তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৮
তাবাস্সুম খাতুন
দুপুরের প্রখর তাপ কমে আসছে ধীরে ধীরে। শীতের প্রভাব ভালোই পড়েছে শহরজুড়ে। কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে। সময়টা তখন তিনটা চব্বিশ এর কোটায়…
সিমি রুমে বসে রেস্ট নিচ্ছিলো, এমতা সময় নিশান রুমে আসলো আলমারি থেকে নিজের পোশাক বাহির করে ওয়াশরুমে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিমির উদ্দেশ্য বললো,,,
“দ্রুত রেডি হয়ে নে, আর হ্যা যেই বোরকা কিনে আনছি তার থেকে যেকোনো একটা পড়বি।”
সিমি নিশানের কথা শুনে প্রশ্ন করলো,,
“কোথায় যাবো?”
“বেশি প্রশ্ন না করে রেডি হো।”
বলে নিশান ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। সিমি বেড থেকে নামলো হেঁটে সোজা সোফার কাছে গেলো। সেখানে দশটা শপিং ব্যাগ রাখা সবগুলো হাতে নিয়ে বেডে আসলো। সিমি সবগুলো শপিং ব্যাগ খুলে বেডে রাখলো, এইগুলো তে বোরকা ছিলো সবগুলোর রং কালো তবে ডিজাইন আলাদা আলাদা সাথে হিজাব ও আছে। সিমি এইগুলো দেখে অবাক হলো বসে গুনতে লাগলো মোট কয়টা বোরকা। একটা একটা করে গুনে দেখে পুরো পনেরোটা বোরকা সহ হিজাব। সিমির চক্ষু জোড়া বড়ো বড়ো হয়ে গেলো সে বলে উঠলো,,,
“আমি মানুষ একটা বোরকা পনেরোটা?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু ওয়াশরুম থেকে কোন জবাব আসলো না। সিমির চোখ গেলো টি টেবিলের উপরে রাখা আরো তিন চারটা শপিং ব্যাগের দিকে সিমি দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো না জানে ওই ব্যাগে আর কত কি আছে? সিমি বোরকা গুলো থেকে বেছে বেছে একটা সিম্পল ডিজাইনের বোরকা রাখলো আলাদা ভাবে। আর বাকি বোরকা গুলো আবারো ব্যাগে ঢুকিয়ে সোফায় রেখে আসলো। এর মধ্যে নিশান বেড়িয়ে আসলো ফর্মাল লুকে। সিমি কিছু না বলে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বোরকাটা পরে নিলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব বাঁধলো মুখে কালো মাক্স দিলো নিজেকে গুছিয়ে নিশানের পানে তাকালো নিশান ফোন স্ক্রল করছিলো সিমি বলে উঠলো,,
“আমার হয়ে গেছে।”
নিশান ফোন রেখে সিমির দিকে তাকালো শুধু চোখ জোড়া ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না খুব সুন্দর লাগছে এই বোরকা পড়াতে নিশান মুগ্ধ নয়নে তার প্রিয়সী কে দেখে যাচ্ছে। এইদিকে নিশানের এইভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে সিমি বলে উঠলো,,,
“খারাপ লাগছে দেখতে? কোথাও ঠিক করতে হবে কি?”
বলে আয়নার কাছে যেতেই নিশান এসে সিমির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে বললো,,,
“আমাকে জানে মেরে ফেলতে চাস তুই? ”
সিমি ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,,,
“আমি আবার কি করলাম।”
নিশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
“কিছু করতে হবে না চুপচাপ চল আমার সাথে।”
বলে সিমিকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামালো সালাউদ্দিন ওদের দেখে প্রশ্ন ছুড়লো,,
“তোমরা কি কোথাও যাচ্ছ?”
সিমি পিছে ফিরে তাকালো নিশান সিমিকে ঐভাবেই টানতে টানতে নিয়ে যেতে বললো,,
“এত প্রশ্ন করেন কেন শশুর আব্বা!নিজের কাজ করেন।”
বলে সিমিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে, এইদিকে সালাউদ্দিন বিড়বিড় করলো,,
“হতচ্ছাড়া ছেলে যেহেতু শশুর আব্বা মানিস একটু তো সন্মান করতে পারিস।”
বলে নিউজপেপার পড়াই মনোযোগ হলো। নিশান সিমিকে নিয়ে বাইরে আসলো সিমিকে দার করিয়ে সে গ্যারেজ থেকে নিজের বাইক আনলো। নিশান উঠে বসলো সিমি দ্রুত বলে উঠলো,,,
“আমি বাইকে যাবো না।”
নিশানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো প্রশ্নবোধক চাহুনি তে সিমির দিকে তাকিয়ে বললো,,
“কেন?”
