তুমি আমার মুগ্ধতা শেষ পর্ব 

তুমি আমার মুগ্ধতা শেষ পর্ব 
মারশিয়া জাহান মেঘ

আফ্রা রুমে বন্ধী হয়ে আছে। শাফায়াত রাগান্বিত হয়ে সোফায় বসে আছে। পাশেই বসে আছে, নিশিতা মির্জা। সামনাসামনি সোফায় বসে আছে দূর্জয় মির্জা আর তানিশা মির্জা। শাফায়াত নিরবতা ভেদ করে বলল,
“ছোট মা আ’ম শিউর যে আফ্রা গতকাল রাতে পরীর কাছেই গিয়েছিল। কারণ আমি ওর সব ফ্রেন্ডের বাসায় খোঁজ লাগিয়েছিলাম তাদের সবার আনসার একটাই আফ্রা আসেনি। তাছাড়া গতকাল রাতে পেছনের দরজা দিয়ে ঢু’কে’ছে। এর প্রধান কারণ, ‘ওহ জানে আমরা সবাই জেগে আছি তাই সামনের গেইট দিয়ে এন্ট্রি করা যাবেনা।”

তানিশা মির্জা মনে মনে ছেলের প্রতি খুবই বিরক্ত। বোন একটা ভুল না হয় করেই ফেলেছে। তা গো’প’ন না রেখে উ’ন্মু’ক্ত করে দিয়েছে তার ছোট মায়ের কাছে। নিশিতা মির্জা ভাসরের দিকে তাকালেন। দূর্জয় মির্জা বললেন,
“নিশিতা আমার মেয়ে হলেই যে সব অন্যায় প্রশ্রয় দিতে হবে তা একদমই নয়। যা অন্যায় তা অন্যায়ই। এইখানে গাইড আমি করবনা। এখন তোমার যা করার কর।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

নিশিতা মির্জা উঠে দাঁড়ালেন। বড় জায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আ’ম সরি ভাবী। আমি জানি তুমি চাওনা আমি আফ্রাকে কিছু বলি। বাট নো এনি আদার’স ওয়ে।”
কথাটি বলেই তিনি আফ্রার রুমের উদ্দেশ্য দুতলায় উঠেন।

অর্ষা গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই প্রান্তিক চমকে উঠে। গোলাপি রংয়ের শাড়িতে কি মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে। অর্ষা প্রান্তিকের এমন চাহনি দেখে ঠোঁ/ট চেপে মিনমিনিয়ে হাসে। প্রান্তিকের কোনো নড়াচড়া নেই। অর্ষা প্রান্তিকের একদম কাছে গিয়ে চুল ঝা’ড়ে। দ’ড়’ফ’রি’য়ে উঠে প্রান্তিক। প্রান্তিকের এহেন ভাব দেখে খিলখিল করে হেসে ফেলে সে। প্রান্তিক অর্ষার হাসি দেখতে থাকে মুগ্ধ নয়নে। কাছে টে’নে কো’ম’ড় চে’পে ধরে অর্ষার। অর্ষা কোমল স্প’র্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। হার্টবিট দ্রুতবেগে চলছে তার। প্রান্তিক অর্ষার কপালে চু’মু এঁকে দেয়। অর্ষা ল’জ্জায় মাথা লুকোয় প্রান্তিকের লো’ম’শ বু’কে।

“বউউ..আমাকে কি তুমি পা’গ’ল করে দিবে নাকি? বলোতো।”
কথা বলেনা অর্ষা কেবল শান্তি অনুভব করে।
“পা’গ’ল হলে হতে পারেন, আমি না হয়, ডক্টর হয়ে চিকিৎসা করব আপনার।”
প্রান্তিক রসিকতা করে বলল,
“পা’গ’ল হতে বলছ?”
অর্ষা প্রান্তিককে ছেড়ে দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। প্রান্তিক মুচকি হাসে সেদিকে তাকিয়ে।
অর্ষা নিচে নামতেই অর্ণীক বলল,
“ভাবী, ব্রো কোথায়?”

