তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৯
তাবাস্সুম খাতুন
মাগরিবের নামাজ শেষ করে কর্তারা মাত্র বাসায় আসলো। গিন্নিরা হাল্কা নাস্তা বানয়েছিলো, সেগুলো নিয়ে ড্রইং রুমে আসলো। সবাই নিলো, উপস্থিত বলতে সবাই আছে শুধু নিশান আর জিহান বাদে। এর মধ্যে তাজউদ্দিন বলে উঠলো,,,
“রাত্রি মামুনির এঞ্জেজমেন্ট কবে করলে ভালো হবে?”
মেহেরিমা উত্তর দিলো,,
“আমার মনে হয় ভাইজান এঞ্জেজমেন্ট টা দুইদিন পরে করলে ভালো হয়, বিয়ে নাহয় আরো এক দুই মাস পরে দেই। এতে করে ওদের সম্পর্কের একটা নাম থাকবে, নাম হীনা কথা ভালো না।”
মেহেরিমার কথার সাথে সবাই সহমত পোষণ করলো। তাজউদ্দিন বললো,,,
“তাহলে সোমবার ওদের এঞ্জেজমেন্ট এর আয়োজন করি?এর মধ্যে কাল রবিবার সব কাজ গুছিয়ে আত্মীয় স্বজন দের নেমন্তন্ন দেবো।”
সবার মতামত এক হলো। এইদিকে রাত্রি মাথা নিচু করে আছে, বাড়ির সবাই তার বিয়ের কথা বলছে শুনে বড্ড লজ্জা লাগছে। জারা কুনুই দিয়ে রাত্রিকে খোঁচা দিয়ে বললো,,,
“রাত রে তোর ও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর আমি সিঙ্গেল হিসাবে মরছি।”
রাত্রি ফিসফিস করে বললো,,,
“আমার দেবরটা কিন্তু মন্দ না। তুই ও যেমন জাওড়া ও এমন জাওড়া সুন্দর পারফেক্ট কাপল হবি। তুই বললে ট্রাই করতে পারি আমি।”
আয়ানের কথা শুনতেই জারার মনে পরে গেলো সেই মেসেজের কথা বউ থেকে যখন এক চান্স এ আপু হাস্যকর কাহিনী! মুখে বললো,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“যা হলাম রাজি। তবে সাবধান তোর দেবর কে বলে দিস আমি বউ হিসাবে পারফেক্ট, যদি বউ ডাকতে পারে তবে আমিও চান্স নিতে পারি, অনলি বউ নট আপু বুঝেছিস?”
জারার কথা বুঝতে না পেরে রাত্রি বলে উঠলো,,
“তুই কি বোঝাতে চাচ্ছিস খুলে বল।”
“তেমন কিছু না আমি বললাম যে তোর দেবর যদি রাজি হয়, আমার সাথে প্রেম করতে। তবে আমিও একটা চান্স নিতে পারি এই আরকি!”
রাত্রি মাথা নাড়লো। তাজউদ্দিন আবারো বললো,,,
“তাহলে ওদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দাও।”
মেহেরিমা চলে গেলো উঠে সাথে সবাই উঠে যে যার রুমে গেলো। রাত্রি আর জারা ও নিজেদের রুমে গেলো। নিচে বসে আছে সামিয়া আর সিমি। দুইজনে কেউ কোন কথা বলছে না, নিরাবতা ভেঙে সিমি সামিয়াকে প্রশ্ন করলো,,,
“জিহান ভাইয়াকে ভালোবাসিস সামু?”
আচমকা সিমির মুখে এমন কথা শুনে সামিয়া সিমির পানে তাকাই কয়েক সেকেন্ড পর দৃষ্টি নত করে বলে উঠলো,,,
“হটাৎ এই প্রশ্ন?”
