তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৩ || suraiya Aayat

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৩
suraiya Aayat

” হোয়াট ফোয়াট না , যা বললাম তাই করো এর আগেও একবার পানিশমেন্ট হিসাবে বলেছিলাম বাট তুমি পূরন করোনি, হোয়াটএভার নাও ইটস ইউর ডেয়ার এন্ড ইউ হ্যাভ টু কমপ্লিট ইট ৷”
নূর বিছানা ঘেষড়ে খানিকটা পিছনে সরে গিয়ে বলল ” আপনি পুরুষটা ভারি নিলজ্জ আর বেহায়া একজন যার লজ্জার কোন ধারপার নেয় তাই বলে সবাইকে নিজের মতো করে ভাবেন কেন? আমি পারবো না এতসব ৷”
আয়াশ নূরের দিকে বেশ কিছুখন চুপচাপ রইলো তারপর কিছু একটা ভেবে সরে এলো ৷ শার্টের ওপরের দিকের বোতামটা লাগিয়ে নূরের দিকে ইশারা করে বলল

” তোমার না ঘুম পেয়েছে ! ঘুমিয়ে পড়ো ৷”
কথাটা বলে আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই নূর একপ্রকার কেঁপে উঠলো , মনে মনে ভাবতে লাগলো
” আমি কি খুব বেশি কিছু বলে ফেললাম ! না মানে আমার কি কথাগুলো এভাবে না বললেও চলতো ? উনি এতো সহজে আমার কথা মেনে
নিলেন ?”

কথাগুলো ভাবছে নূর,আয়াশের হঠাৎ এমন ব্যাবহার ওর কাছে ভালো ঠেকলো না ৷ চুপটি করে বসে রইলো ৷ নূরের ভাবনার মাঝে রুমের লাইট অফ হয়ে যেতেই নূর চমকে গিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতেই কোমরে অসহ্য ব্যাথা শুরু হয়ে গেল ৷ খানিকটা ফুপিয়ে উঠতেই পুনরায় বিছানায় বসে পড়লো, অন্ধকার বিদঘুটে ঘরে ও একা, আয়াশ ওকে কোথায় রেখে চলে গেল ভাবলেই কান্না পাচ্ছে ভীষন ৷ নূর ওর কোমরে শক্ত করে চেপে ধরতেই চাঁপা স্বরে কেঁদে উঠলো ৷
হঠাৎ কোথা থেকে আয়াশ মোমবাতি এনে টেবিলের ওপর রেখে নুরের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে বলল
” এইইই আফুসোনা কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন? কোমরে আবার ব্যাথা পেয়েছো?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নূর ওর হাতটা কোমরে আরো শক্ত করে চেপে ধরে রইলো, আয়াশ নূরকে শুইয়ে দিয়ে কোথাও যেন আবার উধাও হয়ে গেল ৷ নূরের চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, অন্ধকারে তা বোঝার অবস্থা নেই ৷ হঠাৎ কোমরে ঠান্ডা স্প্রে জাতীয় কিছু অনুভব করায় নূর সহ্য করতে না পেরে কোমরে হাত রাখতেই আয়াশ দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো
” হাত সরাও আফু সোনা ৷”

নূর ধমকে হাত সরিয়ে নিলো, আয়াশ স্প্রেটা দিয়ে নূরের পাশে বসতে গেলেই হঠাৎ কারেন্ট চলে এলো ৷ নূর আয়াশের দিকে কোনরকম ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, আয়াশের চোখজোড়া ভেজা ভেজা ৷ নূর অবাক হলো বেশ তবুও চুপটি করে রইলো ৷ নূর পাশ ফিরে শুয়ে আছে আয়াশের দিকে উল্টো মুখ করে , আয়াশ ওর হাত থেকে স্প্রের বোতলটা দূরে ছুড়ে ফেলে গম্ভীর মুখে বলল
” বলেছিলাম তো কোথাও যবে না তার পর ও গেছো ৷ তোমার হেল্থের কথা মাথায় আসতেই আমি দূরে সরে এলাম আর তুমি আমার কথা শুনলেনা, এমন করলে আফু সোনা পরের বার থেকে খুব খারাপ হবে বলেদিলাম, আজকের দিনে অন্তত আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা , এন্ড ইউ নো হোয়াই ৷”

নূর ওর চোখের জলটা মুছে ওর বাম হাতের ওপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো, ও তো আয়াশকে অন্ধকারের মাঝে খুজতেই যাচ্ছিল সেটা আয়াশকে ও আর বোঝাতে চাইনা ৷ আয়াশ নূর পাশে শুয়ে নূরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে নূরের ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলল
” ডোন্ট লাভ মি, তুমি আমাকে ঘৃনা করো শুধু, ভালোবাসা নামক জিনিসটা সবার জন্য হলেও তা আমার জন্য বরাদ্দ না ৷ আর যদি কখনো দেখো যে আমি হারিয়ে গেছি তো কখনো আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবে না, এটা ভাববে যে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো শক্রু তোমার জীবন থেকে চলে গেছে কজ আই এম ইউর ডেভিল হাজবেন্ড ৷”
কথাটা বলে আয়াশ চোখ বন্ধ করে রইলো ,আয়াশের কথা শুনে নূর ওর শাড়ির আচল শক্ত করে চেপে ধরলো ৷ মানুষটা হঠাৎ এই সব কথা বলছে কেন ?কই উনি তো আগে কখনো এমন কথা বলেন নি তাহলে ?