সিমি কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,,
“যেই কয়বার আপনার বাইকে উঠেছি আপনি সামনে বসিয়েছেন জানেন জীবনের রিক্স নিয়ে আপনার সাথে ঐভাবেই থাকতাম ঝুলে। আর পারবোনা আমি ঐভাবেই বেবি ব্যাথা পাবে আমার কষ্ট হবে।”
সিমির পুরো কথা শুনে নিশান রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,,
“ইডিয়েট তোর আমাকে দেখে কি মনে হয়? আমি গাধা!”
নিশানের এমন প্রশ্ন শুনে সিমি মনে মনে বললো,,
“গাধা না বিদেশ ফিরত কুত্তা বিদেশি কুত্তা লাগে। ”
কিন্তু মুখে বললো,,,
“না না আপনি গাধা হবেন কেন গাধারা চার পা দিয়ে হাটে আর আপনি তো দুই পা। গাধারা ঘাস লতা খাই আর আপনি তো রুটি খান। গাধারা জিনিষ বয়ে বেড়াই আর আপনি তো জিনিষ অন্যকে দিয়ে বয়ে আনেন। গাধারা তো…
সিমির বাকি কথা শেষ করতে না দিয়ে নিশান ধমক দিয়ে বললো,,,
“চুপ বেয়াদব মেয়ে, আমার সাথে ভণ্ডামি করিস? চুপচাপ পেছনে উঠে বস।”
সিমি মুখ চেপে হাসলো, দ্রুত উঠে বসলো নিশানের পেট জড়িয়ে ধরলো।নিশান বাইক স্টার্ট দিলো মিডিয়াম ভাবে বাইক চালাতে লাগলো। সিমি নিশানের ঘাড়ে মাথা রাখলো নিশান প্রশ্ন করলো,,,
“সমস্যা হচ্ছে কোন? আমি কি আরো আস্তে চালাবো?”
“উহুম এইভাবেই চালান খুব ভালো লাগছে তাই মাথা এলিয়ে দিলাম।”
তারপর আর দুইজনের মধ্যে কোন কথা হলো না। তাঁদের গাড়ি থামলো একটা পার্কের সামনে।সিমি নামলো নিশান ও নামলো।নিশান বাইকের চাবি প্যান্টের পকেটে রাখলো সিমির হাত ধরে পার্কের ভিতরে ঢুকলো সিমি প্রশ্ন করলো,,
“পার্কে ঘুরতে আসছি আমরা?”
“দেখতেই তো পারছিস আবার প্রশ্ন করিস কেন?”
সিমি কিছু বললোনা এইদিকে ওইদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো পার্কের পরিবেশ। সবজায়গায় কাপল আর কাপল হাত ধরে হাঁটছে কেউ কেউ কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, আবার কেউ কেউ ঝোপের আড়ালে পার্সোনাল প্রেম করছে সিমি এইগুলো দেখে নিশান কে বললো,,
“পার্কের কি অবস্থা? আচ্ছা আপনিও কি আমার সাথে এমন করবেন বলে নিয়ে আসছেন?”
নিশান ধমক দিয়ে বললো,,,
“ইশু আর একটা বাজে কথা মুখ দিয়ে বাহির করে দেখ তাহলে মুখ সুই সুতা দিয়ে সেলাই করে দেবো।”
সিমি আর কিছু বললোনা চুপ হয়ে গেলো। নিশান সিমিকে বললো,,
“কিছু খাবি?”
সিমি কথা বললোনা। নিশান তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,,,
“কিহলো? কথা কানে যাই না? আমি জিজ্ঞাসা করেছি কিছু।”
সিমি মুখ ভার করে বললো,,,
“আপনিই তো কথা বলতে বারণ করলেন।”
“তোর মাথায় একটুও বুদ্ধি নেই। কি খাবি বল?”
