তুমিময় বসন্ত পর্ব ২৪

তুমিময় বসন্ত পর্ব ২৪
writer Mousumi Akter

আয়াস এর বুকে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে তার হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করছি।কোথাও কেউ নেই, আয়াস আর আমি ছাড়া।চারদিকে ঝুম বৃষ্টির শব্দ হচ্ছে।হালকা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে শরীরে।ঠান্ডা অনুভব, ঝুম বৃষ্টির শব্দে আয়াস কে জড়িয়ে ধরে রেখে শরীর আর মন উভয় ই প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট।কিছু আবহাওয়া বোধহয় প্রেম নিয়েই হাজির হয়।আজকের আবহাওয়া ও এসেছে প্রেমের আগমন হয়ে।আমি অনুভব করছি আয়াস কে কাছে পাওয়ার আরো গভীর ভাবে ভালবাসার।কিন্তু কিছু অনুভূতি যে মুখে প্রকাশ করা যায় না।মন চাইলেও লজ্জায় প্রকাশ করা যায় না।

মন চাইছে চিৎকার করে বলি ভালবাসি আয়াস তোমাকে এখন আর আপনি নয় তুমি বলতে খুব ইচ্ছা করে।এই আপনি শব্দটা বড়ই বিরক্ত লাগে এখন আমার।তুমি বলে ডাকতে ইচ্ছা করে।রাত দিন ভালবাসি বলে চিৎকার করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু লজ্জায় মুখে এসে আটকে যায়।সারাদিন মনে মনে তোমার সাথে কথা বলি আমি।সারাদিন তোমার রোমান্টিক কথার রোমান্টিক রিপ্লাই করি কিন্তু তুমি শুনতে পাও না।তুমি কেনো আমায় জোর করোনা।তুমি একটু জোর করলেই তো পারো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তুমি তো জিদ ধরতে পারো মুগ্ধতা আমাকে আর আপনি করে বললে কথা বলবোনা।আমাকে কেনো আপনি আপনি করো।আমাকে তুমি করে বলতে পারো না।আমাকে তুমি করে বলতেই হবে।বলতে হবে মানে বলতেই হবে।তুমি জোর করলেই তো আমি একটু ইজি হয়ে তুমি করে বলতে পারি।তোমার প্রতি আমার মনে মনে ভীষণ অভিমান কেনো জোর করোনা আমাকে তুমি।কেনো জোর করে বলোনা আমাকে ভালবাসি বলতেই হবে।তুমি জোর করলেই তো ভালবাসি বলতে পারি।তাকে জড়িয়ে ধরে যেনো অজানা অনুভূতি শরীরে তরঙ্গের মতো ঢেউ তুলছে।তবুও নিজেকে সামলে নিলাম আমি।

এমন সময় আয়াস এর ঠোঁটজোড়া আমার কানে স্পর্শ করলো।খুব আস্তে আমাকে বললো,
“মুগ্ধতা বাসায় চলো আর ভেজা যাবে না।তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।কয়েকদিন পরেই এডমিশন।”
জোরালো অধিকার নিয়েই বললাম,
“না আমি ভিজবো।বছরের প্রথম বৃষ্টি ভীষণ ভালো লাগছে।”
আয়াসের বুক থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি,আমার মাথার উপর আয়াসের হাত।
“আয়াস কে বললাম আপনি হাত দিয়ে রেখেছেন কেনো?”
“তোমার মাথায় পানি পড়ছে তাই?”

“কিন্তু আমিতো ভিজেই গিয়েছি আপনার হাত পারে নি কিন্তু ভেজা থেকে আটকাতে।”
“আমার দু’হাত তোমাকে আগলে রাখার জন্য।যতটুক সম্ভব চেষ্টা করেই যাবে।”
আয়াস কে ধাক্কা মেরে খানিক টা দূরে সরে গেলাম আমি।আয়াস থুতনি তে হাত ঠেকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি দুই হাত আকাশে মেলে ঘুরছি। পৃথিবী টা ভীষণ সুন্দর মনে হচ্ছে।নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ বলে মনে হচ্ছে।সহসায় হেসে যাচ্ছি আমি।ভালবাসার মানুষ টা যদি পারফেক্ট আর পারমানেন্ট হয় তাহলে তার থেকে সুখি মানুষ আর কেউ হতে পারেনা।একজন মানুষ ঠিক বলে পৃথিবীর সব ই যেনো সুন্দর মনে হচ্ছে আমার।দিনশেষে একটা মানুষের উপর ই নির্ভর করে ভাল থাকা।মানুষ টা যদি মানুষের মতো হয়।