নূরের মনটা উশখুশ করছে আয়শকে জিজ্ঞাসা করার জন্য হঠাৎ আয়াশ এমন কথা বলছে কেন ৷ মনের চঞ্চলতা বাড়িয়ে 2 মিনিট পর নূর একটু নড়েচড়ে উঠলো , সামান্য পাশ ফিরে আয়াশের দিকে ঘোরার চেষ্টা করতেই কোমরে ব্যাথা পেল তবুও ঠোঁট চেপে ব্যাথাটা সহ্য করে নিলো ৷ আয়াশ ওর শরীরের সাথে লেপ্টে আছে , নূর কিছুখন নিষ্পলক ভাবে ওর দিকে তাকালো , মানুষটা অভিমান থেকে এই কথাগুলো বলেছে কি তা নূরকে ভীষন ভাবে ভাবাচ্ছে ৷ মনে পড়ে গেল আয়াশের বলা কথাটা
” আমাকে তোমার নিজের মতো করে ভালোবাসতে হবে যেমনটা আমি সবসময় বাসি ৷”
নূর কথাটা ভেবে চোখমুখ খিচে নিলো, এটা একটা মেয়ের পক্ষে খুবই কঠিন একটা কাজ তা আয়াশ কেন বোঝেনা তা ভেবে নূর পাগলপ্রায় ৷

নূর চোখটা খুলে দেখলো আয়াশ ঘুমাচ্ছে , অনেকটা সাহস নিয়ে নিজের মুখটা আয়াশের মুখের কাছে নিয়ে গেল, কিছু পারুক আর না পারুক আয়াশের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ানোটা তো ওর সাধ্যের মধ্যে ৷ তাছাড়া আয়াশ তো এখন ঘুমাচ্ছে তাই লজ্জাটাও কম লাগবে ভেবে কাছে এগোতেই নূর লজ্জা পেয়ে সরে এলো ৷ নুর বুঝতে পারছে না একটু একটু করে নিজের মনের মধ্যে যে সাহসটুকু সঞ্চয় করছে তা নিমেষেই কিভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ৷ বড়ো বড়ো কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আয়াশের ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে দ্রুত আয়াশের ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে বিদ্যুৎগতিতে সরে এলো ৷ হৃদস্পন্দন বাড়ছে , মনের মাঝের আবহাওয়াটা মাতাল করা আর নেশা ধরানো ৷ আয়াশের ঠোঁটের স্পর্শ শরীরে শিহরন জাগানো ৷ খানিকখন চোখ বন্ধ রেখে বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলতেই হঠাৎ আয়াশের কন্ঠস্বর শুনে নূর চমকে উঠলো

” চিনি ছাড়া চা যেমন হয় যেখানে মিষ্টতা কম তিক্ততা বেশি তেমন চুমু আমি চাইনি আফু সোনা, ইমরান হাসমি ওয়ালা চেয়েছি ৷ ”
নূর জেনে আর শুনে অবাক , একটা মানুষ এতোটা সেনসিটিভ বিষয়কে কতোটা সহজ বাক্যে বলে দিতে পারে তা আয়াশকে না দেখলে নূর বুঝতেই পারতো না ৷ তাছাড়া আয়াশ যে জেগে আছে তা জানলে নূর কখনোই এমন কাজ করতো না ভুলেও , ওর নিজের বোঝা উচিত ছিলো যে আয়াশের অন্তত 2 মিনিটের মধ্যে ঘুম আসবে না সে আদতেই একজন লুচু প্রকৃতির ৷ কথাটা ভেবে নিজেকেই অধম, গাধা থেকে শুরু করে কোন কিছুই বাদ রাখছে না শোনাতে ৷
আয়াশ নূরের মুখে এমন ভীরুতার ছাপ দেখে বলল

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২২

” কি অবাক হলে ? ভেবেছিলে আমি ঘুমিয়ে গেছি? আরে আফু সোনা নাহ, আমি তো কল্পনা করছিলাম যে তোমার আর আমার 8 কি 10 টা বেবি থাকলে কেমন হতো, জোশ ব্যাপার স্য৷পার হতো তাহলে ৷ কিন্তু তুমি তো ভাবলে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ৷ চমৎকার , তুমি তো জানো আমার স্বপ্ন গুলো বড়ো বড়ো তাই ভাবতে গিয়ে আর ঘুম আসে না সহজে ৷”
নূর একেই একটা ঝটকা কাটিয়ে উঠতে পারছে না তার ওপর আয়াশের 10 টা বেবি নেওয়ার পরিকল্পনা ওর মস্তিষ্ক কে বিক্রিতি ঘটানোর জন্য যথেষ্ট ৷ কোনরকম ঝোঁক সামলে বলল

” যা দিয়েছি তাতেই খুশি থাকুন আমি এর বেশি আর কিছু পারবো না ‌৷”
আয়াশ নূরের হাত ধরে কাছে টেনে এনে বলল
” বললেই হলো ! নেশা দিয়েই নেশা কাটাতে হয়, হালকা নেশা ধরেছে তা তীব্র নেশা দিয়েই কাটবে ৷ আর পারবেই না যখন তখন করতে গেলে কেন?আমি কিছু শুনবো না আর ৷”
নূর কাঁপা কন্ঠে বলল

” আমি পারবো না,আমার ঘুম পাচ্ছে ৷”
কথাটা শেষ হতেই আয়াশ নূরকে আরো কাছে টেনে বলল
” সমস্যা নাই , তুমি না পারলে কি হবে আমি তো পারি !”
কথাটা বলে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালো, নূর আয়াশের গলার বেশ কয়েক জায়গায় নখের আঁচড় বসালো ৷ আর যাই হোক আয়াশ পরিস্থিতি বোঝে তাই এতোকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে নূরকে কাছে আসতে বাধ্য করলো, মাঝে মাঝে পরিকল্পনা মাফিক কিছু পেলে নিজেকে বিজয়ী মনে হয় সে ভালো হোক বা খারাপ ৷

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৪