তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১৭

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১৭
Jannatul ferdosi rimi

মেহেভীন নিজের ঠোট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। মায়রা ও সবাই মিলে উচ্চস্বরে হাঁসাহাসি করছে। মেহেভীন উঠতে চাইছে, কিন্তু পায়ের চটের জন্যে উঠতে পারছে না।মায়রা মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে বলে, ‘ আহা রে আমাদের মেহু ব্যাথা পেয়েছে। ওলে বাবা! বেশি ব্যাথা পেয়েছো তাইনা? ‘ মায়রার এক বান্ধুবি মেহেভীনের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, ‘কই মেহু উঠে পড়ো আমার হাত টা ধরে। বেশি ব্যাথা পেয়েছো তুমি। উঠো। ‘ মেহেভীন তার হাত টা ধরতে নিলে, মেহেভীনের বান্ধুবি নিজের হাত টা গুটিয়ে বলে,

‘ উহু তুমি তো খুব সাহসী মেয়ে। আমাদের মায়রাকে এত্তো গুলো কথা শুনিয়ে দিলে, যার সামনে কেউ গলা উচু করেও কথা বলতে পারেনা। তাকে তুমি এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিলে। সত্যি তুমি বড্ড সাহসী। তুমি বরং একাই উঠে পড়ো। ‘
মায়রার বান্ধুবির কথা শুনে, মায়রাসহ বাকিরা আরেকদফা হেঁসে উঠলো। মেহেভীনকে সকলে মিলে,একপ্রকার হাসির পাত্র বানিয়ে ফেলেছে। মায়রা মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে কটু গলায় বললো,
‘ আমার আরহামের থেকে একশহাত দূরে থাকবে। তুমি জানো না মেহেভীন আমি কতটা খারাপ হতে পারি। আমার সংসার ভাঙ্গতে তোমাকে আমি কিছুতেই করতে দিবো না। আজকে শুধু ওয়ার্ন করলাম। আসল শিক্ষা তো আমি তখনই দিবো, যখন তুমি পুনরায় একই কাজ রিপিট করবে। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটি বলেই মায়রা ও তার বান্ধুবীরা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। মেহেভীন চাইলেও উঠতে পারছে না। কেউ মেহেভীনের দিকে এগিয়েও আসছে না। সবাই শুধু দাড়িয়ে তামাশা দেখছে। মেহেভীন কষ্ট করে উঠতে নিলে,কেউ তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মেহেভীন তাকিয়ে দেখে আরহাম। আরহামকে দেখে মেহেভীন ভরসাটু্ুকু পায়। মেহেভীন আরহামের হাতটুকু শক্ত করে ধরে। আরহাম মেহেভীনকে আস্তে করে উঠিয়ে নেয়। আরহাম খেয়াল করে দেখে,মেহেভীনের পা টা ফুল গেছে চট পেয়ে। আরহামের মেজাজ বিগড়ে যায়। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ ব্যাথা পেলে কি করে তুমি? সত্যি মেহেভীন সবসময় তোমার স্টুপিড কাজ না করলে হয়না। ‘
আরহাম মেহেভীনের নীচে ঝুঁকে মেহেভীনের পা টা নিজের হাটুতে নিয়ে, পকেট থেকে একটা স্প্রে করে ব্যাথা পাওয়ার জায়গাটাতে স্প্রে করে দেয়। যেন ব্যাথাটা কমে যায়। সবার দৃষ্টি এখনো মেহেভীন ও আরহামের দিকে স্হীর। আরহাম মেহেভীনের পায়ে হাত দেওয়ার জন্যে, মেহেভীন অস্বস্হি নিয়ে বললো,

‘কি করছেন কি ছাড়ুন। আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? ‘
‘ স্টুপিড মেয়ে একটা! একদম চুপ করবে তুমি। পায়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছো। স্প্রে না করলে পা টা আরো ফুলে যাবে। ‘
মেহেভীন আর কথা বাড়ালো। আরহাম এইবার সকলের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আর আপনার সবাই এখান দাড়িয়ে কি সারকাস দেখছেন? এখানে একজন ব্যাথার কারণে উঠতে পারছে আর আপ্নারা এখানে মজা নিচ্ছেন? আদোও আপনারা সবাই মানুষ? ‘
আরহামের কথায় মায়রা থেমে যায়। মায়রা যাচ্ছিলো, কিন্তু আরহামকে দেখে সে ভ্রু কুচকে তাকায়। সে বুঝতে পারছে না মেহেভীনের সাথে অজ্ঞাত লোকটা মেহেভীনের কে? আরহাম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
‘ আজকাল মানবতা সবই হারিয়ে গেছে। আজকাল মানুষ বিপদে পড়লে, আমরা তার দিকে সাহায্যের হাত না বাড়ালেও,তার দিকে তাকিয়ে আমরা মজা নেই, তার ভিডিও করে ভাইরাল করি এইটাই আমাদের বর্তমান সমাজের মানচিত্র। সত্যি ঘৃণিত হয়ে উঠছে আমাদের সমাজ আমাদের মানবসভ্যতা। ‘

