তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৫ || suraiya Aayat

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৫
suraiya Aayat

“তারপর !”
নির্বিকার অন্ঠে আয়াশ বলে উঠলো
” লাভ এট ফাস্ট সাইড নামের একটা নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম, পড়াশোনা নামক নেশাটা ছুটে গেল আর ভালোবাসা নামক নেশাটা বেড়ে গেল ৷ নিজের মনে মনে তার নামটা ধরে ডাকতেও ভালো লাগতো , একদিন তার নামের বুলি আওড়াতে আওড়াতে বলে উঠলাম
” আফু সোনা !”

নামটা এক নিমেষেই মাথায় গেথে গেল, বেশ কয়েকবার নামটা উচ্চারন করলাম দেখলাম জোশ একটা ব্যাপার আছে নামটাতে কি সুন্দর
” আ ফু সো না ৷”
কথাটা শোনা মাত্রই নূর শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে চেপে ধরলো , এতদিন ধরে যেটাকে নিজের নাম ভাবতো আজ সেটা অন্য একজনের নাম হিসাবে শুনছে ভাবলেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ওর ৷ নূর চুপচাপ শুনছে , আপাতত আফু সোনা নামটার ওপর ঘৃনা চলে এসেছে ৷

” নামটা নিতে নিতে বিছানা থেকে লাফ দিলাম, ঘড়ির দিকে তাকালাম তখন বাজে বিকাল 4.30, এই সময়টা ছিলো ওর ইভিনিং ওয়াকের টাইম ,তাকে ফলো করতে করতে এটা আমার ও একটা ডেইলি রুটিং এ পরিনত হয়েছিলো ৷ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতেই দেখি সে আমার অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে তবে তার যাওয়ার জায়গাটা অনেকটাই নির্দিষ্ট তাই আমার যেতে খুব একটা অসুবিধা হলো না, আমি সেদিন সেই জায়গাটাতে গেলাম, জায়গাটা ভীষন রকম সুন্দর ছিলো,বিরাট একটা লেকের পাশে , কতো মানুষ সেখানে বসে থাকতো গল্প করতো ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি সেখানে গেলাম বেশ কিছুখন টলহদারি করেও খুজে পেলাম না,অস্থির লাগছিলো ভীষন এমনিতেই উইকেন্ড বলে কলেজে যাওয়ার ও সুযোগ পাইনি আর রুম থেকেও খুব একটা বার হতে পারিনি ৷ রাগ আর বিরক্তি দুটোই সমানভাবে কাজ করছিলো, পুরো জায়গাটা খুজেও না পেয়ে বাসাতে ফিরছিলাম, পথে ফেরার সময় দেখি রাস্তায় একটা ছোট বাচ্চা গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে,,লাল তাজা গোলাপ , ভীষন রকম সুন্দর ৷ অনেক উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিলো আমার তাছাড়া অনেক সিনেমাতেও দেখেছি যে কি সুন্দর প্রমিক প্রেমিকাকে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে, আমার ও ভীষন রকম ইচ্ছা ছিলো যে এরকম কখনও গোলাপ হাতে কাওকে নিজের মনের কথা জানাবো ৷ ইচ্ছা ছিলো এনিরা কে কখনো এমন ভাবে বলবো , কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অনেকখন ধরে গোলাপ গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ৷ বাচ্চাটাও ভেবেছিলো যে আমি বোধহয় গোলাপ গুলো কিনবো তাই সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে গেলেই আচমকা আমি সেখান থেকে চলে যাই সেদিন বোধহয় বাচ্চাটাকে অজান্তেই হার্ট রে ফেলেছিলাম খুব ৷”
কথাটা বলে খানিকখন থামলো আয়াশ ৷ মাথাটা চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে একটা গা ছাড়া ভাব নিতেই নূর বেশ লম্বা সুরে বলল

