে গেলে সামিয়া সিমির রুমে ঢুকলো দেখলো ও এখনো ঘুমিয়ে আছে। সামিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেলকুনিতে থাকা পর্দা সরিয়ে দিলো বেলকুনিতে লাগানো কাঁচের দরজা খুললো, অন্ধকার রুম টা একটু আলোকিত লাগছে। সামিয়া এসে সিমিকে ধাক্কা দিতে দিতে বললো,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“বাল উঠ, ভার্সিটি যাবি না নাকি?”
সিমির কোন হুস নেই, সামিয়া এইবার এক গ্লাস পানি সিমির মুখের উপরে ফেলে দিলো সিমি হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো, দুই মিনিট আশ্চর্য হয়ে বসে থেকে সামিয়ার দিকে চোখ উঁচিয়ে তাকিয়ে বললো,,,
“শালী তুই পানি মারলি কেন?”
সামিয়া ভাবলেশিন ভাবে বললো,,,
“বেশ করেছি যাবি না ভ..!”
বাকি কথা শেষ করার আগেই হুট্ করে আরেক কথা বলে উঠলো,,,
“এই সিমি তোর ঠোঁটে গলায় কিসের দাগ?”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“বালের দাগ।”
সামিয়া — “সিরিয়াসলি কিসের দাগ? উমম লাভ বাইট!সিমি আমাদের সামনে এইভাবে লাভ বাইট নিয়ে ঘুরিস না বইন কষ্ট লাগে।”
সিমি সামিয়াকে পাত্তা না দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়াতে নিজের বেহাল দশা দেখতে পেলো গলার দুই জায়গায় লাল হয়ে আছে কামড়ের দাগ স্পষ্ট, সাথে ঠোঁটও কামড়ের দাগ রক্ত শুকিয়ে ঠোঁটের সাথে লেগে আছে সিমির বুঝতে বাকি রইলো না এইগুলো কে করেছে, কিন্তু তার কোন হুস ছিলো না কেন? অবশ্যই অনেক ব্যাথা জ্বালা করেছে কিন্তু সে অনুভব করেনি কেন? নিশান কি কিছু করেছে? এইসব প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো, কোন ইচ্ছে হলো না নিশানের সাথে এই বিষয়ে কথা বলার নিজেকে আরো একবার দেখে নিয়ে একটা লম্বা সাওয়ার নিলো ঠান্ডা পানি গলায় ঘাড়ে ঠোঁটে পড়তেই ব্যাথায় “উফফ ” শব্দটি উচ্চারণ করে উঠলো বারবার।
সামান্য গোসল করতে গিয়ে তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো ভীষণ জ্বালা করছে। সিমি সাওয়ার শেষে রুমে আসলো একটা প্লাজু আর গেঞ্জি পরে নিলো। কাভার্ড এর উপরে থাকা ফাস্ট এইড বক্স টা আনলো সেই জায়গা থেকে অনটাইম টেপ বাহির করলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার যেই দুই জায়গায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সেই জায়গায় টেপ টা লাগিয়ে দিলো যেন বোঝা না যাই। কাঁধের কাছেও আছে সেইখানেও দিলো। কিন্তু ঠোঁট কি করবে সে? ভাবতে লাগলো, অনেক ভাবার পরে মনে পড়লো se সবাইকে বলবে পিম্পল হয়েছিল কেমন লাগছিলো বিধায় খুঁচে ফেলছে তাই এই অবস্থা। আর গলা ঘাড় এইখানে চুলকানি হচ্ছিলো এক প্রকার এলার্জি চুলকাতে গিয়ে লাল হয়ে গেছে, দেখতে খারাপ লাগছে বলে টেপ দিয়েছে। সবকিছু ভাবনা শেষ করে চুলগুলো শুকিয়ে নিলো। উড়না টা গায়ে চড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। সিমিও নিচে নেমে বসলো গলা ঘাড় ঢেকে নিয়ে নাস্তা করতে বসলো গলা ঘাড় ঢাকতে পারলেও ঠোঁট ঢাকতে পারি নি তাই সালাউদ্দিন মেয়ের ঠোঁটের এই অবস্থা দেখে প্রশ্ন করলেন,,,
“সিমি কি হয়েছে ঠোঁটে?”
