তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১২

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১২
আমেনা আক্তার

শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী বসে বসে কান্না করছেন।তার পাশেই বসে আছে উনার ছেলে। শামসুজ্জামান কাল বিকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলে গিয়েছিল রাতে আর ফিরবে না। শামসুজ্জামানের না থাকার লাভ উঠাতে চাইছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী।তাই নিজের পুরনো প্রমিক কে ডেকে আনেন বাড়িতে। অনেক দিন ধরে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রীর মন ছটফট করছিল পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গ পাওয়ার জন্য। কেনো মতে সুযোগ হয়ে উঠছিল না। তাই রাতে তার প্রেমিক কে ডেকে আনেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে শামসুজ্জামান বাড়িতে ফিরে আসেন এবং নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ।

যখন তিনি বুঝতে পারলেন কি ঘটেছে তখন ইচ্ছা মতো ওই লোককে মারতে লাগলেন। লোকটি শামসুজ্জামান কে জানিয়েছে অনেক বছর ধরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক। আগের বাড়িতে থাকতে তো প্রায় সময় দুজনে একসাথে রাত্রি যাপন করতেন। শামসুজ্জামান তো ওইখানে বেশিদিন থাকতেন না।এর পূর্ণ সুযোগ এই মহিলা উঠাতেন। লোকটি আরো জানিয়েছেন উনি ছাড়াও আরো অনেক লোকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে উনার দ্বিতীয় স্ত্রীর।
কথাগুলো শুনে শামসুজ্জামান যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। উনি রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় আর ফিরেনি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এখনো বসে কান্না করছে শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী। উনি এই জন্য কান্না করছেন না যে,উনি ভুল করেছেন উনার কান্না এই জন্য শামসুজ্জামান বাড়িতে ফিরে উনার সাথে কি করবে। উনার ভাবনার মাঝেই বাড়ি ফিরে আসলেন শামসুজ্জামান।এসেই যখন উনার স্ত্রী কে বাড়ির উঠানে বসা দেখলেন কাল রাতের ক্ষোভ আবার মাথা চারা দিয়ে উঠলো।
শামসুজ্জামান তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে প্রথমে উনাকে একটি কষিয়ে থাপ্পড় মেরে দিলেন। এতক্ষণ শামসুজ্জামান কে খেয়াল না করায় হঠাৎ থাপ্পড়ে হচকচিয়ে গেলেন উনার স্ত্রী। শামসুজ্জামান টেনে হিচরে ভিতরে নিয়ে গেলেন উনার স্ত্রীকে এবং বললেন।

মা*গি আমি তোরে খাওয়ায় পড়ায় সব কিছু দেয় আর তুই ঘুমাস অন্য জনের সাথে। তোর জন্য আমার সংসার আমি নিজের হাতে নষ্ট করে ফেলেছি। তোর জন্য আমার প্রথম বউয়ের সাথে আমি বেইমানি করেছি।যে আমাকে ছেড়ে অন্য পুরুষের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকায় ও নেই।আর সেই তুই কিনা অন্য পুরুষদের সাথে নষ্টামি করিস।তোর কতজনকে লাগে।আমারে দিয়ে তোর হয়নাই।
কথাটি বলেই বেদর মার মারতে লাগলেন শামসুজ্জামান তার স্ত্রী কে। উনার স্ত্রী উনার কাছে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাইছে এবং মারতে না করছে। কিন্তু কেনো কথায় শুনছে না শামসুজ্জামান।

সাইরা ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজের ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে।সাইরা কে এভাবে ভয় পেতে দেখে নীলিমা জিজ্ঞেস করলো।
তোর কি হয়েছে , কিছুদিন ধরে দেখছি তুই কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকিস।
সাইরা নীলিমার কথার প্রতি উত্তরে বলল।
আমাকে কদিন ধরে একটি ছেলে খুব ডিস্টার্ব করছে। আমাকে প্রপোজ করেছিল কিন্তু আমি না করে দিয়েছি। আমাকে ধমকি দিয়েছে কলেজে এসে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।আজ আমি তাকে কলেজের বাইরে দেখেছি।
তুই কাওকে বলেছিস এই কথা।

