তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১০
আমেনা আক্তার
আব্রাহামের করা প্রশ্নে সাইরা ও রেহানা বেগমের মুখে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু সিরাত খুব স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে।
রেহানা বেগম কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে চলে যায়। রেহানা বেগম তীব্র অপরাধ বোধে জ্বলছেন যদি তিনি তখন একটু সাহস দেখিয়ে সিরাতের পাশে থাকতে পারতেন তাহলে সিরাতের স্বপ্ন গুলো আর কবর দিতে হতো না।তিনিও কি করত তখন তো তার কাছেও কেনো উপায় ছিল না।
সিরাত স্বাভাবিক ভাবে উত্তরে বলল।
আমি পড়াশোনা করি না।
রাজ কৌতুহল বশত বলল।
কেনো?
নূরের ভিতরেও এই বিষয়ে জানার প্রবল আগ্রহ জাগছে। কেননা সেও সিরাতের পড়াশোনা বন্ধ করার কারন জানে না।
সাইরা মাথা নিচু করে বলল।
বাবা আপুর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে।
সাইরার কথা শুনে সকলে বেশ অবাক হয়।আর রুদ্র ঠাট্টা করে বলল।
নিশ্চয় এমন কিছু করেছে ও।যেই কারণে ওর বাবা ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। ওকে দেখলেই তো বোঝা যায় ইউজলেস।
রুদ্রের কথা শুনে সিরাত তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল।
হ্যা করেছিতো,এই যে কালো হয়ে জন্মেছি।যেই কারনে উনার আমাকে মেয়ে বলে পরিচয় দিতেও কষ্ট হতো। মহিমা ও সাইরার মতো আমাকে কখনো আদর করতো না। পারা প্রতিবেশীর চেয়ে বেশি উনি আমাকে গাঁয়ের রং নিয়ে খোঁটা দিতো। আমার গাঁয়ের রংয়ের জন্য h.s.c
যে A+ পাওয়ার পরেও উনার চোখে আমি পড়া লেখার যোগ্য ছিলাম না। অনার্সে ভর্তি হওয়ার পরেও আমার ফার্স্ট সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেননি এই গায়ের রংয়ের কারণে। কলেজের সকলে নাকি আমাকে দেখলে উনাকে নিয়ে ঠাট্টা করে তাই একবারের জন্য আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে।যদি আমি পড়াশোনা বন্ধ না করতাম তাহলে সাইরা কে উনি পড়াশোনা করতে দিতেন না।তাই তো পড়াশোনাকে একেবারে কবর দিয়ে দিয়েছি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সিরাতের কথা শুনে সকলে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সকলে ভাবছে মানুষ এত জঘন্য হয় কিভাবে। রুদ্রের কিছুটা অপরাধ বোধ জাগ্রত হয়েছে মনের মাঝে। কিন্তু নিজের ইগোর জন্য কিছু বলল না রুদ্র।
সকলে নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছে। সকলে চলে যেতেই রেহানা বেগম সিরাত কে নিজের রুমে ডাকলেন।
সিরাত রেহানা বেগমের রুমে প্রবেশ করতেই। রেহানা বেগম সিরাত কে নিজের পাশে বসিয়ে তার গালে হাত রাখলেন এবং বললেন।
আমাকে মাফ করে দে মা আমি সেই সময় তোর পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কিছুই করতে পারিনি।তোর এত স্বপ্ন থাকার পরেও আমি একটি ও পূর্ণ করতে পারিনি। আমাকে মাফ করে দে।
রেহানা বেগমের কথা শেষ হতেই সিরাত কিছু বলবে তার আগে সেখানে সাইরা প্রবেশ করে। এবং এসে সোজা সিরাতকে জাপটে ধরে।সাইরা কান্না করতে করতে বলল।
আমার জন্য তোর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দে আপু। আমার জন্য তোকে তোর স্বপ্ন ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু তুই তখন আমাকে কিছু বুঝতেও দিসনি।
সাইরার কথা বলার মাঝে মহিমা ও রুমে প্রবেশ করে বলল।
আমাকে ও মাফ করে দে আমার বোন।আমি তখন ভিশন স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। তখন তোকেই দোষী ভাবতাম তাই তোর কেনো প্রকার উপকার আমি করিনি।তোর সাথে অন্যায় হচ্ছে এটা জানার পরেও কেনো প্রতিবাদ করিনি।
কথাটি বলেই সিরাত কে মহিমা ও জাপটে ধরলো। রেহানা বেগম তার তিন মেয়েকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নেয় এবং মন ভরে আদর করতে থাকে।সিরাত , সাইরা ও মহিমা নিজেদের সকল কষ্ট যেনো মুহূর্তের মাঝে ভুলে গেছে মায়ের আদর পেয়ে।
কেটে গেছে তিন তিনটি মাস এই তিন মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নূর এখন প্রায় সময় নিলয় কে রেখে যায় সিরাতদের বাড়িতে। রেহানা বেগমের ইচ্ছেতেই নূর নিলয় কে রেখে যায়। নিলয়ের চেহারার দিকে তাকালে রেহানা বেগমের খুব মায়া লাগে। প্রথম দিকে মহিমার নিলয়কে ভয় লাগলেও এখন আর ভয় লাগে না। কিন্তু তাদের মাঝে বিশেষ কোনো সখ্যতা ও গড়ে উঠেনি তাদের মাঝে। মহিমা সবসময় নিলয়ের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে।কিন্তু সাইরার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে নিলয়ের।