“আপনার ব্রোতো ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হতে ভাইয়া। কেন কিছু লাগবে?”
“না আজ চলে যাব আমাদের চৌধুরী হাউজে। ওইটাই বলতে চাইছিলাম।”
“কেন ভাইয়া? আরও কয়েকটাদিন থেকে যান না, প্লিজ।”
“না ভাবী, আর সম্ভব নয়। আসলে বাবা ওবাড়ি থেকে বেশ চেঁচাচ্ছে। আমাকে যেতেই হবে।”
“তোমাকে কোথায় যেতে হবেনা অর্ণীক। আমরাই চলে এসেছি।”

কথাগুলো বলতে বলতে আহানা চৌধুরী আর পর্ণা ড্রইং রুমে প্রবেশ করে। পর্ণার চোখে পানি দেখে আঁতকে উঠে অর্ণীক। বুঝতে দেরি হয়নি যে বোন কষ্ট পেয়েছে। সাথে সাথে পর্ণার কাছে গিয়ে পর্ণার দুই গা’ল দু হাত দিয়ে ধরে বলল,
“কি হয়েছো পর্ণা? কাঁদছিস কেন তুই? আর মম, হাতে ট্রলি কেন!”
অনেকটা অবাক হয়ে মাকে প্রশ্ন করে সে। আহানা চৌধুরী কাঠকাঠ কন্ঠে বললেন,
“ও বাড়ি থেকে চলে এসেছি। আর ও বাড়িতে যাবনা। আমি এই বাড়িতেই থাকব প্রান্তিকের সাথে।”
“সরি মিসেস চৌধুরী আপনি এইখানে থাকতে পারবেন না।”

প্রান্তিক তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুছে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল। করুণ চোখে পর্ণা তাকায় ভাইয়ের দিকে। আহানা চৌধুরী ছেলের এমন কাঠিন্যতা দেখে বলল,
“আজও আমায় ফিরিয়ে দিবে তুমি প্রান্তিক? আমি যে আর চাইনা,নিজের সন্তানদের থেকে দূরে থাকতে। কাছে টেনে নিবেনা মাকে?”
প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,

“অর্ষা ওনাকে বলে দাও, এ বাড়ি থেকে যেন বেরিয়ে যায়। এ বাড়িটা একটা নিঃসঙ্গ ছেলের বাড়ি। এই বাড়িতে অর্থ নয়, ভালোবাসা দিয়ে থাকতে হয়।”
চোখ টলমল করে উঠে আহানা চৌধুরীর। পর্ণা ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলল,
“ভাইয়া…”

বোনের দিকে তাকায়না প্রান্তিক। বোনের চোখের পা’নি সহ্য করার মত ক্ষমতা তার নেই। বড্ড আদরের যে সে।
অর্ষা প্রান্তিকের কাছে গিয়ে বলল,
“আপনারইতো মা বোন। কেন এমন করছেন?”
অর্ণীক অর্ষাকে বলে,
“এমনটা হওয়ারই ছিল ভাবী। ওই বাড়িতে ব্রো কিছুই পায়নি।”
“কিন্তু অতীত ভেবে আর কতদিন ভাইয়া? মানুষের ভুলতো হয়।”
প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি চাইছ কি অর্ষা?”
“আমি চাইছি আপনি মাকে কাছে টেনে নিন অতি শ্রদ্ধার সাথে।”
“অর্ষা…”
“মা হয় আপনার মা…”
প্রান্তিক কিছু না বলো উপরে চলে যায়৷ সে এইখানে থাকলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেনা।

“আফ্রা অর্ষা কোথায়?”
“আমি জানিনা ছোট মা। কেন ফো’র্স করছ আমায়?”
“তুমি যদি না বল অর্ষা কোথায়, তাহলে যেইটা আজ অব্দি আমি করিনি তা করতে বাধ্য হব আফ্রা।”
ভ য়ে কুঁকড়ে উঠে আফ্রা। কি বলতে চাইছে ছোট মা?
চি ৎ কার করে নিশিতা মির্জা বলে,
“বল অর্ষা কোথায়য়য় বল?”
“অর্ষা বিয়ে করেছে ছোট মা।”

