তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৯ (২)
তাবাস্সুম খাতুন
সূর্যের প্রখর তাপ কমে এসেছে হাল্কা হাল্কা আঁধার ছেয়ে গেলো শহর জুড়ে। দুপুর কেউ বিদায় জানিয়ে ধরণীতে সন্ধ্যার আগমন ঘটলো। তিহান সিমি কে বিকালে বাসায় আনছে, সে বাসায় এসে সবার সাথে আড্ডা দিতে ব্যাস্ত। এইদিকে জিহান আর সামিয়া বাসায় ফিরছে আধা ঘন্টা হচ্ছে। সামিয়া কে বাসায় রেখে জিহান ও চলে গেছে, সামিয়া ও সবার সাথে আড্ডা তে যুক্ত হলো। এক টপিক থেকে আরেক টপিক নিয়ে সকলে আলোচনা করতে লাগলো। রাত আট টা বাজতেই ডাইনিং টেবিলে বসলো রাতের খাবারের জন্য। যে যার মতো খাওয়া শেষ করলো সেলিনা নিশানের জন্য প্লেটে ভাত মাংস বেড়ে সিমির হাতে দিলো। সিমি কোন প্রশ্ন না করে সোজা রুমে ঢুকে প্লেট টা রেখে দিলো টি টেবিলের উপরে ঢেকে।লাইট অফ করে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো ফোন টা নিয়ে কিছু সময় স্ক্রল করলো সময়টা সাড়ে নয়টার কাটায় যেতে সিমি ফোন রেখে ঘুমের দেশে পারি জমালো। এইদিকে জিহান আর নিশান এখনো বাসায় ফেরে নি, সামিয়াও জিহানের রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ছে। বাড়ির প্রতিটা সদস্য যে যার রুমে অবস্থান করছে।
শহরের বাইরে নির্জন এক পরিবেশ, দূর হতে দূর ফাঁকা মাঠ। অক্টবারের শেষের সময় বাতাসে হাল্কা কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা। এই ফাঁকা মাঠের মাঝখানে উঁচু বড়ো রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো গাড়ি। গাড়ির ডিক্কির উপরে মাথা হেলিয়ে পা লম্বা করে শুয়ে সিগারেট টানছে একজন, আরেকজন ডিক্কির উপরে উঠে হেলাম দিয়ে বসে সিগারেট টানছে। দুইজনের মুখ দিয়ে কোন শব্দ বাহির হচ্ছে না, নিঃশব্দে একের পর এক সিগারেট টেনে ধোঁয়া উড়াচ্ছে। হুট্ করে একজন বলে উঠলো,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এখন তুই করতে চাস নিশান?”
জিহান (ওই একজন ) এর কথা শুনে নিশান সিগারেট টান দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে বললো,,,
“তুই এইগুলো ইশুর কাছে পৌঁছে দিবি।”
জিহান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“আরে এইটা নাহয় পৌঁছে দেবো তবে ওই টাক ইদ্রিসের ব্যবস্থা কি করবি তুই? শালা ভন্ড ওর এমপি হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই।”
নিশান উঠলো সিগারেট এ আরেক টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দিলো, ঘাড় এইপাসে ওইপাশে কাত করে একটু ঘুরিয়ে নিলো হেলাম দিলো গাড়িতে বলে উঠলো,,,
“সে যদি বেঁচেই না থাকে তো এমপি হবে বাল করে?”
জিহান অবাক হয়ে বললো,,,
“তুই ওকে মেরে ফেলবি? পুলিশ নিয়ে সমস্যা হতে পারে!যেহেতু ভবিষ্যত এমপি।”
নিশান — “আমি মাফিয়া না যে পুলিশের সামনে একশো টা খুন করলেও পুলিশ আমাকে ধরার ক্ষমতা রাখবে না, তবে মাফিয়া না হয়েও আমার যেইটুকু পাওয়ার আছে তাতে আমি আমার অর্ধাঙ্গিনী কে রক্ষা করতে পারবো। হোক সেইটা ভবিষ্যত এমপি প্রাপ্য শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”
জিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
“তুই মাফিয়া নাহলেও তুই একটা সাইকো বাংলাদেশে আশার পরে পরপর কয়টা খুন করছিস ভেবে দেখতো!সামান্য ডাক্তার কেউ খুন করছিস। বারবার এমন ঝামেলায় কি জন্য জড়াবি ভাই? দুনিয়ায় বাঁচবোই বা কয়দিন?”
নিশান — “আজ হলেও মরবো কাল হলেও মরবো, তবে নিঃশাস থাকা পযন্ত যে নিজের অর্ধাঙ্গিনী কে কেউ বাজে নজর দিয়ে খুবলে খাবে এইটা আমি তানভীর চৌধুরী নিশান বেঁচে থাকতে সম্ভব হবে না জানে মেরে ফেলবো।”
নিশানের কথাই সত্যি যুক্তি আছে তাই জিহান সেই কথা পাল্টিয়ে বললো,,,
“বাড়ি যাবিনা।”
নিশান — “যাওয়ার ইচ্ছে নেই তুই যেতে চাইলে যা, আমি কালকে যাবো আর যাওয়ার সময় ঐগুলো নিয়ে যাবি সকালে ওর হাতে দিবি।”
জিহান ফোন টা সামনে এগিয়ে নিয়ে টাইম দেখলো মধ্যে রাত দুইটা পয়তালিস বললো,,,
“মধ্যে রাত এখন কই যাবি তাহলে?”