” তারপর কি হলো বলুন ৷”
আয়াশ চুপ করে আছে , কিছু বলছে না, নূর ও আয়াশের উত্তরের অপেক্ষায় রইলো কিন্তু আয়াশের চোখটা যেন ক্রমেই বুজে আসছে হয়তো চোখে ঘুম ভর করছে ভীষন রকম ৷ আয়াশের চোখজোড়া বুজে আসবে তার আগেই নূর একটু রাগী কন্ঠে বেশ উচ্চস্বরে বলল
” কি হলো বলছেন না কেন ! অন্যর চোখের ঘুম হারাম করে নিজে কিভাবে ঘুমাচ্ছেন আপনি ?”
কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ একটু হতচকিত হয়ে বলল
” ওয়েট ওয়েট একটা সিগারেট ধরায়,নেশায় পারে নেশাকে কাটাতে ৷”
নূরের চোখ দিয়ে টুপিয়ে পড়া জলটা নূর হাত দিয়ে মুছে নিলো,শুনবে ও কষ্ট হলেও শুনবে ৷
আয়াশ সিগারেটের ধোঁয়াটা বাতাসে উড়িয়ে বলল
” তারপর কি যেন বলছিলাম আমি !”
নূর দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলো একটা মানুষ কিভাবে এতো উদাসীন হতে পারে ! আয়াশ নুরের মুখের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম

” কতটুকু বললাম আফু সোনা ‌,ওপস নূর ৷”
নূরের শরীরটা তিরতির করে জ্বলে উঠলো ৷
আয়াশ সরে এসে আবার ধীম ধরা কন্ঠে বলল
” তারপর ফিরলাম সেই বাসায় , গালে হাত দিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছি আমি ,ভাবছি মেয়েটা কোথায় যেতে পারে , তাকে অনুসরন করছি এক সপ্তাহ হলো মাত্র তাকে এই কদিন সেই লেকের ধার ছাড়া কোথাও যেতে দেখিনি, তার পরিবারের লোকজন ও যথেষ্ট স্বাধীনতা দিতো তাকে ৷”

মনের মধ্যকার চঞ্চল ভাবটা কাটছিলো না তখনও তাই খানিকটা ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে নীচে গেলাম কারন আসার সময় কাওকে দেখিনি তাছাড়া আমি ছাড়া এই বাড়িতে আর একজন ভাড়াটিয়া থাকেন তারা তিনতলাতে তারা খুব কম নামতেন নীচে ৷ ফেরার সময় এনিরার বাবা মা কে কোথাও দেখিনি তাই একটু উঁকি ঝুকি দিয়ে নীচে নামলাম , সার্ভেন্টগুলোও আজ আসেনি ৷ এই বাড়িতে থাকতাম ঠিকই কিন্তু কে কোথায় থাকে বা কারোর সাথে সেভাবে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা হয়ে ওঠেনি শুধু থার্ড ফ্লোরের দম্পতির একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে আছে তাকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করে কথা বলি মাঝে মাঝে নাহলে তেমন একটা মিশতে পারতাম না ৷ সিঁড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকালাম , ঠিক যেমন চোর এসে যেমন করে দেখে ঠিক তেমনভাবেই ৷

এরিনার ঘরটা দেখতে মন চাইছালো ভীষন , তার কোন ছবি আমার কাছে ছিলো না তাই ভাবলাম তার রুমে গিয়ে যদি কোন ফটো ফ্রেম থেকে কোন ছবি মোবাইলে ক্যাপচার করতে পারি তো মন্দ হবে না ৷ আমার মতো ভীতু ছেলেটা যে হুঠ করে এতোটা সাহস পেয়ে গিয়েছিলো সেদিন আমি তা বুঝতে পারিনি ৷ প্রথম ঘরে ঢুকে বুঝলাম সেটা তার বাব মায়ের ঘর তাই দ্রুত বেরিয়ে এসে পাশের ঘরে গেলাম তারপর ঢুকতেই দেখলাম ফটোফ্রেমে তার একটা সুন্দর হাসি হাসি মুখের ছবি , ফটোটা দ্রুত তুলে নিলাম মোবাইলে ৷ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরোতে যাবো তখনই পায়ে একটা ডায়েরি জাতীয় কিছু পড়তেই হাতে তুলে নিলাম…..অন্যর ডায়েরি কখনও তার পারমিশান ছাড়া খোলা উচিত না তাই আমার মাঝেও খানিকটা দ্বিধা আর সংকোচ কাজ করছিলো কিন্তু ইচ্ছাও জাগছিলো প্রবল যে পছন্দের একটা মানুষের গোপন কিছু তথ্য জেনে তাকে আরও ভালো ভাবে জানার ৷ ডায়েরিটা চম্পট খুলতেই দেখলাম প্রথম পাতায় লেখা..

