তুমি রবে পর্ব ৫৫

তুমি রবে পর্ব ৫৫
Israt Jahan Sobrin

আজ রাতের আকাশে অগণিত নক্ষত্রমেলা। হঠাৎ মাঝে মাঝে লাল, নীল, হলুদ বাতি জ্বেলে উড়ে যাচ্ছে অ্যারোপ্লেন। রাতের আকাশের এই রূপটি আজ একটি মানবীর কাছে হঠাৎ খুব চমৎকার লাগছে। সেই সাথে তার গুনগুনিয়ে গান। সবকিছু মিলিয়ে এমন রাতের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। ব্যালকনিতে বসে হাতের আংটিটির দিকে চেয়ে একবার মৃদু হেসে উঠল মাহি। মনে মনে ভাবল,

– “এই মানুষটা জানেও না কতটা সুখী আমি তাকে পেয়ে।”
তবে সে নিশ্চিত। আজ যদি তার স্থানে ওই মানুষটার পাশে ঐন্দ্রী থাকত কিংবা অন্যকেউ, পারত না সে সহ্য করতে।
– “কল্পনালোকে আছেন বোধহয়।”
মাহি ঘুরে তাকাল পিছে। তার প্রশ্নের প্রতিউত্তরে সে উল্টে প্রশ্ন করল তাকে,
– “খাওয়া শেষ হয়েছে?”
আশফি কলার খোসাটা বিনে ফেলে ব্যালকনিতে এসে বসলো তার পাশে।
– “ধন্যবাদ।”
– “কেন?”
– “খাবারটা ঘরে এনে রাখার জন্য।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাহি আর কিছু জিজ্ঞাসা করল না। কিছুক্ষণ নীরবে তার দিকে চেয়ে থেকে চোখ ফেরাল। আশফি অবশ্য তার দীর্ঘ সময়ের চাউনিকে বিশেষভাবে নিলো না। কারণ সে জানে তার বউটার মন আর মগজে কী ঘুরছে এখন। মেসেজ টোনে আশফির ফোনের স্ক্রিন জ্বলে উঠল হঠাৎ। সেখানে মাহির নজর পড়তেই সে দেখতে পেলো ক্লোজেটের ফাঁক থেকে উঁকি দেওয়া তার একটি ছবি সেই স্ক্রিনে। আশফির তোলার পূর্বেই মাহি ফোনটা উঠিয়ে নিলো।

– “এটা কী ধরনের ছবি? তুমি সেদিন তাহলে এই ছবিটিই তুলেছিলে, না?”
আশফি চুপ রইল। ফোনটা মাহির হাত থেকে নিতে গেলে মাহি সেটা শক্ত করে হাতের মধ্যে রেখে বলল,
– “ওয়েডিংয়ের পরের দিন কত সেজেছিলাম আমি। সেদিনের কোনো ছবিই তো নেই। অথচ কী একটা কার্টুন ছবি তুলেছে সে? তাও আবার সেটা ফোন স্ক্রিনে রেখেছে?”
আশফি তখন বলল,

– “সেদিন তো কেউ আমার জন্য সাজেনি। আর সেদিন সে আদৌ আমাকে আর কোনোদিন দেখতে পেতো কিনা তাও তো সে জানে না।”
মাহি চমকে ফিরে তাকাল আশফির দিকে। সেদিনের আশফিকে তার দেখার সুযোগ হয়নি। কারণ সে সুযোগ আশফি দেয়নি। তবে দিশানের কাছে সে শুনেছিল। দিশান বলেছিল, সেদিনের আশফিকে একটিবার সে দেখলে কখনোই চিন্তা করতো না সে তাকে ফেলে চলে যাওয়ার।

– “তুমি কি আর কোনোদিনও ফিরে আসতে না?”
– “হয়তো না।”
মাহি চুপ করে গেল।
– “পছন্দ দারুণ। কিন্তু এনে দিলো কে?”
– “দিশানের বন্ধু। তোমার কি মন খারাপ?”
– “একটু।”
– “কী হয়েছে?”
আশফি একটু চুপ থেকে তারপর বলল,

– “এই যে আজকের রাতটা কারো একজনের কাছে খুব রোমাঞ্চকর, তার ভেতরের অনুভূতিও অদমনীয়। সে এই মুহূর্তে বসে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে তার পাশে বসে থাকা মানুষটিকে তার দৃষ্টি দ্বারা ঘায়েল করার। এটা তো এক প্রকার অনাচার। কোথাও লেখা তো দেখিনি রোমান্সের জায়গাগুলোতে অ্যাক্টিভিটি সবসময় প্রথম পুরুষকেই দেখাতে হবে!”

কথাগুলো শেষ করে সে প্রশ্নবিধ দৃষ্টিতে তাকাল মাহির দিকে। বিস্ফোরিত চাহনিতে তাকিয়ে আছে মাহি আশফির দিকে। খুবই অকল্পনীয় ছিল কথাগুলো! এই লোকটা যে এভাবে তাকে অপদস্থ করবে, তা সে একটিবারের জন্যও বুঝতে পারেনি৷ হ্যাঁ, তার এই মার্জিত ভাষাতে বেহায়াপনা, ঠোঁটকাটা কথাগুলো তাকে শোনানো অর্থ তাকে এক প্রকার তাকে অপদস্থ করা।
আশফির ঠোঁটে হাসি না ফুটলেও তার চোখে ফুটে উঠেছে দুষ্টমির আভাস। প্রচন্ড ক্ষেপে গেছে মাহি তার প্রতি। তার বলা কথাগুলো একটাও মিথ্যা নয়। তাই বলে তো সে এভাবে বলে লজ্জা দিতে পারে না তাকে! আর এক মুহূর্ত থাকবে না বসে সে তার পাশে। আজ রাতে সে শোবেও না তার পাশে। মাহি উঠে দাঁড়াতেই আশফি পা’টা সটান করে তার যাওয়ার পথে বাঁধা প্রয়োগ করল।

– “অপ্রিয় সত্য কারোরই ভালো লাগে না। তাই বলে তার মুখোমুখি করবার সাহসও থাকবে না?”
মাহি কয়েক মুহূর্ত তিরিক্ষি নজরে চেয়ে থেকে আশফির মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে বলল,
– “ভদ্ররূপে অত্যন্ত অসভ্য একটা মানুষ তুমি!”

আশফি হো হো করে হেসে উঠল৷ হাসির চোটে সে কিছুক্ষণ কথায় বলতে পারল না। মাহির একদমই ইচ্ছা হলো না তাকে বিদ্রুপ করা তার হাসিটা দেখতে। আশফির পা হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে যেতে গেলে আশফি তার হাত টেনে ধরল। তার দুই বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ঝুঁকিয়ে নিয়ে বলল,

– “চাওয়াটা কি গভীর কিছু ছিল?”
– “কিছুই ছিল না।”
মাহি চকিতে উত্তর দিলো। আশফি আবার জিজ্ঞেস করল,
– “আচ্ছা বুঝেছি। আমাকেই কিছু করতে হবে, তাই তো?”
মাহি তাকে তোয়াক্কা না করে চলে এলো রুমে। আশফি রুমে পা বাড়াতেই মাহি ধমক দিয়ে বলে উঠল,
– “খবরদার রুমে পা বাড়াবে না!”

আশফি ভীত মুখ করে রুমে প্রবেশের দরজা মুখেই দাঁড়িয়ে পড়ল।
– “আজকে থেকে এক বিছানাতে শোয়াও বন্ধ। হয় আমি বিছানাতে শুবো অথবা তুমি।”
আশফি হাসতে হাসতে ভেতরে এসে বলল,
– “আবার সেই বাচ্চাদের মতো জিদ! যদিও তোমার সঙ্গে এগুলো খুব যায়।”
মাহি আশফিকে আগাতে দেখে রুম থেকে সে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আশফি দ্রুত মাহিকে পেছন থেকে জাপটে ধরল। তারপর বলল,

– “এসব কোথা থেকে শিখেছো? রাগ হলে বিছানা ছাড়া, রুম ছাড়া, বাবার বাড়িতে চলে যাওয়া টিপিক্যাল ওয়েগুলো ছেড়ে নতুন কিছুতে আসা যায় না?”
নিজের দিকে তাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আশফি আবার বলল,
– “নতুন ওয়েগুলো এমন হলে হয় না যে রাগ হলে বিছানা ছাড়ার পরিবর্তে বরের শরীরের ওপর উঠে শোবে বউ? কিংবা নিজের বালিশের বদলে তার বালিশে তার মাথার পাশে নিজের মাথাটা রাখবে সে।”

আশফির কথাগুলো শুনে তার নজরের আড়ালে মাহি মৃদু হেসে উঠল। নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা না করে হঠাৎ আশফির আঙুলে পায়ের চাপ দিয়ে বসলো। ব্যথায় আশফি ‘আহ!’ করে তার হাতের বাঁধন ঢিলা হতেই মাহি তার থেকে সরে এসে বলল,
– “ওয়েগুলো এমন ধরনের হলেও মন্দ হয় না।”
মুখটা যন্ত্রণাতে কুঁকড়ে ফেলে সে জবাব দিলো,

– “খুবই বাজে ওয়ে।”
বিছানা থেকে একটা বালিশ তুলে মাহি সত্যি সত্যি সেটা ব্যালকনিতে ডিভানে গিয়ে রেখে এসে আশফিকে বলল,
– “কে যাবে ওখানে? আমি না তুমি?”
– “আমার অত শখ নেই ঠান্ডাবিলাস করার।”
– “আমিও পারব না ঠান্ডাবিলাস করতে।”
– “তাহলে তো হলোই।”

মাহি একটুক্ষণ আশফির দিকে বিরক্তি নিয়ে চেয়ে থেকে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল কানের দুল খোলার জন্য। বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে কানের দুল দুটো খুলতে থাকল। আশফি তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
– “মজাটাও কি জিনিস বোঝাতে হবে? ওটা তো ফাজলামো ছিল মাত্র।”
মাহি কোনো কথা বলল না। আশফি কিছুক্ষণ তার বউয়ের ফোলা গালের দিকে চেয়ে থেকে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বসলো তার গালে। মাহি সরু চোখে তার দিকে তাকালে আশফি হেসে বলল,

– “আহ্লাদেও খুব দারুণ আমার বউ। আহ্লাদী বউ!”
বলেই হেসে ফেলল আশফি। মাথার পাঞ্চ ক্লিপ হাতে ছিল মাহির। সেটা ছুঁড়ে মারল সে আশফির গায়ে। এরপরই আবার আশফির ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল। আশফি পাঞ্চ ক্লিপটা হাতে রেখেই ফোনটা তুলে মেসেজ ওপেন করল। মেসেজগুলো মেসেঞ্জার থেকে আসছিল বারবার। মাহি দাঁড়িয়ে চুল বিনুনি করছে। সে খেয়াল করল ধীরে ধীরে আশফির মুখভঙ্গি বদলে যাচ্ছে। মাহি একটু দেখতে চেষ্টা করল কী দেখছে সে ফোনে।

আশফি মেসেঞ্জার থেকে মেসেজগুলো দেখে দ্রুত ফেসবুক লগইন করল। ফেসবুকের টাইমলাইনসে কয়েকটি ছবি ফটো ক্যাপশন করে একটি গল্পতে রূপান্তরিত হয়েছে। এছাড়াও ছবিগুলো নিয়ে কয়েকটি পত্রিকা তাদের অনলাইন পেজেও নিজেদের মন গড়া গল্প বানিয়ে নিউজ করেছে। যে ছবির মুখগুলোর মাঝে বিশেষ একটি মুখ মাহি আর অন্যটি সোম। ছবিগুলো গত দু’দিনে কিছু ফেসবুক সেলিব্রিটি টাইপ ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মতো করে ছবিগুলোতে একটি গল্প বানিয়ে সারা ফেসবুকে ওয়ালে ছড়িয়েছে৷ আর সেখান থেকেই গল্পটি আজ পত্রিকার সাংবাদিক অবধি চলে গেছে।

সম্পাদক, সাংবাদিক যখন জানতে পেরেছে একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির স্ত্রী সম্পর্কিত ছবির গল্পগুলো, তখন তারা সেই গল্পটিকে আরও বেশি প্রশস্ত করে নিউজ করে ফেলেছে। যেটা আজ সবার চোখে পড়েছে। ছবিগুলো কেউ কেউ শেয়ার করে তার মূল শিরোনামে লিখে দিয়েছে – এভাবেই মেয়েরা একজন প্রকৃত প্রেমীকের মন আর দেহ দুটোই রক্তাক্ত করে চলে যায় অন্য কারো কাছে। ধিক জানাই নারী তোমাকে!

আশফির চোয়াল শক্ত আর কপাল কুচকে যেতে দেখে মাহি এগিয়ে এলো তার কাছে। আশফির পাশে দাঁড়াতে ফোনের স্ক্রিনের ছবিগুলো তারও চোখে পড়ল। ছবিগুলো দেখতেই বুকের ভেতরটাতে ছ্যাঁৎ করে উঠল তার। আশফির চেনা মানুষদের চোখে ছবিগুলো পড়তে তারা সরাসরি আশফিকে না বলতে পেরে ছবিগুলো মেসেঞ্জারে সেন্ড করেছে। মাহি কোনো কথা বলতে পারল না। নিস্তব্ধ হয়ে চেয়ে পড়তে থাকল ছবির সঙ্গে লেখা গল্পগুলো।

ঠিক সে মুহূর্তেই দিশান দ্রুত দরজার সামনে এসে নক করল। আশফির নজর গেল না সেদিকে। চাকুর মতো গেঁথে পড়েছে তার দৃষ্টি ছবিগুলোতে। দরজা হালকা খোলা ছিল। দিশান কণ্ঠে কাশির আওয়াজ করে ভেতরে ঢুকল। আশফিকে সে ফোন হাতে নিয়ে গম্ভীর চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারল ছবিগুলো তার ভাই দেখে নিয়েছে। আশফি একবার নজর তুলে তাকাল দিশানের দিকে। তারপরই সে তাকাল মাহির দিকে। চোখদুটোতে তার সর্বোচ্চ ক্রোধ ফুটে উঠেছে। যেদিন তনুজাকে খোঁজার জন্য সে রাগ মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল, সেদিনও তার চোখদুটো এত বেশি ভয়ানক ছিল না। আশফি রাগলে তার রাগ চেহারাতে না, তার চোখে ফুটে ওঠে। গম্ভীরস্বরে সে মাহিকে বলল,

– “এ কারণেই তুমি গত দু’দিন ভয়ে ভয়ে ছিলে?”
মাহি আশফির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না। প্রচন্ড ভয় লাগছে তার। কোনো জবাবও দিতে পারল না সে। আশফি এবার চেঁচিয়ে উঠল।
– “কী হয়েছিল সেদিন?”
চমকে উঠল মাহি। আশফির এই অতি ক্রোধান্বিত রূপ সে দেখেনি কখনো। দিশান ভাইয়ের কাছে দ্রুত এগিয়ে এসে বলল,
– “এটা কোনো পাবলিক প্লেসে ঘটেছে ভাই। কোনো লেক সাইড এটা। মাহি সেদিন তোমার সাথে সোম নিশ্চয়ই কোনো সিনক্রিয়েট করছিল?”
মাহি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। ভয়টা তার চোখে মুখে স্পষ্টভাবে ভেসে উঠেছে। মাহিকে চুপ থাকতে দেখে আশফি আবারও চেঁচিয়ে বলল,

– “কথা বলছো না কেন? বলো, সেদিন কী করেছিল ও?”
মাহি ভয়ে এবার কেঁদে ফেলল। দিশান আশফিকে বলল,
– “ভাইয়া রিল্যাক্সে কথা বলো প্লিজ।”
– “তুই রুমে যা।”

দিশান আশফির কথার ওপর আর কথা বাড়াল না। সে রুমে যেতেই আশফি তৃতীয়বার মাহিকে জিজ্ঞেস করল,
– “কী ঘটেছিল সেদিন মাহি? আর কেন আমাকে সেদিন এসে বলোনি? ওর জন্য আমি তোমার ফোনের সিমকার্ড নাম্বার চেঞ্জ করে দিয়েছি। তোমার বাবার বাড়িতেও তোমাকে থাকতে দিইনি বেশিদিন। শুধু ওর জন্য। এরপর ও কী করে তোমার সঙ্গে একাকি মিট করতে পারল?”

আশফির প্রতিটা ধমক মাহির ভয়ের মাত্রা তীব্র করে দিতে থাকল। সে কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিলো,
– “আমাকে রাস্তার মাঝে দেখে আমার কাছে এসে খুব অনুরোধ করেছিল কিছুক্ষণ ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য। তাই রাস্তার পাশের লেকটিতে গিয়েছিলাম।”
– “ও অনুরোধ করলেই যেতে হবে তোমাকে? কী হয় সে তোমার? কী কারণে ওর মতো জানোয়ারের সঙ্গে তাও লেকের মতো স্পেসে কথা বলতে গিয়েছিলে তুমি? তুমি জানো না আমি ওকে পছন্দ করি না? দেখতে পারি না আমি ওকে? আর এই ছবিগুলো ওর বন্ধুরা তুলেছিল দূরে দাঁড়িয়ে, না?”

– “ও একা ছিল। কোনো বন্ধু ছিল না ওর সঙ্গে।”
– “ছিল। না হলে এই ছবিগুলো কে তুলবে?”
আশফি আবারও চেঁচিয়ে উঠল। ছবিগুলো মেলে ধরল মাহির সামনে।

– “দেখো ছবিগুলো। ফার্স্ট ছবি, সে এখানে কাঁদছে কেন? কাঁদতে কাঁদতে সে তোমাকে ফোর্স করছে তোমার হাত চেপে ধরে। সেকেন্ড, এরপর সে কাঁদতে কাঁদতে তোমাকে জড়িয়ে ধরে তার কষ্ট বর্ণনা করছে। থার্ড, তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ছুটে চলে আসছো তুমি। ফোর্থ, সে উঠে সে তোমাকে পেছন থেকে আটকে ধরেছে আবার। আর এটা রাস্তার মাঝে প্রায়। ফিফথ, তাকে তুমি রাস্তার মাঝে আবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো। সিক্সথ, কোনো গাড়ির সামনে সে পড়েছে আর পাবলিক তা দেখে দৌঁড়ে এসেছে। কী নাইস একটা স্টোরি তৈরি করে ফেলেছে পাবলিক ছবিগুলো নিয়ে!”

শেষ কথাটা সর্বোচ্চ উচ্চ স্বরে বলে ফোনটা আছাড় মেরে বসলো সে। মাহির বাহু চেপে ধরে আশফি চেঁচিয়ে বলল,
– “সেদিন এসব কেন বলোনি আমাকে? ও কী মনে করেছে? এভাবে ও সব ধ্বংস করবে? যেন তেন কোনো মানুষের বউকে পেয়েছে ও? যা খুশি করবে আর আমি সম্মান খাটো হওয়ার ভয়ে সাইলেন্ট থাকব?”
আশফি রাগে দিশেহারা হয়ে হাতের কাছের সেন্টার টেবিল ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। ওদিকে বাসার সবাই আশফির চিৎকারে নিচে জড়ো হয়ে গেছে। আশফি চিল্লিয়ে বলতে থাকল মাহিকে,

– “আমার সম্মান তো খাটো হয়েই গেছে। আর তা করতে তুমি হেল্প করেছো। শত্রুতে তৈরি করেছে ও আমাকে। এক একজন আমার সম্মানে আঘাত করে আমাকে ধ্বংস করতে চাইবে আর আমি তা অনায়াসে হতে দেবো, না? এত সামান্য মনে হয় আমাকে? যা করার চিন্তা করিনি আজ তাই করব। শেষ করে দেবো আমি ওকে। তারপর যা হওয়ার হবে।”
মাহি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে একটি কোণে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশফি পাগলের মতো কী যেন রুমের মধ্যে খুঁজতে থাকল। এরপর ক্লোজেটের নিচের র‍্যাক থেকে একটি হকিস্টিক বের করে গাড়ির চাবিটাও হাতে তুলে নিলো। আঁতকে উঠল মাহি। তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল,

তুমি রবে পর্ব ৫৪

– “এসব কিছু করো না তুমি প্লিজ।”
আশফি ধাক্কা দিয়ে মাহিকে সরিয়ে দিলো সামনে থেকে। দরজা খুলে যেতে পথেই মাহি দ্রুত এসে পেছন থেকে কান্নারত কণ্ঠেই তাকে বলল,
– “সোম হসপিটাল আশফি। ওর অবস্থা ভালো না।”
কথাগুলো আশফির কানে পৌঁছালেও সে থামল না।

তুমি রবে পর্ব ৫৬