তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৩
আমেনা আক্তার
হ্যালো,
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো হৃদিতা।
এখনি নিচে আয়,
আরশাদের কথা শুনে মুহূর্তের মাঝে ঘুম ছুটে গেল হৃদিতার।সে ঝটপট উঠে তৈরি হয়ে তার ব্যালকনি দিয়ে নিচে নেমে গেলো। হৃদিতা তার ব্যালকনি দিয়ে নামতে অভ্যস্ত কারণ প্রায় হৃদিতা এখান দিয়ে নেমে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যায়।তাই হৃদিতা খুব সহজে ব্যালকনি বেয়ে নেমে যায়।
হৃদিতা নিচে নামতেই দেখতে পেলো তার সকল বন্ধুরা তার জন্য বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে।
হৃদিতা সকলের সামনে গিয়ে বলল।
তোদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে করতে আমি ঘুমিয়ে গেছি।
কথাগুলো বলেই হৃদিতা বাইকে আরশাদের পিছনে বসে পড়লো। সকলের বাইক এসে থামলো রাজের বাড়ির সামনে। নূর রাজকে এখানে বাইক থামাতে দেখে প্রশ্ন করলো।
তোর বাড়ির সামনে বাইক থামিয়েছিস কেনো?
আয়না অনেকদিন ধরে বলছিল, ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে কিন্তু আমি সময় পাচ্ছিলাম না তাই ওকে নিয়ে কোথাও নিয়ে যেতেও পারছিলাম না।এই কারণে আমার সাথে অভিমান করে আছে পাগলিটা।তাই আজ ওকে সারপ্রাইজ দিবো। কথাটি বলেই রাজ আয়নার নাম্বারে ফোন করে। এবং ঝটপট তাকে নিচে আসতে বলল।
আয়না চোখ ডলতে ডলতে নিচে নেমে আসলো। এবং বাইরে বেড়িয়ে রাজকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল।
তুই আমাকে এত রাতে কেনো এখানে আসতে বললি। আয়না এখনো অর্ধেক ঘুমে। আয়নার ঘুমন্ত চেহারা দেখে আব্রাহাম যেনো আবার প্রেমে পড়ে যায় আয়নার।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে।
রাজ আয়নার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
তুই আগে চোখ মেলে দোখ তারপর কথা বল।
আয়না ভাইয়ের কথা অনুযায়ী পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার ভাইকে ও নূরদের কে দেখে আয়না এক্সাইটেড হয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আই লাভ ইউ ভাইয়া,আই লাভ ইউ তুমি দাঁড়াও আমি এখনি রেডি হয়ে আসছি। কথাটি বলেই আয়না নাচতে নাচতে বাড়ির ভিতর চলে গেল। আয়না কে খুশি হতে দেখে আব্রাহাম মুচকি হাসে। তখনি আব্রাহামের পিছনে বসা নূর আব্রাহাম কে ফিসফিস করে বলল।
এইজন্যই তো বলি,আজ হঠাৎ করে আমাদের আব্রাহামের মাঝ রাতে ঘুরতে মন চাইছে কেনো।
আব্রাহাম নূরের কথার উত্তর না করে শুধু মুচকি হাসে।আয়নার জন্যই তো সে আজ এত ব্যস্ত থাকার পরেও সকলকে নিয়ে বের হয়েছে।কিছুক্ষণের মাঝেই আয়না রেডি হয়ে এসে রাজের পিছনে বসে পরে।
বাইক চলছে অজানা গন্তব্যে, সকলে অনুভব করছে এই সময়টাকে। প্রায় সময় রুদ্র ও তার বন্ধুরা মাঝ রাতে বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হয়। তারপর ভোর হওয়া পর্যন্ত চলে তাদের আড্ডা।বাইক এসে একটি রেস্তোরাঁয় সকলে বাইক থেকে নেমে প্রবেশ করে রেস্তোরাঁর ভিতরে।
এই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে সকলে প্রথমে চা অর্ডার করে। এখানে ওরা প্রায় সময়ে আসে।এই রেস্তোরাঁর চা তাদের অনেক ভালোলাগে।সকলে বসে আড্ডা দিচ্ছে ও কথা বলছে।আয়না সকলের মাঝ থেকে উঠে এক কর্ণারে গিয়ে দাঁড়ায়। এখানের পরিবেশটি আয়নার খুব ভালোলাগে।এই রেস্তোরাঁর এক সাইডে নদী এখানে দাঁড়াতেই নদীর থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়া পুরো শরীর কে শীতল করে দেয়।যা বরাবর আয়নাকে ভিশন মুগ্ধ করে। আয়না চোখ বন্ধ করে তখনি আয়নার মনে এসে হানা দেয় কিছু বোদনা দায়ক স্মৃতি। যেই সকল স্মৃতিকে সে চিরতরে নিজের মন থেকে মুছে ফেলতে চায়। যখন সে আব্রাহাম কে নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানিয়েছিল।