আয়াস রোড থেকে ছাতা টা তুলে নিয়ে আমাকে বললো,
” চলো এইবার।প*রীর মতো বউ আমার।এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে, মন খুলে হাসছে এইদিকে আমার অবস্থা ইন্না-লিল্লাহ হয়ে যাচ্ছে।”
“কেনো?”
“কি থেকে কি হয়ে যাবে তার ঠিক নেই।এক্ষুনি বউ আমাকে চরম অসভ্য উপাধী দিয়ে দিবে।”
“আজ আর অসভ্য উপাধী দিবোনা।”
“সিওর।”
“হুম।”
“আচ্ছা শোনো।”
“হুম।”

“একটা চুমু খেতে পারি প্লিজ।জাস্ট একটা।ওয়েদার টায় এমন চুমু খেতেই হবে।না হলে প্রেমিক হৃদয় বড্ড বেশী ছটফট করবে।”
বলেই ওষ্ট ডুবিয়ে দিলেন ডান গালে ডান গাল থেকে বাম গালে।বাম গাল থেকে কপাল, কপাল থেকে ওষ্ট।তার আলতো পরশের ভালোবাসা আমার ভীষণ ভালো লাগছিলো।বিদ্যুৎ এর মতো কেঁপে ওঠা শরীর ভাল লাগা খুজে পেয়েছিলো।
আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“পারমিশন চেয়েছেন বাট আমি কি পারমিশন দিয়েছি।”
“তুমি দিতে আমি জানি।আর জেনেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ টা সেরে ফেললাম।”
“না পারমিশন দিতাম না।”
“তুমি দিতে।”
“বললাম তো না।”
“ওকে এখন আমাকে চুমু দিলে আমি বিলিভ করবো যে তুমি অনুমতি দিতে নাহ।”
“মানে,এটা আবার কেমন শর্ত।”

“পারবে না তাইনা?এইজন্য তো বললাম যে তুমি অনুমতি দিতে।”
“সাথে সাথে আয়াসের গালে চুমু দিয়ে বললাম এই যে প্রুভ করেছি আমি পারমিশন দিতাম না।”
মনে মনে বললাম আপনি এত রোমান্টিক কেনো?আসলেই অনুমতি দিতাম।আর এখন আমার আপনাকে চুমু দিতে ইচ্ছা করছিলো তাই দিলাম।এক ঢিলে দুই পাখি মা* র *লা*ম আরকি।
আয়াস এবার খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললো,
“এতেও লাভ আমার ই হলো।এমন ডেয়ার নিও মাঝে মাঝে।”
“আমি জাস্ট প্রুভ করেছি বুঝলেন।”
“প্রুভ ট্রুভ সব মিথ্যা।আমি জানতাম তোমার আমাকে চুমু দিতে ভীষণ ইচ্ছা করছিলো।বিকজ আমি ভিজলে আমার গাল মারাত্মক সুন্দর লাগে।আর সে গালে চুমু দেওয়ার ইচ্ছা মুগ্ধতার খুব করে হচ্ছিলো।শুধু লজ্জায় বলতে পারছিলো না।”
“কি বাজে কথা।”