নিশান গাড়ি থেকে নামলো, ড্রাইভিং সিট্ এ বসে বললো,,,
“গেস্ট হাউসে যাচ্ছি।”
জিহান ও দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে বললো,,,
“আমিও যাবো চল, ভোরে বাড়িতে ফিরবো।”
নিশান গাড়ি ঘুরালো শহরের দিকে চলতে শুরু করলো, তার গেস্ট হাউস এ। গাড়ি নিস্তব্ধ ভাবে চলতে লাগলো দুইজনের কেউ কোন কথা বললো না।
রাতের আঁধার কেটে ধরনিতে সূর্যের আগমন ঘটলো। সময়টা সকাল সাত টা চৌধুরী ম্যানশনের সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে, সকালের নাস্তা করছে তাজউদ্দিন, সালাউদ্দিন, জামালউদ্দিন, রুবেল, তাজ, পিহু, মিহু, মেহেরিমা। সেলিনা, রোজিনা আর কিয়া সার্ভ করে দিচ্ছে। সিমিরা চারজন ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে। জিহান আর নিশানের মধ্যে এখনো পযন্ত কেউ বাসায় ফেরে নি।বাড়ির কর্তারা নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে গেছে। পিহু, মিহু, তাজ এরা স্কুল- কলেজে গেছে। সিমিরা আজকে কেউ স্কলে যাবে না। ওরা এখন নাস্তা করতে বসেছে এমন সময় জিহান বাসায় ফিরলো সিমিকে ডাইনিং টেবিলে বসে থাকতে দেখে জিহান ডাক দিলো,,
“সিমি এইদিকে আয়।”
সিমি উঠে জিহানের কাছে গেলো। জিহান আর সিমির দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। সিমি জিহানের কাছে গিয়ে বললো,,,
“জি ভাইয়া।”
জিহান একটা খাম সিমিকে দিয়ে বললো,,,
“আশা করছি কাউকে শেয়ার করবি না, সোজা রুমে গিয়ে দেখবি তবে কান্না ও করবি না যা।”
সিমি জিহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলেই সেলিনা ডাক দিলো,,,
“কিরে খাবি না?”
সিমি পিছে ফিরে বললো,,,
“একটু পরে আসছি তখন খাবো।”
বলে সিমি সোজা নিশানের রুমে ঢুকলো, সোফায় গিয়ে বসলো। বুকের ভিতরে কেমন অসহ্য যন্ত্রনা আছে জিহান তাকে কান্না করতে নিষেধ করেছে কিন্তু কেন? আবারো খারাপ কিছু আছে কি, যেইটুকু বেঁচে ছিলো সেইটুকু কি আর বাঁচিয়ে রাখবে না তাকে। ভয় গুলো যেন আরো বেশি চেপে ধরলো বুকের ভিতরে। দোয়া দরূদ যা মনে আছে সবগুলো পরে বুকে ফুঁ দিলো। হাত- পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো তার যেন অনেক কষ্টে খাম টা ছিঁড়লো বড়ো একটা নিশ্বাস নিয়ে তাকাতেই দেখলো দুইটা ছবি সাথে একটা পেনড্রাইভ।সিমি ছবিগুলো হাতে নিয়ে দেখতেই অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলো। ছবিগুলো এমন যে সে দেখেছিলো নিশান একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে আছে। ওই একই সিন্ একই ছবি পার্থক্য একটাই নিশানের ছবির জায়গায় অন্য একটা ছেলে। আরেকটা ছবিতে একটা ছেলে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে মেয়েটার মুখ তার মুখের মতো মানে সে। সিমি এই ছবি দেখে নিজেই বলে উঠলো,,,
“আমি তো এই ছেলেকে চিনিই না। ছবি কবে উঠলাম? এইগুলো কি এডিট?”
এডিট শব্দটা মাথায় যেতেই, আগের ছবিটা দেখে বললো,,,
“তাহলে কি নিশানের ছবিটাও এডিট ছিলো।”
এইগুলো মাথায় খেলতেই সিমি দ্রুত নিজের ল্যাপটপ বাহির করলো পেনড্রাইভ কানেক্ট করলো ল্যাপটপ এর কীবোর্ড এ হাত দিয়ে কাজ করে ফাইলস এর ভিতরে ঢুকলো সেখানে কিছু কল রেকর্ড আছে ও একটা চালু করলো যেইখানে বলা হচ্ছে,,,
“নিশানের সাথে একটা মেয়ের ছবি এমন ভাবে বানাও যেন ওরা দুইজন অন্তরঙ্গ হচ্ছে।”
“এর জন্য এক লক্ষ লাগবে।”
“তোমাকে দুই লক্ষ দেবো।”
“আচ্ছা কাজ হয়ে যাবে।”
সিমি আরো একটা চালু করলো সেইখানেই বলছে,,,
“তুমি কি নিশানের বউ এর কাছে মেসেজ পাঠিয়েছ?”
