তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৩ || suraiya Aayat

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৩
suraiya Aayat

পাশ ফিরে ঘড়ির দিকে তাকালো নূর, ঘড়ির কাটা রাত 8টা ছোঁব ছোঁব, সেই দুপুরে আয়াশ বেরিয়েছিলো তারপর এখনো ফেরেনি ৷নূর জিজ্ঞাসা করলেও আয়াশ কখনও ঠিকঠাক উত্তর দেয় না তবে নূর আয়াশের এমন ব্যাবহারে কষ্ট পায় শুধু কখনো প্রকাশ করে নিজের অভিযোগটা আয়াশের কাছে জানান দেয় না ৷ একরাশ বিরক্তি নিয়ে পিছু ঘুরলো নূর, পুনরায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়তেই হঠাৎ বমি আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে গেল, আজকে সারাদিন বমির প্যারায় ও কুপোকাত ৷ তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকলো নূর, হড়হড়িয়ে বমি করলো, সারদিন ধরে যা খাচ্ছে সব ই বমি হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে ৷ভীষন রকম অসস্তি কাজ করছে শরীরের মাঝে ৷

মুখটা ধোঁয়ার জন্য বেসিনে থাকা ট্যাপটা অন করতে গেলেই হঠাৎ করে ট্যাপটা খুলে ধপ করে মাটিতে পড়ে গেল ৷ হঠাৎ করে এমন কিছু হওয়াতে নূর ভয় পেয়ে গেল ৷ রাতের বেলা এমন কিছু একটা সাধারন বিষয় ঘটলেও তা নিয়ে ভয় পাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু না ৷ নূর ভয় পেয়ে সরে গেল ৷ আর একটু হলেই কলটা খুলে ওর পায়েই পড়তো ৷ নূর পাশের হ্যান্ড শাওয়ারটা অন করে মুখটা পরিষ্কার করতে নিলেই হঠাৎ ফরমালিন এর গন্ধে ওর শরীর তিরতিরিয়ে উঠলো ৷ নূর বিদঘুটে ফরমালিন এর গন্ধ পেয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো , বুঝতে পারছে না হঠাৎ ওয়াশরুমে ফরমালিন এর গন্ধ কোথা থেকে আসবে ৷ নূর সহ্য করতে না পেরে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো ৷

শাড়ির আঁচলটা দিয়ে মুখ মুছে আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো ৷ এপাশ ওপাশ করছে ঘুম আসছে না বরং ফরমালিন এর গন্ধটা আরও বেশি ছড়াচ্ছে ৷ খানিকখন দীর্ঘ বিরতি নিয়ে শ্বাস নিতে লাগলো নূর যাতে গন্ধটা কম আসে নাকে ৷ ইতিমধ্যে ফরমালিন এর সাথে আরও অনেক রকম গন্ধ ভেসে আসছে ওর নাকে ৷ নূর দেখলো যে ওয়াশরুমের দরজাটা খোলায় আছে আর সেদিক থেকেই গন্ধটা বেশি ছুটছে তাই নূর আবার উঠে দরজাটা বন্ধ করে দিলো ৷ বিছানায় শুয়ে পড়তেই আয়াশের কথা মনে পড়লো, আবার ঘড়ির দিকে তাকালো, ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই, থেমে আছে হয়তো ওর নিজের সময় ৷ চোখ বন্ধ করতেই খট করে একটা কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো তা হলো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আয়াশ সায়েন্টিস্ট ৷”
নূর চোখ খুলে উঠে বসলো , ভাবনা আসছে অনেক রকম
” আচ্ছা উনি সত্যিই কি সায়েন্টিস্ট?”
প্রশ্নটা নিজে নিজে করার পর ই আবার নিজে বলে উঠলো যে
” না হওয়ার কি আছে উনি তো অনেক পড়াশোনা করেছেন ৷”
আবার প্রশ্ন জাগলো
” আচ্ছা উনি আমার মতো এতো কম পড়াশোনা জানা মেয়েকে কেন বিয়ে করলেন? ওনার তো সায়েন্টিস্টের সাথেই বিয়ে হওয়ার কথা ৷ উনি কেমন সায়েন্টিস্ট? ওনার গবেষনার বিষয় কি ? ”
সবশেষে যে প্রশ্নে এসে নূর থেমে গেল
“ওনার না একটা গোপন কক্ষ আছে , সেটা কোথায়?”

কথাটা ভাবতেই নুর তাকালো ওয়াশরুমের দিকে, দ্বিতীয় বার আর কিছু ভাবলো না, জলদি ছুটে গেল ওয়াশরুমের দিকে ৷ ওয়াশরুমে ঢুকে ভিতর থেকে নূর দরজা বন্ধ করে দিলো ৷ ওয়াশরুমের ভিতর গন্ধে ভরে গেছে, ল্যাবে যেমন বিভিন্ন কেমিকেলের গন্ধ থাকে ঠিক তেমনটাই ৷ শাড়ির আঁচলটা হলো ভরসা সেটা দিয়েই নাকের কাছে শক্ত করে চেপে ধরলো নাহলে ওর ক্লান্ত শরীর বেহুশ হওয়ার জন্য যথেষ্ট ৷