সিমি এত ক্ষণ ধরে ভেবে রাখা মিথ্যা বানোয়াত গল্পটা সবাইকে খুলে বললো, সবাই বিশ্বাস করলো খাওয়ার টেবিলে আর কথা হলো না নাস্তা শেষ করে বাড়ির কর্তারা নিজেদের অফিসে চলে গেলো। এইদিকে সিমিদের শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন হতে লাগলো। সিমি কে শাড়ি পড়িয়ে দেবে রোজিনা, জারাকে শাড়ি পড়িয়ে দেবে সেলিনা, রাত্রিকে শাড়ি পড়িয়ে দেবে কিয়া। এইদিকে সামিয়ার পালা য্খন আসলো তখন মেহেরিমা বললো,,,
“আমি আমার বৌমা কে শাড়ি পড়িয়ে দেবো।”
সামিয়া হাসলো। যে যার শাড়ি নিয়ে চলে গেলো। পুরো আধা ঘন্টা পরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো একদম সিম্পল সাজ সবার। শাড়ির সাথে স্টোন বসানো ইয়ার রিং, আর ছোট্ট স্টোন বসানো নেকলেস। চুলগুলো পাঞ্চ কিলিপ দিয়ে আটকানো, মুখে পন্ডস ক্রিম আর ঠোঁটে খৈরি রঙের লিপিস্টিক। চারজনকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। ওরা সবাই থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটিr উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলো। নিজেদের গাড়িতে করেই ভার্সিটি যাচ্ছে। গাড়ির ভিতরে চারজন যেন হট্টগোল বাঁধিয়েছে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে। মূল কেন্দ্র বিন্দ্র এখনে সিমি, তাঁদের ধারণা ঠোঁটে গলায় এইগুলো চুলকানি – আর পিম্পলের জন্য না নিশানের দেওয়া লাভ বাইট। সিমি ওদের কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বাহির করে দিয়ে উত্তর দিচ্ছে,,,
“তোদের মুখে পুকুর কাট i don’t mind….!”
সময়টা সকাল নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট। সিমিরা ভার্সিটি পৌয়েছে অনেক আগে। তারা সবকাজ ঠিক থাক ভাবে গুছাচ্ছিলো সবকিছু শেষে এখন অপেক্ষা করছে স্পেশাল গেস্ট দের জন্য। স্পেশাল গেস্টদের ইনভাইট জানানোর জন্য সিনিয়ররা আছে, তাই সিমিরা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে জারা আর রাত্রি ছবি তুলছে। সিমি আর সামিয়া দাঁড়িয়ে টুকটাক কথা বলছে। তাঁদের কথা বলার মধ্যেই পরপর সাত আটটা গাড়ি ভার্সিটির চত্বরে প্রবেশ করলো। প্রথম গাড়ি থেকে জিহান আর নিশান বেড়িয়ে আসলো ফর্মাল ড্রেস তাঁদের। মূলত এই ভার্সিটি তৈরী করেছিলেন চৌধুরী পরিবার রা সেই অনুযায়ী অনুষ্ঠানে তাজউদ্দিন সহ তার বাকি ভাই দের ইনভাইট করা হয়েছিল, তারা আসতে পারবেনা বলে জিহান আর নিশান দুইজনে আসছে।
ওদের দুইজনকে দেখে ভার্সিটিতে থাকা প্রতিটা মেয়ে উস্টা খেয়ে ক্রাশ খাচ্ছে, চিৎকার দিচ্ছে। নিশান দের পরের গাড়ি থেকে কিছু গার্ড বাহির হলো এইগুলো নিশানের গার্ড। তারপর গাড়ি থেকে একটা গার্ড বেড়িয়ে দরজা খুললো পিছনের সিট্ এর সেই জায়গা থেকে ভবিৎষত এমপি ইদ্রিস বেড়িয়ে আসলো। তারপর গাড়ি থেকে গুণীজ্ঞানী কিছু ব্যাক্তিরা। সবাই আসতেই তাঁদের ওয়েলকাম জানানো হলো। নিশান আর জিহান সিরিয়াস মুখে কি নিয়ে যেন ডিসকাস করছে কে কোথায় আছে সেগুলো দেখার সময় পাচ্ছে না। এইদিকে সিমি আর সামিয়া তাঁদের জামাইদের দেখে একটু অবাক হলেও বেশি পাত্তা দিলো না নিজেদের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। নিশান দের সহ বাকি গেস্ট দের বসতে দেওয়া হলো মঞ্চের পাশে সুন্দর জায়গায়। সিমিরা কেউ বসে নি দাঁড়িয়ে দেখছে। অনুষ্ঠান শুরু হলো একে একে অনেকে বক্তব্য দিলো নিশানদের বলাই ওরা বাদ দিতে বললো। এইদিকে ইদ্রিস বসেছে নিশানের পাশে নিজেই আগ বাড়িয়ে বলে উঠলো,,,
“কেমন আছো মিস্টার চৌধুরী?”