“তোমার নাম কী মা?”
“আমার নাম…”
কিছু বলে উঠার আগেই প্রান্তিক ডাকে অর্ষাকে। অর্ষা হেসে বলল,
“আমি যাই মা। পরে কথা বলব। পর্ণার সাথে আপনিও খেয়ে নিন।”
“আচ্ছা।”
অর্ষা রুমে যেতেই প্রান্তিক বলল,

“খুব দরকার ছিল ওনাদেরকে এইখানে রাখার?”
“ওনারা ওনারা কি? ওনি আপনার মা।”
“মায়ের কোন দায়িত্ব পালন করেছে সে?”
অর্ষা গিয়ে জ ড়ি য়ে ধরে প্রান্তিককে। প্রান্তিক শক্ত করে তাকে আগলে নিয়ে বলল,
“ভালোবেসো শুধু আমায়। আর কিছু চাইনা।”
“আপনি আগলে রাখেন আমি থেকে যাব আজীবন।”
“ভালোবাসি অর্ষা..”
“আমিও।”

“কিন্তু আমার এতটুকু ভালোবাসাতে হবেনা।”
অর্ষা প্রান্তিক’কে ছেড়ে কো’ম’ড়ে দু হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মানে?”
“একটা পিচ্চি অর্ষা লাগবে আমার।”
“পিচ্চি অর্ষা মানে? কোথায় সে?”
ফিক করে হেসে ফেলে প্রান্তিক। তারপর বলল,
“আসেনি আসবে। থাকেনা কোথাও, থাকবে তোমার ছোট্ট পে’টে।”
অর্ষা ল জ্জা য় লাল হয়ে যায়। প্রান্তিকের বু’কে মাথা লুকায়।

রাতে….
“ওরা খেয়েছে?”
“কারা?”
“ওইতো ওনি…”
“ওনি কে?”
প্রান্তিক করুণ চোখে তাকায় অর্ষার দিকে।
“তুমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরছ?”
অর্ষা ঠোঁ/ট টি’পে হেসে বলল,
“কি বুঝেও না বোঝার মত করছি? মাকে মা বলতে পারছেন না?”
“না পারছিনা।”
অর্ষা প্রান্তিকের পাশে শুয়ে বলল,
“সব কিছু মিটিয়ে নিন, আর কত দূরে দূরে থাকবেন মায়ের থেকে?”
প্রান্তিক কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে। সে এই বিষয়ে আর কিছু শুনতে চায়না।

“অর্ষা… এই অর্ষা…”
সকালে ঘুম থেকে উঠে অর্ষাকে না দেখতে পেয়ে পা গ লের মতো অর্ষাকে খুঁজতে শুরু করে প্রান্তিক। ড্রইং রুমে গিয়ে দেখে অর্ণীক, পর্ণা, আহানা চৌধুরী সবাই চুপসে আছেন।
“এই অর্ণীক, অর্ণীক..অর্ষা কোথায়?”
“চলে গেছে ভাবী।”
“চলে গেছে মানে? এই এইই কি বলছিস কি তুই? কোথায় অর্ষা?”

“আমি বিয়ে করবনাহহহ মা। আমি বিবাহিতা। আমি মিসেস চৌধুরী। আমাকে জো র করে আবার বিয়ে দিতে তুমি পারোনা।”
কথাটি বলেই পা গ লের মতো কান্না করছে অর্ষা। আফ্রা তার পাশেই বসে কাঁদছে। সে নিরুপায় ছিল। তাই ছোট মাকে সবটা বলে দিতে বাধ্য হয়েছে।
ঠাসসস..
সবাই চমকে তাকায় নিশিতা মির্জার দিকে। সে অর্ষার গা লে থা প্প ড় মে রে ছে।
“ছোট…”
“ভাবী, ওকে বলে দাও, আমার সিদ্ধান্ত ফাইনাল। ওর বিয়ে আগামীকাল। আর এক মুহূর্তও আমি দেরি করতে চাইনা।”
“আ’ম সরি অর্ষা।”