সিমি আশেপাশে চোখ বুলালো দৃষ্টি ঠেকলো ঝালমুড়ির দোকানে সে বলে উঠলো,,
“ঝালমুড়ি খাবো।”
“স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
“দিতে হবে না কিনে আপনি খান।”
“দিন দিন তোর রাগের ডিমান্ড বেড়ে যাচ্ছে।”
“ভালোই হচ্ছে, আমি বাসায় যাবো।”
“বেয়াদব মেয়ে চুপ, চল আমার সাথে কিনে দিচ্ছি।”
সিমি হাসলো নিশান সিমিকে নিয়ে ঝালমুড়ির দোকানে গেলো সিমিকে ঝালমুড়ি কিনে দিয়ে ওর হাত ধরে একটা নির্জন জায়গায় গেলো সেইখানে থাকা একটা বেঞ্চে সিমিকে বসালো পাশে সেও বসলো। সিমি মাক্স খুলে ফেললো ঝালমুড়ি মুখে নিলো। একটু তুলে নিশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,,
“এই নেন আপনিও একটু খান।”
নিশান ফোন স্ক্রল করতে করতে বললো,,,
“আমি এইসব খাই না তুই খা।তবে সাবধান যদি পেট ব্যাথা করে তাহলে যে কি করবো তোকে আমি নিজেও জানিনা।”
সিমি খেতে খেতে বললো,,
“করবেনা করবে না উফফ কি সুন্দর খেতে।”
“মিস্টার খান, আমরা কি এই ডিল টা পাবো?”
বিজনেস পার্টনার এর কথা শুনে। সারজিদ খান নীল গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,,,
“আপনার কাজকর্ম আমার পছন্দ হয়েছে। সাথে আরো একজন আছে তাঁদের কাজকর্ম ও ভালো লাগছে এখন দুইজনের কাজকর্ম নিয়ে আমি একটু ভেবে দেখবো তারপর ডিটেলস সম্পূর্ণ ভিডিও কলে বলে দেবো।”
বিজনেস পার্টনার টা উঠে দাঁড়ালো নীলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,,
“ধন্যবাদ মিস্টার খান, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আজকের ডিনার আমরা একসাথে করতে পারি। আমার তরফ থেকে, প্লিজ না করবেন না।”
নীল উঠে দাঁড়ালো হ্যান্ডশেক করে বললো,,,
“সরি কারন আমার আজ রাতেই আমার ফ্লাইট দশটার সময়। তার আগে আমার এয়ারপোর্ট এ ঢুকে যেতে হবে। আপনাদের দুইজনের সাথে মিটিং করবো বলে সকালেই আসছি। ইনশাআল্লাহ পরেরবার কোন একসময় এসে করবো।”
“আবারো ধন্যবাদ মিস্টার খান, আপনার যাত্রা শুভ হোক। আমি তাহলে এইবার যাই।”
নীল মাথা নাড়িয়ে বললো,,,
“হ্যা আপনিও সাবধানে যাবেন।”
লোকটা চলে গেলো নীল আকাশের পানে তাকিয়ে দুই তিনবার বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিলো। নীলের পার্সোনাল বডিগার্ড এসে বললো,,,
“এখন কোথায় যাবেন ভাই?”
“পার্কটা সুন্দর মনোরম একটু ঘোরাঘুরি করতাম তারপর হোটেলে যাবো।”
বডিগার্ড মাথা নাড়লো নীল ফোন হাতে নিয়েই হাঁটা শুরু করলো। তার সাথে তার বডিগার্ড যাচ্ছে। কিছু দূর আসতেই হুট্ করে নীলের পা থেমে গেলো আর এগোলো না তার পা। বডিগার্ড জিজ্ঞাসা করলো,,
“কি হয়েছে ভাই দাঁড়ালেন কেন? যাবেন না?”
নীলের কোন সারা শব্দ নেই। দৃষ্টি তার সামনের দিকে চোখের পাতা না ফেলে তাকিয়ে আছে। বডিগার্ড নীলের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো তারও চোখ আটকে গেলো। একটা বেঞ্চে বসে থাকা দুইজনকে দেখে। একজন এইটা সেইটা বলছে আর খাচ্ছে আরেকজন হা হুঁ করছে আর ফোন স্ক্রল করছে। তারা দুইজন আর কেউ নয় সিমি আর নিশান। বডিগার্ড এইটা দেখে নীলের হাত ধরে বললো,,,
“ভাই আপনি ঠিক আছেন তো?”
