তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪০

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪০
তাবাস্সুম খাতুন

সূর্যের তেজ একটু নরম হয়ে আসলো, হাল্কা বাতাস বইতে লাগলো শহর জুড়ে। সময়টা বিকাল তিনটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট.. অবস্থান চৌধুরী ম্যানশন থেকে চল্লিশ মিনিটের দূরত্ব এক কফি শপে। যেইখানে বসে আছে রাত্রি মুখে কালো মাক্স আর উড়না দিয়ে চুল বুক ঢাকা, এমন ভাবে আছে যেন কেউ চিনতে না পারে তাকে। টেবিলে এক কাপ কফি আছে দৃষ্টি শুধু এইদিকে থেকে ওইদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারোর অপেক্ষায় আছে হয়তো! কিৎক্ষণ পরে সেইখানে অভি আসলো হাতের তার এক কাপ কফি। সে বসলো রাত্রির সামনাসামনি, রাত্রি চোখ উঁচিয়ে তাকালো অভি কে সামনে মেয়ে নিঃশব্দে হাসলো ম্যাক্সের আড়ালে। অভি বলে উঠলো,,

“কখন আসছো তুমি?”
রাত্রি নিচু কন্ঠে জবাব দিলো,,,
“বেশি না দশ পাঁচ মিনিট হচ্ছে।”
অভি কফির কাপে চুমুক বসিয়ে বললো,,
“অর্ডার দাও!”
রাত্রি মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বললো,,,
“উহুম।”
অভি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,,,
“কেন?”
রাত্রি এইবার চোখ উঁচিয়ে তাকালো অভির দিকে দুইজনের চোখেচোখি হলো রাত্রি দৃঢ়তার সাথে বললো,,,
“বিয়ে কবে করবেন?”
অভি ভাবলেশিন ভাবে বললো,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মেয়ে পাই নি এখনো মনের মতো, আগে পেয়ে যাই তারপর করে ফেলবো বিয়ে।”
রাত্রির যেন রাগের মাত্রা বাড়ছে, তবুও সে শান্তভঙ্গিতে বললো,,
“দেখেন আমি এইখানে আপনার সাথে নাটক – সিনেমা কিছু করতে আসি নি। একটা সুন্দর ফলাফল জানতে এসেছি তাই নাটক – সিনেমা, মজা থেকে বেড়িয়ে সিরিয়াস হন আর সুন্দর ফলাফল দেন।”
অভি রাত্রির কথা শুনলো মজা বাদ দিয়ে সিরিয়াস মুখে বললো,,,
“বাড়িতে বলি তাহলে।”
রাত্রি অবাক কণ্ঠে বললো,,,
“কি বলবে?”

অভি — “তোমার আর আমার প্রেমের কথা, তারপর বিয়ের কথা।”
রাত্রি মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বললো,,,
“অসম্ভব এইগুলো বলা যাবে না।”
অভি — “কেন?”
রাত্রি — “সমস্যা হবে, অন্যকিছু ভাবো।”
অভি একটু ভাবলো হুট্ করে কিছু মনে পড়তেই বলে উঠলো,,,
“প্রেমের কথা বলবো না তবে, বিয়ের কথা বাত্রা তো বলতে যেতেই পারে?”
রাত্রি বুজতে না পেরে প্রশ্ন করলো,,,
“মানে?”
অভি — “আমি বাড়িতে গিয়ে বলবো জিহানের বোন কে আমার পছন্দ হয়েছে অনেক, এখন ওর সাথে বিয়ে করতে চাই প্রেম জিনিষ তা হারাম, তারপর ও যদি না করে দেই। এইজন্য একেবারে ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে চলো।”