নিশান বাঁকা হেসে বললো,,
“শকুনের দোয়াই অবশ্যই গরু মরে না ভবিষ্যত এমপি, সময় আপনার আজ ভালো আছে কালকে ভালো নাও থাকতে পারে। নামাজ পড়ুন নিজের জন্য দোয়া করুন কাল দিন হয়তো সময় পাবেন না।”
নিশানের পুরো কথা শুনে ইদ্রিস নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিলো,,
“বউ এর সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?”
নিশান — “বুজলেন ভবিষ্যত এমপি, বউ শব্দতাও আপনার মুখ থেকে শুনে আমি জেলাস। সাবধান আগেরবারের কথা যদি মনে থাকে তাহলে ঠান্ডা হয়ে ইলেকশন করতে পারবে।”
নিশানের পরপর এরূপ কথা শুনে ইদ্রিস আর কিছু বললো না, অনুষ্ঠানে মনোযোগ দিলো। এইদিকে বক্তব্য শেষ হতে নাচ গানের অনুষ্ঠান শুরু হলো। নিশান নিজের ফোন স্ক্রল করছে আর জিহান ফোনে কথা বলছে। তার কথা শেষ হতে ঘাড় একটু এইপাসে ঐপাশে কাত করে পিছনে ঘুরতে দেখা মিললো সিমিদের। জিহান সামিয়া কে দেখে রাগে যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। সে নিশান কে কিছু না বলেই সোজা সিমিদের কাছে গেলো। এইদিকে নিশান ভ্রু কুঁচকে জিহানের যাওয়ার পানে তাকাতেই তার চোখ আটকালো নেভি ব্লু রঙের জামদানি শাড়ি পরিহিতা রমণী কে কয়েক সেকেন্ড সে ঐভাবেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, হুট্ করে মাথায় এলো ও শাড়ি পড়েছে কেন? দুনিয়ার পুরুষদের দেখানোর জন্য? এইগুলো মাথায় আসতেই রাগে নিশানের চোখ দুটো লাল টুকটুক করছে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে চোখ বন্ধ করে বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে লাগলো। এইদিকে জিহান সামিয়ার কাছে এসে দাঁড়ালো দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“এই মেয়ে তোকে শাড়ি পড়তে বারণ করেছিলাম না আমি?”
সামিয়া মুখ ভাঙিয়ে বললো,,,
“আপনি বারণ করবেন আর আমি শুনবো এইটা ভাবলেন কিভাবে?”
জিহান নিজের রাগ সংবরং রাখার চেষ্টা করে বলল,,
“মুখে মুখে তর্ক করতে বলি নি, তুই আমার লিগ্যালি ওয়াইফ আমি যা বলবো সবকিছু শুনতে হবে, মানতে হবে।”
সামিয়া সেইভাবেই তর্ক করে বললো,,,
“লিগ্যালি ওয়াইফ বলেন লজ্জা করে না, একে তো তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে কবুল বলিয়ে আপনার নামে লিখিত করে নিয়েছেন।”
জিহান চোখ বন্ধ করে বললো,,,
“দেখ মেয়ে এইসব কথা বলে পরে কিন্তু তুই পস্তাবি, ভেবে চিন্তে কথা বল।”
এইদিকে সিমি ইশারায় সামিয়াকে থামতে বলছে সামিয়া কাউকে তৌক্কা না করে জিহান কে বললো,,
“পস্তাবেন আপনি। কি করবেন আমার সাথে? জোর করে সম্পর্ক খাটাবেন? হ্যা এইটাই পারবেন তবে আমার ভালোবাসা পাবেন না।”
জিহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“ভালোবাসা কত প্রকার আর কি কি? এইগুলো আজ তোকে আমি শেখাবো।”বলে সামিয়া কে পাঁজা কোলে তুলে সেই জায়গা ত্যাগ করলো প্রতিটা মানুষ তাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। যেইসব মেয়েগুলো জিহান কে দেখে লাফ দিচ্ছিলো মনে ভালোবাসা জন্মেছিলো তাঁদের ভালোবাসার সূচনা হওয়ার আগেই সমাপ্ত হয়ে গেলো। সিমি ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। জারা বলে উঠলো,,,