নীল হুসে ফিরলো তাকিয়ে রইলো মুগ্ধ চাহুনি তে তার শ্যামা পাখির দিকে মুচকি হেসে বললো,,,
“আসলে এইভাবে যে তার দেখা আমি পাবো একদম বুঝতে পারিনি।”
“আপনি ঠিক আছেন ভাই?”
নীল লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বললো,,,
“শ্যামা পাখি কে দেখে সারজিদ খান নীল জীবন্ত প্রকৃতি হয়ে গেছে।”
“এমনভাবে বলবেন না ভাই, আমি জানি আপনার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে প্রতিরাতে আপনি ভাবির জন্য কান্না করেন। সে কি আর্তনাদ আপনার আমি সব জানি আপনার কষ্ট। এইভাবে কষ্ট পান না ভাই আল্লাহ আপনার জন্য আরো ভালো মেয়ে দেখে রাখছে আপনি কাউকে জীবন সঙ্গীনী হিসাবে পাবেন।”
নীল একবার তার বডিগার্ড এর দিকে তাকালো, এরপর আবারো দৃষ্টি ঘুরলো সিমির পানে নিঃশব্দে হেসে বললো,,
“পৃথিবীটা গোল এই গোলকের মধ্যে আমার সাথে অনেকে নারীর দেখা হবে। হ্যা শ্যামা পাখির থেকেও ভালো কাউকে পেতে পারি। আমি এর থেকেও ভালো ডিজার্ভ করি, কিন্তু ঘুরে ফিরে একটা কথা সবাইকে পেলেও আমি তো আর আমার শ্যামা পাখিকে পাবো না।”
“গোলাকার দুনিয়াই ঘুরতে ঘুরতে আবারো যে তার সাথে দেখা হবেই তখন এই কষ্ট কিভাবে লুকাবেন ভাই?”
“এইটা কষ্ট না তো। এই সারজিদ খান নীল হলো জীবন্ত লাশ। তবে এই জীবন্ত লাশের সাথে তার শ্যামা পাখির যেই কয়বার দেখা হবে সে লাশ থেকে জীবন্ত প্রকৃতিতে পরিণত হবে এইটাকে কষ্ট বলেনা। দেখ আমার শ্যামা কত খুশি কি সুন্দর হাসছে, ওর খুশিতেই তো আমি খুশি।”
“আপনার যেইটা ভালো মনে হয়।”
“তুই একটু যা আমি আমার শ্যামাকে দেখে একটু পরে যাচ্ছি।”
বডিগার্ড মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। নীল তাকিয়েই আছে তার শ্যামার দিকে আবার মুচকি মুচকি হাসছে। কি সুন্দর দেখাচ্ছে তার শ্যামাকে, আরো বোরকা পড়েছে মাশাআল্লাহ বাহির হয়ে আসলো তার মুখ থেকে। সাথে কিছু কথা অজানা কথাগুলো,,,
“আমি তো আমার এই শ্যামা পাখিকেই দেখতে চেয়েছিলাম যে সবসময় হাসবে। চোখের কোনে এক ফোঁটাও পানি থাকবে না। আমার মনের ইচ্ছে আল্লাহ পূরণ করেছে, লাখো লাখো শুকরিয়া আল্লাহ তোমাকে। জানো শ্যামা আমি না কল্পনা করতে পারিনী তোমাকে এইভাবে হুট করে দেখে ফেলবো আমি, ভেবেছিলাম আর হয়তো আমাদের দেখা হবে না। কিন্তু না হয়েই গেলো এমন সুন্দর মুহূর্ত আমি আজীবন মনে রাখবো। আচ্ছা আমি তোমার স্মৃতিতে আছি তো? তুমি কি আমাকে মনে রেখেছো? আমাকে কি মিস কর? দূর কিসব বলছি আমি তুমি কেন আমাকে মনে করবে? যাইহোক তোমার খুশি থাকা তোমার এই চঞ্চলতা, তোমার মিষ্টি হাসি আমার ভীষণ পছন্দ জানো। তুমি সবসময় যেন এইভাবে হাসি খুশি থাকো। আমি নাহয় গোপনে গোপনে তোমাকে এক ঝলক দেখে যাবো।”