অভির কথা শুনে রাত্রি সম্মতি দিয়ে বললো,,,
“হ্যা এইটাই করেন, তাহলে আমাদের এত বছরের রিলেশন কেউ জানতে পারবেনা। সাথে পরিবারের সম্মতিতে আমাদের এরেঞ্জ মেরেজ হবে।”
অভি হেসে বললো,,,
“হুম, চলো একটু ঘুরে আসি।”
রাত্রি হাত ব্যাগ তুলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,,,
“বিয়ের পরে ঘুরবো এখন বাসায় গিয়ে বিয়ের কথা বলো, আল্লাহ হাফেজ।”
এই বলে রাত্রি আর দাঁড়ালো না, সোজা রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো। রাত্রি চলে যেতেই অভি হতাশ কণ্ঠে বিড়বিড় করলো,,,
“এই মেয়ে কোনোদিন আমার কষ্ট বুঝলোনা, বিয়ের পরে বলবে এখন শশুর বাড়ি আছি সারাদিন ঘোরাঘুরি করলে কি বলবে লোকে? ধ্যাৎ বাল বিয়ে করলেও জ্বালা না করলেও জ্বালা।”
বলে উঠে দাঁড়ালো বিল পরিষধ করে বেড়িয়ে গেলো। এর মধ্যে রাত্রি বাসার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেছে। অভি বাইকে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। বিয়ের কথা বলতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।

জিহান রুমে বসে অফিসের কাজ করছে। হুট্ করে সামিয়া রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো জোরে। জিহান তাও তাকালো না নিজের মতো কাজ করতে লাগলো সামিয়া জিহানের পাশে এসে বসে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“এই আপনি সিমি কে ঐটা কি দিয়েছিলেন?”
জিহান কাজ করতে করতে বললো,,,

“বেশি স্ট্রেস নিও না, তোমার জামাই তোমার আছে। সিমি আমার বোন হয় ওর দিকে কোন পরকীয়াr প যদি উচ্চারণ করি নিশান আমার গর্দান কেটে ফেলবে।আর আমি সিমি কে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবিওনা।”
সামিয়ার যেন আরো রাগ হচ্ছে ও বললো কি? আর উত্তর দিলো তাই বা কি? সামিয়া আবারো বললো,,,
“একটা খাম দিয়েছিলেন তাকে? সেই খামে কি ছিলো? যার জন্য সিমি রুম থেকে এখনো বাহির হয়নি কত ডাকলাম শুনছেই না। ফোন তাও সুইচ অফ কেন?”
জিহান এইবার সামিয়ার দিকে তাকালো সামিয়া ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে উত্তর শোনার জন্য, জিহান আবারো নিজের কাজ করতে করতে বললো,,,
“ঐখানে যা ছিলো তা সিমি কে শিক্ষা দিচ্ছে এইজন্য রুম থেকে বেরোচ্ছে না। ওই দরজা কারোর ডাকে খুলবে না। নিশান আসলে সেইটা আলাদা ব্যাপার।”
সামিয়া ভাবুক কণ্ঠে বললো,,,

“ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে?”
জিহান — “হ্যা।”
সামিয়া — “হুম যাদের মধ্যে ভালোবাসা বেশি তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়।”
সামিয়ার কথা শুনে জিহান সামিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,
“যেমন তোমার আর আমার মধ্যে প্রতিদিন ঝগড়া হয়, এর মানে আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তুমিও আমাকে অনেক ভালোবাসো।”
সামিয়া উঠে দাঁড়ালো জিহানের দিকে মুখ বাকিয়ে বললো,,
“বালের ভালোবাসা ধ্যাৎ।”
বলে রুম থেকে চলে গেলো। জিহান পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো কাজ করতে লাগলো অনেক কাজ জমা পড়েছে।

সামিয়া নিচে নেমে দেখলো ড্রইং রুমের সোফায় জারা একা বসে টিভি দেখছে। সামিয়া জারার পাশে এসে বসে বললো,,,
“কিরে রাত কই?”
জারা টিভি দেখতে দেখতে বললো,,
“দোকানে গেছে কি আনতে, অনেক ক্ষণ হয়েছে এখনো আসি নি।”
সামিয়া ও জারার সাথে টিভি দেখতে দেখতে দেখতে বললো,,,
“তুই এইখানে একা বসে কি করছিস?”
জারা হতাশার শ্বাস ফেলে বললো,,,
“কি করবো আর? আগের ছোটবেলা গুলো ভালো ছিলো আমার বোন গুলো আমার কাছে থাকতো আর এখন জামাই হওয়ার পরে আর আসে না, যে যার জামাই নিয়ে ব্যাস্ত একজন জামাইয়ের রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আরেকজন জামাই থেকে ভালোবাসা নিয়ে আমার পাশে বসে টিটকিরি মারছে,কষ্ট।”
সামিয়া জারার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,