“কোনো বাজে কথা নয়।তোমার চোখ মুখ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি।”
ওর সাথে কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।তাই আমি চুপ করে গেলাম।দুজনে হাঁটছি। শহরে লোড শোডিং হয়েছে।আলো নেই কোথাও।এদিক টা মেইন শহর না তাই রাস্তার দুই সাইড দিয়ে দোকান পাট নেই।তবে মানুষের বসতি আছে খুব।বসবাসের জন্য অত্যান্ত নিরিবিলি এই সাইডের পরিবেশ।হঠাত আয়াস শার্টের বোতাম খোলা শুরু করেছে আমার দিকে তাকিয়ে।আয়াসের শার্ট খোলা দেখে আমার ভীষণ সন্দেহ হচ্ছে।
আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“কি ব্যাপার আপনি শার্ট খুলছেন কেনো এই মাঝরাস্তায়।”
আয়াস শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো,
“প্রয়োজন আছে।”
আমি আরো বেশী ঘাবড়ে গেলাম।ও আবার উল্টা পাল্টা করবে নাতো।ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“কি প্রয়োজন।”
“প্রয়োজন টা তোমাকে ঘিরেই।”
“আমাকে ঘিরেই মানে।দেখুন এটা কিন্তু আমাদের বেডরুম না।এটা রাস্তা।এখানে একদম উল্টা পাল্টা কিছু করার কথা ভুলেও ভাববেন না বলে দিচ্ছি।আমি কিন্তু এটা এলাউ করবো না।”

আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছে।শার্ট টা আমার কোমরে বেঁধে দিয়ে বললো,
“ওড়না পিঠের দিকে ভালো ভাবে জড়িয়ে নাও।সামনেই আমাদের বাসা আর বাসার সামনে কয়েক টা দোকান আছে।ওখানে মানুষ জন আছে।ভিজে শরীরের ভাজ বোঝা যাচ্ছে।সো আমি চাইছি না কেউ আমার বউ কে অন্তত এইভাবে দেখুক।”
ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।আমি কি ভাবলাম ছিঃএবার নিজের ই লজ্জা লাগছে।লজ্জায় আয়াসের দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিয়ে বললাম, হুম।

আয়াস আবার আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
“এটা বেডরুম না মানে বুঝলাম নাতো প্রিয়তমা।কি বলছিলে তখন।”
আয়াস যে কথাটা আবার ও তুলবে আমি তখন ই বুঝতে পেরেছিলাম।সে প্রতিটা কথার পয়েন্ট মনে রাখে।আমি আসলে কিভাবে কথাটা এড়িয়ে যাবো বুঝতে পারছিনা।আমি কি বলবো ভাবছি তখন ই আয়াস বললো,
” কি মিথ্যা বলবা সেটা ভাবছো তাইনা?মাথায় এখনো কোনো আইডিয়া আসেনি বুঝতে পারছি।আচ্ছা ভাবো ভেবে দেখো কি বলা যায়।।”

“কি ভাববো কিছুই ভাবছিলাম না।আমি জাস্ট বলছিলাম এটা আমাদের রুম না।আপনি এখানে চেঞ্জ করছেন কাপড় কোথায় পাবেন।সেটা কে টেনে টুনে এত বড় করার কি প্রয়োজন।”
“ওওওওওও তাই। তুমি আসলে এটা বলছিলে তাইতো।আমি আসলে গালতিছে মিসটেক করে ফেলছি প্রিয়তমা।”
দুজনে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরে এলাম।বাসায় প্রবেশ করেই ফুল গুলো জগের ভেতরে পানি দিয়ে রেখে দিলাম।দুজনেই চেঞ্জ করে নিলাম।আরহী কুসুম ভাবির সাথে গল্প করছিলো।আমি ঘর ঝাড়ু দিলাম।পুরা ঘর ধুলায় ভরে গিয়েছে।সবার বিছানা ঠিক ঠাক করে দিয়ে ডায়নিং এ খাবার দিলাম।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ২৩

আরহী এগিয়ে এসে বললো,”দুলাভাই বউ নিয়েই ভিজলেন,শা*লিকে ডাকলেন না।”
আয়াস হেসে বললো,”শা*লির জন্য পাত্র খুজছি।যেনো এভাবেই ভিজতে পারে।”
অয়ন ও এসে ডায়নিং এ বসলো।চারজনে গল্প করতে করতে খাবার খাওয়া শেষ করলাম।বেড রুমে গিয়ে আমি ফোনে শাড়ি আর পাঞ্জাবী দেখছি।আয়াসের মা আর আয়াস অয়নের জন্য ড্রেস দেখছি।এরই মাঝে আমার ছোট বোন শ্রুতি ফোন দিয়েছে।ওর সাথে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে দেখি আয়াস আর আরহী কথা বলছে।তাদের মাঝে অদ্ভুত কিছু কথা হচ্ছে।কথা গুলো শুনে থমকে গেলাম আমি।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ২৫

1 COMMENT

Comments are closed.