” Hey ! I am Anira….Anira Karsan……it is too personal don’t open it…..”
লেখাটা দেখে ডায়েরিটা খুলে দেখার ইচ্ছাটা 200 গুন বেড়ে গেল, স্বাভাবিক ডায়েরির প্রথম পাতায় কেউ এমন লিখলে তা যে কেউ দেখতে চাইবে ৷ ঝটপট প্রথম পাতা খুলতেই কোন লেখা পেলো না, তারপর বেশ কয়েকটা পাতা ওলটালেও তাতে বিশেষ কিছু পেলাম না, রোজকারের কথাগুলো লিখে রাখতো সে ,তার পাতার কোথাও আমার নামটা একবার ও উল্লেখ ছিলো না যার দ্বারা বোঝা যায় যে সে আমাকে চেনেই না অথচ আমি তাকে বোকার মতো ফলো করেই চলেছি ভেবে একটু স্টুপিড মনে হলো নিজেকে ৷ বোরিং লাগছিলো বেশ, তার সম্পর্কে জানার মতো কিছুই ছিলো না তবে লাস্ট পাতায় এসে জানলাম অনেক কিছুই ৷”
কথাটা সেই হতেই নুর প্রশ্ন করে উঠলো

” এনিরা আফসানা থেকে সে এনিরা কারসন হলো কিভাবে?”
নূরের তীক্ষ্ণ কন্ঠের এই প্রশ্নে আয়াশ হেসে উঠে বলল
” তারপর শোনো ৷”
নূর রেগে গেল ওর প্রশ্নকে উপেক্ষা করায় ৷
” ডায়েরিতে লাস্ট যে কথাটা লেখা ছিলো তা হলো ক্যারেন বলে একজন তাকে বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তক্ত করছে আর তা নিয়ে সে ভীষনভাবে বিরক্ত , তাই সে আজ ছেলেটার সাথে এর একটা সামঝোতা করার জন্য দেখা করতে যাবে ৷”
লেখাটাতেই শেষ, আয়াশ ডায়েরি বন্ধ করে নিজের ঘরের দিকে ছুটলাম ,ক্যারেন ছেলেটার ওপর রাগ হচ্ছে ভীষন ,তাকে সামনে পেলে ও বেধড়ক পেটাতাম হয়তো ৷ কথাটা ভেবে শুয়ে পড়লো আয়াশ,রাগ বাড়লে শুয়ে পড়লে নাকি তা কমে যাই তার ই প্রচেষ্টা , আর রাগ ও কমলো……”

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৪

কথাটা বলে আয়াশ থেমে চোখ বন্ধ করলেই নূর আবার বলে উঠলো
” কি হলো থেমে গেলেন কেন? বলুন তারপর কি হলো?”
আয়াশ একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
” It was all about love at 1st side and I killed her…….!”
কথাটা বলে হো হো করে হাসতেই নূর শিউরে উঠলো ৷ দাঁড়িয়ে পড়লো নূর ৷
“কি বলছেন কি এসব ! Are u mad……”
আয়াশ ও উঠে দাঁড়িয়ে নূরের কাছে গিয়ে নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল

” yeah…..i am mad just because of u cause i love u…..you are my addiction…my favourite addiction….তুমিই আমার প্রিয় নেশা….”
কথাটা শেষ হতে দেরি হলো না নুর সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিলো আয়াশের গালে

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৬