না বলিনি, আপুকে বললে আপু ওই ছেলেকে উচিত শিক্ষা দিতো। কিন্তু আপু কিছুদিন ধরে খুব ব্যস্ত তাই বলা হয় নি। এখন মনে হচ্ছে না বলে খুব বড়ো ভুল করে ফেলেছি।
সাইরার কথা শেষ হতেই একটি ছেলে এসে সাইরা কে বলল।
আপু আপনাকে রাজ ভাই কলেজের পিছনের দিকে যেতে বলেছে।
কথাটি বলেই ছেলেটি চলে যায়। ছেলেটি যেতেই নীলিমা বলল।
ওইদিকটি তো অনেকটা শুনশান, ওখানে তোকে কেনো ডেকেছে। আমার মনে হয় তোর যাওয়া উচিত হবে না।
নীলিমার কথা শুনে সাইরা নির্ভয় ভাবে বলল।
আরে কিছু হবে না,রাজ অনেক ভালো আমাদের কিছুই করবে না।আর তাছাড়া রাজের সাথে এখন তার বন্ধুরাও হবে।তো টেনশন নেওয়ার কেনো কারন নেই।
কথাটি বলেই সাইরা কলেজের পিছনের সাইডে হাঁটা ধরলো। সাইরা সেখানে পৌঁছাতেই হঠাৎ করে একটি ছেলে সাইরার পায়ে ধরে মাফ চাইতে লাগলো।

হঠাৎ করে সকল কিছু ঘটার সাইরা কিছুটা হচকচিয়ে যায়। ছেলেটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাকে প্রচুর মারা হয়েছে। সাইরা সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো রাজ সামনে হাতে একটি রড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা দূরে তার বন্ধুরা চেয়ারে বসে আছে।রাজ সাইরার সামনে এসে ছেলেটির চুল নিজের আঙ্গুলের মুঠোয় নিয়ে নেই। সাইরার সামনে ছেলেটির মাথা উঁচু করে ধরে।সাইরা ছেলেটিকে দেখে চমকে উঠে কারন এটি সেই ছেলে যে এতদিন তাকে ডিস্টার্ব করছিল। রাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
এটি সেই ছেলেটি না যে তোমাকে ডিস্টার্ব করছিল।
সাইরা মাথা নেড়ে হ্যা বুঝয় সাথে সাথে রাজ রড দিয়ে বারি মারে ছেলেটিকে। সাথে সাথে ছেলেটি কাঁতরাতে থাকে ব্যথায়। এভাবে অমানবিক ভাবে রাজকে ছেলেটিকে মারতে দেখে ভয়ে পুরো শরীর কাঁপতে লাগল।
রাজ সাইরার একটু কাছে এসে রাজ বলতে লাগলো।
যদি এর পরের বার কেউ তোমাকে ডিস্টার্ব করে। তাহলে তুমি সর্বপ্রথম আমাকে বলবে।আর যদি না বলেছ তাহলে আগে আমি তোমার ব্যবস্থা করব তারপর তার।
কথাটি বলেই রাজ সেখান থেকে চলে যায়।

রাজের পিছনে তার সকল বন্ধুরাও চলে যায় শুধু থেকে যায় নূর ও হৃদিতা। নূর ও হৃদিতা সাইরার কাছে এসে বলল।
এখন থেকেই এই সকল কিছুর অভ্যাস করে নাও।ভয় পেলে হবে না কারণ ওকে তোমারি সামলাতে হবে।তাই ওর অভ্যাস যত তাড়াতাড়ি তুমি করে নিবে তোমার জন্য ততই ভালো।
কথাটি বলেই তারা দুজনেও চলে যায়।আর সাইরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে মূর্তির মতো।
সাইরার কাছ থেকে এসে সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে। তখনি হৃদিতা রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
রুদ্র তুই নাকি আজ অফিসে যাবি।
হুম যাবো,
রুদ্রের কথা শুনে আরশাদ রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।

এ আমি কাকে দেখছি,ও আমাদের রুদ্র নাকি অন্য কেউ। যেই ছেলে অফিসের নাম শুনলেও নাক সিঁটকায় সেই ছেলে নাকি যাবে অফিসে।
আরশাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে আব্রাহাম বলল।
ওকি আর এমনি এমনি যাবে কেনো, কারন ছাড়া ও নিশ্চয়ই যাবে না। কিন্তু কারনটা কি।
রাজ বলল।
কারনটি হলো সিরাত, যখন থেকে রুদ্র জানতে পেরেছে সিরাত ওদের অফিসে কাজ করে। তখন থেকে রুদ্র একপ্রকার পাগল হয়ে গিয়েছে অফিসে যাওয়ার জন্য।
নূর মুচকি হেসে বলল।
ব্যাপার কি দোস্ত, আমরা তো তোর এক্স গার্লফ্রেন্ড এর জন্যও তোকে এত ডিস্পারেট দেখিনি। কিন্তু সিরাতের জন্য এত ডিস্পারেট হওয়ার কারণ কি।
সকলের কথা শুনে রুদ্র ফুঁসে উঠল এবং বলল।
তোদের ফালতু কথা বন্ধকর,আমি শুধু অফিসে যাচ্ছি ওই মেয়েকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। আমাকে ওই মেয়ে অনেক জ্বালিয়েছে এখন আমি ওকে জ্বালাবো।ইনিওয়ে আমি এখন অফিসে যাবো আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
রুদ্র চলে যেতেই নূর হৃদিতা হেসে বলল।
কে কাকে জ্বালায় তা তো সময় বলে দিবে।
কথাটি বলেই সকলে একসাথে হেসে উঠলো।