“ভাবি সাবধানে নেক্সট টার্গেট কিন্তু তুমি। আমরা ভাই সিঙ্গেল মানুষ।”
সিমি পাত্তা দিলো না, জারার কথা মুখে থাকতে থাকতেই নিশান সিমির কাছে আসলো সিমির সাথে কোন কথা না বলে সিমির আঁচল টেনে নিজের সাথে নিয়ে যেতে লাগলো, সিমি শাড়ি ধরে বলে উঠলো,,,
“এই কি করছেন আপনি? আমার শাড়ি খুলে যাবে।”
নিশান কোন উত্তর দিলো না। সিমি চিৎকার করতে লাগলো, এইদিকে পুরো ভার্সিটি ববিনা টিকিটে দুইটা মুভি দেখলো। রাত্রি হতাশার শ্বাস ফেলে বললো,,,
“আজ সিঙ্গেল বলে।”
রাত্রির কথা সম্পূর্ণ করলো জারা,,,
“শাড়ি পড়লে কেউ এইভাবে বকে না, তুলে নিয়ে যাই না।”
এই বলে দুইজনে আফসোস করতে লাগলো।ভার্সিটি যেন স্তব্ধ হয়ে পড়লো, কিছু সময় পরে আবারো শুরু করলো।
নিশান সিমি কে টানতে টানতে গাড়ি তে বসালো সিমির শাড়ির আঁচল দিয়ে তার হাত বেঁধে দিলো। মুখ দিয়ে যেন চিৎকার করতে না পারে এর জন্য রুমাল ঢুকিয়ে দিলো তার মুখের ভিতরে। সিমি উমম উমম শব্দ করতে লাগলো নিশান কোন কথা না বলে গাড়ি সোজা নিজের গেস্ট হাউস এ নিয়ে গেলো। ভার্সিটি থেকে গেস্ট হাউস বেশি দূরত্ব না তাই দ্রুত পৌঁছে গেলো। গাড়ি থেকে বেড়িয়ে সিমি কে নামালো সিমি এখনো ঐভাবেই আছে নিশান সিমির বাঁধা হাত টানতে টানতে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে সোজা নিজের বেডরুমে নিয়ে গেলো সিমি কে। বেডে চেলে দিলো তাকে, সিমি হাল্কা ব্যাথা পেলো মুখ দিয়ে শুধু উম উম শব্দ করছে। নিশান দরজা বন্ধ করে দিলো সিমির কাছে আসলো সিমিকে উঠে দাঁড় করালো সিমির হাত খুলে দিলো, মুখ থেকে রুমাল ফেলে দিলো সিমি জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বললো,,,
“সমস্যা কি আপনার?”
নিশান নিজের মতো শান্ত কন্ঠে বললো,,,
“শাড়ি পড়েছিস কেন?”
সিমি জবাবে বললো,,,
“আমার লাইফ আমার ডিসিশন, কাউকে জবাব দিহিতা করতে পারবোনা।”
নিশান মাথা নাড়ালো হুট্ করে সিমির শাড়ি টান দিয়ে খুলে ফেলে দিলো সিমি দ্রুত হাত দিয়ে নিজেকে ঢেকে বললো,,,
“কি করছেন আপনি এইসব?”
নিশান বাঁকা হেসে জবাব দিলো,,,
“আমার বাম পাঁজরের হাড়ের অংশ, আমার অর্ধাঙ্গিনী আমি যা খুশি তাই করবো তোকে জবাব দিহিতা করতে পারবোনা তো আমি।”
সিমি — “নিজের কথা কি ফুরিয়ে গেছে, যে আমার কথা রিপিট করেন।”
নিশান মুখ দিয়ে “চ” সূচক উচ্চারণ করে বললো,,,
“রিপিট শব্দ টা i don’t like..!”
সিমি দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,,
“আর আমি আপনাকে like করি না।”
সিমির কথা শেষ হতেই নিশান সিমির কাছে আসে সিমির পেট খামচে ধরে জোরে নখ বসে যাই রক্ত ও বাহির হয়। সিমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো ব্যাথা/জ্বালা করতে লাগলো নিশান এর গরম নিশ্বাস পড়ছে মুখের উপরে নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“এই এই তুই কি বললি? কিসের দেমাগ তোর এত? কি ভাবছিস ছেড়ে দিয়েছি তোকে? ইডিয়েট তোকে ছাড় দিয়েছি ছেড়ে না, কি ভাবিস নিজেকে? পুরুষদের দেখানোর জন্য শাড়ি পড়েছিস? আমার সামনে কোনদিন পড়েছিস?”