অতীত…
আয়না তুই ঘরে বসে বসে কি করছিস তাড়াতাড়ি আয় আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়ের কথা শুনে আয়না আরো তাড়াতাড়ি নিজের হাত চালিয়ে তৈরি হয়ে নেই।আজ রাজ ও তার বন্ধুরা আব্রাহামের বাড়িতে আড্ডা দিবে। আব্রাহামের কথা শুনলেই আয়নার নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়।যেই পর্যন্ত আব্রাহাম কে না দেখে নেয় সেই পর্যন্ত আর শান্ত ভাবে বসতে পারে না আয়না।আর আজ তো আব্রাহামের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তাহলে এই চান্স কি মিস করা যায়।তাই তো ভাইকে অনেক বলে আয়না তাকে সাথে নেওয়ার জন্য রাজি করিয়েছে।
ভাইয়া আমি এসে গেছি,
আয়নার কথা শুনে রাজ মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আয়নার দিকে তাকায়। এবং ব্লু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
তুই এত সেজেছিস কেনো, আমরা আব্রাহামের বাড়িতে যাচ্ছি বিয়ে বাড়িতে না।
আমার সাজা নিয়ে তোমার এত সমস্যা কি ?আর এমনিতেও আমি হালকা সেজেছি।আর কথা না বাড়িয়ে এখন চলো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আয়না ও রাজ বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আব্রাহাম এর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।
রাজের বাইক এসে থামে একটি আলিশান বাড়ির সামনে।বাড়িটির বাহির দেখলেই বুঝা যায় ভিতরটা কতটা সুন্দর হতে পারে। আয়না আব্রাহামের বাড়িতে আরো অনেকবার এসেছে রাজের সাথে।এই বাড়িতে যতবারই আসে ততবারই আয়না আব্রাহামের সাথে সাথে এই বাড়ির ও এই বাড়ির মানুষের প্রেমে পরে যাই।এই বাড়ির প্রেমে পড়ার কারণ বাড়ির এত গুছালো ও মুগ্ধকর সাজসজ্জা।ও বাড়ির মানুষের প্রেমে পড়ার কারণ তারা এত বিত্তশালী হওয়ার পরেও এত অমায়িক আচরণ।রাজ ও আয়না বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই দেখতে পায় ড্রইংরুমে বসে সকলে আড্ডা দিচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখেই আয়নার বুক ধুকধুক করছে। এরমধ্যে কোথা থেকে যেনো আব্রাহামের বড় ভাবি এসে আয়না কে জাপটে ধরলো। এবং বলল।
কেমন আছো বার্বি ডল,
আয়না ও মুচকি হাসি দিয়ে বলল।
ভালো আছি ভাবি আপনি কেমন আছেন,আর আপনার বেবি কেমন আছে?
আব্রাহামের বড় ভাবি মেহের মুচকি হেসে বলল।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
ওরা গল্প করুম তুমি আমার সাথে চলো।
কথাটি বলেই আয়না কে সাথে করে নিয়ে গেল মেহেক। ড্রয়িংরুমে থাকা সকলে তা দেখে মুচকি হাসলো।মেহেক আয়নাকে একটু বেশিই আদর করে নিজের ছোট বোনের মতো।তাই আয়না যখনি আসে মেহেক আয়নাকে তার সাথে আয়নাকে রুমে নিয়ে গিয়ে জম্পেশ আড্ডা দেয়।
আয়না মেহেকের পেটের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
ভাবি বেবির কয় মাস চলছে।
সাত মাস,
বেবি আপনাকে কিক মারে?
হুম অনেক,
এখন কি মারবে কিক,
কেনো তুমি দেখতে চাও,
আয়না মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতি দেয়।মেহেক আয়নাকে এভাবে মাথা নাড়তে দেখে হেসে উঠল। আয়নার এক হাত নিজের পেটের সাথে আলতো করে ধরলো। আয়না অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন বেবি কিক মারবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বেবি কিক মারতেই আয়না চেঁচিয়ে উঠলো এবং বলল।
বেবি কিক করেছে,বেবি কিক করেছে।
কে কাকে কিক করেছে?
মেহেক ও আয়না কথাটি শুনে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায়। সেখানে আব্রাহামের মা সুফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে আছে। সুফিয়া বেগম কে দেখেই আয়না দৌড়ে গিয়ে তাকে জাপটে ধরে। এবং বলল।
কেমন আছো তুমি আন্টি?
ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
এতদিন পর তোর আমাদের কথা মনে পড়লো। তোকে বলেছি মাঝে মাঝেই আমাদের এখান থেকে ঘুরে যেতে কিন্তু তুই তো আসিসই না।
আমার পরীক্ষা ছিল তাই এই কদিন আসতে পারিনি। এখন থেকে আসব।
আচ্ছা তোরা কথা বল আমি তোদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।
বলেই সুফিয়া বেগম চলে গেলেন কিচেনের উদ্দেশ্যে। তখন আয়না মেহেক কে বলল।
অনেকক্ষণ ধরে ঘরে বসে আছি আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। আমার ভালোলাগে না।
আচ্ছা আমিও আসছি,
না না তুমি আরাম করো,আমি যাবো আর আসব।
আয়না রুম থেকে বেড়িয়ে এদিক সেদিক দেখে চুপিচুপি আব্রাহামের রুমে প্রবেশ করল। আব্রাহাম এখন নিচে সকলের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। আয়না খাটের কাছে এসে ধপাস করে খাটে শুয়ে পরলো। এবং আব্রাহামের একটি ছবি হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো।
তোমাকে এত ভালোবাসার পরেও তুমি কেনো আমার মনের কথা বুঝতে চাও না। তুমি যানো তোমার ভালোবাসা কতটা পুরাই আমাকে। কিন্তু তুমি আমাকে সবসময় অবঙ্গা করো।
কথাগুলো বলে আয়না তার সাথে আনা একটি ছোট চিঠি। আব্রাহামের পড়ার টেবিলের উপর রেখে দেয়। আয়না আব্রাহামের রুম থেকে বের হয়ে অপেক্ষা করছে কখন আব্রাহাম আসবে ও তার দেওয়া চিঠিটা পড়বে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আব্রাহাম আড্ডা থেকে উঠে মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য রুমে প্রবেশ করে। আয়না যেনো এই অপেক্ষায় করছিলো। আব্রাহাম মোবাইল চার্জ দিয়ে বের হওয়ার সময় চিঠিটা সে দেখতে পায়। চিঠিটা খুলতেই আব্রাহাম দেখতে পায় চিঠিতে লিখা আছে।
ওহে আমার মনের রাজা, আমি তোমার মনের রানী হতে চাই~
পানির পিপাসা থেকেও আমার মাঝে তোমাকে দেখার পিপাসা প্রবল~
তোমার দহনে আমি যে জ্বলতে জ্বলতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি।ওহে আমার প্রাণ পুরুষ কেনো তুমি তা দেখেও আমাকে বুঝো না~
কেনো তোমার আমার বেলাতেই এত অবঙ্গা। আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না~
আব্রাহাম এইবার ও আয়নার মনের কথা বুঝেও হয়তো বুঝলো না।তাই তো এটি জানা সত্ত্বেও এই চিঠির মালিক কে।আয়নার সকল মনের অনুভূতি দিয়ে লিখা চিঠিটা ছুড়ে ফেলে দিলো ডাস্টবিনে।আয়না হৃদয়টি আরো একবার ভেঙে গেল। আয়নার চোখে অশ্রু ঝলঝল করছে। আব্রাহাম রুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় আয়না তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম আয়নাকে দেখেও না দেখার মতো চলে যেতে চাইলো। কিন্তু তার আগেই আয়না বলে উঠলো।
আব্রাহাম ভাই,
আব্রাহাম দাঁড়িয়ে পড়লো তখন আয়না আব্রাহামের কাছে গিয়ে বলল।
তুমি কেনো আমার মনের কথা বুঝো না। তুমি যানো আমার মনের সকল অনুভূতি শুধু তোমার জন্য। তবুও তুমি আমার অনুভুতিকে পাত্তা দেও না কেনো।আমি এমন কি ভুল করেছি যার জন্য তোমার কাছ থেকে এত অবহেলা পেতে হচ্ছে আমাকে।
কারন তুমি আমার বন্ধুর বোন।এটাই তোমার সবচেয়ে বড় ভুল।আর আমি তোমার জন্য এমন কেনো অনুভূতি আমার মনে জাগাতে চাই না।যার জন্য আমার বন্ধু কষ্ট পায়।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১২
কথাটি বলেই চলে যায় আব্রাহাম।আর তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আয়না বলল।
তুমি যতই চেষ্টা করো না কেনো আমি তোমাকে ভালোবাসা থেকে পিছু হাঁটব না।আমি বারবার চেষ্টা করব তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।
আয়না কাঁধে কেউ হাত রাখতেই সে অতীত থেকে বের হয়ে আসল। আয়না পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো..
