তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩৭ || suraiya Aayat

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩৭
suraiya Aayat

আয়াশ রুমে ঢুকতেই নুর আয়াশের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ৷ নূর কিছু বলছে না দেখে আয়াশ নূরের পাশে বসে বলল
” খালামনিকে ফোন করে খবর দিয়েছো আফু সোনা?”
নূর কিছু বলছে না এখনো আগের মতোই আয়াশের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছে, আজ আর ঠিক করে কথা বলার মন মানসিকতা নেই , ওদের জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো নূর জানে না আজ ওর সবটা জানার প্রয়োজন ৷ আয়াশ এবার খানিকটা গাঢ় কন্ঠে বলল

” কি হয়েছে কিছু বলছো না যে !”
নূর আর চুপ করে থাকতে পারলো না ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল
” কিসের খালামনি আপনার উনি ? উনি তো আপনার নিজের খালামনি নন তাহলে কিসের এতো অভিনয় আপনাদের ? আমি একটা বাইরের মেয়ে আর আমার সামনে কিসের এতো আত্মগোপনের প্রয়োজনীয়তা আপনাদের বলুন! ”
আয়াশ নূরের মুখের দিকে বেশ কিছুখন তাকিয়ে রইলো তারপর মুচকি হেসে ফেলল, নূর কোঁচকানো চোখে আয়াশের দিকে তাকিয়ে রইলো, আয়াশ বলল

” এই না হলে আমার বউ !”
নূর আগের তুলনায় আরও রেগে গিয়ে বলল
” অযথা ছলনা করা কথা বাত্রা বলে আজ আপনি আমাকে ভোলাতে পারবেন না, হয় আপনি আজ সব বলবেন নাহলে আমি…”
কথাটুকু শোনার পর আয়াশ বলল
” নাহলে তুমি, কি? কি করবে আফু সোনা ?”
নূর এবার চোয়াল শক্ত করে বলল
” নাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো, আর যাই হোক কখনো এভাবে একটা সংসার হয় না ৷”
আয়াশ নুরের গালে স্লাইড করতে করতে বলল
” এত সাহস তোমার আছে আফু সোনা?”
নূর এবার আয়াশের হাতটা ঝাড়ি মেরে বলল
” সাহস তৈরি করে নিতে আর কতক্ষন ৷ ”
নূর আবারো বলে উঠলো
“শেষ বারের মতো বলছি, আপনি কি বলবেন নাকি না ?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আয়াশ চুপ করে রইলো আর মুচকি মুচকি হাসলো দেখে নূর রাগে তিরতির করে উঠলো, বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই আয়াশ নূরের হাতটা ধরে ফেলল, নূর হাত ছাড়াতে গিয়েও পারলো না ৷ এবার রেগে গিয়ে বলল
” হাত ছাড়ুন নাহলে খারাপ হবে, আপনাকে এতদিন মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু আজ থেকে তা হয়তো আর সম্ভব না কারন পুরো মিথ্যার জগতে থেকে নিজেকে ঢেকে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না আর আমি পারবোও না ৷”
আয়াশ নূরের হাতটা ছেড়ে বলল

” আজকে আমরা সেই রাজকুমারীকে খুজবো আফু সোনা তারপর সবটা জানাবো তোমাকে ‌৷”
নূর চমকে গেল, অবাক হয়ে বলল
” মানে টা কি! মজা করছেন আমার সাথে? রাজকুমারী যে কল্পনাতে তা কি এখন ভুল প্রমানিত করতে চাইছেন?”
আয়াশ এবার উচ্চস্বরে হেসে বলল
” চলো তাহলে কল্পনাটাকেই না হয় বাস্তব করার চেষ্টা করি তাতে ক্ষতি কি? এতে যদি রজকুমারী ফিরে আসে !”
নূর কিছু বুঝলো না তবুও আয়াশ কথাটা যখন বলেছে এমনি এমনি নিশ্চয় বলেনি সেটা ভেবে নূর আয়াশের কথাটা বিশ্বাস করে বলল