“আমি তোর থেকে আলাদা প্রশ্ন শুনতে চাই নি সামু!আমি উত্তর চাচ্ছি তুই কি জিহান ভাইয়াকে ভালোবাসিস হ্যা/না কোনটা বল।”
সিমির প্রশ্ন সামিয়াকে বিভ্রান্ত করে দিচ্ছে কি উত্তর দেবে সে? সামিয়ার উত্তর না পেয়ে সিমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
“জিহান ভাইয়া আর নিশান আসমান জমিন পার্থক্য। জিহান ভাইয়া হলো মাটির মতো বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদা হয় যেই কাঁদা সহজে এইদিকে ওইদিকে ঘোরানো যাই। অথচ নিশান সে হলো আকাশ আকাশের ঘন কালো মেঘ যখন বৃষ্টি হয় আকাশের ভাব মূর্তি পাল্টিয়ে যাই বিদ্যুৎ চমকায় কেঁপে ওঠে এতে মানুষ বারংবার, যেইখানে পরে সেই জায়গা কতদূর পযন্ত ক্ষয় হয় আগুনে পুড়ে যাই।”
সিমি থামলো সামিয়া সিমির মুখের পানে তাকিয়ে আছে, কি বলতে চাই সে? সিমি আবারো বললো,,,
“জিহান ভাইয়া যদি নিশানের মতো হতো তাহলে তোকে এত সময় দিতো না। তোর কাছে আসার জন্য পারমিশন নিতো না। নিজের মতো রাজত্ব চালাতো। জিহান ভাইয়া তোকে অনেক স্পেস দিয়েছে, তোকে স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে যেন তুই তাকে ভালোবাসিস ধীরে ধীরে। একটা কথা কি জানিস সামু বিয়ে মানে যে এক রুমে এক ছাদের নিচে থাকতে হবে এমনটা নয়। হ্যা আমিও বুঝতাম না এইসব তবে যেইদিন থেকে তাকে আগলিয়ে নিতে জেনেছি ভালোবাসতে জেনেছি সেইদিন থেকে আমি ভালোবাসার স্বাদ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। তোদের বিয়ের তো আজ দুই তিন মাস হচ্ছে? তবুও কি তুই নরমাল হতে পারছিস না।”
আবারো থামলো সিমি একসাথে এত কথা বলে কষ্ট হচ্ছে এক গ্লাস পানি ধকধক করে খেয়ে নিলো আবারো বলা শুরু করলো,,,
“কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের এক দেখাতেই বোঝা যাই তারা কেমন। আবার কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে এক বেডে দশ বছর থেকেও বোঝা যাই না সে কেমন? আমার ধারণা অনুযায়ী জিহান ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে। এমনটা নয় যে তুই ধর্ষিতা ছিলিস বলে তোকে দয়া দেখিয়ে বিয়ে করেছে। এইগুলো যদি তুই ভেবে থাকিস মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। সে দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর, বিজনেস আছে নিজিস্ব ইতালিতে নিজের বাড়ি আছে কি নেই তার? সে চাইলে কোন এক বড়ো লোক বাপের সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারতো কিন্তু সে করেনি। তোর অতীত সম্পর্কে বলার আগে সে নিজেই বলেছিলো তোকে বিয়ে করবে, তবে আমি চাই না তোর অতীত সে জানতে পারলে তোকে ছেড়ে দেই না যেন তাই তাকে বলেছিলাম তোর অতীত সম্পর্কে। জানিস তোর অতীত শুনে তার চোখ ভিজেছিলো। আমি বলেছিলাম এইসব শোনার পরে ভেবে চিন্তে আমার বোনকে বিয়ের কথা বলবেন। সে ভেবেছে তোকে বিয়ে করেছে। যদি তোর দেহের প্রতি লোভ থাকতো স্বামীর হক মানত কিন্তু সে সেইসব কিছু করেনি তোকে সময় দিয়েছে। আর তুই এই সময়ের সৎ ব্যাবহার করছিস।”
সিমি থামলো চোখ ভিজে উঠলো সামিয়ার ও। সিমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
“লাইফটা যেহেতু তোর, তাই ডিসিশন ও তোর তোকে না জানিয়ে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন তোর সম্মতি তে সুদরে নে ব্যাপারটা ডিভোর্স দে ভাইয়াকে অন্তত কোন পিছুটান থাকবে না আর।”
ডিভোর্স শব্দটা সামিয়ার মস্তিকে যেতেই যেন বুকের ভিতরে অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হলো। মনে মনে অংক করতে লাগলো সে কি সত্যি ভালোবাসে? নাকি না? ভালো যদি না বাসে তবে ডিভোর্স শব্দটা শুনে এমন হচ্ছে কেন? সিমির কথা গুলো তো খারাপ না গলায় কাঁটা বেঁধে আছে কিভাবে ছাড়াবে সে এখন? এর মধ্যে নিশান সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো নিশানকে দেখে সিমি সামিয়ার উদ্দেশ্য বললো,,,
“ভেবে দেখ ভালো ভাবে, তোর জন্য আমি সব করতে পারি তবে ডিসিশন যা নিস নে সমস্যা নেই তবে এতে যেন তোর ভালো হয় ওমন ডিসিশন নিবি আমি তোর পক্ষে।”
নিশান আসলো সিমির হাত ধরে তাকে উঠালো। বাহু ধরে নিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন করলো,,,
“কেমন লাগছে এখন?”