থামলো সে গলা শুকিয়ে গেছে। চোখের কোনে পানিরা ভীর করেছে তবুও মুখে লেগে আছে চমৎকার হাসি হুট্ করে দুই তিন লাইন গানের কলি গেয়ে উঠলো,,,
“দূর হতে আমি তারে সাধিবো,
গোপনে বিরাহ ডরে বাঁধিব।
দূর হতে আমি তারে সাধিবো,
গোপনে বিরাহ ডরে বাঁধিব।
বাঁধন বিহীন সে, যে বাঁধন অকারণ
মায়াবন বিহারিনি…”
নীলের চোখ লাল টুকটুক করছে কান্না গুলো গলায় দলা পাকানো আছে। সে আর দাঁড়ালোনা চলে গেলো সেই জায়গায় ছেড়ে সোজা নিজের গাড়িতে উঠে বসলো সিট্ এ হেলাম দিলো তার বডিগার্ড উঠে আসলো গাড়ি চলতে শুরু করলো তার হোটেলের দিকে। সিট্ এ মাথা এলিয়ে শুয়ে থাকা নীলের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো সে নিজেকে সামলাতে পারচ্ছেনা, ছেলেদের নাকি কান্না করতে নেই তবে সে কেন কান্না করছে? কষ্টের বোঝা কি একটু বেশি হয়ে গেলো? না আর ভাবতে পারচ্ছেনা কিছু চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো চোখের কোন দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
সিমির খাওয়া শেষ হতেই নিশান সিমিকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো সিমির হাত ধরে নিয়ে যেতে গেলে সিমি বললো,,,
“আবার কোথায় যাবো?”
“সন্ধ্যা হয়ে আসছে বাড়িতে যাবো।”
সিমি কিছু বললোনা নিশানের হাত জড়িয়ে ধরলো তারা পার্ক থেকে বেড়িয়ে গেলো সিমি বলে উঠলো,,,
“আমি চকলেট খাবো।”
নিশান রাস্তার ওপরপাশে তাকালো দেখলো চকলেট এর দোকান সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,
“চুপ করে বাইকে হেলাম দিয়ে দাঁড়িয়ে থাক, আমি দ্রুত চকলেট কিনে আনছি।”
সিমি মাথা নাড়লো, নিশান এগিয়ে গেলো। সিমি ফোন বাহির করে স্ক্রল করতে লাগলো ঠিক সেইসময় একটা বিকট আওয়াজ হলো সিমি কেঁপে উঠলো সামনে তাকিয়ে দেখতেই দেখলো বড়ো গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে একটা ছেলের। সেই ছেলের রক্তে পুরো রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। এইটা দেখে সিমির হাত থেকে ফোনতা পরে গেলো একটু এগিয়ে আশেপাশে তাকালো নিশানের দেখতে পেলনা কোথাও। মনের ভিতরে ভয় চাপলো কার রক্তে রাস্তা লাল হচ্ছে? দম বন্ধ হয়ে আসছে বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিচ্ছে। যেইখানে এক্সিডেন্ট হয়েছে সেখানে মানুষ ভীর করলো সিমির মাথা ঘুরছে মাথা জোরে চেপে ধরলো শ্বাস নিতে পারছেনা আর জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো,,,
“নিশান আপনি কইইইইই?”