” কোথায় আছে সেই রজকুমারী, আর সে ই বা আপনার কি হয়,আর তাকে কোথায় পাবো?”
আয়াশ পাঞ্জাবী র হাতাটা ভাজ করে বলল
” এই জমিদার বাড়ির কোন গোপন কক্ষেই আছে সে আর তাকে খুঁজতে আমাকে সাহায্য করবে তুমি ৷ কখন কীভাবে কি করতে হবে আমি সব তোমাকে জানাবো ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল, নূর থ হয়ে রইলো ৷ তাহলে কি ওর স্বপ্নটাও সত্যি , এই রাজকুমারী, সেই রাজকুমারীর স্বামীর পরকীয়া , সেই অন্ধ মানবী,,,সবই কি সত্যি ? কথাটা ভাবতেই নূর কেঁপে উঠলো তবে ওর কাছে সবচেয়ে যে বড়ো প্রশ্নটা থেকে যায় তা হলো

” আয়াশের সাথে তার সম্পর্ক কি? কে সে?আর নূর ই বা তাকে সাহায্য করবে কীভাবে?”
কথাগুলো একত্রে মাথার ভিতর অদ্ভুত রকম একটা চাপ সৃষ্টি করছে, পাগল পাগল লাগছে নূরের নিজেকে ৷
চারিদিকে কান্নার রেশ কেটে ওঠেনি এখনো ,সবাই কেঁদেই চলেছে ৷ নূর দূর থেকে সেই বউটাকে দেখছে কিভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সে ,তাকে দেখে নূরের চোখে জল চলে এলো, মেয়েটাও হয়তো শেষ পর্যন্ত ওনাকে বাঁচানোর অপ্রান চেষ্টা করেছে ৷ নূরের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইফার মা, আর তেহেরাত সাহেব দূরের একটা চেয়ারে একা একা বসে আছেন ,মুখ দেখে তার মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই, নূর একবার ওনার দিক থেকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো ৷ নূর এবার পাশ ফিরে তাকাতেই ইফার মায়ের সাথে চোখাচোখি হলো উনি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন , ওনাকে দেখে নূরের মাঝে সুপ্ত রাগ জেগে উঠলো , উনিও এতদিন ধরে মিথ্যা বলে এসেছেন ওকে, এমনকি ইফাও ৷ সবার প্রতি ভীষনভাবে বিরক্ত নূর ৷
নূর ওখান থেকে চলে আসতে গেলেই ইফার মা বললেন

” কোথায় যাচ্ছো?”
নূর বেশ কিছুখন থেমে বলল
” একটু রূমে যাচ্ছি শরীরটা অসুস্থ লাগছে ভীষন, অসস্তি হচ্ছে ৷ বমিও লাগছে খুব ৷”
উনি ব্যাস্ত হয়ে বললেন
” আমি যাই তোমার সাথে ?”
নূর একটু রাগী কন্ঠে বলল
“নাহ তার দরকার হবে না, আমি একাই পারবো ৷”

কথাটা বলে নূর খানিকটা দ্রুত পায়ে হাটলো ৷ হ্যাঁ সত্যিই বমি পাচ্ছে ওর, এতখন তো ও ঠিকই ছিলো হঠাৎ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল ৷ কল ঘরে যেতে না যেতেই বমি করে ফেলল, শরীরটা ভীষন রকম ক্লান্ত ৷ সারা বাড়ি জুড়ে মানুষজন ভর্তি , দমবন্ধ করা পরিবেশ ৷ নূর চোখ মুখ ধুঁয়ে ঘরে যেতেই আয়াশ হাত ধরে টানতেই নূরের ক্লান্ত শরীর আর টাল সামাল দিতে পারলো না, এটু হুমড়ি খেয়েই পড়লো আয়াশের ওপর ৷ আয়াশ হয়তো ব্যাস্ততার মাঝে ছিলো তাই খেয়াল করতে পারেনি যে নূর অসুস্থ ৷ আয়াশ নূরকে ধরে ফেলল তারপর অনেক ব্যাস্তাতর সাথে বলল