সিমি হাসি মুখে বললো,,
“খুব ভালো।”
সিমির হাসি মুখ দেখে নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কি করেছিস? এত হাসি কেন তোর মুখে?”
“একটা ভালো কাজ করলাম এইজন্য।”
“বিষয় হজম করতে কষ্ট হচ্ছে, সারাদিন আকাম করে বেড়ানো মেয়ে নাকি ভালো কাজ করেছে। তো কি ভালো কাজ করলি?”
“সামু আর জিহান ভাইয়ার জুটি মিলিয়ে দিলাম।”
নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কিভাবে?”
“কিভাবে আবার। ওকে কিছু কোরিয়ান আর চাইনিজ ড্রামার নাম বললাম যেইগুলোতে ওদের কারোর মধ্যে ভালোবাসা ছিলো না আস্তে আস্তে ভালোবাসায় ডুব দিলো। ঐগুলো দেখে শিখতে বললাম আরকি।”
নিশান সিমিকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে বললো,,
“মাথায় সবসময় ড্রামা ঘরে?”
সিমি বেডে গিয়ে বসে বললো,,,
“না ঘোরার কি আছে? এত সুন্দর সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেদের ভুলে থাকতে পারি।”
সিমির কথা শেষ হতে নিশান শান্ত কণ্ঠে বললো,,
“খুব সুন্দর তাইনা?”
সিমি নিজের মতো বলতে লাগলো,,,
“হ্যা খুব খুব সুন্দর দেখতে ওদের। শুধু নায়ক না সাইড ক্যারেক্টর ছেলে গুলো ও মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ খুব খুব হ্যান্ডসাম।”
নিশান আগের মতোই শান্ত কণ্ঠে বললো,,,
“মাশাআল্লাহ? হ্যান্ডসাম খুব তাইনা?”
সিমি একই ভাবে বললো,,
“হ্যা খুব খুব সুন্দর আমি তো দিনে একশো বার ক্রা..
সিমি সাথে সাথেই কথার মাঝখানে ব্রেক করলো। নিজের বলা কথা গুলোর প্রতি ভয় হচ্ছে এখন। নিশান শান্ত ভাব টাও পছন্দ হচ্ছে না তার। ইসসস কি বলে ফেললো সে? জেনে বুঝে বাঘের গুহায় পা।দ্রুত মুখে বললো,,,
“আরে না ওরা সুন্দর না ওরা হ্যান্ডসাম না। আমি তো মজা করছিলাম। সত্যি বলতে আপনি দেখতে মাশাআল্লাহ সুন্দর হ্যান্ডসাম আমি তো মিনিটের ভিতরে দুইশো বার ক্রাশ খাই সত্যি বলছি।”
নিশান এখনো শান্ত আছে শুধু সিমিকে একটা কথাই বললো,,,
“তোর ফোন কোথায়?”
সিমি বিনা বাক্য ব্যায় করে ফোন টা দিয়ে দিলো নিশানের হাতে। নিশান ফোন টা হাতে নিয়ে আচমকা জোরে আছাড় মারলো মেজেতে সিমি কেঁপে উঠলো। অতঃপর একদম ঠান্ডা কণ্ঠে নিশান বলে উঠলো,,,
“বেশি দরকার পড়লে আমার ফোন নিবি। এছাড়া তোর আর ফোন দরকার নেই। আর ঐসব ড্রামা ঐগুলো তোর জন্য আজ থেকে বিষ হয়ে গেছে। জেনে বুঝে বিষ গ্রহণ করবি না।”
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৮
বলে নিশান সোফায় বসে ল্যাপটপের সাহায্য নিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলো।সিমি নিজের ভাঙা ফোনটার দিকে তাকিয়ে আফসোস করতে লাগলো কেন যে বলতে গেলো। ভাগ্গিস মাঝ পথে ব্রেক মারছিলো নয়তো এত ক্ষনে ওই ফোনের জায়গায় সে থাকতো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।সিমি আর ভাবলোনা তার ঘুম আসছে বেডে উঠে চুপ করে শুয়ে পড়লো ব্লাঙ্কেট টা গলা পযন্ত টেনে তুলে ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতে লাগলো।