“হ্যা পাঠিয়েছি আমার মনে হচ্ছে সে আসবে। আমি অপেক্ষা করবো।”
“শোনো, আমি চার পাঁচটা ছবি তোমাকে সেন্ড করছি এইগুলো একটা ছেলেকে সরিয়ে নিশান কে বসিয়েছি যেন সে পতিতালয়ে যাচ্ছে।”
“আপনি পাঠিয়ে দেন বাকিটা আমার ভরসায় ছেড়ে দেন।”
সিমির চোখ থেকে পানি টুপটাপ করে পড়ছে। সে নাক টানলো আরো একটা রেকর্ড চালু করলো,,,
“কাজ শেষ?”
“হ্যা ওর বউ বোকা প্রচুর যা বলেছি তাই বিশ্বাস করেছে। কান্না করে দিসে প্রভাব পড়বে ভালোই।”
“Good job এখন নিশানের বুঝবে কত ধানে কটা চাল।”
সিমি ফুফাতে শুরু করলো আর সয্য হচ্ছে না। আসলেই সে বোকা, বোকা না হলে আজ এত বড়ো ভুল সে কিভাবে করে নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। সিমি শেষ কল রেকর্ড চালু করলো,,,
“আগেরবার ওর বউকে একটা ছেলের সাথে ধরা হয়েছিল, নিশান বাবা একদম বউ কে কিছুই বলেনি আগে থেকেই যেন জানতো তার বউ পবিত্র এইগুলো অন্যের কারসাজি। কিন্তু এইবার ছক্কা মারলাম আমি।”
“হ্যা বোকা বউ হলে যা হয়? বিশ্বাস নেই সমস্যা নেই বিশ্বাস নেই বলেই আমরা এত দূর এসেছি। এখন নিশান কে তিলে তিলে শেষ করাবো। আরেকটা প্ল্যান আছে আমাদের তাইতো?”
“হ্যা আছে ওর বউ এর সামনে একটা মেয়েকে পাঠিয়ে দেবো সোজা নিশান কে জড়িয়ে ধরবে উফফ ঐটুকু দেখেই ওর বউ গলায় দড়ি দিয়ে মরবে।”
“প্রাণ পাখি মরে গেলে, নিশান ও মরবো যাক দুনিয়া থেকে আপদ বিদায় হবে।”
কল রেকর্ড শেষ। সিমি মুখে হাত চেপে ধরে হুঁ হুঁ করে কান্না করতে লাগলো। সে নিশানের বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। আগেরবার ছেলেটা আমার সাথে জোরজবরদস্তি করেছে আমাকে কিছু বলেনি সে আমাকে বিশ্বাস করেছে। But আমি সামান্য এডিট ছবি দেখে বিশ্বাস করে ফেললাম ঐটা নিশান ছি। সিমি নিজের প্রতি দোষারোপ করছে সে নিশানের সামনে কিভাবে দাঁড়াবে? নিশান তাকে যেইভাবে ভালোবাসে। সে তো সেই ভালোবাসার ধারে কাছেও নেই। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে থাকে বিশ্বাসের উপরে, কিন্তু সে তো বিশ্বাস করি নি সে বারবার বলেছে তবুও বিশ্বাস করি নি।কালকেও কত খারাপ কথা বললো সে এখন মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে নিশানের এক উক্তি,,,
“তুই আমার সন্নিকটে আশার জন্য তোরপিয়ে মরবি তবুও আমাকে পাবি না।”
সত্যিই কি সে আর তাকে পাবে না। নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলো হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করতে লাগলো। কাল সারারাত নিশান বাড়ি ফেরে নি। এখন কি ফিরবে না সে? আদাও আসবে তো বাড়িতে? সে মাফ চাইবে কিভাবে চাইবে মাফ? তাকে কি নিশান মাফ করবে? আগলিয়ে নেবে কি? না নিশান তাকে মাফ করবেনা কালকেও সে এসেছিলো কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছে। অবহেলা করেছে, খারাপ কথা বলেছে তাহলেকেন করবে মাফ? সিমি ফুঁফাতে ফুঁফাতে বলে উঠলো,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৯
“আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি নি, আমার শাস্তি প্রয়োজন তবে আমার থেকে দূরে থাকেন না প্লিজ। চলে আসেন আপনি আমার ভালো লাগছে না আপনার বুকে একবার ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই, আমার বুক জ্বালা করছে স্বস্তি মিলছে না কোথাও। আসেন না আপনার বুকে মাথা রাখলে আমি শান্তি পাবো। আপনাকে জড়িয়ে ধরলে সব ব্যাথা ভুলে যাবো। সইতে পারি না আর এই যন্ত্রনা ফিরে আসেন না আমার কাছে।”