নিশানের কথাই সিমি জবাব দিলো,,,
“নিজের মতো সবাইকে ভাববেন না আপনি পতিতা লয়ে যান বলে এই না, যে আমি সেই পতিতা লয়ে থাকি।”
সিমির কথা শেষ হতেই নিশান নিজের শক্তপক্ত হাত দিয়ে সিমির গালে জোরে একটা থাপ্পর মেরে বলে,,,
“ওই তুই কি মনে করেছিস নিজেকে? মনে যা আসবে তাই বলবি? দ্বিতীয়বার পতিতালয় মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলে i suer তোকে দাফন দেবো আমি।”
সিমি মলিন হেসে বললো,,,
“হ্যা ঐটাই পারবেন, প্রতিবার আমাকে ক্ষত – বিক্ষত করতে,কোন সময় জ্যান্ত কবর দেন তো আবার সারারাত পানিতে ডুবিয়ে রাখেন, এইটা আজ থেকে না তো সেই আমার ছোট বয়স থেকে য্খন থেকে বুজতে শিখেছি তখন থেকে দেখেছি শুধু মারেন আমাকে। কাল রাতেও ক্ষত বিক্ষত করলেন এখনো করলেন। কেন বারবার এমন করছেন? একেবারে মেরে দাফন দিয়ে দেন আমি সয্য করতে পারছিনা আর, কষ্ট হচ্ছে আমি মানুষ আমি থাকতে পারছিনা প্রতিদিনের এই পীড়া যন্ত্রনা গুলো বুকে নিয়ে বেঁচে থাকতে মেরে ফেলুন আমাকে।”
নিশান সিমির গাল জোরে চেপে ধরে বললো,,,
“তুই মরবি? মরার কথা বলার সাহস কই পেলি তুই? বলতে দিয়েছি বলে নিজের মৃত্যুর কথা বলবি? ”
সিমি একটা বড়ো শ্বাস নিয়ে বললো,,,
“আমার কাছে মনে হয় না আমি বেঁচে আছি, মরে তো সেই কবেই গিয়েছি যেইদিন জেনেছি আপনি হাজারো নারীতে আসক্ত।”
নিশান নিজের রাগ কন্ট্রোল আনার চেষ্টা করছে বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিলো সিমিকে ছেড়ে দিলো শান্ত ভঙ্গিতে দুই লাইন বললো,,,
“আজকের রাত টা শুধু আজকের রাত টা অপেক্ষা করবে তুমি। কালকে সবকিছু পাবে দেখবে আফসোস করবে নিজের ভুল বুজবে আমাকে খুঁজবে, আগলিয়ে নিতে আসবে, কিন্তু তোমার সবথেকে বড়ো আফসোস হবে অমকে পাবে না। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি খেয়ে নিও বিকালে তিহান এসে নিয়ে যাবে। আল্লাহ হাফেজ।”
বলে নিশান আর দাঁড়ালো না রুম ছেড়ে চলে গেলো। শুধু রুম না গেস্ট হাউস ছেড়ে চলে গেলো। তবে যাওয়ার আগে সার্ভেন্ট দের বলে গেলো সিমির খাবার দেওয়ার কথা।নিশান চলে যেতে সিমি হুঁ হুঁ করে কান্না করে দিলো, সেই থেকে নিজের কান্না আটকিয়ে ছিলো আর পারছেনা সে ফ্লোরে বসে পড়লো হাঁটুতে মুখ গুঁজে দিয়ে কান্না করতে লাগলো।মনে মনে বলতে লাগলো,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৭
“চোখের দেখা ভুল নয়, কিভাবে বিশ্বাস করবো যে ঐটা আপনি নন? আমি নিজের চোখেই তো দেখেছি আপনি যাচ্ছেন খারাপ জায়গায়। জানেন এই যে আপনার মুখের উপরে কথা গুলো বললাম আমার কেমন কষ্ট হচ্ছে? আপনি আমার কষ্ট বুজেন না কেন? আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আপনি আমাকে ইউস করলেন? এইটা আমি কখনো আশা করি নি।”