আরহামের কথা শুনে সবাই শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। মায়রা এক কোনে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে থাকে। আরহাম হয়তো তাকে দেখিনি কিংবা
তার করা কার্যক্রমের সাক্ষ্যি হয়নি। মায়রা একটা জিনিসই বুঝতে পারছে না কে এই লোকটা? মায়রার কাছে কেমন যেন চেনা লাগছে, কিন্তু কোথাও দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছে না। আরহাম মেহেভীনের হাত টা ধরে, আস্তে করে গাড়ির দিকে নিয়ে গেলো। অতঃপর মেহেভীনকে সাবধানতার সাথে মেহেভীনকে গাড়িতে বসিয়ে, গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে আরহামকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে, আরহাম বেশ চটে আছে মেহেভীনের প্রতি। আরহামের মিটিংটা খুব তাড়াতাড়ি শষ হয়ে গিয়েছিলো, তাই আরহাম মেহেভীনকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলো, কিন্তু যখন গিয়ে মেহেভীন এইরকম খারাপ একটা অবস্হায় পায় তখন আরহামের মাথাটাই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। সে দ্রুত ছুটে গিয়েছিলো মেহেভীনের কাছে । মেহেভীন গলাটা পরিষ্কার করে বলে,
‘বলছিলাম কি। আমি না ইচ্ছে করে করিনি কাজটা। ‘

সঙ্গে সঙ্গে আরহাম গাড়িটা থামিয়ে দেয়। মেহেভীন ঝুঁকে যায়। আরহাম মেহেভীনের কাছে এসে রাগান্বিত গলায় বলে,
‘ ডোন্ট এক্সকিউজ মেহেভীন। ইউ জাস্ট আ স্টুপিড। সবসময় নিজের মতো চলো। একটিবার কি ভাবো না? তোমার গর্ভে ছোট্ট একটা প্রান বেড়ে উঠছে। তাকেও তো খেয়াল রাখাটা তোমার দায়িত্ব তাইনা? তুমি যদি এইভাবে বেখায়ালিভাবে এখন থাকো, এতে বেবীরও ক্ষতি হবে। সবসময় তো আর আমি থাকবো না তোমাকে বাচাতে। ‘
আরহামের বলা প্রতিটি কথায় যেন ফুটে উঠছে মেহেভীন ও তার সন্তানের প্রতি গভীর চিন্তা। কিন্তু এতো কিসের চিন্তা আরহামের? মেহেভীন জানে আরহাম তার পাশে সবসময় থাকবে না। শুধু মাত্র কয়েকটা মাস মেহেভীনের দায়িত্ব নিয়েছে।
মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ আমার ও আমার বেবীর জীবনটা শুধুমাত্র একার। একাই পারবো আমি আমার বাচ্ছাকে সামলাতে আমি জানি। সেইটুকু ভরসা নিজের উপর আমার আছে। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। ‘
আরহাম মেহেভীনের দিকে আরেকটু আগায়,যার কারনে মেহেভীন কিছুটা পিছিয়ে যায়। আরহাম মেহেভীনের কানে আলতো সুরে বলে,
‘ আমাদের জীবনের যেই পথ রয়েছে। সেই পথে আমাদের একাই হাটতে হবে। সেই পথে কিছু মানুষ আসবে, যারা আমাদের পাশে থেকে আমাদের পথচলার রাস্তাটুকু সহজ করে দেয়। আমি শুধু সেইসব মানুষের কাজটাই করছি। বাকি পথ তুমি একাই হাটছো মেহেভীন। ‘
কথাটি বলে আরহাম মেহেভীনের থেকে দূরে গিয়ে, ড্রাইবিং এ মনোযোগ দেয়।মেহেভীন আরহামের কথা শুনে কিছু বললো না।
আরহামের মুখে নিজের নামটি শুনে মেহেভীনের ভালো লাগলো।
মেহেভীনর যেন আরিয়ানের কথাটার মানে, এখন হলেও বুঝতে পারলো না। আরিয়ানের ভাষ্যমতে আরহাম এমন এক মানুষ, যে সকল পরিস্হিতিতে মেহেভীনকে আগলে রাখবে। পরক্ষনেই মেহেভীন আনমনে ভেবে উঠে আরহাম তো তাকে শুধুই সাহায্য করছে,আর তেমন কিছুই না। মেহেভীন নিজের মনটাকে শান্ত করে নিজের চিন্তাটাকে দূরে রেখে দেয়।