আনমনে বসে আছে অর্ষা। সকালে হুট করে ড্রইং রুমে তার মাকে দেখে চমকে উঠে সে। কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টে নে নিয়ে আসে অর্ষাকে মিসেস নিশিতা মির্জা। কি জানি প্রান্তিক এখন কি করছে। সে আর ভাবতে পারছেনা এইসব। কান্না পাচ্ছে ভীষণ।
“কাঁদিসনা অর্ষা।”
“এমন কেন হলো আফ্রা? আমারতো বিয়ে হয়ে গেছে। আমি আবার কিভাবে বিয়ে করব?”
অর্ষা মনে মনে ঠিক করল, যার সাথে বিয়ে হবে, তাকে মে’রে চলে যাবে প্রান্তিকের কাছে। সে প্রান্তিকের জায়গা কাউকে দিতে চায়না।

বিয়ে হয়ে গেছে অর্ষার। ঘোমটা দিয়ে বসে আছে সে একটা রুমে। চোখে পা নি ট ল মল করছে তার। হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে নড়েচড়ে বসে সে। ছু’রি’টা হাতেই তার। যখনি তাকে ওই ছেলেটা টাচ করতে আসবে সে, তখনি পেটে ছু’রি চালিয়ে দিবে।
ছেলেটি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ঘোমটা খুলতেই অর্ষা বলল,
“একদম আম…”
কিছু বলতে পারলোনা অর্ষা বরের জায়গায় প্রান্তিককে দেখে চমকে উঠে সে। আকাশসম বিস্মিত সে। অবাক কন্ঠে বলল,
“আপনি!”
প্রান্তিক ঠোঁ/ট টি পে হেসে বলল,

“যদি জানতাম আমার মম আর তোমার মম আমাদের বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে তাহলে এইরকম না না করতাম না বিয়েতে বউউ।”
“তার মানে!”
“হ্যাঁ বউ..তোমার সাথে আমার বিয়েই ঠিক করে রেখেছিল।”
অর্ষা খুশিতে গদগদ করতে করতে বলল,
“তারমানে যার জন্য পালালাম, তার কাছেই আসলাম।”
লাফিয়ে গিয়ে জ ড়ি য়ে ধরে অর্ষা প্রান্তিককে। প্রান্তিক অর্ষার গা লে চু মু দিয়ে বলল,
“চল বউ…আজকে পিচ্চি অর্ষাকে নিয়ে আসি, তোমার এই ছোট্ট পে টে।”

“এই আপনি এইখানে কি হুম?”
“মিস বিউটিফুল আমিইতো এইখানে থাকব।”
আফ্রা অবাক কন্ঠে বলল,
“আমার জিজুর বাড়িতে আপনি কেন?”
“আগে ছিলে তুমি আমার মিস বিউটিফুল, এখন বেয়াইন+ আমার নীলাঞ্জনা। আমি অর্ণীক..”
আফ্রা উৎফুল্লে লাফিয়ে বলে উঠল চি ৎ কার করে,
“তার মানে…আপনি!”
“হ্যাঁ আমিই সে।”
অর্ণীক হাঁটু গেড়ে বসে আফ্রার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“হবে কি মিসেস অর্ণীক চৌধুরী? আমার জীবনসঙ্গী?”

তুমি আমার মুগ্ধতা পর্ব ৭

বি:দ্র: এইবারের গল্পের অপেক্ষাটা একটু বেশিই ছিল। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার কাছে দেরি হওয়ার জন্য। আমি অনেক অসুস্থ। পে’টে কিছু একটা হয়েছে। ডক্টর দেখিয়েছি কি হয়েছে তা রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। আবারও বলছি, দুঃখীত লেইটের জন্য।

সমাপ্ত