সিমি পরে যেতে নিলেই কারোর শক্তপক্ত হাতের বাঁধনে আটকে পরে। সিমি এখনো নিজেকে ঠিক করতে পারছেনা। ছেলেটা সিমির মাথা বুকের মাঝে চেপে ধরে বললো,,,
“রিলাক্স ইশু রিলাক্স আমি আছি তোর সাথে। শান্ত হো আমার কিছু হয় নি আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে অনুভব কর, এই দেখ আমার হার্টবিট এখনো তোর নাম জপে যাচ্ছে প্রতি সেকেন্ড এ বারবার।”
নিশানের কথা সিমির কানে যেতেই সে মুখ উঁচিয়ে নিশানের পানে তাকালো নিশান কে সুস্থ দেখে যেন তার প্রাণ ফিরে আসলো নিশানের মুখ দুই হাত দিয়ে ধরে সারা মুখে ছোট ছোট চুমু দিয়ে গলায় মুখ গুঁজে কান্না করতে করতে বললো,,,
“বিশ্বাস করুন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম একটুর জন্য মনে হয়েছে আপনাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। আর কোনসময় ফিরে পাবো না। দেখেন আমার গা হাত পা কাঁপছে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন আমি আপনাকে অনুভব করতে চাই আপনি সুস্থ আছেন।”
নিশান সিমির মাথায় হাত বুলালো সে বলে উঠলো,,,
“শান্ত হো তুই এই নিশান তার ইশুকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। একদম ভয় পাবি না, আমি সবসময় তোর পাশে আছি থাকবো আমার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা পযন্ত। এখন বাসায় চল।”
বলে সিমিকে ছাড়িয়ে দার করালো তার হাতে পানির বোতল মুখ খুলে সিমিকে খেতে বললো। সিমি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। নিশান গাড়িতে উঠে বসলো সিমিও উঠলো নিশান কে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরলো নিশান কিছু বললোনা ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে লাগলো সিমি নিশানের পিঠে মাথা রেখে শুয়ে থাকলো সে এখনো ওই সিচুয়েশন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেনা। নিশান তার এক হাত সিমির হাতের উপরে রাখলো শক্ত করে ধরে বললো,,
“আমি এখনো আছি ইশু তোর সাথেই আছি রিলাক্স হো। ঐসব কিছু হয় নি তুই যা দেখেছিস সব স্বপ্ন।”
সিমি মাথা নাড়লো চোখ খুলে দৃষ্টি এইদিকে ঐদিকে দিয়ে পরিবেশ উপভোগ করতে লাগলো।
মাগরিবের আজান দিতেই নিশানের বাইক থামলো চৌধুরী ম্যানশনে। সিমি নামলো নিশান বাইক রেখে সিমির কাছে আসলো সিমির হাত ধরে তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো। উপরে না নিয়ে গিয়ে নিচে সালাউদ্দিনের রুমে সিমিকে নিয়ে ঢুকলো। ড্রইং রুমে সবাই বসে ছিলো ওদের দেখলো তবে কিছু বললো না। নিশান সিমির হিজাব আর বোরকা খুলে দিলো ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে মুখে পানি দিলো এরপর রুমে এনে আলমারি থেকে রোজিনার একটা উড়না বাহির করে সিমির মাথা সহ বুক ঢেকে দিয়ে আবার বাইরে আনলো সিমির উদ্দেশ্য বললো,,,
“সবার সাথে বসে গল্প কর ভালো লাগবে ভুলে যা ঐসব, আমি আছি তোর সাথে আজীবন থাকবো আমার উপরে ভরসা রাখ।”
সিমি মাথা নাড়লো, নিশান তাকে সোফায় বসিয়ে দিলো সবার সাথে। বাড়ির কর্তারা বেড়িয়ে গেছে নামাজের উদ্দেশ্য। গিন্নিরাও সবাই নামাজে গেলো। এইখানে শুধু বসে আছে সামিয়া, জারা, রাত্রি, মিহু, পিহু, তিহান, তাজ আর জিহান। মানে সব ছোট সদস্য। নিশান সিমিকে বসিয়ে তার মুখের দুইপাশে হাত দিয়ে কপালে একটা চুম্বন দিয়ে বললো,,,
“আমি উপরে রুমে যাচ্ছি জরুরি কাজ আছে এইজন্য। তুই সবার সাথে বসে গল্প কর আমি আছি তোর সাথে।”
বলে নিশান ছেড়ে দিলো সিমির মুখ। জিহান নিশানের উদ্দেশ্য বললো,,,
“এইখানে অনেক মানুষ আছে বউকে আদর করতে চাইলে রুমে নিয়ে যা ভাই।”
নিশান রাগী চোখে জিহানের দিকে তাকালো জিহান পাত্তা দিলোনা। সবাই হাসলো সিমিও হাসলো নিশান জারার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৭
“ইশুর মুড অফ ওর মুড ভালো কর তোরা।”
“তুমি একদম চিন্তা করবে না ভাইয়া ভাবির মুখ আমরা ঠিক করে দিচ্ছি দুই সেকেন্ড এর ভিতরে।”
নিশান কিছু বললোনা। উপরে নিজের রুমে গেলো জিহান ও পিছুপিছু গেলো।