_______ এদিকে,
অভ্র ভার্সিটি এসেই জানতে পারে মায়রার কার্যকলাপের কথা। সঙ্গে সঙ্গেই অভ্রের মাথায় দাও করে আগুন জ্বলে উঠে। অভ্র রাগে গাড়ির দরজায় বাড়ি মেরে, মায়রার ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায়। মায়রা তার বন্ধুদের সাথে কিছু বিষয়ে কথা বলছিলো। অভ্রকে দেখে মায়রা বলে উঠে, ‘ অভ্র তুমি এখানে? ‘
অভ্র কিছু না বলে সকলের সামনে একপ্রকার টানতে টানতে মায়রার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে। ভার্সিটির সবাই অভ্র ও মায়রার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়রা বার বার বলে যাচ্ছে যেন অভ্র তাকে ছেড়ে দেয় কিন্তু অভ্র তার কথাকে কর্নপাত না করে, তাকে টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে যায়।

মায়রাকে বাড়িতে এনে,অভ্র মায়রাকে ড্রইং রুমে ছুড়ে ফেলে। অভ্রের মা ইশরা বেগম এখন বাড়িতে নেই। মায়রা অভ্রের এমন ব্যবহারে অবাক হয়ে বললো,
‘ আমার সাথে এমন করছো কেন অভ্র? কি করেছি কি আমি? ‘
অভ্র মায়রার দিকে ঝুঁকে, মায়রার গালটা চেপে ধরে বলে,
‘ একদম ন্যাকা সাজবে না মায়রা। সব জানি আমি। কীভাবে তুমি আজ সবার সামনে মেহেভীনকে অপমান করেছো। তোমার সাহস কী করে হয় মেহুকে এইভাবে অপমান করার? কি এমন করেছো মেহু? তোমার যা বলার তো আমার সাথে বলতে। মেহুকে এইভাবে টানতে গেলে কেন মাঝখানে। ‘
মায়রা চিৎকার করে বলে,
‘ তোমার মেহুই তো সব নষ্টের গোড়া। তার জন্যেই তো আজ আমার সংসার ভাঙ্গতে বসেছে। কেননা তোমার মেহুর প্রতি তোমার দরদ উতলে উঠছে। যা আমি সহ্য করতে পারছি না অভ্র। ‘
মায়রার কথায় অভ্র দমে যায়। মায়রা আবারো চিৎকারের সুরে বলে,
‘ যেই মেহুকে নিয়ে তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো। সেই মেহু কিন্তু নতুন কাউকে জুটিয়ে ফেলেছে। দিব্যি
নতুন প্রেমিকের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে। ‘

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১৬

কথাটি শুনে অভ্রের বুক ধক করে উঠে। সে মায়রার দিকে তাকাতেই, মায়রা আবারো বলে,
‘ এইসব চরিত্রহীন মেয়েরা আর কি পারে বলো? এদের তো শুধু নতুন কাউকে জুটাতে পারলেই হলো। আজ এর সাথে কাল ওর সাথে। মেহেভীন এমন একটা মেয়ে যে এখন নতুন কাউকে পেয়েও ওর শান্তি হইনি। ও এখন আমার সংসারটাও শেষ করে দিতে চাইছে। বাজারি মেয়ে একটা। ‘
মায়রার মুখে এমন কটুক্তি বাক্য শুনে, অভ্র মায়রার গালে থাপ্পড় দিতে গিয়েও থেমে যায়। মায়রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। অভ্র কি ভেবে যেন নিজের হাত গুটিয়ে নেয়। মায়রার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ মেহেভীনের নামে আর একটা বাজে কথা শুনলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না মায়রা। ‘
অভ্র উঠে পড়ে। মায়রার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। আজ অভ্র তার দিকে হাত তুলতে যাচ্ছিলো,যে অভ্র বিয়ের আগে কখনো তার গাঁয়ে একটা আঁচ আসতে দেয়নি। মায়রার মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। মায়রা লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে।

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ১৮