রুদ্র এইমাত্র অফিসে এসে পৌঁছাল। রুদ্র কে দেখে তার বাবা রুবেল মির্জা খুব খুশি হলেন। রুদ্র তার বাবাকে বলল তার নির্দিষ্ট কেবিন দেখিয়ে দিতে। রুবেল মির্জা ও খুশি মনে রুদ্র কে তার কেবিন দেখিয়ে দিলো তখন রুদ্র বাবার উদ্দেশ্যে বলল।
বাবা সিরাত কোন পোস্টে চাকরি করে আমাদের অফিসে।
ডিজাইনারের পোস্টে,আর মেয়েটি খুবই ভালোভাবে নিজের কাজ করে।কাজে কখনো ফাঁকি দেয়না।
আচ্ছা তো আমিও দেখতে চাই, তোমার ওই সিরাত কে কেমন কাজ করে ওকে ডাকো।
কালকের ব্যবহারে রুবেল মির্জা ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে। রুদ্র আগের থেকেই সিরাত কে চিনে। এবং সিরাত কে রুদ্র খুব বেশি পছন্দ করে না। রুবেল মির্জা এটাও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন রুদ্র অফিসে এসেছে শুধু মাত্র সিরাতের জন্য।তাই তিনি সিরাত কে ডাক দিলেন।
সিরাত কেবিনে ঢুকতেই তার চোখ পড়লো দুই বাবা ছেলের উপর। রুদ্র সিরাত কে দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল।
মিস.সিরাত আমি তোমার এইমাত্র অনেক সুনাম শুনলাম আমার বাবার মুখ থেকে। আমিও দেখতে চাই তুমি কেমন কাজ করো তাই..

রুদ্রের কথা পুরো করতে না দিয়ে সিরাত প্রশ্ন করলো।
তুমি কে?যে আমার কাজের জবাবদিহি আমি তোমাকে করব?
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র ফুঁসে উঠলো। রুদ্র বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল।
এটা আমার বাবার কোম্পানি।আর এখন থেকে আমিও এখানে কাজ করব।তাই তোমায় আমার কথা শুনতে হবে।
আচ্ছা তুমি এখানে কাজ করবে,তো কি কাজ করবে তুমি এখানে।তা নিশ্চিত করেছ।
দেখো সিরাত তুমি..
তোমার ভিতর এমন কোনো বৈশিষ্ট্যতা নেই যার কারণে তোমাকে আমার দেখতে হবে।
সিরাতের ভাব অলসহীন ভাবে কথা শুনে রুদ্র চেঁচিয়ে বলল।
তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না।
তো তুমি কি চাও আমি তোমার সাথে প্রেম ভালোবাসার কথা বলবো।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১১

সিরাতের কথায় রুদ্র হচকচিয়ে যায়। রুদ্র কি বলবে ভেবে পায় না। কিন্তু সিরাত কে কাবু করা যে এতটা সহজ হবে না তা অবশ্য বুঝতে পেরেছে রুদ্র। রুদ্র কে কিছু না বলতে দেখে সিরাত রুবেল মির্জার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। রুবেল মির্জা মনে মনে খুব খুশি হয়েছেন। এখন তার মনে হচ্ছে তার রাগি ছেলেটাকে জব্দ করার মানুষ পেয়ে গেছে।সিরাত যেতেই রুদ্র রুবেল মির্জাকে বলল।
বাবা তুমি আমাকে যত দ্রুত সম্ভব আমার কাজ বুঝিয়ে দেও।আর হ্যাঁ আমার আন্ডারেই যেনো সিরাত কে কাজ করতে হয় সেই ব্যবস্থা করো।যদি এমন না হয় আমি কাল থেকে অফিসে আসবো না।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৩