” শোনো আফু সোনা সামনে একটা বিরাট সুযোগ আসছে, হাতছাড়া করলে আর হয়তো সেই সুযোগ পাবো না, কাজটা তোমাকেই করতে হবে ৷”
নূর দূর্বল অনুভব করলেও আয়াশের মুখ দেখে খানিকটা শক্তি পেলো তার ওপর আয়াশ ওকে একটা কাজ দিয়েছে সেটাও ঠিকঠাক করে হবে, ও উ জানতে চায় কে সেই রাজকুমারী আর কে হয় সে আয়াশের….তারপর রাজকুমারীর বোনের কাহিনী সে জানতে চায় ৷ নূর একটু তাজা কন্ঠে বলল
“বলুন কি করতে হবে !”
আয়াশ এদিক এদিক তাকিয়ে হঠাৎই নূরকে বুকে টেনে নিলো,,নূর তো অবাক তবুও কিছু বললো না, আয়াশের বুকে এক প্রকার প্রাশান্তি অনুভব করছে ও ৷
আয়াশ এবার নূরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল

“শোনো আফু সোনা আর কিছুখন পর বড়ো মামির দাফনের কাজ শুরু হবে তখন তুমি সেই বউটার কাছে যাবে যে ওনার খেয়াল রাখতো তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করবে যে প্রিয়ন্তি মোস্তফা কোথায় ?
কথাটা শুনে নূর অবাক হলো না কারন নূর আয়াশের মায়ের নাম এখনো জানে না ৷
নূর অবাক হয়ে বলল
” আমি জিজ্ঞাসা করলেই কি উনি এতো সহজে বলে দিবেন?”
আয়াশ অনেক ভরসা নিয়ে বলল
” হ্যাঁ বলবে কারন একমাত্র সে ই জানে যে রাজকুমারী কোথায় ৷”
নূর এবার আয়াশে ছেড়ে বলল
” আপনি কি রে শিউর হচ্ছেন যে উনি এতো সহজে সব বলবেন?”
আয়াশ নূরের গালে হাত রেখে বলল

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩৬

” সে বলবে , বলতে বাধ্য ৷ তুমি শুধু তাকে বলবে যে বড়ো মামীকে কে মেরেছে সেটা তুমি জানো আর সে যদি বলে তাহলে তুমি প্রমান সহ জানাবে যে কে তাকে মেরেছে ‌৷”
নূরের সারা শরীর শিউরে উঠলো, কেঁপে উঠে বললেন
” কি বলছেন এসব ! উনাকে খুন করা হয়েছে? কে করেছে? কেন করেছে?”
আয়াশ নূরের কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল
” এখন এতো কিছু জানতে চেয়ো না আফু সোনা ,এখন আমি বলতে পারবো না পরে সবটুকু বলবো তোমাকে ৷”
নূর বললো

” কিন্তু আমি তো জানি না যে কে খুন করেছে , তাহলে ওনাকে কি বলবো ৷”
আয়শ মুচকি হেসে বলল
” তুমি না জানলেও বলবে যে জানো আর তাকে রিতিমতো তুমি বাধ্য করবে বলতে যে প্রিয়ন্তী মুস্তফা কোথায় সেটা বলতে ৷ বুঝলে?”
নূর মাথা নাড়ালো , সব কেমন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে ৷ নূর আবার বললো

” কিন্তু আমি তো সত্যিই কিছু জানি না ৷”
আয়াশ বেরিয়ে যেতে যেতে বলল
” আফু সোনা ৷”
নুর তাকিয়ে বলল
” বলুন ৷”
আয়াশ ওর বুকে হাত রেখে বলল
” না বললেও কিন্তু ভালোবাসি ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল ৷ নূর স্তব্ধ হয়ে গেল ‌ ৷ ও কি ঠিক শুনেছে ? আয়াশ ওকে ভালোবাসি বলেছে ৷

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩৮