তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৮

তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৮
অরনিশা সাথী

চোখমুখে পানির ছিটা পড়তেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় অর্নি। আশেপাশে চোখ বুলায়। মাঝারি আকারের একটা ঘর এইটা৷ এক কোনে একটা চৌকি রাখা আর ঘরটার মাঝে একটা টেবিল আর দুপাশে দুটো চেয়ার রাখা। যার একটা চেয়ারে এই মূহুর্তে অর্নি বসে আছে। সম্পূর্ণ ঘরে আর কিচ্ছু নেই অর্নির মাথার উপরে একটা হলদে আলোর লাইট জ্বলছে৷ অর্নির সামনে একটা ছেলে বসা। ছেলেটাকে ঠিক চিনতে পারলো না ও। ছেলেটা অদ্ভুত ভাবে অর্নির দিকে তাকিয়ে বললো,

–“এতদিন ভাবছি বস একটা বিবাহিত মেয়ের পেছনে কেন পরে আছে? আজ সেই বিবাহিত মেয়েটা আমার সামনে বসা। বলতে হবে আমাদের বসের চয়েজ আছে।”
ছেলেটার কথা শুনে অর্নির গাঁ ঘিনঘিন করে উঠলো। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো অর্নি। ছেলেটা অর্নির গাল চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরালো। বাজে ভাবে অর্নির দিকে আরো একবার চোখ বুলিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“মা/ল/টা একদম ঝাক্কাস আ____”
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই কেউ একজন দরজায় নক করলো। ছেলেটা টেবিলের উপরে নিজের ফোনটা ফেলে রেখে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। অর্নি দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে উৎসবের নাম্বারে লিখলো,
–“উৎসব? আমি অর্নি, আপনি প্লিজ ফোন দিবেন না। ফোন দিলে ওরা টের পেয়ে যাবে আর লোকেশন চেঞ্জ করতে পারে আবার সিম অফ করে দিতে পারে। আপনি এই নাম্বারাটা ট্রাক করে লোকেশন জেনে নিন। আর হ্যাঁ ম্যাসেজ করার’ও দরকার নেই, রাখছি।”

দ্রুততার সঙ্গে উৎসবের নাম্বারে ম্যাসেজ সেন্ড করলো অর্নি। তারপর আবার ম্যাসেজটা ডিলিট করে ফোনটা জায়গা মতো রেখে দিলো। অর্নি এবার কান পেতে ছেলেটার কথা শোনার চেষ্টা করলো। কথোপকথন শুনে বুঝতে পারলো ছেলেটার নাম রিয়াদ। রিয়াদ দরজায় দাঁড়ানো ছেলেটাকে বললো,
–“আমি খাওয়াচ্ছি, তুই বাইরে পাহারা দে। একটা কাকপক্ষী’ও যাতে কিছু টের না পায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বস এসে পড়বে।”

দরজায় দাঁড়ানো ছেলেটা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। রিয়াদ দরজা আটকে খাবার প্লেট হাতে অর্নির সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলো। খাবার প্লেট অর্নির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“খাবার খেয়ে নাও।”
–“খাবো না আমি।”

কথাটা বলেই অর্নি প্লেট টা রিয়াদের দিকে ছুঁড়ে দিলো। রিয়াদ রাগে চোয়াল শক্ত করে তাকালো অর্নির দিকে। অর্নি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রিয়াদ এক হাতে অর্নির গাল চেপে ধরে রুটি ছিঁড়ে অর্নির মুখে ঠুসে দিলো। পরপর কয়েকবার এভাবে দেওয়াতে অর্নির কাশি উঠে যায়। রিয়াদ দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় অর্নির দিকে। অর্নি ঢকঢক করে পুরো পানি শেষ করলো।

টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে অর্নি। রিয়াদ অর্নিকে খাইয়ে দিয়েই ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই দরজা খোলার শব্দ হলো। অর্নি ভেবেছে এখনো রিয়াদ’ই এসেছে। তাই আর মাথা তুলে তাকালো না। ব্ল্যাক হুডি পড়া লোকটা অর্নির সামনের চেয়ারে এসে বসলো। আলগোছে অর্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। স্পর্শ পেয়ে অর্নি তড়িৎ গতিতে মাথা তুলে তাকায়। অর্নি তাকাতেই লোকটা মাস্ক খুলে ফেলে। মাস্ক খুলতেই সামনে বসে থাকা লোকটাকে দেখে চমকে চোখ বড় বড় করে তাকায় অর্নি। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললো,

–“আ্ আপনি?”
অর্নির কথায় ব্ল্যাক হুডি পড়া লোকটা সারা ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো।
অর্নি যে নাম্বার থেকে ম্যাসেজ করেছিলো উৎসব সেই নাম্বার ট্র‍্যাক করেছে। সেই নাম্বারের লোকেশন অনুযায়ী উৎসব যাচ্ছে। উৎসব গাড়ি চালাতে চালাতেই সুমনের নাম্বারে ডায়াল করলো। সুমন রিসিভ করতেই উৎসব বললো,

–“ইমিডিয়েটলি ইশাকে তুলে আনো। কথা বের করো পেট থেকে। ওর সাথে আর কে আছে সেটা জানো। নামটা জানার পর সাথে সাথে জানাবে আমাকে।”
–“ওকে স্যার।”

সুমন কথাটা বলতেই উৎসব লাইন কেটে দিলো। উৎসব আবারো মনোযোগ দিলো গাড়ি চালানোতে। কিছুদূর যেতেই উৎসব এবার ওর একজন গার্ডকে ফোন করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই উৎসব বললো,
–“লোকেশন পাঠাচ্ছি, সব গার্ডস নিয়ে চলে আসো।”
–“ওকে বস।”
উৎসব আবারো গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিলো। বাসা থেকে বারবার ফোন করছে উৎসবকে। উৎসব ফোন কেটে শান্ত’র নাম্বারে ম্যাসেজ সেন্ড করে দিলো।

নূরকে দেখেই ইশা ভয় পেয়ে যায়। তাই বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে ও। উদ্দেশ্য ওর পার্টনারের সাথে দেখা করবে। ইশা একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠার আগেই সুমন আর দুজন লোক ইশাকে তুলে নিয়ে আসে। একটা গোডাউনের ভেতরে চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ইশাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সাথে ইশার মুখটাও বাঁধা৷ ইশার সামনের চেয়ারে সুমন বসে আছে। সুমন ইশারা করতেই একটা মেয়ে ইশার মুখের বাঁধন খুলে দিলো। মুখের বাঁধন খুলতেই ইশা চেঁচিয়ে বললো,

–“আমাকে এখানে তুলে এনে বেঁধে রাখা হয়েছে কেন? আর আপনি? আপনি উৎসবের অফিসের চাকরি করেন না?”
সুমন এক গাল হেসে টেবিলের উপর দুহাতের কুনই রেখে হাত ভাজ করে হাতের উল্টোপিঠে থুতনি ঠেকালো। হাসিমুখেই বললো,

–“হ্যাঁ ম্যাম, আমি উৎসব স্যারের আন্ডারেই কাজ করি।”
–“ছাড়ুন আমাকে, উৎসব যদি জানে না আপনি আমাকে এখানে___”
–“স্যারের অর্ডারেই আমরা আপনাকে তুলে এনেছি মিস ইশা।”
সুমনের কথায় ইশা এবার তড়তড় করে ঘামতে শুরু করলো। উৎসব ওকে তুলে নিয়ে আসতে বলেছে? তার মানে উৎসব নিশ্চয়ই কিছুর টের পেয়েছে। ইশা নিজের ভয়টাকে লুকিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বললো,

–“আমাকে এখানে আনা হয়েছে কেন?”
সুমনের হাসিমুখটা মূহুর্তেই গায়েব হয়ে গেলো। চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। টেবিলে থাবা মেরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“অর্নি ম্যামকে আপনি মারার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অর্নি ম্যামকে বাঁচাতে গিয়ে নূর ম্যাম খাদে পড়ে যায়। আপনার এই কাজের সাথে আর কে জড়িত?”

–“আমি কাউকে মারার চেষ্টা করিনি।”
–“মিথ্যে বলে পার পাবেন না মিস ইশা। আমরা সবটা জেনে তবেই মাঠে নেমেছি। কে আছে আর আপনার সাথে দ্রুত বলুন?”

–“বললাম তো আমি কিছু করিনি।”
–“করেছেন তো বটে। আপনি সেই লোকের সাথে এই ক’মাসে বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন লোকটা কে ছিলো বলুন।”
শেষ কথাটা বেশ জোরে ধমক দিয়ে বললো সুমন। সুমনের ধমকে ইশা কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো। সুমন আবারো বললো,
–“লাস্ট বার জিজ্ঞেস করছি, বলবেন না কে ছিলো সাথে?”
ইশা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। সুমন বললো,

–“আপনি কিন্তু নিজেই নিজের খারাপটা ডেকে আনছেন। ভালোই ভালোই বলে দিলে আর এত কষ্ট পেতে হতো না আপনার।”
সুমনের কথায় ঘাবড়ে গেলো ইশা। আমতা আমতা করে বললো,
–“ম্ মানে?”
–“বোঝাচ্ছি।”

কথাটা বলেই সুমন ইশার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে ইশারা করলো। সুমনের ইশারা পেয়ে মেয়েটাও চোখ দিয়েই সম্মতি জানালো। তারপর ইশার চুলের মুঠি ধরে ইশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুই গালে পরপর বেশ কয়েকটা চ/ড় মারলো। ইশার ঠোঁটের কোনা কেটে রক্ত বেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। মেয়েটা ইশাকে চ/ড় মেরেই ক্ষান্ত হলো না। জোরে ইশার চুল ধরে বললো,

–“এখন মুখ খুলবি? নাকি আরো কয়েক ডোজ লাগাবো?”
মেয়েটা থা/প্প/ড় এত জোরে মেরেছে যে ইশা কান্না করে দিয়েছে। ইশাকে কাঁদতে দেখে মেয়েটা আবারো চ/ড় মারার জন্য হাত তুলতেই ইশা বললো,
–“ব্ বলছি, বলছি আমি।”

উৎসব লোকেশনের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে প্রায়। এমন সময় সুমনের ফোন এলো। উৎসব একসাইডে গাড়ি থামালো। ফোন রিসিভ করে বললো,
–“হ্যাঁ সুমন বলো, মুখ খুলেছে ও?”
–“ইয়েস স্যার____”
–“আচ্ছা! লোকেশন সেন্ড করছি, ইশাকে নিয়ে চলে আসো।”
–“ওকে স্যার।”

সুমন ফোন রেখে দিলো। উৎসব সজোরে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত বারি মারলো। ইশা যার কথা বলেছে সুমন ইতিমধ্যেই তার নাম জানিয়েছে উৎসবকে। উৎসবের নিজের উপরে রাগ হচ্ছে বেশ। ও কি করে ওর কথা ভুলে যেতে পারলো? উৎসবের চোখমুখ দেখলে এই মূহুর্তে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে এতটাই রেগে আছে উৎসব। আরো মিনিট দুয়েক ওখানে বসে থাকার পর আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো উৎসব।

নূর ওর সম্পূর্ণ ঘর ঘুরে ফিরে দেখছে। সবকিছু কেমন চেনা চেনা লাগছে। কেমন অনুভূতি হচ্ছে ওর। নূরের সাথে ঘরে রুশান তরী আর শান্ত আছে। রুশান তরীর পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে দুইটা ফটো এলবাম বের করে নূরের হাতে দিলো। নূর উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো রুশানের দিকে। রুশান বললো,
–“এলবাম দুইটা খুলে দেখ তাহলেই বুঝতে পারবি।”

নূর এলবাম হাতে নিলো। দেখলো একটা এলবামের উপর সুন্দর করে ইংলিশে ‘ফ্রেন্ডশিপ গোলস’ আর অন্যটাতে “ফ্যামিলি’ লিখা। ফ্যামিলি এলবামটাই প্রথমে দেখার জন্য উদ্যত হলো। নূর আলতো ভাবে লিখাটার উপর হাত ছোঁয়ালো। তারপর এলবাম খুলে একের পর এক ছবি দেখতে লাগলো। পুরো এলবামে নূর আর ওর বাবা মা এবং উৎসবের ছবি। বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে তোলা ছবি।

নানা স্টাইলে নানান ভাবে। ছবিগুলোর উপরেও আলতো ভাবে স্পর্শ করলো নূর। আচমকাই অর্নির চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে নূরের। দুহাতে মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়লো। শান্ত আর রুশান অস্থির হয়ে পড়লো নূরের এরকম অবস্থা দেখে। দুজনেই নূরের দুই পাশে বসলো৷ শান্ত বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

–“এই নূর কষ্ট হচ্ছে খুব? নূর? তুমি প্রেশার নিও না। দেখবা ধীরে ধীরে সব মনে পড়ে যাবে।”
নূর কোনো কথা বলছে না। রুশান অস্থির কন্ঠে বললো,
–“দোস্ত এত চাপ নিস না। জোর করে কিছু মনে করার দরকার নেই। কয়েকটা দিন যাক সব ঠিক হয়ে যাবে তুই প্রেশার নিস না।”

তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৭

নূর কিছু বললো না। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে কয়েকবার মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো। এতদিন নূরের চোখের সামনে যা যা আবছা আবছা ভেসে উঠতো আজ তার মধ্যে কিছু কিছু স্পষ্ট হচ্ছে নূরের কাছে। নূর স্পষ্ট ভাবে ওর মা-বাবা ভাইকে দেখতে পাচ্ছে৷ ওর পরিবারের সেই হাসি আনন্দটা নূরের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। মনে পড়ছে ওর ধীরে ধীরে সবকিছু।

তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৯