এর মধ্যে সিরাতের সাথে রুদ্রের অনেকবার দেখা হলেও কখনো তাদের মধ্যে শান্তি পূর্বক কথা হয়নি সারাক্ষণ শুধু কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। রুদ্রের বন্ধুরা অনেকবার চেষ্টা করেছে তাদের মধ্যে যেনো সকল কিছু ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু তারা হয়তো কসম খেয়েছে এই ইহ জগতে তারা একজন আরেকজনের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলবে না।
আজ সকল বন্ধুরা মিলে রাজের বাড়িতে এসেছে।আজ তারা এই বাড়িতেই আড্ডা দিবে। অনেকদিন ধরে রাজের বাড়িতে আড্ডা দেওয়া হয়না।এতে কারও কোনো সমস্যা না থাকলেও আব্রাহামের অনেক সমস্যা আছে।সবাই কে এক প্রকার জোর করে আব্রাহাম রাজের বাড়িতে এসেছে। সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হাসি ঠাট্টা করছে।এর মাঝে নূর রাজকে বললো।
আয়নাকে কোথাও দেখতে পারছি না।আগে তো আমরা আসার সাথে সাথে আমাদের কাছে দৌড়ে চলে আসত। আমাদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য জেদ ধরতো। কিন্তু এখন তো ওকে দেখাও যায় না।
নূরের কথায় রাজ একটি শ্বাস ফেলে বলল।
জানিনা ওর কি হয়েছে আগে তো তোদের কথা শুনলেও ও চলে আসতো। কিন্তু এখন তোদের নাম নিলেও কোথাও যেতে চায় না। এখন ছাদে গিয়ে বসে আছে কতবার বললাম নিচে এসে তোদের সাথে দেখা করতে কিন্তু কিছুতেই আনতে পারলাম না।
কথাটি শুনে আর কেউ কিছু বললো না। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আব্রাহাম সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আমার একটি জরুরী কল এসেছে তোরা কথা বল আমি কথা বলে আসছি।
আব্রাহামের কথায় সকলে সম্মতি প্রকাশ করল। সকলে কথা বলছে আর আব্রাহাম চলে যায় রুমের বাইরে।
আয়না ছাদের কর্ণারে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে আছে। এখন তাকে দেখে মনে হবে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়তো তার কাছে আর কিছুই নেই। তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো।
কেমন আছো আয়না?
আয়না আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারলো তাকে কথাটি কে জিজ্ঞেস করেছে।আয়না ত্যারা ভাবে উত্তরে বলল।
এতক্ষণ অনেক ভালো ছিলাম, কিন্তু তোমার জন্য এখন অনেক খারাপ হয়ে গেছি।
আমি কি এতটা খারাপ?
এবার আয়না আব্রাহাম এর দিকে তাকিয়ে বলল।
এর থেকেও অনেক বেশি খারাপ তুমি।
তুমি কি আমাকে কখনো মাফ করতে পারবে না।আমি মানছি যে আমি ভুল করেছি। তোমার কাছে তার জন্য বারবার ক্ষমাও তো চাইছি।একটি বার আমাকে মাফ করো একটি বার আমাকে সুযোগ দিয়ে দেখো আমি..
আয়না আরহামের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলো।
সুযোগ কাকে বলে এটা জানো তুমি, আমিও তো তোমার কাছে একটি সময় সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কি করেছো আমার সাথে মনে আছে। তুমি আমাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছিলে। কেনো কারন আমি তোমার বন্ধুর বোন ছিলাম। সেই বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে আমাকে তুমি আমার ভালোবাসাকে অস্বীকার করেছিলে। কারন তুমি বন্ধুর বোনকে ভালোবেসে নিজের বন্ধুত্ব কে অসম্মান করতে চাওনি। তাহলে এখন এমন নাটক করছো কেনো। তোমাকে এখন আমার আর সহ্য হয়না দয়া করে এখান থেকে যাও।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৯
আয়নার বলার সাথে সাথে আব্রাহাম ছাদ থেকে নেমে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে কারো কাছে কিছু না বলে।
এদিকে সকলে আব্রাহামের অপেক্ষা করছে।কিন্তু আব্রাহাম আসছে না দেখে রাজ তাদের বাড়ির কাজের লোককে ডাক দিয়ে বলল। আব্রাহাম কে ডেকে দিতে কিন্তু কাজের মেয়েটি জানালো আব্রাহাম চলে গিয়েছে।সকলে বেশ অবাক হয়েছে কথাটি শুনে। হৃদিতা রুদ্র ও আরশাদ কে বলল আব্রাহামের খোঁজ নিতে।তারা দুজন চলে গেল আব্রাহাম কোথায় গিয়েছে খোঁজ লাগাতে। কারণ রাজ ছাড়া সকলেই যানে আব্রাহাম এভাবে চলে কোনো যেতে পারে। এবং এখন আব্রাহামের অবস্থা কি হতে পারে। আব্রাহাম কে এখন সামলানো খুবই প্রয়োজন তাই তারা দুজনে গিয়েছে আব্রাহামের খোঁজ নিতে।