নূর এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো কোথা থেকে গ্যাস আসছে তা খুজতে লাগলো ৷ না পেরে নূর এবার একটা দেওয়ালে ধাক্কা মারলো , কিছুই হলো না উল্টে ব্যাথা পেলো ৷ হাতে লেগেছে বেশ ৷ বিরক্ত হয়ে আর একদিকে তাকালো ও ৷ বেশ কিছুখন খোঁজাখুজি করেও লাভ হলো না, বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে আসতে নিলেই দেখলো দেওয়ালে একটা জায়গাতে একটা স্ক্সু দিয়ে আটকানো, উপেক্ষা করতে চেয়েও পারলো না নূর ৷ স্ক্সুটাতে হাত দিয়ে টানতেই সেটা আরও দেওয়ালের ভিতর ঢুকে গেল, নূর বুঝলো আদতেও এটা কোন স্ক্সু না , এটা বোতাম জাতীয় ৷ স্ক্সু টাতে হাত দিতেই নূর দেখলো যেখানে জলের ট্যাপটা ছিলো সেখানের একটা সুড়ঙ্গ থেকে আপনা আপনিই ছোট্ট একটা চাবি বেরিয়ে এলো ৷

আচমকায় এমন আশ্চর্য কিছু হওয়াতে নূর বেশ অবাক হলো ৷ চাবিটা নিতে গিয়ে হাত কাঁপছে , কি করবে বুঝছে পারছে না , অনেক ভয়ে ভয়ে চাবিটা হাতে নিতেই সেটা আপনা আপনি আবার ভিতরে ঢুকে গেল ৷ চাবিটা নিয়ে এবার কোথায় কি করবে নূর বুঝতে পারছে না ৷চাবিটা নিয়ে ওয়াশরুমের এদিক ওদিক তাকালো, কিছু বুজছে না, যেখানে থেকে চাবিটা বেরিয়ে এলো সেই জায়গাটা একটু ভালো করে দেখতে লাগলো , ভয় ও লাগছে যদি আয়াশ চলে আসে তো ৷ নূর জায়গাটা দেখতে দেখতেই হঠাৎ দেখলো সেখানে তবে খুব ভিতরে একটা চাবি রাখার জায়গা, নূরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো ৷ ঝটপট চাবিটা রাখতেই দওয়ালটা হঠাৎ একটা দরজার মতো খুলে গেলো ৷ নূর ভয়ে চমকে এলো ৷ এতোদিন যেটা দেওয়াল হিসাবে ভাবতো আর আজকে সেটা দেখছে একটা দরজা ৷ নূর ভয়ে ভয়ে সেদিকে উঁকি দিলো,দেখলো লিফটের যেমন ছোট কুঠুরি হয় ঠিক তেমনই একটা কুঠুরি ,সেখানে নূর ঢুকবে কি না ভাবছে, ঢুকতেও বেশ ভয় পাচ্ছে কারন ভিতরে কোন আলো নেই , যদি সেটা না চলে নূর যদি ওখানেই বন্দী হয়ে থাকে তো ৷
সেদিকে তাকাতেই দেখলো হঠাৎ সবুজ রঙের একটা আলোয় লেখা ভেসে উঠলো

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪২

” WELLCOME”
নূর ওর পেটের দিকে তাকিয়ে বললো
” আমাকে ক্ষমা করিস পুচকু, অনেক রিস্ক নিয়ে যাচ্ছি,ফিরবো কি জানিনা তবে তোর মাম্তাম তোকে অনেক ভালোবাসে ৷”
কথাটা বলে নূর ভিতরে ঢুকতেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল , ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার ,নূর ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ৷ হঠাৎ তীব্র গতিতে লিফট চলতে শুরু করলেই নূর আআআআ করে চেঁচিয়ে উঠলো ৷ কয়েক সেকেন্ড পর হঠাৎ লিফটটা থেমে গেল আর দরজাটাও আপনাআপনি খুলে গেল ৷

নূর বেরিয়ে এসে দেখলো,বিরাট একটা হল ঘর, চারিদিকে আলোয় পরিপূর্ণ , চারিদিকে এই সেই কতো অ্য৷সিড, আশেপাশে বেশ কয়েকটা কঙ্কাল দেখে নূর কেঁপে উঠলো, চলে এসেছে কিন্তু ফিরবে কি করে সেটা ও জানে না ৷ সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলো একটা কফিন জাতীয় জিনিস ৷ নূর সেদিকে এগিয়ে গেল দেখার জন্য যে কি আছে, কফিনটা খুলতেই দেখলো অনেক ওষুধ দিয়ে প্রিজার্ভ করা ডেডবডি, নূরের মাঝে যেন কোন ভয় কাজ করছে না…..কাপড়টা সরিয়ে মুখটা দেখতে যাবে তখনই কেউ একটা গাঢ় কন্ঠে বলে উঠলো….

” নূর…….”
নূরের কলিজা কেঁপে উঠলো ,হাত কাঁপতে লাগলো, পা দুটো আর স্থির নেই ৷ সামনে ঘুরে তাকাবে সে শক্তি ওর মাঝে নেই ৷ আর একবার আওয়াজ কানে এলো
” নূর……”
নূর এবার ঝটপট সোজা হয়ে সামনে তাকালো, দেখলো ওর আম্মু ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,আর মুখে আছে এক অদ্ভুত হাসি ৷ নূর সামনের দিকে তাকিয়ে সবকিছু ঘোলাটে দেখলো, জ্ঞান হারালো নূর,সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারলো না ও, এতোকিছু দেখার জন্য ও প্রস্তুত ছিলো না ৷

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৪