“আহারে আমার সোনা পাখি, আমার জাওড়া পাখি আমি আছি তো।”
জারা মুখ ভাঙিয়ে বললো,,,
“সর বাল তোর জামাই আছে।”
সামিয়া জারার হাত জড়িয়ে ঘাড়ে মাথা রেখে বললো,,,
“জান তাড়িয়ে দিও না এইভাবে একসাথে বসে মুভি দেখি ভালো লাগবে।”
জারা আর কিছু বললো না দুইজনে বসে টিভিতে মুভি দেখতে লাগলো।

রাত নয়টা বেজে চার মিনিট। সিমি সেই সকালে দরজা লাগিয়েছে রুমের এখনো পযন্ত খুলে নি। তাজউদ্দিন নিজেই এইবার দরজার কাছে আসলো নক করলো চার পাঁচবার কোন সাড়া শব্দ নেই। তাই ডুপ্লিকেট চাবি আনতে নিচে যেতেই সামিয়ার ফোনে একটা ভয়েস মেসেজ আসলো সিমির। সামিয়া চিৎকার করে বললো,,,
“সিমি ভয়েজ দিয়েছে আমার ফোনে।”
তাজউদ্দিন সিঁড়ির কাছ থেকে ফিরে এসে সামিয়ার কাছে গেলো বললো,,,
“চালু কর ভয়েজ।”
সামিয়া ভয়েজ চালু করলো সেইখানে সিমি বলছে,,,

“আমার জন্য টেনশন কর না বেশি, আমি ভালো আছি। দরজা আপাতত কালকে সকালে খুলবে, সবাই ভালো থাকো খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পর। আমার খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি খেয়ে নেবো।”
ভয়েজ শেষ। বাড়ির মানুষ আর কেউ কোন কথা বললো না, সবাই খাবার খেতে ব্যাস্ত হলো। এইদিকে জারার ফোনে সিমির মেসেজ আসলো। জারা মাথা নিচু করে মেসেজ দেখলো,,,
“জারা বইন আমার উপকার কর।”
জারা এক হাত দিয়ে টাইপিং করে লিখলো,,,
“অপেক্ষা কর খেয়ে আসছি।”
সিমি একটা লাইক পাঠালো। জারা দ্রুত খাবার শেষ করে উপরে উঠলো। যাওয়ার আগে রাত্রির কানে কানে বললো,,,

“তুই ঘুমিয়ে পরিস। আমার রুমে যেতে লেট্ হবে সিমির রুমে কিছু কাজ আছে।”
রাত্রি মাথা নাড়লো। যে যার মতো খাওয়া শেষ করে রুমে গেলো। রাত্রি রুমে ঢুকে দরজা ভাজিয়ে ফোন হাতে নিয়ে অভির ফোনে কল দিলো। তার নিজেরই লাভ হয়েছে জারা রুমে না আশায় মন ভোরে কথা বলতে পারবে অভির সাথে।
এইদিকে জারা সিমির রুমের সামনে এসে সিমি কে মেসেজ দিলো,,
“দরজা খোল। আমি দাঁড়িয়ে আছি।”
সিমি দরজা খুলে ফেললো। অন্ধকার রুম, জারা ভিতরে ঢুকে বললো,,,
“রুম এত অন্ধকার কেন?”
সিমি দরজা লাগিয়ে লাইট অন করে বললো,,
“দেখে নে। ”

লাইট অন হতেই জারা অবাক চোখে রুম দেখলো। কি সুন্দর ভাবে সাজানো। পুরো রুম জুড়ে একটু দূরে দূরে মোমবাতি জ্বালানো আছে। বেলুন দিয়ে আশেপাশে দেওয়াল এ সাজানো। সবকিছু লাভের আকৃতি বেলুন। বেডের উপরে সাদা বেডসিট। তারউপরে গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি সুন্দর করে সাজানো। জারা অবাক কণ্ঠে বললো,,,
“এত কিছু পেলি কই?”
সিমি এগিয়ে এসে দেওয়াল এ বেলুন লাগাতে লাগাতে বললো,,
“ঐযে চায়ের দোকানে একটা ছোট ছেলে থাকে রিহান তাকে মেসেজ দিয়ে বললাম এইগুলো আমাকে দিয়ে যা।”
জারা — “কিভাবে দিয়ে গেলো তোকে?”
সিমি — “পাঁচিল টপকে দিয়ে গেছে।”
জারা বাহবা দিয়ে বললো,,,
“বাহ্ বাহ্ ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে ভাবিজান।”
সিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
“ঝগড়ার থেকেও বেশিকিছু। এখন হেল্প কর আমাকে। না জানি রাগ ভাঙাতে পারবো আদৌ? কিনা।”
জারা সিমির হাতে হাতে কাজ করতে করতে বললো,,,

“অবশ্যই পারবি। কিছু টিপস দেই।”
সিমি মাথা নাড়লো। জারা বললো,,,
“শাড়ি পর ভাইয়ার সামনে।”
সিমি — “পড়তে পারি না।”
জারা — “ফোন দেখে আমি পড়িয়ে দেবো।”
সিমি — “আচ্ছা।”
জারা — “তবে!”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“তবে কি?”
জারা — “শাড়ি কিন্তু নেটের হওয়া লাগবে একদম পাতলা যেন শরীরের গঠন স্পষ্ট বোঝা যাই। সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ।”

সিমি দ্রুত মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বললো,,,
“অসম্ভব এইগুলো পারবোনা আমি।”
জারা — “ভাইয়া রাগ করেছে রাগ ভাঙানোর জন্য এইটাই বেস্ট অপশন। তুই ট্রাই করেই দেখ।”
সিমি আর কিছু বললো না। দুইজনে সুন্দর করে সাজিয়ে নিলো জারা নিচে নেমে ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করে উপরে এনে রেখে দিলো সিমির রুমে। এইবার নিজের রুমে গেলো সে একটা পাতলা শাড়ি রেখেছিলো জামাই এর সামনে পড়বে। এখন সিমির দরকার তাই বাহির করে সিমির রুমে ঢুকলো। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে দশটা বাজে। জারা আর সিমি মোমবাতি জল্লালো। এরপর সিমি ওয়াশরুম থেকে পেটিকট আর ব্লাউজ পরে বেড়িয়ে আসলো,জারা ফোনে শাড়ি পড়ার একটা ভিডিও প্লে করে সিমিকে পড়িয়ে দিলো শাড়ি সুন্দর। সিমির চুলগুলো ছেড়ে দিলো কপালে সাদা স্টোনের টিপ পড়িয়ে দিলো। কানে কালো স্টোন বসানো ইয়ার রিং ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক হাল্কা করে। সিমি কে সাজানোর পরে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,,

“ভাবিজান মুই ফিদা হলাম আপনার রূপে। ভাইয়া এইবার অজ্ঞান না হলেই হলো। আমি গেলাম তুমি অপেক্ষা কর ভাইয়ার জন্য।”
এই বলে জারা চলে গেলো। সিমি দরজা লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকলো কিছুক্ষন। ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে বললো,,,
“খারাপ লাগছে না। তবে উনি কি মুগ্ধ হবেন?”

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৩৯ (২)

সিমি লাইট অফ করে নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে সোফায় বসে নিশানের অপেক্ষা করতে লাগলো। বুকের ভিতরে যেন হার্টবিট জোরে জোরে শব্দ করতে লাগলো। ভয় লাগছে নিশান এইসব দেখে কি বলবে? কি করবে সে? তাকে কি ইগনোর করবে? তাকে মারবে? বকবে? কষ্ট দেবে? এইসব মনে আসতে সিমি বিড়বিড় করলো,,,
“মারেন ক্ষতবিক্ষত করেন, বকেন, কষ্ট দেন তবে ছেড়ে যায়েন না। সইতে পারবো না।”

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here